এই মাত্র ফ্যাকাল্টি হতে এসেছি। সকাল সাড়ে ১০টা হতে ছাত্রদের সাথে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হচ্ছে। চাকসু কেন্দ্রের কাছে ছাত্রদের মিছিলে পুলিশ বাধা দিলে ছাত্ররা চাকসু ভবনে ব্যাপক ভাংচুর করে। কয়েকজন পুলিশ কনস্টেবলকে ব্যাপকভাবে মারপিট করে পার্শ্ববর্তী লেকের খাদে ফেলে দেয়। ওখানে পুলিশ তখন অনেক কম ছিল। এরপর প্রশাসনিক ভবনের দিক থেকে আরো পুলিশ এসে একশন শুরু করে। এমনকি ছাত্রীদেরকেও পেটাতে থাকে। মুহুর্মুহু টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ ও ফাঁকা গুলি ছুঁড়তে থাকে। ছাত্ররাও নজিরবিহীনভাবে সকল ফ্যাকল্টি ও অফিসে মারাত্মক রকমের ভাংচুর চালায়। বুঝতে পারছি না তারা (বাহ্যত ‘সাধারণ’ ছাত্র) মারামারির জন্য এতো বানানো অর্থাৎ সাইজ করা লাঠি কোথায় পেল! ছাত্ররা এমনকি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের ভেতরে ঢুকে টেবুলেশন শিটে আগুন ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। মেরিন সায়েন্সের প্রফেসর কাদের স্যারের দুঃসাহসিক ভূমিকার কারণে সেটি রক্ষা পায়।
ঘটনা যখন শুরু হয় তখন আমি আর্টস ফ্যাকাল্টির তিন তলায় এমএর একটি কোর্সে ক্লাশ নিচ্ছিলাম। দেড়টার দিকে প্রশাসনিক দায়িত্বে নিয়োজিত উপস্থিত শিক্ষকদের অনুমতি নিয়ে আমার এক কাজিন স্টুডেন্ট ও দুজন সহকর্মীকে নিয়ে অনেকটা দৌড়াতে দৌড়াতে দক্ষিণ ক্যাম্পাসস্থ বাসায় এসে পৌঁছি। পথিমধ্যে ভিসি হিলের গোড়ায় ছাত্রদের এক সমাবেশের মধ্যে পড়ি। তারা আমার ইন্টারভিউ রেকর্ড করার শর্তে যেতে দেয়। বলেছি, এটি একটি অভূতপূর্ব ঘটনা। তারা চাচ্ছিল আমি তাদের আন্দোলনকে যৌক্তিক বলে মেনে নেই। আমি বার বার বলেছি, ইট্স আপ টু ইউ। অ্যাজ এ টিচার আই হ্যাভ নাথিং টু সে। বাট আই এম ডিপলি শকড টু সি হোয়াটএভার হেপেন্ড হিয়ার টুডে। ইট্স টোটালি আনপ্রিসিডেন্টেড।
অনেক পুলিশ, শিক্ষক ও স্টুডেন্ট আহত হয়েছে। জানি না স্পেসিফিক্যালি কে বা কারা এর জন্য মূলত দায়ী! তবে আন্দোলনকারীরা দৃশ্যত অত্যন্ত সংগঠিত ও স্পষ্টত বাম ঘরানার। আই ওয়াজ অনলি স্কেয়ারড ফর মাই ল্যাপটপ! ইতোমধ্যে সবগুলো হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার শুরু হলো সেশনজ্যাম, বহিস্কার ও আন্দোলনের পর্ব!
নির্বাচিত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
লেখাজোকা শামীম: মূল সমস্যাটা নিয়া তো কিছু বললেন না।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ছাত্রদের আন্দোলল বেতন কমানোর জন্য। এ জন্য তারা কোনো লিফলেট বের না করে, পোস্টারিং পর্যন্ত না করে ডাইরেক্ট একশনে চলে গেল! তাদের দাবির যৌক্তিকতা থাকলেও তাদের এ ধরনের নজিরবিহীন আক্রমণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে শিক্ষক মহলে গভীর সন্দেহ আছে। হয়তোবা গত কয়েকে মাস আগের ভিসিবিরোধী আন্দোলনের সাথে এটি সম্পর্কিত।
হুনার মন্দ: “আই ওয়াজ অনলি স্কেয়ারড ফর মাই ল্যাপটপ”!!
বোঝা গেল, এইগুলা নিয়া আপনের কিছু যায় আসে না!! কিছু মনে করবেন না, শিক্ষার্থীদের আপনি নিজেদের ভাবেন না, ফলে তাদের উপর কোনো অধিকারও আপনার থাকে না। আপনার অবস্থান অস্পষ্ট। শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক কি অযেৌক্তিক– যে কোনো একটা পক্ষ নিন। সুবিধাবাদী শিক্ষকদের আমি ঘৃণা করি। তারচেয়ে বিরোধীপক্ষ ভালো। ছাত্রদের সংগঠিত অবস্থান না থাকলে দালাল ভিসি আর তার সহমর্মী শিক্ষকরা তো ইচ্ছামতো শান্তিতে থাকতে পারে। তাই না? সংগঠিত অবস্থানই অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে।
যেখানে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ধ্বংসের মুখে, সেখানে শুধুমাত্র ব্যক্তিকেন্দ্রিক চিন্তা আসলেই শিক্ষক হিসেবে আপনার অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। ভাংচুরটা অস্বাভাবিক, কিন্তু সহিংস আচরণের জবাব মাঝে মাঝে সহিংসভাবেই দিতে হয়।
অবস্থান পরিষ্কার করুন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার শুরু হলো দমন-পীড়ন-নির্যাতন, লুটপাট আর শিক্ষক রাজনীতির ধ্বংসযজ্ঞ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার শুরু হলো সেশনজ্যাম, বহিস্কার ও আন্দোলনের পর্ব! যতদিন আগের অবস্থা থাকবে, আন্দোলনের পর্ব চলবেই।
ধন্যবাদ।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ব্লগে স্ব নামে ও প্রকৃত পরিচয়ে সত্যের সীমানার মধ্যে থেকে এর চেয়ে বেশি বলা সম্ভব নয়। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
বি: দ্র:– এক সময় আমিও যথেষ্ট লড়াকু, নামকরা ও আন্দোলনের জন্য একবার বহিষ্কারাদেশপ্রাপ্ত ছাত্র ছিলাম। এখন বুঝি, তখনকার আন্দোলন কতটুকু কী ছিল। ডিফারেন্ট ডাইমেনশনস কুড বি আন্ডারস্টুড অনলি ইন কোর্স অফ টাইম, লেইটার অন; অ্যাজ ইজ দি কেইস অফ মি।
স্বপ্ন হারা: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতো জানোয়ার পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি আর নেই। সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল মারামারির পিছনে থাকে শিক্ষকরা। তাদের স্বার্থের বলি ছাত্ররা। এরা ছাত্রদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আপনার মন্তব্যটি যদি আপনি বিশ্বাস করেন তাহলে ধারণা করি আপনি বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কেউ নন। কারণ, কোনো ছাত্র এ ধরনের অন্ত্যন্ত আপত্তিকর ঢালাও মন্তব্য করতে পারে না।
যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হয়ে থাকেন, তাহলে কেন ‘জানোয়ারদের’ কাছে পড়তে এসেছেন?
স্বপ্ন হারা: আগে জানতাম না, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানোয়ার। আর জানোয়ার হওয়ার জন্যই পড়ছি জানোয়ারদের কাছে।
স্বপ্ন হারা: ব্যাটা তুই সমাজকর্মী না দালাল?
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ব্লগে যারা লিখে, ধারণা করি, তারা শিক্ষিত শ্রেণীর লোক। নিক নেম দিয়ে লেখতে পারার সুবিধা নিয়ে গালাগালি করা নিতান্তই অশোভন। আমি শুধু ঘটনাটি রিপোর্ট করতে চেয়েছি। প্রশাসন বা ছাত্রদের বিরুদ্ধে বা পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য নয়।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের একাংশ সম্পর্কে আমার ধারণা ‘এমএ পড়া সবচেয়ে সোজা’ শিরোনামে লিখেছিলাম।
কোনো সভ্য ছাত্র এ ধরনের মন্তব্য করতে পারে না। আর আমি সমাজকর্মী কিনা, সেটি আমাকে যারা চেনেন তারা জানেন।
যা-ই করেন, একটা লেভেল বজায় রাখবেন। ছাত্রজীবনে আমরাও অনেক আন্দোলন করেছি।
আপনার জ্ঞাতার্থে বলছি, আমি কোনো প্রশাসনিক পদে নেই এবং বর্তমান প্রশাসনের সাথে আমার অবস্থান ভিন্ন।
সত্যচারী: নিরীহ ছাত্রদের চেয়ে ল্যাপটপকে বেশি আপন মনে হলো আপনার? এই মানসিকতা থাকলে জীবনেও ভালো টিচার হতে পারবেন না।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: কারণ, ছাত্রদের বাঁচানো বা সামলানো কোনোটিই আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না।
নিরীহ ছাত্রদের নিয়ে আমরা ক্লাশে ছিলাম। প্রথমেই যারা ক্লাসে না এসে লাঠি হাতে আন্দোলনে গেল, পুলিশদেরকে পিটিয়ে পানিতে ফেলে দিলো, তারা নিরীহ– এটি আমি বিশ্বাস করি নাই। এক পুলিশকে দেখলাম ক্রলিং করে উঠছে। উপরে উঠে কোনোমতে গড়িয়ে পড়ে গেল। সর্বাঙ্গ রক্তাক্ত। তখনো পুলিশ একশনে যায় নাই। গণহারে পুলিশ পিটানোর দৃশ্য আর্টস ফ্যাকাল্টির পশ্চিম পাশ হতে দেখেছি। পুলিশ স্টুডেন্টদেরকে অমানবিকভাবে পেটাচ্ছে– এটিও দেখেছি, পরে। শুরুতে পুলিশ বাধা দিয়েছে, পিটায় নাই। মনে হয়, পরিকল্পনা ছিলো পুলিশকে পিটিয়ে একশানে যেতে বাধ্য করা হবে।
আর আমাদের দেশের পুলিশ! নিজেরা আহত হলে তারা ডাকাতের চেয়েও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে, আর খুনী-মানসিকতা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এটিই ঘটেছে আজ চবি ফ্যাকাল্টিতে।
সত্যচারী: আপনার বক্তব্যের সাথে কিছুটা একমত হলেও পুরোটা মেনে নিতে পারছি না। বাংলাদেশের পুলিশ এতটা ভালো নয় যে মার খেয়েছে বলেই তারা ছাত্রদের মেরেছে। হতে পারে ছাত্ররা চান্স পেয়ে প্রথমেই এক ঘা বসিয়ে দিয়েছিলো। পরে সেটার শোধ তুলেছে প্রশাসনের পা চাটা কুত্তারা।
তবে আপনার সাথে একমত এদিক দিয়ে যে, নিরীহ ছাত্ররা কখনোই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাংচুরের মত কাজ করতে পারে না, সেখানে অবশ্যই কিছু ছাত্ররূপী অছাত্র তাদের সংগ দিয়েছে। সেক্ষেত্রে ওইসব পশুদের চেয়ে ল্যাপটপ অধিক নিরাপত্তার দাবিদার। আর ছাত্রদের আন্দোলনের ইস্যুটাও কিন্তু অমূলক নয়। আপনি যেহেতু প্রশাসনিক কোনো পদে নেই সেহেতু সবার আপনাকে গালিগালাজ করাটাও অহেতুক। আপনি নিরীহ ছাত্রদের মতই নিরীহ শিক্ষক। হাহাহাহ।
দেবজিত: এটা সরকারকে বেকায়দায় এবং যুদ্ধপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করার সুগভীর চক্রান্ত।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: হতে পারে! তবে দৃশ্যত ‘যুদ্ধাপরাধীদের’ পক্ষের কাউকে ফিল্ডে দেখা যায় নাই।
মেহেদী_বিএনসিসি: এটা কী হচ্ছে! বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র – হোক সে পাবলিক বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের – এদের আচরণ ও কার্যক্রমের সঙ্গে বর্তমানে আন্দোলনরত গার্মেন্টস শ্রমিকদের মধ্যে কি কোনো পার্থক্য দেখা যাচ্ছে? উভয়ই তাদের কর্মস্থল/শিক্ষাকেন্দ্র ভাঙ্গছে। কেউই চিন্তা করছে না– কার কতটুকু লাভ হচ্ছে। এরা মাসিক ১২৫ টাকা বৃদ্ধির প্রতিবাদে কোটি টাকার সম্পদ ভাঙ্গছে। আবার ভাঙ্গাভাঙ্গি শেষে গিয়ে আয়েশ করে ৬ টাকার বেনসন ধরিয়ে টানছে।
যারা পোস্টের আসল উদ্দেশ্য না বুঝেই উল্টাপাল্টা মন্তব্য শুরু করেছেন, তারা আগে পড়ুন, বুঝুন এবং মন্তব্য করুন। আর প্রথম দুটো করার সামর্থ না থাকলে চুপচাপ চলে যান। কেন অহেতুক অশালীন কথা বলে নিজের লেভেলটা প্রকাশ করতে যান?
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ধন্যবাদ।
বেতন বাড়িয়েছে একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট। একাডেমিক কাউন্সিলে প্রায় তিন শত প্রফেসর মেম্বার আর সিন্ডিকেটের প্রায় সবাই শিক্ষক। ভিসি বেতন বাড়াতে বা কমাতে পারেন না। শিক্ষকদের কাছে কোনো রকমের অ্যাপ্রোচ না করে এ ধরনের নজিরবিহীন আন্দোলন!
এ আন্দোলনের পলিটিক্যাল ইন্টেনশন স্পষ্ট।
আমি ব্যক্তিগতভাবে বর্তমান প্রশাসনের বিপক্ষের লোক। ভেবেছিলাম রমজানের বন্ধ বাতিল করায় বিভিন্ন কোর্স অনেক এগিয়ে নিতে পারব। সেটি হলো না– এটুকু দুঃখ।
স্বপ্ন হারা: মেহেদী বিএনসিসি, আপনি দালালি করার জন্য কত পাইছেন?
মেহেদী_বিএনসিসি: স্বপ্ন হারা, সোনা আমার! এমুন কতা জিগাইতে নাই। পুলাগো আয় ইনকাম নিয়া প্রশ্ন দণ্ডবিধির ৪৫৩ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। B-) প্রুবলেম হইলো আমি কোন টিচার বা চিটার না, আর লেখক ভদ্রলোককেও কম্মিনকালে দেখি নাই। কিন্তু তার লেখায় এমোন কিছু পাই নাই, যাতে তারে এম্নে নিচু হইতে হইবে।
আর ওভারঅল আমি যে কোনো বিক্ষোভ ভাংচুরের বিপক্ষে, হোক সে প্রাইভেট, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, কিংবা গার্মেন্টস শ্রমিক।
কী লাভ হলো? চবি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেল। সত্যি করে বলেন তো, কার লাভ হলো, আর কার ক্ষতি হলো?
িমবন: একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। অতঃপর জানোয়ার…। সমাজে সভ্য-অসভ্য সব ধরনের মানুষই আছে। শিক্ষক হিসেবে তিনি কী এমন বলেছেন যার জন্য এমন…। ধিক! ধিক!! এইসব ব্লগারদের।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: প্রতিটি সুশিক্ষিত ব্যক্তিই স্বশিক্ষিত।
অন্যায়ভাবে আমাকে হ্ত্যা করতে উদ্যত ব্যক্তিকেও ভদ্রতা বজায় রেখে কথা বলতে আমার আত্মমর্যাদাবোধ আমাকে বাধ্য করবে।
সুতরাং, গালাগালি করনেওয়ালাদের সম্পর্কে অধিকতর মন্তব্য নিস্প্রয়োজন।
বিডিওয়েভ: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতো জানোয়ার পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি আর নেই।
িমবন: স্যার, সব ব্লগারদের পক্ষ থেকে ক্ষমা প্রাথনা করছি, অধিকতর মন্তব্য নয় স্যার।
অন্যায়ভাবে আপনাকে হ্ত্যা করতে উদ্যত ব্যক্তিকেও ভদ্রতা বজায় রেখে কথা বলতে আপনার আত্মমর্যাদাবোধ যেমন আপনাকে বাধ্য করে, তেমনি একজন সম্মানিত ব্যক্তির সম্মানকে এভাবে মূল্যায়ন করলে অনেকেরই লাগতে পারে।
বাপ্পী: “আই ওয়াজ অনলি স্কেয়ারড ফর মাই ল্যাপটপ”!! তোর মত শিক্ষকের মুখে থুতু মারি।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: তাহলে কি ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে মিলে পুলিশের সাথে মারামারি করা ঠিক ছিলো? এই পুলিশকে এই আন্দোলনের অর্গানাইজাররা ক’দিন পরেই হয়তোবা প্রতিপক্ষকে পিটানোর জন্য বা হল দখলের এডভান্স ফোর্স হিসাবে ব্যবহার করবে (যেভাবে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতোমধ্যেই করেছে)।
আগেই বলেছি, ছাত্রদেরকে বাঁচানো বা সামলানো কোনোটাই আমার মতো নিতান্ত সাধারণ শুধুমাত্র শিক্ষকের পক্ষে একেবারে অসম্ভব ছিলো।
আচ্ছা বলুন তো, যেসব পুলিশকে (৩০/৪০ জন) শুধুমাত্র মিছিলে বাধা দেয়ার কারণে বড় বড় লাঠিধারী শত শত ছাত্ররা পিটিয়ে চারুকলার সামনের লেকে ফেলে দিলো, তারা কি পাকিস্তানী হানাদার? তারা কি নিরীহ চাকুরীজীবী আমাদের ভাই-চাচা নন?
আপনি যদি চবির ছাত্র হয়ে থাকেন তাহলে শুনুন, আমি এবং অনেক ছাত্র-ছাত্রী ঘটনার শুরুটা দেখেছি। পুলিশ নির্মমভাবে প্রতিশোধ নিয়েছে, যেটি আমাদের যে ধরনের পুলিশ সে মোতাবেক খুব আলাদা কোনো ঘটনা নয়।
এখন যেভাবে নিতান্ত নিরীহ ছাত্রদের হল থেকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে, এটি ভীষণ অন্যায় হচ্ছে। ফ্যাকাল্টিতে যা হয়েছে তার পাল্টাপাল্টি। অনেকে হয়েছেন ঘটনার শিকার। কর্তৃপক্ষের উচিত এ জন্য দুঃখ প্রকাশ করা।
একজন সাধারণ শিক্ষক, বলুন, কী করতে পারে?
সপ্নীল: ভদ্রভাবে কি কোনো কিছুর প্রতিবাদ করা যায় না? লেখক নিজেই লিখেছেন, উনি একজন শিক্ষক। উনি যা লিখেছেন তা সবার পছন্দ না হতেই পারে, তাই বলে গালাগালি করার তো কিছু নেই। ভদ্রভাবে আপনার মতামত দিন, যেটা আপনার ভালো লাগেনি তা বলুন।
সবার সহনশীলতা কাম্য।
গুরু তুমি মহান, তোমারে করি প্রনাম: এত বড় বড় বক্তারা এটা বলে না কেন, আন্দোলনের নামে দেশের সম্পদ ভাংচুর করার অধিকার কি তাদের আছে? এই হারামজাদা ছাত্রদের পিটাইয়া তক্তা বানানো দরকার। এই দেশের সম্পদ নষ্ট করার অধিকার তাদের কে দিয়েছে? দাবির নামে অপরাধ করার অধিকার কি তাদের আছে? এদের গুলি করে মেরে ফেলা উচিৎ।
স্বপ্ন হারা: বুঝলাম যে লেখক সত্যিকারই একজন স্যার মানুষ, ভালো মানুষ।
তবে স্যার, ৫ বছরের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার অভিজ্ঞাতায় দেখছি, আপনার মতো স্যার অনেক কম আছে। যদিও আমি চবিতে পড়ি না। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে যত মারামারি হয়েছে তার পিছনে শিক্ষকরা ১০০% ভাগ জড়িত। আর এবারের বেশিরভাগ ভিসি ভালো না। আসলে স্যার শিক্ষকদের এখন আর শিক্ষকতায় পাওয়া যায় না। তারা রাজনীতি আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ব্যস্ত থাকে। বেশিরভাগ শিক্ষকই ক্লাশ নেন না ঠিকমতো। আমার ডিপার্টমেন্টে এমন শিক্ষক আছেন যিনি দেশবরেণ্য নয় শুধু, বিশ্বের মাঝে পরিচিত; তিনি দুইটা ক্লাশ নিয়ে কোর্স শেষ করেন।
স্বপ্ন হারা: গরু তুমি মহান, আপনি মনে হয় বাংলাদেশের ইতিহাস জানেন না। আপনে রাজাকারদের দলে।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আমি সত্যের দলে, শিক্ষার পক্ষে।
বাবা-মা’র দশ সন্তানের মধ্যে আমি ৬ নম্বর। সবাই লেখাপড়া করেছে। সবাই চাকরি করে।
শিক্ষার ব্যয় বৃদ্ধির বিপদ আমি বুঝি। নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা সবাই বোঝে।
কিন্তু যেভাবে ট্রেন থামিয়ে, ক্লাশ হতে বের করে, বাস হতে নামিয়ে দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনে নেয়া হয়েছে; সংঘর্ষের শুরুতেই সবার হাতেই তৈরি করা লাঠি দেখা গেছে– তাতে মনে হয়েছে, এই আন্দোলনে পাওয়ার-পলিটিক্স ইনভলভড।
নাজমুল হক রাসেল: যারা ভাংচুরের বিপক্ষে ক্রমাগত বলে যাচ্ছেন, আপনাদের অনুভুতিকে শ্রদ্ধা। ভাংচুর কখনোই কাম্য নয়। কিন্তু আপনারা নিশ্চয়ই অন্ধ নন। গত কয়েকদিনে প্রায় সব সাধারণ ছাত্রছাত্রী তাদের উপরে অনৈতিকভাবে চাপিয়ে দেয়া বেতনের প্রতিবাদ করছিল। কোনো ভাংচুর হয়নি। আজ কেনো হলো সেটা একটু খোঁজ নেন। প্রথম পাতায় একটি পোস্ট আছে– চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: বেতন-ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলন এবং ষড়যন্ত্র।
এটা সাধারণ ছাত্রদের ভাংচুর নয়। তারপরেও বলি, বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করে কেউ কখনো দাবি আদায় করতে পেরেছে বলে শুনিনি।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: গতকালকেও শহরে ব্যাপক ভংচুর ও পুলিশের ব্যাপক একশন হয়েছে।
শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কোনো আন্দোলনই নয়, দাবি আদায় হওয়া তো পরের কথা। একমত। আমার বক্তব্য হলো, আন্দোলনের একটা ক্রমপর্যায় থাকে। দাবি আদায় না হলে এক পর্যায়ে যে কোনো আন্দোলন সহিংস হতে বাধ্য।
কিন্তু চবিতে ছাত্ররা এই ইস্যুতে কোনো লিফলেট বের করেছে, পোস্টারিং করেছে, ডিসকাশন মিটিং করেছে বলে শুনি নাই। বেতন বাড়িয়েছে একাডেমিক কাউন্সিল। সকল প্রফেসর এর সদস্য। তাই শিক্ষকদের কাছে গণসংযোগ ইত্যাদি করার পরেই কেবল সহিংসতার আশংকা থাকলেও ব্যাপক কর্মসূচি দেয়া যায়।
চবির এই আন্দোলন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, যদিও তাতে সাধারণ ছাত্রদের ব্যাপক অংশগ্রহণ রয়েছে।
বেতনের ইস্যু ছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে মিটিং-মিছিল বন্ধ রাখার কারণেও এ ধরনের নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
লেখাটির সামহোয়্যারইন ব্লগ লিংক