ইসলাম দুনিয়া ও আখিরাত উভয়কে নিরবচ্ছিন্ন হিসাবে দেখে। সুতরাং কোনো কিছু ইসলামসম্মত হতে হলে সংশ্লিষ্ট বিষয়টিকে আখিরাতে কীভাবে দেখা হবে, তাও বিবেচনায় নিতে হবে। বলাবাহুল্য, আখিরাতে দুনিয়ার হালাল-হারামের বিচার হবে এবং যথাক্রমে পুরস্কার ও শাস্তি প্রদান করা হবে। এতটুকু আমরা ভাবি। যা ক্বদাচিৎ ভাবি, তাহলো–
হালাল-হারাম নিতান্তই একটি দুনিয়াবি ব্যাপার। মৃত্যু পরবর্তী জীবনে হারামে লিপ্ত হওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। অতএব, সেখানে দুনিয়াবী অর্থে ‘হালাল কর্ম সম্পাদন’ও থাকবে না। এক কথায়, মৃত্যুপরবর্তী জীবন হলো পুরোপুরি একটা নৈতিক জীবন। অতএব, কোনো কর্মে ইসলাম উপস্থাপিত নৈতিকতা লংঘিত হলে এর জাগতিক বৈধতার সব শর্ত পূরণ হওয়া সত্ত্বেও তা ইসলামসম্মত হয়েছে, এটি বলা যাবে না। আবার, কোনো কর্মের ইসলামসম্মত উদ্দেশ্যকে বজায় রেখে তা অনৈসলামী পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা বা করার চেষ্টা করা হলে তাও ইসলামীবিরোধী হিসাবে বিবেচিত হবে।
এই প্রবন্ধে আইন ও নৈতিকতার অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কেউ ইজাব-কবুল-মোহরানা-সাক্ষী আদায় করে প্রতিদিন বিয়ে করে বাসরযাপনের পরে তালাক দেয়া অব্যাহত রাখলে তার সেই কর্মটি বাহ্যত ইসলামী পদ্ধতিতে তথা হালালভাবে করা হলেও স্পষ্টতই তা আনইসলামিক হিসাবে গণ্য হবে। কোন কোন কর্ম হালাল হওয়া সত্ত্বেও অনৈসলামী হতে পারে এ রকমের বহু উদাহরণ আপনার আমার আশেপাশেই আছে। ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে লেনদেন, সামাজিক সম্পর্ক, এক কথায় সবক্ষেত্রেই এই fallacious বা flawed কাজটি হতে পারে।
হালাল হওয়া আর ইসলামী হওয়া তাই সমার্থক নয়। যদিও হালাল হওয়াটা ইসলামী হওয়ার দুইটা শর্তের একটা। অন্য শর্তটি হলো নৈতিক মান বা চেতনা যাকে আমরা নিয়তের যথার্থতা হিসাবে জানি। হাশরের দিনে নিয়তকেও বিচারের আওতায় আনা হবে। তাই, কোনো কিছু সত্যিকারভাবে ইসলামসম্মত বা ইসলামী হবে যখন তাতে ইসলাম নির্দেশিত আইনগত শর্ত ও পদ্ধতি এবং এর অন্তর্নিহিত যে বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গি তথা নৈতিকতা – এতদুভয়ই ন্যূনতম মানে হলেও ক্রিয়াশীল থাকে।
[‘হালাল হলেই কি ইসলামিক হবে? ইসলামী নৈতিক চেতনার গুরুত্ব‘ শীর্ষক আর্টিকেলটি ফেসবুকে শেয়ার করার সময় আমার মতামত]