আত্মোপলব্ধি – ১: সুখ ও দুঃখবোধ
যা কিছু পেয়েছ তা নিয়ে তৃপ্ত হও। সুখী হও। অন্যকে দোষারোপ করো না। যা পাওনি তা তোমার পাওয়ার ছিল না। যা কিছু আছে পাওয়ার সম্ভাবনা হিসেবে, তা পাওয়ার জন্য সচেষ্ট হও সর্বশক্তি দিয়ে। কিন্তু জেনে রাখো, চেষ্টাটাই তোমার অংশ। পাওয়াটা অনেক জটিল হিসাবের ব্যাপার। তাছাড়া, সবকিছু যে পেতেই হবে এমন তো নয়। একটা কিছু কম পেলে অন্যদিকের প্রাপ্তি বেড়ে যায় বিপুল পরিমাণে। অভিজ্ঞতায় দেখেছি। এটাই প্রকৃতির নিয়ম।
কাজেই হতাশ হওয়ার কিছু নাই। নিজের উপরের দিকে দেখি যদি তাকাও তাহলে কখনো সুখী হতে পারবে না। নিচের দিকে যদি দেখো তাহলে দেখবে অন্য অনেকের তুলনায় তুমি অনেক বেশি সৌভাগ্যের অধিকারী। জীবন তোমার অনেক সুন্দর। চাইলে তুমি অনেক সুখী হতে পারো। সুখ আর দুঃখ যতটা না আরোপিত, তারচেয়ে অনেক বেশি স্বোপার্জিত।
আত্মোপলব্ধি – ২: আত্মপ্রেম কিংবা মানবিকতা
তোমরা আমার জীবনের অংশ। সমগ্র নও। আমিই আমার জীবনের সবটুকু। সমগ্র। সবার সাথে আমার সম্পর্ক দেয়া-নেয়ার। কিন্তু আমার সাথে আমার সম্পর্ক শুধুই পাওয়ার। নিজেকে আমি পূর্ণ করতে চাই। অধিকারী হতে চাই সব সদগুণের। যতটুকু সম্ভব। পেতে চাই যা কিছু ভালো তার সবটুকু। সর্বোচ্চ মানে। শুধু নিজেকেই ভালোবাসি শর্তহীনভাবে।
এই সরল স্বীকারোক্তিতে অবাক হওয়ার কিছু নাই। প্রতিটি মানুষই আজন্ম-আমৃত্যু শুদ্ধ আত্মপ্রেমিক। নিজেকে তাই ভালোবাসি সবচেয়ে বেশি। নিজের অস্তিত্ব নিয়ে ভাবিত হই। ভাবিত হই নিজের হিসেবে এই জগতকে নিয়ে। অধিকারের পাশাপাশি নিজের দায়িত্ব নিয়ে সচেতন থাকি। কিংবা থাকা উচিত বলে মনে করি। অন্যদের জন্য করি। তারা আমারই কিছু একটা সম্পর্কে সম্পর্কিত বলে।
দিনশেষে, আমিই আমার জগত-বৃত্তের কেন্দ্র। আমার চেতনায় আমিই নায়ক। কেন্দ্রীয় চরিত্র। নিজের ভালোর জন্যই আমি হয়েছি পরোপকারী, সামাজিক ও সুনাগরিক। নিজের প্রতি ভালোবাসা দ্বারা তাড়িত হয়েই আমরা হয়ে উঠি বিপ্লবী। সাহসী যোদ্ধা। অগ্রণী।
নিজেকে যে সম্মান করতে জানে না, নিজের সম্ভাবনায় যিনি আস্থাহীন, নিজেকে তুচ্ছ মনে করা, নিজের ব্যক্তিত্বকে অবনমিত করার মাধ্যমে নিজেকে হেয় প্রতিপন্ন করাকে যিনি ভালো বলে মনে করেন, তার চিন্তাধারা ভয়াবহ রকমের বিকৃত। ভুল। স্বাতন্ত্র্যবোধ ও আত্মসম্মানবোধই আমাদেরকে শেষ পর্যন্ত মানবিক করে তোলে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, সেদিন (হাশরের মাঠে) প্রত্যেকে পালিয়ে যাবে। ভাই থেকে, পিতা থেকে, মা থেকে, নিজের স্বামী বা স্ত্রী থেকে। প্রত্যেকের অবস্থা এমন হবে যে নিজের ছাড়া অন্য কারো সম্পর্কে সে ভাববে না।
তাই যা কিছু আমি করি তা সব নিজের ভালোর জন্যই করি। সেটা হোক আমার পরিবারের কারো জন্য কিংবা সমাজের কারো জন্য কিংবা কোনো সহনাগরিকের জন্য অথবা বিশ্বব্যবস্থার সহঅংশীদার হিসেবে অন্য যে কারো জন্য। হোক সে মানুষ কিংবা প্রাণী কিংবা নিরেট কোনো জড়। জড়রাও সত্তা। চেতনাসম্পন্ন। এ জগতে সবকিছুই চেতনাসম্পন্ন। উচ্চতর কিংবা নিম্নতর।
সবাইকে নিয়েই তাই আমার জগৎ। তারা আমার। যেমন করে আমি তাদের। এ জগতের আমি এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রত্যেকেই তাই। আমার বিশেষ অবদানের দিক থেকে দেখলে আমি অনন্য। অপরিহার্য। এ ধরনের স্বাধীন ও স্বতন্ত্র আমির সমষ্টি হলো এ জগত সমগ্র। নিজেকে দায়িত্ববান হিসেবে মনে করি সমগ্র জগতের জন্য। নিজের জন্য যখন এমন কিছু করি যা ঔচিত্যের মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ, একই সাথে তা হয়ে ওঠে মানবিকতার প্রতীক এবং মানবতার প্রতিনিধিত্ব।