“আসসালামু আলাইকুম। আমাদের এখানে বাঙালি সংস্কৃতি ও ইসলামের মধ্যে একটি লড়াই দেখানো হয়। আমি একজনের সাথে আলোচনার সময় বলেছিলাম ধর্মের সাথে সংস্কৃতির বিরোধ অনেক জায়গায় হয়। যেমন– আমেরিকার খ্রিস্টানরা সমাকামিতা ও বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ককে প্রত্যাখ্যান করে, যা এখন পসচিমা সংস্কৃতির অংশ। পরে ভাবলাম আমরা এই জিনিসটা আলোচনায় আনতে ভুলে যাই, সংস্কৃতির সাথে অন্য ধর্মেরও সংঘাত হতে পারে। এ ব্যাপারে আপনার মতামত জানতে চাচ্ছিলাম।”
একজন পাঠকের এই প্রশ্নের উত্তরে আমি যা বলেছি:
সংস্কৃতি হলো এক জিনিস, আর ধর্ম হলো অন্য জিনিস। তাই এই দুইটার মধ্যে ক্ষেত্রবিশেষে সংঘাত ও সম্মিলন তথা ঐক্য ও বিরোধ দুইটাই ঘটতে পারে। সংস্কৃতি যেভাবে গড়ে ওঠে, ধর্ম সেভাবে গড়ে ওঠে না। অপরদিকে ধর্ম যেভাবে গড়ে ওঠে সংস্কৃতি সেভাবে গড়ে ওঠে না। এই দিক থেকে দেখলে মুসলিম সংস্কৃতি হিসাবে যা কিছু আছে সেটার সাথেও ক্ষেত্রবিশেষে ইসলামের বিরোধ রয়েছে বা হতে পারে।
দুইটা স্বতন্ত্র ডোমেইনের মধ্যে বিরোধ দেখিয়ে এর একটিকে খারিজ করে দেওয়া একটি ভুল চিন্তা। বরং একেকটা ডোমেইন একেক দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী মঙ্গলজনক ও সঠিক। এ ধরনের ইন্টার-ডোমেইন ইন্টার্যাকশনে বিশেষ কোনো ডোমেইন অপরাপরগুলোর উপরে প্রাধান্য লাভ করবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে কার কাছে কোন ডোমেইনটি ফান্ডামেন্টাল বা বেসিস হিসেবে বিবেচিত হবে, সেটি প্রত্যেকের নিজস্ব বিবেচনার বিষয়।
যারা মুসলমানিত্ব এবং বাঙালিত্বকে একটি অন্তহীন সংঘাতের মধ্যে দেখেন তাদের সাথে বাঙালিত্ব ও মুসলমানিত্বের মাঝে যারা কোনো সংঘাতই দেখে না তাদের একটা মিল রয়েছে। সেটি হচ্ছে, উভয় পক্ষই দিনশেষে অসহিষ্ণু ও প্রান্তিক দৃষ্টিভঙ্গির অনুসারী। একচোখা।
আমি সমন্বয়ের পক্ষে। সেজন্য সব সময় আমি ধর্ম ও সংস্কৃতি উভয় ডোমেইন সম্পর্কে ওভারঅল ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করি। মুসলমানিত্ব আমার ধর্মীয় পরিচয়। বাঙালিত্ব আমার নৃতাত্ত্বিক পরিচয়। বাংলাদেশী হওয়াটা আমার রাজনৈতিক পরিচয়। এর কোনোটিই কোনোটিকে নাকচ করে না।
মানবজীবনের সামগ্রিকতা বিবেচনায় প্রত্যেকেরই থাকে নৃতাত্ত্বিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক পরিচয়, থাকে অর্থনৈতিক শ্রেণীগত অবস্থান, স্বতন্ত্র ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি। এগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে চলাই হচ্ছে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি। মানবসভ্যতার মৌলিক বৈশিষ্ট্য ও অবদান হলো, সভ্য মানুষ মাত্রই অনেক ধরনের পরিচয়কে একইসাথে ধারণ করে। এগুলোর একটির জন্য অপরটিকে সম্পূর্ণভাবে খারিজ করে দেওয়া কিংবা এগুলোকে অন্তহীন দ্বান্দ্বিক সম্পর্কে উপস্থাপন করা হচ্ছে ভুল ও প্রান্তিক দৃষ্টিভঙ্গি।
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে মানুষের ভাষা, গোত্র, জাতি, বর্ণসহ নানা ধরনের পরিচয়গত বৈচিত্র্যকে পজিটিভলি অ্যাড্রেস করে কথা বলেছেন। এ সংক্রান্ত বিষয়ে আমার এই ভিডিওটি দেখতে পারেন।