একটা লেখার মূল বিষয়টা কী, সেটি যদি স্পষ্ট না হয় তাহলে বলতে হবে সংশ্লিষ্ট লেখাটি ব্যর্থ, একটা অর্থহীন ভাষাগত পণ্ডিতিমাত্র। সেজন্য লেখার শুরুর দিকে মেইন পয়েন্টটা কী, সেটা নিয়ে clear cut ধারনা দিয়ে দিতে হবে। আমি যেটা করি সেটা হলো, লেখার শুরুতেই মূল কথাটা বলে দিই।
তো, লেখার মূল কথাটা যদি শুরুতেই বলে দেয়া না হয় তাহলে অন্তত পক্ষে উপসংহারে হলেও এই লেখাটার মূল বিষয়টা কি সেটা স্পষ্ট করে দেওয়া উচিত। যদি তা করা না হয় তাহলে তা হবে বুদ্ধিবৃত্তিক অসততাপ্রসূত অর্থহীন কিছু তথ্য ও তত্ত্বের collection মাত্র।
নিজের কথাকে শেষ পর্যন্ত পরিষ্কার না করে পাঠককে একটা ঘোরপ্যাঁচের মধ্যে রেখে দেওয়া হচ্ছে উত্তরাধুনিকতাবাদ বা পোস্ট মর্ডানিজম এর কমন বৈশিষ্ট্য। সেজন্য আমি যেসব বুদ্ধিবৃত্তিক ধারাকে অপছন্দ করি তার যদি একটা তালিকা করি তাহলে সেই তালিকার শীর্ষে থাকবে পোস্ট মর্ডানিজম বা উত্তর আধুনিকতাবাদ। অভিজ্ঞতায় দেখেছি এসব উত্তরাধুনিকতাবাদিরা নিজেরাও জানে না যে আসলে তারা কী বলতে চায়। শেষ পর্যন্তও তাদের অবস্থান অনির্ণেয় থেকে যায়।
postmodernism বা উত্তরাধুনিকতাবাদ হলো ontologically self-refuting। কেননা, “কোন কিছুর ঠিক নাই” – এই কথাটাকে কিন্তু স্বয়ং ঠিক হতে হয়। যদি তা হয় তাহলে সেটার অবস্থা কারো এমন দাবি করার মতো, “আমি বেঁচে নাই”। স্পষ্টত এটি স্ববিরোধী তথা self-refuting।
মানুষ মনে করে, কোন লেখার মধ্যে অনেক বেশি উদ্ধৃতি, অনেক তথ্য, ব্যাপক খোঁচাখুঁচি, অনেক তত্ত্বের সমাহার, এটা ওটা নিয়ে লম্বাচওড়া অনেক কথাবার্তা থাকা, এগুলো হলো কোনো একটা লেখা সমৃদ্ধ হওয়ার লক্ষণ। তাদের দৃষ্টিতে এধরনের লেখক একজন মস্ত বড় জ্ঞানী ব্যক্তি। ব্যাপারটা কিন্তু আসলে তা নয়।
সবচেয়ে ভারী কথাটা অত্যন্ত সহজভাবে বলা যায় বা বলা উচিত। যে কথাটা সহজে বুঝিয়ে বলা যায় না সেটি আদৌ কোনো গুরুত্বপূর্ণ কথা নয়। জগতের অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে আমরা কোনো ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই জানতে পারি। অভিজ্ঞতায় দেখেছি, জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষাগুলো আমরা অত্যন্ত সাধারণ অভিজ্ঞতা থেকেই অর্জন করতে পারি। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে আমরা যা জানি বা যে সকল দক্ষতা আমরা অর্জন করি তা আমাদের জীবন চলার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞানের ক্ষুদ্রতর অংশমাত্র।
অন্যভাবে বললে, সাধারণ কান্ডজ্ঞান দিয়েই আমরা জীবন ও জগতের অন্তর্নিহিত সত্যতা, ন্যায্যতা ও ন্যায়-নীতি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভ করতে পারি। জানতে পারি কোনটি ভালো, কোনটি মন্দ। বাদবাকি যা কিছু জ্ঞান তা হলো ডাক্তারি পড়া, প্রকৌশলবিদ্যা শিক্ষা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাবজেক্টে উচ্চশিক্ষার নানা বিষয়। এগুলো টেকনিক্যাল এন্ড practical তথা applied ধাঁচের ব্যাপার। এই অর্থে, জগৎ ও জীবন সম্পর্কে আমাদের অর্জনযোগ্য জ্ঞানের বিষয়গুলো হলো নিতান্তই সহজ সরল উপলব্ধির ব্যাপার। the basic truths of life and reality are more simplistic and easy to understand. those are clear to follow, accessible to all and customisable in either situation.
এতক্ষণ ধরে যেসব কথা বলা হলো তার সারমর্ম হচ্ছে, ভালো লেখক হচ্ছেন তিনি যিনি মানুষের কাছে জীবন ও জগতের সামগ্রিক বাস্তবতা সম্পর্কে স্বচ্ছ, সঠিক ও সুসামঞ্জস্য ধারণা উপস্থাপন করতে পারেন। এ প্রসঙ্গে মুদ্রার অপর পিঠ এর চিত্র সম্পর্কেও আমাদের ধারণা থাকা দরকার। আমরা জানি, অনিচ্ছুক ঘোড়াকে জোর করে পানি পান করানো যায় না। তেমনি করে সত্যকে বুঝতে ও মানতে অনিচ্ছুক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীদেরকেও সত্য অনুধাবন করানো ও বাস্তবতা বোঝানো অসম্ভব। রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে রোগী যেমন প্রথম ডাক্তার তেমনি করে কোনো লেখার মর্মার্থ বুঝার জন্য পাঠকের ন্যূনতম আগ্রহ ও প্রস্তুতি থাকাটা পূর্ব শর্ত।
সমাজে জ্ঞানীগুণী বুদ্ধিজীবী হিসেবে যারা পরিচিত তারা সাধারনত মনে করে, সাধারণ মানুষ বোঝে না। আসলে সাধারণ মানুষরা প্রকৃতি-প্রদত্ত স্বজ্ঞাত ক্ষমতা দিয়ে মূল ব্যাপার টুকুর অনেকখানিই যে বুঝে, এটাই বুদ্ধিজীবীরা বুঝে না। এমনকি সাধারণ মানুষ নিজেরাও নিজেদের অন্তর্গত এই জ্ঞানগত সক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন থাকে না। বুদ্ধিজীবীদের হম্বিতম্বি দেখে উল্টো তারা মনে করে, গাদা গাদা তথ্য ও অনেক কথার ঘোরপ্যাঁচ পার না হতে না পারলে কারো পক্ষে সঠিক জ্ঞান লাভ করা দুরূহ ব্যাপার। অথচ, সঠিক জ্ঞান পেতে হলে জাস্ট স্বচ্ছ ও সংবেদনশীল একটা মন থাকাই যথেষ্ট।
Muhammad Ishrak-এর লেখার প্রেক্ষিতে এবং সমর্থনে।