ধর্মবাদীদের কাছে ধর্মের মূল বক্তব্য হলো পরজগতের জন্য ইহজগত ত্যাগ করা। দুনিয়া ত্যাগ করে যেহেতু দুনিয়াতে বেঁচে থাকা অসম্ভব সেহেতু ধর্মবাদীরা দুনিয়াতে বসবাস করতে চায় দুনিয়া পরিচালনা সংক্রান্ত নানা ধরনের বৃহত্তর, জটিল ও ঝামেলাপূর্ণ প্রায়োগিক বিষয়গুলোর ব্যাপারে কিছুমাত্র দায়িত্ব নেয়া ছাড়া। পরকালের নাজাত বা মোক্ষ লাভের জন্য দুনিয়া ত্যাগ করার এই সেলফ মোটিভেশন বা অটোসাজেশনকে নিজেদের মনোজগতে সেট করার পরে দুনিয়া সম্পর্কে তাদের মন-মানসিকতায় যে চিন্তাটি প্রভাবশালী হয়ে উঠে তার ভাষা হলো অনেকটা এরকম– ‘এখানে নিছকই একজন অতিথি বা মেহমানের মতো জীবনযাপন করো। নিজের প্রয়োজন বা সুবিধাটুকু নেয়া হয়ে গেলে বাদবাকি কোনো কিছু নিয়ে তোয়াক্কা করার দরকার নাই। নিজে খেয়েপরে যথাসম্ভব ভালোভাবে বেঁচে থাকা ছাড়া দুনিয়াবী কোনো বিষয়ে এনগেইজ না হওয়াই ভালো।’

অতিথি বা মেহমানরা যেমন কোনো কিছুর কোনো দায়দায়িত্ব না নিয়ে available resource হতে নিজেদের নানা প্রয়োজন মিটিয়ে, কিছুটা লিপ-সার্ভিস দিয়ে সময় মতো কেটে পড়েন, এসব ধর্মবাদীরাও তেমনি দুনিয়ার নানা সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে আপসে নিজের রাস্তা মাপেন। জাগতিক ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন সংক্রান্ত কোনো দায়-দায়িত্বকে কখনো তারা সিরিয়াসলি নিতে চান না।

আমাদের দেশে ইসলাম হলো সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্ম। ইসলাম অনুসারী এই বিপুল জনগোষ্ঠীর একটা উল্লেখযোগ্য অংশ হচ্ছে ধর্মবাদী। অর্থাৎ আখেরাতপন্থী। এ বাক্যটি পড়ামাত্রই ধর্মবাদীতায় আচ্ছন্ন যে কারো মনে ঠাস করে এই প্রশ্নটা চলে আসবে, “তাহলে, আখেরাতপন্থী না হয়ে কি আমরা দুনিয়াপন্থী হবো?”

২.

দুনিয়া ও আখেরাতকে বৈকল্পিকভাবে অর্থাৎ বাইনারি হিসাবে চিন্তা করাটাই হচ্ছে প্রান্তিকতার বিভ্রান্তি। “দুনিয়া? অথবা, আখেরাত?” – এই ধরনের বাইনারি প্রশ্ন বা চিন্তা করাটা সিম্পলি ক্যাটাগরি মিসটেক। সঠিক কথা হচ্ছে, দুনিয়ার প্রয়োজনে আখেরাত। দুনিয়া ও আখেরাতের সম্পর্ক হচ্ছে লজিক্যাল ব্যালেন্স বা ধারাবাহিকতার সম্পর্ক। বলা যায়, মিউচুয়্যাল কনসিসটেন্সির সম্পর্ক। গ্র্যাজুয়ালিটির সম্পর্ক। এটি হ্যাঁ-না বা আইদার-অর’ ধরনের কোনো ব্যাপার নয়। দুনিয়াকে ত্যাগ করার সঠিক মানে হলো, এই দুনিয়াকে মানুষের অস্তিত্ব ও জীবনের একমাত্র, প্রথম ও শেষ ঠিকানা হিসেবে মনে না করে এর পরে এরই ধারাবাহিকতায় মানুষের একটা অনন্ত জীবন আছে – এই সত্যকে অনুধাবন করা, বাস্তব জীবনে এর যথার্থ প্রয়োগ ঘটানো, এই বিশ্বাসকে সর্বোতভাবে ধারণ করা এবং এভাবে একটা কনসিসটেন্ট লাইফ মেনটেইন করা।

ব্যাপারটিকে আমরা সারা বছর লেখাপড়া করে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল লাভ করার সাথে তুলনা করতে পারি। ‘পড়ালেখা করা অথবা পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করা, কোনটি তোমার লক্ষ্য?’ – এই ধরনের প্রশ্ন যেমন ভুল প্রশ্ন, ‘দুনিয়া অথবা আখেরাতের কোনটি তোমার লক্ষ্য?’ – এ প্যাটার্নে প্রশ্ন তোলাও তেমনিভাবে ভুল প্রশ্ন, ক্যাটেগরি মিসটেক বা ফ্যালাসিয়াস চিন্তা।

আমাদের দেশে ইদানিং দেখা যাচ্ছে ছাত্র-ছাত্রী এবং অভিভাবকদের মূল লক্ষ্য থাকে, যে কোনো উপায়ে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন। লেখাপড়া হোক বা না হোক, তাতে কিছু যায় আসে না। গার্জিয়ানরাই ফাঁস হওয়া প্রশ্ন কিনে তাদের ছেলেমেয়েদের দিচ্ছেন। এমনকি, টাকার বিনিময়ে সরাসরি জিপিএ-৫ নিয়ে দিচ্ছেন। মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন হতে যা জানা গেলো। একইভাবে ধর্মের ধ্বজাধারীরা শর্টকাট পথে তাদের অনুসারীদের কাছে পরোক্ষভাবে বেহেশতের টিকেট বিক্রি করছেন। ধর্মবাদী উগ্রতা হলো এর স্থূল বহিঃপ্রকাশ।

কেউ কেউ বিশেষ কোনো পীরের অনুসারী হয়ে ভাবছেন, পীর সাহেব তাকে পরকালে পার করে দিবেন। কেউ কেউ আবার একইসাথে অনেক পীরের অনুসারী। যেন অনেকগুলো লটারি কিনে রাখার মতো ব্যাপার। কোনটিতে যে লাইগ্যা যায় তা তো বলা যায় না। কেউ কেউ বিশেষ কোনো ধর্মীয় বা রাজনৈতিক ইসলামী সংগঠনের অনুসারী। তাদের ধারণায় একমাত্র সহীহ ইসলাম বা নাজাতের সদর রাস্তা একামতে দ্বীনের সাথেই তারা আছেন। সুতরাং নাজাতের দরজায় তারাই আগে পৌঁছাবেন। যেন নাজাত তাদের জন্য খাস, বরাদ্দ। পীরের পাগড়ি ধরে বায়াত নেওয়া অন্ধ অনুসারীদের সাথে এসব ‘পুরনো সাথী’ বা ‘মানের কর্মীদের’ কোনো পার্থক্য নাই। উভয়ই শর্টকাট পথে পরকালে তাদের মুক্তি বা মোক্ষ লাভের ব্যাপারে উদগ্রীব। পরকালীন মুক্তি তথা নাজাত লাভের লক্ষ্যেই তাদের সবকিছু ফোকাসড।

এ পর্যায়ে এসে কেউ বলে উঠতে পারেন, ‘এ লোকের তো মাথা খারাপ হয়ে গেছে। নাজাত লাভের লক্ষ্যকে এ লোক হালকা করে দেখছে…!’। না ভাই, মাথা আমারটা ঠিকমতোই ঠিক জায়গাতে ঠিকঠাকভাবেই কাজ করছে। যারা কারো না কারো লেজ ধরে শর্টকাট পথে নাজাত লাভে আগ্রহী, বিনাশ্রমে বেহেশত লাভের মদির-চিন্তায় মগ্ন, তাদের মাথাই বরং খারাপ হয়ে আছে। মোক্ষ লাভ বা নাজাত প্রাপ্তি কার কার ভাগ্যে জুটবে তার তো কোনো গ্যারান্টি নাই। এটি এক্সক্লুসিভলি খোদা তায়ালার মর্জি। দুনিয়ার সবচেয়ে ভালো মানুষটিও বলেছেন, ‘কারো কোনো আমল কাউকে পার করিয়ে দিতে পারবে না, যদি মহান আল্লাহ দয়া না করেন। এমনকি আমার সব আমলও মূল্যহীন, যদি না তিনি তাঁর অসীম দয়ায় তাঁর রহমতের ছায়ায় আশ্রয় দান করেন।’ তাই, নাজাত লাভের চোরাপথ সন্ধান না করে সবার উচিত যে কাজের জন্য মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে, সেই কাজে মনোনিবেশ করা, যেই দায়িত্ব দিয়ে মানব সম্প্রদায়কে দুনিয়াতে প্রেরণ করা হয়েছে সেই দায়িত্বপালনে ব্রতী হওয়া।

৩.

মনে করা হয়, মানুষ সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য আল্লাহর বন্দেগী করা। এটিও false binary fallacy থেকে উদ্ভূত ভুল চিন্তা। আল্লাহর বন্দেগী করার জন্য তো ফেরেশতারাই ছিলো। আল্লাহ তায়ালা মানুষ সৃষ্টি করেছেন, তাঁর প্রতিনিধি হিসাবে এই বিশ্বজগতকে পরিচালনায় নেতৃত্ব দেয়ার জন্য। তা না করে, সৃষ্টির সেরা জীব হিসাবে আমাদের এই মৌলিক দায়িত্বকে এড়িয়ে গিয়ে, ধর্মকে কাজে লাগিয়ে, এ জগত তো বটেই, পরজগতেও নিজের সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধাকে নিশ্চিত করতে চাওয়ার যে রোগ বিদ্যমান, তাকে আমি ধর্মবাদিতা হিসাবে অভিহিত করছি। এরচেয়ে অধিকতর শোভন কোনো শব্দ আমার মনে পড়ছে না।

এত এত ধর্মচর্চা হওয়া সত্ত্বেও নীতি-নৈতিকতা, মানবিকতা ও যোগ্যতার এত বিপুল ঘাটতি কেন? – এই প্রশ্নের উত্তর এতক্ষণে আশা করি পেয়ে গেছেন।

আমার ইচ্ছা করে ‘দুনিয়াবী পঙ্কিলতা’ হতে ‘মুক্ত’ তথাকথিত ধার্মিক লোকদেরকে ধরে এনে কোনো টাওয়ারের উপর হতে একটা শহর দেখাই, বিশেষ করে রাতে। অথবা, এ রকম দুনিয়াবিমুখ তথাকথিত ধার্মিক লোকদেরকে কোনো একটা বৃহৎ শিল্প-উদ্যোগ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখাই। অথবা আখেরাতমুখী কোনো ধর্মজীবীর পকেট থেকে সেল ফোনটা বের করে উনাকে জিজ্ঞেস করি, “এগুলো ক্যামনে চলে, তা নিয়ে কখনো কি ভেবেছেন? কারা এগুলো চালায়, জানেন? ইহুদী-নাসারাগণ বা তাদের ‘এজেন্টরা’ যদি এগুলো না চালাতো, তাহলে এত সুখ সম্পদ কোথায় থাকতো, আপনার অবস্থা কী হতো, ভেবেছেন?”

একবার চবি ক্যাম্পাস হতে আমার স্কুটিতে চড়ে ক্যান্টনমেন্ট সংলগ্ন নতুনপাড়া এলাকায় আমাদের বাসায় যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে একটা তালা কেনার জন্য চৌধুরীহাটে একটা হার্ডওয়্যারের দোকানে ঢুকলাম। সেখানে একটা হুজুরমতো ছেলে দেখলাম বসে আছে। সেও আমার মতো কাস্টমার। সারা জীবন ইসলামী আন্দোলনের সাথে জড়িত থাকতে থাকতে আমরা তো চালু হয়ে গেছি। যে কোনো পরিবেশে যে কারো সাথে কথা বলতে পারি। বা, পাশের কারো সাথে কথা না বলে থাকতে পারি না। তো, সেই ছেলেটাকে নিজের পরিচয় দিয়ে ওর পরিচয় জিজ্ঞাসা করলাম। সে বললো, সে ছিপাতলী মাদ্রাসার শিক্ষক। একটা মসজিদে জুমা পড়ায়। ওকে বললাম, ‘আচ্ছা, তোমরা তো জুমার খুতবায় ইহুদী-নাসারাদের খুব গালমন্দ করো। অভিশাপ দাও। তাই না?’ সে আমার কথায় সায় দিলো। আমি এরপর ওকে যা বললাম তা শোনার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। আমি বললাম, ‘দেখো, এই যে হার্ডওয়ারের দোকান, এখানে দেখো ঠাসা মাল। কত কত জিনিস। তুমিও এখান হতে কিছু একটা নেয়ার জন্য এসেছো। সামান্য একটা পেরেক থেকে শুরু করে এখানে থাকা এত এত জিনিসের প্রত্যেকটাই ইহুদী-নাসারাদের জ্ঞান, প্রযুক্তি, সুবিধা ও সহযোগিতা নিয়ে বানানো। তাই না? এ নিয়ে আমরা মুমিন বান্দাদের কী করা উচিত?’

আমার উচিত কথায় হতভম্ব এই নবীন শায়খের মতো সব ধর্মবাদীদের যদি চোখে আঙ্গুল দিয়ে তাদের স্ববিরোধগুলো দেখিয়ে দিতে পারতাম…! আমাদের দেশে এত মসজিদ, মাদ্রাসা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন। সমাজের মানুষের সত্যিকারের কল্যাণে এগুলোর ভূমিকা কতটুকু? কিছু কিছু কল্যাণ তো সবচেয়ে খারাপ জিনিসটার মধ্যেও থাকে। ভালো-মন্দ মিলিয়ে মোটের ওপর অবস্থাটা কী?

৪.

আমি দেখি, উগ্র বস্তুবাদী ফ্যানাটিক নাস্তিক-বামদের দমিয়ে রাখা ছাড়া এত ধর্মকর্মের বিশেষ কোনো সামাজিক উপযোগিতা নাই। ধর্মের এতো প্রভাব না থাকলেও লোকেরা খুব সম্ভবত এতটুকু নৈতিক থাকতোই। কথাটা খুব কড়া। মানছি। কিন্তু আমি তো এ রকম ছাঁচাছোলা কথা বলারই লোক। যা অন্যরা বলতে ভয় পায়, তা আমি অনায়াসে বলে ফেলি। কাদের জন্য এই কথাগুলো বলছি তা নিয়ে এখন শোনেন।

যারা ইসলামপন্থী তাদের উচিত ধর্মবাদিতা হতে মুক্ত হয়ে জীবনবাদী হওয়া, ইসলামকে আধুনিক ধর্ম মনে না করে ইসলামকে বাস্তব জীবনাদর্শ বা জীবনব্যবস্থা হিসাবে অনুসরণ করা। নিজেদেরকে যারা সত্যিকারের মুসলমান মনে করে তাদের উচিত, ইসলামকে মতাদর্শের হাটবাজারে সেরা ব্র্যান্ড হিসাবে তুলে ধরা এবং সমাজ ও রাষ্ট্রে এর প্রাধান্য সৃষ্টি করার জন্য বাস্তবসম্মত পদ্ধতিতে কাজ করা। সোশ্যাল মিডিয়াতে ফাও লাফালাফি ও প্রদর্শনীর ঊর্ধ্বে উঠে বাস্তব জীবনে দেশ, জাতি ও গণমানুষের জন্য সাধ্যমতো কিছু একটা করা। কোনো সিলসিলায় জড়িত হয়ে আন্দোলন-সংগ্রামের মিছামিছি খেলামাতি খেলা খেলে যারা জীবন পার করে দিতে চায়, আমি তাদের সাথে নাই।

কোনো সংগঠনই কারো জীবনে শেষ সংগঠন হতে পারে না। সংগঠন হলো মসজিদে নামাজ পড়ার মতো। যেসব বিষয়কে আমরা ভালো মনে করি তা সবসময় ব্যক্তিগত চেষ্টায় অর্জন করা সম্ভব হয়ে উঠে না। তাই এ ধরনের বৃহত্তর কোনো সুযোগ, সুবিধা ও সহযোগিতা পাওয়ার জন্য জীবনের কোনো এক পর্যায়ে আমরা বিশেষ কোনো সংগঠনে জড়িত হই। এটি স্বাভাবিক। গন্তব্যে পৌঁছার জন্য যেমন আমরা প্রয়োজনে গাড়ি বদল করি তেমনি করে যে কোনো সাংগঠনিক সম্পৃক্ততাও পরিবর্তনযোগ্য। যারা আদর্শ আর সংগঠন বিশেষকে একাকার করে ফেলে তাদের জন্য আফসোস করা আর আল্লাহর কাছে তাদের জন্য দোয়া করা ছাড়া আর কী করার আছে? ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো পরিচয় বা ঠিকানা কোনো মুসলমানের জন্য চূড়ান্ত হতে পারে না। একজন মুসলমানের কাছে ইসলাম হলো সর্বশেষ ঠিকানা। কিন্তু, আমরা মানুষ। এটি আমাদের প্রথম পরিচয়। আমাদের জীবন ও সমাজ কাঠামোর ভিত্তি হলো মানবিকতা। ইসলামকে আমি মানবিকতা চর্চা ও বিকাশের একমাত্র সুসামঞ্জস্য ব্যবস্থা হিসাবে গ্রহণ করেছি।

ধর্মবাদিতা অন্ধত্ব তৈরি করে। তাই, ইসলামী আন্দোলনের নতুন ধারায় যারা কাজ করতে আগ্রহী তাদেরকে ধর্মবাদিতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। সংবেদনশীল ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা যাবে না – এ রকম ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ নীতি অবলম্বন করে আর যা-ই হোক, সমাজ পরিবর্তন হবে না। তেল মালিশ করে রোগ নিরাময় ঘটে না। বরং এ ধরনের আপসনীতির ফলে পলায়নপর মনোবৃত্তিসম্পন্ন একটা যুক্তিবিরোধী জনগোষ্ঠীর ধর্মবাদী প্রতিক্রিয়াশীলতা আরো বেড়ে যায়। ‘লি ইউজ হিরাহু আলাদদ্বীনি কুল্লিহি’ (একে, মানে ইসলামকে, অপরাপর সব জীবনব্যবস্থার ওপর আধিপত্যশীল হিসাবে গড়ে তোলা) বলে আল্লাহ তায়ালা যা করতে বলেছেন, তা আর হয়ে উঠবে না।

৫.

ইসলামকে জগতের ডমিনেন্ট সিভিলাইজেশন হিসাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হলে যা যা করতে হবে তার অন্যতম অপরিহার্য পূর্বশর্ত হলো একে ধর্মের খোলস হতে বের করে আনতে হবে। Islam must be rescued from its religion image। ধর্ম একটা সভ্যতার কন্ট্রিবিউটরি উপাদান হতে পারে, ভিত্তিও হতে পারে, কিন্তু কখনো তা সভ্যতার নির্মাতা, পরিচালক ও নির্ণায়ক হবে না। এই গোড়ার কথাটা বুঝতে হবে। মুসলমানদের যখন সভ্যতা ছিলো তখন ইসলাম একটা জীবনাদর্শ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত ছিলো। ধর্ম ছিলো সেই সভ্যতার অন্যতম অপরিহার্য অংগ। একমাত্র পরিচয় নয়। তাই, এখনকার সময়ে যারা প্রাকটিসিং মুসলিম, ইসলামিস্ট হওয়ার ফ্যান্টাসি হতে বের হয়ে এসে এখনকার সময়ের জন্য উপযোগী, টেকসই ও শুদ্ধতম জীবনযাপন পদ্ধতি হিসাবে ‌ইসলামকে কার্যকরভাবে তুলে আনার দায়িত্ব পালনে অগ্রণী হতে হবে। শুধু শুধু অবসর সময়ে ফাউ ফাউ ইল্লা মাশাআল্লাহ, সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ আর নারায়ে তাকবির বলে গলা ফাটালে কোনো কাজ হবে না।

ধর্মবাদিতার জীবাণু, সংক্রমণ ও ক্ষতের ব্যাপকতাকে ন্যূনতম মাত্রার মধ্যে কমিয়ে আনতে না পারলে, জনমানসে জীবনবাদিতার ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী রক্ষাব্যূহ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে, যত ইসলামই চর্চা হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত সব ফেইল মারবে। মেকি আধ্যাত্মিকতার অতল গহ্বরে অবশেষে সব অর্জন ধ্বসে পড়বে। ইকামতে দ্বীন তথা সমাজ পরিবর্তনের যে মূল কাজ তার কিছুই হবে না। হিজাবি ফেমিনিস্ট, নামাজি পেট্রিয়ারকিস্ট, হালাল ক্যাপিটালিস্ট, মজহারী ইসলামী কমিউনিস্ট, তাগুত-ফ্রেন্ডলি ঈমান-আক্বীদাপন্থী নির্বিবাদী মুসলিমগণসহ ধর্মবাদী-আমলবাদী সব তরীকার লোকদের কাছে আমার এসব কথাবার্তা রীতিমতো ইনসেইন হিসাবে মনে হবে। এটি বুঝতে পারছি।

অবশ্য তেমন লোকজন যে এতটুকু পর্যন্ত পড়বে না তা এক রকম নিশ্চিত করে বলা যায়। উপরের প্যারার শুরুতে যেটা বলেছি, যারা এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে পাশ্চাত্য সভ্যতার মোকাবিলায় ইসলামকে একটা চ্যালেঞ্জিং ও ভায়াবল আদর্শ হিসাবে হাজির করতে চান, যারা জগতে মুসলমান হিসাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চান, তারা বুঝবেন; পরমত সহিষ্ণুতা, অবাধ জ্ঞানচর্চা, বিনোদন সংস্কৃতির সুস্থ ধারা, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তা, জাতিগত স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের সুরক্ষা, নিপীড়নমুক্ত প্রকৃতিসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা ও ভারসাম্যপূর্ণ সমাজব্যবস্থা – এসব গড়ে তোলার জন্য কাজ করার ক্ষেত্রে ধর্মবাদিতা কতটা ডেমেইজিং, কত বড় বাঁধা।

ধর্মবাদিতা রীতিমতো নেশার মতো মানুষকে ময়দানবিমুখ ও স্বার্থপর হিসাবে গড়ে তোলে। এই নেশায় যে একবার আক্রান্ত হয়, কোনো যুক্তি, বুদ্ধি, এমনকি ধর্মের অকাট্য বাণীও তার কাছে ‘ব্যাখ্যাসাপেক্ষ’ তথা অকার্যকর হয়ে পড়ে। আশপাশের ধর্মব্যবসায়ী প্রিস্ট-ক্লাসের প্রভাবশালী ধর্মীয় সমাজপতিগণ আখেরাতে নাজাত লাভের যে মেড-ইজি, শর্টকাট ফর্মূলার সবক দেয়, এই সব নাজাত-উন্মত্ত লোকদের কর্ণকুহর ও মর্মে তখন সেই লেসনগুলো সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। এর বাইরে নীতি, আদর্শ, যুক্তি, বিবেক, বুদ্ধি ও বাস্তবতার কোনো সবক তাদেরকে স্পর্শ করে না। যেন তারা ‘সুমমুন, বুকমুন, উমইয়ুন’ হয়ে গেছে। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালাই বলছেন, ‘ফাহুম লা ইয়ারজিউন’।

আমার লেখাগুলো সাধারণত আমি কোনো ইতিবাচক কথা দিয়ে শেষ করি। আমি দুঃখিত, এ মুহূর্তে তেমন কোনো পজিটিভ কথা আমার মনে আসছে না। সব সময় তো আশাবাদী কথা বলি। আজ না হয় এই তিক্ত কথা দিয়েই শেষ করি–

যিনি জীবনবাদী নন, মানবিক নন, সমাজমুখী নন, অবাস্তব আধ্যাত্মিকতায় যিনি বুঁদ হয়ে আছেন, তার যাবতীয় ধর্মবাদিতা আল্টিমেইটলি সমাজের জন্য ক্ষতিকর। এমন লোকজন বা গোষ্ঠী, নিদেনপক্ষে নানা পর্যায়ের জুলুমবাজদের প্যাসিভ সাপোর্টার বা হিডেন ডিফেন্ডার হিসাবে নিজেদের ব্যবহৃত হতে দেন। যদিও নিজেদের এহেন নৈতিক অধঃপতন সম্পর্কে তারা ততটা সচেতন নন।

ফেসবুকে প্রদত্ত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

Mohammad Hafizur Rahman: কঠিন বিপদে ফেললেন। এভাবে কখনো ভাবিনি। দ্বিমত পোষণ করতে পারছি না আবার একমতে আসার সাহসও নাই। তবে চিন্তার অনেক খোরাক পেলাম।

Mohammad Mozammel Hoque: আমার আরেকটা অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক লেখাতে আপনি প্রথম মন্তব্য করেছিলেন। আপনার মনে নাই, খুব সম্ভবত। লেখাটার লিংক: ইসলামী শরীয়াহ বাস্তবায়নে ক্রমধারার অপরিহার্যতা

Raad Fakhrul: ইসলামে ইহকাল ও পরকাল বিচ্ছিন্ন নয়। দুনিয়া হলো আখিরাতের শস্যক্ষেত্র।

Mohammad Mozammel Hoque: ক্লাসের পড়ালেখা আর পরীক্ষার ফলাফলকে যারা আইদার-অর বাইনারিতে দেখার মতো বেকুবি করে তাদের মতো বুদ্ধিবিকল হচ্ছে দুনিয়াকে আখিরাতের বাইনারিতে দেখে দুনিয়াবিমুখ হওয়া এসব ধর্মবাদীরা।

Raad Fakhrul: দুনিয়াবিমুখ হওয়া যাবে না। আল্লাহর রাসূল (সা) ও সাহাবী (রা)-এর আদর্শ হলো দুনিয়াবী দিক দিয়েও সফল হতে হবে ও আখিরাতেও সফল হতে হবে। এজন্য তারা আমাদের অনুসরনীয় ও অনুকরনীয় আদর্শ। তারা দুনিয়াকে অস্বীকার করেননি।

Mohammad Mozammel Hoque: আল্লাহ তায়ালা তো কোরআন শরীফে ঈমানদারদের সম্পর্কে বলেছেন, (তারা হলো এমন লোক যারা) “আল্লাহকে স্মরণ করে দাঁড়ানো অবস্থায়, বসা অবস্থায় এবং শায়িত অবস্থায়। ” দেখেন, এতে করে মানুষের সব ধরনের কাজের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে অর্থাৎ মানুষ যে অবস্থাতে যে কাজই করুক না কেন, তাতে সে আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণে রাখবে। অর্থাৎ প্রকৃতির নিয়ম অনুসারে সে জীবনের সব ব্যবহারিক কাজ সম্পন্ন করবে। আল্লাহ তায়ালা প্রকৃতির ও প্রাকৃতিক নিয়মসমূহের নিয়ন্তা। সুতরাং তিনি মানুষের জন্য যে স্বভাবগত বা প্রাকৃতিক জীবনব্যবস্থার কথা নির্ধারণ করেছেন মানুষ যখন সেটা মেনে চলে তখন মানুষের জীবনটা সর্বাঙ্গীন সুন্দর হয়ে উঠে। এখানে দুনিয়া কিংবা আখেরাত, এ ধরনের বাইনারি করার কোনো সুযোগ নাই। দুনিয়া ছাড়া আখেরাত অর্থহীন। এবং আখেরাত ছাড়া দুনিয়া সর্বাঙ্গীন সুন্দর ও ন্যায়সঙ্গত হতে পারে না।

Md Rifat Chowdhury: https://www.facebook.com/MH.philosophy/posts/2186961027987687?comment_id=2186986904651766

Manzur Murshed: আপনার মতো করে ইসলামকে এভাবে কেউ দেখেনি, কথাগুলো শুনতে তিক্ত মনে হলেও একদম বাস্তব কিছু চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। অথচ আমরা ইসলামকে ধর্মের অবয়বে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। জীবনমুখী একটা ব্যবস্থা হিসেবে চিন্তা করি না। লেখাটা ভালো লাগল স্যার।

Mohammad Mozammel Hoque: ধর্ম হলো জীবনের অপরিহার্য অঙ্গ। এটি মানুষের সত্তার মধ্যে hardwired। তাই ধর্ম থাকবে মানুষের জীবন ব্যবস্থার অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবে। এর পাশাপাশি থাকবে মানুষের জীবনের জন্য আরও যেসব অপরিহার্য অনুষঙ্গ রয়েছে সেগুলোও। প্রত্যেকটি যার যার জায়গায় সবিশেষ গুরুত্ব পূর্ণ। যেমন করে আমাদের দেহের এক একটি অঙ্গ নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রের ও গুরুত্বের আলোকে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে মস্তিষ্ক হৃদপিণ্ড ফুসফুস ইত্যাদি অঙ্গগুলোর কোনো একটিও যদি প্রপারলি কাজ না করে তাহলে অপরাপর সব অঙ্গগুলো ডিসফাংশনাল হয়ে পড়বে। সব অপরিহার্য অঙ্গগুলোর একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমন্বয় হচ্ছে সুস্বাস্থ্য। আপনি যদি মাকাসিদে শরীয়াহর বিষয়গুলো দেখেন তাহলে দেখবেন সেখানে আমাদের ফকীহগণ মানুষের বাস্তব জীবনের জন্য সব জরুরী বিষয়গুলাকে সুন্দর করে একত্রিত করেছেন।

অতএব বুঝতেই পারছেন, আমার আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ে ইসলাম হলো এমন একটা জীবনব্যবস্থা যাতে মানুষের জীবনের সব অপরিহার্য অনুষঙ্গগুলো যার যার মতো করে প্রাকৃতিকভাবে নির্ধারিত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে সুসমন্বিত। ধর্ম যার একটি অংশ এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

তাই ধার্মিক হওয়া আর ধর্মবাদী হওয়া – এই দুটো বিষয়কে আমি আলাদাভাবে বিবেচনা করি।

Wahidul Islam: আল্লাহর বাণী ‘লি ইউজ হিরা হু আলাদ দীনি কুল্লিহি’ (একে, মানে ইসলামকে, অপরাপর সব জীবনব্যবস্থার ওপর আধিপত্যশীল হিসাবে গড়ে তোলা)” এটার বাস্তবায়ন করতে হলে এরকম চিন্তার বিকল্প নেই।

Alamgir Kabir: ব্যাপক একটা ঝাকুনি দিলেন স্যার।

Mohammad Mozammel Hoque: হ্যাঁ, সব সময় সমালোচনা, আবার সবসময় ইতিবাচক মিষ্টি মিষ্টি কথা – এ দুটোই হচ্ছে প্রান্তিকতা। হক কথা বলতে হবে। তবে হক কথা বলার একটা হক পদ্ধতি আছে, সেটাও মনে রাখতে হবে।

Sawkat Al Imran: আখেরা‌তের জন্যই তো দু‌নিয়া। সে হিশা‌বে দু‌নিয়া‌তে কিছু কর্তব্য কর্ম কর‌তেই হয়। কিন্তু আমার একটা গুরুতর প্রশ্ন আছে।

ধরুন, দু‌নিয়ার কর্তব্য কর্ম সামলা‌তে গি‌য়ে দু‌নিয়া‌তে ডু‌বে যাওয়ার আশংকা কর‌ছি। এই অবস্থায় কা‌রো বা কোনো সম্প্রদা‌য়ের প্রতি ঘৃণা না ছ‌ড়ি‌য়ে শুধু নি‌জে‌কে দু‌নিয়া থে‌কে বি‌চ্ছিন্ন ক‌রে ফেললাম অর্থাৎ নি‌জের বেঁচে থাকার উপকরণ সংগ্রহ ব্যতীত দু‌নিয়ার সা‌থে সম্পর্ক‌ছেদ ক‌রে নির্জনতা অবলম্বন করাটাও কি ধর্মবাদিতা হ‌বে?

Mohammad Mozammel Hoque: প্রশংসাবাণী না বলে একটা প্রশ্ন করেছেন সেজন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনার প্রশ্নের উত্তরে আমি একটা হাদীসে কুদসীর কথা বলব। যার মর্ম হচ্ছে এরকম:

একজন ব্যক্তিকে হিসাবের জন্য হাজির করা হলো। দেখা গেল তার আমলনামায় সব ভালো কাজ। তখন আল্লাহ তায়ালা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে অমুক, দুনিয়াতে যারা আমার শত্রু ছিল তাদের সাথে তোমার কেমন সম্পর্ক ছিল? তখন সে ব্যক্তি বলল, হে আমার রব, দুনিয়াতে কারো সাথে আমার কখনও কোনো শত্রুতা ছিল না। তখন মহান আল্লাহ তায়ালা বললেন, দুনিয়াতে যারা আমার বন্ধু ছিল তাদের সাথে তোমার কেমন সম্পর্ক ছিল? তখন সে ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ, আমি সমাজের সাথে কোনো সম্পর্ক বা যোগাযোগ রাখতাম না। নির্জনে শুধু তোমার এবাদত-বন্দেগী করতাম। তখন আল্লাহ তায়ালা বললেন, আমার সত্তার কসম! যে ব্যক্তি আমার বন্ধুর সাথে বন্ধুত্ব করলো না, আমার শত্রুর সাথে শত্রুতা করল না, সে কখনো আমার ক্ষমা পেতে পারে না। তখন তিনি ফেরেশতাদের আদেশ করলেন, এই ব্যক্তিকে তোমরা জাহান্নামে নিক্ষেপ কর।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকাশিত হাদীসে কুদসীর বই হতে আমি এই হাদীসটি নিজেই পড়েছি। ছাত্রজীবনে। এখনো পরিষ্কার মনে আছে।

Elius Akhter: এই কথাগুলো ৭০ বছর যাবৎ জামায়াত ইসলাম বলতেছে যে পীর-মুরিদী প্রাধান্য না দিয়ে জীবনব্যবস্থা বা শরিয়তকে প্রাধান্য দিতে।

Mohammad Mozammel Hoque: দুর্ভাগ্যজনকভাবে জামায়াতে ইসলামীও এক ধরনের পীর-মুরিদী ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইকামতে দ্বীন এবং খেদমতে দ্বীনের যে পার্থক্য জামায়াতে ইসলামী করে, সেটা শেষ পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর জন্য ফ্যাটাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। জামাতের লোকেরা এখন মনে করে, রুকন হতে পারলেই যেন বেহেশতের টিকেট পাওয়ার সবচেয়ে বেশি হকদার হয়ে গেলো। সে জন্য তারা তাদের কর্মসূচিভুক্ত সাংগঠনিক কাজের বাহিরে অন্য কোনো ধরনের মানবিক ও সামাজিক কাজে আগ্রহ দেখায় না। সাধারণত।

Elius Akhter: ধন্যবাদ, আপানাকে রিপ্লাইয়ের জন্য। আমি কওমী মাদ্রাসায় পড়েছি, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। জামায়াতে ইসলাম করি না।

বাংলাদেশে যে অবস্থা! ধর্ম তথা ইসলাম বলতেও মানুষ বুঝে সন্যাসবাদকে। পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা হিসেবে কয়জন আলেম বুঝে? প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে জামায়াতের সবাই বিরোধিতা অপপ্রচার করছে। তার উপর মুক্তিযুদ্ধের বিতর্কিত ভূমিকা! এই দলের বিরুদ্ধে সবদল ইজমা (ঐক্যমত) 😀 । এরপরও যে টিকে আছে আমার মনে হয় রুকনের কারণেই। তবে বাড়াবাড়ি হতে পারে, ক্ষতিকর দিকগুলো দেখিয়ে সংশোধন করা উচিৎ।

শেষ কথা– জন্মের পর থেকেই জামাতে ইসলামি সম্পর্কে খারাপ শুনছি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে, কউমী মাদ্রাসার সূত্রে। মাওঃ মাওদুদীর কিতাব পড়ে যা বুঝলাম খারাপ কিছুই পেলাম না।
বাংলাদেশে জামায়াত না থাকলে এই দেশে কমিউনিস্টদের অত্যাচারে মুসলিমদের অবস্থা হতো আফগানদের মত।

আর আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে বলতাম, আমি একজন সাম্যবাদী (ভোগবাদী)। আরবের ধর্মান্ধ মোল্লা মুসলিমদের সংস্কৃতি এই দেশে চলবে না। আরো কত কি!

সাহাবাগণ (রাযিঃ) নবী (সাঃ) এর উপস্থিতিতে ও খেলাফত প্রতিষ্ঠিত অবস্থায় ভুল করে ফেলেছেন। আর বর্তমান ফেতনার যমানায় জামায়াতের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। বিভিন্ন ইসলামী ফিরকাগুলোর সাথে কম্প্রোমাইজ করে চলা, আন্তজাতিক সম্পর্ক সব ঠিক রেখে চলতে হয়। এই অবস্থা যেই দলেই হতো, তাদের অবস্থান কী রূপ হতো আপনি আমার চেয়ে বেশি জানেন। “জামায়াত ইসলাম” করব না, কিন্তু দেশের জন্য এই দলের একবার প্রয়োজন। কত দলেরই তো পরীক্ষা হলো।

Mohammad Mozammel Hoque: এই বইটা পড়তে পারেন– জামায়াতে ইসলামী: অভিজ্ঞতা ও মূল্যায়ন

Rubayed Alam: whatever I read about Islam in my life, I think, it is one of the best writings. May Allah (SWT) increase your nek hayat so that you will be able to spread your creative understanding about Islam. Ameen!

Nazmul Hasan: আপনি কি ইংরেজি Ritualism-এর ভাবানুবাদ করেছেন ‘ধর্মবাদিতা’? এত বড় লেখা!!

Mohammad Mozammel Hoque: ritual তো বুঝি। ritualism বলে যে কোনো টার্ম আছে তা এই প্রথম শুনলাম। যে যাই হোক, মনে হচ্ছে ধর্মবাদিতার ইংরেজী হিসাবে রিচুয়্যালিজমও খাটে। তবে ঠিক পুরোটা হয় না, মনে হয়। religiosity শব্দটা দিয়েও ধর্মবাদিতা বুঝানো যায়। তবে, সে ক্ষেত্রে সমস্যা হলো, রিলিজিওসিটি দিয়ে ধার্মিকতাও বুঝানো যেতে পারে। ইয়াসির কাদি যেমনটা বলেছেন। তারমানে, ধর্মবাদিতার সঠিক ইংরেজী টার্ম নিয়ে আমি শিউর না।

Md Korban Ali: স‍্যার, আমি আপনার সম্পূর্ণ লেখাটা অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়েছি। ইসলাম ও ধর্ম নিয়ে আপনার যে বিচারমূলক বিশ্লেষণ তার সাথে আমিও একমত। কিন্তু এই তথাকথিত ধর্মবাদিতার বৃত্ত হতে বেরিয়ে এসে ইসলামকে মানবতাবাদী, সর্বশ্রেষ্ঠ ও একমাত্র অনুসরণীয় জীবনাদর্শ হিসেবে বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপন করার কাজটি তো একক প্রচেষ্টায় সম্ভবপর নয়। এর জন্য চাই সম্মিলিত প্রচেষ্টা। কিন্তু আপনার লেখায় সেটা কিভাবে সম্ভব তার উল্লেখ নাই। কাউকে না কাউকে তো শুরু করতে হবে। আপনি একটা প্লাটফর্ম তৈরি করুন আমরা আছি সাথে। ধন্যবাদ, বর্তমান বাস্তবতার নিরিখে এমন একটি বিশ্লেষণধর্মী সাহসী লেখনীর জন্য। কিন্তু আবারো মনে করিয়ে দিতে চাই লেখার সাথে সাথে প্রয়োগও চাই, এবং সেক্ষেত্রেই সবকিছু সার্থক হবে।

Mohammad Mozammel Hoque: রীতিমত ‘উস্কানিমূলক’ মন্তব্য। আন্তরিক। প্রত্যুত্তরে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা।

Faiyaz Istiak: গতকাল বিকেলে চিন্তা করছিলাম মানুষ সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য কি?? শুধুই কি আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করা নাকি অন্য কোনো দায়িত্ব আছে? মাথায় জট লেগে ছিলো। উত্তর পেলাম। ধন্যবাদ স্যার।

Mohammad Mozammel Hoque: উত্তর তো খুবই সোজা। কোরআনে আল্লাহ নিজেই বলেছেন। সূরা বাকারার শুরুর দিকে। সমস্যা হলো আমাদের এখানে প্রতিষ্ঠিত রিলিজিয়াস প্যারাডাইম বা ইসলাম সম্পর্কে প্রতিষ্ঠিত ভুল ধারণা।

লেখাটির ফেসবুক লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *