“আমরা কি পূর্ণাঙ্গ স্বাধীন? ইসলাম আমাদেরকে স্বাধীনতা দিয়েছে। অর্থাৎ আমি চাইলে আল্লাহকে মানবো, না হলে না মানবো। আমার স্বাধীনতা এটা। মেনে কাজ করলে জান্নাত। বিপরীতে জাহান্নাম। আমার কাছে মনে হয়, আমাকে যে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে সেই স্বাধীনতারও নিয়ন্ত্রক আছে। অর্থাৎ আল্লাহ আমাকে স্বাধীনতা দিয়েছেন, আমি চাইলে মদ পান করবো। এটা আমার ইচ্ছা। চাইলে মধু পান করবো। এটাও আমার ইচ্ছা।
তাহলে আমার ইচ্ছার চয়েস যে আমি করলাম, এই চয়েসটা আমার মধ্যে তৈরি করলো যে, সে তা তার নিজের ইচ্ছায় করলো। তাহলে এই চয়েস তৈরিটা যেহেতু আমি করি নাই, তাহলে আমি স্বাধীন কীভাবে?
আল্লাহ যদি আমাদের জান্নাত এবং জাহান্নাম দেখিয়ে চয়েস করতে বলে কোনটা নিবা তাহলে সকলেই জান্নাত নিত। কিন্তু জাহান্নামীও যেহেতু থাকবে, তাহলে খারাপ কাজ করা জাহান্নামীরা জাহান্নামে গেল যেসব কাজ করে সে কাজগুলা তার দ্বারা সংঘটিত হলো কার হুকুমে? যেখানে আমরা বলে থাকি আল্লাহর হুকুম ছাড়া গাছের পাতাও নড়ে না। এবং তিনি তো ভবিষ্যৎ জানেন।
তিনি জানেন, কে তাঁকে অস্বীকার করবে, কে করবে না। তাহলে তিনি যেহেতু অস্বীকারকারী এবং স্বীকারকারী উভয়কেই তৈরি করেছেন, তাহলে অস্বীকারকারীর মধ্যে অস্বীকার করার ইচ্ছাও তো তিনিই দিয়েছেন। তাহলে তিনি অস্বীকার এবং স্বীকারকারীর উভয়কেই তৈরি করে উভয়কেই বলছেন, তোমরা স্বাধীন। ব্যাপারটা বুজতেছি না। যেখানে আমার সৃষ্টিই হয়নি আমার ইচ্ছায়, তাহলে আমার পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা থাকে কি?
আরও গভীরভাবে বললে, একমাত্র আল্লাহর অস্তিত্ব ছাড়া সকল কিছুই ধ্বংস হবে। সকল কিছুর মধ্যে দৃশ্যমান বা অদৃশ্যমান সব। তাহলে ইচ্ছা, স্বাধীনতা, চয়েস, রাগ, অভিমান, ভালোবাসা সব কিছুই ধ্বংস হবে। শুধু এক আল্লাহর অস্তিত্ব বিরাজমান থাকবে। তাহলে আমার স্বাধীনতার সৃষ্টিকারীও আছেন এবং তা ধ্বংসকারীও আছেন। তাহলে সেটা কি পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা?
আমি আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস করি। উপরের প্রশ্নটা জাস্ট কিউরিওসিটি থেকে। আমি বিশ্বাস করি, ইসলামের কোনো কিছু কারণ বা যুক্তি ব্যাতিরেকে হয় না। আমি যেটা জানি সেটা মানি। যেটা জানি না সেটাও মানি। কারণ, আমার জানার কমতি থাকতে পারে।
সো, উপরের বিষয়টার অবশ্যই কারণ আছে। তাই এটা যেমন আছে তেমনটাই আমি মানি। জাস্ট ফর কিউরিওসিটি। আপনার সুস্থতা কামনা করছি। ধন্যবাদ।
আমার নাম: মো. রিয়াজুল ইসলাম। স্টাডি: সিএসই (১ম বর্ষ)। বর্তমান ঠিকানা: ঢাকা।”
এই প্রশ্নটির উত্তর হিসেবে ক’দিন আগে আমরা এই ভিডিওটা বানিয়ে ইউটিউবে ‘যুক্তি ও জীবন’ চ্যানেলে দিয়েছি। আগ্রহীদের জন্য এখানেও দিলাম।
মন্তব্য-প্রতিমন্ত্য
Muhammad Mahfujur Rahman Sifat: আচ্ছা, জান্নাতে গেলে কি আমি বাচ্চা নিতে পারব? যদি পারি তাহলে তো সেই বাচ্চার ভাগ্য দুনিয়াতে বড়লোকের ঘরে জন্মানো বাচ্চার চেয়েও অনেক ভালো। আর সেই বাচ্চার ভবিষ্যৎ কী?
যদি এই প্রশ্নটা ভিডিওতে আলোচনা করার মতো যোগ্য হয় তাহলে ভিডিওতে উত্তর দিয়েন। ধন্যবাদ।
Mohammad Mozammel Hoque: আমি যতটুকু জানি, বেহেশতে মানুষের বংশ বিস্তৃতি ঘটবে না।
বেহেশতের জীবন সম্পর্কে আমরা খুব বেশি সঠিক ধারণা করতে পারি না। শুধুমাত্র এতটুকু সামগ্রিক ধারণা করি, জীবনকে যতটা সুন্দরভাবে কল্পনা করা যায়, সেখানে তারচেয়েও বেশি সুন্দর জীবন আমরা যাপন করতে পারব।
Muhammad Mahfujur Rahman Sifat: আমারও তাই মনে হয়। দুনিয়াতে যেই কারণে বংশবিস্তার প্রয়োজন সেই কারণ যদি সেখানে না থাকে তাহলে বংশবিস্তারের দরকারই বা কি।
Kora Kagaj: আল্লাহ কি বলেছেন আমরা স্বাধীন?
Mohammad Mozammel Hoque: তত্ত্বগতভাবে (ontologically) যেমন দুইটা অসীম বা বৃহত্তম হতে পারে না, একাধিক ‘সর্বশেষ’ বা ‘সূচনাবিন্দু’ যেমন হতে পারে না; তেমন করে একইসাথে একাধিক স্বাধীন সত্তা হতে পারে না।
এই দৃষ্টিতে, সত্যিকারের স্বাধীন সত্তা কেবল একজনই হতে পারেন। তিনি আল্লাহ। এছাড়া ‘প্রকৃতি’ও স্বাধীন নয়। বরং, নিয়মের অধীন।
আমাদের তথা জাগতিক সত্তাসমূহের স্বাধীনতা হলো প্রদত্ত বা অর্জিত স্বাধীনতা। স্বভাবতই যা সীমিত।
এ সংক্রান্ত এ লেখাটি পড়তে পারেন: অধীনতাহীন স্বাধীনতা একটি অবাস্তব কল্পনা।