বাস্তবতা, যাকে ইংরেজীতে fact বলে, তা আসলে কী? কোন বিষয়ের কতটুকু বর্ণনা দেয়া হলে বলা যাবে, সেটির পূর্ণ বাস্তবতা প্রতিফলিত হলো? মনে করেন, একটা রুমে তিনটা প্রাণী আছে, এটা সত্য। ওই রুমে তিনটা মানুষ আছে, এ কথাটাও সত্য। সেখানে একজন শিক্ষক ও দুজন শিক্ষার্থী আছে, কথাটা এভাবে বললেও তা সেখানে বিরাজমান বাস্তবতারই প্রতিনিধিত্ব করে। একজন শিক্ষক পুরুষ, একজন শিক্ষার্থী নারী ও একজন শিক্ষার্থী পুরুষ, কথাটা এভাবে বললেও, ওই রুমে কী আছে তা জানার ক্ষেত্রে তা বাস্তবসম্মত ও সত্য-বিবৃতি।
বুঝতেই পারছেন, আমি আসলে কী বলতে চাচ্ছি। এভাবে আপনি বাস্তবতার বর্ণনা দিতে গিয়ে কোনো সীমারেখা কি টানতে পারবেন, যা মেইনটেইন করে বর্ণনা দেয়া হলে আপনি বলতে পারবেন, হ্যাঁ, এবার ওই কক্ষের পূর্ণ ও সঠিক অর্থাৎ factual বর্ণনা দেয়া হলো? উদাহরণ হিসাবে উপরে বর্ণিত প্রত্যেকটা বিবৃতিই বাস্তবসম্মত তথা ফ্যক্টচুয়্যাল। সমস্যা হলো, উপরের এই বর্ণনাগুলো কিংবা ওই রুমের সম্ভাব্য অগুণিত আরো বিস্তারিত ও বিভিন্ন মাত্রার বর্ণনাগুলোর সবগুলোর ওজন বা মান সমান না। তারমানে এর কোন কোনোটি, অপরাপর বর্ণনাগুলোর তুলনায় অপূর্ণ কিংবা অধিকতর পূর্ণ।
ফ্যাক্ট সম্পর্কে অপূর্ণতার বা আপেক্ষিকতার কথা স্বীকার করা হলে ‘ফ্যাক্ট’ আর ফ্যাক্ট থাকে না। ফ্যাক্ট বা বাস্তবতাকে অখণ্ড বিবেচনা করা হয়। ফ্যাক্টকে কীভাবে বর্ণনা করা যাবে, বা কীভাবে বর্ণনা করলে ‘ফ্যাক্ট’, ফ্যাক্ট হয়ে উঠবে, তা নিয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট। অর্থাৎ বাস্তবতার বর্ণনা কেমন হলে বা কোন বর্ণনাটা কীভাবে দেয়া হলে তা সঠিক হয়, তা-ই বিবেচ্য। বর্ণনা মাত্রই যে বাস্তবতা নয়, তা বুঝে ও মেনে নিয়েই তো আমরা এই আলোচনা শুরু করেছি। যে বর্ণনাটা সত্য তাই বাস্তবের বর্ণনা বা বাস্তব বর্ণনা বা সংক্ষেপে বাস্তবতা।
প্রশ্ন যদি এমন হয়, এই রুমের মধ্যে কী কী আছে? তাহলে তা হবে close ended class। যদি বলা হয়, এই রুমের মধ্যে কী কী নাই? তাহলে তা হবে open ended class। জ্ঞান হলো যাচাইযোগ্যতা তথা ক্লোজ এনডেড ক্লাসের বিষয়। সত্যতা তথা বাস্তবতা হলো জ্ঞানের মূল অংশ। সত্যতার দোহাই দিয়েই তো জ্ঞানের দাবী করা হয়, আমরা জানি। ওপেন এনডেড ক্লাস পর্যায়ের প্রশ্ন বা বিষয় হলো সংশয়বাদী ব্যাপার-স্যাপার, স্ববিরোধী অজ্ঞেয়বাদ যার পরিণতি।
ফ্যাকট নিয়ে আমরা যে ‘ভেজালের’ মধ্যে পড়লাম তা, আমার মতে, ফ্যাক্টের দ্বিমুখী চরিত্রেরই লক্ষণ। একদিকে ফ্যাক্ট হলো, স্বয়ং সমগ্র বা end in itself। অন্যদিকে ফ্যাক্টকে সংজ্ঞায়িত বা বর্ণনা করার কোনো নির্ধারিত মাত্রা নাই। fact-এর অন্তর্গত প্রবণতা হলো বাস্তববাদ ঘেঁষা তথা বিষয়কেন্দ্রিক। অথচ, এর প্রায়োগিক বা বর্ণনাগত দিক হলো ভাববাদী তথা বিষয়ীনির্ভর।
ফ্যাক্ট-এর ফ্যাক্ট কী? কথাটা ঘুরিয়ে বললে, আসলেই ‘আসল’ কী? আসলেই ‘আসল’ বলে যদি কিছু না থাকে, তাহলে তেমন এক অস্তিত্বহীন আসলের সন্ধান আমরা করছি কেন? এই যে আমি এটি লিখছি, এটি কি আসল নয়? আমাদের কোনো কথা বা কাজ বা যে কোনো কিছু, এমনকি এই লেখাটাও যদি আসল না হয়ে নকল হয়, তাহলেও তো আসল, আসলে থেকে যায়। কেননা, যা কিছু মিথ্যা, তা আসলে মিথ্যা বলেই তো তা মিথ্যা। তাই না? তো, ‘সত্যিকারের মিথ্যার’ মধ্যেই, তার মানে, মিথ্যার মধ্যেও সত্যতা রয়ে গেছে। বরং সেটা মিথ্যা হওয়াটা পুরোটাই সত্য, এই দৃষ্টিতে তো সেটা ‘সত্যিকারের মিথ্যা’। সত্যিকারের মিথ্যা আবার মিথ্যা হয় কী করে?
বলতে পারেন, বিষয়ের দিক থেকে তা মিথ্যা। আর জানার দিক থেকে তা সত্য। অর্থাৎ এটি যে মিথ্যা, এই জানাটা সত্য।
তাহলে, একটা হলো বিষয়, আর একটা হলো বিষয় জানার পদ্ধতি। যদি তাই হয়, আমাদের আওতার মধ্যে কী আছে? বিষয়? নাকি, বিষয় জানার পদ্ধতি? আমরা যা কিছু অভিজ্ঞতাতে পাই, তা কি আমাদের বর্ণনায় সঠিকভাবে আসে? এটি কি সম্ভব? এমন কি এই ‘অসম্ভাব্যতাকে’ আমরা কীভাবে বুঝি? কীভাবে আমরা বুঝি যে, বিষয়কে বর্ণনার মধ্যে আনা অসম্ভব? “আমাদের পক্ষে কোনোকিছুর স্বরূপ সঠিকভাবে জানা তথা ফ্যাক্টকে জানা সম্ভব নয়।” – কেউ যদি অজ্ঞেয়বাদী দৃষ্টিকোণ হতে এমনটাও বলেন, তখনও তিনি অন্তত দুইটা ফ্যাক্টের দাবি করেন। তা হলো, কিছু একটা ফ্যাক্ট হিসাবে থাকা ও সেই ফ্যাক্টকে জানতে না পারার বাস্তবতা factuality। এরই সাথে ডেকার্টের আত্মসত্ত্বার স্বীকৃতির প্রসংগটাও ধরতে পারেন। ‘আমি নাই’ – এটি বলার জন্যও তো আমার থাকা লাগে।
কী সব উল্টাপাল্টা কথাবার্তা। তাই না? রোজা-রমজানের দিনে এমনিতেই অবস্থা কাহিল। তারমধ্যে এই সব তাত্ত্বিক বিদঘুঁটে সব ব্যাপার-স্যাপার…
স্যার,
সালাম!
1.ব্যক্তি-ঈশ্বরের আলোচনা হলো নবুয়তের যৌক্তিকতার আলোচনা। আপনার পোষ্টের অপেক্ষায় আছি!
ভালো থাকবেন!
ওহ, ভুলে গেছিলাম।
“I think, therefore I am”.
Cogito ergo sum-René Descartes