পাশাপাশি থাকি
সত্যি করে বললে
অতি কাছে বসবাস
তবু বহুদুর
চিন্তা-চেতনায়
যোজন যোজন ফাঁক,
অতি কাছে তবু বহুদুর।
দৃষ্টি সীমানায় নিবাস
মাঝে দুর্ভেদ্য দেয়াল
শক্ত স্বচ্ছ কাঁচের
জীবনবোধের বিপরীত স্রোতে
আমাদের নিষ্প্রাণ সম্পর্ক
নিরুত্তাপ, অথচ
ভালবাসার আবেগ ছিল উত্তাল
বহু দিনরাত্রি বছর
এখন শুধু হিসাব-নিকাশ,
পাওয়া না-পাওয়ার দ্বন্দ্ব
জীবন যেন কুরুক্ষেত্র।
থাকি পাশাপাশি
দৃশ্যত সিনসিয়ার
সব প্রয়োজন-সৌজন্যতায়
ক্ষণিকে সব ঠিক
পর মুহুর্তেই যেন সব ভুল
মনে হয় আমরা
শুধু পরিচিত।
প্রাণ-প্রবাহহীন শুধু বেঁচে থাকা
জীবনের ঘানি টেনে টেনে
যার যার মতো করে
শুধু এগিয়ে যাওয়া
অথবা,
একই বৃত্তে আবর্তন রাত্রিদিন।
নিহত প্রেমের চেয়ে শতগুণ ভালো
কোনো প্রেম না থাকা,
ফুরিয়ে যাওয়া প্রেমের চেয়ে
বহুগুণ ভালো প্রেম না হওয়া,
বিরহই ভালো
নিরানন্দ মিলনের চেয়ে,
হারিয়ে যাওয়া মধুরতর
অনুভূতিহীন কোনো প্রাপ্তির চেয়ে।
প্রেমের পরাজয়
হয় হোক
ক্ষতি নাই,
চাই শুধু জীবনের জয় …
২.
যাদের জন্য জীবন বাজি রেখেছিলাম
ছিলাম যাদেরই একজন
তেমন এক সুহৃদ
বলেছিলেন, আজ আসবেন
কথা বলবেন, গল্প করবেন
অনেক দিন পর এক কাপ চা খাব
আমরা একসাথে।
না, তিনি আসেন নাই
সময় পান নাই
ততটা অর্থবহ বলে মনে হয় নাই
তাঁর কাছে
পুরনো এক সাথী কিংবা
প্রাক্তন এক ‘আপনে’র সাথে
একটা নিষ্কর্ম বিকেল কাটানো।
বিশেষ করে যখন
সময় মানেই নগদ অর্থ
যেন তাঁরা আধুনিক কালের সফিস্ট
আমাদের মতো তো
সবাই ‘বেকার’ নন …
এখনো বোকা-সোকা নন তাঁরা
যথেষ্ট হিসাবী
সফল, দুনিয়া আর আখেরাতে।
আমাদের মতো আবেগিদের
দুনিয়া তো গেছেই
বহু আগে
বাকীটা আল্লাহর রহমতের ওপর
শুধু ভরসা।
সারাদিন ছিলাম অপেক্ষায়,
এত ভালাবাসা আমার জন্য
শুধু মুখে মুখে
দেখা হলে যেন দরদ উথলে উঠে
আমাদের মতো মাঠ-কর্মী
বলতে পারেন, কর্মী-মার্কা নেতাদের জন্য
তাঁরা হেদায়তী ভাষণে গদগদ
সামনে পড়ে গেলে
এমন ভাব দেখান যেন জান-উজাড়
এরপর, নিজ নিজ স্বার্থ-চক্র নিয়ে তুমুল ব্যস্ত
যেন ‘অর্থহীন’ একটা বিকাল
ঘুরে বেড়ানোর কথা ছিল না
যেন এমন ‘বেহুদা’ কাজে
তারা সময় ব্যয় করেন নি কখনো
যেন তাদের জীবনে
এমন ‘বেহিসাবি’ সময় আসেনি কখনো
যেন এমন ‘ছন্নছাড়া’ কারো অস্তিত্ব
তাদের জীবনে ছিলো না কোনদিন।
আমার মতো বোকারাই শুধু
গোষ্ঠী স্বার্থের রাজনীতিকে
আদর্শের সবকিছু আর
সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলন মনে করে
জীবনপার করে
একপর্যায়ে এসে তারা
সম্বিৎ ফিরে পান
সতীর্থ সহযোদ্ধাদের সম্পর্কে
হতাশায় ভুগেন।
নিজের সঠিক অবস্থান সম্পর্কে
অবশেষে বুঝতে পারেন
অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে
বাস্তবতার ভিন্ন রূপ দেখে
বিমূঢ় হয়ে পড়েন
ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে যায়
অনিবার্য ক্ষোভে অসহায়ের মতো
নিজেকে পরিত্যক্ত বোধ করেন।
অবশ্য যত বড়ই হোক না কেন
যে কোনো পরাজয়ের চেয়ে
জীবন অনেক বড়।
সময়, কখনো কারো জন্য
একেবারে ফুরিয়ে যায় না।
৩.
পাঠক
এই দীর্ঘ পূণশ্চ পড়েই বুঝেছেন
এটি বিশেষ কোনো নারীকে
উদ্দেশ্য করে লেখা
বিরহ-রচনা নয়। জীবনের
কিছু তিক্ত উপলব্ধি।
যোগ্য না হলে ততটুকু ভালবাসা
কখনো দিতে যাবেন না
কারো কাছে
জীবন-যৌবন সমর্পনের আগে
বুঝে-শুনে এগুবেন।
কিছু কিছু আবেগ
ফিরিয়ে নেয়া যায় না
কিছু কিছু প্রেম
জীবনভর তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়।
যেমন, আদর্শবাদিতার খই ফুটানো
বাকপটু নেতাদের
স্বার্থপরতার বেদীতে
তারুণ্য উজাড় করে
আদর্শের জন্য
আমার ফানা হয়ে যাওয়া।
মৃত্যু পথযাত্রী অসুস্থ বাবা,
পৌঢ় অসহায় মা,
ছোট ছোট ভাইবোনদের
উপেক্ষা, প্রাকারান্তরে অস্বীকার করে
মাতালের মতো ‘ময়দানে’ পড়ে থাকা।
যেন এখনি সব করে ফেলতে হবে
বিপ্লব যেন এসে পড়লো বলে …
যদিও বিপ্লব আজ সুদুর পরাহত
বিপ্লবের স্বপ্ন আজ গণতন্ত্রের নামে
লেজুড়বৃত্তির চোরাবালিতে সমাহিত
দেখতে পাচ্ছি না আশপাশে
এককালীন বিপ্লবীদের কাউকে
সবাই আজ নিজপন্থী
আত্মপ্রতিষ্ঠার ‘ক্যারিয়ার বিপ্লবে’ মশগুল
কেউ প্রকাশ্যে কেউবা ফাঁকতালে
নানান পদ-পদবীর আড়ালে।
তাই, সাবধান
আদর্শ এক ওয়ান ওয়ে রোড
বর্তমানই বিপ্লবের একমাত্র ক্ষেত্র নয়
দৃষ্টির সীমানাতেই গন্তব্য, এমনও নয়।
বিপ্লবের পথ দীর্ঘ
অথবা অন্তহীন।
বিপ্লব এক নিরন্তর প্রচেষ্টার নাম
বিপ্লব একশ’ মিটারের
দৌড় প্রতিযোগিতার ব্যাপার নয়
এ যেন দশ হাজার মিটারের প্রতিদ্বন্দ্বিতা
তাই, দেখে-শুনে চলবেন
লক্ষ্যপাণে স্থির
ধীরে কিন্তু জোর কদমে।
বড় কথা হলো
সব ক্ষতির পরেও জীবন অ-নে-ক বড়
সব কিছু হারানোর পরও যা থেকে যায়
তাও অনেক বেশি
নীতি, আদর্শ আর বিবেকের স্বচ্ছতা নিয়ে
আপোষহীন বেঁচে থাকাই বড় কথা
ন্যায়ের উপর টিকে থাকার চেয়ে
কঠিনতর কিছু নাই
ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার চেয়ে
বড় কোনো বিপ্লব নাই
বিশ্বাস করুন
এক একটা দিন, এক একটা কাজ
যেন এক একটা বিপ্লব
সত্য-ন্যায়ের উপর অটুট থাকা সাপেক্ষে।
এটুকু বুঝেছি আলবৎ
এই স্বোপার্জিত মননে
জীবনের অপার আনন্দ নিয়ে
এতকিছুর পরেও তাই
বেঁচে আছি ভালোভাবে।
চাই শুধু
আপন আলোয় পথ চলতে
প্রতিটা মুহুর্তে বেঁচে থাকতে,
জীবনের বৃহত্তর ক্যানভাসে
অর্থবহ সময়ের অনির্বচনীয় অনুভবে …