এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে কিছু একদা শিক্ষক।
একসময় ছিলেন তাঁরা ভালো শিক্ষক, হয়তোবা।
এখন মাস শেষে শুধু বেতন তোলেন।
আসা যাওয়া করেন। গল্প করেন।
সম্মানীর কল্যাণে
পরীক্ষার কাজে তারা মনোযোগী।
সামাজিক সম্পর্ক রক্ষা করে চলেন।
এখানে ওখানে টুঁটাফাঁটা
কিছু সুযোগ-সুবিধা পেলে,
বেঁচে বর্তে যান।
সবচেয়ে বেশি এনজয় করেন
নিজের বিপুল অনুর্বর সিনিয়রিটিকে।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে
কিছু গবেষণা-ব্যবসায়ী শিক্ষক।
প্রকাশনায় তারা ঝোলায় ভরেছেন প্রচুর পয়েন্ট।
চান্স পেলেই গল্প করেন নিজের, সুপারভাইজারের।
প্রজেক্ট, কনফারেন্স আর পার্ট-টাইম নিয়ে
তুমুল ব্যস্ত তারা।
ক্লাস নেন মাঝেমধ্যে
অথবা কোনোমতে দায়সারা গোছের।
নিজ কৃতিত্ব বর্ণনায় তারা সোৎসাহী সারাক্ষণ।
সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা,
কদাচিৎ মনে পড়ে তাদের।
ক্রেডেনশিয়াল বাড়ানোর চিন্তায় তারা
মশগুল ক্লান্তিহীন নিশিদিন।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে কিছু আমলা শিক্ষক।
উচ্চতর পদ-পদবী সব তাদের দখলে।
শিক্ষক না বলে
তাদের শিক্ষাকর্মকর্তা বলা-ই শ্রেয়।
ক্ষমতাপ্রিয় এসব শিক্ষকের দাপটের চোটে
সবাই অস্থির, অসহায়।
তাদের স্বজনপ্রীতি অপ্রতিরোধ্য,
যেন তা অতিন্যায্য।
গণতন্ত্রের সুবিধা নিয়ে তারা ক্ষমতায় আসেন।
কিন্তু, মন-মানসিকতায় তারা
এক একজন রাজা-বাদশা।
কথায় কথায় তারা নীতিকথার ফুলঝুড়ি ছড়ান।
ভিতরে যদিও তারা স্বৈরাচারী,
মনে হয় যেন তারা একেকজন গ্রাম্য জোতদার সর্দার।
এই দল ওই দল যেই দলই করেন না কেন,
দিনশেষে, তারা জনগণের ভাগ্য-বিধাতা।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে কিছু কামলা শিক্ষক।
গোবেচারা তারা।
নিজেদের ভাবেন ন্যায়নিষ্ঠ, নীতিবান হিসেবে।
ক্লাসে তারা আসা যাওয়া করেন নিয়মিত,
বগলদাবা করে নিয়ে আসেন ‘লাল নোট’,
বারান্দা-শো দেখানো কিছু টেক্সটবুক,
অথবা, একগাদা গৎবাঁধা বক্তব্য ঠাসা
পাওয়ার পয়েন্ট স্লাইড।
শিক্ষার উদ্দেশ্য, লক্ষ্য ও পূর্বাপর সম্পর্ক নিয়ে
বিন্দুমাত্র মাথাব্যাথা নাই তাদের।
এসব যেন বাড়তি ঝামেলা তাদের কাছে।
আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে তারা
যতটা সম্ভব সুবিধা হাতানোয় ব্যস্ত।
নিজ স্বার্থ বিবেচনাই তাদের সর্বোচ্চ নীতি।
সামাজিক দায়, সামগ্রিক নীতি, আদর্শ
কিংবা রাজনীতি,
তাদের কাছে এসব কিছু নিছক ফ্যাশন
আর বাড়তি সুবিধা পাওয়ার উপায়।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে কিছু শিক্ষক,
উপরের সব ক্যাটাগরিতেই যারা আনফিট।
আপাদমস্তক তারা শুধুই শিক্ষক।
ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে
তারা বন্ধুসুলভ অভিভাবক, আপনজন।
লেখাপড়ার ব্যাপারে তারা বিনয়ী, স্বতঃস্ফূর্ত ও সক্রিয়।
তাদের গবেষণা মুখ্যত জানার জন্য।
আলোকিত হওয়ার জন্য। আলোকিত করার জন্য।
প্রশাসনিক দায়িত্ব বাগানোর কাজে
তাদের অনাগ্রহ সুবিদিত।
তারা খেটে খাওয়া চাকুরীজীবী নন মোটেও।
শিক্ষকতা তাদের জীবিকা মাত্র নয়, জীবনের অংশ।
তাদের সততা অন্তর্গত, ন্যায়বোধ নির্মম,
ভালোবাসা অকৃত্রিম।
মানবিকতাই তাদের কাছে সবচেয়ে বড় ধর্ম।
চিন্তার স্বাধীনতায় তারা বিশ্বাসী,
তারা মুক্ত জ্ঞানের সন্ধানী।
আইন নয়, নৈতিকতাই তাদের চালিকাশক্তি।
তাই তারা শুধুই শিক্ষক।

চাই তেমনই একজন হতে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *