তিনিই মধ্যম যিনি চলেন তফাতে। মেটাফোরিকেলি কথাটা বলছি।
আপনি যদি মনে করেন হাঁটলে আপনি মারা পড়বেন, সে ক্ষেত্রে পঙ্গুত্ব আপনার জন্য শ্রেয়তর। অন্তত জানটা তো বাঁচবে। আপনি যদি জানতে পারেন চোখ খুললেই আপনি অন্ধ হয়ে যাবেন, সে ধরনের পরিস্থিতিতে আংশিক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়াটা আপনার জন্য মঙ্গলজনক।
ধনসম্পদ আপনার মূল্যবোধকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, এমন অবস্থায় মধ্যবিত্তের জীবন বেছে নেওয়া আপনার জন্য অধিকতর নিরাপদ।
কথায় বলে, উত্তম নিশ্চিন্তে চলে অধমের সাথে, তিনিই মধ্যম যিনি চলেন তফাতে।
Establishment is a necessity, as well as a trap.
আশেপাশে তাকিয়ে দেখেন। আপনার চেয়েও তুমুল কত আদর্শবাদী বিপ্লবী হারিয়ে গেছে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য আর পজিশনের ফাঁদে আটকা পড়ে। পাটখড়ির বিছানাতে যেদিকেই আপনি পাশ ফিরবেন, পাটখড়ি ভাঙ্গার মট মট শব্দ শুনবেন।
অধিকাংশ লোকের কাছে জীবন হলো পাটখড়ির বিছানার মতো সুবিধা পাতানো স্বার্থ হাসিলের অবারিত প্রান্তর।
‘আমি কী পাব?’ –এই প্রশ্নের মীমাংসা ব্যতিরেকে তারা কোনোকিছুতে সক্রিয় হয় না। কোনো ধরনের personal বেনিফিট পাওয়ার হিসেব ছাড়া কন্ট্রিবিউট করে যাওয়াকে তারা নিছকই পাগলামি বলে মনে করে।
অথচ ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠা কিছু ক্ষ্যাপাটে লোকজনই রচনা করেছে পৃথিবীর ইতিহাস। আপনি রাখাল হবেন, নাকি গরু-ছাগল হয়ে থাকবেন, সিদ্ধান্ত আপনার।
যেমনটি আমি চেয়েছি নিজেকে
ভেড়ার পালের মধ্যে একটি নাদুস নুদুস ভেড়া হওয়ার চেয়ে আমি চেয়েছি রাখাল হতে। হয়েছি কিছুটা, কিম্বা পারিনি ততটা। অন্তত চেষ্টা তো করেছি। এইটুকু সান্ত্বনা।
পেশায় শিক্ষক। কিন্তু অপছন্দ করি শিক্ষকদের জীবন-চক্র। আমার সহকর্মীরা এদিক ওদিকে যায়। নানা ধরনের সুবিধার টানে। জ্ঞান বিতরণটা উপলক্ষ্য। টিএ/ডিএ/সম্মানী পাওয়াটা তাদের লক্ষ্য। বরিষ্ঠতার সূত্রে শিক্ষকদের এসে যায় সুযোগ-সুবিধার অনেক উপায়। একটু বুদ্ধি খাটিয়ে সেগুলোকে তারা হাতিয়ে নেয়।
যেমন, “লাইন ঘাট’’ ঠিক রেখে এক্সটার্নাল হিসেবে এখানে ওখানে যাওয়া। বিষয়ের এক্সপার্ট না হয়েও একটুখানি ঘুরে আসার জন্য কনফারেন্সে পেপার দেয়া। এম.ফিল., পি-এইচ.ডি. প্রদানের মেশিন হিসেবে নিজেকে ব্যবহৃত হতে দেয়া।
সহকর্মীদের দেখি, দিনরাত ব্যস্ত নানা ধরনের এক্সট্রা-একাডেমিক কার্যক্রমে। পরীক্ষার কাজ এর অন্যতম উদাহরণ। এসব কাজ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক করার কথা না। প্রজেক্ট জমা দেয়ার সময়সীমা কাছাকাছি চলে আসলে গবেষণা ব্যবসায়ী প্রজেক্টজীবীদের চাঞ্চল্য চোখে পড়ার মত।
এইসব সুযোগ-সুবিধা লাভে আমি অনাগ্রহী এবং অযোগ্য।
প্রতিটি সুবিধার যেমন থাকে কিছু অসুবিধা। তেমনি করে প্রতিটি অসুবিধার থাকে কিছু সুবিধা।
সহকর্মীদের মতো নানা ধরনের বাড়তি কাজে ব্যস্ত না থাকার ফলে আমি নিয়মিত ক্লাস নিতে পারি। ইচ্ছামত পড়াশোনা করতে পারি। শিক্ষার্থীদের সময় দিতে পারি। যখন তখন যে কারো সাথে ঘুরতে যেতে পারি। যে কেউ এসে আমার সাথে কথা বলতে পারে।
গতকালও জ্ঞান, বিশ্বাস ও যুক্তির সম্পর্ক নিয়ে একজনের একটা প্রশ্নের উত্তরে তিনটা ভিডিও বক্তব্য রেকর্ড করে ‘যুক্তি ও জীবন’ চ্যানেলে আপলোড করেছি। কনটেন্টের দিকে এ’গুলো অন্তত দু’টো ক্লাসের সমতুল্য।
শুভানুধ্যায়ীরা বলেন, হাই পজিশনে থেকেও তো ওয়াইড রেইঞ্জে কন্ট্রিবিউশান করা যায়। যে কথা তারা বলে না তা হলো, ক্যরিয়ারের পিছনে ছুটে আদর্শ ও মূল্যবোধ, বিশেষ করে একটিভিজমের ময়দান থেকে হারিয়ে গেছে একদা বিপ্লবীরা। আমার সহ-বিপ্লবীরা সর্ববিদ দুনিয়াবী স্টাবলিশমেন্ট পাওয়ার পরে ধর্মবাদিতায় আশ্রয় খুঁজে পেয়েছেন অবশেষে!
তাই তো বলেছি শুরুতে, উত্তম নিশ্চিন্তে চলে অধমের সাথে, তিনিই মধ্যম যিনি চলেন তফাতে।
মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Misbahur Rahman: স্যার, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল উদ্দেশ্য কি? যদি ছাত্রদের পাঠদান-ই এর লক্ষ্য হয়ে থাকে, তবে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে পাঠদানের সক্ষমতা যাচাই করা উচিৎ নয় কি? এর সাথে নিয়মানুবর্তিতার কমিটমেন্টও নেয়া জরুরি বলে মনে করি।
গবেষণার জন্য তো বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা রয়েছে। একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক যদি গবেষণার চক্করে কিংবা নিজের প্রোফাইল ভারী করতে ক্লাস বাদ দিয়ে দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়ান, ক্লাসে আসলেও কোনো পূর্ব প্রস্ততি ছাড়া উপস্থিত হন, তবে সে শিক্ষক কি তার প্রধাণ দায়িত্বে অবহেলা করছেন না?
Mohammad Mozammel Hoque: এ ব্যাপারে প্রথম কথা হচ্ছে, আমাদের দেশের প্রধান সরকারি সাধারন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মূলত পাঠদাননির্ভর বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণামূলক বিশ্ববিদ্যালয় নয়।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পাঠদানের মান রক্ষা করার জন্য এখানে নিয়োজিত শিক্ষকদেরকে পাঠদানের পাশাপাশি গবেষণা কাজেও নিয়োজিত থাকতে হয়।
ক্লাসে পড়ানো পাবলিক স্পিকিং এর সমতুল্য। সেজন্য কেউ ভালো ছাত্র হলেই সে ভালো শিক্ষক হবে এমন কোন কথা নেই। শিক্ষকদের শ্রেণী কার্যক্রমের নিয়মিত মূল্যায়ন এবং তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত কোনো সম্ভাব্য ঘাটতি পূরণ হতে পারে।
Misbahur Rahman: জ্বি, শিক্ষকদের নিয়মানুবর্তিতা ও পাঠদান মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি।
Mohammad Mozammel Hoque: মূল্যায়ন পদ্ধতি না থাকার কারণে অত্যন্ত বাজে পাঠদান সত্ত্বেও একজন শিক্ষক রুটিনমাফিক গবেষণা করে সর্বোচ্চ পদ পদবী বাগিয়ে বসে থাকেন। নতুন শিক্ষা পদ্ধতিতে (OBE) এই ঘাটতি পূরণ করার চেষ্টা করা হবে বলে শুনেছি। কিন্তু বাঙালি যেই লেভেলের বাটপার, তারা যে কোনো সিস্টেমকে শেষ পর্যন্ত নিজেদের মতো করে ম্যানুপুলেইট করে নিতে পারে। এটি আমার আশঙ্কা
Misbahur Rahman: শিক্ষকদের নিজের বিবেকের প্রতি দায়বদ্ধতা না জাগলে শত পরিকল্পনা/পদ্ধতি প্রণয়ন করেও এসব অনিয়ম দূরীভূত করা যাবে না স্যার। সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী হিসেবে আমরা সর্বোচ্চ এটা আশা করতে পারি যে উনারা নিজেদের প্রতি এবং জাতির ভবিষ্যতের প্রতি মনোযোগী হবেন।
Shamim Noor: “এম.ফিল, পি.এইচ.ডি. প্রদানের মেশিন হিসেবে নিজেকে ব্যবহৃত হতে দেয়া…”। এটাই হচ্ছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, স্যার।
Mohammad Mozammel Hoque: বছর কয়েক আগে অবসরপ্রাপ্ত আমাদের এই শিক্ষককে আমি একাডেমিক কমিটির মিটিংয়ে সরাসরি বলেছিলাম ‘you are serving as a PhD machine …!’
Sadiqur Rahman Sadik: জ্বি স্যার, ঠিক বলেছেন। আমাদের ভেবে দেখা উচিত কিসের বিনিময়ে আমরা কি অর্জন করতে চাচ্ছি।
Mohammad Mozammel Hoque: জ্ঞানকে কেউ যখন পণ্য বানায়, তখন জ্ঞানের যে একটা ফজিলত বা মর্তবা, অথবা বলা যেতে পারে বরকত, সেটা থাকে না।
Nurul Anowar: স্যার, আপনি মধ্যম না উত্তম?
Mohammad Mozammel Hoque: আমি মধ্যম। তাই আমি তফাতে চলি।
স্টাবলিশমেন্ট এবং কমিটমেন্টের ভারসাম্য
আমি ছাত্রশিবির এর সদস্য ছিলাম। পরবর্তীতে জামায়াতের কর্মী হিসেবে ছিলাম চবি সাদা দলের অন্যতম শিক্ষক নেতা। বুদ্ধিবৃত্তিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ময়দানের কাজকে অধিকতর গুরুত্ব দেয়ার ফলে এক পর্যায়ে আমি জামায়াত থেকে বের হয়ে ‘সমাজ ও সংস্কৃতি অধ্যয়ন কেন্দ্র’ (সিএসসিএস)-কে আমার একমাত্র আইডেন্টিটি হিসেবে গ্রহণ করি।
‘জামায়াত ইসলামী: অভিজ্ঞতা ও মূল্যায়ন’ এই শিরোনামে আমার একটা বই আছে।
সেখানে স্ট্যাবলিশমেন্ট এবং কমিটমেন্টের ভারসাম্য প্রসঙ্গে আমি বিস্তারিতভাবে লিখেছি। দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী এবং ব্যক্তিগতভাবে জামায়াতের বেশিরভাগ লোক স্টাবলিশমেন্ট এবং কমিটমেন্ট এর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারেনি।
বাস্তব ময়দানে দেখা গেছে, তাদের মধ্যে রয়েছে কমিটমেন্টের বিরাট ঘাটতি। যে যেদিকে স্টাব্লিশমেন্ট পেয়েছে সে সেটাকেই সবচেয়ে বড় বলে মনে করেছে। ‘দ্বীন হচ্ছে জীবনের উদ্দেশ্য’ – এই স্লোগান দিয়ে শুরু করে শপথের কর্মীদের প্রায় সবাই শেষ পর্যন্ত ‘দ্বীন হচ্ছে জীবনের অংশ’ এই অবস্থানে স্থিত হয়েছে।
মোরাল অফ দ্যা স্টোরি হলো, আপনার স্টাবলিশমেন্ট যত বেশি হোক না কেন, আপনার আইডিওলজিক্যাল কমিটমেন্ট হতে হবে তারচেয়ে খানিকটা বেশি। অন্যথায় তুলনামূলকভাবে কম স্ট্যাবলিশমেন্টও আপনাকে আপোষকামী করে তুলবে।
সমস্যা হলো, সোশ্যাল হাইয়ার্কির পথ ধরে যেভাবে স্ট্যাবলিশমেন্টকে বাড়ানো যায়, আইডিওলজিক্যাল কমিটমেন্টকে সেভাবে বাড়ানো যায় না। স্টাবলিশমেন্ট তথা পিছুটান যত বাড়ে, আদর্শ ও মূল্যবোধ তত হুমকীর মধ্যে পড়ে। বাড়ানো তো দূরের কথা, যা আছে বা ছিল তা ধরে রাখাও এক সময়ে মুশকিল হয়ে পড়ে।
তাই কাজের কাজ হলো, স্টাবলিশমেন্টের দিকে কম মনোযোগ দিয়ে কমিটমেন্ট এবং কন্ট্রিবিউশনের দিকে বেশি মনোযোগী হওয়া।
‘আগে স্টাবলিশ্ড হয়ে নেই, তারপরে যা করার করব’ এমনটা যারা ভাবে, দেখেছি তাদের জীবনে শেষ পর্যন্ত কন্ট্রিবিউশনের ময়দানে ফিরে আসা আদৌ সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। মরালিটির যেমন হলিডে থাকে না, তেমনি করে স্যাক্রিফাইস এবং কনট্রিবিউশনের কোনো আগামী থাকে না। বাকি মানেই ফাঁকি!
যারা করে তারা সবসময়ই করে।
অন্য সবকিছুর মতো কর্মতৎপরতাও অভ্যাসের ব্যাপার। তাই, আপনার ফিল্ডে স্ব-উদ্যোগেই আপনাকে কর্মতৎপর হতে হবে।
নাউ অর নেভার।
মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Shamsul Akash: বেশিরভাগ লোক স্টাবলিশমেন্ট এবং কমিটমেন্টের মধ্যে ভারসাম্য করতে পারেনি বিষয়টি সঠিক নয়। মনে করি, কিছু ব্যতিক্রম আছে অনস্বীকার্য। তা না হলে স্রোতের প্রতিকূলে তরী মাইলের পর মাইল তীব্র গতিতে চলতো না। একটি আইডলজিক্যাল কনসেপ্টে কাজ করা কোনো প্রচেষ্টা ইলিটারেট, বেদাতে, শিরক, ভোগবাদে নিমজ্জিত সমাজের মধ্য থেকে বের হওয়া মানুষদের পরকালে ও কিতাবে সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়া ও নেওয়া এবং আজীবন ইস্তাকামাত থাকা সম্ভবপর হয় না, তাই একটি অংশ টিকে থাকতে পারে না। এই সংখ্যাটি ইগনরযোগ্য নয় ঠিক কিন্তু এটি থাকবে। এটি প্রাগৈতিহাসিক সত্য।
Md Raihan Uddin Kayes: “নাউ অর নেভার!” পুরু পোস্টের নির্যাস এই এক বাক্যে দিয়ে দিলেন!
Mohammad Mozammel Hoque: ‘আগে আমি একটু প্রতিষ্ঠিত হয়ে নেই, তারপরে আমি ফাটায় ফেলবো’, এই ধরনের কথাগুলো অবোধ সান্তনা ছাড়া আর কিছু নয়। যারা তেমন কিছু করে তারা সুখের সময়ও করে দুখের সময়ও করে।
Mohammed A. Bashar: দ্বীন কি জীবনের উদ্দেশ্য, না-কি জীবনের অংশ? সর্বপ্রথম এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ধন্যবাদ
Mohammad Mozammel Hoque: দ্বীন হচ্ছে জীবনের অংশ, এইটা সেকুলার সেটআপের ব্যাপার। পক্ষান্তরে ইসলামিক আন্দোলনের মেজাজ হচ্ছে, দ্বীন হল জীবনের উদ্দেশ্য।
Elias Sohel: জি, তবে এস্টাবলিশমেন্ট ও কন্ট্রিবিউশানের ভারসাম্যহীনতার উদাহরণ আপনি নিজেকে দিয়ে দিলে আরও বেশি রিয়েলিস্টিক হতো। কারণ, আপনিও এই চিন্তাধারার বাহিরে নয়।
Mohammad Mozammel Hoque: আমার কন্ট্রিবিউশন আরো অনেক বেশি হতে পারতো। যা হয়েছে সেটার জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি।
আমি সেই আল্লাহর বান্দা যে তার উপার্জনের গড়পরতা অর্ধেকেরও বেশি প্রতি মাসে আল্লাহর ওয়াস্তে খরচ করে, প্রতিদিন গড়ে কয়েক ঘণ্টা করে আল্লাহর ওয়াস্তে সময় ব্যয় করে।
আমি সেই আল্লাহর বান্দাদের একজন যারা নিজেদের একাডেমিক স্টাবলিশমেন্টকে গণমানুষের কাছে নিয়ে গিয়েছে। ইসলামপন্থী বিপুল জনগোষ্ঠীর কাছে ফিলসফিকে জনপ্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে হাজির করেছে। এর বিপরীতে ফিলসফির অঙ্গনে ইসলামকে শক্তিশালী হিসেবে নানা মাধ্যমে হাজির করেছে।
‘সমাজের সংস্কৃতি অধ্যয়ন কেন্দ্র’ নামে একটা সংস্থা আমি দুই যুগ ধরে পরিচালনা করছি।
কন্ট্রিবিউশন বলতে আপনি যদি শুধু জামায়াতে ইসলামের কাজ করাকে বুঝে থাকেন তাহলে আপনি তাদের একজন যারা ইসলাম = জামায়াতে ইসলাম এই ফর্মুলাতে বিশ্বাস করে।
আমি তা মনে করি না।
Mohammad Ali: আরেকটি ইন্টারেস্টিং বিষয় হচ্ছে আপনার সাফল্য শুধুমাত্র আপনিই দেখতে পাচ্ছেন অন্য কেউ না।। তাহলে এই ধরনের সাফল্যের ইমপ্যাক্ট আপনি কিভাবে ইভ্যালুয়েশন করলেন?
Mohammad Mozammel Hoque: সফলতা ব্যর্থতার পরিবর্তে আমরা সাবস্টেন্সিয়াল কন্ট্রিবিউশনের কথায় আসি।
যাকে নিয়ে আপনি কথা বলছেন সে ব্যক্তির-
১. ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলন সংক্রান্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১৫ টি।
২. গ্রন্থ হিসেবে অপ্রকাশিত কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া এবং ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রবন্ধ ও নিবন্ধের সংখ্যা প্রায় এক হাজার।
৩. তার চারটা ওয়েবসাইট আছে তার মধ্যে একটি সাইটের address উল্লেখ করে মিজানুর রহমান আজহারীর মতো ব্যক্তিত্ব একবার স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। সেটি হচ্ছে cscsbd.com
৪. তার দুটি ইউটিউব চ্যানেল আছে। একটি ‘সামাজিক আন্দোলন’, আরেকটি ‘যুক্তি ও জীবন’। এই দুটি চ্যানেলে তাওহীদ ইসলাম ইসলামী আন্দোলন নানাবিধ সামাজিক সমস্যা সমাধান ইত্যাদি বিষয়ে প্রায় 1000 ভিডিও বক্তব্য আছে।
৫. গত 30 বছরের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামপন্থীরা যতগুলো পাবলিক সেমিনার করেছে আলহামদুলিল্লাহ তার সবগুলো তার ব্যবস্থাপনা তত্ত্বাবধান এবং উদ্যোগে সম্পন্ন হয়েছে।
আরো বলতে হবে?
Mohammad Ali: আমি বলেছি আপনি কাজ করেছেন কিন্তু আউটপুট কি পেয়েছেন, যে আপনার সফলতার ইভ্যালুয়েশন কিসের ভিত্তিতে করেছেন? কাজ নাকি ফলাফল?
Mohammad Mozammel Hoque: কিভাবে মূল্যায়ন করলে আপনি সেটাকে সঠিক মনে করবেন, সেটি আগে বলেন। কারণ ক্রাইটেরিয়া ঠিক না করে জাজ করতে যাওয়া তো ঠিক না। তাই না?
Mohammad Ali: ইতিহাসের সবগুলো পয়েন্টে সুন্দর প্রবিধান বিজয়ীদের দ্বারা লেখা হয়। চেষ্টা প্রায় সবাই করে কিন্তু যার কাজ দ্বারা সমাজ রাষ্ট্র সরাসরি উপকৃত হবে সেই সফল বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। সেই হিসেবে আপনার কাজের ইমফ্যাক্টগুলো দেখতে চাচ্ছি, ডেভেলপমেন্টের অনুসৃত বাস্তব চিত্র দেখান।
Mohammad Mozammel Hoque: আপনার কথাগুলো এলোমেলো। আপনি যেকোন কান্ডজ্ঞানসম্পন্ন লোককে সেটা দেখিয়ে জেনে নিতে পারেন, কেন আমি এটা বললাম।
এডহোমিনেম ফালাসি বলে একটা কথা আছে যেটা আপনি করছেন। আপনার এই উদ্দেশ্যটা আমি প্রথমেই বুঝতে পেরেছিলাম। তারপরও এনগেইজ হয়েছি খানিকটা, যাতে করে অন্য পাঠকরা বুঝে নিতে পারে, হু ইজ হোয়াট। ভালো থাকেন।
আমানউল্লাহ রাইহান: এবং প্রতিষ্ঠিত হবার পথে চলতে চলতে এই পথেই থিতু হয়ে যায়, বাস্তবেও এটাই দেখা মিলে।
Mohammad Mozammel Hoque: পদ পদবী এবং সুযোগ সুবিধার পেছনে ছুটতে ছুটতে লক্ষ্য এবং উপলক্ষ্য ইন্টারচেইঞ্জড হয়ে যায়। সেজন্য সবসময় কাজের মধ্যে থাকতে হয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আমরা কোনো কাজের মাধ্যমে যা অর্জন করি, তারচেয়েও বড় যা কিছু আমরা অর্জন করি সেটা হলো, কাজ করার অভ্যাসটা চালু থাকা।
Syed Ahmed Shameem: দল হিসেবে তো জামাত এস্টাবলিশমেন্টকে উদ্দেশ্য বানায় নাই, তাইলে সেটা কীভাবে কমিটমেন্ট রক্ষা না রক্ষার প্রশ্নে গেল?
Mohammad Mozammel Hoque: জামায়াতত যেসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে সেগুলোকে জনগণের প্রতিষ্ঠান হিসেবে না ভেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভেবেছে। সমাজের মূলধারায় স্থান করে নেওয়ার জন্য সেগুলোকে কাজে না লাগিয়ে নিজেদের লোকজনকে প্রোভাইড করার জন্য সেগুলোকে তারা ব্যবহার করেছে।
জামায়াতের প্রতি লোকদের ভরসার প্রধান ব্যাপারটা ছিল, তারা একমাত্র দল যারা মাঠে ময়দানে আওয়ামী লীগকে মোকাবেলা করতে পারে। আমার ধারনা, সেই সক্ষমতা জামায়াতের ছিল।
নিজেদের প্রতিষ্ঠানকে জনগণের প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভাবতে পারার উদারতা দেখাতে না পারার পাশাপাশি তাদের প্রতি জনগণের যে আস্থা ছিল সেটাও তারা রক্ষা করতে পারেনি। এমনকি তারা নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারেনি।
আমি মনে করি না জামায়াত এতটা অক্ষম। বরং সুযোগ-সুবিধার প্রতি তাদের মনোযোগ বেড়ে যাওয়ার কারণে তাদের জনশক্তির মধ্যে যে একটা লড়াকু মনোভাব ছিল সেইটা আর নাই। তারা এখন খানিকটা দাওয়াতি এবং খানিকটা রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে।
ইসলামী আন্দোলনের যে ফ্লেভার আমরা তখন পেয়েছিলাম সেইটা এখন আর নাই। এখন এটি নিছক একটা ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল। আগে এসব কথাগুলো লোকেরা অভিযোগ হিসেবে বলত। এখন তারা নিজেরাই নিজেদেরকে এভাবে পরিচয় দেয়।
সংগঠন থেকে তারা এখন পার্টিতে পরিণত হয়েছে। এসব বিষয়ে আমি সাধারণত কথা বলতে চাই না এখানেও বলবো না বলে ভেবেছিলাম। কিন্তু কোনো কারনে আপনার কথার উত্তরে এই কথাগুলো বললাম।
এ’তো আমার কথা। আপনি একমত হন বা না হন, দয়া করে এই রোজা রমজানের দিনে তর্ক বিতর্কে লিপ্ত হবেন না। আপনি জানতে চেয়েছেন তাই বললাম।
ভালো থাকেন।
জ্ঞান-বুদ্ধি আর সামাজিক মর্যাদার মতো নন-কমার্শিয়াল অ্যাসেটের যাকাত আদায়
আমার যেসব সহকর্মী এক সময়ে আমার মতাদর্শের সঙ্গী ছিলেন তাদের সাথে কখনো দেখা হলে আমি তাদেরকে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুর জীবন কাহিনীর কথা বলি। সূরা কুরাইশ এর কথা বলি।
তৎকালীন আরবের অনিরাপদ পরিবেশে কুরাইশ বংশের লোকেরা যেভাবে নিরাপত্তা লাভ করতো, বর্তমান বিরুদ্ধ পরিবেশেও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হওয়ার কারণে আমরা নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে থাকি।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দলীয় পদ লাভ ছাড়া একজন শিক্ষক হিসেবে প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধাদির সবকিছু আমরা পেয়েছি। পাচ্ছি। ইতোমধ্যে আমাদের প্রত্যেকের হয়েছে প্রত্যাশিত সব পারসনাল স্টাবলিশমেন্ট।
সে তুলনায় এই বিপুলসংখ্যক একাডেমিকালি সাউন্ড এন্ড সিনিয়র ইসলামপন্থী শিক্ষকের ইন্ডিভিজুয়াল কিংবা কালেক্টিভ সোশ্যাল কন্ট্রিবিউশন কী? বা, কতটুকু? বিশ্ববিদ্যালয়ের socio-cultural এনভাইরনমেন্টে ইনারা কি আদৌ exist করেন? পলিটিক্সই কি সবকিছু?
কথাটা পুরনো, আপনি কারো জন্য কিছু করলে, অন্যদের চেয়ে বিষয়টা থেকে আপনি নিজে বেশি উপকৃত হয়ে থাকেন।
ফেইসবুকের ট্রেন্ড অনুসরণ করে দুই লাইন লেখা, লাইক কমেন্ট করা, এগুলো কোনো সাবস্ট্যানশিয়াল এক্টিভিজম নয়। সমাজে এলিট হিসেবে পরিচিত এসব প্রাক্তন বিপ্লবীদের হাই সোশ্যাল পজিশন তাদের গলায় বেড়ির মত চেপে বসেছে। আনুগত্য আর পরামর্শের ভারসাম্যের কথা উনারা ভুলতে বসেছেন প্রায়।
জ্বি না, অযথা আড্ডা দেওয়া, মুখের কথায় হাতী ঘোড়া মারা, কনস্পিরেসি থিউরি আর ব্লেইম গেইমের বুলি কপচানো, এগুলো কোনো কাজ না। দুর্বলের লক্ষণ। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘আমি সকল নিয়ামতের হিসাব নেব’।
যাকাত শুধু অর্থ সম্পদের হয়, এমন তো নয়। আপনার জীবনে পাওয়া সকল ভালো কিছুর যাকাত আছে।
এই দৃষ্টিতে আপনার সামাজিক মর্যাদা, আর্থিক সচ্ছলতা, এমনকি শারীরিক সুস্থতাও এক ধরনের সম্পদ। আপনার জ্ঞানবুদ্ধি আল্লাহর পক্ষ থেকে পাওয়া সবচেয়ে বড় আমানত। সবচেয়ে বড় সম্পদ। এই সব কয়টি সম্পদের যাকাত আপনাকে আদায় করতে হবে।
আপনার ইন্ডিভিজুয়াল সোশ্যাল কন্ট্রিবিউশন হলো আপনার যোগ্যতার যাকাত। বস্তাপঁচা প্রচলিত শিক্ষক রাজনীতির সাথে যুক্ত থেকে ‘একামতে দ্বীনের দায়িত্ব’ পালন হয় না, এটি তো আপনার না বুঝার কথা না।
আমার পুরনো সাথী, বন্ধু ও ভাইয়েরা, কেউ যদি আমার এই লেখাটা পড়েন আল্লাহর ওয়াস্তে কথাগুলো বোঝার চেষ্টা করবেন। আপনারা ভালো থাকুন। আর পারলে আমার জন্য দোয়া করবেন।
হয় বিপ্লব না হয় মৃত্যু। এর মাঝামাঝি কিছু নয়। আজীবন যেন থাকতে পারি বর্তমান-বিপ্লবী।
