১. কেন এই লেখা

২. প্রমাণ থাকা আর সত্য হওয়া এক কথা নয়

৩. প্রমাণের প্রামাণিকতা

৪. জ্ঞানের গোলকধাঁধাঁ হতে বের হওয়ার উপায়

৫. আসলেই কি আমরা সব সময়ে সত্য বা বাস্তবতা দিয়ে জ্ঞানযাত্রা করি?

৬. ফিজিকেল ট্রুথ বনাম মেটাফিজিকেল ট্রুথ

৭. অতীত আর ভবিষ্যতের মতো গরহাজির বিষয়ে ‘প্রমাণ’ হয় না, প্রমাণ দিতে হয় বা থাকতে পারে বর্তমানে উপস্থিত কোনো কিছুর

৮. ফাউন্ডেশনাল ট্রুথগুলোকে আমরা কোত্থেকে পাই? কীভাবে জানি বা যাচাই করি যে এগুলো ফাউন্ডেশনাল?

৯. সত্য কি এক স্তরের ব্যাপার?

১০. আমরা কী যাচাই করি, এপিয়ারেন্স? অর, রিয়েলিটি?

১১. প্রমাণের আইনী দৃষ্টিকোণ

১২. জ্ঞানমাত্রই নিশ্চিত কিন্তু সব জ্ঞানের ভিত্তি নিশ্চিত নয়

১৩. অনিশ্চয়তার সমস্যা এবং এরর ম্যানেজমেন্ট স্ট্র্যাটেজি

১৪. শেষ কথা


বেশ ক’বছর আগে আমি বার্ডেন অব প্রুফ নিয়ে একটা বক্তব্য দিয়েছিলাম, যেখানে কোনো কিছুকে সত্য বা মিথ্যা হিসেবে দাবি যে করবে তার ওপরই সেইটা সত্য বা মিথ্যা প্রমাণের দায়িত্ব বর্তায়, এমন কথা বলেছিলাম।

প্রসঙ্গটা ছিল আস্তিকতা বনাম নাস্তিকতা।

বলেছিলাম, বিরোধী পক্ষকে খণ্ডন করলেই, বা বিরোধীপক্ষ যা বলে তার মধ্যে কোনো জেনুইন ভুল বা দুর্বলতা দেখাতে পারলেই আমার পজিশন সঠিক প্রমাণিত হয়ে গেল, এমন মনে করা সঠিক নয়।

সচারচর দেখা যায়, আস্তিক পক্ষ তাদের সব যুক্তি সাজায় নাস্তিকতাকে খণ্ডন করার লক্ষ্যে। নাস্তিক্যবাদের যারা পক্ষে তাদের মধ্যেও এই ধরনের প্রবণতা দেখা যায়। তারা আস্তিক্যবাদের ত্রুটি বা অসংগতি দেখানোটাকেই নিজেদের পজিশনের ভ্যলিডিটি প্রমাণের জন্য যথেষ্ট বলে মনে করে। অথচ, অন্যের কথা ভুল, এর মানে এই নয় যে আমার কথাটাই সঠিক।

সমস্যা দু’দিকেই আছে।

খোদার অস্তিত্বের পক্ষে বললে স্বপক্ষে ‌‘প্রমাণ’ হাজির করা জরুরী। অন্যদিকে, ‌‘খোদা নাই’ – এটি যারা বলে বা মনে করে তাদের ওপরও ‌‘প্রমাণের দায়িত্ব’ এসে পড়ে যে খোদা আসলেই নাই। খোদা আছে এমন যারা দাবি করে, অর্থাৎ আস্তিক্যবাদের দাবির মধ্যে কোনো খুঁত বা অসঙ্গতি দেখানোর মাধ্যমে নাস্তিক্যবাদের পক্ষাবলম্বনকারীগণ বার্ডেন অব প্রুফের হতে মুক্ত হয়ে যায় না। সেক্ষেত্রে খোদা আছে বলে যারা দাবি করছে তারা যেসব কারণে খোদা আছে বলে মনে করে, সেই কারণগুলোর সন্তোষজনক বিকল্প ব্যাখ্যা দেয়ার দায়িত্ব তাদের ওপর অর্থাৎ খোদার অস্তিত্বে অবিশ্বাসীদের ওপর এসে পড়ে।

কী কারণে লোকেরা খোদার অস্তিত্বে বিশ্বাস করে?

এর সহজ উত্তর হচ্ছে, জগত ও জীবনের বিদ্যমান বাস্তবতার একটা সন্তোষজনক ব্যাখ্যা হিসেবে মানব গোষ্ঠীর বৃহদাংশ খোদার অস্তিত্বে বিশ্বাস করে। আমাদের অস্তিত্ব সম্পর্কিত প্রশ্নগুলোর (existentialist question) একটা কমন আনসার হচ্ছে ‌‘গড ডাজ একজিস্টস’। খোদার অস্তিত্বে বিশ্বাস স্থাপনের এই গোড়ার কারণটির একটা অধিকতর সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দেয়ার দায়িত্ব না-খোদাবাদীদের ওপর বর্তায়।

তারমানে হলো প্রমাণের বোঝা হতে আমরা কেউই মুক্ত নই। সুপারফিশিয়াল লেবেলে কোনো কিছুকে টেকনিক্যালি রিফিউট করলে সেই ক্লেইমটার গ্রাউন্ডটাও অটোমেটিকেলি রিফিউটেড হয়ে পড়ে, এমন মনে করাটা ভুল।

‌২. প্রমাণ থাকা আর সত্য হওয়া এক কথা নয়-

এ পর্যায়ে এসে আমাদেরকে এভিডেন্স এবং ট্রুথের মধ্যকার পার্থক্য বুঝতে হবে।

কোনো কিছু হতে পারে প্রমাণিত (evident অর্থে) কিন্তু সত্য নয়। আবার হতে পারে কোনো কিছু সত্য কিন্তু অ-প্রমাণিত। এভিডেন্স আর ট্রুথের পার্থক্য বোঝানোর জন্য আমি সাধারণত মার্ডার কেইস এর কথা বলে থাকি।

হতে পারে কেউ খুন হয়েছে কিন্তু কোনো হত্যাকারীকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। হত্যাকাণ্ডের কোনো প্রমাণ না থাকার মানে এই নয় যে মৃত ব্যক্তিটির স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটেছে অথবা সে আত্মহত্যা করেছে। গল্পটাকে এবার আমরা অন্যদিক থেকে দেখি।

হতে পারে, লোকটি বুকে ছুরিকাঘাতে মারা গেছে। ঠিক ওই রক্তাক্ত ছুরি হাতে তার পাশ হতে এক ব্যক্তিকে আটক করা হলো। এতে কি বোঝা গেল, আটককৃত ব্যক্তি হত্যাকারী? হতেও তো পারে, সে এসে দেখেছে একটা লোক বুকে ছুরিবিদ্ধ হয়ে আছে। সে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বাঁচানোর জন্য যেই মাত্র ছুরিটা টেনে বের করেছে অমনি লোকেরা তাকে দেখে ফেলেছে। এরপর আটক করেছে।

এইভাবে এই গল্পের অনেক টুইস্ট হতে পারে। যার সারকথা হলো, সামঞ্জস্যশীল বর্ণনা মানেই সত্যতার বিবৃতি নয়। some narrative could be consistent but isolated from the fact or truth.

হতে পারে, কেউ যা বলতে চেয়েছে তা সঠিক, কিন্তু যেভাবে বা যা বলেছে তা সঠিক নয়। সত্যতাকে সদাসর্বদা আইনী দৃষ্টিতে দেখার ঘোরতর বিপদ আছে, সে সম্পর্কে বিজ্ঞজনমাত্রই ওয়াকিবহাল।

‘প্রমাণ’ নিয়ে এখানে প্রসঙ্গত একটা কথা বলে রাখা ভালো।

৩. প্রমাণের প্রামাণিকতা-

প্রমাণের প্রামাণিকতা (ontology of proof) কী? এই প্রামাণিকতা কোথায় থাকে? কীভাবে এটাকে পাওয়া যায়?

প্রমাণ থাকে বিজ্ঞানে এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবনে। সাধারণ জ্ঞানে। দর্শনে তেমন ধরনের কোনো ‌‘প্রমাণ’ (demonstrative proof) এর কারবার নাই। এখানে সব চলে যুক্তি বা আর্গুমেন্টের ভিত্তিতে। (নিজের কাছে) একসেপ্টেড আর্গুমেন্টকে আমরা সাধারণত ‌‘প্রমাণ’ হিসেবে দাবি করি।

প্রমাণ কনক্লুসিভ। এর বিপরীতে, আর্গুমেন্টস আর অলওয়েজ ওপেন এন্ড কাউন্টার ব্যালেন্সড।

যে যা দাবি করবে, তা প্রমাণের দায়িত্ব তারই, আমার তখনকার ওই কথাটার খানিকটা ব্যাখ্যার জন্য এই লেখা।

সত্যের প্রমাণ দিতে হয় না। সত্যটা নিজগুণে প্রতিভাত হয়। তাই সত্যকে গ্রহণ করে নিতে হয়। অন্যদেরকে দেখিয়ে দিতে হয়। সত্যের অনুপস্থিতিকে আমরা মিথ্যা হিসেবে সাব্যস্ত করি। সত্য হলো আলোর মতো স্বতঃউদ্ভাসিত। আলোর অনুপস্থিতিকে আমরা আঁধার বলি। আমরা আলো দেখি। আলোর বিপরীত পরিস্থিতি হিসেবে অন্ধকার আমাদের যৌক্তিক অনুমান বা লজিকেল ইনফারেন্স। যখন আমরা অন্ধকার দেখছি বলে মনে করি তখন আসলে আমরা আলো দেখতে না পাওয়াকেই বুঝিয়ে থাকি।

অভিজ্ঞতায় আমরা যা কিছু পাই সেগুলোর ontological support হিসেবে আমরা সেগুলোর বিপরীত অস্তিত্বকে অনুমান করি। আমাদের অভিজ্ঞতাগুলো খণ্ড খণ্ড বা ডিসক্রিট। অনুমান বা inference এর মাধ্যমে আমরা অভিজ্ঞতার ডিসকন্টিনিউটিকে পূরণ করি। উল্লেখ্য, ইনফারেন্স মানে লজিকেল ইনফারেন্স। বাস্তব জগতে আলাদাভাবে লজিক থাকে না। কিন্তু লজিক দিয়েই আমরা যা কিছু করার করি। যেমন বস্তুজগতে কোনো সংখ্যা বা পরিমাপ থাকে না। বরং সব বস্তু সংখ্যা ও পরিমাপের ভিত্তিতে বস্তু হয়ে উঠে। নিয়মানুসারে জগত চলে। নিয়মকে দেখা যায় না। নিয়মকে আমরা ঘটনাপ্রবাহ থেকে অনুমান করি।

সত্য-মিথ্যার বা আলো-আঁধারের এই ব্যাপারগুলো আপাতদৃষ্টিতে গোলকধাঁধাঁর মতো।

আপাতদৃষ্টিতে সার্কুলার।

৪. জ্ঞানের গোলকধাঁধাঁ হতে বের হওয়ার উপায় –

এই epistemic circularity হতে বের হওয়ার সঠিক পদ্ধতি হলো কোনো নিশ্চিত সত্যতা দিয়ে জ্ঞানের পথে যাত্রা করা। জ্ঞানের এই যাত্রায় অতীব সত্যনিষ্ঠ হওয়ার কোনো বিকল্প নাই।

একটা খুব সহজ উদাহরণ। মাইনাস ফাইভ আমরা কোত্থেকে পাই? নাই হয়ে তো ৫টা জিনিস থাকে না। বরং ৫টা জিনিস থাকার কথা ছিল বা থাকতে পারতো অথচ নাই, এইটা থেকে আমরা মাইনাস ফাইভকে অনুমান (এশিউম) করি।

সত্য সন্ধানের পদ্ধতি হিসেবে কেউ কেউ স্কেপটিক মেথডের কথা বলে। এই পদ্ধতি অনুসারে কী কী মিথ্যা আছে তা সব খুঁজে বের করে বাদ দেয়ার পরে আমরা সত্যগুলোকে পেয়ে যাবো, সত্যকে পাওয়ার পদ্ধতি হিসেবে এটি ভুল। বরং প্রাপ্ত সত্যকে গ্রহণ করে নেয়ার পাশাপাশি অধিকতর (সলিড) সত্যের ব্যাপারে ওপেন থাকাটাই হলো সত্যের ওপর টিকে থাকার সঠিক পদ্ধতি।

আগ্রহীদের জন্য এখানে শুধু এটুকু বলছি, স্কেপটিক মেথড একটা ওপেন-য়েনডেড ক্লাসকে ইনভল্ভ করে। তাই এটি ভুল। সত্য ও জ্ঞানকে পাওয়ার সঠিক পদ্ধতি হলো ক্লোজ-য়েনডেড ক্লাসের ভিতরে থাকা।

আগেই বলেছি, সত্য সেলফ-এভিডেন্ট বা স্বতঃপ্রমাণিত। সত্যকে আমরা নির্মাণ করি না, বরং আবিষ্কার করি। তাই সত্যকে দেখিয়ে দিতে হয়। মিথ্যা হচ্ছে সত্যের নেগেটিভ অন্টলজিকেল সাপোর্ট। বৃহত্তর অর্থে বিপরীত পক্ষদ্বয় পরষ্পর পরষ্পরের তাত্ত্বিক ভিত্তি বা অনটলজিকেল সাপোর্ট হিসেবে কাজ করে। ফর একজাম্পল, মিথ্যার সর্বাংশ অনুপস্থিতিতে সত্যের সত্যতা অর্থহীন হয়ে পড়ে।

সত্যের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, সত্যকে হতে হয় সর্বাংশ-সত্য। এর বিপরীতে মিথ্যা হচ্ছে অপূর্ণাঙ্গ সত্য, যা সত্যের সাথে মিথ্যার মিশ্রণ হিসেবে এপিয়ার করে।

যুক্তিবিদ্যায় সত্যসারণী বলে একটা বিষয় পড়ানো হয়। এর সারকথা হলো, কোনো লাইনে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যদি একটিও মিথ্যা প্রপজিশন থাকে তাহলে সেই লাইন অব ট্রুথ ক্লেইমটা বাতিল বলে অর্থাৎ মিথ্যা হিসেবে গণ্য হবে।

৫. আসলেই কি আমরা সব সময়ে সত্য বা বাস্তবতা দিয়ে জ্ঞানযাত্রা করি?

ফিলসফির সবকিছু যেহেতু ইনকনক্লুসিভ বা প্যারাডক্সিকেল, তাই আমি এতক্ষণ যা বললাম, সেগুলোরও কিছু বিপরীত কথা আছে।

যেমন, আমরা সমতলের বা সরল রেখার ‘অভিজ্ঞতা’ লাভ করি। এ ধরনের অনেক (বৈজ্ঞানিকভাবে) ‘ভুল’ ধারণা তথা ফলস বাট ফিলস এজ রিয়েল অভিজ্ঞতার কারণে আমাদের জীবনযাপন হতে শুরু করে জ্ঞানচর্চা, উৎকর্ষতা লাভ, সভ্য হওয়া, ইত্যাদি সম্ভবপর হয়েছে।

এই ভুলগুলো কি আসলেই ভুল? নাকি, যে পদ্ধতিতে সেগুলোকে আমরা পেয়েছি, তা ভুল?

Multiple realizability of truth বলে একটা কথা আছে। আপনারা জানেন। দুয়ে দুয়ে চার হতে পারে আবার তিনে একেও চার হতে পারে। হতে পারে, কোনো কিছু সঠিক অথচ তা আমরা পেয়েছি ‌‘ভুল’ পথে। হতে পারে, সত্যকে পাওয়ার বিকল্প পথ আছে। অথবা, সত্যতার কোয়ালিটেটিভ ডিফারেন্স বা এক্সিলেন্সি আছে।

সত্যতা নামক এক সোনার হরিণের পিছনে আমরা জীবনভর ছুটে বেড়াই। শেষ পর্যন্ত তা অধরা থেকে যায়। অথচ, এইটার দোহাই দিয়েই যত মত, পথ, তত্ত্ব বা মতবাদ গড়ে উঠেছে।

সবাই সত্যের পক্ষে। প্রত্যেকে যার যার মতো করে সত্যকে নির্মাণ করে।

এখানেও প্যারাডক্স।

খানিকটা উপরে বলেছি, সত্য নির্মাণ করা যায় না। বৃহত্তর অর্থে, কোনো জ্ঞানকেই নির্মাণ করা যায় না। সত্য বা জ্ঞানকে আমরা কেবল লাভ বা অর্জন করি, যদি সঠিক পথে তা পাওয়ার চেষ্টা করি। অবশ্য আমাদের ব্যক্তিসত্তা তথা সাবজেক্টিভিটির ইনার ইনটেনশনালিটির ভিন্নতার কারণে আমরা একই সত্যকে অন্যরকমভাবে দেখি বা ভিন্নভাবে অর্জন করি।

৬. ফিজিকেল ট্রুথ বনাম মেটাফিজিকেল ট্রুথ-

সত্যতা হচ্ছে বাস্তবতা। তো, বাস্তবতা কী? বস্তুমাত্রই কোনো না কোনো ধরনের বাস্তবতা। কিন্তু, বাস্তবতা কি বস্তুগত অস্তিত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ?

এ পর্যায়ে আপনাকে বুঝতে হবে, ফিজিকেল ট্রুথকে আমরা এক্সপেরিয়েন্স করি, মেটাফিজিকেল ট্রুথগুলোকে আমরা এশিউম করি। আবার, মেটাফিজিকেল ট্রুথস-এর লেন্স দিয়ে দেখার কারণে আমরা ফিজিকেল ট্রুথগুলোকে ‘ফিজিকেল ট্রুথ’ হিসেবে দেখে থাকি। নচেৎ, ফিজিকেল ট্রুথগুলোকে আমরা যেভাবে পাই সেভাবেই কেন পাই? অন্যভাবে পেতে অসুবিধা কোথায়?

এখানে আসে পটেনশিয়ালিটি, ক্যাটাগরি বা নেসেসিটির প্রশ্ন। এই যে পটেনশিয়ালিটি, ক্যাটাগরি বা নেসেসিটির কথা বললাম, এগুলো দ্বারা বস্তুজগত পরিচালিত হয়, কিন্তু এগুলো স্বয়ং বস্তু নয়। এগুলো আমাদের জ্ঞানগত কাঠামো বা পদ্ধতি।

তথাকথিত ‌প্রমাণের পিছনে প্রামাণিকতা কী, তা বোঝানোর জন্য আমি এই কথাগুলো বললাম।

সোজা কথায়, বস্তুর জ্ঞানটা কিন্তু ইটসেলফ বস্তু নয়। কলম বস্তু, কিন্তু কলমের ধারণা বা জ্ঞানটা বস্তু নয়।

‌৭. অতীত আর ভবিষ্যতের মতো গরহাজির বিষয়ে ‘প্রমাণ’ হয় না, প্রমাণ দিতে হয় বা থাকতে পারে বর্তমানে উপস্থিত কোনো কিছুর

বর্তমানের বিষয়গুলোকে আমরা আমাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় লাভ করতে পারি। তাই সেগুলোর demonstrative proof দেয়া যেভাবে সম্ভব হয় বা হতে পারে, অতীতের বিষয়গুলো সেরকম নয়। কিছু মুদ্রা বা এ জাতীয় কোনো নিদর্শন, সেই সময়কার বা কাছাকাছি সময়ের কারো বর্ণনা, এ ধরনের নিদর্শনকে আমরা, কথার কথা, একজন নৃপতির রাজত্বের ‘গ্রহণযোগ্য’ বর্ণনা বা সেই রাজার সম্বন্ধে নিশ্চিত প্রমাণ(?) হিসেবে গ্রহণ করি।

এ ধরনের গরহাজির কোনো বিষয়ে ইনডিকেটিভ এভিডেন্সের ভিত্তিতে কোনো দাবির সত্য-মিথ্যা আমরা নির্ণয় করি। এবং এটি স্বাভাবিক।

একই ধরনের প্রামাণিকতার সীমাবদ্ধতা কাজ করে ভবিষ্যতের কোনো জ্ঞান সম্পর্কে। অতীতের জ্ঞান বর্তমানের জ্ঞানের তুলনায় প্রামাণিকতার দিক থেকে দুর্বল। ভবিষ্যতের জ্ঞান অতীতের জ্ঞানের চেয়েও প্রামাণিকতার দিক থেকে দুর্বল। অতীতের তো নিদর্শন পাওয়া সম্ভব, যা অতীত সম্পর্কে ‘প্রমাণের’ ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। ভবিষ্যত মানে অনাগত। তাই ভবিষ্যতের কোনো বিষয়ে কোনো ধরনের demonstrative or archeological ‘proof’ পাওয়া বাইডেফিনেশন, অসম্ভব।

ভবিষ্যত সম্পর্কে জানার একমাত্র উপায় হলো ন্যায়-অনুমান, যুক্তি ও বুদ্ধি। আমাদের ভেরি রেশনালিটি আমাদেরকে বলে দেয়, ভবিষ্যত কেমন হতে পারে।

তাই, তখন প্রমাণের দায়িত্ব কার ওপর কতটুকু কী হবে, এসব নিয়ে যখন আমরা আলোচনা বা তর্কবিতর্ক করি, তখন সংশ্লিষ্ট বিষয় বা ইস্যুটি কোন ক্যাটাগরি বা প্রকৃতির সে বিষয় আমাদের মধ্যে স্বচ্ছতা ও মতৈক্য থাকা জরুরী।

৮. ফাউন্ডেশনাল ট্রুথগুলোকে আমরা কোত্থেকে পাই? কীভাবে জানি বা যাচাই করি যে এগুলো ফাউন্ডেশনাল?

আমরা যখন ‘প্রমাণ’ হাজির করার দাবি করি, তখন আমরা ধরে নেই, আমাদের মধ্যে একটা স্বীকৃত মানদণ্ড বা পদ্ধতি আছে, কিছু পূর্ব-প্রমাণিত বা স্বতঃপ্রমাণিত সত্য আছে যার ভিত্তিতে আমরা সত্যতার কোনো দাবিকে পরখ করছি বা করার দাবি করছি। burden of proof assumes indivisibility, objectivity and universality of some basic truths (at least among the disputants).

প্রারম্ভিক সেই সত্যগুলোকে আমরা কোথায় পাই?

এরমানে সব সত্যের প্রমাণ দিতে হয় না। ‌অথবা, অ-প্রমাণিত কিছু ‘সত্যের’ ভিত্তিতে আমরা সত্যের সব প্রমাণ দাবি করি বা হাজির করি। ব্যাপারটা কেমন স্ববিরোধী হয়ে গেল না?

আপনি জানেন কিনা জানি না, আমাদের সব জানার ভিত্তি হচ্ছে কোনো না কোনো ধরনের স্ববিরোধিতা।

৯. সত্য কি এক স্তরের ব্যাপার?

হতে পারে না, এক এক স্তরে এক এক দিক থেকে এক একটা বিষয় এক এক ধরনের সত্য? ‌কতটুকু ‘প্রমাণ’ হাজির করলে পর আমরা বলতে পারবো, আমরা ‘পরিপূর্ণ সত্য’ পেয়েছি?

সত্যতা যদি হয় একটা গুণগত বিষয়, তৎক্ষেত্রে আমরা কীভাবে পরিমাণ দিয়ে গূণকে যাচাই করবো? অথচ, তা-ই আমরা সচারচর করে থাকি। অনন্যোপায় হয়ে। কীভাবে বুঝবো কতটুকু পরিমাণ হলে তা একটা গূণকে নির্দেশ করে? একটা উদাহরণের সাহায্যে কোয়ালিটি-কোয়ানটিটির এই বিরোধ বা প্যারাডক্সকে আমরা বুঝতে পারি।

গ্রীষ্মপ্রধান দেশের লোক হিসেবে আমাদের কাছে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা মানে ঠাণ্ডার মওসুম। শীতপ্রধান দেশের লোকদের কাছে এটি সামার টাইম। কাজে কাজেই পরিমাণ দিয়ে গুণকে যাচাই করার বিষয়টি একটি নিতান্তই প্রায়োগিক উপায়, যা তাত্ত্বিক দিক থেকে নানাভাবে সমস্যাযুক্ত।

১০. আমরা কী যাচাই করি, এপিয়ারেন্স? অর, রিয়েলিটি?

আমরা যখন যাচাই করি তখন আমরা শুধু বাহ্যিক অবস্থাই যাচাই করি। অথচ, এক্সটার্নাল ফ্যাক্টরগুলোর পাশাপাশি ইন্টারনাল ফ্যাক্টর বা কন্ডিশানগুলো আমাদেরকে ফান্ডামেন্টালি প্রভাবিত করে। তাই আমরা যখন প্রমাণ হলো না হলো কিছু একটা বলি তখন সেই প্রমাণ-পদ্ধতির অথেনটিসিটি নিয়ে আমরা প্রশ্ন তুলি না। হয়তো পারি না, তাই তুলি না।

তারমানে, থিওরিটিকেলি প্রবলেমেটিক হওয়া সত্ত্বেও আমাদের প্রচলিত প্রমাণ পদ্ধতিগুলো প্র্যাকটিকেলি আমাদেরকে ‘উদ্ধার’ করে।

এখানেও ফিলসফিকেল প্যারাডক্স।

তাত্ত্বিকভাবে যা ত্রুটিপূর্ণ বাস্তবে তা ত্রুটিহীন হতে পারে না। আমাদের ‘একসেপটেড রিজনিং’ বা ‘লিভড এক্সপেরিয়েন্স’ থেকে আমরা এটি বুঝতে পারি। আমরা এও বুঝতে পারি, পূর্ব-সম্ভাব্যতা বা পটেনশিয়ালিটি ছাড়া কোনো কিছু বাস্তবায়িত বা একচুয়েলাইজড হতে পারে না।

আগে সম্ভাব্যতা, তারপর নিশ্চয়তা। এটি ওয়ান ওয়ে পাথ। আগে নিশ্চয়তা তারপর সম্ভাব্যতা, বাস্তবে কোনো কিছু এমন হতে পারে না। এটি কাউন্টার-ইনটুইটিভ। সম্ভাব্যতার পথ ধরে আমরা পাই নিশ্চয়তা। নিশ্চয়তাকে পাওয়ার পরে আমরা অনুমান করি, এই নিশ্চয়তাকে পাওয়ার জ্ঞানগত সম্ভাব্যতা পূর্ব থেকে ছিল বিধায় আমরা উক্ত বিষয়ে উক্ত প্রকারের নিশ্চয়তা লাভ করতে পেরেছি।

ফিলসফিতে অভিজ্ঞতা-পূর্ব (a priori) এবং অভিজ্ঞতা-পরবর্তী (a posteriori) বলে একটা এপিসটেমিক ডাইকোটমি আছে। বস্তুগত প্রমাণ, যাকে আমরা অভিজ্ঞতা-পরবর্তী হিসেবে বলছি, সেটি পাওয়ার পরে আমরা বুঝতে পারি, অভিজ্ঞতা-পূর্ব হিসেবে কিছু বিষয় কাজ করেছে বলেই আমাদের পক্ষে সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞতাটি লাভ করা সম্ভব হয়েছে।

এক্ষেত্রে প্রমাণের বোঝা কার ওপর আমরা চাপাবো? আ-প্রায়োরাইকে আমরা কীভাবে আ-পোস্টেরিওরাই হতে আলাদা করবো? আমাদের ‌‘প্রমাণের’ ভিত্তি হিসেবে কোনটাকে গ্রহণ করবো? কোনটাকে কোনটার ওপর প্রায়োরিটি দিবো? একদিক থেকে একটা আগে। আরেক দিক থেকে আরেকটা আগে।

দ্যান, হোয়াট ইজ দ্যা ওয়ে আউট?

আমার এ’কথা গুলোর মানে হলো, প্রমাণের থাকা বা না থাকা, দিতে পারা বা না পারার বিষয়গুলো অতটা সাদা-কালো টাইপের সিম্পল এবং ইজি ব্যাপার নয়, এইটা বোঝানো।

১১. প্রমাণের আইনী দৃষ্টিকোণ-

বিচারিক কার্যক্রমে, বিশেষ করে ফৌজদারী অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে আইনী পূর্বানুমান একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। যতক্ষণ দোষী সাব্যস্ত না হয় ততক্ষণ নির্দোষ ধরে নিতে হবে, এমন পূর্বানুমান থেকে বিচার কর্ম সম্পাদিত হলে যে ধরনের বিচার হবে; তার উল্টো পূর্বানুমান, অর্থাৎ নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে না পারলে অভিযুক্ত দোষী প্রমাণিত হবে, এমন পথে বিচার করলে বিচারের রায় হবে ভিন্নতর।

প্রমাণের দায় কি অভিযোগকারীর ওপর, নাকি অভিযুক্তের ওপর, কে তা ঠিক করবে?

কোনো বস্তুর এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্তের দৈর্ঘ্য মাপলে আমরা যে প্রান্ত হতেই মাপি না কেন, একই দৈর্ঘ্য পাবো। বস্তুগত প্রমাণ পদ্ধতি মানবিক বিষয়গুলোতে অচল।

আমাদের বিচারিক পূর্বানুমানসমূহ (presumptions) আমাদের সমগ্র বিচার বা যাচাই প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। প্রতিটা প্রশ্ন সম্ভাব্য উত্তরের একটা সীমানা (পূর্ব)নির্ধারণ করে দেয়। যেমন প্রশ্ন তেমন উত্তর। অথচ, পার্টিকুলার বিয়িং হিসেবে নিরপেক্ষ প্রশ্ন উত্থাপন করাটা আমাদের জন্য অন্টলজিকেলি অসম্ভব। we are delimited and biased by our very pattern of existence.

যেসব প্রেমিজ হতে আমরা কোনো কনক্লুশান ড্র করি, সেই কনক্লুশানকে প্রেমিজ হিসেবে গ্রহণ করলে আমরা ঠিক সেই প্রেমিজগুলোতে ফেরত যেতে পারি না।

অথচ, বস্তু জগতে ব্যাপারটা ঠিক তাই হয়। আমের বস্তা খুললে আপনি আমই পাবেন। আবার আমগুলোকে বস্তায় পুরলে আপনি সেই আমের বস্তাটাই পাবেন। ক থেকে খ যদি হয় পাঁচ ফুট তাহলে খ থেকে ক এর দূরত্বও ঠিক পাঁচ ফুটই হবে। উল্টাদিক থেকে মাপার কারণে মাপ কমবেশি হয়ে যাবে না।

মোরাল অব দ্যা স্টরি হলো, একেক বিষয়ের প্রমাণ বা প্রামাণিকতা একেক ধরনের।

১২. জ্ঞানমাত্রই নিশ্চিত কিন্তু সব জ্ঞানের ভিত্তি নিশ্চিত নয়-

সমকালীন জ্ঞানতত্ত্বে epistemic scale বলে একটা কথা আছে। দুই দিকে যুক্তি, ‌‘প্রমাণ’ সমান হলে জ্ঞানের সংশ্লিষ্ট দাবিটির যাচাইকরণের দিক থেকে এপিসটেমিক স্ট্যাটাস হবে কাউন্টার ব্যালেন্সড। একদিকে বেশি হলে প্রোবাবল। এভাবে ‌যুক্তি বা ‌‘প্রমাণ’ যত মজবুত হবে এপিসটেমিক স্ট্যাটাস তত বাড়বে। beyond reasonable doubt হতে evident হয়ে সর্বোচ্চ certain হতে পারে।

মনে রাখতে হবে, কোনো প্রপজিশনের এপিসটেমিক স্ট্যাটাস হতে পারে probable। ওই কথাটা যাচাইকরণের মানদণ্ডে সম্ভাব্য হলেও সেইটার জ্ঞানতাত্ত্বিক মর্যাদা সম্ভাব্য হওয়াটা কিন্তু নিশ্চিত। অর্থাৎ এটি নিশ্চিত যে জ্ঞানের ওই দাবিটা সম্ভাব্য।

নিশ্চয়তা ছাড়া কোনো জ্ঞান হয় না। নিশ্চয়তা একটা পজিটিভ ফেনোমেনা। এই দৃষ্টিতে জ্ঞানমাত্রই ইতিবাচক তথা সত্য জাতীয় কিছু্। কোনো কথা যদি মিথ্যা হয়, তাহলে এপিসটেমিকেলি এটি সত্য যে কথাটা মিথ্যা। যারা ফেল করে তারাও এক ধরনের ফলাফল লাভ করে কিংবা যারা আইন অমান্য করার কারণে শাস্তিপ্রাপ্ত হয় তারাও এক অর্থে আইনকে (অনিচ্ছা সত্ত্বেও) মেনে চলে।

এই কথাগুলো এখানে বলার কারণ হলো, যারা বার্ডেন অব প্রুফের কথা তোলে তাদের এটি স্মরণ রাখতে হবে, সব ফিল্ডের প্রমাণ-পদ্ধতি এক নয়। ফিজিক্সে যে ধরনের প্রমাণ-পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় এসট্রো-ফিজিক্সে সে ধরনের প্রমাণ-পদ্ধতি অনুসরণ করা সম্ভব হয় না। সে জন্য এস্ট্রোফিজিক্স ইজ মোর ফিলসফিকেল দ্যান ফিজিক্স।

অনেকেই জানে না, নিউ-এথিইজমের ধারক, বাহক ও প্রচারক রিচার্ড ডকিন্সও উনার ‌‘গড ডিলিউশান’ বইয়ের মধ্যে আস্তিকতা-নাস্তিকতার যে স্কেল দিয়েছেন তাতে নিজেকে ১০০% নাস্তিক দাবি করেননি। তিনি নিজেকে ডিফেক্টো নাস্তিক তথা ৮০% নাস্তিক হিসেবে আইডেন্টিফাই করেছেন।

উদ্ধত ও বেকুব লোকজনেরা কেবল নিজেদেরকে নাস্তিক দাবি করে। স্মার্ট নাস্তিকেরা ফরমালি নিজেদেরকে সংশয়বাদী বা বড়জোর অজ্ঞেয়বাদী হিসেবে দাবি করে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অজ্ঞেয়বাদ বা এগনোসটিসিজম অন্টলজিকেলি সেলফ-রিফিউটিং মতবাদ। জানা বা জ্ঞান এমন এক জিনিস তা থেকে কারো রেহাই নাই। অনেককিছু না জানার কারণে আমরা আফসোস করি, কিন্তু জানা থেকে যে মানুষের রেহাই নাই, সেইটা আমরা প্রায় সময় খেয়াল করি না।

যাহোক, এসব অন্য প্রসঙ্গ।

১৩. অনিশ্চয়তার সমস্যা এবং এরর ম্যানেজমেন্ট স্ট্র্যাটেজি-

যাচাইয়ের মধ্যে ভুল হতেই পারে। পূর্বেই বলেছি এক এক ডিসিপ্লিন বা ডমেইনের যাচাই পদ্ধতি এক এক রকমের। এটি জানা সত্ত্বেও মৎস আর পক্ষীকে এক কাতারে দাঁড় করিয়ে দৌড় প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করার মতো বোকামী আমরা অনেক সময়ে করে থাকি। বার্ডেন অব প্রুফের আলোচনাতে এটি অতীব প্রাসঙ্গিক। তাই বললাম।

যে কোনো ধরনের যাচাইকরণের ক্ষেত্রে একটা রেইন্জের মধ্যে রেখে অনিশ্চয়তার সমস্যাকে সমাধান করতে হয়। তো, এই রেইন্জ বা আওতা আমরা কীভাবে ঠিক করি? ঠিক কোনখান হতে শুরু করাটা সঠিক এবং কোন মাত্রা পর্যন্ত এলাউ করাটা সঠিক?

এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে vagueness এবং precision এর প্রসঙ্গ চলে আসে। প্রমাণের প্রসংগে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ, শুধু এটুকু এখানে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই।

১৪. শেষ কথা-

ক. ইনিশিয়ালি প্রমাণের বোঝা তাকেই বহন করতে হয়, যে কিনা দাবিটা তোলে।

খ. সত্যের প্রমাণ দিতে হয় না। সত্যকে দেখিয়ে দিতে হয়। সত্যকে দেখার যার যোগ্যতা নাই সে সত্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে, এটা স্বাভাবিক। তাই তাকে সত্য দেখিয়ে দিতে পারার কথা না। নিজে না দেখলে কাউকে আমরা দেখিয়ে দিতে পারি না। তাই দেখিয়ে দেয়া মানে সত্যের দিকে ইনডিকেশন করা।

গ. কারো দাবির সুপারফিশিয়াল অংশকে খণ্ডন করলে সেই দাবির যে গ্রাউন্ড তা অটোমেটিকেলি নাকচ হয়ে যায় না। এ ধরনের পরিস্থিতিতে বিরোধীপক্ষের যে দাবি, সেইটার সুপারফিশিয়াল অংশকে যিনি রিফিউট করবেন, সেই দাবির যে গ্রাউন্ড, সেইটাকে খণ্ডন করার বার্ডেন অব প্রুফ তখন তাদের ওপর এসে পড়ে উক্ত দাবির সুপারফিশিয়াল অংশকে রিফিউটকারীর ওপর।

কারো দাবির উপস্থাপিত অংশে ভুল-ত্রুটি থাকার মানে এই নয় যে সে যা বলতে চেয়েছে, তাও ভুল।

ঘ. আমরা বাস্তব থেকে তত্ত্বকে অনুমান করি। আবার তত্ত্বের আলোকে বস্তু বা বাস্তবতার ‌‘অভিজ্ঞতা’ লাভ করি। এখানে তত্ত্ব বলতে একইসাথে থিওরি এবং পটেনশিয়ালিটিকে বুঝতে হবে।

ঙ. একটা কিছুর ভিত্তিতে আমরা এর বিপরীত কিছুর পূর্ব-অস্তিত্বকে ন্যায়ত স্বীকার করি। এবং, যেখান থেকেই আপনি শুরু করেন না কেন, আপনার শুরুর জায়গাটা আপনার গন্তব্যকে প্রি-ডিটারমাইন করবে। এ ধরনের জ্ঞানতাত্ত্বিক সীমাবদ্ধতা বা এপিস্টোমোলজিকেল বায়াসনেস হতে আমরা কখনোই মুক্ত হতে পারি না। বরং এটাই স্বাভাবিক।

চ. প্রমাণের বোঝা হলো এমন এক ভূত যাকে আমরা কখনোই আমাদের ঘাড় হতে নামাতে পারি না। আমরা অস্তিত্বশীল থাকা মানেই হচ্ছে আমাদের ঘাড়ে প্রমাণের বোঝা চেপে থাকা। প্রমাণের দায় হতে কেবল সে-ই মুক্ত হতে পারে যার কোনো অস্তিত্বগত সীমাবদ্ধতা নাই।

এই লেখায় আমি বেশকিছু ফিলসফিকেল টার্ম ব্যবহার করলেও এ সংক্রান্ত মোর স্পেসিফিক ফিলসফিকেল টার্মগুলোকে এড়িয়ে গেছি। রিয়ালিজম-আইডিয়ালিজমের দ্বন্দ্ব নিয়ে যাদের কিছুটা ধারণা আছে তাদের জন্য আমার এখানকার কথাগুলো বোঝা সহজ হবে। অবশ্য, বস্তুবাদ আর বাস্তববাদের পার্থক্য যারা বোঝে না তারা আমার এই কথাগুলো বুঝতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলতে পারি। আমার আপাতত কিছু করার নাই। একটু কষ্ট করে কাউকে জিজ্ঞেস করলে বা গুগল করলেই জানতে পারবেন। সংশ্লিষ্ট সব টার্ম বুঝতে পারাটা হলো কোনো লেখা বা বক্তব্য বুঝতে পারার পূর্বশর্ত।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *