আমার এক অতি পরিচিত শ্রদ্ধেয় ফোনে বললেন, তিনি সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে সেই রাতে সেহরী খেয়ে পরদিন, অর্থাৎ রোজা শুরু হওয়ার একদিন আগে থেকে রোজা শুরু করবেন। উনাকে মুসলিম শরীফে বর্ণিত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের (রা) হাদীস দিয়ে নিবৃত করার চেষ্টা করলাম। দেখলাম তিনি কিছুতেই শুনতে চাচ্ছেন না। অতএব, উনার সাথে এ বিষয়ে ক্ষ্যান্ত দিলাম।
কিন্তু আমি নিজে এ নিয়ে ব্যাপক পড়াশোনা শুরু করলাম। এ বিষয়ে ভূগোল বিভাগের শিক্ষক ও আশেপাশের আলেমদের সাথে কথাবার্তা বললাম। যে কয়টি ভিডিও লেকচার অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শুনেছি তারমধ্যে নিচেরগুলো উল্লেখযোগ্য। শুরুতে আমার ভয় ছিলো, একই দিনে অর্থাৎ বিশ্বব্যাপী ঈদ পালনের এই অভিনব দাবীর পক্ষে সালাফি আলেমগণ বক্তব্য দেন কিনা। দেখলাম, মসজিদে নববীর ভেতরে বসে দেয়া প্রশ্নোত্তর হতে শুরু করে আমাদের দেশীয় আহলে হাদীসের নেতৃস্থানীয় উলামা, সবাই স্থানীয়ভাবে চাঁদ দেখে রোজা শুরু করা ও ঈদ পালনের পক্ষে।
এমনকি ইউরোপ আমেরিকায় অবস্থিত যেসব মসজিদ ক্ষুদ্র সংখ্যালঘু হিসাবে এক সময়ে সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে রোজা-ঈদ পালন শুরু করেছিলো এবং এখনো করে আসছে তাদের উলামারাও ইদানীং হাদীসের দাবী অনুযায়ী স্থানীয়ভাবে চাঁদ দেখা পদ্ধতিতে ফিরে আসার পক্ষে কথা বলছেন। বৃহত্তর জনগোষ্ঠী হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে কেউ স্বাধীন ও স্বতন্ত্রভাবে রমজানের রোজা রাখা শুরু করতে পারবে না, ঈদ পালন করতে পারবে না এবং কোরবানী করতে পারবে না মর্মে তিরমিজী শরীফে উদ্ধৃত একটি হাদীসের ওপর সব বক্তাকেই বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে দেখলাম। নতুন করে জানলাম, এগুলোও অনত্যম সামষ্টিক এবাদত।
পুরো বিষয়টার ওপর আমার নিজস্ব বক্তব্য আপাতত এটুকু:
সারা বিশ্বে একই তারিখে রোজা শুরু করার কথা যারা বলেন তারা গ্লোবাল ওয়ার্ল্ডের পরিবর্তে ফ্ল্যাট ওয়ার্ল্ড ধারণাকে প্রমোট করেন। হয়তোবা অজান্তেই।
দ্বিতীয়ত: তারা মুসলিম বিশ্বকে নিয়ে ভাবেন। অথচ দুনিয়ার যে কোনো স্থানে বসবাসকারী মুসলিম ব্যক্তি বা জনগোষ্ঠীকে হিসাবের মধ্যে ধরেন না। এটি তাদের ‘সমতল বিশ্ব প্যারাডাইমের’ পরিণতি। যেখানকার চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে দুনিয়ার সব মুসলমান রোজা শুরু করবে, সব জায়গায় ঠিক মতো খবর পৌঁছানোর পরও উক্ত স্থান হতে গ্লোবের বিপরীতে অবস্থানকারী মুসলমানেরা এমনকি সেহেরীও খেতে পারবে না। প্রথম চাঁদ দেখা স্থানের বিপরীত ভৌগলিক অবস্থানে থাকা স্থানে তখন সুবহে সাদিক শুরু হবে।
তৃতীয়ত: যে প্রযুক্তির দোহাই দিয়ে সৌদি আরবে বা দুনিয়ার কোনো স্থানের চাঁদ দেখাকে পুরো মুসলিম উম্মাহর জন্য প্রযোজ্য মনে করেন, তা-ই যদি গ্রহণীয় হয়, তাহলে সৌদিতে বা অন্য কোথাও শারীরিকভাবে মুমিন বান্দাদের স্বচক্ষে চাঁদ দেখারই বা দরকার কী? আবহাওয়াবিদদের কাছ হতে জেনে নিলেই তো হলো। তাই না?
এভাবে শরীয়াহ পালনে প্রযুক্তি নির্ভরতাকে গ্রহণ করা হলে ইসলামী শরীয়াহর বিশেষ করে সাক্ষ্য আইন স্থগিত করে দিয়ে অকাট্য প্রযুক্তিগত সাক্ষ্যকে গ্রহণ না করার কোনো যুক্তি দেখি না। সেটি করতে তারা প্রস্তুত আছে কিনা? জানি না। কেঁচো খুড়তে গিয়ে দেখছি সাপ বের হয়ে পড়ছে। একেক সময় একেকটা বিষয় নিয়ে আগ্রহবোধ করি। মনে হচ্ছে জৈবপ্রযুক্তির ধারণাতীত উন্নতির এ যুগে ‘Use of Technology in Shariah Applications’ সিরিয়াসলি আলোচনার একটা বিষয়।
- Should all Muslims celebrate ‘Eid in the same day? Sheikh Assim al Hakeem
- Professor Kazi Ibrahim on Eki dine Eid kora
- একই দিনে সারা বিশ্বে সিয়াম ও ঈদ পালন – Ek Dine Siyam O Eid Palon- By- Muzaffor Bin Mohsin
- ঈদের চাঁদ দেখা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ মাসায়েল | ডঃ মুহাম্মাদ সাইফুল্লাহ।
- বর্তমান সময়ে চাঁদ দেখা | আসিফ সিফগাত ভূঁইয়া
- Ramadan Moonsighting or Calculation? | Sheikh Omar El-Banna
- Local vs International Moon Sighting | Tahir Wyatt (Masjid Nabawi)
- এক দেশের চাঁদ দেখা বিশ্বব্যাপী রোযা ও ঈদ পালনে যথেষ্ট কি? | আব্দুর রাকীব বুখারী
- Ramadhan Moon Sighting differences amongst scholars in Islam by Sh Yasir Qadhi
- Dr. Zakir Naik – Can Eid be celebrated on the same day throughout the world?
- সকল দেশে একই দিনে ঈদ ও সিয়াম!! | প্রফেসর ড. খোন্দকার আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর
- প্রসঙ্গ একই দিনে সাওম ও ঈদ পালন | ডঃ মাঞ্জুর-ই-ইলাহী
ফেসবুকে প্রদত্ত মন্তব্য–প্রতিমন্তব্য
Salamat Ullah: [তিনি সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে সেই রাতে সেহরী খেয়ে পরদিন, অর্থাৎ রোজা শুরু হওয়ার একদিন আগে থেকে রোজা শুরু করবেন।]
প্রশ্ন: আপনার উল্লেখিত শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি কি জানেন সৌদি আরব কোন পদ্ধতিতে চাঁদের মাস ঘোষণা করে?
অনেকেই জানেনা সৌদি কিভাবে মাস শুরু করে। সৌদি চাঁদ দেখে মাস শুরু করে না। সৌদি ক্যালকুলেশন পদ্ধতি অনুসরণ করে। এবং সৌদি যে ক্যালকুলেশন পদ্ধতি অনুসরণ করে তার সাথে বিজ্ঞান বা ধর্মের কোনো মিল নাই (আমার কথা পাগলের প্রলাপ মনে হবে – তবে অ্যাস্ট্রোনমি বিষয়ে পড়াশোনা থাকলে পাগলের প্রলাপ মনে হবে না)।
ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকা চাঁদ দেখা পদ্ধতি অনুসরণ করে না। তারা ক্যালকুলেশন করে। কে কোন পদ্ধতি অনুসরণ করবে সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে ক্যালকুলেশন পদ্ধতি ১০০% নির্ভূল নয়। প্রথম কোথায় চাঁদ প্রথম দেখা যাবে তা ক্যালকুলেশন পদ্ধতি ১০০% সঠিক বলতে পারবে না। সঠিক হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। তবে চাঁদের বয়স ২৩/২৪ ঘন্টা পার হলে ক্যালকুলেশন পদ্ধতি নিখুঁতভাবে বলতে পারবে তারপরে কোথায় কোথায় চাঁদ দেখা যাবে। খেয়াল করবেন, একটা নির্দিষ্ট সময় অতিক্রান্ত হবার পরে ক্যালকুলেশন পদ্ধতি নিখুঁতভাবে বলতে পারবে তারপরে কোথায় কোথায় চাঁদ দেখা যাবে।
সামনে শাওয়াল মাস কখন :
শাওয়াল মাসের conjunction time বা জন্ম সময় Saturday June 24, 2017 at 2:31 UT, মক্কায় ভোর ৫:৩১ এবং বাংলাদেশে সকাল ৮:৩১.
প্রশ্ন: এই চাঁদ প্রথম কোথায় দেখা যাবে?
উত্তর: সৌদি ক্যালকুলেশন পদ্ধতি অনুযায়ী এই চাঁদ দেখা যাবে শনিবার ২৪শে জুন সৌদি আরব থেকে। আর উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপের ফিকহ কাউন্সিল ক্যালকুলেশন পদ্ধতি অনুযায়ী এই চাঁদ প্রথম দেখা যাবে দক্ষিণ আফ্রিকায় শনিবার ২৪শে জুন। আর moonsighting.com এর হিসাব অনুযায়ী এই চাঁদ দেখা যাবে শনিবার ২৪শে জুন দক্ষিণ আমেরিকার চিলি অঞ্চলে।
আমার অভিমত, এখানে উল্লেখিত চিলি অঞ্চলে শাওয়াল মাসের চাঁদ প্রথম দেখা যাবার সম্ভবনা বেশী শনিবার ২৪শে জুন সন্ধ্যায়। যখন এই চাঁদ দেখা যাবে তখন বাংলাদেশে সকাল এবং তারিখ হবে রোববার ২৫শে জুন। যারা আগামী ১৪৩৮ শাওয়াল মাসের চাঁদ সৌদির সাথে মিলিয়ে করবেন তারা আসলে রামাদান মাসের সিয়াম একটা কম করে রামাদান মাসেই ঈদ করবেন – তা ফরজের বরখেলাফ।
Mohammad Mozammel Hoque: কী বলে যে আপনাকে ধন্যবাদ জানাবো…! উপরের তালিকায় ৬নং ভিডিওটি অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত এক লেবানীজ ইমামের। উনার বক্তব্যটাতে আপনার কথাগুলোর প্রতিফলন আছে।
Md Mahabub Ahsan: sir, you can read this link- https://returnofislam.blogspot.com/2011/03/ramadan-unity.html
Mohammad Mozammel Hoque: হ্যাঁ, পড়লাম। আপনি যদি উপরে প্রদত্ত কোন লিংক ব্রাউজ করতেন, খুশী হতাম।
Kazi Rafiqul Islam: vai Mahabub Ahsan আপনার লেখাটা আমিও পরলাম, আমার মনে হয় এখানে শরিয়া ও বিজ্ঞান দুটোকে একসাথে করে Fusion Fatwa দেওয়া হইসে। শরিয়ার বিধান আগে যেমন ছিল এখনও তেমনি আছে থাকবে কিন্তু বিজ্ঞান পরিবর্তনশীল। তাই ইসলামে Fusion কোন স্থান নাই। আমার মনে হচ্ছে একই দিনে রামজান ও ঈদ পালনকারি আসলে ঐক্যের নামে মুসলিম সমাজে অনৈক্য তৈরি করছে। বর্তমান সময়ই তার প্রমান।
Kazi Rafiqul Islam: সমগ্র পৃথিবীতে একই দিনে ঈদ পালনকারীরা এই একটি হাদীস নিয়ে ভাবলেই যথেষ্ট। কারণ সমগ্র পৃথিবীর আকাশ একসঙ্গে কখনও মেঘাচ্ছন্ন থাকেওনি আর কখনও থাকবেও না। তাহলে কি এই হাদীস অচল? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনিতেই এ কথা বলেছেন?
ইবনু উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান সম্পর্কে আলোচনা করলেন। তিনি এক হাতের উপর অন্য হাত মেরে (ইঙ্গিত করে) বললেন, মাস এ রকম, এ রকম এবং তৃতীয়বারে বুড়ো আঙ্গুলটি বন্ধ করে হাত মারলেন (অর্থাৎ মাস উনত্রিশ দিনে)। তিনি পুনরায় বললেন, তোমরা চাঁদ দেখে সিয়াম (রোজা/রোযা) পালন কর এবং চাঁদ দেখে ইফত্বার কর (অর্থাৎ ঈদ কর)। আর যদি আকাশ মেঘে ঢাকা থাকে তাহলে মাসের ত্রিশ দিন পূর্ণ কর।* (সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২৩৬৬, ইসলামীক সেন্টার ২৩৬৭)
* অর্থাৎ ২৯ শে শাবান ঝড় বৃষ্টির কারণে যদি চাঁদ না দেখা যায় তবে শা’বান মাস ত্রিশ পূর্ণ করে পরের দিন থেকে সওম পালন শুরু করবে। অনুরূপভাবে ২৯শে রমযানে যদি আকাশ মেঘলা থাকার ফলে চন্দ্র দৃষ্টিগোচর না হয় তবে রমযান ৩০ পূর্ণ করে পরের দিন ঈদুল ফিতর উদযাপন করবে।
Mjh Chatgami: ভাই হাদীসটিতে রসূলুল্লাহ সা: “তোমরা” বলে কাদেরকে সম্বোধন করেছেন? বলবেন? “তোমরা” শব্দের দ্বারা রসূলুল্লাহ সা: কি শুধুই ঐযুগের সাহাবা আজমাঈনদের বা শুধুমাত্র মদীনাবাসীকে বুঝিয়েছেন?
“””জৈবপ্রযুক্তির ধারণাতীত উন্নতির এ যুগে “Use of Technology in Shariah Applications” সিরিয়াসলি আলোচনার একটা বিষয়।”””
আমারও তাই মনে হয়!!
শুরুটা আপনার হাতেই হোক!!