সামহোয়্যারের এক পোস্টে দেখলাম রেজাল্ট দিতে দেরি হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বেত মারার প্রসঙ্গে লেখা হয়েছে। বিষয়টি খুবই আপত্তিজনক। এটি মাথাব্যথার প্রতিকারে মাথা কেটে ফেলার মতো ক্ষেদোক্তির মতো শোনায়। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা (মূলত সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ) যে স্বাধীনতা ভোগ করেন তা অতি প্রয়োজনীয়, যদি আমরা কোয়ালিটি শিক্ষা চাই।

সেশনজটের পেছনে যতগুলো কারণ বলা হয় তা সবই ঠিক। শিক্ষকদের মর্যাদা অক্ষুন্ন রেখেই এর সমাধান করতে হবে। মিলিটারি কায়দায় শিক্ষকদের চালানোর চেষ্টা করলে মূল উদ্দেশ্যটাই মারা পড়বে। বলা বাহুল্য, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মূল দায়িত্ব হলো গবেষণা এবং পাঠদান। পরীক্ষা গ্রহণ, উত্তরপত্র মূল্যায়ন ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রাথমিক কাজ নয়। আমরা পয়সার জন্য এটি করি।

মাস্টার্সের ছাত্ররা অনার্স পর্যায়ের খাতা দেখতে পারে। এটি অসম্ভব নয়। আর মাস্টার্স লেভেলের ছাত্রদের মূল্যায়ন শ্রেণীভিত্তিক হতে পারে। পরীক্ষার হলে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখে ‘পাস’ করা (যা বর্তমানে প্রচলিত) খুব বাজে একটি পদ্ধতি। এক পৃষ্ঠা উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য আট আনাও পাওয়া যায় না।

আমরা যদি মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকবৃন্দ প্রায় বিনা পয়সায় যথাসময়ে খাতা দেখবেন, তাহলে এটি একটি অসম্ভব প্রত্যাশা।

সবচেয়ে ভালো ছাত্ররা শিক্ষক হয়, সাধারণত। অথচ, ক্লাশের ব্যাকবেঞ্চার বন্ধুটি যখন গাড়ি হাঁকায়, তখন মাস্টার মশাই রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকেন ‘শিক্ষক বাসের’ অপেক্ষায়।

শিক্ষকরা কি সমাজের বাহিরে? দুঃখিত, একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হিসাবে আমি নিজেকে দেবতা ভাবতে পারি না।

পাঠকদের মন্তব্য

বাংলাপ্রতিদিন: দেনাপাওনা দেখেই এ পেশায় এসেছেন! দামদর সরকারের সাথে করেন, ছাত্রদের সাথে কেনো? ছাত্র গাড়ি চড়লে আপনাদেরও চড়তে হবেই কেনো? বেতন, ভাতা, সম্মানে কোথায় কম? শিক্ষক হিসাবে এই মানসিকতা আমরা আশা করি না। ধন্যবাদ।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ওই যে মানসিকতা: ‘মাস্টাররা কম পায় না’! আসলে তাদেরকে মূল্যায়ন করা হয় না বলেই মনে করা হয় যে তারা ‘কোথায় কম’। আপনি ইউরোপের কথা বাদই দেন, আমাদের প্রতিবেশী ভারত-পাকিস্তানের সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ আমাদের চেয়ে কমপক্ষে তিনগুণ বেশি বেতন পান।

একজন প্রভাষক একজন রাজমিস্ত্রীর চেয়েও মাসে কম উপার্জন করে। বলুন এবার?

গরীবের কথা: সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে বেতন আসলেই অসম্ভব রকমের কম।

@ বাংলাপ্রতিদিন, আপনি কোনো সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি করেন নাকি?

@ মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, দ্বিতীয় প্যারার ৪র্থ ও ৫ম বাক্যদ্বয় কিছুটা কন্ট্রাডিক্টরি। তবে আপনার লেখার মূল থিমের সাথে একমত। আর্থিক সমস্যার কারণে মেধাবী ছাত্ররা আস্তে আস্তে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: হ্যাঁ। ধন্যবাদ।

পোস্টটির সামহোয়্যারইন লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *