নামাজ রোজা ইত্যাদি ধরনের এবাদতগুলো হলো স্ট্রাকচারাল হুকুম। এ ছাড়া বাদবাকি সামাজিক কাজকর্মগুলো হলো (এসেন্সসম্পন্ন, এই অর্থে) এসেনশিয়াল। কথাটা অন্যভাবে বললে, যে কাজগুলো করা সরাসরি আল্লাহর হক, সেগুলো এবাদত। সেগুলো পালন করতে হবে আল্লাহ তায়ালা যেভাবে করতে বলেছেন ঠিক সেইভাবে। ঈমান ও নিয়তের সাথে সাথে এসব কাজের কর্মপদ্ধতিটাও অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য এগুলোকে নুসুক বা রিচুয়াল বলা হয়।
আর যেসব কাজ বান্দার অধিকারের সাথে সম্পর্কিত তথা সামাজিক কাজকর্ম– সেগুলো সঠিক হওয়ার জন্য সেগুলোর অন্তর্গত যে উদ্দেশ্য ও মনোভাব, সেটাই মূল বিবেচ্য বিষয়। কাজটি সম্পন্ন করার যে কোনো পদ্ধতি সঠিক বা গ্রহণযোগ্য হতে পারে যদি সেটার essence বা মর্মটুকু সঠিক হয়ে থাকে। অর্থাৎ, মুয়ামালাতের ক্ষেত্রে নিয়তই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
অতএব বুঝতে পারছেন, খোদার বিধানগুলো দুই ধরনের: স্ট্রাকচারাল (এবাদতসমূহ) এবং এসেনশিয়াল (বৈষয়িক কর্মকাণ্ড)।
স্ট্রাকচারাল-এসেনশিয়াল ভাগাভাগির এই ফর্মুলা অনুসারে এবার আপনি সব বিষয়কে সুন্দরভাবে বুঝে নিতে পারার কথা। অবশ্য এ কথা মনে রাখতে হবে, সব মুয়ামালাত সর্বাংশে এসেনশিয়াল নয়। মুয়ামালাতের মধ্যে পদ্ধতিগত অপরিহার্যতা বা স্ট্রাকচারাল নেসেসিটি থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে তা হবে আংশিক বা particular। যেমন– শুকরের গোশত খাওয়া যাবে না। বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের পদ্ধতি। লেনদেনের নিয়ম কানুন। ইত্যাদি অপরিবর্তনীয়।
এবাদতের মধ্যে পদ্ধতিগত অপরিহার্যতা হলো সামগ্রিক বা টোটাল। অর্থাৎ এসেনশিয়াল হুকুমের মূলনীতিগুলোকে আমরা এক ধরনের পদ্ধতিগত অপরিহার্যতা বা স্ট্রাকচারাল নেসেসিটি হিসেবে অভিহিত করতে পারি।
প্রচলিত ইসলামী পণ্ডিতগণ, এমনভাবে কথা বলেন যাতে মনে হয়, সঙ্গীত ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞাগুলো যেন স্ট্রাকচারাল। অথচ, এই সংক্রান্ত সব রেফারেন্সগুলোকে একসাথে করে যদি আমরা বিবেচনা করি তাহলে সহজেই বুঝতে পারবো, বাদ্যযন্ত্রের নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত বর্ণনাগুলো হলো এসেনশিয়াল।
প্রচলিত ইসলামপন্থীগণ, বিশেষ করে খেলাফতপন্থী ইসলামিস্টগণ এমনভাবে ইসলামের রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্বন্ধে কথাবার্তা বলেন যাতে মনে হয়, খেলাফতই একমাত্র ইসলামসম্মত রাজনৈতিক ব্যবস্থা। অথচ, পোশাকের মতো একইভাবে ইসলামের কোনো একক স্ট্রাকচারাল পলিটিক্যাল সিস্টেমও নাই। যেমন করে নাই খেলাফত ব্যবস্থার একক কোনো রূপ বা কাঠামো।
মূলনীতি বজায় থাকা সাপেক্ষে যে কোনো পোশাকই যেমন ইসলামসম্মত, তেমনি করে রাজনীতি ও প্রশাসন সংক্রান্ত ইসলামের মূলনীতিসমূহ ন্যূনতম মানে বজায় থাকা সাপেক্ষে যে কোনো ধরনের রাজনৈতিক ব্যবস্থাই হতে পারে ইসলামসম্মত।
বিশেষ করে বর্তমান সময়কালের প্রেক্ষাপটে বলা যায, ইসলামের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হলো আজকালকার পুঁজিবাদ ও সাম্যবাদের সুসমন্বয়। একে আমি তৃতীয় ব্যবস্থা হিসেবে বলতে নারাজ। সাম্যবাদী-পুঁজিবাদ বা পুঁজিবাদী-সাম্যবাদ বললে যে চিত্রটা আমাদের চোখে ভেসে ওঠে, আমার ধারণায় ইসলামের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, মোটের ওপর সে রকমই একটি ব্যবস্থা। ওয়েলফেয়ার স্টেট বা কল্যাণমূলক রাষ্ট্র বলতে এখন আমরা যে জিনিসটা দেখি তা তো ইসলামসম্মত রাষ্ট্রব্যবস্থারই প্রতিচ্ছবি। রাজনীতি ও অর্থনীতি– উভয় দিক থেকেই এটি সত্য।
ইসলামকে যারা নিছক ভাবাবেগপূর্ণ ধর্মীয় আবেগ থেকে চিন্তা করেন, তারা আমার এই কথাগুলোর সাথে কোনোভাবেই একমত হতে পারবেন না। তাদের কাছে তাদের নিজ নিজ দল বা মানহাজচর্চিত গালভরা বুলি তথা রেটরিক বা স্লোগানগুলোই ভালো লাগবে। এর বিপরীতে ইসলামকে যারা বাস্তবসম্মত জীবনাদর্শ হিসেবে মেনে চলতে এবং সমাজ ও রাষ্ট্রে একে বিজয়ী টেকসই আদর্শ বা ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে আগ্রহী, যারা বাস্তববাদী, যারা জীবনবাদী, যারা কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন, যারা চিন্তাশীল, তাদের কাছে আমার এই কথাগুলো জলবৎ তরলং সহজ সরল সত্য কথা হিসেবে মনে হবে।
আল্লাহ তায়ালা মানুষকে বিবেক বুদ্ধি দিয়েছেন। সেজন্যই সব বিষয়কে মডেল হিসাবে স্ট্রাকচারাল ফরম্যাটে সুনির্দিষ্ট করে দেননি। মানুষ তার বিবেক বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে সঠিক কাজটি সম্পন্ন করবে, আল্লাহ তায়ালা সেটি চান। আল্লাহর দেওয়া সর্বোৎকৃষ্ট মানের এলেম ও আক্বলের এই সুনির্দিষ্ট নিয়ামতকে যারা কাজে লাগাতে চান না, তারা সব বিষয়ে কোনো না কোনো রিচুয়ালিস্টিক ফরম্যাট বা সুনির্দিষ্ট নিয়মকানুন খুঁজে পেতে চান।
আমি আল্লাহর হুকুমকে আল্লাহ যেভাবে চেয়েছেন সেভাবেই মানতে আগ্রহী। তাক্বলীদের ক্ষেত্রে ইজতিহাদ চলে না। এটি আমরা অনেকেই বেশ খানিকটা বুঝি। কিন্তু প্রায়শই যেটা বুঝতে চাই না তা হলো, যেসব বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা কাণ্ডজ্ঞান ও জ্ঞান-গবেষণা দিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছেন সেখানে তাক্বলিদ তথা অন্ধ অনুসরণের মওকা খুঁজতে যাওয়া নিছক বোকামি কিংবা ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছু নয়।
প্র্যাকটিক্যালি ভায়াবল কোনো আদর্শে স্ট্রাকচার থাকবে ন্যূনতম, এসেন্স থাকবে অত্যন্ত শক্তিশালী। ইসলাম এসেন্স ও স্ট্রাকচারের মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে বলেই এটি কালজয়ী আদর্শ হিসেবে গণ্য। প্রায় দেড় হাজার বছর পরেও এখনো এটি কনসেপ্চুয়ালি, পটেনশিয়ালি এবং প্র্যাকটিক্যালি ভায়াবল আদর্শ।
আজকের দুনিয়ায় সভ্যতাগত দিক থেকে পাশ্চাত্য সভ্যতার এক নম্বর প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে ইসলাম। রাশিয়া, চীন, জাপান, কোরিয়া– এভাবে দুনিয়াতে অনেক দেশই তো আছে যারা উন্নত। অথচ বর্তমানে ডমিন্যান্ট পাশ্চাত্য সভ্যতার মোকাবেলায় তাদের নাই বিকল্প কোনো উপস্থাপনযোগ্য আদর্শ। যদিও প্রত্যেক দেশ ও জাতির রয়েছে নিজ নিজ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য।
ইসলামের অনুসারীরা ইসলামের এই এসেন্স ও স্ট্রাকচারের অসাধারণ ব্যালেন্সকে অনুসরণ ও উপস্থাপনার পরিবর্তে বরং এটিকে অস্বীকার করাকে কর্তব্য মনে করে। আফসোস…!
এই প্রসঙ্গে আমার এই লেখাটিও পড়তে পারেন: “অন্যান্য মতাদর্শের সাথে সম্পর্কের দিক থেকে ইসলামের ইতিবাচক অনন্যতা“
ফেইসবুকে প্রদ্ত্ত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Syed Khashrul Hasan: তাহলে ফৌজদারি আইনী কাঠামোর কি হবে? যার অনেক কিছুই নির্ধারিত। আবার রাষ্ট্রীয় পদ্ধতির কি হবে? পার্টিগত অথরোটিয়ান নাকি বহুদলীয় গণতন্ত্র? সম্পদের মালিকানা কিভাবে রাষ্ট্র ও জনগনের হাতে বন্টিত হবে? সম্পদহারা মানুষ কি স্বাধীন ও মর্যাদাবান হতে পারে? অমুসলিমরা কি রাষ্ট্রে সমানাধিকার পাবে? তারা কি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্বাহী হতে পারবেন? ইস্যুগুলি সবই মুয়ামেলাত সম্পর্কিত। এইসব ইস্যু নিয়ে রয়েছে ব্যাপক মতভেদ। তাহলে?
Mohammad Mozammel Hoque: পলাশ ভাইয়ের প্রশ্নগুলো নিয়ে সিএসিএস-এর সাইটে বেশ কিছু লেখা আছে। এগুলো তো আপনার না পড়ে থাকার কথা না।
Asif Shibgat Bhuiyan: চমৎকার লিখেছেন স্যার। একটা লজিকাল কাঠামো থেকে বিষয়গুলোকে না দেখার ভয়াবহ মাশুল গুনতে হচ্ছে আমাদের।
“প্র্যাকটিক্যালি ভায়াবল কোনো আদর্শে স্ট্রাকচার থাকবে ন্যূনতম, এসেন্স থাকবে অত্যন্ত শক্তিশালী।” এ সহজ কথাটা আমাদের অন্ধত্বের কারণে কত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
Abdullahil Kafi: সবকিছুকে successfully structural করতে পারাটা আমাদের অনেকের মিশন-ভিশনও বটে। ফলাফল স্বরূপ মুসলিম সমাজে গভীর হতে গভীরতর কতগুলো complete গর্ত সৃষ্টি ছাড়া প্রকৃত অর্থে তেমন কিছু হয়েছে বলে মনে হয় না। প্রচলিত ধারায় perturbation দরকার ছিল। চমৎকার লিখেছেন। ধন্যবাদ স্যার।
Mohammad Abul Bashar: Thanks for focusing the concept to the public. Islam hold wasatyia! Due to ignorance we are stubborn on concept of politics in Islam. Ultimate aim of politics in Islam is to establish truth, justice, dignity, welfare, stop corruption, terrorism etc. There is a misunderstanding which gives islamophobia! Who does not want positive things in the society? But when Islamic parties says same thing people opposes? Islamic parties have to focus these areas to eliminate doubt and phobia. Sometime we mingle Islam and socio-cultural issues! But peace, stability, security, harmony of a society is important. There are many burning example division of subcontinent, independence war of Bangladesh, Palestine issue, Kashmir problem, Uighur problem in China! These problems need to relook for its solution! By khelafot concept these issues cannot be resolved. Because inclusiveness, security, sustainability has to be settled. By emotion of Islam these crises cannot be resolved. Rather Muslim should be part of the system and disseminate cultural influences how a country can be conquered without war or holding the ground. Controversy will be there but I suggest justice welfare peace stability should be priority.
Mohammad Mozammel Hoque read it. nice comment. thanks a lot. I would prefer to write this line “Sometime we mingle Islam and socio-cultural issues!” as “sometime we mingle Islam as a religion and Islam as a socio-cultural value-system.”
আমি মনে করি, ইসলাম ধর্ম হিসাবে এক রকমের, সামাজিক আদর্শ হিসাবে অন্য রকমের, রাজনৈতিক আদর্শ হিসাবে ভিন্নতর। এরমানে এই নয় যে, এগুলো পরস্পরবিরোধী, বিপরীত বা সাংঘর্ষিক। বরং, ধর্ম, রাজনীতি ও সমাজনীতির মধ্যকার যে অন্তর্গত স্বাতন্ত্র্য তা ইসলাম সুচারুরূপে তুলে ধরে। ইসলাম হলো সর্বোপরি একটা দ্বীন বা জীবনাদর্শ।
এরমানে হলো, ইসলামকে ধর্ম হিসাবে লেভেল করার যে ঐতিহাসিক ও ডমিনেন্ট ট্রেন্ড, আমি সেটা ভাংগতে চাই। এর পাশাপাশি ইসলামকে মূলত রাজনীতি হিসাবে ট্রিট করার যে উঠতি ট্রেন্ড, আমি সেটারও বিরোধী। একইসাথে, ইসলামকে আদতে অরাজনৈতিক সামাজিক আদর্শ হিসাবে পরিচিত করার যে হালনাগাদের ফ্যাশন, আমি সেটার সাথেও আইডেন্টিফাইড হতে নারাজ।
আসলে এই সবকিছু নিয়েই ইসলাম। মানুষের জীবনে যতগুলো প্রয়োজনীয় দিক হতে পারে, ইসলাম সেই সব দিকেই ভায়াবল অলটারনেটিভ হিসাবে বিদ্যমান। সামগ্রিকভাবে এই সবগুলোই সঠিক। একদেশদর্শিতা ও প্রান্তিকতাকে যদি আমরা বাদ দিতে পারি।
সিএসসিএস-এর সাইট হতে “ইসলামী মতাদর্শের আলোকে সামাজিক আন্দোলন” লেখাটা যদি পড়তেন, খুশি হতাম।
ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য এবং সামগ্রিকভাবে আমাদের এই উদ্যোগের জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন, এই অনুরোধ রইল। ভালো থাকুন।
Mohammad Abul Bashar: Thank for your thoughtful comments. I will go through. All should work to break misunderstanding on Islam. Jajakallah brother. Prof Bashar. Kuala Lumpur
Mamunur Rahman: স্যার, পুরো লেখাটা পড়লাম বেশ ভালো লাগলো… আপনার কথা কিন্তু আসলেই সত্যি, আমরা অনেকেই structural আর essential ব্যাপারটার মধ্যে ফারাক না বুঝে উলটো গুলিয়ে ফেলি।
Mohammad Mozammel Hoque: বিকৃত করা ছাড়া স্ট্রাকচারাল ফেনোমেনাগুলোকে কোনোভাবেই এসেন্স দিয়ে সঠিকভাবে নেয়া (আমল করা অর্থে) যাবে না। আবার ভজঘট পাকিয়ে স্ববিরোধে লিপ্ত হওয়া ছাড়া এসেন্সের বিষয়গুলোকে স্ট্রাকচারালাইজড করা সম্ভব নয়।
এ প্রসংগে আমার লেখা “নারী অধিকার প্রসঙ্গে শরীয়াহর নির্দেশ বনাম নির্দেশনা” নিবন্ধটি পড়তে পারেন।
Mohammad Mozammel Hoque: Sourav Abdullah, teamCSCS-এ তোমার নিম্নোক্ত মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ক্বদরের রাতে না ঘুমিয়ে, এবাদত না করে ভয়েস কমান্ডে এটি লিখেছি। ক’দিন আগে H Al Bannaরা এসেছিলো। তুমি জানো। ওদের সাথে সংস্কৃতি সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে তুমুল আলোচনা হয়েছে। তুমি ঘণ্টা তিনেকের সেই প্রাণবন্ত আলোচনাটার অডিও শোনার কথা। খেয়াল করলে দেখবে, সেখানে Abdus Salam Azadi ভাইয়ের মিউজিক সংক্রান্ত সাম্প্রতিক লেখাগুলোর প্রেক্ষিতে এই স্ট্রাকচারাল-এসেনশিয়ালের ডিসটিংকশান নিয়ে কথা বলেছিলাম। তোমার প্রশ্ন পড়ে মনে হলো এ নিয়ে কিছু একটা লিখি। বলা যায়, তোমার কারণেই বেশ ক’দিন পরে একটা লেখা এবং এই লেখা। টিম সিএসসিএস-এ করা তোমার মন্তব্যটা তাৎপর্যপূর্ণ। তাই এখানে কোট করছি:
“খিলাফত কী? একটা রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক ব্যবস্থার বেশি কিছু কি আমরা বলতে পারি? তাহলে এই অর্থে এটা কি একমাত্র ধারণা নাকি একটি ধারণা? আমার তো মনে হয় খিলাফত ছিল সময়ের একটা বাস্তবতা। এই অর্থে এটা একটা ধারণা। এখানে কপি-পেস্টের কিছু নাই। একটা রাষ্ট্র বা ভূখণ্ডকে ইসলামী হয়ে ওঠার জন্য ঠিক খিলাফতের মত কোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থা কায়েম হতে হবে এমন কোনো কথা নাই। সময়ের প্রয়োজনে রাজনৈতিক ব্যবস্থা বিভিন্ন রকম হতে পারে। তবে ইসলামিক হয়ে ওঠার জন্য মূল যে জিনিসটা, সেটা হচ্ছে ইনসাফ কায়েম হওয়া। অর্থাৎ এক লাইনে বলতে গেলে, তওহীদের ভিত্তিতে মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হওয়া।”
Sourav Abdullah: বুঝতে পেরেছিলাম স্যার। তাই মনে মনে নিজেকে একটুখানি আর আপনাকে অনেক বেশি ধন্যবাদ দিয়েছিলাম।
Anamul Haque Humaid: মুয়ামালাতের ক্ষেত্রে নিয়তই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ – এইটুকুতে একটু দ্বিমত করবো স্যার। উসূলী দিক থেকে প্রতিটি মুয়ামালাতের জন্যই মূলনীতি আছে, যেখানে নির্দিষ্ট উসূলকে সামনে রেখেই নিয়ত ঠিক করতে হয়। যেমন অর্থনীতি মুয়ামালাতের বিষয়। এখানে সুদ হারাম, নির্দিষ্ট করে মুনাফাভিত্তিক লোন হারাম, অন্যের মাল দুর্নীতি করে মারা হারাম। এগুলো মেনে আপনি আর্থিক প্রতিষ্ঠান করুন, সেটার নাম ব্যাংক দেন বা আম্ব্রেলা দেন ঠিক আছে, কেবল মূলনীতি মানলেই হলো।
নিয়ত ভালো থাকলেও সুদভিত্তিক অর্থনীতি আমরা করতে পারি না উন্নয়নের নামে (অবশ্য সুদ উৎখাতের একটা প্রসেস হিসেবে বিদ্যমানতার সাথে ইসলামী অর্থনীতি চালু রাখলে সেটা ভিন্ন। যেমন– মালয়েশিয়া বা তুরস্ক)
স্ট্রাকচারাল হোক আর এসেন্সগত হোক – আখিরাত থেকে কিছুই কিন্তু বিচ্ছিন্ন নয়। এই বিষয়টি আমাদের সামনে থাকে না বলেই তাকলীদপন্থিরা আল্লাহর কথা বলতে গিয়ে অন্যদের গালি দেয়। কারণ তার সামনে একটা স্ট্রাকচার আছে মনে করে কিন্তু আখিরাত থেকে যে সেটা বিচ্ছিন্ন হয় না, সেই এসেন্সটা ভুলেই গেছে। ইমাম গাজ্জালী (রাহিমাহুল্লাহ) জ্ঞানের এই বিষয়টি ভালোভাবে বলছেন জ্ঞান অধ্যায়ে– যেকোনো ইলম বা ফতোয়া দিতে গিয়ে আখিরাত, মুক্তি ইত্যাদি কয়েকটি দিক মাথায় রাখতেন সালাফারা। অথচ আজকে কেবল স্ট্রাকচারকে রাখে, এসেন্সকে রাখে না, তাই আমরা বাস্তবসম্মতভাবে আগাতেও পারি না।
ধন্যবাদ স্যার এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে লেখার জন্য।
Mohammad Mozammel Hoque: “সব মুয়ামালাত সর্বাংশে এসেনশিয়াল নয়। মুয়ামালাতের মধ্যে পদ্ধতিগত অপরিহার্যতা বা স্ট্রাকচারাল নেসেসিটি থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে তা হবে আংশিক বা particular। যেমন– শুকরের গোশত খাওয়া যাবে না। বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের পদ্ধতি। লেনদেনের নিয়ম কানুন। ইত্যাদি অপরিবর্তনীয়।” – এই অংশটুকু দিয়ে আপনার কথা কাভার হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংক্ষেপে বললে এ রকম মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং হওয়াটাই স্বাভাবিক।
সুদ হারাম। এটি স্ট্রাকচারাল। কিন্তু সুদ = তাবৎ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, এমন তো নয়। মূলত এসেনশিয়াল বিষয়গুলোতে আল্লাহর দেয়া ন্যূনতম স্ট্রাকচারগুলোকে মেনে চলা সাপেক্ষে তা ইসলামী হয়ে উঠে। অর্থাৎ এসেনশিয়াল বিষয়গুলো কাস্টমাইজেবল।
এটি এবাদত-মুয়ামালাতের পৃথকীকরণের নামান্তর। এবাদত-মুয়ামালাতের বাইনারি আমাদের বুঝা ও কাজের সুবিধার জন্য। আদতে তো সব মুয়ামালাতও এবাদত। তাই না?
আর হ্যাঁ, স্ট্রাকচারাল-এসেন্স পৃথকীকরণের সাথে আখেরাতের বাইনারি প্রাসঙ্গিক নয়। ইসলামের মৌলিক কোনো নোশন বাদ পড়লে সেটা আদৌ ইসলামসম্মত স্ট্রাকচার বা এসেন্স হবে না, in the first place।