“আসসালামু ওয়ালাইকুম। একটা প্রশ্ন ছোটবেলা থেকেই মনে জাগত। প্রশ্নটা হলো, এই যে পাহাড়-পর্বত, বাতাস, পানি, গাছ, সমুদ্র ইত্যাদি নামগুলো কে রেখেছে? অর্থাৎ আমরা মাটিকে পানি না বলে মাটিই কেন বলি? সাগরকেও তো নদী বলতে পারতাম বা হতে পারতো। কেন হলো না? আল্লাহ যখন আদমকে সৃষ্টি করলেন তখনই কি তাকে এগুলো শিখিয়ে দিয়েছেন?”
জনৈক পাঠকের এই প্রশ্নের উত্তরে আমি বলেছি,
আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করার সময় সবকিছুর নাম শিক্ষা দিয়েছেন। এটি কোরআন শরীফে বলা হয়েছে। এখানে নাম বলতে বুঝানো হচ্ছে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ের সংক্ষিপ্ত, সামগ্রিক ও পরিচিতিমূলক জ্ঞান। আদমের সন্তান হিসেবে আমাদের সেগুলো ধীরে ধীরে মনে পড়ে। সেজন্য দেখা যায়, মানব সভ্যতার ইতিহাসে কোনো একজন ব্যক্তির হঠাৎ করে মনে হলো– এটি এমন কেন? এটি তো আসলে তেমন হওয়ার কথা! অথবা, এটি তো ঐ রকমই।
এই যে মনে পড়া, এটা থেকে বোঝা যায়, এগুলো আগে থেকে ছিল। কিন্তু এটা যে আছে সেটা মনে ছিল না। জ্ঞানবিজ্ঞান ও সভ্যতার অগ্রগতিতে ধীরে ধীরে সেগুলো আনফোল্ডেড হচ্ছে। এভাবে কিয়ামত পর্যন্ত আদমকে (আ.) দেয়া ইন্ট্রুডাক্টরি নলেজ ক্রমান্বয়ে তাঁর সন্তানদের ‘মনে পড়তে’ থাকবে।
জ্ঞানতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে বললে বলতে হয়, জ্ঞান হলো প্রাপ্ত বা প্রদত্ত। নলেজ ইজ গিভেন। হোক সেটা প্রকৃতিপ্রদত্ত কিংবা স্রষ্টাপ্রদত্ত। যখন আমরা কোনো জ্ঞান অর্জন করি, তখন আসলে আমাদের মধ্যে অস্পষ্টভাবে থাকা বিষয়গুলো সম্বন্ধে অধিকতর স্পষ্ট ও ব্যবহারযোগ্য ধারণা লাভ করি। এই দৃষ্টিতে জ্ঞান হলো বিষয় সম্পর্কে সচেতন হওয়া।
আকাশ, বাতাস, পাহাড়, পর্বত, পানি, গাছপালা, সমুদ্র, মানুষজন ইত্যাদি যেসব নাম আমরা নিয়ে থাকি সেগুলো এক দৃষ্টিতে শুধুই নাম। যেমন, আমকে আম না বলে যদি আমরা জাম বলি, তাতে কোনো সমস্যা নাই। অন্য দৃষ্টিতে, আম বলতে আমরা যা বুঝাই, সেটাকে জাম বা যে কোনো কিছুই বুঝাই না কেন, তাতে সেটির আম হওয়াটা নাকচ হয়ে যায় না। অন্য কথায়, আম আমই, নাম যা-ই হোক না কেন।
তারমানে, নামের মধ্যে দুটো জিনিস আছে বা থাকে। একটি হলো প্রতীকী দিক। একে চিহ্নও বলা যায়। অন্যটি হলো, এটির গুণ বা বৈশিষ্ট্যগত দিক। নামকে যদি আমরা প্রথম অর্থ গ্রহণ করি তাহলে সেটি নিছকই নাম। ভাষার বিবর্তনের মাধ্যমে সেটি ক্রমান্বয়ে গড়ে উঠেছে। নামকে যদি আমরা অন্তর্গত বৈশিষ্ট্য তথা দ্বিতীয় অর্থে গ্রহণ করি, তাহলে সেটি সর্বাবস্থায় একই থাকবে। অর্থাৎ অর্থগত দিক থেকে নাম হলো অবজেক্টিভ বা ব্যক্তিনিরপেক্ষ। ব্যবহারগত দিক থেকে নাম হলো সাবজেক্টিভ বা ব্যক্তিসাপেক্ষ।
মেটাফিজিক্সে নামবাদ বা নমিনালিজম হিসেবে যা আলোচনা করা হয়, তা এখানে আনা হয়নি। সেটা নিয়ে অন্যদিন বা অন্যত্র আলোচনা হতে পারে।