মৃত্যু হলো যে কারো জীবনে সবচেয়ে নিশ্চিত ঘটনা। বলা যায়, মৃত্যু হলো জীবনের-ই অপর নাম অথবা এক অনিবার্য পরিণতি। একে সামনে রেখে, জেনেই, মেনে নিতে বাধ্য হয়েই মানুষ বেঁচে থাকে, স্বপ্ন দেখে, ভালোবাসে, সংসার করে, যুদ্ধ করে, সন্ধি-সমঝোতা করে, কখনো সানন্দে কোনো আপাত পরাজয়কে মেনে নিয়ে এগিয়ে যায়।
মানুষ জীবনকে ভালোবাসে। বেঁচে থাকতে চায়। মৃত্যু থেকে মানুষ পালাতে চায়। আমাদের এ জীবনের ক্যানভাসে মৃত্যু হলো সবচেয়ে বড় এক আরোপিত অবাঞ্চিত ঘটনা। জীবনের প্রতি পক্ষপাতিত্বের দিক থেকে সবাই আমরা স্বার্থপর। কেউ এর ব্যতিক্রম নয়।
পরজীবন-বিশ্বাস দিয়ে মানুষ মৃত্যুর ক্ষতিকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, বেঁচে থাকার সান্তনা খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করে। কারো কারো কাছে মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের ধারাবাহিকতার ধারণা যৌক্তিক ও বাস্তব। এরা বিশ্বাসী। আবার, কারো কারো কাছে এটি মানুষের অবিন্যস্ত আবেগ, দুর্বলতা ও অসহায়ত্ববোধের বহিঃপ্রকাশ ছাড়া কিছু নয়। তাদের মতে, পরলোক-বিশ্বাস মানুষের নিছক ধারণা, কল্পনা ও প্রমাণহীন এক ঐতিহাসিক মনস্তাত্ত্বিক নিরাময় ব্যবস্থা। এরা অ-বিশ্বাসী। যুক্তির দিক থেকে দুনিয়াটা স্বয়ং প্রতিসম বা counterbalanced। শেষ পর্যন্ত যার যার বিশ্বাস-ই হলো চূড়ান্ত যুক্তি।
সে যাই হোক, মৃত্যু আছে বলেই জীবন এত সুন্দর। যারা জন্মলাভ করার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন, ভাগ্যক্রমে যারা এ পর্যন্ত জীবিত আছেন বা ছিলেন, তারাই শুধু মৃত্যুর অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারবেন বা পেরেছেন। মুদ্রার অপর পিঠের মত বলা যায়, যারা জীবনের সুরা পান করতে পেরেছেন তারাই শুধু মৃত্যুর দুয়ার অতিক্রম করতে পারবেন। এরপর, মহাজাগতিক নক্ষত্র-ধুলার সাথে মিশে যাওয়া। কিংবা পরজীবনের অনন্ত ধারাবাহিকতায় মৃত্যুহীন এক জীবনযাত্রা।
বহু আগে, সবেমাত্র চাকুরীজীবন শুরু করেছি তখন, কী প্রসঙ্গে যেন, হতে পারে সহকর্মী ও নিকটতম প্রতিবেশী আবদুল কাইয়ুম প্রামাণিক ভাই হার্ট অ্যাটাকে হঠাৎ করে মৃত্যুবরণ করার এক সপ্তাহের মধ্যে উনার প্রথম ও একমাত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করার ঘটনায় লিখেছিলাম, যদ্দুর মনে পড়ে কথাটা ছিল এ রকম,
জন্মের চেয়ে বড় বিস্ময় আর
মৃত্যুর চেয়ে বড় সত্য,
পৃথিবীতে নাই।
একজন আত্মস্বীকৃত narcissist বা আত্মপ্রশংসাকারী হিসাবে আমার এই কথাটা আমার নিজের কাছেই খুব ভালো লেগেছে। সাথে এ কথাটাও,
জীবনের পরিণতি অনিবার্য।
তবুও স্বপ্ন, তবুও স্মৃতি, তবুও বিস্মৃতি,
বাঁচিয়ে রাখে আমাদের…!