১.
২০১৯ সালে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন জামায়াতে ইসলামীর জন্য আত্মপরিচয় পুনঃনির্ধারণের সর্বশেষ সুযোগ। এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে জামায়াতে ইসলামী চাইলে ইসলামী আন্দোলন হিসাবে নিজের ইমেজ পুনঃপ্রতিষ্ঠার কাজে অগ্রসর হতে পারে। তবে এটা না করে জামায়াত যদি আগামী নির্বাচনে কোনো না কোনোভাবে অংশগ্রহণ করে, তাহলে এর মাধ্যমে জামায়াত একটা পয়েন্ট অব নো রিটার্নকে অতিক্রম করে যাবে। অবশ্য তেমন পরিস্থিতিতে ইসলাম-পছন্দ একটা রাজনৈতিক দল হিসাবে জামায়াতের এই নতুন আইডেন্টি খুব একটা যে খারাপ কিছু হবে তা নয়। যদি তা হয় বুঝেশুনে ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে। যেমনটা হয়েছে রশিদ ঘানুশীর নেতৃত্বে তিউনিশিয়ার আন নাহদা মুভমেন্টের ক্ষেত্রে।
সেখানকার ইসলামী আন্দোলনকে চরমপন্থা হতে বাঁচানোর জন্য তারা আন্দোলনের পরিচিতিকে বাদ দিয়ে ‘মুসলিম ডেমোক্রট’ হিসাবে প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে একটা রাজনৈতিক সংগঠন হিসাবে নিজেদের নবযাত্রার সূচনা করেছে। এ জন্য তারা নিজেদের মধ্যে কয়েক বছর ধরে প্রচুর আলাপ-আলোচনা করেছে। তিউনিশিয়ার সাম্প্রতিক পরিস্থিতির সে সব কাহিনী ‘সমাজ ও সংস্কৃতি অধ্যয়ন কেন্দ্র’ (সিএসসিএস)-এর সাইটে বেশ কিছু নিবন্ধ, প্রবন্ধ ও বিশ্লেষণে পাবেন। পড়তে পারেন।
বাংলাদেশ আর তিউনিশিয়ার পরিস্থিতি এক নয়। এখানে কোনো রশিদ ঘানুশী নাই। আন নাহদার মতো এখানকার জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে মুক্ত আলাপ-আলোচনার সুযোগও নাই। আরব দেশগুলোর মধ্যে তিউনিশিয়া হতে সর্বাধিক সংখ্যক ‘মুজাহিদ’ আইএস-এ যোগ দিয়েছে। বাংলাদেশে এমন ধরনের মারাত্মক কোনো জংগী পরিস্থিতিও নাই।
তাই জামায়াতে ইসলামী কর্তৃক নিজেকে অঘোষিতভাবে নিছক রাজনৈতিক দলে রূপান্তরের ব্যাপারটা হবে, ‘ইসলামী আন্দোলন’ ধারণাকে বাদ (defy করা অর্থে) দিয়ে দেয়া। ইসলামপন্থী একটা রাজনৈতিক দল হিসাবে নিজের এই ধরনের একতরফা আইডেন্টি প্রতিষ্ঠা করার এই উদ্যোগের মানে হলো ইসলামী আন্দোলন হিসাবে নিজের পূর্ব পরিচিতিকে পরিত্যাগ করা।
কেউ বলতে পারেন, আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে জামায়াত অঘোষিতভাবে ইসলামী আন্দোলনের পরিবর্তে (ইসলামী) রাজনৈতিক দল হিসাবে রূপান্তরিত হবে, আপনার এই দাবি ও বিশ্লেষণের ভিত্তি কী?
ট্রাইবুনালে যুদ্ধাপরাধ বিচারের মাধ্যমে দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের ফাঁসি কার্যকর, রাজনৈতিক দল হিসাবে রেজিস্ট্রেশান বাতিল, দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লার বিলুপ্তি ও সর্বাত্মক দমনপীড়ন পরবর্তী এই সময়ে জামায়াতের সামনে নিজের ইমেজ উদ্ধার করার একটা সুযোগ আবারো এসেছে। স্পষ্টত, আওয়ামীবিরোধী তথা ভারতবিরোধী বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর নীরব ‘সিম্পেথি-সাপোর্ট’ জামায়াতের পক্ষে। প্রতিকূল পরিবেশে নিজেদের আত্মসমালোচনার যথেষ্ট সুযোগও তারা পেয়েছে। জামায়াতের সাংগঠনিক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়লেও তাদের আদর্শিক ধ্যানধারণার ক্ষয় হয় নাই। জামায়াত জনশক্তির বৃহত্তর অংশ এখনো জামায়াতকে ইসলামী আন্দোলন হিসাবেই বিবেচনা করে।
তাদের ধারণায়, বর্তমান পরিস্থিতি নিতান্তই সাময়িক। অনুকূল পরিবেশে আবার ইসলামী আন্দোলন হিসাবে নানা পর্যায়ে ‘কাজ’ শুরু হবে। আমারও ধারণা সম্ভাব্য কোনো অনুকূল পরিস্থিতিতে জামায়াতের সাংগঠনিক কাজ গতি খুঁজে পাবে। তবে, তা আর ইসলামী আন্দোলন হিসাবে হবে না। যা কাজ হবে তা সবই রাজনৈতিক স্বার্থের বৃত্তে ঘুরপাক খাবে। হাতের ওপর ভর দিয়ে মাথা দিয়ে চলতে চাওয়া ব্যক্তির মতো রাজনীতির তৈলাক্ত বাঁশে জামায়াত কেবলই উঠানামা করবে। (ইসলামী) আন্দোলন পরবর্তী দলীয় রাজনীতিতেও জামায়াত কখনো বিশেষ সাফল্য অর্জন করতে পারবে না।
কেন?
তা অতি সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করছি।
ফেসবুকে প্রদত্ত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Ahmed Reza: রাজনীতির ক্ষেত্রে জামায়াতের প্রতিটি পদক্ষেপই ভূলে ভরা। ১৯৭১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত জামায়াত কোন সঠিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে?
Mohammad Mozammel Hoque: কিছু সিদ্ধান্ত তো ভালোই নিয়েছে। যেমন, কেয়ারটেকার সরকার ও এরশাদের সময়ে ১৯৮৮ সালে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত।
Abu Jafar Syed: জামায়াত যে পর্যায়ে আছে, নির্বাচনের সুযোগ যদি পায় (যে নামেই হোক) স্বল্প পরিসরে হলেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতেই হবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জামায়াতকে এগুতে হবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ এমন– মসজিদের ইমাম থেকে মন্দিরের পুরোহিত পর্যন্ত তাকে চুষতে হয়। মনে করুন, মোজাম্মেল স্যার যদি জামায়াত, রাজনীতি, নির্বাচন ইত্যাদি সংশ্লিষ্টতা না রেখে আধ্যাত্মিকতা নিয়ে লেখালেখি করেন তখন দেখবেন উনার পোস্টগুলোর লাইক, শেয়ার, কমেন্টস এর ধ্বস কিভাবে নামে, এটিই হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যঞ্জনা।
Mohammad Mozammel Hoque: রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলেও রাজনীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়া থেকে যে কোনো আদর্শবাদী দলের পরহেজ করা উচিত। নচেৎ প্রচলিত রাজনীতির পঙ্কিলতায় সর্বাঙ্গ কলুষিত হবে। আদর্শ, নৈতিকতা – এগুলো চাপা পড়ে যাবে। অথচ, এগুলোর জন্যই তো রাজনীতি।
ফেইসবুক আমার এক্টিভিজমের মূল জায়গা না। আমার নিজস্ব প্লাটফরম আছে– সমাজ ও সংস্কৃতি অধ্যয়ন কেন্দ্র। তাছাড়া আমি পপুলিস্টও নই।
তৃতীয়ত: রাজনীতি দরকার, এর মানে এই নয় যে, তা সবার জন্য সব সময়েই করণীয়। কিছু উপযুক্ত মানুষ ফুল টাইম রাজনীতি করবে। অন্য ফিল্ডের উপযুক্ত ব্যক্তিগণ নিজস্ব ফিল্ডে স্বাধীনভাবে কাজ করবে। এসব নিয়ে cscsbd.com-এ ২০১৩ সাল হতে বেশ কিছু লেখা ও স্লাইড আপ করা আছে। একটু কষ্ট করে এক্সপ্লোর করুন।
Anwarul Islam: স্যার, যদিও পারসেপশনটি আদর্শ-আদর্শহীন সব দলের জন্য, তথাপি বিশ্বের দিকে দিকে আমরা দেখেছি বড় ধরনের ঝড়ের পরই আন নাহদা, ইখওয়ানের (এখনকার সময়বাদে) মত আদর্শবাদী দলগুলো স্ব স্ব দেশের রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। যদিও বাংলাদেশের ইসলামি আন্দোলন (জামায়াত!) একটি অদ্ভুত প্রতিকূলতার (বিশ্বের কোথাও যা অনুপস্থিত) মুখোমুখি, রংটাও ভিন্ন, কাদামাটির (অগভীর শিকড়ের) মানুষগুলোর ইসলাম থেকে ইসলামকে জানার অনিহা (আন্দোলন তো পরে), এতদ্বসত্তেও এই মানুষগুলোর মাধ্যমেই এই আন্দোলনকে সফল করতে হবে এটা মনে রেখে অটো রেগুলেটেড এজেন্ডা (টাইম ভাউন্ডেড একটার পর একটা সফলতার আগ পর্যন্ত) নিতে হবে।
বি:দ্র: শুধু এই আন্দোলনের সফলতার জন্যই cscs এর মতো যারা নিজেদের (এজেন্ডা নিদের্শক) move on রেখেছে তাদের সংখ্যা বাড়াতে হবে ।
Abu Yousuf এখানে ঐ দলের অনেক চালাকি আছে। যদি ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামাত অংশ নেয়, তাহলে ঐ দল এখন যে সমস্যায় আছে তা কাটিয়ে উঠে যাবে। তারা যত বেশি ক্ষমতায় থাকবে ততবেশি বিএনপি-জামাতের জন্য ভাল হবে। বিএনপি-জামাত যদি নির্বাচনে অংশ নেয়, তাহলে মারাত্মক ভুল করবে। যার খেসারত আরো ৫ বছর দেবে। আগে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে ৫ বছর খেসারত দিয়েছে। এবার অংশগ্রহণ করে খেসারত দিতে হবে। বরং শান্তিপুর্ণ ভাবে আন্দোলন করা উচিত। আন্দোলন ছাড়া কোনভাবে ক্ষমতা নেয়া অসম্ভব। এখন ঐ দল অনেক বড় সমস্যায় আছে।
*****
২.
আগামী নির্বাচনে জামায়াতকে মাঠে নামতে হলে ঘোষিত বা অঘোষিতভাবে বিএনপির সাথে সমঝোতা করেই তা করতে হবে। কেননা নিজস্ব দলীয় প্রতীক ও রাজনৈতিক দল হিসাবে নির্বাচন কমিশনের স্বীকৃতি না থাকায় সমমনা কোনো দলের প্রতীকেই জামায়াতকে নির্বাচন করতে হবে। এমতাবস্থায় ধানের শীষ প্রতীকে যদি জামায়াত নির্বাচন করে, তাহলে তা হবে জামায়াতের আদর্শগত পরাজয়। যার ফলাফল সুদূরপ্রসারী। এটি ইগোর প্রশ্ন নয়, অস্তিত্বের প্রশ্ন।
পানির স্রোত যেমন স্বাভাবিক অবস্থায় উপরের দিকে যায় না, তেমন করে বিএনপি-জামায়াতের এই মাখামাখিতে বিএনপির লিবারেল মন-মানসিকতার লোকেরা কখনোই জামায়াতের তুলনামূলকভাবে কঠোর ও শুদ্ধতাবাদী কর্মনীতিকে গ্রহণ করে খানিকটা জামায়াত হয়ে উঠবে না। এর বিপরীতে, বাঁধ ভাঙ্গা পানির মতো জামায়াতের মানসম্পন্ন ‘তৈরী’ লোকেরা সততার চরিত্র হারিয়ে গণহারে ক্ষমতাপন্থী দলের সুবিধাবাদিতায় অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। এ ধরনের ক্ষতি থেকে আত্মরক্ষার কোনো কার্যকর উপায় জামায়াতের মেকানিজমে নাই।
খুব দ্রুত ‘জাতীয়তাবাদী জামায়াতে ইসলামী’র একটা স্বতন্ত্র ধারা তৈরী হয়ে যাবে। এক সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাদা দলের রাজনীতি প্রসংগে ঠাট্টা করে ‘জাতীয়তাবাদী জামায়াতে ইসলামী’ টার্মটা ব্যবহার করতাম। বিএনপির প্রতীকে জামায়াতের ইলেকশান করার মাধ্যমে এটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা স্বতন্ত্র ধারা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হবে। এতে ক্ষতি হবে শুধুমাত্র জামায়াতেরই। বিএনপির মধ্যে এমনিতেই দু’টি ধারা আছে। একটা জামায়াতপন্থী। অন্যটা জামায়াতবিরোধী। জামায়াতের মধ্যে এই ধরনের ভাগাভাগি এ পর্যন্ত অতটা স্পষ্ট নয়। ধানের শীষে নির্বাচন করার মাধ্যমে অবশ্যম্ভাবীভাবে জামায়াতে ইসলামী আর জাতীয়তাবাদী জামায়াতে ইসলামীর এই অভ্যন্তরীণ বিভক্তি অনিবার্য হয়ে উঠবে।
এতে করে জামায়াতের পক্ষে আর কখনো পুরো জনশক্তিকে নিয়ে আদর্শ ও দেশের স্বার্থে স্বাধীন সত্তা হিসাবে প্রয়োজনে বিএনপির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় কোনো একক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা সম্ভবপর হবে না। এখনো পর্যন্ত বড়জোর জামায়াতের পপুলার সাপোর্ট লেভেলে থাকা ‘জাতীয়তাবাদী জামায়াতে ইসলামী’র এই প্যাটার্ন সহসাই জামায়াতের সক্রিয় সমর্থক, কর্মী ও নেতা তথা পুরো জনশক্তির মধ্যে ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে পড়বে। বলা বাহুল্য, আদর্শ ও ক্ষমতার সম্ভাব্য এই ঝুঁকিপূর্ণ মেলামেশার ফলে রাজনীতির খেলায় অপরিপক্ক জামায়াতের সমাজ পরিবর্তন, বিপ্লব, আন্দোলন চেতনা, ইকামতে দ্বীনের স্বপ্ন কখন যে হারিয়ে যাবে তা তারা টেরই পাবে না। চার দলীয় জোট করে ক্ষমতার স্বাদ নিতে গিয়ে এটা অলরেডি কিছুটা হয়েছেও।
এত কিছুর পরেও, ‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’ নামের একটা ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলের মতো করে জামায়াতের ‘বিচক্ষণ’ নেতৃত্ব কোরআন-হাদীসের নানা ধরনের প্রেক্ষাপট-বিচ্যূত ব্যাখা-বিশ্লেষণের মাধ্যমে বেহেশত-প্রত্যাশী নিরীহ জনশক্তির কাছে নিজেদেরকে খাঁটি ইসলামী আন্দোলন হিসাবেই উপস্থাপন করে যাবে। এর চেয়ে বোকামী, স্ববিরোধিতা ও কপটতা আর কী হতে পারে?
অন্য দলের নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে নির্বাচন না করার বিকল্প হলো স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করা। এটিও জামায়াতের জন্য কোনো ভালো অপশন নয়। নির্বাচন কমিশন গঠন ইত্যাদি থেকে যদ্দুর মনে হয়, বর্তমান সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যদি তা-ই হয়, নির্বাচনের দিন পর্যন্তও সরকারের পেটুয়া বাহিনী জামায়াতের প্রার্থী ও পটেনশিয়াল নেতা কর্মীদের ওপর দমন-নিপীড়ন চালাবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পূর্ববর্তী জার্মানিতে ইহুদীদের যে দশা হয়েছিলো, বর্তমান বাংলাদেশে জামায়াতেরও একই পরিণতি হয়েছে। কারো উপরে যে কেনো ধরনের অত্যাচার করার জন্য কোনো অপরাধ, অভিযোগ বা প্রমাণের দরকার পড়ে না। জামায়াত-শিবিরের ট্যাগ দেয়া গেলেই যেন কারো ওপর সব ধরনের নির্যাতন করা বৈধ!
আর সাধারণ মানুষেরাও তো এসব জুলুম প্রতিরোধে এগিয়ে আসছে না। অন্তত জামায়াত-শিবির দমনের দিক থেকে সরকারের সামনে ফাঁকা মাঠ…। আওয়ামী লীগ জামায়াতের সাথে স্থায়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে। ক্ষমতায় থাকুক বা না থাকুক, জামায়াতকে নির্মূল করতে না পারলে আওয়ামী লীগ স্বস্তিতে থাকতে পারবে বলে মনে হয় না। বাস্তবতা হলো বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী সরকার বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক পরিচালিত জামায়াত নির্মূল প্রকল্প অলরেডি ফেইল করেছে এবং ভবিষ্যতেও তা সফল হবে না। এটি তার পিক পয়েন্টে পৌঁছে গেছে। এখন ব্যাক ফায়ার করছে।
কারণ, জামায়াত মানে শুধু তার সংগঠন আর জনশক্তি নয়। এর সাথে আছে তার মতাদর্শগত সামাজিক শক্তির ভিত ও ইতোমধ্যে গড়ে উঠা বিপুল জনশক্তির উল্লেখযোগ্য এস্টাবলিশমেন্ট। যে কোনো সামাজিক শক্তি ও সমর্থনের বহিঃপ্রকাশ ঘটে রাজনীতিতে। এই দৃষ্টিতে বলা যায়, মুসলিম লীগের ভাবাদর্শগত সামাজিক ও রাজনৈতিক সমর্থনের ভিত্তির উপর জামায়াত ও বিএনপির উত্থান। ছাইভস্ম থেকে ফিনিক্স পাখির পুনর্জন্মের মতো জামায়াতও তাই উঠে দাঁড়াতে পারবে। তবে তা হতে হবে সমাজ ও রাজনীতির প্রাকৃতিক নিয়মে।
বলাবাহুল্য, উপরের লেভেলে আমরা যে ঢেউ দেখি তার উৎপত্তি ঘটে স্রোতের নীচের অংশে। অংকের নিয়মের মতো এটি সহজ ও সরল। তাই সঠিক রেজাল্ট পেতে হলে অংকের নিয়মগুলো বুঝতে হবে, মানতে হবে। প্রয়োজনে নতুন পৃষ্ঠায় সঠিকভাবে তা করে দেখাতে হবে।
*****
৩.
এ দেশে ইসলামপন্থী রাজনীতির পুরোধা হলো বিএনপি। খালেদা জিয়ার অবর্তমানেও এই ধারা সমপরিমাণে শক্তিশালী থাকবে। এমনকি বিএনপি ধ্বংস হয়ে গেলেও মধ্যপন্থী অনুরূপ কোনো পাওয়ার পলিটিক্স করা লিবারেল ইসলামিস্ট-ন্যাশনালিস্ট পার্টি উঠে আসবে। জামায়াত কখনো মধ্যপন্থী লিবারেল অবস্থানে আসতে পারবে না। যার ফলে রাজনীতির ময়দানে তাদেরকে বাগানের ফুল গাছটির মতো শেষ পর্যন্তও ‘ব্যালেন্সিং পাওয়ার’ হিসাবে শোভা বৃদ্ধি ও সুঘ্রাণ বিতরণ করে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। কখনো তারা মূল শক্তি হয়ে উঠতে পারবে না।
ঘটক পরিচয়ে তুষ্ট থাকবে, নাকি বাসর ঘরের অধিপতি হবে, তা নিয়ে এখুনি জামায়াতকে ভাবতে হবে। বাংলাদেশের রাজনীতেতে বর-কনে হতে হলে, অর্থাৎ মূল খেলোয়াড় হতে হলে, রাজনীতির খেলায় জিততে হলে, যে কোনো রাজনৈতিক দলকে উদার ও মধ্যপন্থী অবস্থানে আসতে হবে। ইংরেজিতে যাকে centrist পজিশন বলে। জামায়াত ইসলামী বা যে কোনো রাজনৈতিক দলের জন্য এটি সমভাবে সত্য।
আদর্শবাদী দলগুলো রাষ্ট্রপরিচালনায় যথেষ্ট লিবারেল হতে না পারার কারণে এক পর্যায়ে অটোক্রেটিক হয়ে উঠে। এজন্য অটোক্রেটিক রাষ্ট্র মাত্রই এক অর্থে থিওক্রেটিক। অন্যভাবে, থিওক্রেটিক রাষ্ট্র মানেই আদতে অটোক্রেটিক।
কথা পরিষ্কার, ইসলামী আন্দোলন হিসাবে যে সামগ্রিকতার দাবি জামায়াত করে, তা বাদ দিয়ে শুধুমাত্র রাজনীতিতে তাদের পূর্ণ মনোনিবেশ করতে হবে। পুরাদস্তুর রাজনৈতিক দল হিসাবে ভূমিকা পালন করতে হবে। অবশ্য, বাংলাদেশে ‘জামায়াত’ ব্র্যান্ডের কোনো রাজনৈতিক দলের কোনো ভবিষ্যত আছে বলে আমার মনে হয় না। ‘জামায়াত লিগেসি’কে বাদ দিয়ে ইসলামের স্বার্থে জামায়াত স্বতন্ত্র কোনো দল করবে বা করতে পারবে বলে আমি মনে করি না। চতুর্মুখী সংস্কার-দাবীর চাপে পড়ে এ ধরনের কিছু তারা করলেও তার অবস্থা হবে, মাইক্রোফোনের সামনে ফিস ফিস করে কথা বলার মতো হাস্যকর ‘গৃহপালিত বিকল্পধারা’ ধরনের কিছু একটা।
যেসব আসনে জামায়াতকে বিএনপি ছাড় দিবে, সেসব সম্ভাব্য আসনের প্রায় প্রত্যেকটিতেই বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী থাকবে। যার ফলে বিএনপির ভোট জামায়াত আদৌ পাবে না। সীমান্তবর্তী কিছু এলাকায় ভারতবিরোধী দল হিসাবে জামায়াতের পক্ষে তুলনামূলকভাবে ভালো করার সুযোগ আছে। হারজিত যা-ই হোক, নির্বাচন করার মাধ্যমে জামায়াতের টোটাল শক্তি প্রকাশিত হবে।
কোনো এলাকায় কারা কারা জামায়াত করে তা স্পষ্টতর হবে। ফলে সবাই মিলে জামায়াতকে এলিমিনেইট করার কাজটা আরো সহজ হবে। সাহস ও শক্তি কম থাকার কারণে বিএনপি হয়তো জামায়াতকে ততটা পেটাবে না। কিন্তু জামায়াত বিরোধিতার দিক থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগের তুলনায় কিছুমাত্র কম হবে না। অন্তত অতীত তা বলে।
এসব না করে জামায়াত যদি আগামী দুই টার্ম, অন্তত এক টার্মের জন্য পলিটিক্যাল হাইবারনেশনে [রাজনীতিতে নিষ্ক্রীয় থাকা] যেতে পারে, তাহলে জামায়াতের ঘুরে দাঁড়ানো এবং দ্রুতই ক্ষমতায় যাওয়ার, আমার ধারণায়, একটা সম্ভাবনা তৈরি হবে। এ জন্য প্রচলিত রাজনীতির মারপ্যাঁচ ও মলিনতা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রেখে জামায়াত সমর্থিত এক বা একাধিক বিকল্প রাজনৈতিক প্লাটফরম গড়ে তুলতে হবে। অরাজনৈতিক বিশেষ করে সামাজিক কাজকর্মের ওপর যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে। ধর্মীয় সেক্টরে নিজেদের দৃশ্যমান অবস্থান গড়ে তুলতে হবে। সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের বামপন্থা প্রভাবিত মূলধারায় পজিশন অর্জনের ব্যর্থ চেষ্টার পরিবর্তে নিজেদের মতো করে শক্তিশালী বিকল্প ধারা তৈরির কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এ কাজে দেশের বৃহত্তর ইসলামী জনগোষ্ঠীর সমর্থন তারা পাবে।
সবচেয়ে বড় কথা হলো, সব কিছুকে সাংগঠনিক স্বার্থের দৃষ্টিতে দেখার প্রবণতা বাদ দিয়ে দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। এভাবে প্রতিটা সেক্টরে স্বতন্ত্র ধারায় কাজ শুরু করলে, আগামী দিনে বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলন একটা স্বতন্ত্র মডেল হিসাবে গড়ে উঠতে পারবে। সামর্থ্য বিবেচনায় এই পটেনশিয়ালিটি বাংলাদেশ ও জামায়াতে ইসলামী উভয়েরই আছে।
কিন্তু তা হবে না।
ফেইসবুকে প্রদত্ত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Moniruzzaman Monir: স্যার, আগামী দশ বছর বাংলাদেশ শান্ত থাকবে বলে আমার মনে হয় না। আর জামাতের করনিয় নিশ্চুপ থাকা হলে কি সমস্যার সমাধান হবে? আমার মনে হয় না। আওয়ামিলীগ এখন টিকে থাকা আর মরার মাঝে অবস্থান করছে। তাই তারা মেরেই টিকে থাকবে যতক্ষন পারে। আমাদের রাজনিতীর নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে দিল্লী থেকে। এত সহজ হবে না। অস্ত্র বা মৃত্যু ছারা কিছুই বদলাবে না। সোজা পথে কিছুই হবে না বলে আমার ধারনা। আপনার সাথে এখানে বেশ দ্বিমত আছে আমার। তবুও পরবর্তীতে দেখি।
Mohammad Mozammel Hoque: রাজনৈতিক বিপর্যয়কে মোকাবিলা করার যেসব কৌশল হতে পারে তার মধ্যে একটা হলো আপাতত পিছিয়ে আসা। নতুন ফ্রন্ট খোলা। প্রত্যক্ষ মোকাবিলাকে এড়িয়ে চলা। এক কথায়, নতুন করে শুরু করা। সব বলেই ব্যাট চালাতে যাওয়া ঠিক না। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
Gazi Saleh Uddin: তোমার বিশ্লেষণধর্মী লেখাটা পড়লাম, তবে একটাই মন্তব্য করবো, এদেশের জনগন অতি বাম অতি ডান রাজনীতি পছন্দ করে না।
Mohammad Mozammel Hoque: স্যার, আপনি আমার লেখা পড়েছেন। এটা আমার জন্য বিরাট ব্যাপার। আমার জন্য দোয়া করবেন। আমার “জামায়াতে ইসলামী: অভিজ্ঞতা ও মূল্যায়ন” বইটা দেখতে পারেন।
Mazharul Islam Khondokar: আমি জামায়াতের হাইবারনেশনের সাথে একমত। যদি নির্বাচন করতে হয়, তাহলে ২০ দলই জোটে অন্য যে ইসলামি দলগুলি নিয়ে একটা এলায়েন্স করে বিএনপির সাথে জোটের পক্ষে আসন ভাগাভাগি করতে পারে। এক্ষেত্রে জামায়াতের কেউ প্রার্থী না হয়ে কওমি ঘরানার ব্যাক্তিদের রাজনীতির মাঠে এগিয়ে দিতে হবে। জামায়াত ব্যাক অফিস বা প্রেসার ভুমিকায় থাকতে হবে। রাজনীতি না করে রাজনীতি করাতে হবে।
Mohammad Mozammel Hoque: রাজনীতি না করাও, মাঝে মাঝে, বড় ধরনের রাজনীতি হয়ে উঠতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ের হেফাজত এর উদাহরণ।
Mazharul Islam Khondokar: ইয়েস, যেমন তাদের সাথে কিছু কিছু ইস্যুতে সরকারকে কম্প্রোমাইজ করতে হচ্ছে।
Moniruzzaman Monir: হেফাজত যে ধরনের ইশু তুলে আন্দোলন করছে তা সরকারের ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বাধা না। তাই একটু ছাড় দিয়ে ঠান্ডা রাখছে। যখন ক্ষমতার কথা আসত তখন 5 মে এর মত হত। তবে জামায়াতের নিতী নির্ধারকদের উচিত মরহুম কামরুজ্জামানের থিয়োরীটা নিয়ে ভাবা।
Mohammad Mozammel Hoque: নির্বাচন না করে নিরপেক্ষ থাকলে তলে তলে সবাই-ই ভোটগুলো পেতে চাইবে। যে সব ভোটের ওপর প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ নাই, সেসব ভোটকেও লোকেরা উক্ত নির্বাচন বর্জনকারী দলের ভোট মনে করবে।
এটি নিশ্চিত, জামায়াত যদি নির্বাচন না করতো তাহলে জামায়াত নিজেসহ শত্রুমিত্র সব পক্ষই জামায়াতের ভোটকে এখন যা দেখা গেছে তারচেয়ে বেশি মনে করতো। এবং এই নীরব ভোট ব্যাংক দিয়ে সে ভালোই ট্রেইড করতে পারতো।
Moniruzzaman Monir: কিন্তু সাধারন নেতা কর্মীরা হতাশ হয়ে যাবে বলে হয়। হ্যা তবে এটা ঠিক তারা বিভিন্ন ইসলাম দলকে সামনে দিয়ে নিজেদের কিছু প্রার্থীকে বের করে আনতে পারে। যেভাবে নির্বাচনী প্রক্রিয়া আগাচ্ছে তাতে আলীগ যেভাবেই হোক ক্ষমতায় যাবেই পথে হাটছে। 20 দলের ক্ষমতায় জাওয়ার সম্ভাবনা নাই ।এ অবস্থায় জামায়াত বি এন পি থেকে বের হয়ে শান্ত অবস্থানে থাকা ভালো তাদের শক্তি ক্ষয় না করে বা অন্য ইসলামি দলকে সামনে দিয়ে পিছন থেকে নেতৃত্ব দিতে পারে বলে মনে হয়।
Mohammad Mozammel Hoque: ইলেকশানে লাফালাফি করতে না দিলে যে নেতা কর্মীরা হতাশ হয়ে যাবে তারা তো নিছক পাওয়ার পলিটিক্স করা দলের নেতা কর্মী হওয়ার যোগ্য। কোনো আদর্শিক আন্দোলনের জনশক্তিরতো এত চঞ্চলতা থাকার কথা না।
*****
৪.
অতীতের অন্ধ মোহে জামায়াতে ইসলামী নিজের নামটা পর্যন্ত পরিবর্তন করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা নিজেদের বিবেচনায় যা ভালো মনে করে তা-ই সবার ওপর চাপাতে চায়।
তাই, রাজনীতির নেশামুক্ত হয়ে ইসলামী আন্দোলন হিসাবে আবার সবকিছু গোড়া হতে তারা শুরু করবে, এটা দুরাশা শুধু নয়, অসম্ভব ব্যাপার। দু’একজন আল্লাহওয়ালা সুফী-দরবেশ ছাড়া বর্তমান জামায়াত নেতৃত্বের প্রায় পুরোটাই সাংগঠনিক সুবিধাভোগী ফুলটাইম রাজনীতিজীবী। জামায়াতের এস্টাবলিশমেন্টকে নেড়ে-চেড়ে খাওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো যোগ্যতা নাই।
সেক্রিফাইস ইত্যাদি যা বলা হয় তা রাজনীতির অপরিহার্য অনুষঙ্গ। হক-বাতিলের সংঘর্ষকে যদি নিজেদের হকপন্থী হওয়ার প্রমাণ হিসাবে ধরা হয় তাহলে সবাই-ই হকপন্থী। কারণ, রাজনীতির ময়দানে প্রত্যেক দল বা শক্তিই নিজেকে হকপন্থী মনে করে এবং নিজ নিজ বিরোধী পক্ষের সাথে সময়ে সময়ে নানা মাত্রায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
অন্যান্য ভুল তত্ত্বের মতো কনফ্লিক্ট থিওরিও জামায়াতের আনটেস্টেড হাইপোথিসিস।
স্বভাবতই তারা সবকিছুকে অলরেডি পলিটিসাইজড করেছে। চোখে (রাজনীতির) রংগিন কাঁচ লাগিয়ে ‘নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে’ যেন তারা সবকিছুকে দেখছে …! তাই সব কিছুর মধ্যে তারা রাজনীতি খুঁজে পায়।
যে অর্থে সব কিছুর মধ্যে রাজনীতি আছে, সে অর্থে রাজনীতির মধ্যে অর্থনীতি আছে, অর্থনীতির মধ্যে আদর্শ আছে, আদশের্র মধ্যে অর্থনীতি ও রাজনীতি আছে, এভাবে মানব জীবনের মৌলিক দিকগুলো অংগাঅংগিভাবে পরষ্পরের সাথে সম্পর্কিত। একটিকে ছাড়া অপরটি চলে না। যেমন করে হৃৎপিণ্ড ছাড়া ফুসফুস চলে না, ফুসফুস ছাড়া হৃৎপিণ্ড চলে না, এভাবে সব কিছু। এর মানে এই নয় যে, এর কোনোটিই একমাত্র ফ্যাক্টর বা এক নম্বর অংগ।
অধ্যাপক গোলাম আযম বলতেন, দেশের মানুষ ইসলাম চায়, নেতৃত্বই সমস্যা। কথাটার মধ্যে অতি সরলীকরণ থাকলেও জামায়াতের এই দ্বিতীয় পীরের কথার সূত্র ধরেই বলতে চাই, জামায়াতের বৃহত্তর জনশক্তি যুগোপযোগী সংস্কার ও পরিবর্তনের পক্ষে।
জামায়াতের সাপোর্ট লেভেলের এই বৃহত্তর জনশক্তি ইসলামের বিজয় নিয়ে অধিকতর আগ্রহী হলেও তাদের নেতারা দলীয় ফরম্যাট ও ব্র্যান্ডের বাইরে কিছু ভাবতেই পারে না। তাদের কাছে ইসলাম আর জামায়াতে ইসলাম এক ও অভিন্ন। কাজের নতুন কোনো ধারা বা পদ্ধতি কায়েম হলে তাতে তাদের নেতৃত্বের বৈধতা সংক্রান্ত বড় মনস্তাত্ত্বিক অজুহাত তথা সাংগঠনিক সিনিয়রিটির দোহাই আর খাটবে না।
যোগ্যতার প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে তারা ভয় পায়। ধর্মীয় দৃষ্টিত কোনো সমস্যা না থাকা সত্বেও যে কোনো কম্পিটিশান ও চ্যালেঞ্জকে অনৈসলামী প্রমাণ করার জন্য তারা উদগ্রীব থাকে। নিজেদের অযোগ্যতার ত্রুটিকে ঢাকার জন্য তারা কোরআন, হাদীস ও সীরাতের সংশ্লিষ্ট রেফারেন্সের অপব্যাখ্যা করতে তারা দ্বিধা করেন না। অথচ, ভালো ও কল্যাণকর কাজে পরষ্পর প্রতিযোগিতা করার কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে কোরআন শরীফের তিনটা আয়াত এ মুহুর্তে আমার চোখ ভাসছে।
তাদের দৃষ্টিতে সব কল্যাণ যেন নিঃশর্ত আনুগত্যে। অকপটে পরামর্শ দেয়া তথা অপ্রিয় কথা সত্য বলার যে শ্রেষ্ঠ মর্যাদা, তা তারা প্রাকারান্তরে অস্বীকার করে।
শেষ পর্যন্ত জামায়াত একটা পীর-মুরিদি টাইপের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। পূর্ববর্তীদের মতো কামালিয়াত না থাকলেও জনবিচ্ছিন্ন কিন্তু সাংগঠনিক সিলসিলায় গদীনশীন এসব ‘শাহজাদারা’ ফয়েজ বিতরণ ও ‘বরকত’ গ্রহণ অব্যাহত রেখেছেন।
একই সাথে দ্বীন ও দুনিয়া লাভের এমন সুখের ব্যবসা কে সহজে ছাড়তে চায়, বলুন?
নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে যখন আওয়ামী লীগ প্রথম খেলাটা শুরু করে তখনই জামায়াতের উচিত ছিলো গঠনতন্ত্র সংশোধনের ফাঁদে পা না দিয়ে রাজনৈতিক দল হিসাবে রেজিস্ট্রেশান প্রত্যাখ্যান করা। এতে করে তারা বৃহত্তর ইসলামপন্থী শক্তির অধিকতর সমর্থন লাভ করতো। এরপরে, ‘জাস্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি’ ধরনের দল গঠন করে রেজিস্ট্রেশান নিয়ে পরোক্ষভাবে রাজনীতিতে আসা। সে ক্ষেত্রে জামায়াত একটা আমব্রেলা অর্গানাইজেশান হিসাবে থাকতো।
রাজনীতি করলে নির্বাচন করতেই হবে, এমন তো নয়। নির্বাচন না করেও রাজনীতি করা যায়। জামায়াত আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে সব রাজনৈতিক শক্তিই জামায়াতের ভোটগুলো পেতে চাইবে। এভাবে কাজ করলে নিজস্ব ভোট ব্যাংক ও এস্টাবলিশমেন্টকে কাজে লাগিয়ে জামায়াত লাভজনকভাবে ট্রেইড তথা গিভ এন্ড টেইক করতে পারবে।
বিকল্প পথে চলে ইসলামী আন্দোলন হিসাবে জামায়াতে ইসলামী পুনরায় উঠে দাঁড়াবে, নাকি রাজনীতির মাঠে বদলি খেলোয়াড় হিসাবে স্যুট-বুট পরে ট্র্যাক লাইন ধরে চান্সের অপেক্ষায় দৌড়াদৌড়ি করতে থাকবে, তা আগামী নির্বাচন নিয়ে তাদের চিন্তাভাবনা ও ভূমিকা দিয়ে বুঝা যাবে।
না, জামায়াতকে বুঝার জন্য ততদিন আপনাদের অপেক্ষা করতে হবে না। কারণ, তারা ‘নতুন কোনো পথে’ যাবে না। শেষ পর্যন্তও তারা লড়ে যাবেন। নিজামী সাহেব ‘ইসলামী আন্দোলনে হীনমন্যতাবোধের সুযোগ নেই’ শিরোনামে লেখায় বলেছেন, “… অতএব, কোনো মহলের প্রচারণায় বা বিভ্রান্তি ছড়ানোর কারণে ইসলামী আন্দোলনের নেতা ও কর্মীদের মনে হীনমন্যতাবোধের সৃষ্টি বা তাদের চিন্তাগত বিভ্রান্তির শিকার হওয়ার প্রশ্নই উঠে না।” [সূত্র: কামারুজ্জামানের চিঠি ও জামায়াতের সংস্কার প্রসঙ্গ, পৃষ্ঠা- ৯৮]
ফেইসবুকে প্রদত্ত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Shajahan Sanu: জামায়াতকে ব্যবহার করে ভার্সিটির টিচার হয়েছেন… এখনতো আর জামায়াতের দরকার নেই… যত খুশি আ:লীগকে তেল দেন কিছু দিনের মধ্যে ভিসি হয়ে যাবেন…
Mohammad Mozammel Hoque তর্কের খাতিরে যদি আপনার অভিযোগকে সঠিকই মনে করা হয়, তাহলেও তো তা জামায়াতের মারাত্মক রকমের বিপক্ষেই যায়। কেননা, এতে বুঝা যাবে, তারা নিজেদের অযোগ্য ক্যাডারকে দলীয় স্বার্থে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দানে তৎকালীন প্রশাসনকে বাধ্য করেছে। ফলে যোগ্য প্রার্থীদের বাদ দিতে হয়েছে। এহেন অপকর্ম ও গর্হিত কাজ নিশ্চয়ই তারা আরো আরো করেছে। এখনো যেখানে যেখানে যতটুকু সম্ভব করে যাচ্ছে। হলফ করে বলা যায়, সুযোগ পেলে ভবিষ্যতেও তারা এই ধরনের দলীয়করণ করবে।
এমন দলবাজ দলের ভবিষ্যত কী? এ ব্যাপারে ইসলাম কী বলে?
আপনার জ্ঞাতার্থে বলছি, ১৯৯৩ সালে যখন আমরা তিনজন একসাথে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পাই তখন ফোর ফার্স্ট ক্লাস কোনো প্রার্থী ছিলো না। মোট ১২জন প্রার্থীর মধ্যে আমিসহ দু’জন থ্রি ফার্স্ট ক্লাস প্রার্থী ছিলো। আর আমার নিয়োগে সুপারিশ করেছিলেন রাবি’র প্রফেসর ড. মফিজ উদ্দীন আহমেদ ও ঢাবি’র প্রফেসর ড. আবদুল মতীন। তৎকালীন তারা ছিলেন সিনিয়র মোস্ট। ব্যক্তিজীবনে তারা দু’জনে যথাক্রমে রাবি ও ঢাবির প্রগতিশীল শিক্ষক গ্রুপের নেতা।
আর হ্যাঁ, আমার ফার্স্ট ক্লাস/বিভাগগুলোও কি জামাত-শিবির নিয়ে দিয়েছিলো?
Kamrul Khaldun: I believe the most success of JI movement in South Asia is that it brings awareness among traditional average Muslims who believes in typical peer- murid tradition (which started in 1000 AD in central Asian Muslim countries). In contrast, the major drawback is that it has weak presence in intellectual’s world. As a result, the movement is in stagnant in one stage and cannot proceed further. Most probably, (A) It needs time/generation to breakthrough. It never be done within 5/10 years. It takes at least 2/3 generation (100-200 years). If we consider the historical evidence of civilization then it helps to understand this. Therefore, don’t be upset or rush to reap the result. Be hopeful that at least there is a platform to share thoughts and ideas. (B) The problem in JI movement is that the peoples are too confident with their model and not open minded to recheck their strategy and model. Obviously, there should room for constructive ethical criticism of the model through which new ideas and models can develop to challenge the clash between Secularism and Spirituality in these 21st centuries. It can be done through the insider or outsider as well.
*****
৫.
আমি কেন এসব বলছি?
কারণ, আগামী দিনের বাংলাদেশ, বিশেষ করে, ‘ইসলাম ইন বাংলাদেশ’ নিয়ে যারা কাজ করবে, জামায়াত তাদের জন্য একটা ভাইটাল ইস্যু। জামায়াতকে বাদ দিয়ে ‘বাংলাদেশের ইসলাম’ হতে পারে না। যেভাবেই হোক, এটি বাস্তবতা। চাইলেই কারো পক্ষে এই বাস্তবতাকে অস্বীকার করা সম্ভব না। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশে প্রচলিত ইসলামী প্রতিষ্ঠান ও ঐতিহ্যের অন্যতম ভাগীদার এবং এ দেশে ‘ইসলামী আন্দোলন’ ধারণার পুরোধা।
প্রকাশ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে জামায়াতের সমালোচনামূলক লেখা সত্ত্বেও আমার এসব কথার মতো ‘জামায়াতের পক্ষ নিয়ে’ কথা বলা ও লেখালেখির কারণে এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ সুধী আমাকে আদতে জামায়াতের সংস্কারবাদীই মনে করেন। শিবির-জামায়াত ঘরানা হতে উঠে আসার কারণেও লোকজন এমনটা মনে করে থাকবে।
জামায়াতের লোকেরাও বলে, ‘সংগঠন তো সংস্কার করছেই। এই করেছে, ওই করেছে। আরও করবে। সংগঠন ৩০ বছরের পরিকল্পনা নিয়ে আগাচ্ছে।’ ইত্যাদি।
জামায়াতে ইসলামীতে সংস্কারের সম্ভাবনা, সম্ভাব্যতা কিংবা অসম্ভাব্যতার বিষয়ে সঠিক বুঝজ্ঞানের জন্য ইউসুফ কারযাভির পরে হাল জমানার অন্যতম সেরা ইসলামী চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবী, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজের অধ্যাপক ড. তারিক রমাদানের Radical Reform বইটা একটা নির্ভরযোগ্য রেফারেন্স। সিএসসিএস-এর ইবুক সাইটে এর সফট কপি পাবেন।
ইসলামী দলগুলোর সংস্কার নিয়ে ড. তারিক রমাদান বলেছেন, দুই ধরনের সংস্কার হতে পারে:
(১) এডাপ্টিভ রিফর্ম
(২) ট্রান্সফরমেটিভ রিফর্ম।
পরিস্থিতির চাপে বাধ্য হয়ে করা সংস্কারকে তিনি এডাপ্টিভ রিফর্ম বলেছেন। আর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের নিরিখে মৌলিক ও স্বতঃস্ফূর্ত সংস্কারকে তিনি ট্রান্সফরমেটিভ রিফর্ম বলেছেন। যেমন, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যেতে হলে আমাকে বাস, ট্রেন কিংবা বিমান – এই তিন ধরনের যোগাযোগ মাধ্যমের কোনো একটিতে করে যেতে হবে। টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। এর গত্যন্তর নাই। এমতাবস্থায় আমি সুবিধাজনক কোনো একটাতে এভেইল করলাম। এটি এডাপ্টিভ রিফর্ম। আর আমি আদৌ এই সময়ে ঢাকা যাবো কিনা, তা নিয়ে ভাবাটা হলো ট্রান্সফর্মেটিভ রিফর্ম।
জামায়াত বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কীভাবে নির্বাচনে যাবে তা নিয়ে তার যা করণীয়-ভাবনা, তা এডাপ্টিভ রিফর্মের আওতায় পড়বে। আর আদৌ এখন জামায়াত নির্বাচন করবে কিনা, বা রাজনীতিকে পিছনে ফেলে সামাজিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সেক্টরগুলোকে সামনে নিয়ে আসবে কিনা, বা কোনো সেক্টরকে সামনে, কোনো সেক্টরকে পেছনে আনার প্যাটার্নের পরিবর্তে সব সেক্টরকে সমতলে রেখে তথা সমগুরুত্ব দিয়ে অগ্রসর হওয়ার কোনো পথ খুঁজবে কিনা, তা হলো ট্রান্সফরমেটিভ রিফর্ম।
নিঃসন্দেহে জামায়াতের ট্রান্সফর্মেটিভ রিফর্ম-ই সময়ের দাবী। আমার ধারণায়, জামায়াত বড়জোর কিছু এডাপ্টিভ রিফর্মের দিকে এগুবো। শাক দিয়ে মাছ ঢাকার এসব ব্যর্থ প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত জামায়াতকে (সত্যিকারের পূর্ণাঙ্গ ইসলামী আন্দোলন হিসাবে) উদ্ধার করতে পারবে না।
তাদের তত্ত্বগত অস্বচ্ছতা ও বাস্তবায়নগত স্ববিরোধিতার কারণে।
*****
৬.
মজার ব্যাপার হলো, সম্পূর্ণ মুখ ঢাকার যুক্তি দিয়ে মুখের অর্ধেক ঢেকে ‘রাজধানী’র অধিকতর সুন্দর এরিয়াকে ঘষা-মাজা করে মাঞ্জা লাগিয়ে অরক্ষিত অবস্থায় আরো সুন্দর রূপে উপস্থাপন করে চলাচলকারী নেকাব পরিহিতাদের স্ববিরোধিতার মতো বাধ্যগত পরিস্থিতিতে কিছু ঠুনকো ও বাহ্যিক পরিবর্তনকে মেনে নিয়ে কেউ কেউ মনে মনে ভাবে, এই তো, সংস্কার করে ফেলেছি।
এমনকি দাবীও করে, এর চেয়ে বেশি সংস্কার আর কী হতে পারে? এরা মৌলিক সংস্কার বা ট্রান্সফরমেটিভ রিফর্মটা যে কী, তা বুঝেই নাই। রিফর্মের নামে তারা আসলে নিজেদের গতানুগতিক চিন্তাধারা ও কাজকর্মকে রক্ষা করারই চেষ্টা করে। আদর্শবাদীদের এ ধরনের জড়তা তাদের অন্তর্গত স্ববিরোধিতার বহিঃপ্রকাশ। আমরা জানি, ইসলাম ব্যক্তি, গোষ্ঠী তথা দল, সমাজ ও রাষ্ট্রকে সব ধরনের স্ববিরোধ হতে যথাসম্ভব মুক্ত থাকতে বলে।
আমিও চাই, জামায়াত কোনো একটা পথ ধরে আগাক। যদি তারা রাজনীতি করতে চায়, শুধু রাজনীতিই করুক। রাজনীতি করাও তো ইসলামের দাবি।
জামায়াতের গোড়ায় গলদ হলো, তারা মনে করে একজন ব্যক্তির মুসলমান হিসাবে যা করণীয়, একটা দলও একই সাথে তা সব করবে। তাই তারা ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়গুলোকে তাদের কর্মসূচির মধ্যে একসাথে সাজিয়েছে। দাওয়াত, সংগঠন ও প্রশিক্ষণ, সমাজ সেবা এবং রাজনীতি – এভাবে তারা কাজের ধারা সেট করেছে।
আচ্ছা, সবই যদি একসাথে করতে হবে, তাহলে অর্থনীতি ও সমরনীতিকে কেন বাদ দিলো, তা তো তারা বলে না…! এ দু’টি ছাড়া তো কোনো কিছু হয় না, টিকে থাকতে পারে না। তাই না? জামায়াতের কাছে এর সদুত্তর কি আছে?
একজন ব্যক্তি কোনো কিছুকে করণীয় মনে করলেই সেটাতে সত্যি সত্যি জড়িত হবে, এমন নয়। গরীব মুসলমান হজ্বকে করণীয় মনে করলেও, যাকাতকে কর্তব্য মনে করলেও সেসব সামর্থ্য-বহির্ভূত বিষয়ে তিনি ভাবিত হন না। পারিভাষিক অর্থে জিহাদের ফরজিয়তকে মানা সত্বেও মক্কী যুগ পর্যায়ে বসবাসকারী মুসলমানেরা শান্তিবাদী জীবন যাপন করেন। যেন তারা নিরীহ নাগরিক।
স্থান, কাল ও পাত্র ভেদে প্রাসংগিক না হওয়ায় কিংবা কোনো সমস্যার কারণে কোনো মুসলমান বা মুসলমানদের কোনো জনগোষ্ঠী ইসলামের দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয় সত্বেও কোনো কোনো আমল হতে বিরত থাকে। তাতে করে তার বা তাদের মুসলমানিত্ব কমে যায় না বা ক্ষুন্ন হয় না।
এই দৃষ্টিতে রাজনীতি করা দরকার হলেও দলমাত্রকেই রাজনীতি করতে হবে, এমন নয়। আবার কোনো দল রাজনীতি করলেই সব নির্বাচনে তাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে, এমনও নয়। দাওয়াত ও প্রশিক্ষণের মতো দীর্ঘ ও মধ্যমেয়াদী কর্মসূচিকে রাজনীতির মতো জরুরি ও প্রতারণাপূর্ণ (পড়ুন, কৌশলী) এজেন্ডার সাথে একত্রিত করার কারণে সময়ের ব্যবধানে রাজনীতিই মুখ্য পরিচয় হয়ে উঠবে, এটি স্বাভাবিকক। জামায়াতে ইসলামীর ক্ষেত্রে যা হয়েছে।
ছাত্রজীবনে আমরা কখনো ‘পার্টি’ কথাটা ব্যবহার করতাম না। সংগঠন বলতাম। পার্টি বলাটাকে আমরা ভীষণ অপছন্দ করতাম। অথচ, ৩৭ বছর আগে ইসলামী আন্দোলন মনে করে যে দলে যোগ দিয়েছিলাম, এখন তারা নিজেরাই দেখি নিজেদেরকে স্বাচ্ছন্দ্যে পলিটিক্যাল পার্টি হিসাবে পরিচয় দেয়।
ইসলামী আন্দোলন হিসাবে তাদের কী কী খোয়া গেছে, কোনদিকে কতটুকু ঘাটতি হয়েছে, কীভাবে তা পূরণ করতে হবে, এ জন্য কী কী পলিসি গ্রহণ করতে হবে, কীভাবে অগ্রাধিকার বিবেচনাকে নতুন করে সাজিয়ে নিতে হবে, সেসব দিকে তাদের কোনো নজর নাই। রাজনৈতিক দল হিসাবে নিজেদের অধিকার নিয়েই তারা যারপরনাই উদ্বিগ্ন ও সোচ্চার।
এতো টানাটানির চেয়ে সোজাসাপ্টা অবস্থানে আসাই ভালো। আমি জামায়াতের রুকন ছিলাম না। জামায়াতের ব্যাপারে আমার ‘নাক গলানোর’ কিছু নাই। আমরা সাধারণ মানুষ। ফতোয়া আলেম-এক্সপার্ট-নেতারাই দিবেন। সাধারণ জনগণের অন্তত এটুকু তো অধিকার আছে, নিজেদের বিষয়ে বড় হুজুরদের দেয়া বিপরীতধর্মী পরামর্শ ও ফায়সালার কোনো একটাকে সমর্থন করা।
জামায়াতের সংস্কারের বিষয়ে আমি মুহাম্মদ কামারুজ্জামান সাহেবের জেল হতে পাঠানো সংস্কার প্রস্তাবনা সম্বলিত দীর্ঘ চিঠির কথা বলতে পারি।
ফেইসবুকে প্রদত্ত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Mazharul Islam Khondokar: জাতীয় নির্বাচনের পরিবর্তে স্থানীয় নির্বাচনের দিকে নজর দিতে পারে।
Mohammad Mozammel Hoque: আমার মতে নির্বাচন মাত্রকেই এড়িয়ে চলা উচিত।
Muhammad Khan: As salamu alaikum. You have a lot of knowledge in this critical article. But he who has no enough knowledge like me what should I do/follow. In the context of the present situation of Jamaat e Islami it is very tough to represent myself a worker.
Please explain
Mohammad Mozammel Hoque: আমি আপনাকে কোনো সংগঠন করা বা না করার পরামর্শ দিবো না। বরং একা থাকার চেয়ে কারো সাথে থাকা ভালো, যদি চোখ কান খোলা রেখে চলতে পারেন।
Muhammad Khan: At this moment it is very difficult to choose/seek suitable correct organisation. So how I can join with anyone. But it is compulsory (Faraj) to merge /keep myself with Jamaat. Do you have any choice? Please inform me.
Mohammad Mozammel Hoque: কাউকে কোনো না কোনো সংগঠনের সাথে থাকতেই হবে, এই ব্যাখ্যাটা স্বয়ং ব্যাখ্যাসাপেক্ষ। আপনি চাইলে এ বিষয়ে আমি একটা প্রবন্ধ লেখতে পারি। তবে সময় দিতে হবে। আর এখনি জানতে চাইলে আমাকে ফোন করতে পারেন 01928672405
Muhammad Khan: But it is compulsory from Holy Quran and Hadith. If there is any misconception why you yourself were with Shibir. You couldn’t think and understand then.
Muhammad Khan Awaiting your reply.
Mohammad Mozammel Hoque: Keep waiting, please…
Muhammad Khan: Thanks
*****
৭.
আমার সৌভাগ্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের স্বর্ণযুগে (১৯৮৬–১৯৯২) আমীর হোসেন ভাই, হামিদ হোসাইন আজাদ ভাই ও হামিদুর রহমান আজাদ ভাই-এর মতো যোগ্য দায়িত্বশীলদের অধীনে সাথী ও সদস্য হিসাবে দায়িত্বপালন করার সুযোগ পেয়েছি। অথচ শিক্ষক হিসাবে একই ময়দানে পরবর্তী বিশ বছর জামায়াতের অন্যতম দায়িত্বশীল হিসাবে কাজ করলেও কেন জানি জামায়াতের শপথের কর্মী তথা রুকন হওয়ার ইচ্ছা কখনো সিরিয়াসলি ফিল করি নাই।
জামায়াতের সাংগঠনিক সংস্কার ও পরিচ্ছন্ন পথচলার জন্য শিবিরের প্রথম ও দ্বিতীয় কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ ‘বুদ্ধিজীবী’ হিসাবে পরিচিত শীর্ষ দায়িত্বশীলদের দেয়া পরামর্শই জামায়াত শুনে নাই, আমার মতো পুঁচকের কথা কি শুনতো? কথায় বলে, ‘হাতি-ঘোড়া গেল তল, ভেড়া বলে কতো জল…’!
রুকন হয়ে ‘যথাযথ’ ফোরামে (সংস্কারের) কথা বলার জন্য প্রায়শঃই আমাদের বলা হতো। এক পর্যায়ে বুঝলাম, রুকন হতে বলাটা হলো জামায়াতের দ্বিমত ‘হজমের’ করার সাংগঠনিক কৌশল। কারণ, রুকন হলে আপনি অনুমতি ছাড়া কথা বলতে পারবেন না। একবার কোনো কথা বলার পরে, তা গ্রহণ করা হোক বা না হোক, আপনাকে তা ভুলে যেতে হবে। ফোরামের বাইরে কথা বলতে পারবেন না।
এ ধরনের ভয়ংকর ‘মতামতের দাসত্বকে’ যারা সঠিক মনে করে, রাষ্ট্র ক্ষমতা পেলে তারা যে লেনিন-হিটলারের মতো স্বৈরাচারী থিওক্রেসি (ঈশ্বরতন্ত্র) কায়েম করবে, তা নিশ্চিত। শুধু শুধুই মানুষ ISISকে দোষারোপ করে। ‘খলীফা’ বোগদাদীর মতো চরমপন্থীরা আপনার আমার আশেপাশেই ঘুরে বেড়াচ্ছে, আমরা টের পাচ্ছি না।
স্টেথিস্কোপ লাগিয়ে শুনলে যেমন হৃৎস্পন্দন টের পাওয়া যায়, তেমন করে কথাবার্তা ও হাবভাব দেখে বুঝতে পারা যায়, ধর্মের নামে কেউ কেউ জোর-জুলুমকে জায়েয, এমনকি ফরয মনে করে। জামায়াতসহ ইসলামী শক্তির বৃহত্তর অংশ মন-মানসিকতায় কম-বেশি আইএসআইএস। তাদের জন্য অপেক্ষো শুধু সুযোগ ও সময়ের। এসব ফোরামগিরি করতে করতে শেষ পর্যন্ত জামায়াতের মধ্যে কাজের কাজ তেমন থাকবে না। ফোরামের ছড়াছড়িই থাকবে।
ইউরোপ আমেরিকায় জোশের সাথে টুপি-নেক্বাব পরে বে-দ্বীনি রাষ্ট্রের তাবৎ সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ঘুরে বেড়ানো ভারতবিরোধী উগ্র জাতীয়তাবাদী ‘মুহাজির’গণ সুযোগ পেলেই জাতিরাষ্ট্র ও জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে একহাত নেন। এসব ‘ফেইসবুকজীবী মুজাহিদদের’ স্ববিরোধিতার মতো জামায়াতের সাংগঠনিক ফোরাম চর্চাও বরং দিনে দিনে মাথাচারা দিয়ে উঠবে।
অনেকগুলো শুন্যের যোগফল হিসাবে পাওয়া একটা বড় শুন্যের মতো এসব সমাজবিচ্ছিন্ন বায়বীয় ফোরামনির্ভর নেতারাও সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় কোরাম অর্জনে শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হবে। যোগ্যতা ব্যতিরেকে নিছক good wish বা honest intention দিয়ে এখানে কিছু হয় না। আল্লাহ তাআলা সুনির্দিষ্ট নিয়মের ভিত্তিতে, সোজা কথায় যোগ্যতরকে দিয়ে দুনিয়াটাকে পরিচালনা করেন।
আখেরাতে নাজাত প্রাপ্তির শর্টকাট আশা-ভরসাই দেখি এখনকার অধিকাংশ একামতে দ্বীনপন্থীদের গ্র্যান্ড ন্যারেটিভ। স্বীয় সামর্থ্য অনুযায়ী দায়িত্বপালনের ব্যাপারে তারা যথেষ্ট সচেতন ও ততটা আগ্রহী নয়। ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হলো তাদের প্রধান ভরসা কিংবা অজুহাত।
অথচ, সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্ব-জগতকে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ পর্যায়ে কল্যাণের পথে পরিচালনা করার লক্ষ্যেই আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া বানাইছেন এবং দুনিয়াতে তাঁর হেদায়েত পাঠাইছেন। এ কাজে নেতৃত্ব দেয়ার জন্যই তো মুসলমান জাতির উদ্ভব। নেতারাই যদি অন্ধ অনুগতদের মতো মুখ বুঁজে পথ চলে, আর আখেরাতের আশায় বসে থাকে, এরচেয়ে দুঃখের বিষয় আর কী হতে পারে…!
এটি স্পষ্ট, বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী আজ ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে। এই সংকট ও সম্ভাবনার পিন-পয়েন্ট হচ্ছে আগামী নির্বাচন। এ ব্যাপারে তারা কোন কর্মপন্থা গ্রহণ করছে তার উপরে নির্ভর করছে তারা কি ইসলামী আন্দোলন হিসাবে ঘুরে দাঁড়াবে, নাকি রাজনীতির ট্রেডমিলের উপর দৌড়াদৌড়ি করে জীবন পার করবে।
যদি তারা সত্যি সতিই নিজেদেরকে ইসলামী আন্দোলন হিসাবে মনে করে তাহলে তাদের উচিত হবে প্রচলিত রাজনীতির গোলক ধাঁধাঁ হতে হতে বের হয়ে এসে ক্লাসিক্যাল ইসলাম, একবিংশ শতাব্দীর বিশ্ব-ব্যবস্থা ও সমকালীন বাংলাদেশের সমাজ ও রাষ্ট্রকে বিবেচনায় নিয়ে নতুন করে পথ চলা।
ফেইসবুকে প্রদত্ত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
MD Alauddin: স্যার ধর্ম ও রাজনীতি কি দুটি আলাদা বিষয়, না পরস্পর পরিপূরক? আরেকটা বিষয় ধরুন স্যার আমি জামায়ত ইসলামী বা শিবিরের সাথে যুক্ত নই, তবে ইসলামের সকল সুন্নাহ, ও কোরআন, হাদিসের মূলনীতি গুলো মেনে চলার চেষ্টা করি, স্রষ্টার সন্তুষ্টির জন্য কি আমার কোন ইসলামি রাজনীতি বা আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া জরুরি,বা সম্পৃক্ত না হয়েও কোরআন, হাদিসের মূলনীতি মেনে চলে স্রষ্টার সন্তুষ্টি কি সম্ভব? বা কতটুকুই সম্ভব।, বিস্তারিত বললে কৃতার্থ হবো স্যার।
Mohammad Mozammel Hoque: অবশ্যই বলা জরুরী। কিন্তু একটা লেখার মন্তব্য সেকশানে কতটুকু বলা যায়। তারচেয়ে বরং একটু কষ্ট করে যদি আমার ব্যক্তিগত সাইট mozammelhq.com এবং গবেষণা সাইট cscsbd.com এ গিয়ে যদি কিছু প্রাসংগিক লেখা পড়তেন, এরপর আলাপ করতে সুবিধা হতো। কাউকে প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে লিংক ধরাইয়া দেয়া আমার একদম অপছন্দ। তবুও অগত্যা এই অনুরোধ। ভালো থাকেন।
MD Alauddin: ধন্যবাদ স্যার। পড়বো। এ বিষয়টি নিয়ে একটি স্ট্যাটাস হলে ভালো হতো। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
Mohammad Mozammel Hoque: ইনশাআল্লাহ।
Mohammad Mozammel Hoque: সাংগঠনিক আনুগত্য সম্পর্কিত প্রচলিত ভুল ধারণার পর্যালোচনা
Abu Masud Nurullah: Can’t forget hours and hours of shathi boithok, meticulous analysis and then the daittoshil handed down his own judgement ignoring every opinion discussed for hours. If it is not autocracy, then I don’t know what is autocracy.
নির্বাচন না করেও রাজনীতি করা যায়।
রাজনীতি না করে নির্বাচন করা যায় না। কিন্তু প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচন না করেও রাজনীতি করা যায়।
mash allah-zazak allah. nek hayat o elem bariye din –ameen
mash-allah,zazak-allahu. allah subhanatayala apnar elem shokti o neka hayat dan korun-ameen
জামাতে রাজনীতিগত কৌশল গুলি বুজতে হলে
লেখকে আরো ২০ বছর গবেশনা করতে হবে বর্তমানে জামাত ই বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় রাজনৈতীক দল ২৫% ভুট এখন জামাতের আছে তার প্রমান অতিতের নির্বাচন গুলি
Writer is a monafiq.
He forget about ALLAH. And Quran.
কারো কোনো আমলকে নিফাক্বের বহিঃপ্রকাশ বলতে পারেন। তা না করে কাউকে সরাসরি কাফের বা মুনাফিক্ব বলা খুবই রিস্কি কাজ। আর প্রকৃত মুনাফিক্বেরাই নিজের নেফাক্বী সম্পর্কে নিঃসংশয় হয়ে থাকে। একজন তাবেয়ী বলছেন, আমি এতজন সাহাবীর সাথে সাক্ষাত করেছি। তাদের প্রত্যেককেই দেখেছি, নিজ সম্পর্কে তারা নিফাক্বের শংকায় ভুগছেন।
তাছাড়া নিফাক্বি কাজের সুস্পষ্ট সংজ্ঞা আছে।
ইলেকশানে লাফালাফি করতে না দিলে যে নেতা কর্মীরা হতাশ হয়ে যাবে তারা তো নিছক পাওয়ার পলিটিক্স করা দলের নেতা কর্মী হওয়ার যোগ্য। কোনো আদর্শিক আন্দোলনের জনশক্তিরতো এত চঞ্চলতা থাকার কথা না।
স্যার কথাটি বেশ ভাল লেগেছে নিছক ভাল লাগার জন্য নয় বরং সত্যিকার অর্থে বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য যোগ্যতা সম্পন্ন কর্মী হওয়ার বিকল্প নেই।
# অতীত জামায়াত নেতৃবৃন্দের নৈতিকতা কিংবা যোগ্যতা নিয়ে যতটুকু না চিন্তিত তার বেশি চিন্তিত বেশী জামায়াতের নেতৃত্ব নিয়ে। কারণ দিনে দিনে জামায়াত ভারী হচ্ছে শিবিরের সাপ্লাই দেওয়া নেতৃত্ব দিয়ে।সেই ক্ষেত্রে এক সময়কার সেই তুখোড় ছাত্র সংগঠ কাদের কে নিয়ে আন্দোলনের স্বপ্ন দেখছে ? আমি ১৭ বছর শিবির করে যতদূর বুঝতে পেরেছি ছাত্রশিবিরের একমাত্র কেবলমাত্র শুধুমাত্র দায়িত্ব হচ্ছে ইঞ্জিন(নেতা) তৈরী করা। কিন্তু পরিতাপের বিষয় তারা সেই গুরু দায়িত্ব ভুলে একশ্রেণির অন্ধ অকর্মন্য বগি তৈরীতে ব্যস্ত রয়েছে।সেক্ষেত্রে যে কয়টা ইঞ্জিন রয়েছে তারা এত এই অকোজো বগি দেখে ভয়ে পালাচ্ছে। বরং যে কয়জন এসব বগি থেকে বাছাইকরে কিছু নেতৃত্ব তৈরী করার চেষ্টা করেন সেই জামায়াতের আশীর্বাদপুষ্ট নেতাদের কিংবা তথাকথিত ব্যক্তিগত আনুগত্য লাভের আশীর্বাদ পাওয়া কিংবা ছাত্র সংগঠনের উপর ব্যক্তিগত প্রভাব বজায় রাখার স্বার্থে দলীয় প্রয়োজনের চেয়ে ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা লালন করে তাদেকেও কৌশলে তথাকথিত ছাত্রজীবন কিংবা কেন্দ্রের জনশক্তি উপাধি দিয়ে আন্দোলন থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।