বাংলাদেশ নামের এ ভূখণ্ডে ইসলামের বিধানের আলোকে একটি ইনসাফপূর্ণ ও বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের প্রচেষ্টা দীর্ঘদিনের। ছোট-বড় অনেক দল ও গোষ্ঠী এ প্রচেষ্টার অংশীদার হলেও ইকামতে দ্বীনের এ ধারাবাহিকতায় জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকাই মুখ্য হিসাবে পরিগণিত। শুধু ইসলাম প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাই নয়, এ অঞ্চলের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জামায়াতের ভূমিকাকে কেউ অস্বীকার করতে পারবে না।
মনে হয় বর্তমানে জামায়াতে ইসলামী কাংখিত মান বজায় রেখে স্বীয় লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বড় ধরনের চ্যলেঞ্জের সম্মুখীন। এই ‘চ্যালেঞ্জ’ যতটা না রাজনৈতিক ও আদর্শিক তারচেয়ে অনেক বেশি অভ্যন্তরীণ। নিতান্তই অভ্যন্তরীণ এসব সমস্যার মধ্যে সঠিক পরিকল্পনা ও গণমুখী কার্যক্রম গ্রহণ, সর্বস্তরের জনশক্তি ও সংগঠন ব্যবস্থাপনার গুণগত মান উন্নয়ন, প্রজ্ঞা ও জ্ঞানমুখী নেতৃত্ব সৃষ্টি অন্যতম।
আমার মতো অনেকেই ছাত্রজীবন থেকেই এ আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়েছে ইসলামের কল্যাণমুখী, ইনসাফপূর্ণ ও জবাবদিহিমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠার ঈমানী দায়িত্বানুভূতি থেকে। উদ্দেশ্য হলো দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতা। কোরআন, হাদীস ও সংশ্লিষ্ট বিষয় অধ্যয়ন করে আমার কাছে মনে হয়েছে– আল্লাহর হক আদায়ের পাশাপাশি মুমিন হিসাবে জীবনযাপন করা বা ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে একজন বিপ্লবী হিসাবে নিজেকে পরিপূর্ণ রূপে নিয়োজিত করার অর্থ হলো মানুষ, বিশেষ করে অসহায়, বঞ্চিত, নির্যাতিত ও মজলুম নারী, শিশু ও পুরুষের উন্নয়ন ও সহায়তার জন্য কাজ করা। সাধারণ মানুষের তথা সামাজিক উন্নয়নের তাবৎ প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে লড়াই করা। মানুষের কল্যাণে কাজ হচ্ছে অথচ তাদের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন করা যাচ্ছে না– এ রকম হওয়াটা অস্বাভাবিক ঘটনা। যদি তাই হচ্ছে বলে মনে করা হয়, তাহলে ইসলামকে কথা ও কাজের মাধ্যমে যথাযথভাবে উপস্থাপনার অভাব, অযোগ্যতা ও দুর্বলতা কাজ করছে– এ কথা নিশ্চিতভাবে বুঝতে হবে। উপযুক্ত কৌশল নির্ধারণে ব্যর্থতা, যথাযথ পরিকল্পনা ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণের অভাবসহ আরো অনেক ধরনের কারণ এর পিছনে থাকতে পারে। সঠিক ও যুগোপযোগী পরিকল্পনা ও গণমুখী, দক্ষ (জ্ঞানে ও কাজে), দায়িত্ববান, এক কথায় ঈমানী চেতনায় উজ্জীবিত বিপ্লবী কর্মী ও নেতৃত্ব তৈরি করতে পারলে আমি বিশ্বাস করি, এ দেশে একটি সৌহার্দ্য ও ইনসাফপূর্ণ তাকওয়াভিত্তিক সমাজ গঠন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদের সুবিবেচনার জন্য কয়েকটি পরামর্শ নিম্নে উল্লেখ করা হলো। প্রতিটি পরামর্শের বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও বাস্তবায়নের কৌশল নিয়ে আমার সুনির্দিষ্ট বক্তব্য আছে। এসব বিষয়ে ঐক্যমত হলে পরবর্তী পর্যায়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা হতে পারে।
১. উন্নয়ন বা সমাজকল্যাণমূলক কাজের মাধ্যমে মানুষের কাছে ইসলামের আহ্বান পৌঁছানো:
সমাজকল্যাণ বা মানুষের উন্নয়নমূলক কাজের মাধ্যমে জনগণের কাছে পৌঁছানো হবে ইসলামের আহ্বান ও দাওয়াতের পদ্ধতি ও কৌশল। মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, এমনকি রাষ্ট্রীয় সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখতে হবে। তবে সমাজের বঞ্চিত ও দরিদ্র মানুষের উন্নয়নের বিষয়টিকে সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দিতে হবে। যতটা সম্ভব তাদের কাছে যেতে হবে। গণমানুষের সমস্যাগুলো অনুধাবন করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। একজন বিপ্লবী বা সমাজকর্মীর প্রতিদিনের কার্যতালিকায় দরিদ্র ও বঞ্চিত মানুষের উন্নয়নে কাজ থাকতে হবে। তাদের সমস্যা নিরসনে শুধু কথা নয়, সামর্থ্যনুসারে সরাসরি কাজ করতে হবে। তাই ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অর্থাৎ কখন কী কাজ করণীয়, পদ্ধতি কী হবে, প্রয়োজনীয় যোগান কীভাবে নিশ্চিত হবে ইত্যকার বিষয়ে প্রশিক্ষণ থাকতে হবে। আল্লাহর নির্দেশের কারণেই মানুষের সাহায্য ও সহযোগিতার কাজগুলো করে যেতে হবে। শুধুমাত্র নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতা হলে হবে না। সংগঠনের সম্প্রসারণ ও মানুষের আস্থা অর্জনে এটি বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে। এ কাজের মাধ্যমে ইসলামের সৌন্দর্য প্রকাশ এবং প্রকৃত অর্থেই উন্নত ও বৈষম্যহীন ইনসাফপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামের বিধানের অপরিহার্যতা সমাজে প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত হবে। আমাদের সমাজে বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে। এ সম্পদের সুসমন্বয় সাধনের মাধ্যমে সেসবকে কাজে লাগানোর কৌশল জানা থাকতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন সঠিক সিদ্ধান্ত, নীতিমালা, কৌশল, ইচ্ছাশক্তি ও যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ। সমাজ উন্নয়নমূলক বিষয়গুলির উদাহরণ হিসাবে দরিদ্র মানুষের জীবন ও জীবীকার উন্নয়ন, সাধারণ শিক্ষা ও ইসলামী বিষয়ের প্রাথমিক ও মৌলিক শিক্ষা, অ-ইসলামী জনগোষ্ঠীর জন্য যার যার ধর্মানুযায়ী শিক্ষার ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, কৃষি, সেনিটেশন, নিরাপদ পানি, আবাসন ব্যবস্থা, দুর্যোগ মোকাবেলা, আইনী সহায়তা, সামাজিক সচেতনতা, নারীর মর্যাদা, শিশুর বিকাশ, বঞ্চিতদের জন্য সরকারী সেবার সহজ প্রাপ্যতা, সেবাদানকারী সংস্থাসমূহের সদস্যদের মধ্যে দায়িত্বানুভূতি বৃদ্ধিকরণ ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
২. জামায়াতে ইসলামী নয়, ভিন্ন নামে এ দেশে ইসলামী আন্দোলনের কাজ করতে হবে:
‘জামায়াতে ইসলামী’ নামে বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলনের কাজ শুরু করা ছিল একটি ভুল সিদ্ধান্ত এবং ভবিষ্যতে ‘জামায়াতে ইসলামী’ নামে ইসলামী আন্দোলন করে কাঙ্খিত অগ্রগতি অর্জন কঠিন হবে। অতএব ভিন্ন কোনো নামে আন্দোলনের জন্য এখনই কাজ শুরু করা প্রয়োজন। তবে এই পরিবর্তনের জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হবে। হঠাৎ করে কাজটি করা যাবে না। কেন ‘জামায়াত’ নামের পরিবর্তন প্রয়োজন, তার অনেক কারণ বলা যাবে। তবে সংক্ষেপে যা বলা যায় তা হলো– জামায়াতসহ সর্বমহল কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, জামায়াত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ রাষ্ট্র হোক তা চায়নি। এই না চাওয়ার অনেক কারণ আছে। জামায়াত নেতৃত্ব হয়তো কোনো অন্যায় করেননি। কিন্তু তাদের কার্যক্রম এ দেশের মানুষকে নির্যাতন ও হত্যাকারী পাকিস্তানী আর্মিকে শক্তিশালী করেছে। অতএব, এর দায় জামায়াত এড়াতে পারে না। সর্বোপরি জামায়াত নেতাদের লেখা বই ও বক্তব্যে এটি প্রকাশিত হয়েছে, জামায়াত তখনকার (১৯৭১ সালে) বাস্তবতার আলোকে তথা জনমতের পক্ষে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। বিরোধী পক্ষ বর্তমানে নানা ধরনের প্রচারণার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছে বা হচ্ছে যে, জামায়াত স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি। শুধু তাই নয়, তারা নানা অপকর্মের হোতা। পাঠ্যপুস্তক থেকে শুরু করে বিভিন্ন গল্প, উপন্যাস, গান, কবিতা, নাটক, সিনেমা ইত্যাদিতে জামায়াত সম্পর্কে নানা ধরনের নেতিবাচক ও জঘন্য কল্পকাহিনী প্রচার করা হচ্ছে। অথচ, এগুলোর বিপক্ষে জামায়াতের নিজের বা তাদের পক্ষে বলার সুযোগ খুবই সীমিত। এটি একটি বড় প্রশ্ন যে, বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসের সাথে বিতর্কিত হয়ে ব্যাপক জনগোষ্ঠীর আস্থা অর্জন করা কতটুকু সম্ভব? তাছাড়া মানুষ ১৯৭১ সালের কথা ভুলে যাবে– এই তত্ত্ব সঠিক প্রমাণিত হয়নি। বরং উল্টো হয়েছে। নাম ও সংগঠন পরিচালনা-পদ্ধতি পরিবর্তনের কাজটি অনেক আগেই করা উচিত ছিল। এখন এটি করা কঠিন, কিন্তু অসম্ভব কিছু নয়। তবে নাম পরিববর্তনের বিষয়টি সাম্প্রতিক জঙ্গী ইস্যুকে বিবেচনায় রেখে করতে হবে। পরিবর্তনের জন্য বিভিন্ন মহলের মতামতের ভিত্তিতে একটি কৌশলপত্র তৈরি করতে হবে।
৩. আন্দোলনের কর্মীদের জ্ঞান অর্জনের বিষয়, পাঠ্যসূচি ও প্রশিক্ষণ পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন প্রয়োজন:
ইসলামী আন্দোলনের নেতৃত্ব ও কর্মীদের জ্ঞান অর্জনের বিষয় ও পদ্ধতির ব্যাপক পরিবর্তন প্রয়োজন। ইসলামের মৌলিক বিষয়ের পাশাপাশি জ্ঞান অর্জনের জন্য সমাজ উন্নয়ন ও গঠন, দারিদ্র বিমোচন ও দারিদ্রের কারণ, জাকাত ও জাকাতভিত্তিক উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তি, সমাজের বিবর্তন, মানবাধিকার, সুশাসন, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও ইস্যু যেমন বিশ্বব্যাংক, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা, জঙ্গীবাদ, জলবায়ু পরিবর্তন, গ্লোবালাইজেশন, এমডিজি, নারী ও শিশু অধিকার, অভিবাসন ইত্যাদি বিষয় সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে তথ্যবহুল ও মানসম্মত বই লিখা, সংগ্রহ, অনুবাদ ও গবেষণার জন্য গবেষণা কেন্দ্রের প্রয়োজন হবে। তাছাড়া ইসলামের মৌলিক বিষয় ও নির্দেশনাগুলোকে মানুষের জীবনের চলমান সমস্যার সাথে সম্পৃক্ত করে বাস্তবতার আলোকে পুস্তক রচনা করতে হবে। ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে আরো বেশি তথ্যসমৃদ্ধ ও সুলিখিত বইসহ নতুন করে বাংলায় কোরআনের তাফসীর লেখা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশে সম্প্রতি প্রকাশিত ইংরেজী, আরবী ও অন্যান্য ভাষায় লিখিত বইয়ের সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে। সিলেবাসভুক্ত বইসমূহের মান নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা থাকতে হবে। সাংগঠনিক মান বড় হলেই তিনি বই লিখতে পারবেন– এই ধারণা ঠিক নয়। বরং বিশেষজ্ঞ কমিটির অনুমোদনের পরই বই সিলেবাসভুক্ত করতে হবে। বিশেষজ্ঞ কমিটিতে সংগঠনের দায়িত্বশীল ব্যক্তি থাকলেও তাঁকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে একাডেমিক বিশেষজ্ঞ হতে হবে। একমুখী প্রশিক্ষণ পদ্ধতির পরিবর্তন হতে হবে। প্রশিক্ষণ হবে অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতিতে। প্রশিক্ষণে আধুনিক উপায় ও উপাদান ব্যবহার করতে হবে। প্রত্যেকটি বিষয়ে প্রশিক্ষণের মডিউল থাকতে হবে। যারা প্রশিক্ষণ দিবেন প্রশিক্ষক হিসেবে তাঁদের প্রশিক্ষণ থাকতে হবে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে লব্ধ জ্ঞান ও দক্ষতা বাস্তব জীবনে কর্মীরা কীভাবে কাজে লাগাচ্ছেন তা নিয়মিত মূল্যায়ন করতে হবে। মূল্যায়নের আলোকে প্রশিক্ষণের মডিউল ও পদ্ধতি প্রয়োজনে পরিবর্তন করতে হবে। প্রশিক্ষণের সার্বিক কাজটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য একটি প্রশিক্ষণ ইনস্টিউট ও তার শাখা প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।
৪. আন্দোলন ও সংগঠনের মধ্যে ইসলামের সুমহান ও ইনসাফপূর্ণ প্রশাসন পরিচালনা বা ব্যবস্থাপনার মডেল প্রতিষ্ঠা করা:
সংগঠনে ও সংগঠনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহযোগিতায় গড়ে উঠা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় সুশাসন, স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচারের বিধান পরিপূর্ণভাবে থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে আত্মীয়করণ, আঞ্চলিকতা, অস্বচ্ছতা, অযোগ্যতা ইত্যাদি অতি অবশ্যই ও কঠোরভাবে পরিহার করতে হবে। মোটকথা, সংগঠন বা সংগঠনের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানসমূহকে হতে হবে ইসলামী রাষ্ট্রের আদর্শ মডেল। প্রতিষ্ঠানভুক্ত সকল স্টাফের সমনৈতিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে কেউ লক্ষাধিক টাকা বেতন পাবে, আবার কেউ পাঁচ হাজার টাকা বেতন তুলবে– এ ধরনের জুলুম চলতে পারে না। মানুষের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার কারণে বেতনের পার্থক্য হতেই পারে। কিন্তু তার একটি সীমা থাকা উচিত। নেতৃত্ব তৈরির জন্য ‘এক ব্যক্তির একাধিক প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী দায়িত্ব পালনের’ সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
প্রতিষ্ঠানসমূহের কাজের বাস্তবভিত্তিক সুস্পষ্ট পরিকল্পনা (SMART-Specific, Measurable, Attainable, Realistic, Time bound) ও মনিটরিং পদ্ধতি থাকতে হবে। প্রতি বছরই কাজের মূল্যায়ন করতে হবে। পরিকল্পনা অনুসারে ফলাফল কী হলো তা যাচাই করে দেখতে হবে। প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ববানদের বছর শেষে কাজের অর্জন ও অগ্রগতি সম্পর্কে জবাবদিহির ব্যবস্থা থাকতে হবে। সংগঠন সমর্থিত প্রতিষ্ঠানসমূহের ব্যবস্থাপনা ও সেবার মান হতে হবে সমাজের অন্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় লক্ষ্যণীয় পরিমাণে উন্নত। বিশেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) মান এমন পর্যায়ের হতে হবে যে মানুষ যেন সমাজের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে সেবার ব্যাপ্তি ও গুণগতমান বিবেচনায় সুস্পষ্ট পার্থক্য দেখতে পায়।
৫. ক্যাডার পদ্ধতির নমনীয়তাসহ মেধাবী, সৃজনশীল ও দক্ষ দায়িত্বশীল নির্বাচনের সুযোগ থাকা প্রয়োজন:
বিদ্যমান ক্যাডার পদ্ধতির নমনীয়তা প্রয়োজন। সমাজের অভিজ্ঞ, বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, মেধাবী, সৃজনশীল ও যোগ্যদেরকে নেতৃত্ব পর্যায়ে আনতে হবে। বর্তমান ক্যাডার পদ্ধতি এক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে বলে প্রতীয়মান হয়। মেধা ও নেতৃত্ব বিকাশের জন্য নেতৃত্বের গঠনমূলক সমালোচনা করার সুযোগ থাকতে হবে। মূল সংগঠন এবং সংগঠনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত সংস্থাসমূহে দায়িত্বশীল নির্বাচনে ‘কৃত্রিম শূরায়ী পদ্ধতি’ পরিহার করতে হবে। নির্বাচনে স্বচ্ছতা থাকতে হবে। নেতৃত্বকে হতে হবে উদার মানসিকতার। তাঁদেরকে সংগঠন ও জনশক্তি ব্যবস্থাপনায় হতে হবে দক্ষ। বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কে দায়িত্বশীল বা কে দায়িত্বশীল নয়– তা দেখার সুযোগ থাকতে পারে না। সংশ্লিষ্টদের বিশেষজ্ঞসুলভ জ্ঞান ও আন্দোলনের প্রতি ভালোবাসা বা ন্যূনতম কমিটমেন্টই হবে মূল বিষয়।
৬. দেশের উন্নয়নে বিভিন্ন পেশায় যোগ্য ও দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে অবদান রাখতে হবে:
সম্ভবত বর্তমানে দেশের সকল সরকারী ও বেসরকারী পেশাজীবীদের মধ্যেই ইসলামী আন্দোলন সমর্থক পেশাজীবী সংগঠন রয়েছে। সহযোগী পেশাজীবী সংগঠনের প্রধান কাজ হবে দেশ পরিচালনার সাথে জড়িত পেশাসমূহের মধ্যে যোগ্য ও দক্ষ লোক তৈরিতে অবদান রাখা এবং দায়িত্বশীলতার সাথে পেশাজীবীসুলভ ভূমিকা পালন করা, যাতে জনগণ সহজেই মানসম্মত সেবা পেতে পারে। রাজনীতি করা তাদের কাজ নয়। তাদেরকে রাজনীতির কাজে ব্যবহার করা যাবে না। যিনি যে পেশায় থাকবেন তাকে সেই পেশায় সবচেয়ে দক্ষ ও সৃজনশীল হতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে লোক নিয়োগে মেধাকে গুরুত্ব দিতে হবে। দলীয় পরিচয়ে বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারী ক্যাডার সার্ভিসসহ সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে নিয়োগে কোনো প্রভাব সৃষ্টি করা যাবে না। মেধা, ইসলামী জীবনাদর্শ ও দেশের প্রতি কমিটমেন্টই হতে হবে নিয়োগের মাপকাঠি। সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পেশার লোকদের কাছ থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পরামর্শ নিতে হবে। যোগ্যতা ও দক্ষতা না বাড়িয়ে শুধুমাত্র ‘সাংগঠনিক মানের’ কারণে কোনো সংক্ষিপ্ত পথে কাউকে পদায়ন করার মানসিকতা পরিহার করতে হবে। বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ইসলামী সংগঠনের অনুসারীরা হবে ঐ পেশায় সবচেয়ে দক্ষ ও যোগ্য। যাতে অন্যরা দক্ষতা ও যোগ্যতার কারণে তাকে মূল্যায়ন করতে বাধ্য হয়। এর জন্য কর্মসূচি থাকতে হবে। ইসলাম অনুসারী ব্যক্তিদের কার্যক্রম ন্যায়ের উপর থেকে সবসময় গরীব ও বঞ্চিতদের পক্ষে হতে হবে। পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তাদের সেবা ও অর্থের একটা অংশ সর্বদাই দরিদ্র ও বঞ্চিতদের জন্য ব্যয় করার মনমানসিকতা পোষণ করতে হবে।
৭. ছাত্র সংগঠন বিষয়ে বিশেষ পরামর্শ:
ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্ব ও কর্মীদের প্রধান দায়িত্ব হলো পাঠ্যপুস্তক গভীরভাবে অধ্যয়ন করা ও ভালো ফলাফল অর্জনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো। পাঠ্যসূচির পাশাপাশি দেশ পরিচালনা, আর্থসামাজিক ও আদর্শিক বিষয়ে তাদেরকে জ্ঞানচর্চা করতে হবে। নেতৃত্বের জন্য ইয়ার ড্রপ দেওয়া বা পরীক্ষা না দেয়ার সংস্কৃতি অবশ্যই ত্যাগ করতে হবে। এক বা দুই বারের বেশি বড় কোনো শাখা বা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে থাকা যাবে না। ছাত্র সংগঠনকে জাতীয় রাজনীতিতে ব্যবহার করা যাবে না। তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা ও গবেষণার অনুকূল পরিবেশ তৈরি ও সংরক্ষণে ভূমিকা রাখবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ছাত্রদের সমস্যা সমাধানে তারা আন্দোলন করতে পারে। এ ক্ষেত্রে আলোচনা, সেমিনার, কর্মশালা ইত্যাদি শিক্ষামূলক কর্মসূচিকে প্রাধান্য দিবে। কিন্তু জাতীয় রাজনীতিতে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত হওয়া যাবে না। তাদের কর্মসূচিতে রাজনৈতিক দলের শীর্ষ বা পরিচিত নেতাদের অতিথি হিসাবে রাখা যাবে না। শিক্ষাবিদ, গবেষক ও দেশবরেণ্য বুদ্ধিজীবীরা হবেন ছাত্রদের নানা কর্মসূচির আমন্ত্রিত অতিথি। জাতীয় পর্যায়ে বড় ধরনের পরিবর্তনের লক্ষ্যে তাদের রাজপথে ভূমিকা রাখার প্রয়োজন হতে পারে, কিন্তু সে ধরনের প্রয়োজন স্বভাবতই হবে খুবই কদাচিৎ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনে ভূমিকা রাখার জন্য শিক্ষক রাজনীতির সকল প্রভাব হতে তাদের সচেতনভাবে দূরে থাকতে হবে।
[বিশেষ দ্রষ্টব্য: প্রায় দু’বছর আগে একজন প্রিয় দায়িত্বশীল হঠাৎ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বেড়াতে এসে আমরা ক’জন পুরনো ভাইদের ডেকে এসব পয়েন্টে কথা বললেন। আমি উনাকে পয়েন্টগুলো আমার ডায়েরিতে লিখে দেয়ার অনুরোধ করায় তিনি তা লিখে দেন। পরবর্তীতে উনাকে আমি নিরবচ্ছিন্নভাবে এসব পয়েন্টকে আরো বিস্তারিতভাবে লেখার জন্য অনুরোধ করতে থাকি। এক পর্যায়ে তিনি সেটি লিখিত আকারে আমার কাছে পাঠিয়ে অনুরোধ করেন, আমি যেন ইচ্ছামতো সংশোধন করে উনার কাছে পাঠাই। আমি বিজয় ইউনিকোডে কিছুটা সংশোধন করে তা পুনঃটাইপ করে উনাকে পাঠাই। লেখাটি ব্লগে দেয়ার জন্য উনার অনুমতি চাইলে তিনি আমাকে জানান, তিনি জামায়াতের একজন শীর্ষতম দায়িত্বশীলসহ বেশ ক’জন গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীলদের কাছে এটি হাতে হাতে দিয়েছেন এবং আলোচনা করেছেন। তিনি আশা করেছিলেন কাজ হবে। অন্তত কিছু না কিছু কাজ হবে! তাছাড়া কোনো গণমাধ্যমে এসব ‘সাংগঠনিক বিষয়াদি’ আলোচনা করার ব্যাপারে উনার প্রচণ্ড অনীহা ও আপত্তি ছিল। আমি জানতাম (?), জামায়াত উনার মতো প্রাক্তন ছাত্র দায়িত্বশীলদের এসব ‘বুদ্ধিজীবীসুলভ পরামর্শের’ কোনো তোয়াক্কা করে না। শোনাটাই সার! বক্তা যেন হয়রান, বিরক্ত এবং (এতায়াত ও আখিরাত নষ্ট হওয়ার ভয়ে) সন্ত্রস্ত হয়ে ওসব নিয়ে আর না বলেন! কিছুদিন আগে উনার সাথে আবার দেখা। কথা হলো অনেক। বললাম, ব্লগে এখন তো অনেক লেখা। আমিও লিখেছি। আপনার লেখাটা কি ব্লগে দিবেন? উনি বললেন, চাইলে আপনি দিতে পারেন। এক ধরনের সংকোচের কারণে উনার নাম-পরিচয় উহ্য রাখা হলো। তিনি ঢাকায় থাকেন এবং ব্যাপক যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন।]
এসবি ব্লগ থেকে নির্বাচিত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
আবু সাইফ: আপনাকে মোবারকবাদ। কিন্তু আপনার পোস্টের ফুটনোটের পরে আর কিছু বলার থাকে কি? এ দরখাস্ত তো এখন শুধু আরশে আযীমের মালিকের কাছে করা ছাড়া আর জায়গা নেই
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: একবার মকবুল আহমদ সাহেবের কাছে পরিচিত একজন সিনিয়র সহকর্মী আমাদের সিএসসিএস-এর কাজের ধরন সম্পর্কে, সুনির্দিষ্টভাবে আমার নাম উল্লেখ করে কথা বললেন। তিনি নাকি বেশ মনোনিবেশ করে শুনেছিলেন। ব্যস, এতটুকুতেই শেষ!
জামায়াতের অধিকাংশ দায়িত্বশীলের বক্তব্য ও বিবেচনা-আশ্বাস সরকারী মন্ত্রী-এমপিদের সম্বর্ধনাকালীন বক্তব্য ও বিবেচনা-আশ্বাসের মত লিপ-সার্ভিস ছাড়া আর কিছু নয়! উনারা সবাই সিস্টেমের আনুগত্য করেন। এবং স্বীয় বক্তব্যের পক্ষে কোরআন-হাদীসের রেডিমেইড রেফারেন্স টেনে বিরোধীমতকে গিলোটিন করেন। দুঃখ ছাড়া কপালে আর কী আছে?
আবু সাইফ: আপনি তো একজনের নাম ও মাত্র একটি ঘটনা বললেন, আমার কাছে এমন ঘটনা আরো অনেক আছে।
মিডিয়া ওয়াচ: জামাত কী করছে, কী করা উচিত, এটা তালাশ না করে আপনি কী করছেন– সেটা আমাদের জানালে উপকৃত হতাম।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: হ্যাঁ ভাই, সারাক্ষণ নেতিবাচকতায় ডুবে না থেকে ইতিবাচক কাজের মাধ্যমে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করা আমাদের সকলের কর্তব্য। আমার ইসলামচর্চার ক্ষেত্রে জামায়াত সংশ্লিষ্টতা একটা দিকমাত্র। যেটার ইতিবাচক দিক হলো আমি জামায়াতের চারটি শর্ত পূরণ করা কর্মী। প্রায় ২০ বছর ধরে আমি কনসিসটেন্টলি আল্লাহর রহমতে এই মান ধরে রাখতে পেরেছি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সাংঘর্ষিক ময়দানে অব্যাহতভাবে সক্রিয় ভূমিকা রেখে আসছি।
আমার জামায়াত-সংশ্লিষ্টতার নেতিবাচক দিক হলো আমি জামায়াতের ভুলগুলো সম্পর্কে সব সময় সোচ্চার ছিলাম। আছি। এখন ব্লগ হয়েছে বিধায় আপনারাও এসব জানছেন। কখনো নিজের বিবেককে কারো কাছে বর্গা দেই নাই, তথাকথিত ‘কালেকটিভ র্যাশনালিটির’ নামে বিবেচনাবোধকে কখনো বাদ দেই নাই। অলস সমালোচনা ও অন্ধ-আনুগত্যশীলতা – এই দুই প্রান্তিকতা হতে আমি সবসময় নিজেকে মুক্ত রাখতে চেয়েছি।
জামায়াতের অ্যাক্টিভ কর্মী হিসাবে কাজ করার পাশাপাশি আমি সবসময়ই কিছু না কিছু সমাজসেবামূলক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক কাজ করার চেষ্টা করেছি। দায়িত্বশীলেরা সক্রিয়ভাবে এসব কাজে আমাকে সহযোগিতা করেছেন।
আমি যা করতে চাচ্ছি তা হলো সমাজ ও সংগঠনের সর্বস্তরে কথাবার্তার একটা ধারা সৃষ্টি করা। যাতে লোকেরা অবাধে প্রশ্ন করতে পারে। যে কোনো জরুরি পরিস্থিতিতেও লোকদের প্রশ্নের যথোচিত জবাবদান নিশ্চিত করা। এটিকে আপনি বলতে পারেন, ইন্টারেক্টিভ ইন্টেলেকচুয়্যালিটি।
আমার বক্তব্য হলো: আদর্শ ও সংগঠন আইডেন্টিক্যাল নয়। অনুরূপভাবে, আদর্শ প্রতিষ্ঠাপরবর্তী ও আদর্শ প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের জন্য প্রযোজ্য বিধি-কার্যক্রম একই রকমের বা এক নয়। প্রচলিত ইসলাম শিক্ষা পদ্ধতিতে এই মৌলিক বিষয় দুটিকে স্পষ্ট না করে কোরআন-হাদীসের রেফারেন্স-ভাণ্ডারকে যথাসম্ভব আয়ত্ব করানো চেষ্টা করা হয়। যার ফলে, তাত্ত্বিক ও কাণ্ডজ্ঞানের দিকে থেকে দুর্বল এবং সমাজের মূলধারা হতে বিচ্ছিন্ন এসব আলেম ও দায়িত্বশীলেরা সিস্টেমের দোহাই দিয়ে ইসলামকে একটা ধর্ম হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেছে। এর অপ্রতিদ্বন্দ্বী জাগতিক যোগ্যতাকে প্রশ্নের সম্মুখীন করে দিয়েছে!?
ধর্মবাদিতা হতে (দ্বীন) ইসলামকে আমি উদ্ধার করতে চাই। আল্লাহর একজন খলিফা হিসাবে এটি আমি নিজের জন্য দায়িত্ব বলে মনে করি। ইসলামী আন্দোলনের ব্যাকগ্রাউন্ড হতে উঠে আসা লোক হিসাবে প্রচলিত ধারার ভালো-মন্দ আমার কথায় ও লেখায় আসাটা প্রাসঙ্গিক নয় কি?
বলতে পারেন, ‘আপনার কথা/লেখায় সমালোচনাই বেশি’। হ্যাঁ, আমার লেখায় সমালোচনার ভাগ বেশি। শিবিরের কোনো কোনো কেন্দ্রীয় সভাপতিকে সরাসরি বলেছিলাম– আপনারা কেন বারবার বলেন, আমাদের এতজন সদস্য, এতজন সাথী, এতজন এত এত ভালো রেজাল্ট পেয়েছে? মোট কতজনের মধ্যে আপনারা কততম, সেটি বলেন না কেন? রিপোর্টে এ বিষয়ে একটা ঘর বাড়ালে অসুবিধা কি?
নিজেদের সুপেরিওরিটির একঘেয়ে, একপেশে ও খণ্ডিত প্রচারণা করা জামায়াত-শিবিরের গ্রোয়িং সাংগঠনিক ট্রেন্ড! উনারা বলেই বসেন, আপনি কী করছেন? আপনার কোয়ারির উত্তরে একটা সংক্ষিপ্ত কৈফিয়ত দিলাম। ভালো থাকুন। দোয়া করুন।
অনুচিত: সমস্যা থেকে উত্তরোনের জন্য বয়োবৃদ্ধ নেতাদের অবসর প্রদান করা জরুরী এবং নতুন প্রজন্মের নেতাদের নেতৃত্বের আসনে প্রতিষ্ঠা করা উচিত।
শামিম: ফুটনোট দেখে আর কমেন্ট করতে ইচ্ছে হলো না! তবুও বলে দেই, সাংগঠনিক প্রতিষ্ঠানের বিরোধী আমি। এটা না থাকাই উত্তম। প্রতিষ্ঠান হবে ব্যক্তিগত।
আহমেদ চৌধুরী: ভাই, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সাহস করে আমাদেরকে শেয়ার করার জন্য।
বর্তমান জামায়াতের অসংখ্য অগণিত নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীর মনের আকুতি পেশ করেছেন। সময়ের দাবি হলো তাই। কিন্তু তা কি সম্ভব? আমি আবু সাইফ সাহেবের সাথে একমত। জামায়াতে বাহির থেকে কিছু বলে সংশোধন করা যাবে এমন কিছু কল্পনা করাও অপরাধ। জামায়াতে বর্তমানে সিন্ডিকেট নেতৃত্ব তৈরি হয়েছে তাতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন, কুরআন-সুন্নাহ ইত্যাদি শ্লোগানে পরিণত হয়েছে। কী তাদের ব্যক্তিগত জীবন, কী তাদের ব্যবহারিক জীবন ইত্যাদি পর্যালোচনা করলেই প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে জামায়াতের নিচের টায়ারে এখনো মোখলেছ কর্মীবাহিনী রয়েছে, এটা সত্য। এবং এরাই জামায়াতের প্রাণ। আপনাকে ধন্যবাদ।
আবু ফারিহা: ভাইজান, অনেকদিন পর মন্তব্য করলেন। আপনাকে ধন্যবাদ ও মোজাম্মেল হক ভাইকেও ধন্যবাদ, অনেকেরই মনের আকুতি সাহস করে ব্লগে প্রকাশ করার জন্যে। তবে তা ব্লগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে বলে মনে হয়। এসব নিয়ে চিন্তা করার সময় কারো আছে কি?
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: জামায়াত এহতেসাবের পদ্ধতিতে সংশোধন হবে না– এটি আমার পুরনো কনভিকশন। আমি মনে করি, আমাদের দায়িত্ব হলো সকল ভুল ধারণার অপনোদন এবং সঠিক বুঝ আয়ত্ব করা ও তা সবার কাছে তুলে ধরা। মানা না মানা সংশ্লিষ্টদের কাজ। ওয়ামা আলাইনা ইল্লাল বালা-গ।
প্রবাসী মজুমদার: আপনার লিখা পড়েছি। সহমত। তবে বরাবরের মতই এটিও সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি এড়াবে। দীর্ঘদিন ধরে অনুশীলন করা একটি সিস্টেমকে ভাঙ্গতে কিংবা আপডেট করতে হলে গণ্ডির মাঝে অনুশীলনে অভ্যস্ত লোকদের ৭৫% এই পরিবর্তন-পরিবর্ধনকে ঈমানের পরিপন্থী মনে করে। এমনকি এ ধরনের বিচার-বিশ্লেষণ অনেকটা ইসলামবিরোধী বলেও মনে করে। গীবতের আড্ডাখানাও দেখেছি। গ্রুপিংয়ের চেহারাও দেখেছি। দেখেছি ক্ষমতালোভীকে। ইনসুরেন্সের জন্য দ্বীনকে বিক্রি করতে দেখেছি। যেসব কারণে কর্মী সদস্যর সদস্যপদ যায়, সেসব কারণে নেতার নেতৃত্ব যায় না। ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীলকেও দেখা হয়েছে।
নেতা বললেন, ওমুককে অ্যারেস্ট করলে কী হবে জানি না। তিনি চোখের পানিও ফেললেন। এরপর কত কিছু হলো। কিন্তু কিছুই তো হলো না। যদি সবই হেকমত হয়, তাহলে অগ্রীম এসব কথা বলার কী প্রয়োজন? সামাজিক সৌজন্যতার খাতিরে আমাদের সন্তানদের বিয়ে এখন ফাইভ স্টার হোটেলে হয়। কোটি টাকা ব্যয় করে ক্রিকেটের জন্য ঢাকা শহরকে সাজিয়ে দিয়ে কোন ইসলাম প্রতিষ্ঠার নমুনা দেখিয়েছি? কেউ মনে কষ্ট পেয়ে থাকলে আন্তরিকভাবে দুঃখিত। বলার জায়গা নেই, তাই এখানে বললাম।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ক্রিকেটের জন্য টাকা দেয়ার বিষয়ে আমি হ্যাঁ বা না জাতীয় কিছু বলবো না। তবে লক্ষ্য করেছি, দেশ-বিদেশের অনেক শুভানুধ্যায়ী এতে প্রচণ্ড আহত হয়েছেন। আমি উনাদের সেন্টিমেন্টকে সম্মান করি। যে কাজে নির্দোষ জনমত বিভ্রান্ত হবে, আহত হবে, তা করার কী দরকার? জামায়াতের লোকজন তলে তলে আওয়ামী লীগের সাথে লাইন রাখার বা করার চেষ্টা করে– এই ধারণাটা কি ভুল?
চট্টগ্রাম মহানগরীর যে প্রাক্তন শীর্ষ দায়িত্বশীলের পরহেজগারী ও গরিবানা হাল ছিল জনশক্তির কাছে উদাহরণের মতো, উনার মেয়ের বিয়ে যখন হলো কিং অব চিটাগাংয়ে বেশ জাঁকঝমকের সাথে, তখন অনেককেই দেখেছি প্রচণ্ড আহত, দ্বিধান্বিত, ক্রুদ্ধ ও সমালোচনামুখর হতে।
পশ্চিমবঙ্গের বাম নেতাদের মতোও তো আমাদের ইসলামী দায়িত্বশীলরা হতে পারেন নাই। খাই দাই সেক্রিফাইস– এই হলো ‘মূলনীতি’(?)!
আবু আফরা: খুবই ইন্টারেস্টিং। পড়বো আজ রাতে। বাইরে গেলাম বলে পড়া হলো না, প্রিয়তে রাখলাম। আরো লিখুন। দেশে চাটুকার আর গোঁড়ামিতে আড়ষ্ট কর্মীদের জন্য এগুলো হতে পারে আবেহায়াত। অসংখ্য ধন্যবাদ।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ‘ইসলামের সমালোচনা পদ্ধতি’ শিরোনামে একটা লেখা আপনার কাছ হতে দাবি করছি। এতে গণজবাবদিহিতার প্রসঙ্গটিও আনবেন। নির্বাচন ও মনোনয়নে নির্বাচকমণ্ডলী কর্তৃক মতামত যাচাইয়ে ইসলামী সংগঠনসমূহে প্রচলিত সর্বাত্মক গোপনীয়তার নীতি কতটুকু গ্রহণযোগ্য, তাও বলবেন আশা করি।
তারাচাঁদ: মোজাম্মেল ভাই, আমি আপনার পোস্টের ১, ৩, ৪, ৬, ৭ নম্বর পয়েন্টের সাথে পুরোপুরি একমত। কিন্তু, কাজটা করবে কে? এ নিয়ে আমিও ভাবছিলাম। আপনিই লিখলেন। একমত প্রবাসী ভাইয়ের সাথেও। কিন্তু কাজটি করবে কে? এত বড় পরিকল্পনা এই সংগঠন একসাথে নিতে পারবে না। ধীরে ধীরে পরিবরর্তন করে আনতে হবে।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: সবাই মিলে দায়িত্ব নিবে। সবাই কারা? এই সবাইকে একত্রিত করবে কে বা কারা? এখানে একটা বৃত্তাবদ্ধতা চলে আসছে। তাই না? ছোটবেলায় ইংরেজি দ্রুত পঠনে পড়েছিলাম। থ্রি কোয়েশ্চন। সে অনুসারে বর্তমানই উপযুক্ত সময়। আমি, আপনি প্রত্যেকেই যদি মনে করি, বিশ্বব্যাপী দ্বীন (খিলাফত) প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সকল দায়িত্ব পালন আমার একক ও ব্যক্তিগত দায়-দায়িত্ব, তখন দেখা যাবে কেউ কারো ঐক্যমত, আহ্বান বা সহযোগিতার জন্য বসে থাকবে না। ‘ওয়া সারিয়ু ইলা মাগফিরাতিম মির রাব্বিকুম’-এর মর্মার্থ ও সেন্টিমেন্ট তো এই, তাই না? আপনার আমার মতো লোক সমাজে ক’জন আছে? আল্লাহ কি আমাদের যথেষ্ট যোগ্যতা দেন নাই? একেকজন ব্যক্তি একেকটি সংগঠন, একেকটি আন্দোলন, একেকটি বিপ্লব। আমাদেরকে এভাবেই ভাবতে হবে। এই না করে আমরা অনেকেই বসে আছি ঊর্ধ্বতনের ‘ডিসিশনের’ অপেক্ষায়! আফসোস!
হঠকারিতা ও বিপ্লব এক জিনিস নয়। আমরা যদি সংগঠন, আন্দোলন ও জনজীবনে সত্যিকারের আমূল সংস্কার তথা টেকসই বিপ্লব চাই তাহলে আমাদেরকে কাণ্ডজ্ঞান, অহীভিত্তিক জ্ঞান, বিশ্লেষণমূলক বা তত্ত্ব জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর জ্ঞান এবং অদম্য সাহস– এসব কিছুকে একসাথে কাজে লাগাতে হবে। রাসূলের (সা) জীবনকে সামনে নিয়ে কোরআন-হাদীসের তাবৎ বুনিয়াদী নির্দেশ ও নির্দেশনাসমূহকে বুঝতে হবে, মানতে হবে। যারা নিজেকে এ জন্য উপযুক্ত মনে করবে না তারা নিজেদেরকে ‘ওয়ালতাকুম মিনকুম উম্মাতুন…’-এর মধ্যে শামিল দাবি করতে পারেন না!
আমি জামায়াতের ব্যাপারে আশাবাদী নই, তবে বাংলাদেশে ইসলামের উজ্জ্বল ভবিষ্যত সম্পর্কে দৃঢ় আশাবাদী! অবশ্য এজন্য দরকার আমাদের সবার অলআউট এফোর্ট। হ্যাঁ, কিছু কিছু পরিবর্তন ধীরে ধীরে আনতে হয়। আবার কিছু কিছু দ্রুত বাস্তবায়ন না করলে তা মেয়াদোত্তীর্ণ বা তামাদি হয়ে যায়। লোক তৈরির বিষয়টা সে রকম একটা ব্যাপার। ‘আগে পর্যাপ্ত লোক তৈরি করার’ ফর্মূলা স্পষ্টতই ভুল ফর্মূলা। কোনো লোক ন্যূনতম তৈরি হলেই তাকে উপযুক্ত দায়িত্বে নিয়োজিত করে দিতে হবে। আর ‘লোকদেরকে আপাদমস্তক তৈরি করে দেয়ার’ বিষয়টিও বাস্তবতার সাথে সাংঘর্ষিক। লোকদের ন্যূনতম ট্রেনিংয়ের পরে তাদেরকে উপযুক্ত হিসাবে গড়ে উঠতে দিতে হবে। তৈরি করে দেয়া জিনিস টেকসই হয় না। আনুগত্যের সাথে সাথে ব্যক্তি-স্বকীয়তাও যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নোশন, তা আমরা প্রায়শ ভুলে যাই।
সালমান আরজু: মোজাম্মেল সাহেবকে বলব, কে কী সমালোচনা করল তা দেখার পরও আশা করি আপনার লেখা চালিয়ে যাবেন। কারণ, মাওলানা মওদূদীর (রহ) পর আমরা ইসলামী আন্দোলনের কোনো ভালো থিউরিস্ট পাই নাই। কিছু ছোট ছোট পুস্তিকার লেখক পেয়েছি। আপনি এ যুগের মাওলানা মওদূদী হতে পারবেন কিনা জানি না। তবে নিয়তের দিক থেকে আপনি সহীহ আছেন বলে মনে হয়।
জান্নাত: লেখাটা তো মোজাম্মেল সাহেবের নয়। উনি সম্পাদনা করেছেন মাত্র। ধন্যবাদ।
সালমান আরজু: এটা ছাড়াও তাঁর কিছু মৌলিক লেখা আছে। বাকিগুলো পড়ে দেখতে পারেন। আমাদের আন্দোলনের জন্য এখন একজন মাওলানা মওদূদী (রহ) পর্যায়ের থিংকার দরকার। পড়তে পারেন: মাওলানা মওদূদী (রহ) বেঁচে থাকলে এখন কী করতেন?
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আমরা একটা চিন্তাগোষ্ঠী হিসাবে গড়ে উঠছি। তাই একজনের লেখা আরেকজন যখন পড়েন, তখন মনেই হয় না এটা অন্যের লেখা। এই সাযুজ্যতাই প্রমাণ করে বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলন এর পরবর্তী পর্যায়ে উপনীত। দরকার একজন নকীবের। লেখাটা মূলত যার, আমি চাচ্ছি তিনি পতাকাটা উত্তলন করুক। উনার সে যোগ্যতা আছে। অন্যসব সিনসিয়ার লোকের মতো সাথে রয়েছে স্বীয় যোগ্যতার ব্যাপারে উনার মাত্রাতিরিক্ত সন্দেহ! উনার সাথে প্রতিটা সাক্ষাতেই আমি এ জন্য সিরিয়াসলি এটাক করি। সাংগঠনিক জীবনে অতি শাসনে অভ্যস্ত হওয়ার কারণে আমরা ভিন্নমতের কথা প্রকাশ্যে বলতে ভীষণ ভয় পাই!
নির্ভীক পথচারী: Nice, but I’ve some opinion.
- Jamaat-e-Islami is an Islamic org, no doubt. But their recent action doesn’t say that e.g you better know.
- Your advice to Jamaat about social working, then what about Hartal, crushing vehicles you know.
I think they are following the politics of Awami League and BNP. Thanks.
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: এ সপ্তাহের সাপ্তাহিক সোনার বাংলার লিড বক্স নিউজ হচ্ছে, ‘ইসলাম ও গণতন্ত্র নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে জামায়াত’। সো, গণতান্ত্রিকতার সব ভালো-মন্দ নিয়ে তো তাদের (আমেরিকা অভিমুখী) পথ চলা। দ্বি-দলীয় রাজনীতির যে গোলকধাঁধাঁয় জামায়াত আটকা পড়েছে, তাতে ইহজীবনে তারা আর বিকল্প কোনো ইসলামী ধারার সন্ধান পাবেন না। এ ব্যাপারে আল্লাহর উপর ভরসা করে আপনারা নিশ্চিত থাকতে পারেন!
প্রবাসী মজুমদার: জামায়াতের মাঝে একটি বিষয়কে চালু করার মাধ্যমে অনেকগুলো বিষয় সমাধান হবে বলে আমার বিশ্বাস। আর তা হলো নেতাকে স্লিপের মাধ্যমে প্রশ্ন না করে সরাসরি করা। এতে বুঝতে পারবো– (১) নেতার টলারেন্স ক্ষমতা, (২) জবাবদিহিতার মানসিকতা ও (৩) প্রশ্নকারীর প্রশ্নের ধরনের উপর সাংগঠনিক মানের বাস্তবতা; এবং (৪) এটি গণতান্ত্রিক চর্চার সাথে সাথে কর্মীদেরকে সরাসরি নেতার দোষত্রুটির বিষয়ে বলার জন্য সাহসী করে তুলবে। স্লিপের মাধ্যমে প্রশ্নোত্তরের কারণে বাছাই পর্বে অনেক কর্মীর ক্ষোভগুলো থেকে যায়। নেতার সঠিক জবাবদিহিতা থাকে না। এমনকি উপশাখা এলাকা পর্যায়েও নেতাকে কর্মীদের সামনে দাঁড়িয়ে পেশ করার নমুনা নেই বললেই চলে। পরিণামে আমরা একটি সিন্ডিকেট নেতৃত্বের অধীনে আটকা পড়ে গেছি। এসব সিন্ডিকেট নেতাদের অনেকেরই ব্যক্তিগত বা ফ্যামেলী ব্যাকগ্রউন্ড না থাকায় যে কোনো স্থানে সাংগঠনিক দায়িত্বের পরিচয়টি বহন করেন। মনে করেন, এটিই তার অজর্ন। আর এ অর্জনকে ধরে রাখার জন্যই তিনি সিন্ডিকেট নেতৃত্বের অধীনে জী স্যার, ইয়েস স্যার ইত্যাদিতে নমঃ নমঃ হুজুরের দায়িত্ব পালন করে মনে করেন দ্বীনের খেদমত করছেন।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: অতীব সত্য কথা।
আয়নাশাহ: আপনার সবগুলো লেখার মতো এটাও পড়লাম। মনে প্রাণে চাই সবগুলো সমস্যার সমাধান হোক। আপনাদের মতো লোকেরা সামনে এগিয়ে এলে আরো তাড়াতাড়ি সমাধান হবে। আপনার মিশন চালু রাখুন।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ব্যক্তিক ও তাত্ত্বিক ইসলামের সামাজিক প্রেক্ষিত কী হবে– এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামী হলো পাইওনিয়ার। আমার সৌভাগ্য যে আমি এ কাফেলায় শরীক হতে পেরেছি। এই প্রতিষ্ঠানের একজন হিসাবে এর যেসব সীমাবদ্ধতা নজরে পড়েছে তার মধ্যে বুনিয়াদী ভুলগুলো নিয়ে আমি গণমাধ্যমে স্পষ্টভাবে কথা বলেছি। মাওলানা মওদূদী উনার যোগ্যতা নিয়ে তৎকালীন যুগের প্রেক্ষিতে যা করে গেছেন তা আমাদের জন্য বিরাট কাজ। সকল ঐতিহ্যকে স্বীকার ও সম্মান করা সত্ত্বেও আমাদেরকে আমাদের উপযোগী পদ্ধতিতে কাজ করে যেতে হবে। মুক্তচিন্তার নায়ক মাওলানা মওদূদীর মতো লোকের প্রতিষ্ঠিত জামায়াত তাঁর কদম বা কদম অনুসরণ তথা তাকলীদের ভুল পন্থাকে অঘোষিতভাবে গ্রহণ করেছে!
কারো সমালোচনা করা মানে তাঁকে অস্বীকার করা নয়। আমার মা টাকা বাঁচানোর জন্য আমাদের এক দূর সম্পর্কের আত্মীয় দম্পতির সাথে তাদেরকে মুহরাম ঘোষণা দিয়ে হজ্ব করতে গিয়েছিলেন। হজ্ব থেকে ফেরার পর আমি সবার সামনে উনাকে বললাম, ‘আপনি মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে ভিসা সংগ্রহ করেছেন, আপনার হজ্ব কি হবে?’ আমার এ কথা শুনে উনি হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি এবং তাঁর সাথে যাওয়া দম্পতি সবাই যৌবন-উত্তীর্ণ ছিলেন বিধায়, হয়তো, পর্দার ক্ষেত্রে উনারা শিথিলতার সুযোগ পেয়ে থাকবেন। তবুও আম্মার জন্য মিথ্যা বলাটা আমি সহ্য করিনি।
প্রচলিত ইসলামী আন্দোলন আমি এবং আমার মতো অনেকের কাছে যে কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্কের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। আমার প্রিয় কোনো কিছুকে আমি কি চাইব না যে তা সুন্দর ও পবিত্র থাকুক? দ্বিমত থাকলেই পরিত্যাগ অথবা বিচ্ছিন্নতার প্রসঙ্গ আসবে কেন? ‘আন আক্বীমুদ দ্বীন, ওয়ালা তাফাররাক্বু ফিইহ’-এর তাৎপর্য হলো দ্বিমত সহকারে ঐক্যমত। তাই না? আপনার সংক্ষিপ্ত, সুলিখিত ও সতর্ক মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
আবদুল কাদের হেলাল: জামায়াতের বর্তমান কার্যক্রমে যারা বিরক্তিবোধ করেন,তারা সবাই মিলে নতুন ধারায়, নতুন নামে, নতুন আঙ্গিকে কাজ শুরু করতে বাধা কোথায়? জনগণ যদি আপনাদের সাথে অগ্রসর হয় তাহলে আপনাদের নেতৃত্বে ইসলামী বিপ্লব হবে। এত বছরের বুড়ো একটা দলের সমালোচনায় সময় নষ্ট করার কোনো মানে হয়?
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: উপরের মন্তব্য-উত্তরগুলো পড়ুন। আমার আরো দু একটা লেখা পড়ুন। ঘোষণা দিলেই নতুন কিছু কায়েম হয়ে যায় না। আর মেয়াদোত্তীর্ণ (exhausted) হয়ে গেলে শত ঘোষণা দিয়েও তা ধরে রাখা যায় না। জামায়াতে ইসলামীর অবদান ঐতিহাসিক ও অপরিসীম, তবে বর্তমান সংশয়পূর্ণ, আর ভবিষ্যত অন্ধকার। শুধুমাত্র সমাজ বিপ্লবের সক্ষমতার প্রেক্ষিতে এসব কথা প্রযোজ্য। এতদসত্ত্বেও প্রচলিত অপরাপর ইসলামী প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো জামায়াতও টিকে থাকবে, এর রিক্রুটমেন্টের সংখ্যা ও অনুপাত বৃদ্ধি পাবে। অন্তহীন বিবর্তনে নয়, আমি নিরন্তর বিপ্লবে বিশ্বাসী। বিপ্লব, বিপ্লব, ইসলামী বিপ্লব– এসব শ্লোগান দিয়ে যৌবন কাটিয়েছি। যারা ছুটে চলেছে তাদের জন্য থামাটা বেশ কষ্টকর। কী বলেন? তরুণ বয়সে যখন এই কাফেলায় শরীক হই তখন (১৯৮৪-৮৫) ঘনিষ্ট একজন লিখেছিলেন:
মুছে যাক সব পাপ
অন্যায় অভিশাপ–
গড়ে উঠুক নতুন সমাজ
শুধু আজ এই–
মোদের শ্লোগান মুখর দাবি
দিগন্তের সূচনায় আগুয়ান
মোরা উজ্জ্বল, উচ্ছ্বল–
এক ঝাঁক বিপ্লবী
মোরা আঁধারে আলো দেবো–
দেবো পুরাতনে নতুন
মোরা জীবনে যৌবন দেবো
দেবো অচেতনে চেতন
তাতে–
আসুক জ্বরা, আসুক মৃত্যু
সব বরণ করে নেবো
তবু–
দুঃশাসকের রাস্তায়
অন্তত
রক্তের ব্যারিকেড দেবো।
গতকাল আমার অনুরোধে তিনি আবার এটি আমাকে লিখে দিয়েছেন। বিপ্লবের এই স্বপ্ন এক মুহূর্তের জন্যও ভুলি নাই! জাতীয়তাবাদী আঁচলের নিচে গণতান্ত্রিক হিসাবে নিজেকে দেখতে চাই না, ভাবতে পারি না!
সোহাগী: জামাত নেতারা সমালোচনা সইতে পারেন, তা না হলে এতো সমালোচনার পরও তারা তাদের তেমন কোনো সংস্কারের কথা ভাবছেন না। জামাতে এখন দরকার বড় রকমের সংস্কার। তা না হলে এ দলটি স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বড় ধরনের যে বিপদে পড়েছে, তা থেকে উত্তোরণ অনেক কঠিন হবে।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ব্লগ পড়েন– এমনটা মনে হয় না। মেওয়াতের অশিক্ষিত স্বল্পবুদ্ধির লোকদের জন্য তৈরি করা তাবলীগি নেছাব পরিবর্তন (আপডেট) না করায় জামায়াতের লোকেরা তাবলীগকে খেদমতে দ্বীন বলেন। একই কথা কি জামায়াতের জন্য প্রযোজ্য হবে? স্ট্র্যাটেজি বা হেকমতের কথা বলা হলে জামায়াত নেতৃবৃন্দ হক ও বাতিলের চিরন্তন দ্বন্দ্বের কথা বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তাদের যুক্তি, নাম পরিবর্তন করলে বা নেতৃত্ব পরিবর্তন করলে কি বাতিলের অভিযোগ নিষ্পত্তি হবে? না, হবে না। অতএব, সংস্কার করার দরকার নাই!
হক ও বাতিলের চিরন্তন দ্বন্দ্বের এই ভুল ব্যাখ্যা এতটাই বদ্ধমূল হয়েছে যে, সাধারণ কর্মীরাও চটজলদি এমন অপযুক্তি দিতে কসুর করেন না। বাতিল পক্ষ অভিযোগ ও অজুহাত খাড়া করবে। কোনো কিছু না পেলে বানিয়ে হলেও তা করবে। হকপন্থীদের দায়িত্ব হলো তাদের বিরুদ্ধে বাতিল পক্ষ যাতে কোনো জেনুইন অভিযোগ ও আপত্তি উত্থাপন করতে না পারে।
আজকের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জামায়াত বনাম আওয়ামী-বামদের বিরোধের বাহ্যিক দিকে থেকে মূল ইস্যু হলো ১৯৭১ সালে জামায়াতের অপরিণামদর্শী ভূমিকা এবং এর সমাধানে তাদের অনীহা ও তাচ্ছিল্যপূর্ণ মনোভাব। অথচ, হক ও বাতিলের দ্বন্দ্বের মূল বিষয় হওয়ার কথা ছিল ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ইত্যাদি। বাতিল পক্ষের এটি বিরাট সফলতা যে, তারা হকপন্থীদেরকে একটা সাইড ইস্যুতে টেনে আনতে পেরেছে। গণমানুষের আকীদা সংস্কার – যেমন সেক্যুলারিজম যে একটা আকীদাবিরোধী বিষয় – তা বোঝাতে জামায়াতের অর্থ, শক্তি ও সময়ের কোনোটাই খরচ হচ্ছে না! আপনি উদ্বিগ্ন হচ্ছেন বড় ধরনের বিপদ সম্পর্কে। আর জামায়াত তো ‘ওয়ামা নাক্বামু মিনহুম ইল্লা…’-এর খণ্ডিত ব্যাখ্যা গ্রহণ করে আত্মপ্রসাদে বিভোর হয়ে আছে! মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
জামাআতনিয়েভাবনা: লেখাটা পড়লাম। শেষের বোল্ড লেখা সংযোজনটা না হলেই ভালো হত, কারণ এতে করে একটা ওপেন সিক্রেট ব্যাপারকে হাইলাইট করা হয়। যার দরকার নেই। জামায়াতের কেন্দ্রীয় লিডারদের খুব কাছে থেকে দেখার এক দুর্লভ সুযোগ আমার হয়েছিলো এবং তা প্রায় ২৬৫ দিন ব্যাপী। আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি হলো জামায়াতের কেন্দ্রীয় লিডারগণ ইসলাম, ইসলামী দৃষ্টিকোণ এবং ফিকাহ যতটুকু বুঝেন তা করতে জীবন বাজি রেখে করে থাকেন। এবং আমলের ক্ষেত্রে তারা আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার ব্যাপারে সচেতনতা পোষণ করেন। তারা যদি কোনো কাজ করতে না পারেন, বা পারায় কমতি করে বসেন, অঝোরে কাঁদেন। পরকালের ভয়ে তাদের অনেককে অহরহ কাঁদতে দেখেছি।
তবে আরো যেটুকু বুঝার দরকার ছিলো অথচ বুঝেননি, সে ব্যাপারে তারা মোটেই উদার হতে পারেন না। কারণ, ঐ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ওহী না থাকায় শূরা সম্মেলনকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। কাজেই সেখানে পাশ হয়ে গেলে সেটাকে ‘সেমি ডেভাইন’ হিসাবে বিশ্বাস করে কাজ করেন। এই কাজকে আমরা ইসলমিক্যালি ভুল বলতে পারবো না। কিন্তু ইসলামের শূরায়ী নিযামকে জাময়াত আসলে বুঝতে ভুল করেছে। মহানবী (সা), আবু বকর, উমার ও উসমানের (রা) শাসনব্যবস্থার সময় আমরা দেখতে পেয়েছি– তারা সবাই শূরাভিত্তিক রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন, কিন্তু শূরার পরামর্শকে ‘মুলযিম’ তথা মানতেই হবে এমন মনে করেননি। শূরার তাবৎ সদস্য একদিকে, আর তাঁদের সিদ্ধান্ত অন্য রকম হয়েছে– এমন নজির একটা দুইটা নয়, অগণিত রয়েছে। কাজেই সিদ্ধান্ত গ্রহণে জামায়াত এখন শুধু শূরার পরামর্শ না নিয়ে এক্সপার্টদের পরামর্শ নিতে পারেন। এখানে আপনি যে বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন জামায়াত সেটা কিন্তু করে যাচ্ছে। শুধু এগুলোর আপডেইটেড ভার্শন হওয়া দরকার ছিলো। কিন্তু তারা আপডেটেড হতে চান না কেন বুঝি না। আপনার পয়েন্টগুলোর সাথে আমার মনে হয় জামাত আরো কয়েকটি কাজ করতে পারে।
১। জামাত তৃতীয় শক্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত পলিটিক্সকে গৌণ রাখা। এই সময় জামায়াত কাদেরকে হেল্প করলে তাদের ইসলামী এজেন্ডাকে সামনে নিতে পারবে, তা খুঁজে বের করা। সূরা রূম, মায়িদার ৮২ নম্বর আয়াত ইত্যাদি প্রমাণ করে, কাদের সাথে মহানবী (সা) সফ্ট ছিলেন। অনেক বিপদের সময় তারা হেল্পও করেছে। এই কাজে জামায়াতের বন্ধু হতে পারে অনেকেই। এমনকি আওয়ামী লীগেরও অনেকে তাদের সহমর্মী হতে পারে। পলিটিক্স গৌণ হওয়ার মানে কিন্তু এটা নয় যে জাময়াত তাবলীগের মতো হয়ে যাবে। বরং প্রতিটি পলিটিশিয়ান সম্পর্কে জামায়াতের একটা স্ট্যান্ড থাকতে হবে, সেটাই হবে ঐশ্বী ক্রাইটেরিয়া, ‘ওয়ালা ওয়াল বারা’-এর মাপকাঠিতে। এবং যারা ক্ষমতায় গেলে জামায়াত ও তার অংগ সংগঠন তাদের কাছে না থাকলেও বিরোধী শিবিরে যাবে না। এতে করে মহানবীর (সা) পাওয়া নাজাশি, হিরাক্লিয়াস, মুকাওকাসের সংখ্যা এই সময়ে আরো অনেক হারে পাওয়া যাবে।
২। দাওয়াতের কাজ হলো ইসলামাইজেশন প্রসেস। যেখানে ইসলাম আছে সেখানে তাকে ঝলমলিয়ে তোলা, যেখানে ইসলাম নেই সেখানে তাকে পরিচিত করে তোলা। এই কাজটা, আপনার মতেই বলছি, নিজদেরকে নমুনা হিসেবে দেখানো। যিনি প্রতিষ্ঠানের প্রধান হবেন তাকে হতে হবে ন্যায়পরায়ণ, যিনি ব্যাংকের চেয়ারম্যান হবেন তিনি দেখাবেন সুষম বন্টন নীতি। তবে মনে রাখা দরকার, যেসব ক্ষেত্রে মানুষের কাছে যাওয়া যায়, তাদের মন চেইন্জ করা যায় সেখানে যাওয়া দরকার। ক্ষমতায় গেলে সেটা সম্ভব হয় না। আজ যদি ব্যবসা সবটাই থাকতো এদের হাতে, ক্ষুদ্র ফ্যাক্টরিগুলো ছড়িয়ে পড়তো গ্রামে-গঞ্জে, প্রতিটি মহল্লায় থাকতো একটা প্রাইমারি স্কুল, ইউনিয়নে থাকতো একাধিক সেকেন্ডারি স্কুল এবং থানায় থাকতো নামকরা কলেজ, তাহলে চেহারাই চেঞ্জ হয়ে যেত। এগুলো করলে শিবির থেকে বের হওয়া সবার কর্মসংস্থান হতো এবং হারিয়ে যেত না। মেডিকেল সেবা, এনজিও ব্যবস্থা এবং সেবা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠানো দরকার ছিলো।
৩। দুনিয়াতে দুই ধরনের লোকেরা থাকে বিপদে। এক হলো যারা কারো ঘাড়ে চড়ে সর্বময় ক্ষমতায় যেতে চায়, এরা চতুর্মুখী শত্রু দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে যায়। গত ১৯৮৬ সাল থেকে জামায়াত আমাদের বুঝিয়েছে দেশের ক্ষমতায় আমাদের যেতে হবে এবং তা করতে যেয়ে দেশের দুই ক্ষমতাধর দলের সাথে আঁতাত করে আমাদের লোকসান গুনতে হয়েছে অনেক। আরেক দল হলো যারা কোনো দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজিত শক্তি হয়ে আবার ক্ষমতায় যেতে চায়। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর জামায়াতের নেতারা আদর্শিক গুরু হয়ে উস্তাদগিরিতে থাকলে আজ আর এত ঝামেলা হতো না। অথবা তারা অন্য আরেকটি আন্দোলন গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারতেন। তুরস্কে আরবাকানের তৈরি করা লোকেরাই তাঁর চেয়ে ভালো খিদমত দিচ্ছেন, তা তিনি দেখেই ইন্তেকাল করেছেন। মহানবীর (সা) বানানো শাগরেদগণ যে রাষ্ট্র চালিয়েছেন তা ছিলো তাঁর রাষ্ট্রের চেয়েও বড় এবং সে সময়ের বিজয়গুলোও বিশাল ছিলো। আবু বকরের (রা) হাতে মুসলিম মিল্লাতের ইমামতি যাচ্ছে তা দেখে মরণ যন্ত্রণায় কাতর মহানবী (সা) মুচকি হেসেছিলেন। অবশ্য এখন আর এই কথা বলার দরকার নেই। এমনিতেই মুরুব্বিরা কেউ কেউ চলে যেতে চাচ্ছেন, আর সাধারণ কর্মীরাও চাচ্ছে যুবকেরা এগিয়ে আসুক।
৪। ইসলামী আন্দোলনের সূচনাকারীদের যুগ এবং এখনকার যুগ সমান নয়। কাজেই মাওলানা মাওদূদীর লিটারেচার, হাসান আল বান্নার লেখাগুলো, সাইয়েদ কুতুবের চিন্তাধারা এখনকার প্রেক্ষাপটে কাজে নাও লাগতে পারে। কাজেই ঐগুলোর সাথে আন্দোলনের নতুন লিটারেচারের সাথে আমাদের নেতাকর্মীদের পরিচিত করানো দরকার। ১৯৫৩ সনে আবুল হাসান নাদাওয়ী মরহুম মিশর সফর করেন। ইউসুফ কারযাভী ছিলেন তখন আল আযহারের ছাত্র। তিনি ইখওয়ানুল মুসলিমুনের নেতৃস্থানীয়দের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এবং ‘আমি ইখওয়ানুল মুসলিমুনের সাথে কথা বলতে চাই’ শিরোনামে একটা বই লিখেন। যেখানে ১৯২৮ সাল থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত আন্দোলনটির ভুলত্রুটির দিকে তিনি আংগুল তুলেছিলেন এবং ভবিষ্যতের জন্য কিছু পরামর্শও দিয়েছিলেন। এই বইটাকে তৎকালীন ইখওয়ানের মুরশিদুল আম হাসান হুদায়বী প্রতিটি উসরা বা কাতাইবের জন্য স্টাডি সার্কেলে অধ্যায়ন করা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছিলেন। ইউসুফ কারযাভী ১৩/১৪টা বই ইসলামী আন্দোলনের সমালোচনায় দিকনির্দেশনামূলক বই লিখেছেন, ইখওয়ানের লোকেরা ওইগুলো পাঠ্যতালিকায় ঢুকিয়ে দিয়েছেন। অথচ আমাদের দেশে জামায়াতের সমালোচনা করলে তার খবর হয়ে যায়। আমাদের হাসান মোহাম্মাদ স্যার এর বিরাট দৃষ্টান্ত। তাঁর বইটা জামায়াতের পাঠ্যতালিকায় শোভা পাওয়া দূরে থাক, তাঁকে অনেক কোনঠাসা করা হয়েছে। এছাড়া আপনি যে পয়েন্টগুলো আলোচনা করেছেন তার কিছু বিষয়ে দ্বিমত থাকলেও আমি কন্টেন্টে মোটামুটি একমত।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: শূরার সিদ্ধান্ত সেমি ডিভাইন কেন, ফুল ডিভাইনই হবে, এক অর্থে। অন্য অর্থে, কোরআন-হাদীসের বাহিরে কোনো কিছুই ডিভাইন হবে না। হারাম ইত্যাদি বাদে সবকিছুই মুবাহ। সময়ের প্রয়োজনে তা ওয়াজিব মান পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। শূরার সিদ্ধান্ত পালনীয় হবে যদি তা ‘কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন’ টাইপের শূরা না হয়ে যোগ্য লোকদের সুচিন্তিত মতামত হয়। জামায়াত কিছু রুকনকে আমীর ইত্যাদি পর্যায়ের দায়িত্বশীল বানানোর পরে এরা রাজনীতি থেকে শুরু করে সবকিছুর ব্যাপারে মতামত দিয়ে থাকে। তারচেয়েও ভয়াবহ ব্যাপার হলো, কেন্দ্রীয় শূরায় কয়েক শত সদস্য থাকেন, যেখানে একপেশে বক্তৃতা ছাড়া কোনো বিশ্লেষণমূলক আলোচনা আদৌ সম্ভব হয় না। জামায়াত এক মধ্যবিত্তসুলভ মানসিকতায় ভোগে। মনে করা হয়, রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকে মসজিদে জামায়াতের নেতৃত্ব– সবই এক একজন দায়িত্বশীলের মধ্যে বিকশিত হবে! কেউ আমীর হয়েছেন বলেই তিনি ভালো বক্তৃতা দিতে পারবেন বা সাংঘর্ষিক পরিস্থিতিকে সামলাতে পারবেন– এমন নয়। মানুষের ফিতরাতের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে তারা ব্যর্থ হচ্ছেন। এই অনিবার্য ব্যর্থতাকে ঢাকতে গিয়ে এক ধরনের আধ্যাত্ম-ধর্মীয় আবহ সৃষ্টি করা হচ্ছে। যেটি কাম্য নয়। সমাজসেবামূলক কাজের পরিবর্তে জামায়াতের লোকজনের টাকা বানানোর নেশায় পেয়েছে। এর বহিঃপ্রকাশ ঘটছে দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি সন্দেহজনক ব্যবসা ল্যান্ড বিজনেসের সাথে গণসম্পৃক্ততায়। জামায়াত নেতৃত্ব নিজেদেরকে অপরিহার্য মনে করেন। শীর্ষতম দায়িত্বশীলের শর্তারোপ করার কারণে উনাকে প্রকাশ্যে আমীর ঘোষণা করতে সংগঠন বাধ্য হয়, যার পরিণতি আমরা সবাই জানি! শূরার সিদ্ধান্ত? শূরা যোগ্য ও স্বাধীন, নাকি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মনোনীত ও বশংবদ– এর উপর শূরায়ী সিদ্ধান্তের মর্যাদা নির্ভর করবে। ইখওয়ানের মধ্যে যে ধরনের টলারেন্স, ফ্লেক্সিবিলিটি ও ডাইন্যামিজম দেখা গেছে তা জামায়াতের মধ্যে স্বপ্ন-কল্পতুল্য নয় কি? প্রফেসর হাসান মোহাম্মদ স্যার তাঁর সাথে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সাক্ষাৎকারের মজার মজার ঘটনা মাঝে মধ্যে বলেন। জামায়াত স্বীয় নেতৃত্বের গণ্ডির বাহিরে কাউকে পাত্তা দেয় না। ভালো থাকুন!
জামাআতনিয়েভাবনা: ঠিক বলেছেন। হাসান মোহাম্মাদ স্যার আমাদেরকেও অনেক গল্প শুনিয়েছেন। স্যারকে ধন্যবাদ। ওহ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. তারেক ফজলের সাথে পরিচয় আছে? না থাকলে উনার ‘বাংলাদেশে উলামা রাজনীতি’ শীর্ষক পিএইচডি থিসিসটা একটু পড়বেন। হাসান স্যার ও এনায়েত পাটোয়ারী ভাইকেও দেবেন একটু। দারুণ কিছু তথ্য পড়ে অভিভূত হলাম। এবং জামায়াতের মধ্যে কিছু অনাকাংক্ষিত অপশক্তির স্বরূপ ওখানে উদ্ঘাটিত হয়েছে।
আবুল মানছুর: আপনার এ লেখা পড়ে মনে হলো, আপনার এ সাজেশন্সগুলো না মানার কারণে জামাতের আন্দোলন আগাতে পারছে না। মান উন্নয়নের পরামর্শ দিলেন, কিন্তু মান উন্নয়নের জন্য যে সমস্ত প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামের প্রয়োজন, টিসি-টিএসের প্রয়োজন, তা তো সরকার করতে দিচ্ছে না। এ ব্যাপারে কিছুই বললেন না। শিবির কর্মীদের পড়ালেখার পরামর্শ দিলেন, অথচ কলেজ-ভার্সিটির পড়ালেখার পরিবেশ যারা নষ্ট করছে তাদের ব্যাপারে কিছু বললেন না। হোস্টেল ও মেসগুলো থেকে যেভাবে পুলিশ তাদের অন্যায়ভাবে ধরে নিয়ে জেলে বন্দি করছে, এ অন্যায়ের ব্যাপারে আপনার কলম থেকে দুইটা লাইন লিখলেন না। আজ তাদের জন্য পরীক্ষার হল পর্যন্ত নিরাপদ নয়। যাদের উপর এত অন্যায় অত্যাচার করা হচ্ছে আপনি জালেমদের বিরুদ্ধে কলম না ধরে মজলুমের বিরুদ্ধে কলম ধরলেন একবার ও আপনার বিবেক বাধা দিল না?
“আপনার এ লেখা পড়লে পাঠক মাত্রই বুঝতে পারবে যে, সরকার জামাত-শিবিরের উপর যত নির্যাতন চালাচ্ছে, এটা কোনো অন্যায় নয়; বরং জামাত-শিবিরই আপনার পরামর্শগুলো গ্রহণ না করার কারণে আজ মুসিবতে আছে। এটা তাদের কর্মের ফল!” জামাত শিবিরের বন্ধু সেজে বুকে ছুরি চালানোর এক নিকৃষ্ট উদাহরণ আপনার এ লেখা। এতে অন্তত আমার কোনো সন্দেহ নেই। ভাবতে কষ্ট লাগে আপনি এ লেখাটা কীভাবে লিখলেন? আপনি কি এত পাষাণ?
তিঁতা–মিয়া: স্বঘোষিত আঁতেলরা এমনি হয়ে থাকে। গায়ে পড়ে উপদেশ দেয়, কিন্ত নিজে কি চীজ, সেই খবর রাখে না। ভাবে মনে হয় ওকে নেতা বানিয়ে দিলেই কেল্লা ফতেহ।
প্রফেসর: দেখুন আবেগ দিয়ে অনেক কথা বলা যায়। কিন্ত সমাধান হয় না। হুদাইবিয়ার সন্ধিতে অনেক বিষয় ছিল যেগুলো আপাতত দৃষ্টিতে মনে হয়েছিল পরাজয়, অপমানজনক ও নির্মম। বড় বড় সাহাবী আবেগবশত রাসূলের (সা) এ সিদ্ধান্ত প্রথমে মানতে চান নাই। রাসূল (সা) নিজে যখন মাথা মুণ্ডন করলেন, পশু জবেহ করলেন তখন সবাই মেনে নিলেন। নিরপেক্ষতা ও বাস্তবতার আলোকে এবং দূরদৃষ্টির সাথে সমাজকে বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে পারলে তার মধ্যে আল্লাহর রহমত পাওয়া যাবে। হক সাহেব কারো বিরুদ্ধে কলম ধরেন নাই, তিনি বাস্তবতার আলোকে কিছু প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছেন। প্রস্তাবনাগুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে। নতুন অনেক বিষয় যোগ হতে পারে, আবার বাদও যেতে পারে। এটাও ঠিক, থার্ড-আই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এদের পরামর্শ গ্রহণের সংস্কৃতি চালু রাখতে হবে।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: সরকার টিসি-টিএস করতে দিচ্ছে না, তাই মানোন্নয়ন হচ্ছে না! ১৯৭২ সালের পরে যখন পরিস্থিতি এরচেয়েও খারাপ ছিল তখনও মানোন্নয়ন হয়েছে। নাকি হয় নাই? টিসি-টিএসভিত্তিক ‘মানোন্নয়ন’ হলো রাবারকে টেনে মাপার মতো! ‘মান’ অর্জনের পর যা হওয়ার তা-ই হয়! কোনো ঘটনায় আপনাদের দুজন দায়িত্বশীল শহীদ হলেন। সংগঠন পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলো, উনাদের ওখানে বা অতদূর যাওয়া এবং এতক্ষণ সেখানে অবস্থান করাটা ঠিক হয় নাই (চবির সাম্প্রতিক ঘটনা)। এখন আপনি কি বলবেন, মজলুমের বিরুদ্ধে পর্যালোচনা করা বা কথা বলা হয়েছে?
আপনি হয়তো জানেন না, পোস্টদাতা উনার ময়দানে জামায়াত-শিবির বলতে যে ক’জনকে সবাই জানে মানে তাদের একজন। সুতরাং ‘জামায়াত-শিবিরের বন্ধু সেজে বুকে ছুরি মারার’ মতো মন্তব্য নিতান্তই অপ্রাসঙ্গিক নয় কি? ‘আপনি কি এত পাষাণ?’ হ্যাঁ ভাই আমি নীতিগত দিক থেকে পাষাণই বটে! আরেকজন ‘স্বঘোষিত আঁতেল, গায়ে পড়ে উপদেশ, নেতা বানিয়ে দেয়া’– এসব মন্তব্য করেছেন। আচ্ছা, ঈমান কি বিদ্যমান পুরো বাতিল সমাজ, রাষ্ট্র ও সিস্টেমের বিপরীতে স্ব-ঘোষণা নয়? ‘তাওয়াছাও বিল হাক্ব’ কি গায়ে পড়ে উপদেশ দেয়া নয়? আর নেতা হওয়া? নেতা তো হতে চাইনি কখনো। যখন লোকেরা নেতা বলেছে তখনও ছিলাম কর্মী-মার্কা নেতা। ভালো থাকুন!
জনাব প্রফেসর সাহেব, যেখানে দ্বিতীয় মতকেই সহ্য করা হয় না সেখানে আপনার থার্ড-আইয়ের অবকাশ কোথায়? মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকুন!
তিঁতা–মিয়া: মা/মাসীর ভ্রক্ষেপ নেই, দাই চিৎকার করে গলা ফাঁটায়।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আরো পরিষ্কার করে বললে ভালো হয়। ধন্যবাদ।
তিঁতা–মিয়া: আপনার প্রোপিকের ফটো ও পার্শ্বের ফটোর সম্পর্কটা পরিস্কার করবেন?
মির্জা: স্যার, কিছু মনে করবেন না। সূরা ফুরকানের ৭২ নম্বর আয়াত পড়ে নিজেকে স্বান্তনা দিন। আর মনে হয় সংগঠনে তারবিয়াতের অভাব দেখা দিয়েছে।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আমার প্রোফাইল পিকচারটা আমার গ্রামের বাড়িতে কোনো এক পড়ন্ত বিকেলে তোলা ছবি। পাশে আমার ছোট মেয়ে। পিছনের বিলে বাচ্চারা ক্রিকেট খেলছিল।
পলাশ: জামায়াতের নাম পরিবর্তন করে অন্য নাম দিলে কোনো লাভ হবে না। বরং জামায়াতকে রেখেই অন্য নামে আরেকটি ইসলামী দল চালু করতে হবে, যার নেতৃত্বে থাকবে জামায়াত থেকেই। উদাহরণস্বরূপ বিএনপির কথাই বলা যেতে পারে। মুসলিম লীগের পরিবর্তিত রূপ হলো বিএনপি (যা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জিয়ার হাত ধরে)। বিএনপি গঠনের ফলে মুসলিম লীগ কিন্তু বাতিল হয়ে যায়নি। মুসলীম লীগ এখনও আছে, তাই বিএনপিকে কেউই স্বাধীনতাবিরোধী বলে গালি দেয় না।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: জামায়াত নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য ১৯৮২ সালে শিবিরকে যুব সংগঠন করতে দেয় নাই। একটি সম-আদর্শের যুব সংগঠন করা ছিল শিবিরের সাংবিধানিক দায়িত্ব। ৫২নং ধারা। ১৯৭১ সালের বিষয়গুলো নিয়ে ১৯৮১ সালে তৎকালীন কার্যকরী পরিষদ কর্তৃক গঠিত ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটিকে জামায়াত ১৯৮২ সালে গিলোটিন করেছে। জামায়াত এ দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেকে অপরিহার্য মনে করে! এর শরয়ী ভিত্তি কী জানি না। একই লোকেরা তুরস্কে কত পার্টি করল, ক্ষমতায় গেল। সরকারী দলও বদিউজ্জামান নূরসির লোক, বিরোধী দলেও অন্যদের সাথে আছে বদিউজ্জামান নূরসির অনুসারীরা। বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর জন্য এসব মডেল অরণ্যে রোদন, অর্থহীন ও অপ্রয়োজনীয়!
মাওলানা মওদূদী বলেছেন, লক্ষ্যপানে অগ্রসর হওয়ার পথে কাঁটা ছুটানোর জন্য সময় ব্যয় না করতে। এর অর্থ হলো শত উস্কানীতেও কোনো সাইড ইস্যুতে না জড়ানো। বাংলাদেশে জামায়াতের মূল ইস্যু কী? আদর্শ, না ব্যক্তি? ব্যক্তি আর আদর্শকে অভিন্ন ভাবাটাই এতসব বিপত্তির কারণ। ধন্যবাদ। ভালো থাকুন!
পলাশ: তুরস্কের অবস্থা বাংলাদেশের মত নয়। তুরস্কে ইসলামিক গ্রুপ মূলত একটাই এবং বাংলাদেশের মতো এত ফতোয়াবাজী নাই বললেই চলে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ নাই। শুধু আছে সেক্যুলারের পক্ষ-বিপক্ষ! তাই সবসময় তুরস্ক বা অন্য দেশের ইসলামিক দলের সাথে বাংলাদেশের জামায়াতকে তুলনা করলে অনেক ভুল সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: দুনিয়ার কোনো দেশে সে দেশের ইসলামী আন্দোলনের দায়িত্ব পালনকারী সংগঠনের বিরুদ্ধে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিরোধিতার ইতিহাস বা অভিযোগ নাই। এ দৃষ্টিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী অনন্য দৃষ্টান্তের অধিকারী! তুরস্কের ইসলামী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন মরহুম বদিউজ্জামান নূরসী। উনার অনুসারীদের মডারেট অংশ বর্তমানে ক্ষমতায়। অপেক্ষাকৃত কনজারভেটিভ অংশ বিরোধী শিবিরে। বাংলাদেশের জামায়াত কি এ ধরনের রিভার্স খেলার চিন্তাও করতে পারে? আপনি বলেছেন, তুরস্কে ইসলামপন্থীদের সাথে অনৈসলামী শক্তির বিরোধের মূল এজেন্ডা সেক্যুলারিজম। বাংলাদেশে তা নয় কেন? বাতিল তো সবসময় চাইবে ইসলামী শক্তিকে স্থানীয় ও প্রত্যক্ষভাবে আদর্শিক নয় এমন লোকাল এজেন্ডাকে সামনে নিয়ে এসে হক-বাতিলের মূল বিরোধকে আড়াল করা এবং এর মাধ্যমে ইসলামী শক্তিকে গণমানুষ ও সমাজের মূলধারা হতে বিচ্ছিন্ন করতে। জামায়াত এই ফাঁদে পা দিল কেন?
সব ইসলামী শক্তির অবস্থান যেদিকে ছিলো জামায়াতের অবস্থানও সেদিকে ছিলো। কিন্তু জামায়াত মন্ত্রিত্ব নিল কেন? যা কিছু হলো, এর পরে এই ইস্যুকে পরিষ্কার না করে এ নিয়ে রাখঢাক ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের তরীকা গ্রহণ করল কেন? নির্বাচন কমিশন হতে বের হওয়ার সময়ে ‘দেশে কোনো যুদ্ধাপরাধী নাই’ ধরনের কনক্লুসিভ বক্তব্য দেয়ার কী দরকার ছিলো? আজ বিপদে পড়ে যত টাকা মামলার পিছনে খরচ করা হচ্ছে এর অংশমাত্র দাওয়াহ এক্টিভিটিজে খরচ করলে দেশের মানুষের ঈমান-আকীদার পরিশুদ্ধি সহজতর হতো। কী বলেন?
অনুরণন: এই প্রস্তাবনা কি শুধুই তাত্ত্বিক? এর প্রায়োগিক দিকগুলো বিবেচনা করে দেখা হয়েছে? যে কোনো প্রস্তাবনার বাস্তব উপযোগিতা বিচারের জন্য ‘পাইলটিং’ জরুরি। সেটি না হয়ে থাকলে ছোট মাত্রায় আপনার আশেপাশে করে দেখতে পারেন। আরেকটি বিষয়ের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। চবিতে শিবির হল দখলকেন্দ্রিক যে রাজনীতি করে, সেটি থেকে বেরিয়ে আসার বাস্তবভিত্তিক পথ কী হতে পারে সেটি নিয়ে কিছু লিখুন, বিশেষত ট্রানজিশনের পথ কী হতে পারে সেদিকটি মুখ্য করে।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: দখল সিস্টেম ভালো নয়। নিজ নিজ বৈধ সিটে থাকাটাই একমাত্র সমাধান। বরাদ্দ না থাকা সত্ত্বেও কোনো কিছুকে দখলে রাখার মাধ্যমে ‘তুয়াদ্দু আমানাতা ইলা আহলিহা’র কোরআনিক হুকুমকে অগ্রাহ্য করা হয়। পাইলটিং নিয়ে ভাবছি না। কনসেপ্ট গ্রুপ তৈরির কথা ভাবছি। চিন্তার শুদ্ধি সবচেয়ে দরকার। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
হাসান তারিক: ‘কনসেপ্ট গ্রুপ’ তৈরির কনসেপ্টটা যদি আরেকটু ডিটেইল বলেন, ভালো হয়।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আলাপ-আলোচনার একটা ধারা তৈরি করা। সোজা কথায় নিয়মিতভাবে ও বিভিন্ন পর্যায়ে সেমিনার, ওয়ার্কশপ ও গোলটেবিলের আয়োজন করা। ব্যাপকভাবে মূল টেক্সটসমূহের (কোরআন ও হাদীস বিশেষ করে) প্রকাশনা এবং এর মাধ্যমে একটা আদর্শ বা কনসেপ্ট হিসাবে ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করা। সবাইকে প্রশ্ন করার সুযোগ দেয়া। ইসলামের জাগতিক যোগ্যতাকে তাত্ত্বিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করা। ইসলাম সম্পর্কে সকল ভুল ধারণার অপনোদন। এসব কিছুর জন্য কাজ করবে এই কনসেপ্ট গ্রুপ। এর প্রত্যক্ষ কোনো রাজনৈতিক সংযোগ থাকবে না। রাজনীতি সম্পর্কে এর বক্তব্য থাকবে সম্পূর্ণ একাডেমিক ধরনের। এই গ্রুপের লোকজনের কাছে ইসলাম হবে একটা একাডেমিক চয়েস। এই গ্রুপ হতে মূল আন্দোলনে লোকেরা যোগ দিবে। তবে তা হবে ঐচ্ছিক। তরুণ ও চিন্তাশীলদের মননে জগত-সমস্যার একটা সর্বোত্তম সমাধান হিসাবে ইসলাম পৌঁছিয়ে দিতে নানা রকমের মিডিয়া, বিনোদন ও সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এই গ্রুপ কাজ করবে। এতে নারীদের যথাসম্ভব বেশি অংশগ্রহণ থাকবে। তুরস্কের গুলেন মুভম্টে হিসাবে একে দেখলে চলবে না। এর আদর্শিক দিকটা হবে প্রাধান্যপ্রাপ্ত। অবকাঠামোগত দিকটা হবে ন্যূনতম। প্রত্যেককে তার অবস্থানে রেখেই শুধুমাত্র ব্যক্তির চিন্তন ও পছন্দের জায়গায় ইসলামের প্রতি ইতিবাচকতা (রিসেপটিভনেস) সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করা হবে। এই প্রাথমিক লক্ষ্য সফল হলে এর ভিত্তিকে কী করা হবে তা পরিবর্তিত পরিস্থিতিই বলে দিবে। এদেশে ইসলাম সঠিকভাবে প্রচারিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। যারা ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছেন তারা এর প্রায়োগিক দিকগুলোর যেসব তাত্ত্বিক অস্পষ্টতা সমাজ ও জনজীবনে বিদ্যমান– সেগুলো নিরসন করার জন্য ততটা সক্রিয় নন। বরং নিজ নিজ মডেল ও স্ট্রাকচারকে সঠিক প্রমাণ করায় বেশি মনোযোগী। কনসেপ্ট গ্রুপ সকল ইসলামী শক্তির মধ্যে সমন্বয়-সেতু হিসাবে কাজ করবে। সামগ্রিকভাবে এই গ্রুপের লোকেরা হবে প্রো-অ্যাক্টিভ ও একোমোডেটিভ।
হাসান তারিক: খুবই উৎসাহবোধ করছি। সত্যি বলতে কি, আমার ধোয়াশে ধোয়াশে চিন্তা-ভাবনা-স্বপ্নগুলোকে আপনি গুছিয়ে উপস্থাপন করলেন। আন্দোলনের জনশক্তিদের প্রতি পদে কনসেপ্ট সম্পর্কে অস্পষ্টতা হাড়ে হাড়ে অনুভব করি। যাই হোক, সামনাসামনি আলোচনায় আরো বিস্তারিত জানাবেন, ইনশাআল্লাহ।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: প্রতি-মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আমার পুরনো ফোর পয়েন্টস অনুসারে কনসেপ্ট গ্রুপ বিল্ডআপের জন্য কাজ করা ছাড়া গত্যন্তর নাই। ফোর পয়েন্টস হলো:
১। জামায়াত প্রচলিত সাংগঠনিক (ইহতেসাব ইত্যাদি) পদ্ধতিতে সংশোধন হবে না। অথচ জামায়াতের ভিতরে ব্যাপক সংস্কার ও সংশোধন দরকার।
২। প্রতিকূল পরিবেশ ও উপযুক্ত শীর্ষ নেতৃত্বের অনুপস্থিতির কারণে জামায়াতের বিকল্প কোনো দল গঠন এ মুহূর্তে সম্ভব নয়।
৩। করণীয় বা হকের ব্যাপারে ‘প্রস্তাব ও পরামর্শ তো দিয়েছি, দেখি না কী হয় বা অন্যরা কী করে দেখি, অপেক্ষা করি’ ধরনের অবস্থান গ্রহণ, ইসলামী আন্দোলনের ব্যক্তিগত ফরজিয়তের লংঘন।
৪। যেহেতু প্রচলিত ধারা কাংখিত মানে নাই অথচ সংশোধনও হচ্ছে না, বিকল্প দল গঠনও সম্ভব হচ্ছে না, বসে থাকারও সুযোগ নাই– অতএব, আসুন, কনসেপ্ট ক্লারিফিকেশন তথা কনসেপ্ট গ্রুপ করার কাজে আত্মনিয়োগ করি। এই ধারা প্রতিষ্ঠিত হলে এক পর্যায়ে প্রচলিত ধারা সংশোধন হতে পারে অথবা যোগ্য নেতৃত্বে নতুন কোনো ধারা গড়ে উঠতে পারে; এমনকি দুটোই হতে পারে। ধন্যবাদ।
মহি উদিদন: ১। সেবার জন্য নেতৃত্ব মৌলিকভাবে ও মানবতার সেবা আমাদেরকেই করতে হবে এবং এটি আছেও, তবে পযাপ্ত নয়।
২। আপনার সাথে একমত নই। কারণ, পার্বত্য চট্টগ্রাম স্বাধীন হোক এটি কোনো দেশপ্রেমিকের কাম্য নয়।তখনও কাম্য ছিল না, কারণ স্বাধীনতা তখন শেখ মুজিবও চায়নি। এটি একটি ট্র্যাজেডি ও ভারতের কূটকৌশলের ফল। জামাতের দূরদর্শিতায় যা দেখেছিল, স্বাধীনতার পর ফল তার ব্যতিক্রম হয়নি। যেহেতু এটি একটি স্পষ্ট বিষয়, তাই পলায়নবৃত্তি নয় (নাম পরিবর্তনের) প্রেক্ষাপট ও দূরদর্শিতা বুঝাতে হবে জনগনকে। অন্যদের প্রচারণার বিপরীতে প্রচারণার সুযোগ বৃদ্ধি করা জরুরি। মহামারীর ভয়ে পালানো সঠিক কর্মপন্থা নয়।
৩। একমত, তবে বই সিলেবাসভুক্ত হওয়ার জন্য বড় নেতা হতে হবে এটি জানা নেই।
৪। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জামাতের লোকদের দ্বারা পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলো ইসলামের সুমহান ও ইনসাফপূর্ণ প্রশাসন পরিচালনা বা ব্যবস্থাপনার মডেল প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। এ সকল প্রতিষ্ঠানের লোকজন আন্দোলনে অগ্রসর হওয়ার পরিবর্তে বেশিরভাগকে নিষ্ক্রিয় হতে দেখা যায়। এ বিষয়টি পর্যালোচনায় আনা খুবই জরুরি। তবে হ্যাঁ, অন্য প্রতিষ্টানে কাজ না করে যারা সরাসরি রিক্রুট হয়, তাদেরই হতাশা বেশি। কারণ, কর্মজীবনে অন্যদের পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের হাল-হাকিকত তাদের উপলব্ধিতে থাকে না।
অপরদিকে পরিচালকগণ নেওয়ার সময় সম্পূর্ণরূপে ইসলামী আবেগ কাজে লাগায় এবং দেওয়ার সময় পুঁজিবাদী প্রথা অনুসরণ করেন। পাশাপাশি নৈতকতারও ঘাপলা দেখা যায়। ফলশ্রুতিতে এসব প্রতিষ্ঠানের টপ টু বটম সকলের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করে।
৫। বিদ্যমান ক্যাডার পদ্ধতি আরো শক্তিশালী করা প্রয়োজন। যারা অতটুকু কমিটেড হতে পারবে না তাদেরকে নেতৃত্ব দিলে সংগঠনের বারোটা বাজার সম্ভাবনা আছে। মানুষ তো! তাই ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব ও যোগ্যতার তারতম্য হওয়া স্বাভাবিক। সব বিষয় একসাথে পাওয়া দুষ্কর। বাকি দুইটার উত্তর পরে দেবো। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
জামাআতনিয়েভাবনা: মহিউদ্দিন ভাইকে ধন্যবাদ। জামাতের পরিচালিত তিনটি প্রতিষ্ঠানে আমি অনেক বড় কর্মচারী হিসেবে কাজ করে দেখেছি। জুলুম আর জুলুম। মনে হয়েছে, এদের হাতে দেশ গেলে আইয়ুব খানের হাতে থাকা পাকিস্তানের মতো হয়ে যাবে।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আপনি বলেছেন, “৫। বিদ্যমান ক্যাডার পদ্ধতি আরো শক্তিশালী করা প্রয়োজন।” আচ্ছা, এই তথাকথিত অপরিহার্য ‘ক্যাডার পদ্ধতি’ ছাড়াই তো রাসূল (সা) ইসলাম কায়েম করে গেছেন! কী বলেন? ইসলাম কায়েমের এই অভিনব পদ্ধতি (ক্যাডার সিস্টেম) চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রায় তের শত বৎসর বিশ্বে ইসলামী আন্দোলন কীভাবে চলেছে? আমার মতে, এই ক্যাডার পদ্ধতিই বাদ দেয়া দরকার। তৎপরিবর্তে গণনেতৃত্ব প্রবর্তন করা দরকার। যার যোগ্যতা আছে সে নেতৃত্ব দিবে। ময়দানই বলে দিবে কার যোগ্যতা কতটুকু। মাওলানা মওদূদীর ক্যাডার পদ্ধতি বাম রাজনীতি হতে নেয়া। অ-ইসলামী ধারায় বিশেষ করে ১৯৩০-এর দশকে রাশিয়া, জাপান, জার্মানী ও ইতালীর সফল সর্বাত্মকবাদী রাজনৈতিক কাঠামো দ্বারা তিনি প্রভাবিত হয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, এমন কর্মীবাহিনী যদি ইসলামের জন্য হয়, তাহলে তো কথাই নাই! রিপোর্ট রাখা, ফুল-টাইমার সিস্টেম– এসবও একই অনুসঙ্গ হতে নেয়া। এর কোনোটাই রাসূলের (সা) কর্মপদ্ধতিতে দেখা যায় না। এগুলো বড়জোর সাময়িকভাবে মুবাহ হতে পারে। আসহাবে সুফফা ব্যবস্থা আর হালনাগাদের সর্বাত্মকবাদী ব্যবস্থার ফুল-টাইমার সিস্টেম এক নয়। ইউসুফ কারযাভী যেসব শর্তে ফুল টাইম কর্মী নিয়োগকে অনুমোদন করেছেন, জামায়াত তার ধারেকাছেও নাই। সেসব নিয়ে অন্য পোস্টে কথা হবে, ইনশাআল্লাহ! ভালো থাকুন।
Peace Light: ইসলামী আন্দোলন এমন কিছু নয় যার ফলাফল আমরা আগামীকালই আমাদের প্রজন্মে চোখের সামনে দেখতে পাব। আমি মনে করি, জামায়াতে ইসলামীর ভাইদের নব্য একটি সংগঠন কায়েমের ব্যাপারে একমত হওয়া উচিত। যে সংগঠনের মূল কাজ হবে সূরা আসরের ৪ দফার আলোকে। যে সংগঠনের নেতৃতে রাখা প্রয়োজন শায়খ আবদুস শহীদ নাসিম, মুফতি প্রফেসর কাজী ইব্রাহিম, শায়খ কামাল উদ্দীন জাফরী, শায়খ ড. সাইফুল্লাহ, ড. শায়খ মতিউল ইসলাম, মাওলানা শামাউন আলি, শায়খ খলিলুর রাহমান মাদানী, শায়খ অধ্যাপক আব্দুল মতিন, শায়খ আব্দুল কাইউম শাহজাহান, শাহ ওলিউল্লাহ, এএনএম সিরাজুল ইসলাম ঈসহাক মাদানী সিলেটী, প্রিন্সিপাল আব্দুল হক মৌলভীবাজারী, শায়খ মতিউর সিলেটী, শায়খ আব্দুর রাহমান মাদানী লন্ডনী প্রমুখ দেশসেরা উলামাদের। যারা কোরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে চলার আপ্রাণ চেষ্টা করেন। তারিক রামাদান মার্কা নেতাদের সামনের সারিতে আনা যাবে না। সংগঠনের নাম হতে পারে দাওয়াতুল ইসলাম বাংলাদেশ বা বাংলাদেশ ইসলামী মিশন ছাত্র শাখা, বাংলাদেশ দাওয়াতী ছাত্রমিশন। রাজনৈতিক কাজের জন্য পৃথক ও সীমিতভাবে একটি ক্ষুদে সংগঠন অন্য নামে করা যেতে পারে। একজন বহিরাগত হিসেবে আমি জামায়তের ব্যাপারে দুটো সত্য অনুভব করেছি/করি:
১) তাদের ‘স্টিয়ারিং’ এখন মডার্নিস্টদের হাতে, যাদের ঘাড়ে ‘তারিক রমাদানের’ ভূত ভর করেছে। ফলে জামাত ক্রমেই আলেমশূন্য একটা দলে পরিণত হচ্ছে। আলেমদের আর বিশেষ কোনো ভূমিকা থাকবে না এখানে।
২) ‘ইসলামপন্থী’ থেকে তারা ক্রমেই ‘তিজারাহপন্থী’ একটা দলে পরিণত হচ্ছেন। আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে বামপন্থীরা সবাই তাদের নিয়ে বিচলিত হবার এটা একটা প্রধান কারণ। ‘কুফরপন্থীরা’ যেসব জিনিসের উপর ‘নির্ভর’ করে থাকেন (টাকা-পয়সা, বৈভব, ঐশ্বর্য্য ইত্যাদি), জামাতের হাতে সেসবের প্রাচুর্য্য দেখে তারা ভাবিত! অথচ, ইসলামের ইতিহাস একটু ঘেঁটে দেখলেই তারা বুঝতেন যে, এসব দিয়ে আর যাই হোক, ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবার নয়! ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য এসব ‘হার্ডওয়্যার’ কখনো কিছুটা প্রয়োজনীয় মনে হলেও, আসলে যা প্রয়োজন তা হচ্ছে সঠিক ‘সফটওয়্যার’, যা কিনা আল্লাহর ওপর নিরঙ্কুশ ভরসা ও বিশ্বাস রেখে, সকল হারাম ত্যাগ করে তার কাছে আত্মসমর্পণ ও সাহায্য চাওয়ার মাধ্যমে, ইনশাআল্লাহ্, লাভ করা সম্ভব! কিন্তু বেসবর ও প্রচলিত পন্থায় অতি দ্রত ‘রাষ্ট্রক্ষমতা লাভ = ইসলাম প্রতিষ্ঠা’– এই সমীকরণ তাদের আজ অন্ধ করে দিয়েছে। জামায়াত নাম বদলিয়ে কাজ শুরু করলে সমস্যার সমাধান হবে না। বরং নতুনভাবে সূরা আসরের আলোকে কাজ করার প্রত্যয়ে একটি নতুন সংগঠন করা উচিত। যা জামায়াতের কাছে মুসলিম জনতার ন্যায্য দাবি। এ দাবি পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশে দীনের দাওয়াতী কাজ করা কঠিন। বিদ্যমান জামায়াতভিত্তিক দীনি কাজে শুধু ফিতনা মোকাবেলায় জীবনের মহামূল্যবান সময় চলে যায়। অতএব, জেনে বুঝে লক্ষ লক্ষ দাঈদের কেন ফিতনার মধ্য ঠেলে দিবো। আর…
কেননা জামায়াত কোরআন ও সহীহ হাদীসের চেতনায় গঠিত হয়েছিলো। কিন্তু প্রচলিত রাজনীতির ইস্যু মোকাবেলা ও রাজনীতিকে অতিমাত্রায় প্রাধান্য দেওয়ার ফলে অনেক ক্ষেত্রে আপস করতে হচ্ছে এবং সংগঠনের নেতৃতে চলে আসছে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক, কামারুজ্জামান, মীর কাশেম সাহেবের মতো তথাকথিত সেক্যুলার ইসলামিক। এ ধারা চলতে থাকলে জামায়াত তার ইসলামী চরিত্র ও ঐতিহ্য হারাতে পারে। অতএব, নব্যভাবে সংগঠন কায়েম করতে হবে। সূরা আসরের আলোকে। নব্য সংগঠনের নাম হতে পারে বাংলাদেশ ইনসাফ কাফেলা, অথবা সোশ্যাল জাস্টিস পার্টি, অথবা আসর মিশন পার্টি। আর সংগঠনটি অরাজনৈতিক দীনি ও ইলমী ব্যাপক দাওয়াতী কাজের জন্য একটি অরাজনৈতিক দাওয়া সংগঠন কায়েম করতে হবে। যার নাম হতে পারে দাওয়াতুল ইসলাম বাংলাদেশ। এটা করলে সরলপ্রাণ মুসলিম তাবলীগ জামাতের কোরআনহীন দাওয়াতী খপ্পর থেকে বাঁচার বিকল্প আশ্রয় পাবে। অতএব, জামায়াতে ইসলামীর ঐসব বিষয় নিয়ে জাতির সামনে প্রকাশিত হউন। তবে বলছি ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক সাহেবের ফর্মুলার তুর্কি একেপি রজব তাইয়েপ মার্কা শরিয়ার সাথে আপসকামী ইসলাম চাই না। নেতৃতে সহি বিজ্ঞ তাকওয়াভিত্তিক আলেম উলামাদের নিয়ে আসতে হবে। আধুনিক সেক্যুলার ধারায় শিক্ষিত ভাইদের ইসলামী প্রশিক্ষণ ও সঠিক দীনি জ্ঞান না দিয়ে সংগঠনের বড় পর্যায়ে বা নেতৃতে আনা যাবে না। ইসলামী আন্দোলন এমন কিছু নয় যার ফলাফল আমরা আগামীকালই আমাদের প্রজন্মে চোখের সামনে দেখতে পাব। এটা একমাত্র আল্লাহর হাতে। আমাদের কাজ হচ্ছে শুধু এর বীজটা বপন করা। আল্লাহ একে বাড়তে দিলে এটা বাড়বে। বীজটা বাড়লো কি বাড়লো না এর জন্য আল্লাহ আমাদের দায়ী করবেন না, বরং আমরা বীজটা বুনেছিলাম কিনা তার জন্য জবাবদিহি করতে হবে। ইসলামের প্রসার ও ইসলামকে কায়েম করতে আমাদের তাই ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: মাশাআল্লাহ! আপনার অত্যন্ত মূল্যবান ও নির্দোষ আবেগতাড়িত অথচ নিরপেক্ষ মন্তব্য দেখে অবাক হলাম। সব বড় বড় তারকার সমাবেশ হলে ভালো হতো। কিন্তু অভিজ্ঞতায় দেখেছি, তা হয় না। ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্ব ইত্যাদি নানাবিধ কারণে। আমার একটা পুরনো পোস্ট আছে যাতে ইসলামী আন্দোলনের জন্য পেশাভিত্তিক সংগঠন কায়েমের প্রস্তাব করেছি। মাদ্রাসা শিক্ষিত ও ইংরেজি শিক্ষিতদেরকে একত্রিত করে জামায়াত বিরাট ভুল করেছে। এতে বিশেষ করে আলেম সমাজ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সেক্যুলার পরিমণ্ডলে এসে আলেমরা ‘মডারেট’ হচ্ছেন। বাস্তব ও বস্তুগত কারণে ইংরেজি শিক্ষিতরা প্রভাব সৃষ্টি ও আধিপত্য বিস্তার করছে। জামায়াত আলেমদেরকে খুব একটা মূল্যায়ন করে না (যেহেতু তাঁরা রিপোর্ট লেখে না!)। দেশের বৃহত্তর আলেম সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য জামায়াতের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখি নাই। মাওলানা সাঈদী সাহেব যখন একটা ফিগার হয়ে উঠছিলেন, যখন ইত্তেহাদুল উম্মাহ গঠিত হলো, তখন তাঁকে বশে আনার জন্য পিঠে রুকনিয়াতের সিল লাগিয়ে মজলিশে শূরার সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়া হলো। অথচ তিনি ১৯৭৩ সাল হতে জামায়াতের রুকন! উনাকে নিয়ে যে ডিভিডি ডকুমেন্টারি তৈরি হয়েছে, তাতে এ তথ্য আছে। ভালো থাকুন!
প্রফেসর: Peace Light-কে বলছি। ইসলাম একটি সামগ্রিক বিষয়। ইসলাম অনুধাবন করার জন্য সমাজ বিজ্ঞান, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, ইতিহাস, দর্শন, অর্থনীতি ইত্যাদি সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা থাকা জরুরি। খুবই দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, আমাদের দেশে আলেম নামে পরিচিতগণ উল্লিখিত বিষয়গুলো সম্পর্কে তাঁদের ধারণা সংগত কারণে ( উল্লিখিত বিষয়গুলো সম্পর্কে মাদ্রাসার সিলেবাসে বিস্তারিত না থাকার কারণে) যথেষ্ঠ নয়। অতএব, তাদের নিয়ে কমিটি বা কোনো কিছু করে বর্তমান সমাজের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কঠিন।
আবুল মানছুর: আপনার কথা– “কোনো ঘটনায় আপনাদের দুজন দায়িত্বশীল শহীদ হলেন। সংগঠন পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলো, উনাদের ওখানে বা অতদূর যাওয়া এবং এতক্ষণ সেখানে অবস্থান করাটা ঠিক হয় নাই (চবির সাম্প্রতিক ঘটনা)। এখন আপনি কি বলবেন, মজলুমের বিরুদ্ধে পর্যালোচনা করা বা কথা বলা হয়েছে?”
আপনি হয়তো জানেন, সাংগঠনিক ফোরামে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে সে ব্যাপারে আল্লাহর নির্দেশ হলো ‘ফা-ইজা আযামতা ফাতাওয়াক্কাল আলাল্লাহ’। এ সিদ্ধান্তের কারণে যদি কোনো ক্ষতি হয় তাহলে এটা বলার কোনো সুযোগ নাই যে, এটা এভাবে না করে ঐভাবে করলে এটা হত না, বা অমুক অমুক ব্যক্তির কারণে এটা হয়েছে। এভাবে মন্তব্য করার মাধ্যমে দুইটি ক্ষতি হয়– ক) সাংগঠনিক দুর্বলতা, ঐক্যের মধ্যে ফাটল, আনুগত্যহীনতা দেখা দেয়। খ) যারা জুলুম করল তাদের অপরাধকে ভালো কাজ হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এতে করে এটি বুঝানো হয় যে, জালেমদের কোনো দোষ নেই, অপরাধ হলো মজলুমরা সেখানে যায় কেন, এটা তাদের কৃতকর্মের ফল। ফলে জালেমদের ব্যাপারে অন্তরে এক রকম দরদ এসে যায় এবং যারা জীবনবাজি রেখে দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করছে, এমনকি এ পথে শহীদ হলেও তাদের ব্যাপারে ঘৃণার সৃষ্টি হয়। আর তা যদি সুন্দরভাবে সাজিয়ে-গুজিয়ে যুক্তিতর্কের মাধ্যমে মিডিয়াতে ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে তো আর কথাই নেই।
২৮ অক্টোবরের লগী-বৈঠার তাণ্ডবে যারা শহীদ হলেন তাদের ব্যাপারে একজন মন্তব্য করলেন এভাবে, “জামাত কি জানে না আলীগ রক্ত গরম পার্টি, জামাত সেখানে যায় কেন? না গেলে তো আর তারা এভাবে সাপ মারার মতো মারতে পারতো না।” এ ব্যাপারে আপনি কী বলবেন? আমরা দ্বীনের কল্যাণ করতে গিয়ে যেন কোনো ক্ষতি না করি।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আপনার আবেগের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাচ্ছি। ২৮ অক্টোবরে একজন ভাই একটা গলির মুখে রাস্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। বাতিলরা ঘিরে ধরে যখন উনাকে মারা শুরু করলো তখন দূর থেকে কিছু ভাই প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে অসম সাহসে এগিয়ে এসে উনাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। নচেৎ তিনিও সাপ-পেটা হয়ে শাহাদাত বরণ করতেন! তিনি ছাত্রশিবিরের শীর্ষ দায়িত্বশীল ছিলেন। আমি তাঁকে শ্রদ্ধা করি। ব্যক্তিগতভাবে তিনি আমার অতীব স্নেহাষ্পদ ও ঘনিষ্ট। স্পষ্টতই গাজী বলতে যা বোঝায়, তিনি তাই। এই মর্যাদা (আল্লাহ উনাকে কবুল করুন, আমীন) উনি অনেক আগেই অনেক বারই অর্জন করেছেন! কলেজে থাকাকালীন তিনি তেমন লড়াকু ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল দায়িত্বশীল হওয়া সত্ত্বেও মোকাবিলায় ছিলেন অগ্রগামী। ফ্যকাল্টিতে এমনই একবার মাথায় আঘাত পেয়ে পড়ে গিয়েছিলেন! এই মুজাহিদ ও ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীল ভাইটির সাথে ২৮ অক্টোবরের ব্যাপারে তখনই কথা বলেছিলাম। সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে জামায়াতের প্রস্তুতি ও পরিকল্পনাহীনতার কথা বলে তিনি প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন।
কোরআন শরীফে ‘ওয়া লাউ…’ বলে গণমন্তব্য চর্চাকে নিষেধ করা হয়েছে। এর মানে তাবৎ পর্যালোচনাকে নিষেধ করা নয়। এক ধরনের কাপুরুষতাসুলভ মন্তব্য চর্চাকে এর মাত্রা, ক্ষেত্র এবং ব্যক্তিক কারণে নিষেধ করা হয়েছে। কোনো ঘটনা চলমান থাকা অবস্থায় নেতৃস্থানীয়রা ছাড়া অন্যদেরকে পর্যালোচনামূলক বক্তব্য রাখতে নিষেধ করা হয়েছে, কিন্তু পরামর্শ দিতে মানা করা হয় নাই। ঘটনা মোকাবিলায় যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা নিজেদের মধ্যে পর্যালোচনা না করলে তাৎক্ষণিক ও পরিবর্তিত সিদ্ধান্ত কীভাবে দিবেন?
দ্বিতীয়ত: মুনাফিকরা দায়িত্বশীলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আস্থাহীনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে অহেতুক পর্যালোচনামূলক কথাবার্তা বলছিল, যা নিষেধ করা হয়েছে।
তৃতীয়ত: কোরআন শরীফে বিপর্যয়মূলক পরিস্থিতিতে বার বার ইস্তেগফার করতে বলা হয়েছে। এটি কি শুধুমাত্র ‘আস্তাগফিরুল্লাহি মিন কুল্লি জামবিও’ উচ্চারণ করা? নাকি, কী কী ভুলত্রুটি (জামবিও) হয়েছে তা চিহ্নিত ও অনুধাবন করে সেগুলো আর না করার প্রতিজ্ঞা সহকারে সেসবের জন্য ক্ষমা চাওয়া?
যত ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে তার অন্যতম কারণ হলো মানুষের বাড়াবাড়ি। জুলুম মাত্রকেই হক-বাতিলের বাইনারির মধ্যে ফেলে প্রবোধ লাভের চেষ্টা করা হলে এ সংক্রান্ত কোরআন-হাদীসের অনেকগুলো প্রাসঙ্গিক রেফারেন্সকে অস্বীকার করা হয়। হকের কারণে বাতিল কর্তৃক জুলুমের শিকার হওয়ার কথা যেমন বলা হয়েছে তেমনি ব্যক্তির সীমালংঘন ও বাড়াবাড়ির কারণে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি হওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
জামায়াত সাংগঠনিকভাবে শুধুমাত্র প্রথমোক্ত কারণকেই হাইলাইট করে। চবির পরিস্থিতি নিয়ে শিক্ষকদের সমাবেশে যখন পর্যালোচনামূলক বক্তব্য আসা শুরু হলো তখন মহানগরীর শীর্ষ দায়িত্বশীল খুব ক্ষেপে গিয়ে পর্যালোচনার বিরুদ্ধে জ্বালাময়ী বক্তব্য দেয়া শুরু করলেন। মাগরিবের পরে ছাত্র দায়িত্বশীলগণ উক্ত অনুষ্ঠানে আসার পর তাদের বক্তব্য শোনার জন্য উপস্থিত (ততক্ষণে মূল প্রোগ্রাম শেষ হয়ে গেছে) শিক্ষকবৃন্দ আগ্রহ প্রকাশ করে। ঘটনা সম্পর্কে তাদের সাংগঠনিক পর্যালোচনার যে সারাংশ তারা পেশ করেন তা হুবহু শিক্ষকদের উত্থাপিত রিভউর সাথে মিলে যায়। এই পর্যায়ে একজন নির্যাতিত কিন্তু অদম্য মধ্য-প্রবীণ শিক্ষক উক্ত শীর্ষ মহানগরী দায়িত্বশীলকে এমন কঠিনভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ তথা ইহতেসাব করলেন যে, আমরা উপস্থিতরা বেশ বিব্রতবোধ করেছি।
শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো এক ধরনের আধ্যত্ম-ধর্মীয় চেতনা ও আবহ সৃষ্টি করে নিজেদের ভুলগুলোকে ধামাচাপা দেয়ার এই প্রবণতা জামায়াতের অন্যতম সাংগঠনিক (অপ)বৈশিষ্ট্য। পরামর্শ ও আনুগত্যের মধ্যে একটা ভারসাম্য সব সময়েই থাকতে হবে। এটি উনারা ভুলে যান। বলাবাহুল্য, পর্যালোচনা হচ্ছে পরামর্শের অপরিহার্য অংশ। ধন্যবাদ।
ইউসুফ মামুন: একজন সাধারণ বাংলাদেশী হিসাবে মনোযোগ দিয়ে আপনার লেখা ও তার উপর মন্তব্য, প্রতিমন্তব্যগুলো পড়লাম। ভালো লাগলো আপনার চমৎকার এ আয়োজন ও তা হ্যান্ডেল করার প্রক্রিয়া।
এ লেখায় জামায়াতে ইসলামীর পলিসি লেভেলের বেশ কিছু ইস্যু ডায়াগনোসিস হলো। এতে করে ব্যক্তিবিশেষের দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিজ্ঞতার কারণে আপাত ভালো কিংবা খারাপ হয়েছে সে আলোচনায় না যেয়ে আমি বলবো, জামায়াতের নীতি নির্ধারকরা চাইলে এর থেকে অনেকটুকু ফসল নিজ ঘরে উঠাতে পারে।
আপনার লেখার পরামর্শগুলোর প্রতি সম্মান জানিয়ে সাধারণ মানুষ হিসাবে আমার বলতে ইচ্ছা করছে, জামায়াত তার লক্ষ্যটাকে ফোকাস করে এগোলেই ভালো করবে এবং এর কর্মী-সমর্থকদের এগিয়ে যেতে অ্যাক্টিভ ফাংশনাল কার্যক্রমে মোবিলাইজ করে রাখবে।কনসেপ্ট গ্রুপটাও তার একটা হতে পারে।
আর ঐ পথে চলার সময় অর্গানাইজেশনের নিজের মধ্যে যেমন, তেমনি ইনফ্লুয়েন্সিয়াল আর যা কিছু আছে, তার মধ্যেও ভাঙা-গড়া চালিয়ে যাবে এবং পারমিটেড সকল স্ট্যাটেজি অবলম্বন করা অবশ্যই উচিত।
কোনোভাবেই স্থবিরতার দিকে যাবে না, মিডিয়া থেকে হারাবে না। স্থবিরতা হবে জামায়াতের সবচেয়ে বড় শত্রু।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: জনাব মামুন, আপনি মনে কষ্ট নিবেন না এই ভরসায় বলছি, আপনি খুব সম্ভবত জামায়াতের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বশীল রুকন পর্যায়ের কেউ নন। জামায়াতের নীতি-নির্ধারণী ব্যক্তিবর্গ গণমাধ্যমের কোনো কিছুকে পাত্তা দেয় না। আমি প্রায় নিশ্চিত, তাঁদের বেশিরভাগেরই এমনকি কোনো ব্যক্তিগত ইমেইল আইডি পর্যন্ত নাই, থাকলেও নিয়মিত ব্যবহার করেন না। এসব ব্লগীয় আলোচনা-সমালোচনা সম্পর্কে তাঁরা আদৌ অবগত কিনা, এ ব্যাপারে আমি সন্দিহান। তাই, আমার দু বছরের ব্লগ লেখাগুলো ‘সামাজিক গণমাধ্যমে ইসলামী আন্দোলন ও অন্যান্য প্রসঙ্গ’ নামে ছাপানোর চিন্তা করছি। যতটুকু পারি পৌঁছানোর চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ! আমার ধারণায় জামায়াত ‘চেঞ্জ ফ্রম উইদিন’ বা কাংখিত মানে পরিবর্তনকে গ্রহণ করবে না বা করতে পারবে না। কোনো ধরনের সংশোধন ও পরিবর্তনের জন্য অর্গানাইজেশনাল মাইন্ডসেটে যে ধরনের ফ্লুইডিটি বা রিসেপ্টিভনেস দরকার তা নাই। তাই, জামায়াতকে জামায়াতের জায়গায় রেখেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। কনসেপ্ট গ্রুপ নিয়ে কাজ করা হলো আপাত সমাধান। ভালো থাকুন।