আমি একজন মৃত মানুষ। হয়েছে সারা অন্তিম স্নান। পড়েছি কাফনের পোশাক। হয়েছে সমাপন শেষ প্রার্থনা। এখন শুধু দাফনের অপেক্ষা।
যেই পৃথিবীকে ভাবতাম আমার, এখন দেখি সেই পৃথিবী আমি ছাড়া সকলের। তোমাদের পৃথিবীতে আমি এক মৃত শরীর। অন্তরাল হওয়ার অপেক্ষায় পড়ে থাকা এক সজ্জিত মরদেহ।
না, আমি এখনো মরিনি। মৃত মানুষের মতো যদিও আমার জীবন। যার সাধ নাই। নাই জীবনকে নতুন করে সাজাবার মতো সামর্থ্য, সময়। ভাগ্যের কাছে যে কিনা অসহায়। সমর্পিত।
তোমাদের চোখে আমি জীবিত। জীবিত মানুষের মত ঘুমাই। জেগে উঠি। করি খাদ্যগ্রহণ। মিলিত হই সৌজন্য সাক্ষাতে। পরিজনের পরিচয়ে ব্যবহৃত হই প্রিয়জন হিসেবে। বাহ্যত আমি সুপ্রতিষ্ঠিত। সুখী।
অন্তর্গত জীবনে আমি ভীষণ দুঃখী, মাঝে মাঝে আপ্লুত হই এমন অনুভবে। যেখানে নেই কোনো পরিচয়, নেই সামাজিক সম্পর্কের কোনো বাধকতা, সেই একান্ত পরিসরে, মৃত মানুষের মতো আমি জনপরিবেষ্টিত অথচ ভীষণ একা।
আমি যেন প্রাগৈতিহাসিক যুগের এক অধিবাসী। যেন লোকালয়ে ফিরে আসা এক অদৃশ্য কবরবাসী। চেনাজানা পৃথিবীতে নিজেকে আবিষ্কার করি প্রত্যহ, প্রতিটি প্রভাতে, যেন আমি আগন্তুক অনাহুত এক পূর্বতন নাগরিক।
তবুও ভাগ্যবান মনে করি নিজেকে। পেয়েছি সুযোগ নিজেকে সংশোধন করে নিতে। শরীরী মৃত্যুর আগে পেয়েছি যেটুকু সময়, তা কাজে লাগাতে চাই। এখন থেকে নিজের ভালটাই দেখব শুধু, বাঁচবো শুধু নিজের জীবনে।
কেন জানি মনে হয় নিজেকে নিজে, যেন আমি বিগত সময়ের মানুষ। এ পৃথিবী যেন নতুন সব মানুষের। আমার চেনাজানা সেই পৃথিবী, কোথায় যেন হারিয়ে গেছে।
সব আছে। নাই শুধু আপন করে নেয়ার সেই অনুভূতি। সময়টুকু যেন হারিয়ে ফেলেছি। নতুন এই পৃথিবীতে নিজেকে বোধ করি অপাংক্তেয়, বিস্মৃত, পরিত্যক্ত এক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামীর মতো যার জীবন কর্তৃপক্ষীয় অজানা সময়ের ক্ষণগণনায় সীমিত।
এই মধ্যরাতের মতো মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি যেন নাই হয়ে গেছি। যেন আমি সমাহিত হওয়ার অপেক্ষায় থাকা এক কাফন পরানো লাশ …! আমিহীন এই জগত জানি সুখ শান্তিতে থাকবে ভরপুর।
এরকম কত রাত-দুপুর অতিক্রান্ত হবে প্রেমিক যুগলের। তুমুল সুখে। শুধু থাকবো না আমি। আমার না থাকায় হ্রাসবৃদ্ধি হবে না কারো সুখ দুঃখের। তাই তো চাই বেঁচে থাকতে শুধু নিজের জীবনে। সুখী হতে চাই নিজের মতো করে আপন ভুবনে।
Thank you!!1