Don’t live your time, but use it.
কিছুদিন আগে একটা লেখা লিখেছিলাম, “নিজের জীবন যাপন করো অন্যের জীবন যাপন করো না” (live your own life) এই শিরোনামে। তখন ওয়াদা করেছিলাম “don’t live your time” – এ বিষয়ে স্বতন্ত্র একটি নিবন্ধ লিখব। নানা ব্যস্ততার কারণে খানিকটা দেরি হয়ে গেলো। ইন দা মিন টাইম, ডোন্ট লীভ ইউর টাইম বলতে আমি কী বুঝাচ্ছি সেটা নিয়ে দুজনের সাথে কথা বলেছি।
কারো সাথে কোনো বিষয়ে কথাবার্তা বলার পরে সেই বিষয়ে লেখালেখি করার আগ্রহটা কখনো কখনো হারিয়ে ফেলি। কোনো একটা ভাবনার এক ধরনের এক্সপ্রেশন ঘটে গেলে সেটি কেমন যেন আবেদন হারিয়ে ফেলে। বাসি হয়ে ওঠে। অন্তত আমার ক্ষেত্রে এটি ঘটে। সে জন্য যেসব বিষয়ে লিখবো বলেছি সেগুলোর অনেকগুলোই শেষ পর্যন্ত আর লেখা হয়ে ওঠে না। সে যাই হোক, এখন একটু অবসর পেয়ে ভাবছি, বিষয়টা একটু ব্যাখ্যা করে বলি।
প্রাথমিকভাবে কথাটা খুব উইয়ার্ড বা বিদঘুটে বলে মনে হবে। কেননা প্রত্যেকে আমরা কোনো না কোনো সময় বা জীবনকালে বসবাস করি। আমি যে জীবনকালে বসবাস করি সেইটা তো আমারই জীবন, আমারই কাল। সে হিসেবে প্রত্যেকে আমরা নেসেসারিলি লিভ ইন আওয়ার ঔন টাইম।
ব্যাপারটাকে যদি আমরা অন্য দিক থেকে দেখি তাহলে সহজে বুঝতে পারবো, যুগে যুগে সব মানুষেরা কেন এত এত বিষয়ে এত বড় বড় ভুল ও অন্যায় অবলীলায় করে গেছেন। এমনকি জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিরা পর্যন্ত অতীব যুক্তিসংগত বিষয়ে মারাত্মক সব ভুল করার কারণ হলো, তারা তাদের যুগের গতিপ্রকৃতি ও চিন্তা-ভাবনা দ্বারা অধিক মাত্রায় প্রভাবিত বা আচ্ছন্ন ছিলেন। যেহেতু তৎকালীন যুগের দাবি বা চিন্তার ধারাটাই (paradigm) ছিল ভুল, সে হিসেবে, অন্ধ ও বোবা ব্যক্তিরা যেমন পরস্পরকে অনুসরণ করতে গিয়ে একই গর্তে প্রত্যেকে নিপতিত হয়, তেমনি করে তারা সবাই একই ভুল গণহারে করে গেছেন।
তাই, কোনো কথা সঠিক হতে পারে না শুধুমাত্র এই কারণে যে, সেটা অতীতের বা সমসাময়িক কালের সবাই বলে বা করে। বরং যে কথাটা বা যে কাজটা আমাদের কাণ্ডজ্ঞান’ অনুমোদন করে, যেটা যুক্তিসঙ্গত, যেটা আমাদের বুদ্ধির অনুকুল, আমাদের অভিজ্ঞতার সাথে যেটা সাংঘর্ষিক নয়, সেটাই গ্রহণযোগ্য, সেটাই সঠিক।
মনে রাখতে হবে, নৈতিকতা, সততা, ন্যায়, ভালো ইত্যাদি যত কথাই আমরা বলি না কেন, এগুলোর সবগুলোই হচ্ছে গুণবাচক বিষয়। তাই, নিছক পরিমাণ দিয়ে এগুলোর যথার্থতা নিরূপণ করা যায় না।
এর মানে হলো, যুগের দোহাই দিয়ে যারা কোনো কিছুর ভালত্ব বা মন্দত্ব নিরূপণ করে তারা ভুল করে। এমন সমাজ-অনুগত লোকেরা যুগের জীবন যাপন করছে। নিজের জীবন যাপন করছে না। দরকার হলো, আমাদের নিজের জীবন যাপন করা। যুগকে অস্বীকার করে নয়, বরং বিবেচনায় নিয়ে।
এ বিষয়ে আমার পরবর্তী কথা হলো, প্রতিটা যুগের দুইটা দিক: (১) ইতিবাচক দিক বা বৈশিষ্ট্যসমূহ, (২) নেতিবাচক দিক বা বৈশিষ্ট্যসমূহ।
কোনো একটি যুগের বা সময়ের ইতিবাচক দিক হলো, এর আগে মানবসমাজ যে অগ্রগতি অর্জন করেছে সেটাকে সে উত্তরাধিকার হিসেবে পেয়ে যায় এবং ভবিষ্যতের অধিকতর ভালো ও মঙ্গলজনক যা কিছু আছে, সেটা সম্ভাবনা হিসেবে তার কাছে এসে ধরা দেয়।
যুগের নেতিবাচক দিক হলো, যা কিছু সত্য, সুন্দর ও কল্যাণকর তার সবকিছুই একটা বিশেষ যুগে অর্জিত হয়ে যায় না। পূর্ণতা লাভ করে না। আমরা জানি, মানুষের জ্ঞান, তার উন্নয়ন, তার অগ্রগতি এগুলো সবই হচ্ছে নিরবচ্ছিন্ন প্রয়াস ও ধারাবাহিকতার ব্যাপার। তার মানে হলো, অগ্রবর্তী যুগের তুলনায় পূর্ববর্তী যুগের থাকে কিছু সীমাবদ্ধতা।
আমার এই যে বর্তমান সময়, আমার ভবিষ্যতের তুলনায় আমার যুগের যে সীমাবদ্ধতা, সেটা সম্পর্কে আমি যদি সচেতন হয়ে ওঠি এবং বর্তমানের এই সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে ভবিষ্যতের যে সোনালী সম্ভাবনা সমুজ্জ্বল হয়ে উঠেছে সেটাকে অর্জন করা এবং সেটার উন্নয়নে যদি আমি নিজেকে নিয়োজিত করি, তাহলেই বলা যাবে, আমি যুগের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছি।
অতএব, কথাটা আমরা এভাবে বুঝলাম, বর্তমান হলো ভবিষ্যতকে অর্জন করার সম্ভাবনা এবং অতীতের প্রাপ্তিকে কাজ লাগানো বা এনজয় করার সুযোগ। অতীতের প্রাপ্তিকে কাজে লাগানোর চেয়ে অতীতে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা বা অতীতকে সকাঠামো আঁকড়ে থাকার চেষ্টা এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর চেয়ে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নিরাশ হয়ে বসে থাকা, কিংবা ভবিষ্যতের অবাস্তব স্বপ্নে বিভোর হয়ে যাওয়া, এসবই হচ্ছে সময়ের ফাঁদে নিজেকে আটকে ফেলার লক্ষণ।
সময়কে কাজে লাগানোই হচ্ছে সফলতার পূর্বশর্ত।
যারা সময়ের ফাঁদে নিজেকে আটকে ফেলে, তারা কোনো না কোনো ধরনের প্রান্তিকতার রোগে আক্রান্ত। আগেই বলেছি, এ ধরনের উদ্ভট চিন্তার মানুষেরা হয়তো অতীতের নস্টালজিয়াতে আটকা পড়েন নয়তো ভবিষ্যতের অলীক স্বপ্নে বিভোর হয়ে পড়েন। অথবা, দুটোই। এটি টের পাওয়া যায় তাদের অন্ধ ও অপ্রতিরোধ্য বর্তমানপ্রিয়তা দিয়ে।
ছোটবেলায় রেপিড রিডিং বইয়ের মধ্যে ‘থ্রি কোশ্চনস’ জাতীয় একটা গল্প পড়েছিলাম, যেখানে একজন হারমিট অনুসন্ধিৎসু জনৈক রাজার what is the best time? – এই প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, বর্তমানই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ সময়।
হ্যাঁ, আমিও একমত, বর্তমানই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ সময়। যদি আমরা বর্তমানের সীমাবদ্ধতাকে বুঝতে পারি এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে অর্জন করার জন্য বর্তমানকে একটা প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করি। এর মানে হলো, বর্তমান কি আমার লাস্ট স্টেশন বা লক্ষ্য, নাকি একটা প্ল্যাটফর্ম বা উপায় মাত্র? – এই প্রশ্নের মীমাংসার উপরেই নির্ভর করবে “আজকের দিনের জন্য বাঁচো” কথাটার সঠিক তাৎপর্য।
যেখানে আজকের দিনটি হচ্ছে অন্তহীন ভবিষ্যতের সম্ভাব্য সর্বোত্তম অর্জন, সেখানে আজকের দিনটি আমার জন্য সফল। আর যেখানে ভবিষ্যতের যতটুকু অর্জন আজকের দিনে অর্জিত হওয়ার কথা ছিলো তা অনুপস্থিত, সেখানে বর্তমানের ভ্রান্তিপূর্ণ গোলক ধাঁধার মধ্যে পড়ে থাকা আমার এই আজকের দিনটিতে, আসলে আমি মৃত।
আমার এই কথায় অবাক হচ্ছেন? শোনেন, মানবিক মর্যাদার দিক থেকে বিবেচনা করলে দেখা যায়, সব জীবিত লোকেরাই আসলে জীবিত নয়। যারা ভবিষ্যতের জন্য বাঁচে, তারাই সত্যিকার অর্থে জীবিত। বাদবাকিরা শুধুই জনগণ। নিছকই সংখ্যা। মনুষ্য প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত প্রাণী মাত্র। তারা অলরেডি মৃত। মরালি, এথিক্যালি। দৌ ফিজিক্যালি দে আর এলাইভ, লিভিং উইথ আস, বাট আইডিওলজিক্যালি দে আর গন অলরেডি।
এটিই হচ্ছে don’t live your time এই কথাটার তাৎপর্য, যা আমি বলতে চেয়েছি।