‘একাকীদের জন্য সঙ্গীর ব্যবস্থা করো’ (ওয়া আনকিহুল আয়ামা)। এটি কোরআনের একটি আয়াত। স্পষ্টতই এটি সাধারণ নির্দেশসূচক বর্ণনা বা কথা। অন্য একটি আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তোমরা বিয়ে করো। আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তোমাদেরকে স্বচ্ছলতা দান করবেন।
নানাজন নানা কথা বলবে, এই চিন্তা করে বিয়ে না করে থাকা কারো জন্য কিছুমাত্র ক্রেডিটের ব্যাপার নয়। একাকী থাকা হল অগত্যা উপায়। নিতান্ত সাময়িক এবং এক ধরনের আপদকালীন জরুরি অবস্থা।
শাওনেরও উচিত তাড়াতাড়ি বিয়েটা সেরে নেওয়া। কথা পরিষ্কার, আত্মপ্রবঞ্চনা, শঠতা ও গোপন সম্পর্কের চেয়ে অনিরুদ্ধ ব্যক্তিগত প্রয়োজনের অকপট স্বীকৃতি শ্রেয়তর।
প্রকৃতিবিরুদ্ধ জীবনে পরাজয় অবশ্যম্ভাবী। Necessity needs no bound. বাস্তবতা বড় নির্মম। প্রকৃতির সাথে লড়াই করার পরিবর্তে প্রাকৃতিক ব্যবস্থাকে মেনে নিয়ে নিরাপদ জীবন যাপন করা বুদ্ধিমানের কাজ।
সহচর্যের প্রয়োজনকে উপেক্ষা করে যে নৈতিক সততার দাবি করা হয়, আমি কোনোক্রমেই সেটি মানতে নারাজ। কারো ক্ষেত্রেই না। তিনি যেই হোন না কেন।
একেবারেই বিরল ব্যতিক্রম কেউ থাকতে পারে। তেমন ক্ষেত্রেও মনে করবো, কোথাও কিছু একটা ঘাপলা আছে। ব্যাপারটা হয়ত ক্ষুধামন্দ রোগীর স্বল্পাহারের মতো। অথবা অন্য কিছু। বিশেষ কোনো অভ্যাসের কাছে আত্মসমর্পণ করা হয়তোবা।
যতজনই চেয়েছে সামলে চলতে, প্রত্যেকেই তারা পদচ্যুত হয়েছে। আমার দেখা লোকজনের মধ্যে একজনও নিজেকে শেষ পর্যন্ত সামলিয়ে রাখতে পারেনি। একজনও না।
আপনি কোনো প্রয়োজন পূরণকে বিশেষ কোনো কারণে একটা নির্দিষ্ট মেয়াদে বিলম্বিত করতে পারলেও অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য আপনার সেই প্রয়োজনকে অস্বীকার করে টিকে থাকতে পারবেন না। এটাই স্বাভাবিক।
সামাজিকতা আমাদের জীবনের অংশ। সেই হিসেবে আমাদের একটি সামাজিক জীবন থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে কেউ সমাজের জন্যই বাঁচবে, তেমনটা কখনো হওয়া উচিত নয়। প্রত্যেকের উচিত নিজের জীবন যাপন করা।
আমি জীবনবাদী। তাই, সব ধরনের অযাচিত ও অনুচিত সামাজিক সম্পর্ক ও বিধিকে অস্বীকার করে আমি এগিয়ে যাবার পক্ষপাতী। সন্তান বা কারো মুখের দিকে চেয়ে নিজেকে দাম্পত্যজীবনের সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত করে এক ধরনের কৃত্রিম ব্যক্তিগত যৌনজীবন যাপনের যে দৃশ্যমান সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা কিংবা এক ধরনের বাধ্যবাধকতা, আমি এর ঘোরতর বিরোধী। এ নিয়ে আমি লেখালেখি করেছি। অনেকে হয়তো সেগুলো পড়েছেন।
মৌলিক মানবীয় প্রয়োজনের ব্যাপারে আমাদের উচিত সব ধরনের ভণ্ডামীর প্রতিবাদ করার পাশাপাশি নিজেরাও সব ধরনের অপসংস্কৃতি থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকা।
আমি সহজতর বিবাহ ব্যবস্থার পক্ষপাতি।
সহজতর বিবাহ ব্যবস্থা বলতে কী বোঝায়, সেটা খুব একটা ব্যাখ্যা করার কি দরকার আছে? কিছু কিছু ব্যাপার কারো কাছ থেকে শিখতে হয় না। জানতে চাইলে সত্য আপনাতেই যে কারো চোখে ধরা পড়ে।
মানুষের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত স্পষ্ট। অবশ্য, ডাবল স্ট্যান্ডার্ড মেইন্টেইন করা ভদ্রলোক ও ভদ্রমহিলাদের কাছে আমার কথাগুলো অপমানজনক ও আপত্তিকর বলে মনে হবে। এটি স্বীকার করছি।
আমার কথাগুলো খুব তিক্ত। কিন্তু মানব জীবনের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে দিনশেষে এগুলো অপ্রিয় হলেও বাস্তব সত্য।
নিপীড়নমূলক সামাজিকতার ওপরে যুক্তি, বুদ্ধি, কাণ্ডজ্ঞান ও মানবতাকে প্রাধান্য দেয়া উচিত। সমাজকর্মী হিসেবে আমাদের উচিত, সত্য ও ন্যায়ের ব্যাপারে উচ্চকণ্ঠ হওয়া।
এ কথা আমি এই ধরনের প্রসঙ্গে সবসময়ে বলে থাকি। তাই, বলাই বাহুল্য। তবুও বলছি,
কোনো সমস্যাকে অকপটে স্বীকার করে নেওয়া এবং সেটি সমাধানের কোনো বাস্তবসম্মত উপায় খুঁজে পাওয়া হলো সমস্যাটির অর্ধেক সমাধান। সামাজিক সমস্যাগুলোর জন্য এটি বিশেষভাবে প্রযোজ্য।
বিয়ে নিয়ে আমাদের সমাজে যত ধরনের প্রান্তিকতা, বাড়াবাড়ি এবং বিকৃতি আছে; আসুন সেসব কিছুর বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার হই। প্রতিরোধ গড়ে তুলি।
অবদমন ও বিকৃতি চর্চার এই অপব্যবস্থার আমরা তো ভিকটিম হয়েছি। খানিকটা কম অথবা খানিকটা বেশি। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যেন একটি সুস্থ, সুন্দর ও স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারে, সেজন্য আসুন আমরা কর্মতৎপর হই। সচেষ্ট হই।
সব ধরনের সামাজিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে দল-মত-ধর্ম-বর্ণ ও সামাজিক পরিচয় নির্বিশেষে আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। আসুন আমরা ভেঙ্গে দেই সব অপব্যবস্থা। হোক সেটা প্রাচ্যের কিংবা পাশ্চাত্যের কোনো ধর্ম, কালচার কিংবা ঐতিহ্যের নামে।
ধসে পড়ুক সব মিথ্যার দেয়াল আর সৌধ। জয় হোক মানবতার, অকপট সত্যের।