কেউ আস্তিক, কেউ নাস্তিক, কেউ সংশয়বাদী, কেউ অজ্ঞেয়বাদী, বা কেউ নির্বিকারবাদী। জগতের অস্তিত্বের ব্যাপারে যে যেটাকেই সঠিক মনে করুক না কেন, প্রত্যেকে নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তার দিক থেকে তার সিদ্ধান্তের দায়-দায়িত্ব তারই। যদিও এর পিছনে জেনেটিক অথবা এনভায়রনমেন্টাল কোনো কারণ থাকতে পারে।
এ বিষয়টা বোঝার জন্য আমাদেরকে কারণের বহুত্ব বা multiplicity of causality’র বিষয়টাকে বুঝতে হবে। অর্থাৎ একটা বিষয়ের পিছনে বিভিন্ন দিক থেকে বিভিন্ন কারণ কাজ করতে পারে। অনেকগুলো কন্ট্রিবিউটিং ফ্যাক্টর কাজ করা সাপেক্ষে একটা কিছু, একটা কিছু হয়ে ওঠে। আলাদাভাবে এর প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও ব্যক্তির দিক থেকে নিজ চিন্তাভাবনা ও কাজকর্মের দায়-দায়িত্ব ব্যক্তিকেই বহন করতে হবে।
এক কথায়, ব্যক্তিকে ব্যক্তিস্বাধীনতার দায় বহন করতে হবে। এবং ব্যক্তি স্বাধীনতাকে স্বীকার না করা হচ্ছে নিজের সাথে নিজে বিরোধিতা করা। ‘আমি স্বাধীন নই’– এই কথাটা আমি যদি স্বাধীনভাবে বলে থাকি, তাহলে ‘আমি স্বাধীন নই’ কথাটা ঠিক নয়। That means, it is self-refuting to claim that “I am not free”.
সে জন্য কোনো কোনো দার্শনিক বলেছেন, আমরা আসলে ঈশ্বর বা প্রকৃতি কর্তৃক স্বাধীনতার দণ্ডে দণ্ডিত!
ফেসবুক থেকে নির্বাচিত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Mehedi Hasan: তবু প্রশ্ন– যদিও আমি স্বীকার করি যে, আমরা র্যাশনালিটি মেনে না নিয়ে আগেই একটা ডিসাইড নিয়ে থাকি যে স্রষ্টা নেই। তবু কেউ যদি নিরপেক্ষভাবে নিজের বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে বিচার-বিবেচনা করে স্রষ্টার অস্তিত্ব খুঁজে না পায়, তখন ইসলামের দৃষ্টিতে তার কী হবে?
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: নিরপেক্ষভাবে কেউ যদি বিবেক বুদ্ধি দিয়ে বিচার করে তাহলে সে স্রষ্টার অস্তিত্ব অবশ্যই খুঁজে পাবে। এর কারণ হচ্ছে, প্রত্যেক মানুষের মধ্যে বুদ্ধিবৃত্তির যে কাঠামো তা মূলত এক। তার মানে হলো, একই গঠনগত কাঠামোর মধ্য দিয়ে কেউ যদি নির্দিষ্ট কিছু তথ্য উপাত্তকে প্রসেস করে তাহলে তার প্রাপ্তি বা রেজাল্ট একই হওয়ার কথা। যে ক্ষেত্রে তা ভিন্ন রকম হচ্ছে সেটার কারণ হলো, পুরো প্রক্রিয়াটাকে ঠিকমতো ফলো না করা বা একজস্ট না করা।
যেমন, জগত সৃষ্টির মৌলিক নিয়মগুলো কোথা থেকে এসেছে? এই প্রশ্নের উত্তর আপাতত হতে পারে, এগুলো প্রাকৃতিক। এগুলো ছিল। এরপরও যদি প্রশ্ন করা হয়, এগুলো কেন এরকম? কোত্থেকে এসেছে? কেন আছে? না থাকলেই বা কী হতো? এর কোনো সদুত্তর প্রকৃতিবাদীদের কাছে নাই।
অর্থাৎ, প্রাকৃতিক বলতে আমরা কী বুঝাই, প্রকৃতির প্রকৃতি কী, প্রকৃতির উৎস ও নিয়ন্ত্রক হিসেবে কোনো ঊর্ধ্বতন সচেতন সত্তা আছে কিনা– এই ধরনের প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দেয়া প্রকৃতিবাদীদের পক্ষে সম্ভব হয় না। যেভাবে, ঈশ্বর কেন ঈশ্বর হয়েছেন, তাঁর স্বরূপ আসলে কী– এ ধরনের ঈশ্বরের স্বরূপগত কোনো প্রশ্নের উত্তর, ঈশ্বরবিশ্বাসীরা দিতে পারে না। পারার কথাও নয়।
তার মানে, কেউ যদি শেষ পর্যন্ত ব্যাপারটা কী তা জানতে চায় তাহলে তাকে প্রকৃতির উৎস বা কারণ হিসেবে ঈশ্বরের অস্তিত্ব ও বিশ্বাসকেই মেনে নিতে হবে। যা করতে নাস্তিক্যবাদীরা রাজি থাকে না। এর কারণ হলো, তাঁকে মেনে নিলে একটা নৈতিক দায়বোধ ও এক ধরনের টোটাল সাবমিশনের যৌক্তিকতা ও অপরিহার্যতা সামনে চলে আসে। অনৈতিকতায় অভ্যস্ত হওয়া বা ব্যক্তি চরিত্রের দিক থেকে উদ্ধত প্রকৃতির হওয়ার কারণে তারা তা করতে চায় না।
Mehedi Hasan: আমার এক বন্ধুকে দেখেছি, সে এসব নিয়ে অনেক ভেবেছে। কিন্তু রেজাল্ট হিসাবে কোনো কিছুই ঠিক করতে পারেনি। স্রষ্টা থাকতেও পারে, নাও থাকতে পারে– এমন কিছুই সে পেয়েছে।
ইসলামিক দৃষ্টিতে হেদায়েত আল্লাহর কাছ থেকে– আমি নিজেও তেমনটা বিশ্বাস করি। আপনি যেসব প্রসেসের কথা বলেছেন, সেটা খুঁজে পাওয়াও আসলে ভাগ্যের ব্যাপার।
এই যে আমার বন্ধু, আসলে চিন্তা করেছে, কিন্তু সঠিকটা বের করতে পারেনি। আপনিও বলেছেন, খুঁজে পেতে হলে একটা প্রসেসের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। সে হয়তো সেই প্রসেসের মধ্যে দিয়ে যেতে পারেনি। একটা সময় এসে সে এই বিষয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছে। এখন আমার বন্ধুর কী হবে? এই যে প্রসেসটা সে খুঁজে পায়নি, সেক্ষেত্রে সে ভাগ্য তথা আল্লাহর উপর দায় দিতে পারে কিনা?
আল্লাহ এক আয়াতে বলেছেন, তাদের অন্তরে সীলমোহর মেরে দিবে। আমার বন্ধু চেষ্টা করেছে। হয়তো প্রসেসের কাছেও যেতে পারেনি, আবার হেদায়াতটাও আল্লাহর পক্ষ থেকে। অসীম সত্তাকে আমাদের এই সাধারণ আইকিউ দিয়ে খুঁজে পাওয়াও সম্ভব নয়, যদি আল্লাহর রহমত না থাকে। এমতাবস্থায় আমার বন্ধুর বেলায় সমাধান কী?
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ইউটিউবের ‘যুক্তি ও জীবন’ চ্যানেলে এই বিষয়ে আমার কিছু ভিডিও বক্তব্য পাওয়া যাবে। ‘মুক্তবুদ্ধি চর্চা কেন্দ্র‘ – এই সাইটে গিয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কিছু লেখা পাওয়া যাবে। এগুলো এক্সপ্লোর করা যেতে পারে।
Mehedi Hasan: আপনার প্রায় সব ভিডিও দেখেছি। আলহামদুলিল্লাহ, বেশ বেনিফিটেডও হয়েছি। বিষয়টা মোটামুটি কিছু বুঝতে পারতেছি। তবু আরো ক্লিয়ার হতে চাচ্ছি। এই আর কি।