তিনি বয়সে আমার মাত্র দশ মাসের বড়। অথচ জগৎবিখ্যাত! আর আমি? আফসোস লাগে! তাঁরা কত কিছু করলেন। আর আমরা? বসে বসে অনুর্বর এক ‘ইসলামী আন্দোলনের’ যথাসম্ভব সবকিছু সেক্রিফাইস করার ঈমানী জোশসম্পন্ন অনুগত ধ্বজাধারী হিসেবে জীবন কাটিয়েছি। যাদেরকে আমি অনুসরণ করি, এমন বরেণ্য ব্যক্তিবর্গের মধ্যে যারা জীবিত, তাঁদের দুয়েকজন বাদে বাদবাকি সবাই কমবেশি আমার কাছাকাছি বয়সের কিংবা খানিকটা ছোট।
অনেক কিছু হারিয়ে জীবনের এই পর্যায়ে এসে এখন মনে করি, আল্লাহ তায়ালা যাকে যা দিয়েছেন সেটি তার ক্লেইম করা উচিত। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘আমি সব নিয়ামতের হিসাব নিবো।’ অতএব, জীবন ও জগতের বৃহত্তর সত্য ও ন্যায়কে আপনি যে বুঝতে পেরেছেন, আপনার এই বুঝজ্ঞান, হকপন্থী হওয়া, এটি আপনার প্রতি আল্লাহর সবচেয়ে বড় নেয়ামত। নিজের এই সঠিক বুঝজ্ঞান নিয়ে জীবনের বাস্তব ময়দানে with full potentiality তীব্র গতিতে ছুটে চলার পরিবর্তে যারা ক্যারিয়ার গঠন আর ক্রেডেনশিয়াল বাড়ানোর উদগ্র প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত, তাদের জন্য আফসোস করা ছাড়া আর কী করার আছে? বিশেষ করে, ‘দ্বীন হচ্ছে জীবনোদ্দেশ্য’ স্লোগান দিয়ে বিশ্বাসীদেরকেও যখন দেখি দিনরাত দুনিয়াবী পাওয়া না-পাওয়ার হিসেবে মশগুল!
এমন দুনিয়াদার দ্বীনি ভাইবোনদের প্রপার রিয়েলাইজেশন হোক, এই প্রত্যাশায় বলছি, আমার কাছে ডা. জাকির নায়েক একজন সত্যিকারের নায়কোচিত ব্যক্তি। তিনি একটি নাম, একটি প্রতিষ্ঠান, বিশ্বব্যাপী দাওয়াতী আন্দোলনের কর্ণধার। একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব। সমাজ পরিবর্তনের কাজে তিনি নিজেই একটা ধারা। ডাক্তারির মতো একটি টেকনিক্যাল পেশা থেকে উঠে এসে একজন ব্যক্তি কী করতে পারেন, তিনি তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
কারো কোনো ভুল হতেই পারে, সেই ভুল ধরতেও কোনো সমস্যা নাই। সে হিসেবে জাকির নায়েকের যারা গঠনমূলক সমালোচনা করেন তাদের ব্যাপারে আমার আপত্তি নাই। খুব সম্ভবত আমি নিজেও তেমনই একজন। কিন্তু ইসলামী ব্যক্তিত্ব হয়েও, ইসলামপন্থী হয়েও যারা তাঁর প্রতি ব্যক্তি-আক্রমণ করেন, তাঁর অবদানকে হালকা করে দেখার চেষ্টা করেন, তাঁকে অবমূল্যায়ন করেন, তাঁর প্রসঙ্গ আসলে তাচ্ছিল্যসুলভ মনোভাব প্রদর্শন করেন, তাদেরকে আমি খুবই খারাপ জানি। এড়িয়ে চলি।
যাদের হাতে অনেক লোকেরা মুসলমান হয়েছে তাদের মানসম্মান নিয়ে টানাটানি করার ব্যাপারে আমি ভীষণ শংকা বোধ করি। এটি আমার নিতান্ত ব্যক্তিগত পজিশন।
এনিওয়ে, টিআরটি ওয়ার্ল্ডের কাছে দেয়া উনার এই সাক্ষাৎকারটি শুনে উনার প্রতি আমার শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং ঈর্ষা অনেক অনেক বেড়ে গেছে। তাই, এটি শেয়ার করছি। আশা করি আপনারও ভালো লাগবে।
প্রসঙ্গত একটা কথা বলে নেয়া ভালো মনে করছি।
আমার মতে, আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত হলো আমাদের চেয়ে যারা অগ্রগামী তাদের সাথে প্রতিনিয়ত নিজেকে তুলনা করা। যিনি আপনার অগ্রণী, যিনি আপনার চেয়ে আত্মগঠন ও সামাজিক অবদানে এগিয়ে আছেন, তাঁর অবস্থানকে খাটো না করে, তাঁকে হেয় প্রতিপন্ন না করে, বরং তাঁকে তাঁর উপযুক্ত অবস্থানে রেখে, তাঁর সাথে একটা প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব পোষণ করা হলো নিজেকে ঠিক রাখার সঠিক কর্মনীতি। এর মাধ্যমে সম্ভব হতে পারে নিজেকে কর্মতৎপর রাখা এবং নিজের মান ও সক্রিয়তার গুণগত উন্নয়ন ঘটানো।
এটি আপনার আদর্শ ও বিশ্বাসেরই দাবি। ইসলাম অনুসারী হিসেবে, আমরা মূলত সবাই-ই চেষ্টা করছি, দুনিয়াতে আসা সবচেয়ে ভালো মানুষ, মুহাম্মদের (সা) মতো হতে। যদিও আমরা জানি, আমরা উনার মতো হতে পারব না। তবুও তাঁকেই আমরা স্ট্যান্ডার্ড মনে করে জীবনের সব ব্যাপারে যতটা সম্ভব তাঁর মতো হবার চেষ্টা করছি। এক বাস্তব ইউটোপিয়ার পিছনে আমরা ছুটে চলেছি। আমার ‘সেল্ফ ব্র্যান্ডিং’-এর নীতিকে কেউ ভুল বুঝতে পারেন, সেজন্যই একটুকু বলা। নিজেকে মুসলমান দাবি করাই হলো সবচেয়ে বড় সেল্ফ-ব্র্যান্ডিং। নিজেকে মুসলমান দাবি করা ও ঈমানের কন্সিকোয়েন্স যদি আমরা সঠিকভাবে বুঝতে পারি।
ফেসবুক থেকে নির্বাচিত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Md Soeb: অনেক মন্তব্য পড়লাম। কাল্পনিকভাবে কারো সাথে যেন যুদ্ধের আভাস ফুটে উঠেছে। এটা রোগাক্রান্ত মানসিকতার পরিচয়। নিঃসন্দেহে তিনি একজন ভালো বক্তা। ইসলাম প্রচারক। তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব বিশারদ। তাই বলে সবজান্তা নন। তিনি যদি শরিয়া/ফিকাহ সম্পর্কে কথা না বলতেন, কোনো বিরোধ বাধতো না। যখন থেকে পিস টিভি চ্যানেলের প্রসার ঘটলো, তখন কিছু বিতর্কিত বক্তা তার আশেপাশে স্থান করে নিলো এবং তাদের সংস্পর্শে এসে তিনি কিছু বিতর্কিত কথা বলেন, যা তাঁর অবস্থানকে নাড়া দেয়। এটাই হলো বাস্তবতা। উদাহরণ, ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়া সম্পর্কে পজিটিভ মন্তব্য তাঁকে আকাশ থেকে মাটিতে নামিয়ে আনে। অনেক উচ্চশিক্ষিত এবং চিকিৎসক ব্যক্তিগণ এ বিষয়গুলো জানেন না। উনারা একজন চিকিৎসকের এত ধর্মজ্ঞান ও প্রচার সাফল্য দেখে বিগলিত। তাই তাঁর ছোটখাটো আকীদা বিষয়ক ভুলগুলো আপনাদের চোখে পড়ে না। কিন্তু যারা বুঝেন, তারা এসব ছোটখাটো (?), কিন্তু আকীদা বিষয়ক ভুলকে অনেক বড় বিচ্যুতি হিসেবে দেখেন। তাদের মতে, দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল অনেক ভালো।
Mohammad Mozammel Hoque: যিনি যে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নন, তার উচিত হলো সে বিষয়ে কোনো বিশেষজ্ঞসুলভ মন্তব্য না করা। তবে ব্যাপার হলো, যখন আপনি একটা আদর্শের জন্য প্রচারকার্য চালাবেন বা দাওয়াতী কাজ করবেন, তখন প্রশ্নকারীকে কিছু না কিছু উত্তর আপনাকে দিতেই হবে। ‘জানি না’ বলে কোনো প্রশ্নের উত্তরকে এড়িয়ে গেলে প্রশ্নকর্তাকে ওভারঅল কনভিন্স করা সম্ভব হয় না। সে জন্য যারা দাওয়াতের ময়দানে কাজ করেন তাদেরকে সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে কিছু না কিছু কথা বলতেই হয়।
এ ধরনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্তব্য বা উত্তরগুলো কতটুকু সীমার মধ্যে থাকছে, সেটা ওই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মন্তব্যের সাথে সাংঘর্ষিক হচ্ছে কিনা ইত্যাদি বিষয় খেয়াল রাখতে হয়। দৃশ্যত ডা. জাকির নায়েকের ক্ষেত্রে খানিকটা এমন হয়েছে।
আপনি যদি বাস্তব ময়দানে কাজ করেন, সে রকম অভিজ্ঞতা যদি আপনার থাকে, তাহলে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন যে এই ধরনের ভুল হতেই পারে। এই ধরনের একটা কথা নোমান আলী খান বলেছেন। তিনি বলেছেন, মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে যারা কথা বলে তাদের কথার মধ্যে অবশ্যই কিছু না কিছু ভুল হবে। ভুল হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ভুলটাকে দেখিয়ে দেয়ার পরও সেটার উপর টিকে থাকার জন্য জেদাজেদি করাই হচ্ছে খারাপ। জাকির নায়েককে এ সংক্রান্ত একটি প্রশ্ন এই ইন্টারভিউতে করা হয়েছে। সে প্রসঙ্গে তিনি যা বলেছেন সেটা আমার কাছে অত্যন্ত চমৎকার মনে হয়েছে। যদি ইন্টারভিউটা শুনে থাকেন তাহলে সেটা লক্ষ্য করে থাকবেন। না শুনলে শুনে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। ভালো থাকেন। আমাদের জন্য দোয়া করবেন।
Md Soeb: অনেকদিন পর একটি বুঝদার প্রতিত্তোর পেলাম। ধন্যবাদ আপনাকে। আসলেই তাই। অনেকে ভুল স্বীকার করতে চান না। শুধু তাই না, বরং গালাগালি করে।
আক্কাস আলী: জাকির নায়েককে আমি একেবারেই পছন্দ করি না। ধর্মীয় কারণে পছন্দ তো করিই না, তাছাড়া তার বক্তব্য দেবার পন্থা ও তার ব্যক্তিত্ব দুটোই চরম বিরক্তিকর লাগে আমার কাছে। I would say that like other Wahabis, the amount of damage Zakir Naik has done to Islam and Indian Muslims is shocking to say the least.
Mohammad Mozammel Hoque: আমাদের এক সহকর্মী ইন্ডিয়া থেকে এমএ এবং পিএইচডি করেছেন। সেই সুবাদে উনাকে দীর্ঘদিন ভারতে থাকতে হয়েছে। আমি উনাকে জাকির নায়েক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। উনি আমাকে কনফার্ম করেছেন, জাকির নায়েকের প্রোগ্রামে যেভাবে সাধারণ জনগণের উপস্থিতি দেখা যায়, অমুসলিমদেরকে দেখা যায়, সেটা সত্যিকারের। নিছক রেকর্ড করার জন্য সাজানো নয়।
তবে হ্যাঁ, উনার এই চিত্রবিচিত্র স্টুডিও সেট, এক ধরনের একঘেঁয়ে ও বিরক্তিকর উপস্থাপনা, কিছুটা জড়তাপূর্ণ উচ্চারণ, অত্যন্ত দ্রুত কথা বলা, সালাফী বায়াসনেস– এগুলো তো সমস্যা বটে। এই ধরনের সমস্যা হয়তো আমার মধ্যেও আছে। আপনি যদি পাবলিক স্পিকার হন আপনার মধ্যেও থাকতে পারে। তাই, সেগুলোকে খুব বড় করে দেখা উচিত নয়।
ডা. জাকির নায়েকের সাথে আমার পদ্ধতির অনেক বেমিল। আমি আলোচনা করি যুক্তি দিয়ে, থিমেটিক অ্যাপ্রোচে। আর উনি আলোচনা করেন রেফারেন্সিয়াল অ্যাপ্রোচে। এগুলো হলো ওনার সম্পর্কে আমার ক্রিটিসিজম। কিন্তু ওভারঅল আমি মনে করি তা-ই, যা আমার স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেছি। অর্থাৎ, আপনি যা-ই মনে করেন না কেন, he is a legend to me. after all, I like, love and support him.
একটু আগে মাওলানা মওদুদীর কিছু গ্রস মিসটেক নিয়ে কথা বলছিলাম একজনের সাথে। কিন্তু এরমানে এই নয় যে আমি মাওলানা মওদুদীকে অশ্রদ্ধা করি। বরং আমি উনার বিরাট ভক্ত।
আসল কথা হলো, কাউকে মেন্টর হিসেবে নেওয়ার মানে এই নয় যে তিনি ভুলের ঊর্ধ্বে এবং একজন অনুসারী হিসেবে উনার সবকিছুকে আমি সঠিক মনে করি।
যা হোক, ভালো থাকেন। মন্তব্য করার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
আক্কাস আলী: জাকির নায়েক সম্পর্কে যেহেতু আপনার ধারণা অনেক পজেটিভ, তাই তাকে নিয়ে বিস্তারিত কোনো সমালোচনা করছি না এখানে। শুধু এটুকুই বলতে চাই, Religious Clerics’দের আমি অপছন্দ করতে পারি, কিন্তু পাবলিকলি তাদের অসম্মান বা ব্যাঙ্গ করাকে কখনোই সমর্থন করি নাই।
তাছাড়া, আমি বাংলাদেশের ওয়াজ ব্যবসায় জড়িত মোল্লা-হুজুরদের যেসব কারণে অপছন্দ ও সমালোচনা করি, ঠিক একই কারণে জাকির নায়েককেও অপছন্দ ও সমালোচনা করি। আমার মতে, তাদের মধ্যে মৌলিক বিষয়গুলো যেমন: Dogmatism, Arrogance, Narcissism, Anti-reason, Ignorance. Intolerance, Insecurity ইত্যাদিতে কোনো পার্থক্য নাই।
Mohammad Mozammel Hoque: আমি যতটা শুদ্ধতাবাদী, ততটা সমন্বয়বাদী। এই নীতির আলোকে আমাকে বিবেচনা করলে ভুল বুঝাবুঝি হবে না।