আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগদেয়ার পরেও বহু বছর নিজের জুতা নিজে কিনি নাই। আমার ছিল একজোড়া জুতা। সেটা আমার বড়ভাই কিনে দিতেন। অথবা, জুতা ক্রয় করার জন্য টাকা দিয়ে দিতেন। অন্তত দশ বছর আমি এই তরিকায় চলেছি।
আমার মাথার মধ্যে কখনো এই কথাটা আসে নাই, আমিও তো প্রথম শ্রেণির চাকুরী করি। তিরিশ বছর পরে এখনো আমি স্মরণ করতে পারি না, উনাকে আমি কিছু দিয়েছি। ‘ও তো আমাকে কিছু দিল না’ এমনটি ভাইজান কখনো ভেবেছেন মনে হয়নি কখনো।
দশ ভাইবোনের পরিবারে আমার সিরিয়াল ছয় নম্বর। আমার ইমিডিয়েট বড়ভাই ছোটবেলায় চিকিৎসাজনিত ত্রুটির কারণে মারা গেছেন। ভাইজান ছাড়াও বড় তিন বোন। বড় ভাই-বোনেরা আমরা ছোটদের জন্য কী না করেছে?
আমি তখন একেবারেই ছোট। খাবার নষ্ট করতাম। সেজন্য আম্মা বড় আপাকে অনেক বকা দিতেন। একবার আমি খাওয়ার সময় প্রস্রাব করে দেই। প্রস্রাবের ছিটা প্লেটের মধ্যেও পড়েছে। আম্মার বকা হতে বাঁচার জন্য বড় আপা সেই ভাত তাড়াতাড়ি নিজেই নাকি খেয়ে নিয়েছিলেন।
বড়রা শুধু দেয়ার কথাই ভাবেন। ‘বিনিময়ে কী পেয়েছি?’ – এইটা ভাবার অবসর তারা পান না। বড় বোন মায়ের সাবস্টিটিউট। বড় ভাই বাবার বিকল্প।
একটা বৃহৎ পরিবারে বাবা মায়ের তরুণ বয়সে প্রথম সন্তান বা প্রথম দিককার সন্তানেরা পরিবারে আসে। তারা বাবা-মায়ের স্ট্রাগলটা দেখে। বাবা-মায়ের তুলনামূলকভাবে অধিকতর আবেগঘন ভালবাসাপূর্ণ সম্পর্কের ভেতরে তারা বেড়ে উঠে। স্বভাবতই তারা শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে হয় তুলনামূলকভাবে হেলদি এন্ড টলারেন্ট।
পরিণত বয়সের বাচ্চারা প্যারেন্টেসের আর্লি লাইফের স্ট্রাগলটা দেখে না। তুলনামূলকভাবে সবকিছু রেডিমেইড পেয়ে যায়। এর ফলে তাদের মধ্যে সেন্স অফ এনটাইটেলমেন্ট তৈরি হয়। তারা হয় স্বার্থপর।
ছোটরাও বড়দের সমান উত্তরাধিকার লাভ করে। আল্লাহর হুকুম হিসেবে নিশ্চয়ই এর মধ্যে কোনো কল্যাণ নিহিত আছে। তৎসত্ত্বেও বলতে হয়, ছোটদের মনমানসিকতা, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হীন।
ঘরে ঘরে ছোটরা সাধারণত স্বার্থপর, উদ্ধত এবং অকর্মণ্য হয়ে থাকে। ছোটরা মনে করে, বড়জন/বড়রা তাদের জন্য যা করেছে, সেটা ছিল নিতান্তই দায়িত্ব। এজন্য তাদের মধ্যে বড়দের প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ থাকা উচিত, পরিবারের ছোট সন্তানেরা এটি ক্বদাচিৎ মনে করে।
ছোটজন/ছোটদের প্রতি বাবা-মা’র পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ তাদের এহেন অকৃতজ্ঞ মানসিকতার অন্যতম কারণ।
যারা বড় তারা মনমানসিকতায় ইন-জেনারেল আসলেই বড়। যারা ছোট তারা ইন মোস্ট অব দ্যা কেইসেস, মনমানসিকতাতেও ছোট।
আমরা যারা ছোট, এসো আমরা ব্যতিক্রমীদের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার চেষ্টা করি।
মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Fakhira Binte Ishak: ছোটরা বড়জন/বড়দের কাজকে নিতান্তই দায়িত্ব মনে করার পিছনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাবা মায়ের ভূমিকা থাকে। ছোটদের সামনে বাবা মায়েরা বড় সন্তানদের বিভিন্ন বিষয়ে স্যাক্রিফাইস করতে বলেন আর কারণ হিসেবে বলেন “তুমি/ তোমরা বড় না?” এই জায়গা টা থেকেই আমার মতে ছোটদের অকৃতজ্ঞতা তৈরি হয়।
Mohammad Mozammel Hoque: হ্যাঁ। বেশিরভাগ বাবা-ম ছোটদের ওপর পক্ষপাত করেন। তাদেরকে শাসন নিজেরা তো করেনই না, বড় ভাইবোনদেরকেও করতে দেন না। যার ফলে প্রায় ক্ষেত্রে ছোটরা ধরাকে স্বরা জ্ঞান করে।
উম্মে রুম্মান রুমু: স্যার আপনার পরবর্তী লিখা পড়ার অপেক্ষায়। তবে অগ্রিম একটা কথা বলে রাখি। যে কোন সংসারে ক্যাচাল লাগে ভেড়া মার্কা পুরুষের কারনে।
Mohammad Mozammel Hoque: লেখা লিখেছি আগেই। আগামীকাল বিকেলে পোস্ট করবো ইনশাআল্লাহ। আগেই পড়তে চাইলে ইনবক্সে পাঠাতে পারি। ইটস আপ টু ইউ। আই হ্যাভ নো প্রবলেম। পাবলিক হওয়ার আগে কেউ পড়লে হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ কোনো সংশোধনী পেয়ে যাবো।
Rukaia Bulbul: আপনার লিখাটা পড়ে ভালো লাগলো। কিন্তু এই কথাগুলির সাথে আমি দ্বিমত পোষণ করতে চাই। নিজের জীবন ও অভিজ্ঞতা থেকে এই দ্বিমত একেবারেই অযৌক্তিক নয়। কেননা বড় সন্তান প্রায় সব রকম আদর আহ্লাদ পেয়ে বেড়ে ওঠে। নতুন বাবা-মা হিসেবে গার্ডিয়ানও সেভাবে বুঝে ওঠার আগেই সন্তানকে নতুন এক খেলনা হিসেবে সবটুকু দিয়ে আগলে রাখার চেষ্টা করেন; যেখানে দ্বিতীয় বা তৎপরবর্তী সন্তানদের বেলায় তাঁরা মোটামুটি সন্তান ও তার লালন-পালন সংক্রান্ত বিষয়ে বেশ খানিকটা অবগত এবং উচিত-অনুচিত সম্পর্কে তারা জেনেবুঝেই ছোট সন্তানগুলিকে অনেকটা জোরজবরদস্তি করে বড় করার চেষ্টা করেন।
সন্তান জন্মদান এবং তাকে গ্রুমিং করার জন্য একটা বিশাল পরিকল্পনা প্রয়োজন যেটা আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে একদম নেই বললেই চলে। ফলত বিয়েশাদী ও বাচ্চা জন্মদান এক ধরণের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়েই চলে। যেখানে বড় সন্তান অধিক আদর-স্নেহ পায় এবং শাসন-বারণের বেড়াজালে আটকায় না বললেই চলে। যার কারণে বড়টা অধিক বেয়ারা/ননীর পুতুল হয়ে ওঠে। আর এই অযোগ্যতা-অদক্ষতা-অপরিকল্পিত সন্তান লালন পালনের দায় ছোটগুলিকে অধিক নিয়মতান্ত্রিকতার মাধ্যমে পূরণ করতে চায়।
আসলে বৈচিত্র সবখানেই আছে। কিন্তু জেনারেশন যাই হোক, বাবা মা ছোট আর বড় সন্তানকে আলাদাভাবেই গড়ে তুলেছেন; যেখানে বড়দের তুলনায় ছোটদের ভুগতে হয় বেশি। তাই আমি বলবো, যেখানে জীবনের কাছে ছোটদের স্ট্রাগলটাই বেশি, তাদের মন ছোট হওয়া স্বাভাবিক বৈ ভিন্ন কিছু নয়।
Mohammad Mozammel Hoque: আমার এমনটা মনে হয় না। সামাজিক যেকোনো বিষয়ে কিছু না কিছু ব্যতিক্রম তো থাকেই…!
Khaled Sami: স্যার এটা একটা ফেনোমেনা বলতে পারেন। বহু বড় ভাইয়েরা আছে যারা জায়গা সম্পত্তি ও বাড়িঘর দেখাশোনা করে আর বসে বসে খায়। অনেক বড় ভাইয়েরা আছে যারা ছোট ভাইয়ের হিউম্যান এজেন্সি নষ্ট করার ক্ষেত্রে বিশাল বড় ভূমিকা পালন করে। বড় ভাইয়ের কথাই হল সর্বস্ব। ছোট ভাই বড় হওয়ার পরও বড় ভাইয়ের ব্যাটাগিরির ঠেলায় আর থাকা যায় না। যাক সেটা ভিন্ন আলাপ। বাট আপনার লেখাগুলা একটা ফেনোমেনা। যেগুলোর বাস্তবতা আমাদের সমাজে খানিকটা হলেও আছে।
Mohammad Mozammel Hoque: আপনি যেটা বলেছেন সেটাও আছে। তবে আমি যেটা বলেছি এটা হচ্ছে সমাজের মূলধারা।
Sathi Mir: স্যার যারা মাঝখানে আছে তাদের কথা কি বলবেন? পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে আপনি যা বলছেন সেটাই সঠিক হিসেবে দেখছি। শ্বশুর বাড়িতে মাঝখানের জনকে বিয়ে করে মনে হচ্ছে কোন চিপায় আটকে আছি। স্যার মাঝখানের জনদের নিয়ে কিছু বলুন।
Mohammad Mozammel Hoque: আমাদের পরিবারে আমি মাঝখানে। পোস্টে যেমনটা বলেছি, আমাদের উচিত বড়দের প্রাপ্য সম্মানটা আদায় করা। আমি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে ১০ লাখ টাকা খরচ করা, আর আমার ছাত্র জীবনে আমার জন্য আমার বড় ভাই ২ লাখ টাকা খরচ করা, এই দুইটার মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। এই কাণ্ডজ্ঞান এবং বোধ আমাদের সকলের মধ্যে থাকা উচিত।
Hasibur Rahman: Sir, if you write your next episode, you’re surely going to lose a huge number of followers. Better to rename the next one.
Mohammad Mozammel Hoque: আমি তো নারীবাদী নারীপুরুষের অযাচিত সমর্থন হতে যে কোনো উপায়ে মুক্ত হতে বদ্ধপরিকর। I wish, I have no feminist friend and well-wisher.
liberalism, individualism, feminism, LGBTQ and sexual liberation; these are the same faces of one and the same hydra. No photo description available.
Babu Tanzib: বড় হওয়া একটি চমকপ্রদ ব্যাপার। যে যার মত দায়িত্ব চাপিয়ে দেয় এই শিরোনামে, “বাবার বড় ছেলের দায়িত্ব বেশি”। কিন্তু বাবার বড় ছেলেরও একটু অবসর যাপনের ইচ্ছা হয়, বাড়ি থাকতে মনে চায়। ঘানি টানতে আর ভালো লাগছেনা। কিন্তু আব্বার মুখখানি চোখে ভেসে উঠলে সেই ভালো না লাগাও ধোপে টিকেনা। দেখা যাক খোদা তা’আলা কি করেন।
Mohammad Mozammel Hoque: বড়দের ওপর সবচেয়ে বেশি অবিচার করে বাবা আর মা। তারা মনে করে, এসব তো ওরই দায়িত্ব। এতটুকু পর্যন্ত ঠিক আছে। এরপরে তারা অনেক সময়ে ছোটদের ভাগে একটু বেশি দিতে চান। এটি অন্যায়।
