জামায়াতের প্রতিষ্ঠান বেদখল হয়ে যাওয়ার জন্য জামায়াতে ইসলামী সরকারি সন্ত্রাসকে দায়ী করে। কথাটা সঠিক। যেমন করে এক্সিডেন্টকারী গাড়ির বিরুদ্ধে সেই পথচারীর অভিযোগ সঠিক যে পথচারী ফুটপাত ছেড়ে রাস্তার উপর দিয়ে হাঁটা শুরু করার পরে একটা গাড়ি তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে।
মাল্টিপল কন্ট্রিবিউটিং কজালিটির এই জগতে এই ধরনের জুলুমের শিকার হওয়ার জন্য ভিকটিম হিসেবে জামায়াতের কোনো দায় আছে কি? থাকলে সেটা কী?
বলছি।
যেভাবে জামায়াতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে শতভাগ দলীয়করণ করে গড়ে তোলা এবং পরিচালনা করা হয়েছে তাতে করে এমন ধরনের পরিণতির সম্মুখীন হওয়াটা ছিল স্বাভাবিক। সত্যি বলতে, অনিবার্য।
যেমন, আই আই ইউ সি।
৯০ দশকের শুরুতে আমরা যখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করি তখন চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি জমে ওঠার আগ পর্যন্ত সেখানে জামায়াতের বাইরে সাধারণ ইসলামপন্থী এবং বিএনপিপন্থী সিনিয়র শিক্ষকগণ পার্শ্ববর্তী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একাডেমিক নানা কাজে যেতেন।
পরবর্তীতে তারা ঝরে পড়েন। আইআইআইইউসি হয়ে পড়ে এক্সক্লুসিভলি জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের পার্টটাইম শিক্ষা, মোর স্পেসিফিকেলি স্পিকিং, টু পাইস কামাই কেন্দ্র।
বর্তমানে তারা বিতাড়িত। যারা আছেন তারা কোলাবারেশন করে টিকে আছেন।
কেন এমনটি হলো?
এই প্রশ্নের টপ-ডাউন উত্তরটি শুরুতে দেয়া হয়েছে। এর একটি বটম-আপ উত্তরও আছে, যেটা কেউ বলে না।
‘স্টাবলিশমেন্ট এবং কমিটমেন্টের ভারসাম্য (উপলব্ধি ৩)’ শিরোনামে আমার পূর্ববর্তী পোস্টে এক সরলমনা পাঠকের একটি প্রতিমন্তব্যের সূত্রে আমি এই কথাগুলো বলছি।
১. প্রস্তাবনা প্রকল্প ও পাঠদান শুরুর দিকে যেমনটা ছিল তেমন করে জামায়াত সার্কেলের বাইরের চট্টগ্রামের এবং দেশের উল্লেখযোগ্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ যদি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় থাকতেন,
২. শিক্ষক নিয়োগের সময় দলীয় সম্পৃক্ততাকে অপরিহার্য যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা না করে যদি বিষয়ভিত্তিক যোগ্যতার ভিত্তিতে দলমত নির্বিশেষে যোগ্য প্রার্থীদেরকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা হতো,
৩.(ক) ছাত্র-ছাত্রীদেরকে নিজস্ব দলের বাধ্যগত নিরব সমর্থক হিসেবে বিবেচনা না করে যদি তাদেরকে নিছকই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী হিসেবে গণ্য করা হতো,
(খ) সকল দলের লোকদেরকে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতি করার সমানাধিকার দেয়া হতো,
(গ) অথবা, সর্বপ্রকারের ছাত্র রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করা যদি কঠোরভাবে কার্যকর করা হতো,
৪. সর্বোপরি, বিশ্ববিদ্যালয়কে জামায়াত নেতৃবৃন্দের আর্থিক সংস্থান এবং সামাজিকভাবে পুনর্বাসনের উপায় হিসেবে যদি ব্যবহার করা না হতো
তাহলে খুব সম্ভবত বর্তমানে যা হয়েছে তেমন অবস্থার উদ্ভব হতো না।
বোকামি করে কেউ আমার এই অবজারভেশনগুলোর ব্যাপারে তথ্য এবং রেফারেন্স দাবি করবেন না। বিষয়গুলো আমার খুব কাছ থেকে চোখে দেখা।
আলোচনা সংক্ষিপ্ত করার জন্য দুই নম্বর পয়েন্টটাকে একটুখানি ব্যাখ্যা করছি ।
নিছক যোগ্যতার ভিত্তিতে যদি শিক্ষক নিয়োগ করা হতো তাহলে একটা ডিপার্টমেন্টে সব দলের লোকজন সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে থাকতো। নিজ দলের পান্ডাদেরকে তারা কন্ট্রোল করতো। কোনো আরোহী চায় না তার গাড়িটা ঠিকমতো না চলুক। কোনো ঘোড়সওয়ার কখনো চাইবে না তার ঘোড়াটা দুর্বল হয়ে পড়ুক।
চার দলীয় জোট সরকারের সময়ে জামায়াতে ইসলামের সাথে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদেরকে ছাত্র শিবিরের ছেলেরা হল প্রশাসনে দেখতে চাইত না। কারণ শিবিরের ছেলেদের অন্যায় আবদার এসব শিক্ষক পূরণ করতেন না, এবং তাদের কোনো জুলুম চোখে পড়লে এসব শিক্ষক সেটার প্রতিবিধান করতেন।
তাদের ‘সাংগঠনিক কাজে’ এ ধরনের বাধা দেওয়ার ব্যাপারে অন্যদের বিরুদ্ধে তারা যেভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে পারতো, নিজ দলীয় শিক্ষকদের বিরুদ্ধে তাদের তেমন কিছু করার সুযোগ ছিল না।
ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে চাপ থাকার কারণে লোকাল প্রশাসন যতই পক্ষপাতদুষ্ট হোক না কেন, কোনো একটা জায়গায় যখন কোনো দিক থেকে ইতিবাচক সামাজিক সংস্কৃতি করে ওঠে, কিছু গুড ট্র্যাডিশনে লোকেরা অভ্যস্ত হয়ে পড়েন, কোনো প্রশাসনের পক্ষে সম্ভব হয় না সেটাকে সহজে ভেঙে দেওয়া।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এর উদাহরণ।
এখানে কেউ এসে পূর্ববর্তীদের দেয়া নামকে আজ পর্যন্ত বদলে দেয়নি। কারো নিয়োগ, তা যতই বাজে হোক, পরবর্তী প্রশাসন এসে বাতিল করেনি। বিরোধী পক্ষের কাউকে ইতোমধ্যে প্রদত্ত কোনো সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে এমনটা শুনিনি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি এরিয়ার মধ্যে যদি আপনি হাঁটেন, আমি আপনার সাথে বাজি ধরে বলতে পারি, আপনি কোনো ফ্যাকাল্টির কোনো করিডোরে কখনো ছাত্রনেতাদের কোনো জটলা দেখবেন না। এমনকি, কোন একাডেমিক এরিয়াতে কাউকে নেতা হিসেবে আপনি আইডেন্টিফাইও করতে পারবেন না।
ছেলেরা যত ঝামেলা করে সব স্টেশন চত্বর আর ছেলেদের হল এরিয়াতে। আমরাও আমাদের ছাত্রজীবনে ডিপার্টমেন্টের বারান্দায় স্লোগান দিয়েছি, মিছিল করেছি। এখন এগুলো অকল্পনীয়।
উদাহরণ হিসেবে আমার বিভাগের কথা বলতে পারি।
কেউ জীবনে একবার বিভাগের সভাপতি হয়। সেই সময়ে শিক্ষক নিয়োগ করার ব্যাপারে চেয়ারম্যানরা সাধারণত আগ্রহী থাকেন। আওয়ামী লীগ দলভুক্ত কিংবা বলয়ের মধ্যকার শিক্ষক হওয়া সত্ত্বেও আমাদের বিভাগের তিনজন সভাপতি তাদের মেয়াদকালে শিক্ষক নিয়োগের চেষ্টা করেননি। বরং প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষক নিয়োগের ফাইল প্রসেস করার জন্য যে চাপ দেওয়া হয়েছে সেগুলোকে তারা ঠেকিয়েছেন।
ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যানরা প্রশাসনের সাথে আঁতাত না করে বিভাগের সিনিয়র শিক্ষকদের সাথে সহযোগিতা করে চলাকে প্রেফার করেছেন। ভালো নিয়োগ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ, এই আশঙ্কায় তারা বিভাগের শতকরা ৫০ ভাগ পদ ক্রমান্বয়ে শূন্য হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া করেননি।
হোলি আর্টিজানের ঘটনার পরে আমাকে গ্রেফতারের জন্য যখন পুরো প্লট সাজানো হলো, দৈনিক ইত্তেফাকে আমার বিরুদ্ধে রিপোর্ট ছাপানো হলো, বাসার সামনের ইলেকট্রিক পোলে বড়সড় সাইজের নজরদারি ক্যামেরা বসানো হলো, তৎকালীন ভাইস-চ্যান্সেলর দক্ষিন ক্যাম্পাস মসজিদে এক জুমার নামাজের আগে এসে আমাকে ইঙ্গিত করে বক্তৃতা করলেন। তিনি বলেছিলেন,
‘এখানে শিক্ষকদের মধ্যে জঙ্গি তৎপরতা আছে। সরকারের শক্তিশালী গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক এখানে কাজ করছে। কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা হলে আপনারা আমাকে দায়ী করতে পারবেন না’।
চেয়ারম্যানদের মিটিংয়ে আমার নাম ধরে অনুরূপ কথা তিনি বলেছিলেন। ক্যাম্পাসের ছেলেপেলেরা পরস্পর জিজ্ঞেস করত ‘মোজাম্মেল চাচার বাসায় রেইড হওয়ার কথা। কী খবর?’
নিজের চেয়েও আমার সেন্টারের তৎকালীন নির্বাহী পরিচালক মাসুদের জন্য আমার খুব খারাপ লাগতো। ভাবতাম, আমার না হয় অনেক শিকড় এবং ডালপালা আছে। ও বেচারা তো নিরীহ। তার কী হবে?
তখন যেসব কারণে তারা শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে এসেছিল তার অন্যতম কারণ ছিল, তৎকালীন প্রক্টরিয়াল বডির একজন মেম্বারের প্রবল আপত্তি।
আমাদের বিভাগের এক শিক্ষক। খাঁটি আওয়ামি লীগ। তিনি তখন ছিলেন প্রক্টরিয়াল বডির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তিনি বলেছিলেন, ‘আমার স্যারের বিরুদ্ধে যদি এ’ধরনের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তাহলে আমি সোজা এ অফিস থেকে হেঁটে বের হয়ে যাব। আমি পদত্যাগ করব।’
তার এই ভেটোকে অস্বীকার করা তাদের জন্য ছিল অসম্ভব-প্রায়।
ব্যাপার হলো, আজকের আলোচ্য বিষয় এতই স্পর্শকাতর এবং এ বিষয়ে বলার মত এত কথা তা সব এখানে বলাও সমীচীন হবে না, বলে শেষও করা যাবে না।
আপনি যদি কারো জন্য আজকে একটা গর্ত খুঁড়েন, খুব সম্ভবত আপনি নিজে কিংবা আপনার কোনো কাছের লোক কাল কিংবা পরশু সেই গর্তে পড়বে। টিট ফর ট্যাট, এটাই দুনিয়ার নিয়ম। আল্লাহতালার সুন্নত। নিউটনের তৃতীয় সূত্র বস্তুজগতের মতো নৈতিক জগতের ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য।
ন্যায়ের দাবীকে আপনি যদি উপেক্ষা করে চলেন, শেষ পর্যন্ত আপনি বিপদের সম্মুখীন তো হবেনই। এতে অবাক হওয়ার কী আছে? এটাই তো স্বাভাবিক।
দলান্ধতা, স্বজনপ্রীতি, সাম্প্রদায়িকতা, আঞ্চলিকতা, একচেটিয়াবাদ, বাকস্বাধীনতাহরণ, এককথায় আমার ভাষায় ‘নিজেদেরকরণ’ – এ’ধরনের কাজ পবিত্র কোরআনের সূরা নিসার ৫৮ নম্বর আয়াতে বর্ণিত,
‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিচ্ছেন আমানতসমূহ তার হকদারদের কাছে পৌঁছে দিতে। আর যখন মানুষের মধ্যে ফয়সালা করবে তখন ন্যায়ভিত্তিক ফয়সালা করবে।’
– এই মূলনীতির খেলাফ!
কারো হক মেরে দেওয়া ব্যক্তিবর্গ অন্য আর কারো দৃষ্টিতে যাই হোন না কেন, মহান আল্লাহতালার দৃষ্টিতে তারা সমান অপরাধী।
নৈতিক বিচারে লেবাস কিম্বা সাইনবোর্ড কোনো কাজে লাগে না।
মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
ফয়সাল মুহাম্মদ: আপনার কথাগুলো দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। মানুষও বুঝে, উপলব্ধি করে। আবার দিন শেষে এসে সেই যে দল, স্বজন, সাম্প্রদায়িকতা, আঞ্চলিকতায়-ই আটকে যায়। সবাই একটা ডি-ডে এর সফলতা চায়। কিন্তু কস্টিংয়ের জন্য রাজি না। স্যাক্রিফাইস দরকার, সমাজে প্রয়োজনীয়ও। অন্যরা করুক। আমি না।
Sultan Mohammad Salahuddin: একমত হতে পারলাম না। এসব থিউরি আর বাস্তবতা ভিন্ন জিনিস। লীগ কি জিনিস আপনি বুঝতেছেন না। অথবা বুঝেও না বুঝার ভান করছেন। জামায়াত থেকে বেরিয়ে গেছেন তো তাই। আর তথাকথিত সুশীল কিংবা নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকার চেষ্টা করছেন তাই এখনো মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে পারছেন, নইলে হিসাবটা উল্টে যেত।
Mohammad Mozammel Hoque: আওয়ামী লীগ কি জিনিস সেটা তো জামায়াতে ইসলামী অন্য সবার চেয়ে বেশি করে বোঝার কথা। যখন ১৯৭১ সালের অভিযোগ ছিল না তখন ১৯৭০ সালের নির্বাচনের আগে পল্টন ময়দানে জামায়াত ইসলামের সমাবেশে কারা হামলা করেছিল এবং কি ঘটনা ঘটেছিল সেটা তো তাদের মনে থাকার কথা। অথচ তারাই তো আওয়ামী লীগকে নতুন জীবন দিয়েছে। আওয়ামী লীগের সাথে আন্দোলন করে বিএনপিকে ক্ষমতা থেকে নামিয়েছে। সংবিধান সংশোধন করে সংসদীয় পদ্ধতিতে ফিরে যেতে বাধ্য করেছে।
সংসদীয় পদ্ধতি এমন এক পদ্ধতি, এই পদ্ধতিতে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে নির্মূল করা কোনদিনও সম্ভব হবে না, যা খুব সহজ ছিল প্রেসিডেন্সিয়াল সিস্টেমে।
Md Sayem Muhaimin: এখানে একটা ভিন্ন দৃষ্টি ভঙ্গি আছে। সেটাকে “রাজনৈতিক সংস্কৃতি” পরিভাষা দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অনেকগুলো স্টেকহোল্ডার আছে। বৃটিশ, কলকাতা এবং আওয়ামী লীগ মূলত এই সংস্কৃতির গোড়া। যেখানে আওয়ামী সংস্কৃতি বরাবরই জবরদখলের, দলীয়করণের। সেই রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রভাব বিএনপি জামায়াতসহ প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের মাঝে বিদ্যমান।
আপনি এই বিদ্যমন সংস্কৃতির ধারাবাহিক ফলাফল হিসেবেই বিষয়টিকে তুলে ধরলে বরং চিন্তক হিসেবে আপনারা বিশ্লেষণ অধিকতর গ্রহণযোগ্যতা পেতে পারে।
হল দখল, ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান দখল, প্রশাসন দখল, কেন্দ্র দখলের মতো যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিদ্যমান তার উৎখাত ব্যাতিরেকে আপনি যে প্রস্তাবনাগুলো দিয়েছেন তা এমন অনিরাপদ রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বাস্তবায়ন সম্ভবত কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে যৌক্তিকভাবেই সম্ভব নয়।
Mohammad Mozammel Hoque: কোনো একটা ঘটনা ঘটার পিছনে অনেকগুলো কারণ থাকে। যার যার দিক থেকে প্রত্যেকটাই সঠিক। শুরুতেই আমি মাল্টিপল কন্ট্রিবিউটিং কজালিটি বলে যে কথা বলেছি তার মধ্য দিয়ে এটা এসে যায়।
আমাদের এখানে একটা নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গি আছে, ভিকটিম ব্লেমিং করা যাবে না। অর্থাৎ ভিকটিমকে কোনো দোষারোপ করা যাবে না। অথচ ভিকটিমাইজার যেমন দোষী, সুনির্দিষ্ট কোনো অনিয়ম করলে ভিকটিমও অন্তত ততটুকু জন্য দোষী।
যার প্রতিষ্ঠান দখল করা হয়েছে সে যেমন ভিকটিম, তেমনি করে প্রতিষ্ঠানটা যাচ্ছেতাইভাবে চালানোর জন্য যারা দায়ী তাদেরকে দোষারোপ না করার কোনো কারণ দেখছি না।
Ri Yad: শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টা নিয়ে কিছুটা দ্বিমত আছে। আমরা যেহেতু ২০১৫ সাল থেকে আইইউসির শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া দেখছি। তাই বলতে পারি ১৫ এর সময় ও পরবর্তী ৫ বছর জামায়াত নিয়ন্ত্রিত আইইউসিতে শিক্ষক নিয়োগে জামায়াতের লোকজন খুব কম সুবিধা পেয়েছে।
এই ক্ষেত্রে তৎকালীন ট্রাস্টি শামসুল ইসলাম এবং দীন মোহাম্মদের কাছের লোক বা যাদের লিংক লবিং এই দুইজন পর্যন্ত বিস্তৃত তারা ছিল সুবিধাপ্রাপ্ত।
সায়েন্স ফ্যাকাল্টিতে যেসব নিয়োগ দেখছি অধিকাংশ ছিল সালাফি (জামায়াত বিদ্ধেষী) আর অবশ্যই সাতকানিয়া লোহাগাড়ার এবং উল্লেখিত দুই ব্যক্তির কাছের লোক।
Mohammad Mozammel Hoque: নিয়োগগুলো নিছক যোগ্যতার ভিত্তিতে ছিল কিনা, সেটাই প্রশ্ন।
Ri Yad: আমাদের ডিপার্টমেন্ট এ আমাদের সময়ে মোট ৪ জন নিয়োগ পান। ১ জন শিবির করতেন। ৪ জনেই যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ পান। নদভীর খিলাফতকালে আমার এক ফ্রেন্ড নিয়োগ পান। যার যোগ্যতা ছিল ছাত্রলীগ করা। ৭ জন ক্যান্ডিডেটের মধ্যে তার সিজিপিএ ছিল সবার কম। একমাত্র তার কোনো পেপার এবং মাস্টার্স ছিলো না।
এর বাইরে ইইই তে একটা ছাড়া বাকিগুলা ফেয়ার নিয়োগ দেখছি। যে একজনকে আঞ্চলিক কোটায় শামসু ভাই ঢুকাইছিলেন তিনি পরবর্তীতে খলিফা নদভীর বায়াত নিয়ে এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হয়ে যান।
শামসু-নদভী দুইজনের খেলাফতকালে স্টাফ অফিসার নিয়োগের সিলসিলার কোন পরিবর্তন হয়নি। দূর্নীতিগ্রস্থ, অযোগ্য, অথর্বদের নেয়া হয়ছে বিশেষ বিবেচনায়।
