তোমাকে দেখিনি আমি। শুধু নামটি জেনেছি। কথা হওয়ার অনেক পরে। এইটুকুরও দরকার ছিল না তেমন। কীভাবে যেন হয়ে গেছ তুমি, আমার আত্মার আত্মীয়।
তোমাকে দেখিনি। কখনো দেখার ইচ্ছাও জাগেনি মনে। চাই না দেখা হোক কখনো তোমার সাথে। জানি না কেমন তুমি। আনমনে আঁকিনি তোমার ছবি। বিধাতা জানে।
তবুও তোমাকে আপন মনে করি। কীসের ভিত্তিতে, তা জানি না। কেন এমনটা মনে হয়েছে, তাও জানি না।
শুধু জানি, আমার সুহৃদ, আপন তুমি। থাকবে চিরদিন।
অবিচ্ছেদ্য এক মানবিক বন্ধনে, কীভাবে যেন আটকে পড়ে গেছি। তোমার অস্তিত্বের সাথে।
এ নয় প্রেম, নয় ভালোবাসা কিংবা প্রচলিত ভালো লাগা। এ নয় কাছে আসার ছলনা।
এ শুধু এক সমবেদনা, সহমর্মিতার ব্যাপার। সুখ-দুখের সমঅংশনামা।
এ যেন এক সুন্দরতর ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন। অনুভবের ভাগাভাগি। প্রবল ঝড়ের মাঝে জড়াজড়ি করে, এ যেন বিপন্ন মানুষের, বেঁচে থাকার লড়াই।
তোমার সাথে কথা বলে মনে হলো, ইচ্ছা করলেই ভুলে থাকা যায়, মুছে দেয়া যায়, অস্বীকার করা যায়, জীবনের কিছু গভীরতর ক্ষত, কষ্ট আর বঞ্চনার ইতিহাস।
জীবন মানে স্বপ্নের সম্ভাবনাকে, ছুঁয়ে দেয়ার জন্য, কেবলই এগিয়ে যাওয়া। জীবনের চেয়ে দামি কিছু নাই। হোক যত ক্ষতি, থাকুক যত মন্দ অতীত; চাইলেই আমরা মুছে দিতে পারি সব।
পরিত্যক্ত পারমাণবিক প্রকল্পের মতো, ইচ্ছা করলেই আমরা, সিলগালা করে দিতে পারি, জীবনের সব গ্লানিময় অতীত।
জীবনের এই দীর্ঘ চলতি পথে, পড়ন্ত বেলায়, এই অতিক্রান্ত সময়ে, হঠাৎ করে তোমার সাথে পরিচয়।
না, বিশেষ কোনো আকর্ষণ নাই তোমার প্রতি। নাই কোনো বিশেষ অনুভব। দাবি করার মতো নাই কোনো সামাজিক সম্পর্ক।
নাই চাওয়া-পাওয়ার কোনো ব্যাপার। নাই কোনো হিসেবের দ্বন্দ্ব, অধিকার।
তবুও কী জানি কেন, এই নিঃসঙ্গ নিশীথে, মনে হচ্ছে, কত আপনার তুমি।
নির্ভর করা যায়,
নিঃসংকোচ হওয়া যায়,
বিশ্বাস করা যায়,
অকপটে বলা যায় সব কথা;
এমনই তুমি
আমার কাছের মানুষ,
অতি প্রিয় এক
একান্ত আপন জন।
[পুনশ্চ: জানি, এ লেখার কারণে, কিছু নাহক কথা, হয়ত শুনবো আমি। তবুও লিখলাম। তোমাকে জানানোর জন্য নয়।
তবুও তুমি জানো। তোমার সাথে আমার বলার মতো, দাবি করার মতো, কোনো সম্পর্ক নাই, ছিল না, হবে না কোনোদিনও।
লিখলাম তবুও তোমাকে নিয়ে। অসংগত অব্যক্ত কিছু অনুভবের, স্বাক্ষর রাখার জন্য শুধু।
অবুঝ লোকেরা, কবি ও কবিতাকে মাপে, বাস্তবের শীল-পাল্লা দিয়ে। আফসোস! হতবাক হই তাদের নির্বুদ্ধিতায়।
ভুল বোঝাবুঝির আশঙ্কায়, বহুদিন লিখি নাই, ব্যক্তিগত কথকতা। আত্মমর্যাদাবোধ ও সামাজিক সম্মান রক্ষার ভয়ে, টুঁটি চেপে ধরেছি সব অসিদ্ধ আবেগের।
তবুও হঠাৎ মানবিক ব্যর্থতা এসে, জয় করে নেয় আমাদের। ধ্বসে পড়ে সংযমের বাঁধ। খুলে যায় মনের দরজা; এমন নিঃসঙ্গ মানবিক সময়ে। গভীর রাত্তিরে।
রাত্রির একটা নেশা আছে, মায়া আছে, আছে মাদকতা। অন্ধকারের আছে নিরাভরণ, সংবরণ-কষ্টকর অকৃত্রিমতা।
এমনই এক অনিরুদ্ধ সময়ের ঘোরে, লিখে ফেললাম এই ক’টি কথা। কারো ভালোলাগার জন্য নয়, কারো মন্দ বলার অপেক্ষা করে নয়।
কালের কপোলে প্রত্যয়ের সাহসী চুম্বনের মতো, লিখে রাখলাম নির্জন-রাত্রি-জাগা সময়ের, কিছু আবেগঘন কথা। হোক তা কবিতা কিংবা পদ্য লেখা।]