(১) আত্মস্বার্থবাদী। যারা নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ-উদ্দেশ্যের বাইরে কোনো কিছুকে তেমন একটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করে না। এদের মধ্যে যারা স্বীয় ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য যে কোনো কিছু করতে পারে তাদেরকে আমরা সুবিধাবাদী বলি। আর যারা নিজের সুযোগ-সুবিধা চাইলেও অবৈধ ও অন্যায় পথে অগ্রসর হতে চায় না। তাদেরকে আমরা নিরীহ নাগরিক হিসাবে সম্মান করি। তারা হলেন সাধারণ পর্যায়ের ভালো মানুষ।

(২) আদর্শবাদী। কিছু লোক আছে যারা কোনো না কোনো আদর্শের সাথে নিজেকে আইডেন্টিফাই করে। তারা নিজেদের আদর্শগত ভালো-মন্দের মাপকাঠি অনুসারে নিজেরা কোনোমতে চলে বটে। কিন্তু বাদবাকীদের ব্যাপারে, বিশেষ করে বিদ্যমান এস্টাবলিশমেন্টের নানা রকমের অন্যায়ের বিরুদ্ধে এরা উচ্চকণ্ঠ। আশেপাশে কার কার কী কী ভুল আছে তা তারা সোৎসাহে বলে বেড়াবে। এরা নিজেদেরকে বুদ্ধিজীবী হিসাবে উপস্থাপন করে। দেখবেন, আদর্শের মেশিগান হাতে ব্রাশ ফায়ার করার জন্য এরা সদা সর্বদা প্রস্তুত।

(৩) নেতৃত্বপ্রিয়। কিছু লোক আছে যারা সব সময়ে গণ মনোভাবের সাথে থাকে। পাবলিক যা বলে তারাও তা বলে। এতে করে তারা সামাজিক ও প্রশাসনিক নেতৃত্ব অর্জন করে। ভালো-মন্দের ব্যাপারে এদের নিজস্ব বিবেচনাবোধ খুব দুর্বল। দৃশ্যত জনসেবায় নিয়োজিত হলেও আসলে একটা পক্ষ নিয়ে লিডারশীপ হাসিল করাই এদের লক্ষ্য।

(৪) সমাজকর্মী। এরা গণ চরিত্রসম্পন্ন। নিজের স্বার্থের চেয়ে এরা সমাজ, রাষ্ট্র ও মানবতার কথা বেশি ভাবে। আদর্শকে চাপিয়ে দেয়ার পরিবর্তে তারা মানুষের মধ্যে গ্র্যাজুয়েল প্রসেসে সমাজ পরিবর্তনে আগ্রহী। তাই, মানুষের মন জয় করাকে তারা অগ্রাধিকার দেয়। এই ধরনের লোকেরা নেতৃত্বপ্রিয়দের মতো আপসকামীও হয় না, আদর্শবাদীদের মতো নির্দয় সমালোচকও হয় না। তারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মানুষের কাছে যায়। মানুষ তাদের কাছে হেদায়েতের জন্য আসবে, তখন তারা হক কথাটা বলবে; মানুষ তাদেরকে নেতৃত্বের আসনে বসাবে তখন তারা ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবে, এজন্য তারা অপেক্ষা করে না।

আমি চতুর্থ ক্যাটাগরিতে নিজেকে দেখতে চাই। আপনি?

ফেইসবুকে প্রদত্ত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

Abu Yousuf: স্যার, কিছু কিছু মানুষের সমালোচনা না করলে তারা কিভাবে বুঝবে যে, তারা ভালো মানুষ। সমালোচনা করা ভালো মানুষের জন্য (+) যোগ point. ফলে তাদের জন্য উপকার হয়।

Mohammad Mozammel Hoque: সমালোচনা অপরিহার্য। তবে তা হতে হবে ন্যূনতম ও স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনা প্রসূত। বেশি হতে হবে গঠনমূলক ইতিবাচক কথা। আল্লাহর রাসূল (স.) বলেছেন, সহজ করো, কঠিন করো না। উৎসাহ দাও, ঘৃণা সৃষ্টি করো না।

Anwarul Islam: আদর্শবাদীর এই ব্যাখ্যাটা ম‌নে হয় পূর্ণাঙ্গ নয়? আদর্শ লালন ছাড়া সমাজকর্মী কিভা‌বে হয় বুঝলাম না। আদর্শবাদী না হ‌লে মানু‌ষের কা‌ছেও যাওয়া যায় না, আর মানু‌ষের কা‌ছে না গে‌লে সমাজকর্মী হ‌বে কিভা‌বে?? বিস্তা‌রিত কাম্য।

Mohammad Mozammel Hoque: আদর্শবাদী হওয়ার বড় দাবি হলো নিজেকে কর্মী হিসাবে, বড়জোর কর্মীমার্কা নেতা হিসাবে অপরের কাছে উপস্থাপন করা। আদর্শটা থাকবে খানিকটা অন্তরালে। বোধের মধ্যে। কাজকর্মে যার প্রতিফলন ঘটবে। এর বাইরে কাজের চেয়ে যদি কথা বেশি হয়ে যায় বা কথা বলাটাই যদি প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়ায় তাহলে সমস্যা। যারা আদর্শকে সামনে নিয়ে আসে আসলে তার কর্মবিমুখ।

সমাজকর্মীরা আদর্শ দ্বারা উদ্বুদ্ধ। আদর্শ দ্বারা পরিচালিত। কিন্তু তারা আদর্শকে সামনে না এনে কর্ম বা অবদানকে তুলে ধরে। তাতে করে আদর্শের কাজটা ভালোভাবে আদায় হয়ে যায়। যারা বাস্তব কাজের চেয়ে আদর্শের কথা বেশি বলে তারা দৃশ্যত আদর্শের নিকটতর হলেও আদতে তারা পলায়নপর। তাই তারা আক্রমণাত্মক চরিত্রের হয়ে থাকে। কথার ফুলঝুড়ি দিয়ে নিজের অক্ষমতাকে আড়াল করে।

আর, হ্যাঁ, কর্ম বা একটিভিজম এক একজনের এক এক রকমের হবে। তারেক রমাদান অক্সফোর্ডে শিক্ষকতা করার পাশাপাশি দুনিয়াব্যাপী লেকচার দিয়ে বেড়ায়। যখন তিনি নন-একাডেমিক লেকচার দেয় তখন উনার ঐকান্তিকতা দেখে বুঝা যায় তিনি বৃদ্ধিবৃত্তিক ময়দানে সক্রিয়। সবাই বুদ্ধিজীবী হতে চাওয়াটা মহা সমস্যার ব্যাপার। প্রত্যেকে যার যার ফিল্ডে নিজ সাধ্য মোতাবেক কিছু একটা বিশেষভাবে করার চেষ্টা করবে। এতটুকু।

সমাজকর্মীরা নিজের স্বার্থ মোটেও দেখবে না, আদর্শের কথা কখনো বলবে না, নেতৃত্ব চাইবে বা নিবে না, এমন নয়। তারা এই জিনিসগুলোতেও থাকবে। তবে, তারা আসলে এসব কিছুর চেয়ে সামাজিক ক্ষেত্রে অবদান রাখাকেই বেশি গুরুত্ব দেয়। তাদের সামগ্রিক কর্মকান্ডের বিচারে এটি স্পষ্ট হতে হবে।

আশা করি, আমি কী বলতে চেয়েছি তা বুঝতে পারছেন। সুন্দর প্রশ্ন করার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমাদের জন্য দোয়া করবেন। ভালো থাকুন।

Anwarul Islam: ধন্যবাদ স্যার বিস্তা‌রিত বলার জ‌ন্যে ।

লেখাটির ফেইসবুক লিংক

Similar Posts

২ Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *