প্রচলিত ফিকাহ অনেক বেশি পরিমাণে কর্তৃত্ববাদী ও একমুখী। এতে ইসলামী শরীয়াহর বৈচিত্রময়তার অনুপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। অপরদিকে শিক্ষিত ইসলামপন্থীদের প্রচলিত ফিকাহকে যথাসম্ভব উপেক্ষা করে সুন্নাহ চর্চার হালনাগাদের উঠতি প্রবণতার উদাহরণ হলো সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ না মেনে ঔষধের লেভেল পড়ে ডিসপেনসারী হতে ঔষধ কিনে খাওয়ার মতো! প্রচলিত ফিকাহপন্থীরা ফিকহী সিদ্ধান্তের ভিত্তি হিসাবে নবুয়তী নির্দেশনা তথা হাদীসের রেফারেন্সগুলোকে জনসমক্ষে তুলে না ধরে শুধুমাত্র মাজহাবী ইমামদের রায়কে জোর করে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। অপরদিকে কিছু রাজকীয় প্রতিষ্ঠান ফারেগ আলেম ক্যামেরার সামনে বসে সুযোগ পেলেই বলে বসছেন, অমুক প্রচলিত (ফিকহী রায়ভিত্তিক) আমলের পক্ষে হাদীসের কোনো রেফারেন্স আমার জানা নাই। ইত্যাদি। আমার পর্যবেক্ষণ যদি ভুল না হয়ে থাকে তাহলে একথা বলা যায়, বাংলাদেশের মিডিয়ায় ইসলামী প্রশ্নোত্তর পরিচালনাকারীদের অতি বিপ্লবী মনোভাবপ্রসূত ফিকাহবিরোধী বক্তব্যের মাধ্যমে আধুনিক শিক্ষিতদের মধ্যে এ ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, মাজহাবের নামে প্রচলিত অনেক কিছুই ফকীহদের কল্পনাপ্রসূত!

শুরুতে যেটি বলেছি, মাজহাবী দৃষ্টিভঙ্গির যে নমনীয়তা ও বৈচিত্রতা আছে সেটিকে তুলে না ধরে ফিকাহর কিতাবের অথরিটিকে অন্ধভাবে প্রতিষ্ঠিত করার বিদ্যমান প্রবণতার প্রতিক্রিয়ায় সুন্নাহর নামে বর্তমানের এই প্রান্তিক অবস্থান। বলা হচ্ছে, স্পষ্ট হাদীস তো আছে। তাহলে তদনুযায়ী আমল করবো না কেন? কিন্তু সংশ্লিষ্ট স্পষ্ট হাদীসের বিকল্প এমনকি বিপরীত হাদীসও যে আছে বা থাকতে পারে সেটি তারা ভাবেন না। হাদীসভিত্তিক যেসব বই বের হচ্ছে তাতে মন মতো তথা বাহ্যত প্রচলিত প্রথাবিরোধী চমকপ্রদ হাদীসগুলোকে বেছে বেছে গ্রন্থিত করা হচ্ছে। অধুনাসৃষ্ট মিডিয়া-ইসলামিস্টরাও লোকদেরকে হাদীসের মূলগ্রন্থ পড়ার জন্য তাগিদ দেন না, অন্তত তেমন করে দেন না।

শুধুমাত্র সহীহ হাদীস পেলেই হবে না। তৎসংক্রান্ত অপরাপর সহীহ হাদীসগুলোকেও বিবেচনায় এনে আমলের তরীকা ঠিক করতে হবে। যেটি হচ্ছে ফিকাহর কাজ। তাই, ফিকাহ ছাড়া সু্ন্নাহর অনুসরণ অসম্ভব। ফিকাহর রেফারেন্স ছাড়া সুন্নাহভিত্তিক যেসব ফায়সালা দিচ্ছেন তা সবই কোনো না কোনো মাজহাবের অনেক পুরনো মাসয়ালা। অভিজ্ঞজনেরা এ বিষয়ে ভালো জানেন।

আচ্ছা, এখন তো আর হাদীস জালকরণ হচ্ছে না। সংকলন তো প্রথম কয়েক শতাব্দীতেই শেষ। এমনকি জাল হাদীস চিহ্নিতকরণও হয়ে গেছে বলা যায়। একটি মাত্র ডিস্কে কোরআন-হাদীস ও ফিকাহর উল্লেখযোগ্য সব কিতাব পকেটে নিয়ে লোকেরা ঘুরে বেড়ায়। ‘শামেলা’ ইত্যাদির কথা বলছি। তাহলে মাজহাব, ফিকাহ ও সু্ন্নাহ নিয়ে কেন এতো বিতর্ক? এক্সপার্টাইজ আর স্পেশালাইজেশনের এই যুগে তাকলীদ ইজ এ মাস্ট। কিন্তু সেটি হতে হবে ইস্যুভিত্তিক ও সাময়িক। পুরনো যুগের টোটাল তাকলীদ মনে হয় এখন অচল।

Besides its fundamental tenets, Islam has sustained and will prevail for its flexibility and pluralism.

বিশেষ দ্রষ্টব্য: শুনেছি, শাহ ওয়ালীউল্লাহ (রহ) সব মাজহাবকে একীভূত করতে চেয়েছিলেন। আমরা কি সেটি করতে পারি না? অন্তত সে মোতাবেক চলতে পারি না?

এসবি ব্লগ থেকে নির্বাচিত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

লাল বৃত্ত: মাজহাব এনালাইসিস করে সুন্নাহের অনুসরণ আসলেই খুব জরুরি একটি বিষয়। এর জন্য জ্ঞানীদের একত্রিত একটি প্লাটফর্ম খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার শেষ প্রশ্নটি চমৎকার। কিন্তু সব মাজহাবকে একত্রিত করতে হলে আলেমদের অহংকারী মনোভাব ত্যাগ করতে হবে। কিন্তু তা এক প্রকার অসম্ভব দৃশ্যমান হয়। কি মাজহাবী আলেম, কি লা মাজহাবী– সবার ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য।

অনেকদিন পর আপনার লেখা পেলাম ভাইয়া। ধন্যবাদ।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: সব মাজহাব একীভূত করা বা সব মাজহাবকে নিয়ে একসাথে চলা– দুটো একই কথা। প্লুরালিজম। মূল লেখাটি ইংরেজিতে লেখা। তাই বাংলা সংস্করণটা সুবিধার হয়নি।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

Salam: যদিও সমসাময়িক কোনো বিষয় সামনে আসলে মানার ক্ষেত্রে এভাবেই চিন্তা করি। কিন্তু মডার্ন ফিকাহর মূলভিত্তি হিসেবে এই নীতি সার্বজনীনভাবে প্রযোজ্য হতে পারে, এভাবে কখনো চিন্তা করিনি। অসাধারণ একটা আইডিয়া পেলাম। হ্যাটস অফ!

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: শুকরান।

মূল পোস্টের লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *