পৃথিবীতে মানুষের ধর্ম একটাই হলো না কেন? স্রষ্টাই যে নবী ও গ্রন্থ প্রেরণ করেছেন তার গ্যারান্টি বা প্রমাণ কী? প্রচলিত সব ধর্মই আসলে মানুষের বানানো।

এই ধরনের কথাবার্তার সমস্যা কী, তা দেখিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে এই ভিডিওতে। বিশেষ করে ফিলসফিকেল এপ্রোচে যদি আপনার আগ্রহ থেকে থাকে তাহলে দেখতে পারেন।

মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

আব্দুল কাদের জিলানী: এই যে সূরা ফাতিহতে একটা লাইনের অর্থ, ‍“আমাকে সহজ সরল সঠিক পথ দেখান” (ইহদিনাস সিরাতুল মুস্তাকিম) আল্লাহ তা’লা তো এখানে তার কাছে সহজ সরল এবং সঠিক পথ প্রার্থনা করার জন্য বলেছেন। তাহলে মিথ্যা না বলা, চুরি না করা ইত্যাদি এমন এথিক্সের কাজগুলো যদি মানুষকে ভালোর পথে রাখে, আর এই নীতির কথাগুলো যদি সব ধর্ম-ই বলে থাকে, তাহলে সঠিক ধর্ম বলতে শুধু ইসলামকে কেনো নন-মুসলিমরা মানতে যাবে?

আরেকটা বিষয়, ড. জাকির নায়েকের লেকচারে দেখলাম, তিনি হিন্দু ধর্মের গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছেন, যেখানে বলা হয়েছে, শেষ নবী হবে মোহাম্মদ, তার পিতার নাম, মাতার নাম জন্মস্থান ইত্যাদি। আমার প্রশ্ন হলো, হিন্দু ধর্মে যদি এটা বলাই থাকে, তার মানে হিন্দু ধর্মও সত্য বিষয়টা এমন দাঁড়ায়। কারণ সত্য না হলে তারা কীভাবে জানবে শেষ পয়গম্বর এর ব্যাপারে! আর যদি সত্যিই হয়ে থাকে তাহলে কি, তারা যে ভগবান কৃষ্ণ বলে যাকে জানে, আমরা কি ধরে নিবো, তিনিও নবী ছিলেন?

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‌‍“তোমরা ইসলামে প্রবেশ করো পরিপূর্ণভাবে।” সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান দিয়েও আমরা বুঝতে পারি, আগাগোড়া ও পরিপূর্ণ সত্যই মূল সত্য। অনেকখানি সত্য, সত্য নয়। মিথ্যা মানে এর মধ্যে খানিকটা সত্যের সংমিশ্রণ। সে জন্য আল্লাহ বলেছেন, ‍“তোমরা সত্যের সাথে মিথ্যার সংমিশ্রণ ঘটিয়ো না।”

কিছু সাধরণ মানবিক নৈতিকতার বিষয়ে সাযুজ্য হলেই সে দু’টি বিষয় এক হয়ে যায় না। বরং হয় এক ক্যাটাগরির। আপনি যে মানুষকে ভালবাসেন তার সাথে জগতের বাদবাকী মানুষদের এত এত মিল থাকা সত্বেও আপনি আপনার ভালবাসার মানুষটিকেই অনুসন্ধান করেন।

বলাবাহুল্য, বিশ্বজনীন কোনো ধর্ম ও আদর্শ নাযিল হবে বা উৎপত্তি লাভ করবে কোনো না কোনো লোকালিটিতে। পরবর্তীতে তা সমগ্র মানব জাতির মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে। এটাই যুক্তির কথা। আল্লাহ তো বলেছেন, যুগে যুগে প্রত্যেক জনপদে তিনি নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। কোরআনে যে সব নবী রাসূলদের কথা উল্লেখ আছে তারা আরব ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের। তাই আমাদের অঞ্চলের কোনো নবী রাসূলের কথা সেখানে উল্লেখ করা নাই।

যেসব ধর্মের প্রেরিত পুরুষদের কথা কোরআনে উল্লেখিত হয়েছে তাদের জন্যেও তাদের প্রেরিত পুরুষের অনুসরণ না করে শেষ নবী মুহাম্মদকে (স.) অনুসরণের কথা বলা হয়েছে। কারণ, পূর্ববর্তীদের শিক্ষার সারাংশই কোরআনে বলা হয়েছে। যেমনটি একজন পাঠক বলেছেন, পূরবর্তী এডিশন বাদ হয়ে যায় সর্বশেষ সংস্করণ প্রকাশিত হওয়ার পরে। আগের এডিশনগুলো তখন শুধু রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমনটা ডা. জাকির নায়েক বলেছেন বলে আমার মনে হলো।

Iftekhar Shishir: যদি বলা হয় God is a concept আর Religion হলো সেই concept-কে implement করার গাইডলাইনস, সেই ক্ষেত্রে আমাদের যুক্তি কী হবে? (আমাদের mean ধর্ম ও সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসীদের)

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: প্রাথমিকভাবে ব্যাপারটা তো তাই। খোদা আছেন এটা প্রাইমারিলি একটা ধারণা মাত্র। আমরা যারা বিশ্বাসী তারা এ ধারণাটাকে যেকোনো বাস্তবতার চেয়ে অধিকতর বাস্তব ও সঠিক বলে মনে করি।

Naeem Hasan: আপনি এক কমেন্টে বলেছেন, ‌‍“বিশ্বজনীন কোনো ধর্ম ও আদর্শ নাযিল হবে বা উৎপত্তি লাভ করবে কোনো না কোনো লোকালিটিতে। পরবর্তীতে তা সমগ্র মানবজাতির মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে।”

প্রশ্ন হলো: সমগ্র মানবজাতি বলতে কী বুঝব? যদি ইসলামের কথাই ধরি, ইসলাম কি সমগ্র বা অধিকাংশ মানুষের মাঝে ছড়াতে পেরেছে? রাসূলের (স.) বিদায়ের সময় এটা ছিল মক্বা-মদীনার কয়েক লাখ মানুষের ধর্ম। পরবর্তীতে অনেক বিস্তৃত হলেও কখনোই অধিকাংশ মানুষের কাছে পৌঁছায় নাই। দেড় হাজার বছর পর বর্তমানে মুসলমানের হার বলা হয় ২২% এবং এটাই সর্বকালের সর্বোচ্চ। এ’ব্যাপারে আপনার মতামত আশা করছি।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আমি বলতে চেয়েছি, কোনো তত্ত্ব, মত বা আদর্শ বিশ্বজনীন হয়ে ওঠার এটাই পদ্ধতি। অর্থাৎ প্রাথমিকভাবে তা কোনো লোকাল এরিয়াতে, কোনো লোকাল ভাষায়, কোনো লোকাল অভিজ্ঞতার আলোকে গড়ে ওঠবে। এরপরে ক্রমান্বয়ে তা ব্যাপকতর পরিসরে ছড়িয়ে পড়বে।

কেন কোনো একটা নির্দিষ্ট জনপদে, নির্দিষ্ট একটা ভাষায়, একটা সার্বজনীন তত্ত্ব বা আদর্শ প্রাথমিকভাবে প্রকাশিত বা প্রচারিত হয়, তা ব্যাখ্যা করার জন্য এই কথাগুলো।

এগেইন, লোকাল বিষয়গুলোই স্বীয় গুণে এক সময়ে গ্লোবাল হয়ে ওঠে। প্রথমেই কোনো কিছু গ্লোবাল হয়ে নাযিল হয় না। মানবীয় যে কোনো কিছুর জন্যেই এটি প্রযোজ্য। ইসলাম এর ব্যতিক্রম নয়।

Naeem Hasan: জবাবের জন্য ধন্যবাদ। আমি জানতে চেয়েছি হাজার বছরের ইতিহাসে কোনো ধর্ম/আদর্শ বিশ্বজনীন হয়ে উঠেছে কিনা। কোনো ধর্মই এককভাবে ৩০% মানুষও গ্রহণ করেনি – আবার প্রতিটি ধর্মের মাঝেই উপদলীয় বিভক্তি আছে। তাহলে বিশ্বজনীন ধর্ম বা আদর্শ বলতে আসলেই কিছু আছে কিনা।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আপনি সত্যতা এবং কোয়ালিটিকে যদি সমর্থনের শতকরা হিসেবে মাপতে চান, তাহলে সম্ভবত ভুল করবেন।

Naeem Hasan: তাহলে বিশ্বজনীনতার মাপকাঠি কী হবে?

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: quality, sound argument, consistency, conceptual broadness, holistic attitude etc.

লেখাটির ফেইসবুক লিংক

Similar Posts

২ Comments

  1. = শুশূংখল সমাজ ব‍্যবস্থায় মানবজাতির ভবিষ্যত প্রজন্মকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই এতো ধর্ম যা প্রায় সবগুলোই লৌকিকতায় ভরা।
    = একমাত্র স্বতসিদ্ধ জ্ঞানের মাধ্যমেই লৌকিক-অলৌকিকতার পার্থক্য বোঝা সম্ভব। আর তা থেকেই সঠিক ধর্ম খুঁজে পাওয়া অবশ্যই সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *