পর্ব-১
৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭
কেন ও কীভাবে শিবিরে যোগদান
আমি ছিলাম একরোখা, একগুঁয়ে, অতি সরল, আত্মভোলা ও চঞ্চল প্রকৃতির একজন পড়ুয়া তরুণ। নামাজ পড়তাম না। এমনকি জুমার নামাজও না। তবে পড়াশোনা করতাম। মনে পড়ে, ক্লাস সেভেনে থাকতেই ‘দেনা পাওনা’ পড়ে ফেলেছিলাম। ক্লাস ফোর-ফাইভ থেকেই একটানা পড়তাম। অবশ্য তা পাঠ্য বহির্ভূত। যে কোনো কিছু।
ভাবলাম, কিছু ইসলামী বইও পড়ি। কী মনে করে যেন একদিন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার আগে সেই সময়ে ধনিয়ালা পাড়ায় অবস্থিত ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পুস্তক বিক্রয় কেন্দ্রে গিয়ে প্রায় দুই হাজার টাকার ইসলামী বই-পুস্তক কিনে নিয়ে আসি। ইসলামী বই পড়া সেই থেকে শুরু। বড় আপার বিয়েতে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক দশ পারা করে তিন খণ্ডে প্রকাশিত কোরআনের একটা অনুবাদ গ্রন্থও উপহার পড়েছিলো। অজু ছাড়াই সেখান থেকে মাঝে মধ্যে এবরাপ্টলি কিছু কিছু পড়তাম। একাকী হাঁটতাম। আর ভাবতাম।
নতুন পাড়া এলাকার পার্শ্ববর্তী সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আড্ডা দিতাম। সেখানকার জামায়াতের কিছু লোকের সাথে আমাদের মাঝে মধ্যে বাকবিতণ্ডা হতো। গ্রুপের ‘প্রধান তাত্ত্বিক’ হিসাবে আমি এসব বিতর্কে নেতৃত্ব দিতাম। সেসবের ডিটেইলস নিয়ে অন্য সময়ে কথা বলা যাবে। তুমুল জামায়াত বিরোধিতার এক পর্যায়ে ‘বিকল্প চিন্তা’ আমার ওপর প্রভাব বিস্তার করতে থাকলো। সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দিবো। সময়টা ১৯৮৫ সালের মাঝামাঝি। তখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হইনি।
সেখানকার একজন কর্মচারী রবিউল ভাই একদিন জোহরের নামাজের পর ল্যাবরেটরি মসজিদের ইমাম ও স্থানীয় জামায়াতের দায়িত্বশীল লিয়াকত ভাইয়ের কাছে আমাকে নিয়ে গেলেন। বললেন, ‘ডাক্তারের ভাই তো জামায়াত করতে চায়।’ লিয়াকত ভাই চবিতে পড়াশোনা করার সময় উত্তর জেলা শিবিরের দায়িত্বশীল ছিলেন। তিনি আমাকে বাসায় নিয়ে গেলেন। প্রাথমিক কিছু কথাবার্তার পর বললেন, ছাত্রদেরকে তো জামায়াতে নেয়া হয় না। তাদের জন্য সমআদর্শের একটা সংগঠন আছে। আমি চাইলে তাদের সাথে তিনি আমাকে পরিচয় করিয়ে দিবেন। এভাবে শুরু।
একান্তই আত্ম-অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে আমি ইসলামী ছাত্রশিবিরে যোগদান করি। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, সহপাঠী ও এলাকার মধ্যে আমিই প্রথম ‘ইসলামী আন্দোলনে’ যোগ দেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর ১৯৮৬ সালের শুরুর দিকে আব্বার চিকিৎসার সুবিধার্থে আমরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিপরীতে পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার একটা ভাড়া বাসায় উঠি। সেখানে চবির আরো দুজন সিনিয়র ছাত্রের সাথে মিলে শিবিরের কর্মী হই। ৮৬’র শেষের দিকে শাহজালাল হলের ৬/১-এ নিজের সিটে উঠি।
১৯৮৭ সালে শিবিরের সাথী হই। ১৯৮৮ সালে সদস্য হিসাবে শপথ নেই। ১৯৯২ সালে শিবির হতে বিদায় নিয়েছি। ১৯৯৩ সালের শেষের দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসাবে যোগদান করি। আমি কখনো জামায়াতের রোকন না হলেও ১৯৯৪ সাল হতে বরাবরই একনিষ্ঠ কর্মী ছিলাম।
[প্রিয় পাঠক, হতে পারে পরবর্তী কোনো পর্বে আপনার সম্ভাব্য প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। তাই এখনি এনগেজ না হয়ে ৮ পর্বের পুরোটা পড়ে শেষ করা পর্যন্ত ধৈর্য্য ধারণ করার অনুরোধ করছি। প্রতিদিন একটা করে পোস্ট দেয়া হবে, ইনশাআল্লাহ। এই এক সপ্তাহ এই সিরিজের কোনো মন্তব্যে আমি রেসপন্স করবো না। ৯ম দিন পুরো বিষয়টা খোলাসা হবে। ভালো থাকুন।]
ফেসবুকে প্রদত্ত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Shahadat Hossain: I started learning al Quran with you at Suhrawardy hall and you were our tajbid teacher (1987-1989). I always remember you when I read al-Quran. May Allah grant you.
Umme Salma: সালামl আপনার deconstructive লেখা পড়ার অপেক্ষায় রইলাম। প্রশ্ন ১. এটা কি দু:সহ স্মৃতিচারন? ২. পড়ন্ত বিকেলের আফসোস? ৩. সময়ের সাহসী বৈপরীত্য? ৪. কৈফিয়ত?
*****
পর্ব-২
৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭
জামায়াতের সাথে ছাড়াছাড়ি কীভাবে হলো –
কর্মজীবনের প্রথম দশকে শিবির-স্টাইলে দায়িত্বশীলদের যে কোনো কথাকে চূড়ান্ত মনে করতাম। পরবর্তীতে নানা কারণে এই আস্থায় ফাটল ধরে। এক পর্যায়ে মনে হলো, “আমার নামাজ, আমার কোরবানী, আমার জীবন, আমার মৃত্যু– সব কিছু আল্লাহর জন্য”– এই আয়াতের আলোকে সংগঠনকে যেভাবে ভেবেছি, ইসলামী আন্দোলন হিসাবে এই সংগঠন অন্তত এখন আর সেই মানে নাই। তারপরও নিয়মিত কাজ করতাম।
এর পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায়, বিশেষ করে ব্লগে, লেখালেখি শুরু করলাম। ভেবেছিলাম আমার লেখালেখি নিয়ে এখানকার সহ-দায়িত্বশীলদের মধ্যে আলোচনা হবে। সংগঠন সংশোধন হবে। কেন্দ্রের অবস্থা যা-ই হোক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংগঠনকে অন্তত ব্যতিক্রমী হিসাবে গড়ে তোলা যাবে।
এজন্য প্রতিটা লেখাকে প্রিন্ট করে জামায়াতের নেতৃস্থানীয়দের মধ্যে বিতরণ করতাম। মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে জটলা পাকিয়ে আড্ডা দিতাম। কোনো বাসায় বা ক্লাবের সামনের মাঠে গোল হয়ে চেয়ারে বসে কথাবার্তা বলতাম। আমার বাসায় কেউ আসে নাই, খাওয়া-দাওয়া করে নাই বা আমি কারো বাসায় যাই নাই, বা কারো বাসায় গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করি নাই– এমন কোনো দিন আমার যায় নাই। একটা কনসেপ্ট গ্রুপ গড়ে তোলাই ছিলো এসবের উদ্দেশ্য।
না, এটি হয় নাই। অনিচ্ছুক ঘোড়াকে জোর করে পানি পান করানোর ব্যর্থতার মতো আমার এই পাগলামিপূর্ণ মানসিকতারও একদিন অবসান হলো।
২৯ মার্চ, ২০১২ তারিখে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জামায়াতের মূল দায়িত্বশীলদের কাছে ব্যক্তিগতভাবে আমি নিম্নোক্ত পরামর্শ লিখিতভাবে (হুবহু উদ্ধৃত) পেশ করেছিলাম:
“১. সাংগঠনিক নেতৃত্ব: তথাকথিত বিশেষ কমিটিকে সাংগঠনিক রূপদান করা অথবা একে কার্যকরভাবে বিলুপ্ত করা এবং সভাপতি ও সেক্রেটারীসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীলদের মধ্যকার টিম-স্পিরিট আরো বৃদ্ধি করা।
২. সহযোগী সংগঠনের সাথে সম্পর্ক: সহযোগী সংগঠনকে আদর্শিকভাবে সহযোগিতা করা সত্বেও কোনোক্রমেই তাদের নিয়ন্ত্রণকারী হিসাবে চিহ্নিত না হওয়া।
৩. সাদা দলের সাথে সম্পর্ক: ‘জাতীয়তাবাদী জামায়াতে ইসলামী’ ধরনের মন-মানসিকতার শিক্ষকরা এবং বিএনপির জাময়াতনির্ভর শিক্ষকগণ না চাওয়া সত্বেও সাদা দলকে জামায়াত-বিএনপির একটা জোট হিসাবে গড়ে তোলা উচিত।
নির্বাচনের পরিবর্তে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে বিএনপির সকল গ্রুপের প্রতিনিধিত্বমূলক নেতৃত্বকে (সাদা দলের স্টিয়ারিং কমিটিতে) একোমোডেইট করা।
নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ার মতো পরিস্থিতিকে যথাসম্ভব পরিহার করা।
৪. ময়দানে সময় দান: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক পর্যায়ের জনশক্তি, সাংগঠনিক স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে যথেষ্ট দুর্বল হওয়া সত্বেও বিদ্যমান জনশক্তিকে যথাসম্ভব একটা উই-ফিলিংয়ের মধ্যে আনতে হবে। এ জন্য দায়িত্বশীল পর্যায়ের শিক্ষকদেরকে সাংগঠনিক বৈঠকাদির অতিরিক্ত হিসাবে কর্মী-সমর্থকদের সাথে ব্যক্তিগতভাবে মিশতে হবে।
সাধারণ শিক্ষকদের সাথে ক্লাব, লাউঞ্জ ইত্যাদি কমনপ্লেইসে মেলামেশা করতে হবে। নিজেদেরকে সব সময়ে ব্যস্ত দেখানোকে পরিহার করতে হবে।
৫. অ-রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড: উর্ধ্বতন সংগঠনের তল্পীবাহকের ভূমিকা পালনের বর্তমান ত্বরীকা হতে বের হয়ে এসে একটি পরিপূর্ণ ইসলামী আন্দোলন হিসাবে সংগঠনকে গড়ে তুলতে হলে নানামুখী অ-রাজনৈতিক তথা একাডেমিক, কালচারাল ও সোশ্যাল কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হবে।
এজন্য জনশক্তির পটেনশিয়্যালিটি বিবেচনা করে তাদেরকে কাজে লাগাতে হবে।”
এগুলো বাস্তবায়ন তো দূরের কথা, এ নিয়ে কোনো আলাপ-আলোচনা করার গরজও তাঁরা অনুভব করেন নাই। এমনকি দুজন সহ-দায়িত্বশীল অভিযোগ করেন, আমি নাকি এসব ‘সাংগঠনিক পরামর্শ’ সংবলিত লিখিত কাগজ জনশক্তির মাঝেও বিতরণ করেছি!
আসলে আমি প্রায়ই বিভিন্ন রিলেটেড ম্যাটেরিয়াল প্রিন্ট করে পরিচিতদের মাঝে বিলি করতাম। দেখতে অনুরূপ কোনো কাগজ সম্পর্কে কেউ তাঁদেরকে হয়তোবা কিছু বলেছেন।
যা হোক, আমার তীব্র প্রতিবাদের মুখে বেশ কিছুদিন পরে মূল দায়িত্বশীল একজন সহযোগীকে নিয়ে আমার রুমে এসে জানালেন, তারা আপত্তিকারীদের অভিযোগের সত্যতা পান নাই। আমার দাবি ছিলো, এ নিয়ে পূর্ণাঙ্গ মিটিংয়ে আলোচনা হতে হবে। বরাবরের মতোই, এ বিষয়ে একটা পর্যালোচনা সভা করার মতো সময় তাঁরা শেষ পর্যন্তও পান নাই। পুরো বিষয়টাতে আমি ভীষণভাবে হতাশ হই।
জামায়াতের কেন্দ্রের উপর আমার আস্থা অনেক আগেই উঠে গিয়েছিলো। চট্টগ্রাম মহানগরী আমীরের সাথে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলার পর থেকে তাঁদের উপর থেকেও আমার আস্থা উঠে গিয়েছিলো।
কখনো ভাবি নাই, তিন দশক একটানা কাজ করা এই ময়দান, অর্থাৎ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীলেরাও কেন্দ্র বা মহানগরীর দায়িত্বশীলদের মতো সম-জড় প্রকৃতির হবেন। এক পর্যায়ে এটি রিয়েলাইজ করলাম, এই ময়দান ও আমি– পরস্পরের প্রতি আমরা অলরেডি একজস্টেড! অতএব, অগত্যা নতুন পথ চলার সক্রিয় চিন্তাভাবনা…।
ফেইসবুকে প্রদত্ত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Zabir Ibn Haian: জামায়াতের সবচেয়ে বড় সমস্যা, তারা তাদের বুদ্ধিজীবি ও কর্মীদের মতামতের কোন গুরুত্বই দেয় না! বরং তাদেরকে যে কোন উপায়েই হোক কোণঠাসা করে রাখার চেষ্টা করে। ফলে, চোখে পড়ার মতো এদের বুদ্ধিজীবি নাই বললেই চলে
Abubakar Siddique: মোহতারাম, আসসালামু আলাইকুম। মাদ্রাসা লাইনে ইসলামী শিক্ষার মুল ধারা এখনও দেওবন্দ। যদিও তাদের প্রচুর ঘাটতি আছে। তাদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে। কিন্তু তারা যে পরিমান আলেম পয়দা করেছে অন্য কেউ তাহা পারেনি। ইসলামী আন্দোলনের মাঠে জামায়াত অনেকটা সেরকম চরিত্রের। তাহা না হলে বহুত আগে জামায়াত ভাইংগা মুসলিম লীগ, খেলাফত, নেজামে ইসলাম সহ ব্যক্তিকেন্দ্রীক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে পরিনত হতো। জামায়াতকে জামায়াতের স্থানে থাকতে দিন। জামায়াতের কট্টর অবস্থান থাকা জরুরী। তুরস্কে নাজিম উদ্দিন আরবাকানের তৈরী ভিত্তির উপর এরদোগান একটা ভিন্ন কৌশলে লিবারেল আদলে আজকের জায়গায় এসেছেন। ঐ নাজিম উদ্দিন আরবাকেনের মুল ধারার সাথে এরদোগানের বিরোধ-সংঘাত-বিচ্ছেদ বা ৩৬০ ডিগ্রীতে আবস্থান নিতে হয়নি। লিবারেল-মডারেট কল্যান রাষ্ট্র চিন্তা-চেতনা-কর্মকৌশল জামায়াতের বাইরে গিয়েই করতে হবে। জামায়াত এমন একটা চিন্তা করলেও মনে হয় ভিন্ন নামে করতে পারে। কর্মি-নেতা তৈরীর বর্তমান প্রক্রিয়া যত সহজ হবে তত সহজ মরন হবে। জামায়াত আসলে জামায়াতের গতিতে চলবে। দেশের গতিতে চলতে হলে ভিন্ন নামে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্ম আরো বেশী গতিশীল করা যেতে পারে। এটা জামায়াত ভেবে দেখতে পারে ।
Kazi Barkat: স্যার, সময় হয়ত অনেক কিছুর উত্তর বলে দিবে, তবে হতাশ হওয়া যাবে না। হয়ত আপনার লেখা অনেক সুন্দরের সৃস্টি করবে, ভাবনার জগৎ প্রসারিত করবে। সেদিন আপনার লেখা বেশি স্বার্থক হবে। Go ahead sir.
Nurul Afsar: গঠনমূলক সমালোচনার দরজা উম্মুক্ত-অবারিত থাকা উচিৎ। আমরা ইসলামের খাদেম। মসজিদ যেমন আল্লাহরর ঘর মালিক নেই বা মালিক আল্লাহ, তেমনি ইসলামী আন্দোলনের/ইসলামী প্রতিষ্ঠানের (সহায়-সম্পদ, জনশক্তি, ইতিহাস, ঐতিহ্য) ও কোন মালিক নেই, সবাই কর্মী বা খাদেম। কেউ নিজেকে মালিক ভাবলে তিনি তাঁর একার এবং আমাদের সবার ক্ষতি করছেন, প্রকারান্তরে ইসলামেরই ক্ষতি করছেন। আল্লাহ আমাদের সবাই কে প্রজ্ঞা দিন, ধৈর্য দিন, ক্ষমা করুন। আমীন।
Ariful Islam Murad: বুদ্ধিজিবিতা একটা বাওতাভাজি, শিক্ষকরা নিজেকে ভিন্ন মানুষ মনেকরে, মোজাম্মেল স্যার শিবির জামাতকে পচন্দ নাও করতে পারে, জামাত শিবির করা ফরজ না।
উনি যত সহজে এটা ওটা বলেন, বাস্তবতা ভিন্ন, আল্লাহ আমাদেরকে মুনাফেক ছিনার সুযোগ করে দিয়েছেন।
Salim Uddin: এই সব কি PUBLICLY বলার বিষয় জনাব
মাসুকুর রহমান: কেন নয়
Salim Uddin: শুভাকাংকি হলে অবশ্যই PULICLY বলার কথা নয় ।
আচ্ছা ভাই ধরেন কারও বাবা ঘুমাচছেন তো হঠাৎ দেখতে পেলেন বাবার কাপড় একটু উঠে গেছে তখন ছেলের কি করা উচিত? চিৎকার করে মানুষকে জানান দেয়া যে আমার বাবার কাপড় উঠে গেছে আমার বাবার কাপড় উঠে গেছে! নাকি চুপিসারে কাপড়টা ঠিক করে দেয়া??
Abu Yousuf: এখন নিজেদের মধ্যে জগড়া করার সময় নয়। কাজ করবে দশজনে সুবিধা পাবে সকলে এটা হলো বাস্তবতা। জামাত-শিবির কোন সময় ভুল করতে পারে তা কিনতু সংশোধন করতে হবে। ভালো কথা, ভালো কাজ, ভালো চিনতা ইত্যাদি পালন করা অনেক কঠিন কাজ। প্রয়োজনে যদি শুকরের গোশত খাওয়া হালাল হয় তাহলে সমাজে চলার জন্য কোন খারাপ কাজ করা কিনতু দোষের কিছু নেই। অার সব লোক অাললাহর কথা মানবে বা অাললাহর অাইন পালন করবে তা কিনতু সঠিক নয়। যদি একজন খারাপ কাজ করে তাহলে অারেকজন ভালো লোকের জন্য সুবিধা একটু বেশি।কেননা প্রত্যেক লোককে তার কৃতকর্মের জন্য নিজেকে হিসেব দিতে হবে। অামার কর্মের জন্য অামার বাবাকে জাহান্নামে দিবে না।
Mohammad Abu Tayeb: I understood you. You shouldn’t do that. At least you should be thankful to them because they showed you siraatul Mustaqeem.
Maeen Uddin: সংগঠন তো মানুষ দ্বারাই পরিচিত হয় তাই ভুল ত্রুটি স্বাভাবিক। এজন্য সংশোধনের দরকার হলে ফেসবুকের আশ্রয় নেয়া ঠিক নয়, আপনি একজন বিজ্ঞ জন, একটু গভীর ভাবে চিন্তা করুন।………আপনার দ্বিমত থাকতেই পারে। আপনারা চেতনার বাতিঘর তাই একটু ধৈর্য্য ধরুন…….।
Abu Masud Nurullah: আমার বাক্তিগত অভিমত হল জামাতকে বদলানোর আগে ভাবতে হবে এর আদর্শিক ভিত্তি কি? জামাতের আদর্শিক ভিত্তি আবর্তিত হযেছে সায়ীদ আবুল আলা মওদুদীর চিন্তা চেতনাকে কেন্দ্র করে। এর বাইরে এসে oinno কোন রুপরেখার বেপারে চিন্তা গবেষণা আজ পর্যন্ত করতে সমর্থ হয়নি
কামাল আদ-দীন: কতো ষড়যন্ত্রই চলছে জামায়াতো কিন্তু এগিয়েই চলছে
Monir Zulfiker: আমার প্রশ্ন হল আপনি বর্তমানে কি করছেন? আপনাকেতো অনেক সচেতন মনে হচ্ছে, তাহলে আপনি কেন এর চেয়েও উত্তম একটি জামায়াত তৈরী করছেন না। সমাজ এমনিহেই বহুদা বিভক্ত আর বিভেদ না করাই ভাল।
Mohammad Syedul Azad: আপনার মতো এমন ভাবনা এখন অনেকের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। আদর্শের চাইতে ক্ষমতার মোহে ঠিকে থাকা জরুরী এমন ভাব অনেকের মধ্যে।
Md Abdul Hannan: প্রফেসব সাহেব ৯৪ সাল থেকে ২০১২ পর্যন্ত একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন। ২০১৩ সালে বিদায় নিলেন। ১৮ বছর কর্মী ছিলেন, রোকন হতে পারেনি কেন? কর্মী পর্যায়ে থেকে বিদায় নিয়ে এমন লেখালেখি আমি এই প্রথম দেখলাম।
Hoq Reza: লেখাগুলোতে আবেগ আছে ভালোবাসা আছে।চিন্তার সৃজনশীলতা আছে।
*****
পর্ব-৩
৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭
বিকল্প ভাবনার বহিঃপ্রকাশ: সমাজ ও সংস্কৃতি অধ্যয়ন কেন্দ্র (সিএসসিএস)
২০১২ সালটা এক প্রকার দোটানায় কাটে। ২০১৩ সালের শুরুর দিক হতেই জামায়াতের সাংগঠনিক দায়িত্ব ও পরিচয়কে সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে স্বাধীন ও স্বতন্ত্রভাবে বর্তমান ফরম্যাটে ‘সমাজ ও সংস্কৃতি অধ্যয়ন কেন্দ্র’ নামে পুরোদমে কাজ শুরু করি।
অন্যরা না করুক, অন্তত আমি নিজে করণীয় কাজটুকু যতটুকু সম্ভব করি– এই ধরনের মাইন্ডসেটের ফলে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন, সংগঠন, সমাজ, সংস্কৃতি ও রাজনীতি এসব নিয়ে আমার চিন্তাভাবনার নিজস্ব প্লাটফর্ম হিসাবে ‘সমাজ ও সংস্কৃতি অধ্যয়ন কেন্দ্রের’ প্লাটফরমে বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ শুরু করি।
২০০১ সাল হতে ২০১২ সাল পর্যন্ত সিএসসিএস-এর কাজকে জামায়াতের কাজের সম্পূরক বা বিকল্প হিসাবেই ভাবতাম। এই নাম আমারই ঠিক করা। শুরু থেকে আমিই ছিলাম সিএসসিএসের উদ্যোক্তা ও সবকিছু। এ কাজে প্রফেসর ড. আবু সালেহ ও প্রফেসর আবদুন নূর ছিলেন আমার অভিভাবকতুল্য।
সিএসসিএস-এর উদ্যোগে ২০০২ সালের মে মাসে প্রফেসর ড. শমসের আলীকে প্রধান অতিথি করে দিনব্যাপী একটা সেমিনার অনুষ্ঠান করেছিলাম। যাতে প্রফেসর ড. জামাল নজরুল ইসলাম সস্ত্রীক পুরো সময়ে উপস্থিত ছিলেন এবং আলাদা দুটি সেশনে বক্তৃতাও করেছিলেন। পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামপন্থী ডানমনা সব ক’জন শিক্ষক এতে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
একই মাসে ফরেস্ট্রি ইনস্টিটিউটে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ও ভিডিও ক্যামেরা ব্যবহার করে যে সেমিনার ও ফিল্ম শো করেছিলাম, তাতে অংশগ্রহণের জন্য পুরো ক্যাম্পাসে সাড়া পড়ে গিয়েছিলো।
সিএসসিএসের কর্মকাণ্ডের বিবরণ দেয়ার জন্য এই লেখা নয়। যখন জামায়াতের কাজকর্মে অন্তঃপ্রাণ ছিলাম তখনও যে আমি বুদ্ধিবৃত্তি চর্চাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতাম, তা বুঝার সুবিধার্থে এসব বলা।
জামায়াত ও সিএসসিএস কখনো পরস্পর নির্ভরশীল বা একাকার ছিলো না।
আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগে কলা অনুষদ ভবনে চবি দর্শন বিভাগের ৩২০ নং কক্ষে একটা সেমিনার আয়োজন করেছিলাম। যাতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছিলেন গণিত বিভাগের প্রফেসর ড. আবুল কালাম আজাদ স্যার। প্রফেসর ড. মুঈনুদ্দীন আহমদ খান, প্রফেসর ড. শব্বির আহমেদ, প্রফেসর ড. আবু সালেহসহ ডিপার্টমেন্টের সব শিক্ষক সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এতে তৎকালীন নবনির্বাচিত কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর আহমেদ জামাল আনোয়ারকে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছিলো। অনুষ্ঠানের ভিডিও আমার কাছে আছে। তখন প্রফেসর ড. এ.কে.এম. শামসুর রহমান ছিলেন চবি দর্শন বিভাগের সভাপতি।
বুদ্ধিবৃত্তি চর্চার পাশাপাশি সংস্কৃতি চর্চার উপরও আমি প্রথম থেকেই জোর দিয়েছিলাম।
যখন চবিতে স্যাটেলাইট টিভি নেটওয়ার্ক ছিলো না, তখন নিতান্ত ব্যক্তিগত উদ্যোগে দক্ষিণ ক্যাম্পাসের ৩নং বিল্ডিংয়ের ছাদে ১৪ ফুট ব্যাসের একটা ডিশ এন্টেনা বসিয়েছিলাম।
দক্ষিণ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন বাসার সামনের বাগানে ফোটা ফুলের ভিডিও ধারণ করে ‘ক্যাম্পাস ফ্লাওয়ার্স’ নামে একটা ডকুমেন্টারি তৈরি করেছিলাম, যেটি পূর্ব ঘোষণা দিয়ে পুরো ক্যাম্পাসে ডিসপ্লে করা হয়েছিলো।
২০০৫ সালে চবি সেন্ট্রাল লাইব্রেরি অডিটোরিয়ামে তিন দিনব্যাপী ইরানী চলচ্চিত্র অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলাম, যার উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন ইরানী কালচারাল অ্যাটাশে।
এর আগে ২০০৩ সালে সমাজবিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের প্রতিবাদে সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরোধী চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করেছিলাম।
সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড উপলক্ষ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেন, এমন প্রত্যেক ডানমনা জাতীয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে আমি আমার বাসায় হোস্ট করেছি।
আমার বেসিক স্যালারি যখন ২৮‘শ পঞ্চাশ টাকা, তখন ইসলামী ব্যাংক হতে লোন করে ৭০ হাজার টাকায় কম্পিউটার কিনেছিলাম, যে টাকা দিয়ে তখন পার্শ্ববর্তী পাহাড়িকা আবাসিক এলাকায় দুই গণ্ডা জায়গা কিনতে পারতাম। নিজস্ব ভিডিও ক্যামেরা, সাউন্ড সিস্টেম ও ডিজিটাল ক্যামেরা কিনেছিলাম এসবের প্রচলন হওয়ার অনেক আগে। আজ পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত আছে। সব সময় সর্বশেষ প্রযুক্তির ব্যক্তিগত ব্যবহারকারী হয়েছি।
আমার বাসায় থাকা বইপত্র ও ইলেকট্রনিক ইকুইপমেন্টগুলো ছাড়া আমার কোনো সম্পদ বা অর্থবিত্ত নাই। তরুণদের মাইন্ডসেটকে জানা, বুঝতে পারা, তাদের আস্থা অর্জন করা, বিশ্বকে জানা ও ইতিবাচক পদ্ধতিতে সমাজ পরিবর্তনের জন্য কাজ করা– এসবই ছিলো আমার মোটিভ। এখনও পুরো বিষয়কে আমি এই দৃষ্টিতেই দেখি।
ফেইসবুকে প্রদত্ত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Masuk Pathan: আমরা এর অনেক কিছুর সাক্ষী স্যার। আপনার পথচলা বেগবান থাকুক। আর শমশের স্যার, জামাল নজরুল ইসলাম স্যার, সালেহ স্যারের সে অনুষ্ঠানের ভিডিওটা দেখার খুব ইচ্ছা জাগছে।
Mohammad Ala Uddin Miazi: I were one of the silly activists of these programs and I always influenced our manpower in the positive cultural activities.
Abdul Awal Mamun: Muzammel bhai, your write up made me nostalgic. You are indeed the great pioneer of this noble and unique initiative which inspired a lot of students like me. Video of little Muzahid with your video camera in CU Campas, still a milestone for me. Now I am a little TV producer in UK. And surely my basement is your CSCS.
I can still remember the editing software ‘pinnacle’ bought from IDB computer city, Dhaka. You are still a mentor to me. May Allah accept your all the hard work.
Abu Raihan Al Masud: আমিও ছিলাম ফরেস্ট্রির আনোয়ার ভাই এর সাথে
Nurul Afsar: আল্লাহ আপনাকে সর্বোত্তম কল্যাণ ও যাযাএ খায়ের দান করুন। আমি ছোট সমর্থক, কর্মী ও একনিষ্ঠ দর্শক ছিলাম সবকিছুরর।
Abu Maliha: জনাব আপনার তুলনায় আমরা অনেকেই কম জানি, তবু বলতে চাই পিছিয়ে যাবেন না দয়া করে, দেশের একজন শ্রেস্ট আলেম এর মুখ থেকে একটা কথা শুনেছি সরাসরি যে “আমরা অনেক জেনে বুঝেই জামায়াতে ইসলামী তথা ইসলামী আন্দোলন করছি জাহান্নামে যাওয়ার জন্য নয়” আর “জাতির সৌভাগ্যবান শ্রেষ্ট সন্তানরাই শিবির, জামায়াতে আসার তৌফিক লাভ করে।”
*****
পর্ব-৪
৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭
CIDS, IRF, Pansophy: আমার কয়েকটি ‘ব্যর্থ‘ উদ্যোগের বয়ান –
ইসলাম নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী সতীর্থদের সবাই কোনো না কোনো উদ্যোগের সাথে থাকুক, এমনটা চেয়েছিলাম। সেজন্য কয়েকজন সহকর্মীকে উদ্বুদ্ধ করে ‘সেন্টার ফর ইন্টারডিসিপ্লিনারি স্টাডিজ’ (সিআইডিএস) নামে একটা ফোরাম গড়ে তুলি। তাদেরকে দিয়ে কয়েকটা ডিসকাসশন মিটিংও করাই।
‘করাই’ বললাম এ জন্য যে, আমার রুমে আমার পক্ষ হতে আপ্যায়নসহ সব খরচ বহন করে এসব প্রোগ্রাম করা হতো। প্রোগ্রামের বিষয় এবং তারিখ আমাকে ঠিক করে দিতে হতো। এসব প্রোগ্রাম চলাকালীন আমি শুধুমাত্র পার্টিসিপেন্ট হিসাবে উপস্থিত থাকতাম। চেয়েছিলাম, তারা ধীরে ধীরে স্বনির্ভর হয়ে উঠুক।
না, শেষ পর্যন্তও তা হয় নাই। দেখা গেলো, এসব তাদের কাছ অবসর সময় চর্চার ব্যাপার মাত্র। সিরিয়াস কিছু না।
এরই মাঝে ‘ইসলামিক রিসার্চ ফোরাম’ (IRF) নামে একটা বিকল্প ফোরাম গড়ে তোলার চেষ্টা করি। সেটিরও বেশ কয়েকটা মিটিং ইত্যাদি হয়। এই ফোরামের নামে কয়েকটা সেমিনারও আয়োজন করেছিলাম। এটিও CIDS-এর মতো যতক্ষণ আমি সক্রিয় থাকি ততক্ষণ কিছুটা চলে, যখন আমি নাই, তখন এর কোনো পালস নাই, এমন হয়ে দাঁড়ায়।
দেখলাম, এখানকার আলেম পর্যায়ের শিক্ষকগণও নিজেদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ‘নবীদের উত্তরাধিকারী’ দাবি নিয়ে যতটা সোচ্চার, ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া’র দাবি অনুযায়ী স্বতঃস্ফূর্তভাবে কর্মতৎপর হওয়ার ব্যাপারে ততটাই অনাগ্রহী। উনাদের নিয়ে অধিকতর অগ্রসর হতে গেলে ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। নিজে মাদ্রাসা শিক্ষিত না হওয়ায় নানা বিষয়ে তথ্য জানার জন্য আলেমদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার তাগিদে উনাদেরকে আর ‘বিরক্ত’ করার সাহস পাই নাই।
তারপর কিছু একটা করার তাগিদে চবি দক্ষিণ ক্যাম্পাসে একটা দোকান ভাড়া করলাম। ভেবেছিলাম বইয়ের দোকান করবো। দোকানের নাম (প্যানসফি), লোগো, খাম, রশিদ বই, চালান বই, সিল ইত্যাদি যা যা লাগে সব জোগাড় করলাম। পরিকল্পনা ছিল একজন ফুলটাইম বিক্রয়কর্মী ও ছাত্রদের মধ্য থেকে একজন খণ্ডকালীন গবেষণা সহকারী নিয়োগ দিবো।
ফ্যাকাল্টি আওয়ারের পরে দোকানে বসে সেই ছাত্রকে নিয়ে লেখালেখি-অনুবাদ এসব করাবো। এর আগে বাংলা বিভাগের এক ছাত্রী প্রায় দু’বছর আমার গবেষণা সহকারী হিসাবে কাজ করেছে। আমার ছেলে সন্তান নাই। দুটো মেয়ে। তখন বাসার গ্যারাজে গড়ে তোলা বর্তমান সেটআপও ছিলো না।
তো, তেমন নির্ভরযোগ্য কাউকে পেলাম না। এভাবে এগারো মাস যাওয়ার পরে সংগৃহীত সব বইপত্র, ইকুইপমেন্ট ইত্যাদি বাসার গ্যারাজে স্থানান্তরিত করে পড়ালেখায় আছে এমন স্থানীয় দুই সহোদর ভাইকে কর্মচারী হিসাবে নিয়োগ দিলাম। বাংলা-ইংরেজি টাইপ শেখানো ছাড়া তাদেরকে দিয়ে কাজের কাজ তেমন কিছুই হলো না।
বেশ কয়েক মাস পর কয়েকজন ছাত্র আমার সাথে দেখা করতে আসলো। তারা ব্লগে আমার লেখা পড়েছে। সব শুনে তারা খণ্ডকালীন গবেষণা সহকারী হিসাবে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করলো। তাদের মধ্য হতে তিনজনকে নিয়ে বর্তমান ধারায় সিএসসিএস-এর যাত্রা শুরু।
শেষ পর্যন্তও আমি জামায়াতের সাথে থাকতে চেয়েছি। যে জীবন ও আদর্শবোধের কারণে এ আন্দোলনে শরীক হয়েছিলাম, জীবনবাজী রেখে কাজ করেছি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াত-শিবিরের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে গড়ে উঠেছি, সেই জীবন ও আদর্শবোধের অনিবার্য আকর্ষণেই স্বতন্ত্র ধারায় এই নতুন পথ চলা।
সংগঠন ও আদর্শের দ্বন্দ্বে আমি আদর্শকেই বেছে নিয়েছি।
সফলতা, ব্যর্থতা বা অতীত কর্মকাণ্ডের সম্ভাব্য কোনো ভবিষ্যৎ পরিণতি, এক কথায় কোনো কিছুকেই আমি বড় করে দেখছি না। সময়ের দাবী ও দায়িত্ব পালনকেই আমি মুখ্য বিষয় হিসাবে দেখছি।
বর্তমান প্রজন্মের সুন্দর এক আগামীর জন্য জীবনের বাদবাকি সময় স্বাধীনভাবে কাজ করে যেতে চাই।
ফেইসবুকে প্রদত্ত মন্তব্য–প্রতিমন্তব্য
Ahmed Reza: জনাব, আসসালামু আলাইকুম, সংগঠন ও আদর্শের দ্বন্দ্বে আমি আদর্শকেই বেছে নিয়েছি – যদি বিস্তারিত আলোচনা করতেন, অনেক কিছুই পরিস্কার হতো, ধন্যবাদ।
Mohi Uddin: কঠোর সাংগঠনিক নিয়ম-কানুন এবং অন্ধ আনুগত্যের মধ্য দিয়ে জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের যেভাবে গড়ে তোলা হয় তাতে শেষ পর্যন্ত মোসাহেব ধরণের কিছু জড়-জীব ছাড়া আর কিছু হতে পারে না তারা। জনগনের নেতা হওয়াতো দুরের কথা নিজ দলের বাইরে কোন মানুষ বা বিষয়াদি নিয়ে তারা চিন্তা করার যোগ্যতাও হারায়। ফলে এদের দিয়ে সৃজনশীল কোন কাজ কখনোই সম্ভব না।
Rashedul Islam: স্যার আপনার লেখাগুলো পড়ছি, এই প্রথম প্রশ্ন, আপনি লিখেছেন, “সংগঠন ও আদর্শের দ্বন্দ্বে আমি আদর্শকেই বেছে নিয়েছি।” তার মানে কি স্যার, সংগঠন ও আদর্শ পরস্পর সাংঘর্ষিক?
ওছমান গনি ফরহাদ: শুকরান স্যার, আপনার যথেষ্ট আবেগ ছিল। তা কেউ মূল্যায়ন করে গ্রহণ করতে পারেনি। সত্যি আপনি উম্মাহ দরদী।
Md Tairiful Islam Bijoy: স্যার জামাতে ইসলামি ও শিবিরের কাজকে কি আপনার আনাদর্শিক মনে হয়?
Mohammad Mozammel Hoque: না।
Md Tairiful Islam Bijoy: আমি যদি ইসলামি আন্দোলন করতে চাই তাহলে আমার প্রতি আপনার উপদেশ কি……
Mohammad Mozammel Hoque: ইসলামী মতাদর্শের আলোকে সামাজিক আন্দোলন: ইসলামী আন্দোলন
Md Tairiful Islam Bijoy: স্যার জামায়াত চাড়া অন্য ইসলামিক দলগুলোর ক্ষেত্রে আপনার মতামত কি……
বাংলাদেশের ইসলামি আন্দোলনের ক্ষেত্রে জামাত- শিবিরকে অন্যদের উদার মডারেট ও আদর্শবাদি বলে মনে হয়…..
একরামূল হক শেখ: পড়বো পড়বো করে পড়াই হচ্ছিল না। যদিও পুরোটা পড়িনি তবে ৩/৪ টি পড়লাম। আসলে আবেগ ও অতীতের সাফল্যের ধারাবাহিক চর্চায় আমাদের মধ্যে একটা এমন ভাব চলে আসে যে, আমরা ছাড়া আর সবাই তো বাতিল। ফলে সফলতার হকদার কেবল আমাদেরই । এটা শুধু জা. ই. নয় ইসলামপন্থী প্রায় সব দলের একই অবস্থা। নিয়মমেনে বৌদ্ধিক চর্চার পরিসর নেই বললেই চলে।এর বাইরে আছে নিজেদের আদর্শ মাওলানা ও নেতা। তাকে মান্য করেও বর্তমানকালের শ্রেষ্ঠ ইসলামি পণ্ডিতদের আমল দেওয়া আমাদের অভ্যাসে নেই। কারণ হয় আপনি আমাদের নাহলে ……। এখানে ধূসর বলে কোনও কিছুই নেই। হয় সাদা না হয় এক্কেবারে কালো। আপনার আলোচনায় সমৃদ্ধ হয়েছি।ভালো থাকুন।
*****
পর্ব-৫
৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭
শক্তিশালী বিকল্প জনপরিমণ্ডল গড়ে তোলার তাগিদেই আমার এই রাজনীতি-নিরপেক্ষ বুদ্ধিবৃত্তিক অবস্থান –
বুঝতেই পারছেন, ব্যক্তি বা সংগঠন বিশেষের চেয়ে আমি নৈতিকতা ও আদর্শবোধকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি।
বর্তমান সরকারের সাথে জামায়াতের চলমান চরম বৈরী সম্পর্কের সাথে আমার জামায়াত ত্যাগের কোনো সম্পর্ক নাই। ব্যাপারটা কাকতালীয়। যারা আমাকে জানেন, অন্ততপক্ষে উপরের দেয়া সংক্ষিপ্ত বিবরণকে যারা ভালোভাবে খেয়াল করবেন তারা বুঝবেন, নীতিগত বিরোধের কারণেই আমার এই স্বতন্ত্র পথ চলা।
কোনো কিছু পাওয়া না পাওয়ার ধার আমি কখনো ধারি নাই। আমি সেই চরিত্রের লোক নই। আমি যা সঠিক মনে করি, তা-ই আপহোল্ড করি।
“অনেকেই রাজনৈতিক, ধর্মীয় কিংবা সাংস্কৃতিক দিক থেকে কোনো না কোনো সংগঠনের সাথে জড়িত। তৎসত্ত্বেও কিছু সৎ ও চিন্তাশীল ব্যক্তি আমাদের সমাজে আছে যারা কোনো দল বা সংগঠনের সাথে জড়িত নয়।
আমাদের পর্যবেক্ষণে, এই সংখ্যাটি দেশের মোট জনগোষ্ঠীর আনুমানিক শতকরা ১০ থেকে ২০ ভাগ। এরাই হচ্ছে সিএসসিএস-এর উদ্দীষ্ট ব্যক্তিবর্গ (target people)”।
– সিএসসিএস’র পরিচিতি হতে সংকলিত।
এই উদ্ধৃতি থেকে বুঝবেন, সত্যিকার অর্থে একটা নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করার কোনো বিকল্প আমার হাতে ছিলো না।
দেশের সেনসিবল বাট সাইলেন্স জনগোষ্ঠীর ধ্যান-ধারণাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করার মাধ্যমে ধীরে ধীরে ইসলামী মতাদর্শ ও জীবনপদ্ধতির পক্ষে শক্তিশালী বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক জনপরিমণ্ডল গড়ে তোলাই আমার লক্ষ্য।
এ কাজে প্রচলিত ধরনে নতুন কোনো সংগঠন কায়েমের চিন্তা আমার নাই। আমি সমাজের বেসিক স্ট্রাকচারে কাজ করার বিষয়ে অধিকতর আগ্রহী।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তাঁর প্রদত্ত সব নিয়ামত সম্পর্কে প্রত্যেককে তিনি জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। চবি কলেজে ১৯৮২ সালে ভর্তি হওয়ার পর হতে আজ পর্যন্ত প্রায় তিন যুগ দেশের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান ও কাজ করার সুযোগ আমি পেয়েছি।
বুদ্ধিজীবীদের উপযুক্ত কাজের ধরন সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:
“আর মুমিনদের পক্ষে সঙ্গত নয় যে তারা একজোটে বেরিয়ে পড়বে। সুতরাং তাদের মধ্যকার প্রত্যেক গোত্র থেকে কেন একটি দল দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করার জন্য বেরিয়ে পড়ে না, যাতে তারা নিজ সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পারে যখন তারা ফিরে আসে তাদের কাছে, যাতে তারা সাবধান হতে পারে?” – সূরা তওবার ১২২ নং আয়াত।
আমি নিজের জন্য এই আয়াতকে গাইডলাইন হিসাবে গ্রহণ করেছি।
ফেইসবুকে প্রদত্ত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Mohi Uddin: “শক্তিশালী বিকল্প জনপরিমণ্ডল গড়ে তোলা” কাজটি খুবই কঠিন হলেও এর কোন বিকল্প নেই। আপনার সমসাময়িক নেতা-কর্মীদের মাঝে বর্তমানে যারা নিষ্ক্রীয় এবং চিন্তা-চেতনায় আপনার সমমনা তাদের সহযোগিতা নিতে পারেন বলে মনে হয়।
খন্দকার রেফায়েত: একা কাজ করা কখনো সম্ভব না। ছোট একটা অনুষ্ঠান আয়োজন একা করা যায় না। আর এটা তো দ্বীনের কাজ। দায়িত্ব পরিসর বিশাল। সুতরাং কিভাবে একা সম্ভব। যদি কেউ বলে তার একা সম্ভব হয়েছে তবে সেটা মিথ্যাচার হবে। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম যারা মাজহাব মানে না,তারা না বুঝলেও আসলে তারা একটা মাজহাব অনুসরণ করে। মানুষের মাঝে ইসলামকে ছড়িয়ে দিতে হলে একদল মানুষ প্রয়োজন। তারা যখন একসাথে শৃঙখলার সাথে কাজ করবে তখন এমনিতেই একটা সংগঠন কায়েম হবে। সেই সংগঠনের কোন নাম থাকুক আর নাই থাকুক। তাই আপনি না চাইলেও নতুন একটা সংগঠন কায়েম হবে।
*****
পর্ব-৬
৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭
জামায়াতের সংস্কারবাদীদের সাথে আমার সম্পর্ক –
২০১০ সাল হতে সোশ্যাল মিডিয়ার বিকল্প প্লাটফরমে বয়স, অবস্থান ও বক্তব্যের ঋজুতায় আমার উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো। স্বাভাবিকভাবেই জামায়াতের সংস্কারবাদীদের সাথে আমার এক ধরনের ব্যক্তিগত যোগাযোগ গড়ে উঠে।
প্রচলিত ইসলামী আন্দোলনের সংস্কার প্রসংগে আমার বক্তব্য ছিলো কনসিসটেন্ট। আমি বারে বারে বলেছি, জামায়াত কখনো ভেতর থেকে কোনো মৌলিক পরিবর্তনের দিকে যাবে না, সঠিকভাবে বললে, যেতে পারবে না।
অবাক হয়ে লক্ষ করলাম, সবাই আমাকে জামায়াতের সংস্কারবাদী মনে করছেন। এক পর্যায়ে ‘আমি কেন জামায়াতের সংস্কারবাদী নই’ তা ব্যাখ্যা করে একটা সিরিজও লিখলাম। এরপরও লোকেরা আমাকে মোটাদাগে জামায়াতের সংস্কারবাদীই মনে করে।
তাই ধারণা করছি, এমনকি এই ধরনের লেখালেখির পরেও কেউ কেউ আমাকে জামায়াতের সংস্কারবাদী মনে করবেন। কিছু করার নাই। আমি জামায়াতের সংগঠনবাদীও নই, সংস্কারবাদীও নই। এক সময় জামায়াত করতাম। এখন শুধুই মুসলমান। সিএসসিএস-এর প্লাটফর্মে সোশ্যাল ওয়ার্ক করি। একে কেউ ‘ইসলামী আন্দোলন’ মনে না করলেও তেমন অসুবিধা বোধ করি না।
সে সময়কার পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক হওয়া সত্বেও নিছক ডকুমেন্টশেনের উদ্দেশ্যে ‘কামারুজ্জামানের চিঠি এবং জামায়াতের সংস্কার প্রসঙ্গ’ নামে একটা গ্রন্থ আমি প্রকাশ করেছি। এ কারণেও কেউ কেউ আমাকে ‘শেষ পর্যন্ত জামায়াতই’ মনে করতে পারেন। লোকজনের এহেন ভুল ধারণার কারণে আমার অবশ্য খুব একটা দুঃখবোধ হয় না।
দেখেছি, জামায়াতের ওপর প্রথম পিএইচডি পর্যায়ে গবেষণাকারী শ্রদ্ধেয় হাসান মোহাম্মদ স্যারকেও অনেকে জামায়াত বা জামায়াতপন্থী মনে করেন। যেহেতু তিনি জামায়াতের ওপর কাজ করেছেন, অতএব তিনি জামায়াত! অথচ, তিনি প্রথম জীবনে বামধারার রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। পরবর্তীতে বিএনপির রাজনৈতিক ভাবাদর্শকে সমর্থন করেন।
মনে পড়ে, প্রফেসর ড. ইউসুফ শরীফ আহমেদ খানের চকবাজারের বাসায় চবি সাদা দলের স্টিয়ারিং কমিটির এক সভায় রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের বরিষ্ঠ শিক্ষক ড. শামসুদ্দীন স্যার কথা প্রসংগে বলেছিলেন, “আরে, ও তো (প্রফেসর ড. ভূঁইয়া মনোয়ার কবীর) জামায়াত।” এ ব্যাপারে কৌতূহলী হয়ে পরে খোঁজ নিয়ে জানলাম, মনোয়ার স্যার সাদা দলের বিপক্ষ দলের সাথে সম্পৃক্ত। তিনি ছাত্রজীবনে আলী রিয়াজ ও নুরুল কবীরদের সংগে কাজ করেছেন। তাঁর জামায়াত হওয়ার প্রশ্নই উঠে না।
তাহলে তাঁর বিভাগেরই একজন সিনিয়র শিক্ষক তাঁকে জামায়াত বললেন কেন? জানতে পারলাম, মনোয়ার স্যারও জামায়াতের ওপর গবেষণা করেছেন। গবেষণার ফাইন্ডিংস নিয়ে ‘পলিটিক্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট অব জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ’ শিরোনামে ইংরেজিতে একটি বই লিখেছেন যা আন্তর্জাতিকভাবে প্রকাশিত ও সমাদৃত।
জামায়াতের ওপর কাজ করার কারণে প্রফেসর ভূঁইয়া মনোয়ারের মতো শিক্ষককেও যেখানে জামায়াত ট্যাগ দেয়া হয়, সেখানে আমার তো আর কথাই নাই।
যারা নিছক ধর্ম হিসাবে ইসলামকে গ্রহণ না করে ইসলামের মধ্যে এক ধরনের সামগ্রিকতার বিষয়ে কথা বলেন, এমনকি বিপক্ষে বলার পরও তারা অনেকের কাছে শেষ পর্যন্ত জামায়াত হিসাবেই ট্যাগড হন।
পক্ষের লোকদের কাছে জামায়াত মানেই বিকল্পহীন ইসলামী আন্দোলন। জামায়াত মানেই এ দেশে প্রকৃত ইসলাম বা একমাত্র সহীহ ইসলাম। নিরপেক্ষ বা বিপক্ষ লোকদের কাছে জামায়াত মানেই হলো ইসলামকে রাজনৈতিকভাবে (অপ)ব্যবহারের একটা ব্যাপার। এ কারণে তারা ‘রাজনৈতিক ইসলাম’ কথাটাকে পরিভাষা হিসাবে চালু করেছেন।
জামায়াত সমর্থন বা এর সমালোচনার দিক থেকে ব্যাপারটা যা-ই হোক না কেন, টেক্টচুয়্যাল দিক থেকে উভয় ধরনের আন্ডারস্ট্যান্ডিংকেই আমি বাড়াবাড়ি ও ভুল মনে করি।
এই ভুল ধারণা গড়ে উঠার পিছনে ঐতিহাসিক বাস্তব কারণ যা-ই থাকুক না কেন, যা ভুল তা ভুলই। এর অবসান জরুরী। এক কথায়, ধর্মের অচলায়তন থেকে ইসলামকে ‘উদ্ধার’ করতে হবে।
ইটসেলফ একটা স্বাধীন, স্বতন্ত্র ও সুসামঞ্জস্য ওয়ে অব লাইফ বা জীবনাদর্শ হিসাবে ইসলামের পরিচিতি তুলে ধরতে হবে। ইসলামকে ইসলাম হিসাবেই ব্র্যান্ড করতে হবে। ‘আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামায়াত’-এর ধারণাকে শুধুমাত্র চেতনার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। এর মানে হলো, স্পেসিফিক কোনো সংগঠনের সাথে ইসলামকে একাকার করা যাবে না।
এটি আমি ভীষণভাবে ফিল করি।
ফেইসবুকে প্রদত্ত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Masoud Jilani: সংস্কার???? নতুন কোনো কথা না….আমরা বোধ হয় ইসলামের মজলিশে শুরা টা বেমালুম ভুলে গেছি…..মজলিশে শুরাতে অনেক কিছুই পরিবর্তন বা পরিবর্ধন বা সংশোধন হতে দেখা যায়……আমরা এগুলো চিন্তা করে খামাখা সময় নষ্ট করছি বলে মনে হয়….আপনাদের কোনো প্রস্তাব থাকলে শুরা সদস্য হোন সেখানে উত্থাপন করুন বা শুরা সদস্যদের মারফত সেখানে তা পাঠান….সিদ্ধান্ত যাই হোক আলহামদুল্লিাহ..আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করুন…কারণ, ফলাফলের মালিক আমরা না…আশ্চর্য যে আমরা অনেকেই রেজাল্ট বলে ফেলি…যেখানে গায়েবের মালিক আল্লাহ…
Motin CUmath: ‘ইসলাম কে ইসলাম হিসেবেই ব্রান্ড করতে হবে”’ এটাই হল যৌক্তিক! পাশাপাশি মুসলিম দেরকে ‘মুসলিম” নামেই পরিচিত হতে হবে ! সবার কাছে একটি প্রশ্ন আর আবেদন ; নিজেরা কোনো গ্রুপ বা দলের নাম দিয়ে অার বিভক্তি না বাড়াই। আমরা ‘নাম’ এর পুজা করতে চাইনা। আদর্শ আর আদর্শ এর মালিক এর আনুগত্য কারি হতে চাই।তার গোলাম হতে চাই।সে ‘আদর্শ ‘ ‘প্রচার চাই। তবে সে আদর্শ প্রচারকারি দলের, গ্রুপের,গোত্রের,লোকের নামের
প্রচার চাইনা,তাদের গোলাম হতে চাইনা।’গোলাম হব শুধু আল্লাহর। সংগঠন, দল,গ্রুপ, রাষ্ট্র, মিডীয়া,যাবতীয় বৈধ শক্তি আদর্শ কায়েমে সহায়ক মাত্র,মালিক নয়। আমরা তাদের গোলাম নই।
Abu Taher Nayan: আপনি অনেকটা পথিকের বেশে,মুসাফিরের মতো কথা বলছেন,যার এ মুহুর্তে কসর নামায পড়া, তবে আপনি যদি তার অনুকঅনুকোল না হন, তাহলে অাপনি যা লিখছেন অনেকটা আত্মপুজারীর মতো।
ওছমান গনি ফরহাদ: প্রচলিত ইসলামী আন্দোলনের সংস্কার প্রসংগে আমার বক্তব্য ছিলো কনসিসটেন্ট। আমি বারে বারে বলেছি, জামায়াত কখনো ভেতর থেকে কোনো মৌলিক পরিবর্তনের দিকে যাবে না, সঠিকভাবে বললে, যেতে পারবে না।
অবাক হয়ে লক্ষ করলাম, সবাই আমাকে জামায়াতের সংস্কারবাদী মনে করছেন। এক পর্যায়ে ‘আমি কেন জামায়াতের সংস্কারবাদী নই’ তা ব্যাখ্যা করে একটা সিরিজও লিখলাম। এরপরও লোকেরা আমাকে মোটাদাগে জামায়াতের সংস্কারবাদীই মনে করে।
তাই ধারণা করছি, এমনকি এই ধরনের লেখালেখির পরেও কেউ কেউ আমাকে জামায়াতের সংস্কারবাদী মনে করবেন। কিছু করার নাই। আমি জামায়াতের সংগঠনবাদীও নই, সংস্কারবাদীও নই। এক সময় জামায়াত করতাম। এখন শুধুই মুসলমান।
ধন্যবাদ স্যার, এখানেই আপনার অবস্থান পরিষ্কার করেছেন।
Ahmed Reza: ধর্মের অচলায়তন থেকে ইসলামকে ‘উদ্ধার’ করতে হবে।
(ইসলাম) ইটসেলফ একটা স্বাধীন, স্বতন্ত্র ও সুসামন্জস্য ওয়ে অব লাইফ বা জীবনাদর্শ হিসাবে ইসলামের পরিচিতি তুলে ধরতে হবে। ….. স্পেসিফিক কোনো সংগঠনের সাথে ইসলামকে একাকার করা যাবে না।
আরোও আলোচনা চলুক, আশাকরি অনেকেই উপকৃত হবেন।
আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন, আমীন।
Umme Salma: এগারো এবং বারো নম্বর প্যারা নিয়ে যদি আলাদা একটি লেখা হতো আমরা আরো খোলাসাভাবে ভাববার সুযোগ পেতাম। আমার কাছে তা খুব গুরুত্ব পূর্ন মনে হচ্ছে।
আমি টেক্টচুয়াল ব্যাখ্যার কথা বলছি।
Masoud Jilani: ইসলামের সোনালী যুগেও অনেক ধরণের সমস্যা দেখা দিয়েছিল…..কই তারপরও তো তারা জামাতবদ্ধ থেকেছেন….যারা সরেছেন নেগেটিভলি চিহ্নিত হয়েছেন….কিন্তু যারা তওবা করে অর্থাৎ ফিরে এসেছে তাদের কথা ভিন্ন….সত্যি বলতে কি এই দশকটা মনে হচ্ছে পরীক্ষার যুগ…আমার ৩৯ বছরের জীবনে আর কখনো এরকম মনে হয়নি…এখন সাধারণ মানুষও যারা কিছু বোঝেনা বা বিশ্লেষণ শক্তি নাই বা কম শিক্ষিত বা সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিত তারাও কিন্তু সাদা-কালো পার্থক্যটা এই সময়ে জেনেছেন বাস্তবে এবং সেটা চলমান….এখনোও…পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে সেটা বুঝা অসম্ভব…।
*****
পর্ব-৭
১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭
ইসলামী আন্দোলনের প্রকাশ্য সমালোচনা কেন –
ইসলামী আন্দোলন অর্থে ইসলামের বুঝজ্ঞান বা আন্ডারস্ট্যান্ডিং বিগত শতাব্দীর গোড়ার দিক থেকে বিপুল সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হয়। এটি ছিলো সময়ের দাবী। প্রাথমিক তত্ত্বগত দিক থেকে ইসলামী আন্দোলনের এই প্রস্তাবনা ঠিক থাকলেও গড়ে তোলা সংগঠন ব্যবস্থার দিক থেকে তা ভুলভাবে গড়ে উঠে। পরিণতিতে বিংশ শতাব্দীর এই ইসলামী আন্দোলন ফ্যাসীবাদী-সাম্যবাদী ধরনের সর্বাত্মকবাদিতার চোরাবালিতে আটকে পড়ে।
একবিংশ শতাব্দীর নবতর প্রেক্ষাপটে ইসলামের জন্য কাজের তাত্ত্বিক ও কর্মপদ্ধতিগত রূপরেখা কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে আমার ইতিবাচক ও প্রস্তাবনামূলক লেখালেখির একটা বৃহৎ সংকলন সহসাই প্রকাশ করার ইচ্ছা আছে। এসব বিষয় নিয়ে ২০১০ সাল হতেই আমি অব্যাহতভাবে লিখছি।
জামায়াতের সংস্কার নয়। বরং ইসলামকে একটা সামগ্রিক জীবনাদর্শ হিসাবে বিবেচনা করে নিজ নিজ ক্ষেত্রে যারা কর্মতৎপর হতে চান, অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে তাদের আগামীর পথ চলায় সহযোগিতা করা আমার উদ্দেশ্য।
বিদ্যমান বা পুরনো ধারা থেকে কাজের নতুন কোনো ধারা বা উদ্যোগ, কেন, কীভাবে ও কোনদিক থেকে স্বতন্ত্র সে ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারণা থাকা জরুরি। নচেৎ তা বিদ্যমান অচলায়তনের এক নতুন সংস্করণই হবে।
পুরাতন বোতলে নতুন মদের মতো যে কোনো ‘এডাপ্টিভ রিফর্ম’ সমাজে এক ধরনের ধারাবাহিকতা হিসাবে টিকে থাকে, বড়জোর একটা প্রেসার গ্রুপ হিসাবে সময়ে সময়ে অস্তিত্বের জানান দেয় বটে। কিন্তু সমাজের মূলধারা হিসাবে তা কখনো দাঁড়াতে পারে না। তালেগোলে সংস্কারের মাধ্যমে সমাজের স্বতঃস্ফূর্ত নেতৃত্ব অর্জন আশা করা যায় না।
এ কারণে বিদ্যমান বা পুরনো ধারার কোনো সমালোচনা না করে নতুন কিছু করার ফর্মুলা নিয়ে যারা অগ্রসর হতে চান তাদের আন্তরিকতা সম্পর্কে সন্দেহ না করলেও তারা যে এ কাজে এক ধরনের ফ্যান্টাসি বা ইউটোপিয়াতে ভুগছেন, তা নিশ্চিত।
আমার কথাবার্তা ও লেখালেখির সাথে যারা পরিচিত তারা লক্ষ করে থাকবেন, ইতোমধ্যে সিএসসিএস-এর পক্ষ হতে আমার তত্ত্বাবধানে শ’খানেক মৌলিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। প্রায় ২০টি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ প্রকাশের জন্য তৈরি করা হচ্ছে। গঠনমূলক সমালোচনা ও ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের মধ্যে আমি সমন্বয় করে চলি। এই ভারসাম্য আমি রক্ষা করতে পেরেছি কিনা সময়ই তা বলে দিবে।
ষড়যন্ত্র তত্ত্বের ওপর ‘ঈমানদার’ জামায়াতের সংগঠনবাদীদের পক্ষ হতে “প্রশাসনের বিরূপ মনোভাবকে প্রশমিত করার জন্য এসব লেখালেখি” – এমন ধরনের অপপ্রচারের আশংকা করছি। কিন্তু কী করা? what is the other way? কোনো কাল্পনিক ‘অনুকূল সময়ের’ অপেক্ষায় জীবন কাটিয়ে দেয়ার লোক আমি নই।
যা হওয়ার তা হয়েছে। না আমরা অতীতকে বদলাতে পারি। না, বর্তমানকে। একমাত্র ভবিষ্যতই উন্মুক্ত। এই বিপুল সম্ভাবনাকে আমরা অতীতের অন্ধ আবেগের কূপে বিসর্জন দিতে পরি না। আমি নিজ দায়িত্বপালনে বদ্ধ পরিকর। success is not always measured by what we see. কোনো অপপ্রচার বা ভয়-ভীতি আমাকে অতীতেও দমাতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না, ইনশাআল্লাহ।
নতুন আবহে যারা কাজ করবেন, ইতিহাস হতে তারা কী শিক্ষা নিবেন তা দেখিয়ে দেয়ার জন্য অন্তর্বতী যুগের একজন হিসাবে আমার এ ক্ষুদ্র প্রয়াস।
ফেইসবুকে প্রদত্ত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Ferdous Sujon: “ইসলামী আন্দোলন অর্থে ইসলামের বুঝজ্ঞান বা আন্ডারস্ট্যান্ডিং বিগত শতাব্দীর গোড়ার দিক থেকে বিপুল সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হয়। এটি ছিলো সময়ের দাবী। প্রাথমিক তত্ত্বগত দিক থেকে ইসলামী আন্দোলনের এই প্রস্তাবনা ঠিক থাকলেও গড়ে তোলা সংগঠন ব্যবস্থার দিক থেকে তা ভুলভাবে গড়ে উঠে। পরিণতিতে বিংশ শতাব্দীর এই ইসলামী আন্দোলন ফ্যাসীবাদী-সাম্যবাদী ধরনের সর্বাত্মকবাদিতার চোরাবালিতে আটকে পড়ে।”
স্যার আপনি কি “প্যান ইসলামিজম” কে এই ক্ষেত্রে বোঝাতে চেয়েছেন?……নবমদিন নিশ্চয় এই বিষয়টা জানতে পারবো। ধন্যবাদ স্যার এই ধারাবহিক সুন্দর লিখার জন্য। আমি খুবই আগ্রহ নিয়ে লিখাগুলো পড়ছি। আরো অনেকেই হয়তো। পুনরায় ধন্যবাদ স্যার।
Shaheed Ullah: Though waiting for last episode but some “fantasy” found in present episode. seems to be like prof Emajuddin for BNP.
ওছমান গনি ফরহাদ: মাশায়াল্লাহ, চমৎকার। আপনার চিন্তা চেতনা বাস্তবধর্মী হবে আশা করি। তবে আপনার ইখলাস আছে যথেষ্ট। কি বই লিখছেন তা জানতে চাই, পড়তে চাই।
Mohammad Abu Tayeb: Sir, you said in your first/ second writing that you don’t have any knowledge about Quranic language and you ask for others to help you regarding this issue. Br, without deeply understand Quran & Sunnah how can you change…? Waiting for answering….
Mohammad Mozammel Hoque: could you please show me where I have said this: “don’t have any knowledge about Quranic language”? How could you know that I am “without deeply understand Quran & Sunnah”?
Instead, in the 4th part, I see only this: “নিজে মাদ্রাসা শিক্ষিত না হওয়ায় নানা বিষয়ে তথ্য জানার জন্য আলেমদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার তাগিদে …” Is there any problem?
কোনো কমেন্ট না করে সিরিজ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছিলাম। আপনার ধৈর্য্যে কুলায় নাই। আমিও কোনো রেসপন্স না করার কথা বলেছিলাম। এই মন্তব্যটা কদ্দুর লেখার পরে এটি মনে পড়লো। তৎসত্বেও এই প্রতিমন্তব্যটা রাখলাম। সংশ্লিষ্ট অংশগুলো আবার ভালো করে পড়ুন। ভালো থাকুন।
[“ভালো থাকুন” – কথাটার একটা মানে হলো, আপনার সাথে এ বিষয়ে আর এনগেজ হতে চাচ্ছি না।]
Mohammad Abu Tayeb: Yes that part. Can you explain more about this part please?
Mohammad Mozammel Hoque: গতকাল “আমাদের চাওয়ার ত্রুটি ও না পাওয়ার রহমত” শিরোনামে যে লেখাটা দিয়েছি সেটার শুরু হয়েছে একটা কোরআনের আয়াত দিয়ে। লেখাটা শুরু করার আগে চবি ইস. স্টাডিজের এক টিচারকে আয়াতটার রেফারেন্স জানতে চাইলাম। একই সাথে আমার এক সহকারীকে আয়াতটার আরবী যতটুকু মুখস্ত ছিলো তা বলে রেফারেন্সটা খুঁজতে বললাম। আমার উক্ত সহকারী গবেষক কিছুদিন মাদ্রাসায় পড়েছেন। মাসুদ আরবী টাইপ পারেন। ইন দ্যা মিন টাইম তিনি কিছু অংশ আরবীতে টাইপ করতেই মুল আয়াতটা গুগল সার্চে এসে যায়। এরই মধ্যে মাওলান জসীম ফোন করে বললো, এটি সুরা বাকারার ২১৬নং আয়াত। এবার বুঝছেন, মাদ্রাসা শিক্ষিতদের কাছ হতে আমি কী ধরনের সুবিধা গ্রহণ করি?
Abu Masud Nurullah: Muzammel bhai, Assalamualikum wrb! I have known you more than 25 years and I have no doubt.
In my mind about your sincerity regarding your efforts. In fact, thinking outside the box requires a lot of guts. A lot of people whom we may call conformist are just comfortable with the status quo and, in their minds syed Abul Ala Moududi has the ultimate thesis on every aspects of Islam. Some even don’t feel the need for research. Despite their sincerity sans a few bad apple
I am afraid these people, if put to power which I believe will not happen in my life time, will perhaps as much brutal as the taliban or they may altogether forget the idiocy and become busy collecting worldly booty. People of your kind will be put to jail in the first opportunity. There are a few kids (!) commenting on your write up and what i saw from their expressions confirmed my very fear. May Allah guide us and endow his hikmah on all of us.
Mohammad Abu Tayeb: If someone try to change or motivate the society throw the islamic way, he has to understand the Quran and hadith deeply by himself and also need clear knowledge about islamic history and philosophy and also must have knowledge about current societies and world’s.
Shaheed Ullah: your comment is correct but is it related quote on the present issue? pls don’t through a stone on a bush. Mohammad Abu Tayab
*****
পর্ব-৮
১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭
অ্যাপলজি –
অগাধ আস্থার মেঘ কেটে গেলে
দেখি শিক্ষক আর শিক্ষা মুখোমুখি
অপারগ আমি
শিক্ষাকেই নিয়েছি বেছে
দুঃখিত
পারলে ক্ষমা করো
ভালো থাকো
আমার পুরনো সু্হৃদ সাথী ও বন্ধুরা
*****
শেষ পর্ব
১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭
গ্রন্থ প্রকাশনায় ব্যতিক্রমী ধারা ও রীতির সূচনা –
জামায়াতে ইসলামী অভিজ্ঞতা ও মূল্যায়ন গ্রন্থে সংকলিত লেখাগুলো মূলত দুই ধরনের। ব্লগ ও ফেইসবুকে আমার নিজের লেখা পোস্ট ও নোট এবং অন্যদের লেখায় আমার করা মন্তব্য। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট লেখাটির শিরোনাম ও লেখকের নাম এবং যে মন্তব্যের উত্তরে আমার প্রতিমন্তব্য তাও পাঠকবৃন্দের বুঝার সুবিধার্থে উদ্ধৃত করেছি। গ্রন্থের কলেবর বৃদ্ধি হলেও এতে ধারণার স্পষ্টকরণ সহজতর হবে। বিষয়বস্তুর ধারাবাহিকতার পরিবর্তে লেখাগুলো বিন্যাসের ক্ষেত্রে সময়ানুক্রমকে অনুসরণ করা হয়েছে। তাই কোনো বিষয়ে আমার বক্তব্যকে সঠিকভাবে অনুধাবনের জন্য সংশ্লিষ্ট লেখাটির রচনাকালের দিকে লক্ষ রাখা জরুরি।
যাদের সাথে আমার ইতিবাচক অর্থে মন্তব্য বিনিময় হয়েছে তাদের সব ধরনের লেখাজোকা ও কাজকর্মে আমার সমর্থন আছে– এমন নয়। বরং গত সাত বছরে অনেকের সাথেই আমার নীতিগত কারণে নানা মাত্রায় দ্বিমত ঘটেছে। ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকা বা না থাকার চেয়েও বিষয়বস্তুর ক্লারিফিকেশানই যেহেতু আমার মুখ্য উদ্দেশ্য, তাই তাদের প্রাসঙ্গিক বক্তব্যগুলোকেও সংযোজন করেছি।
এই ধরনের বই দুই দিক থেকে বাংলাদেশে প্রথম:
(১) যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত নিজের লেখার সংকলন গ্রন্থাকারে ইতোমধ্যে প্রকাশ করেছেন তারা সংশ্লিষ্ট পোস্টে পাঠকদের মন্তব্যগুলো বাদ দিয়ে শুধু মূল পোস্টই ছাপিয়েছেন। আমি পক্ষ-বিপক্ষ নির্বিশেষে সব প্রাসংগিক মন্তব্যকে অন্তর্ভুক্ত রেখেছি। এতে করে যাদের ব্লগিং সম্পর্কে অভিজ্ঞতা নাই তারাও মন্তব্য-পাল্টামন্তব্যের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ায় কীভাবে একটা আলোচনা অগ্রসর হয়, তা বুঝতে পারবেন।
প্রচলিত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় লেখক-পাঠক মিথস্ক্রিয়া ঘটার সুযোগ থাকে না। এর বিপরীতে, সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখককে সাধারণ পাঠকদের কাছে জওয়াবদিহি করতে হয়। নিজের বক্তব্যকে যুক্তি দিয়ে ডিফেন্ড করতে না পারলে ব্যক্তিগত এস্টাবলিশমেন্ট বা সিনিয়রিটির দোহাই দিয়ে এখানে পার পাওয়া যায় না। সে জন্যই বোধ করি, কনভেনশনাল মিডিয়ায় যারা কন্ট্রিবিউট করেন তাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব একটা আসেন না। অন্যদিকে বিকল্প গণমাধ্যমের মত-দ্বিমত সংস্কৃতির সাথে অভ্যস্ত লেখকরা প্রচলিত গণমাধ্যমে সাধারণত লেখেন না।
(২) এই বইটির অন্যতম ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রকাশের সাথে সাথে লেখক নিজেই বইটির একটা পিডিএফ ভার্শান নিজের সাইটে আপলোড করেছেন। যে কোনো আগ্রহী ব্যক্তি এর সফট কপি বিনামূল্যে ডাউনলোড করতে পারবেন।
একটা বই একসাথে লেখা আর একটা বিষয়ে কয়েক বছরের স্বতন্ত্র লেখার সংকলন– দুটি আলাদা ব্যাপার। প্রথমটিতে যে ধরনের বিষয়গত ধারাবাহিকতা থাকে পরবর্তী ধরনে তা বজায় থাকে না। এ কারণে বইটিতে অনেক দ্বিরুক্তি রয়ে গেছে। আশা করি, পাঠক তা বিবেচনা করবেন। ব্লগ-পোস্ট, মন্তব্য ও প্রতিমন্তব্যসমূহে থেকে যাওয়া নানা ধরনের ভাষাগত ত্রুটিকেও যথাসম্ভব সংশোধন করা হয়েছে। একবিংশ শতাব্দীর সামাজিক ও বিশ্বব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের রূপরেখা কী হবে তা নিয়ে আমার গত সাত বছরের লেখাগুলোর একটা অনুরূপ সংকলন সহসা প্রকাশ করার আশা রাখি।
[“জামায়াতে ইসলামী: অভিজ্ঞতা ও মূল্যায়ন” – মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক। সমাজ ও সংস্কৃতি অধ্যয়ন কেন্দ্র কর্তৃক প্রকাশিত। পৃষ্ঠা সংখ্যা ৩৮৪। প্রকাশ কাল: অক্টোবর ২০১৬। আমার ব্যক্তিগত সাইট থেকে বইটার পিডিএফ কপি বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যাবে। এই বইয়ের ভূমিকাটাই ৫ ফেব্রুয়ারি হতে “জামায়াতে ইসলামী: অভিজ্ঞতা ও মূল্যায়ন” শিরোনামে ৮ পর্বে প্রকাশ করা হয়েছে।]