ইসলাম এক ও অভিন্ন প্রকারের। তবে সেটি হল তাত্ত্বিক ইসলাম। যা রেখে গেছেন প্রফেট মুহাম্মদ (সা), অনুসরণ করেছেন সাহাবীগণ প্রমুখ। সমাজে বা বাস্তবে ইসলাম আছে ৫ প্রকারের। বলা যায়, লোক ইসলাম ৫ ধরনের। দেখুন আপনি একমত হতে পারেন কি না:

১. ইসলাম লায়াবিলিটি হিসাবে।
২. ইসলাম ঐতিহ্য হিসাবে।
৩. ইসলাম পেশা হিসাবে।
৪. ইসলাম পরিচিতি হিসাবে।
৫. ইসলাম পছন্দ হিসাবে।

১. ইসলাম লায়াবিলিটি হিসাবে – তাদের কাছে যারা জীবনের এক সময়ে মাদ্রাসায় পড়েছেন, বা ইসলামী সংগঠন করেছেন বা যাদের পরিবারে ইসলাম চর্চা হয় বা হতো; কিন্তু এখন তারা সর্বোতভাবে চেষ্টা করেন যাতে লোকে জানতে না পারে যে উনার একটা ইসলামী অতীত বা ব্যকগ্রাউন্ড আছে। অতীতের ইসলাম পরিচিতিকে লুকানোর জন্য কখনো কখনো এরা ইসলামপন্থীদের উপর খড়গ-হস্তও হয়ে থাকেন।

২. ইসলাম ঐতিহ্য হিসাবে – তাদের কাছে যারা এক সময়ে মাদ্রাসায় পড়েছেন বা পরিবারে ইসলাম চর্চা হয় বা হতো; সে হিসাবে এখনও নামাজ পড়েন, পর্দা করেন; যতটুকু সম্ভব ইসলামী অনুশাসন অনুশীলন করেন। তবে, নিজের স্বার্থকে একেবারে জলাঞ্জলি দিয়ে নয়। তাদের চিন্তা-ভাবনায় যে ইসলাম সেটি নিতান্তই ব্যক্তিগত। ইসলামের জন্য প্রয়োজনে জীবনও দিয়ে দিব– এদের মাথায় এটি কখনো আসে না। তাদের ইসলামকে বলা যায়, মুসলিম লীগ মার্কা ইসলাম।

৩. ইসলাম পেশা হিসাবে – তাদের কাছে যারা ইসলামের চাকরি করেন। যেমন- মাদ্রাসার হুজুরেরা, পীর ও তদীয় খাদেমগণ, মসজিদের বেতনভুক্ত ইমাম সাহেবানরা, বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী বিষয়াদির শিক্ষকগণ ও ইসলামী সংগঠনের ফুল-টাইমার দায়িত্বশীলগণ। প্রচলিত আছে, ইমামতির চাকরি না করলে অনেক হুজুর পাঁচ বেলা মসজিদেও যেতেন না। উনারা নিজেদেরকে ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া [নবীদের উত্তরসূরী] দাবি করেন। কিন্তু মনে করেন, তাঁদের কাছে এসে ইসলাম বুঝে নেয়া জনগণের দায়িত্ব। নবীরা মানুষের কাছে যেতেন এবং পারিশ্রমিক না নেয়ার বিষয়টিকে তাঁদের বক্তব্যের পক্ষে দাবি হিসাবে লোকদের বলতেন। [বি: দ্র: শিক্ষাদানের মাধ্যমে পারিশ্রমিক গ্রহণ বৈধ হলেও দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার জন্য কোনো প্রকারের বৈষয়িক বিনিময় গ্রহণ সম্পূর্ণ অবৈধ] এসব পেশাধারী ইসলামপন্থীরা নিজেদের জন্য রুখসত (জায়েযের সর্বনিম্ন সীমা) অবলম্বন করলেও ওয়াজ করার সময় বা হেদায়াতী বক্তব্য রাখার সময় অত্যন্ত কঠোরভাবে (নাকি নির্লজ্জভাবে?) আযীমতের (সর্বোচ্চ মান) বয়ান করেন।

৪. ইসলাম পরিচিতি হিসাবে – তাদের কাছে যারা মূলত অমুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে থাকেন। ইসলাম তাঁদের সোশ্যাল আইডেন্টিটি। এরা প্রায়শই এপলোজেটিক হয়ে থাকেন। পরবর্তীকালে এরা ইসলাম পছন্দ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হন – এমন নজির বিদ্যমান।

৫. ইসলাম পছন্দ হিসাবে – আছেন তারা যারা ইসলামকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে একমাত্র আদর্শ হিসাবে মেনে চলেন। এরা ইসলাম বুঝেন, যথাসম্ভব মানেন। এই দলের লোক আবার তিন ধরনের। চরমপন্থী, নন-অফেনসিভ চরমপন্থী ও মধ্যপন্থী।

ক. চরমপন্থী – ইসলাম তাদের চয়েস অথচ চরমপন্থী হচ্ছেন তারা যারা বোমা মেরে প্রচলিত আদালতের বিচারকদের হত্যা করতে চান। এজন্য যে, এসব বিচারক আল্লাহর আইন অনুযায়ী ফয়সালা করেন না, যেখানে আল্লাহর বাণী হল– যারা ইসলামের বিধান ব্যতিরেকে বিচার-ফয়সালা করে তারা কাফির….। আক্বীদাগত দিক থেকে এরা ইসলাম বুঝলেও বিদ্যমান সমাজে ইসলামের বাস্তবায়নের ব্যাপারে এরা অত্যন্ত দুর্বল জ্ঞান রাখেন। এরা যে কোনো ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক ও সুকুমারবৃত্তি চর্চাকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখেন।

খ. আমলবাদী – এরা কখনো নন-অফেনসিভ এক্সট্রিমিস্টও হয়ে থাকেন। ইসলামের শুধুমাত্র লোকপ্রিয় (মূলত ধর্মীয়) দিকগুলো, যেমন স্পিরিচুয়ালিটি ইত্যাদি নিয়ে এরা থাকেন। এরা ইসলামিক পিউরিটানিজমে ভোগেন। ইসলাম পছন্দ চরমপন্থী ও মধ্যপন্থীদেরকে এরা সরাসরি অন্যতম বাতিল মনে করেন। এরাও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চাকে অনুৎসাহিত করেন।

গ. মধ্যপন্থী – ইসলাম পছন্দ দলের মধ্যকার মধ্যপন্থী হচ্ছেন তারা যারা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিধানাবলীকে সামাজিক প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন করে ইসলামের বিধানাবলী সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। উনারা ইসলামী আন্দোলনের লোক। নারীদের ব্যাপারে এরা উদার মনোভাবাপন্ন, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সুকুমার চর্চাকে এরা জরুরি মনে করেন। সোশ্যাল ম্যাচুরিটি– এদের যে কোনো পলিসির মাপকাঠি হিসাবে কাজ করে। সমাজের সকল স্তর হতে লোকজন নিয়ে এই ক্যাটাগরি। আসুন এবার আত্মপর্যালোচনা করে দেখি আমি/আপনি কোন‌্ দলে?


নোট: সম্প্রতি বন্ধ  হয়ে সোনার বাংলাদেশ ব্লগে লেখাটি ইতোপূর্বে প্রকাশিত হয়েছিল। এসবি ব্লগের ওয়েব ক্যাশ লিংকে পাঠকদের কিছু কমেন্ট পাওয়া  যাবে। পড়তে  চাইলে ক্লিক করুন এই লিংকে

Similar Posts

২ Comments

  1. শ্রেণীকরণ ভালই হয়েছে।
    তবে আরেকটা গ্রুপ করা যেতো যারা নিজেদেরকেই শুধু আসল ইসলামপন্থী মনে করে বাকী সবাইকে গুমরাহ, ফিতনা বাজ, কাফের, মাজহাব পন্থী, ইত্যাদিতে আখ্যায়িত করেন কিন্তু ঘুণাক্ষরেও সমাজ, রাষ্ট্র, দেশ জাতি, রাজনিতী, অর্থনীতি নিয়ে কথা বলা তো দূরে থাক চিন্তা করাও সঠিক মনে করেন না। এমনকি বাদশাহীকেও আল্লাহ প্রদত্ত বলে মনে করেন এবং বিনা বাক্যে বাদশাহর আদেশকে সরয়ী বিধানের মতো মানতে উৎসাহিত করেন।

  2. স্যার আর একটা গ্রুপ মনে হয় বাদ আছে। যারা ইসলামকে শুধুমাত্র উৎসব হিসেবে পালন করে। যেমন, দুই ঈদে আনন্দ করা, ঈদে মিলাদুন্নবীতে রাসুল (সাঃ) এর ওফাতে খুশি হয়ে গরম গরম জিলাপী খাওয়া। পীর সাহেবের জন্মদিন, মৃত্যুদিন ওরশ পালন করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *