“সুফিবাদ হচ্ছে একটা কাদার মতো। যেখান থেকে অনেক ভালো কিছু গড়ে উঠতে পারে। আবার অনেক ভালো কিছু এই প্যাঁকে পড়ে নষ্টও হয়ে যেতে পারে। কথায় বলে, ‘উত্তম নিশ্চিন্তে চলে অধমের সাথে, তিনিই মধ্যম, যিনি চলেন তফাতে।’

আমি নিজেকে উত্তম মনে করি না। তাই এ ধরনে আধ্যাত্মিকতা চর্চা হতে যথাসম্ভব দুরে থাকি। এদিক থেকে নিজেকে আমি খানিকটা আমলবাদী হিসেবে দেখতে পাই।

though, in the sense of transcendence, spirituality is a must for understanding, and understanding is a must for true knowledge and proper guidance.”

পোস্ট লেখকের প্রতিমন্তব্য:

“ইসলামের প্রাণরসটুকু নিয়ে গড়ে উঠেছে ‘সুফিবাদ’। আধ্যাত্মিকতা চর্চা করতে গিয়ে বড় রকমের বিপথগামী হবার আশঙ্কা থাকে, অপরদিকে আধ্যাত্মিকতাবিহীন ধর্মচর্চা কেবলই কিছু সামাজিক কর্মকাণ্ড ও আচার-অনুষ্ঠান, যা খোদা পর্যন্ত পৌঁছায় না।

যে ব্যক্তির ইন্টেলেকচুয়াল চর্চা আধ্যাত্মিকতা দ্বারা গাইডেড নয়, সে ধর্মজগতের বিশাল ইন্টেলেকচুয়াল ভাণ্ডারে উদ্দেশ্যহীন পাক খেতে থাকে। আর ধর্মের রুক্ষ-শুষ্ক-বর্বর ইন্টারপ্রিটেশানও এদের মধ্য থেকেই আসে। উভয়ের ভারসাম্য কাম্য। সেটাই ইসলাম।”

*****

[সুফিবাদ সম্পর্কিত একটা সাম্প্রতিক পোস্টে আমাকে ট্যাগ করা হয়েছে। লেখক প্রাজ্ঞ ব্যক্তি। পোস্টটাও বেশ ভালো। সেখানে আল্লামা রুমীর সাথে তাঁর উস্তাদ ও বন্ধু শামস তাবরীজির পরিচয়ের ঘটনা ও তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে মজার ঘটনার বর্ণনা আছে। সেই পোস্টে সুফিবাদ নিয়ে আমার এই মন্তব্য।]

ফেসবুকে প্রদত্ত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

Shakir Elahi: Without spirituality the religion is nothing but a dry obsolete doctrine. Spirituality is definitely the most important subject of Islam. In that sense Sufism or spirituality is for everyone although nowadays it is very hard to find a true spiritual master. But if a spiritualist follows the sunnah then surely, he or she will succeed.

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আমার দৃষ্টিতে সুফিবাদ আর আধ্যাত্মিকতা এক নয়। সুফিবাদ হলো আধ্যাত্মিকতার একটা ধরন। ওয়ান অব মেনি। আধ্যাত্মিকতার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তো আমি পোস্টেই বলেছি।

Shakir Elahi: sir, in classical context Sufism or tasawwuf or Islamic spirituality are the same thing. When I think of Sufism, I think of the works of Imam Al Ghazali, Abdul Kadir Gilani, Junayed Baghdadi, Bayezid Bustami, Mawlana Rumi, Ibn Al Arabi, Rabia Bashri etc. They were Sufis with the love and fear of Allah.

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আমরা যদি সাহাবা আজমাইনকে আদর্শস্থানীয় হিসাবে গণ্য করি, তাদেরকে কি সুফী বলা যাবে? হ্যাঁ, কাউকে কাউকে ধরা যাবে। কিন্তু এজ এ হোল, তারা কি সুফী ছিলেন? সুফী বলতে আমরা সাদামাটাভাবে যা বুঝি, সে অর্থে?

Shakir Elahi: সাহাবারা অবশ্যই সুফী ছিলেন, সর্বোচ্চ পর্যায়ের সুফী। উনারা পরবর্তী ওলী-আওলিয়া থেকেও অনেক অনেক বড় সুফী। কেউ কেউ নন, সবাই। আর সুফিবাদ তার সমর্থন পায় আমাদের নবী হযরত মোহাম্মদ (সা) থেকেই। আসলে সুফিবাদের নামে পরে অনেক বাজে বিষয় চলে আসছে। কিন্তু সুফিবাদের ক্লাসিক্যাল ধারাকে কোনোক্রমেই সমালোচনা করা যায় না। সুফিবাদের ইতিহাস পড়লেই যার কিছুটা হলেও ফিলোসফিক ট্রেনিং আছে, সে এর গুরুত্ব ধরতে পারবে বলে আমার মনে হয়।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: তাহলে কি এই কথা বলা যাবে– নবী করীম (সা) সুফিবাদ নিয়ে এসেছিলেন? তা তো না। বরং তিনি নিয়ে এসেছেন ইসলাম। তাহলে কি আমরা বলব সুফিবাদ এবং ইসলাম এক ও অভিন্ন কিছু? Are they identical? এর উত্তর যদি হ্যাঁ হয় তাহলে আমরা ‘ইসলাম এবং মুসলিম’ কথাগুলো এভাবে না বলে ‘সুফিবাদ এবং সুফি’ – এভাবে কেন বলবো? উপরের প্রশ্নের উত্তর যদি নেতিবাচক হয় তাহলে তো আমাদের কিংবা যে কারো উচিত ইসলামের অনুসরণ করা, সুফিবাদের নয়।

যদি বলা হয়, সুফিবাদের মধ্যে অনেক ভালো কিছু আছে যা ইসলামের সাথে মিলে, তাহলে তো সেটা সঠিক কথা। কিন্তু সমস্যা হলো, দুনিয়ার এমন কোনো কিছু নাই যেটার মধ্যে সব কিছু খারাপ এবং ইসলামের সাথে কোনো দিক থেকে যেটার কোনো মিল নেই।

Shakir Elahi: সুফিবাদ নতুন কিছু নয়। ইসলামকে যারা ভিতরে ও বাহিরে অন্তরঙ্গভাবে ধারণ করেন, তারা সুফী। আসলে সুফিবাদ হলো ইসলামকে খুব সিরিয়াসলি অনুসরণ করার একটা নাম। আমি আপনার সাথে এ বিষয়ে একমত যে সুফিবাদ শব্দটা না থাকলেই ভালো হতো। সুফিবাদের প্রথমদিকের একজন লেখক কুশাইরি বলেছেন– একটা সময় ছিলো যখন সুফিবাদ শব্দটা ছিলো না, কিন্তু সবাই ছিলো সুফী। আর তার সময় তিনি সুফী শব্দটার বেশি প্রয়োগ দেখাচ্ছেন, কিন্তু প্রকৃত সুফি বিরল হয়ে পড়েছে।

সোজা কথায়, নিজের নফসকে কন্ট্রোল করে পাপ থেকে বেঁচে থাকা এবং অবিরত পুন্যের কাজ করাই সুফিবাদ। সুফীরা চান সবসময় আল্লাহর স্মরণ করতে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তারা দুনিয়ার দায়িত্ব পালন করেন না। বেশিরভাগ ক্লাসিক্যাল সুফির ফ্যামিলি লাইফ ছিলো। তারা সমাজের ভালোর চেষ্টা করতেন, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেন।

আরেকটা বিষয় এই মুহূর্তে মনে হলো। আজকাল ইসলামোফোব বলে একটা জিনিস চালু হয়েছে পশ্চিমা জগতে, যা আমরা মুসলিমরা অমুলক বলে দাবি করি। তেমনই সুফীফোবও অমুলক, যদি সুফিবাদ বলতে আমরা ক্লাসিক্যাল সুফি সাধকদের কথা ভাবি।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: হাদীসে জিব্রাইলে তাকওয়ার ঊর্ধ্বতন স্তর হিসেবে এহসানের যে স্তর সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে সেটাই তো যথেষ্ট। ‘সুফিবাদ’ নামক নতুন একটা টার্মের কী দরকার?

হ্যাঁ সুফিবাদের অনেক অবদান আছে। সেটা ঐতিহাসিক সত্য। আবার সুফিবাদের অনেক নেতিবাচক অবদান আছে। সেটাও ঐতিহাসিক এবং অদ্যাবধি রূঢ় ও বাস্তব সত্য।

এভাবে ইতিহাসের পরিক্রমায় অনেক কিছু অবদান রেখেছে এবং অনেক ক্ষতির কারণও হয়েছে। সেগুলো স্বীকার করা বা অস্বীকার করা অর্থহীন। আমাদেরকে বারবার ফিরে যেতে হবে আমাদের মূল জায়গা তথা আল কোরআন ও হাদীসে। মনে রাখতে হবে, কোনো বিষয়ের জন্য আমরা যেই কথাটা বা নামটা ব্যবহার করি অর্থাৎ terminology-র যে ব্যাপার, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

Shakir Elahi: সুফিবাদ শব্দটা আসছে, এটা একটা ভাষাগত দুর্ঘটনা হতে পারে। তবে শব্দটার একটা মূল্য আছে এই কারণে যে ইসলামে ইবাদতের ভিতর ও বাহির দুই দিকেরই গুরুত্ব আছে। যেমন– নামাজের রুকু-সিজদা করা হলো বাইরের দিক, আর নামাজে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ মনোযোগ আনা হলো ভিতরের দিক। সুফি সাধকগণ ইসলামের বাইরে কিছুই সজ্ঞানে শেখাতে চান না। তারা ছিলেন অভ্যন্তরীণ বিষয়াবলীর পরামর্শক। আাপনি সুফি শব্দটা বাদ দিয়ে ‘এহসান’ ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু ইমাম গাজ্জালী, মাওলানা রুমি, কিংবা ইবনুল আরাবীর লেখা বইগুলোকে ইসলাম থেকে বাদ দিতে পারেন না।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: যাদের নাম বলেছেন তারা ইসলামের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ইসলাম আর ইসলামের ইতিহাস, এ দুটো আলাদা জিনিস। আমাদেরকে ইসলাম দিয়ে ইসলামের ইতিহাস বুঝতে হবে। ইসলামের ইতিহাস দিয়ে ইসলাম বুঝলে সমস্যা আছে। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, আমার যুগ হচ্ছে শ্রেষ্ঠ যুগ। এর পরের যুগ এবং এর পরের যুগ। অর্থাৎ, এই তিন যুগের যারা অনুসরণীয় ব্যক্তি তাদেরকে সেভাবে অর্থাৎ যথাযথভাবে গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার দিয়ে proportionately মানতে হবে। যারা সুফিবাদের অনুসারী তাদের মধ্যে এই ধরনের ভারসাম্যপূর্ণ চিন্তাধারা ও দৃষ্টিভঙ্গি দেখা যায় না। আমি একজন সাধারণ সাহাবীকে পরবর্তী কালের অনেক বড় মাপের সুফি বুজুর্গের চেয়েও অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়ার পক্ষপাতি। এটিকে আমি সরাসরি ও আক্ষরিকভাবে mean করি।

সোজা কথায়, কোরআন-হাদীস এবং রাসূলুল্লাহর (সা) ২৩ বছরের দীর্ঘ জীবন পরিক্রমা, এত জন সাহাবী, তাবেঈ এবং তাবে তাবেয়ীর জীবনী আমাদের কাছে থাকার পরে নতুন করে কোনো সুফি-দরবেশের অনুসরণ করার কোনো গরজ আমি অনুভব করি না। কাউকে এজন্য আমি কোনো পরামর্শ দিতে রাজি নই। ভালো-মন্দ মিশ্রিত হয়ে আছে এমন জায়গায় যাওয়ার কী দরকার? যখন কারো কাছে আছে অবিমিশ্র ভালোর শুদ্ধ ঠিকানা।

Shakir Elahi: শ্রেষ্ঠ তিন যুগের মধ্যেই সুফিবাদের সবচেয়ে বড় প্রচারকদের নাম পেয়ে যাবেন। আপনার সাথে আমি একমত যে– যে কোনো সাহাবী (আমি ‘সাধারণ’ শব্দটা ব্যবহার করতে চাই না, কারণ কোনো সাহাবী সাধারণ মানুষ নন) আমার উল্লেখিত ব্যক্তিগণের চেয়ে আল্লাহর নিকটবর্তী। হাসান আল বসরী একজন তাবেয়ী ছিলেন। আর উনার সমসাময়িক ছিলেন রাবেয়া বসরী। উনাদের বিষয়ে কেউ খারাপ কথা আজ পর্যন্ত বলেনি বলেই জানি। উনারা ছিলেন প্রথম দিককার সুফি। ফরিদ উদ্দীন আত্তারের তাজকিরাতুল আউলিয়া পড়লেই বুঝা যায়, ক্লাসিক্যাল সুফিরা কী ধরনের আল্লাহভীরু মুসলিম ছিলেন।

আমার কথা হলো, প্রকৃত সুফিবাদ ইসলামের বাইরে কিছুই শেখায়নি। আসলে আজকালকার ভণ্ড দেওয়ানবাগীদের দেখে আমাদের মধ্যে সুফিফোবিয়া তৈরি হয়েছে।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: সুফিবাদের সত্য-মিথ্যা, ভালো-মন্দ, যথার্থতা কিংবা অযথার্থতা নির্ণয় করার মানদণ্ড হলো কোরআন, হাদীস ও সীরাত। ব্যাপারটা যদি তাই হয়, তাহলে সরাসরি হেদায়েতের উৎস হিসেবে কোরআন, হাদীস ও সীরাত অনুসরণ করতে অসুবিধা কী? সেখানে সুফিবাদ নামক অ্যাডিশনাল একটা বিষয়ের কেন প্রয়োজন পড়বে? তাছাড়া উপরের একটা মন্তব্যে বলেছি, তাকওয়া এবং এহসান, এই দুই স্তরের কথা, যেটা হাদীসে জিবরীলে বলা হয়েছে, সেগুলোকে অনুসরণ করলেই তো যথেষ্ট। আল্লাহ তায়ালাকে কীভাবে স্মরণ করতে হবে সেটা তো আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেছেন, হাদীসে বিস্তারিত বলা হয়েছে। সেজন্য সুফিবাদের মতো একটা নতুন বা অতিরিক্ত বাদের কেন প্রয়োজন পড়বে, এটি আমি কোনোমতে বুঝতে পারছি না। বিশেষ করে এর অনুসারীরা যখন নিজেরাই স্বীকার করছেন যে এর মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে গলদ ও বিভ্রান্তি ঢুকে পড়েছে।

Shakir Elahi: আমি তো বলেছি, সুফিবাদ শব্দটা ভীতি তৈরি করলে বাদ দিতে পারেন। কিন্তু উল্লেখিত আওলিয়ারা অবশ্যই ভালো মানুষ ছিলেন এবং এদের বইগুলো খুব দরকারী। আপনার যুক্তি অনুসরণ করলে কোরআন-হাদীস ছাড়া আর কোনো রকম স্কলাস্টিক ওয়ার্ক আমাদের গ্রহণ করার প্রয়োজন পড়বে না। সেক্ষেত্রে ইমাম আবু হানিফা, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম হাম্বল থেকে শুরু করে আপনার লেখা পর্যন্ত ছুঁড়ে ফেলে দিতে হবে। এটা কী করে হয়? পরবর্তী জ্ঞানীরা বই লিখবেন না?

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: হ্যাঁ, এই কথাটাই তো আমি বলতে চাচ্ছি। কোরআন, হাদীস এবং সীরাতের বাইরে অন্য সকল ব্যক্তি এবং গ্রন্থকে নিছকই পরিপূরক বা সহায়ক হিসেবে মনে করতে হবে। যেগুলো সম্পর্কে জানলে ভালো, না জানলো তেমন কোনো সমস্যা হবে না। সেগুলো যদি সাপ্লিমেন্টারি বা পরিপূরকই হয়ে থাকে, তাহলে সেগুলোর উপর এতটা গুরুত্ব আরোপ করার কোনো মানে হয় না।

দুঃখজনক হলেও সত্য, ব্যাপারটা এমন না হয়ে হয়েছে এর উল্টোটা। পরবর্তীকালের জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিবর্গ এবং তাদের কিতাবগুলোর আলোকে কোরআন, হাদীস এবং সীরাত তথা ইসলামকে বুঝা ও বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এটি ভুল।

ইসলামের মূল বিষয়গুলোকে জানাটাই সাধারণের জন্য যথেষ্ট। জ্ঞান-গবেষণা ও ইতিহাস, এগুলো হচ্ছে কতিপয় বিশেষজ্ঞের জন্য। সর্বসাধারণের জন্য নয়। সর্বসাধারণের কাজ হচ্ছে সহজ, সরল, সাধারণ বিষয়গুলাকে অনুসরণ করা, যেগুলো মানুষ খুব সহজে জানতে পারে এবং বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে বুঝতে পারে। এর অতিরিক্ত কোনো কিছু মানুষকে সাজেস্ট করা হচ্ছে অন্যায় ও বোকামি। যেটা দুঃখজনকভাবে হলেও সত্য, আমাদের অনেক জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিবর্গ করে গেছেন।

Shakir Elahi: কোরআন-হাদীসের ব্যাখ্যা সবাই করতে পারেন না। কোরআন-হাদীসের ব্যাখ্যা এবং ব্যবহার জানতেও আমাদের এক্সপার্ট লাগবে। একই কোরআন পড়ে কেউ সাহাবী হয়েছেন, আর কেউ আইএসআইএস হয়েছে। আমি কোরআন-হাদীসের সহায়ক হিসেবেই ওই বইগুলোকে নিচ্ছি, সাপ্লিমেন্ট হিসেবে নয়। তবে বইগুলো যুগে যুগে মানুষের উপকার করেছে।

যে কোনো ভালো মানুষের বয়ান কিংবা ভালো মানুষের লেখা যে মানুষকে আমল করতে উদ্বুদ্ধ করে, এটা আমি নিজের জীবনেই দেখেছি। সাহাবীদের জীবনী পড়লে কিংবা তাজকিরাতুল আউলিয়া পড়লে আমাদের মনে একটা আর্জি তৈরি হয় আল্লাহর সাথে সম্পর্ক তৈরির জন্য। তাই শুধু একটা নাম সুফিবাদকে বাদ দেওয়ার জন্যে এইসব বই মানে ক্লাসিক্যাল সুফিদের লেখা বই বাদ দেওয়ার চিন্তা অনেক বড় অনর্থক স্যাক্রিফাইস মনে হচ্ছে।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, কোরআন বুঝা সহজ। আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ (সা) বলেছেন, দ্বীন ইসলাম হলো সহজ সরল। এক্সপার্ট লাগে বিশেষ কিছু ব্যাখ্যাসাপেক্ষ বিষয়কে ভালো করে বুঝার জন্য। জীবন চলার সঠিক পথ তথা ইসলামকে যদি সাধারণ মানুষজন জীবনের সাধারণ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কোরআন-হাদীসের সহজ পাঠ হতে সঠিকভাবে বুঝতে না পারতো, তাহলে কারো পক্ষে একে সঠিক হিসাবে প্রত্যয়ন করা এবং ঈমান আনা সম্ভব হতো না।

Shakir Elahi: আমার সাথে আপনার মূল বিষয়ে কোনো মতের পার্থক্য নাই। তবে আপনার মতো কালচার্ড মানুষ যখন বড় বড় আউলিয়াদের লেখা অপ্রয়োজনীয় মনে করেন, তখন খুব হতাশ লাগে! আসলে সেক্যুলারিজম, মওদূদীবাদ, আহলে হাদীস, সালাফী– এসব বাতিল ফিরকাগুলো ভালো ভালো মানুষের রুচিতেও জং ধরিয়ে দিতে পারে! এইসব থেকেই উঁটকো সুফিফোব নামের এলার্জিগুলো আসছে। Pls don’t mind I am just telling about my firm understanding.

Moni Rul: তাওহীদ ও রেসালাতের নিগুঢ় জ্ঞান ব্যতীত সুফিবাদের দরজায় নক করার মানেই হলো নিজেকে একটা সূক্ষ্ম ঘূর্নাবর্তের কিনারে দাঁড় করানো।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: তাওহীদ ও রেসালতের সঠিক জ্ঞান যদি কারো কাছে যদি থাকে তাহলে তাকে অন্য কোনো বাদ, মতবাদ বা তত্ত্বের দরজায় নক করতে হবে কেন, এটি আমার বুঝে আসে না।

হু মু এরশাদ বাতিজা: আপনার সাথে আমি একমত হতে পারলাম না। কারণ, হযরত শাহজালাল, শাহপরান, খানজাহান আলী, খাজা মাঈনুদ্দীন চীশতী (রহ) সহ আরো অনেক আল্লাহর খাস বান্দাদেরকে সূফীতত্ব গ্রহণ ও চর্চা করতে দেখেছি, এবং তারা কুসংস্কার মুক্ত সমাজ গঠনে ও অনেক অবদান রেখে গেছেন। আর তাদের সূফীবাদ গ্রহণ ও চর্চা কি ভুল ছিল? আশা করি উত্তর দিয়ে যাবেন। তবে অবশ্যই এটা স্বীকার করি বর্তমানের কিছু সূফীবাদ নামের ভন্ডামী মানুষকে সঠিক ইসলাম ও মুসলমানিত্ব থেকে দূরে নিয়ে যাচ্ছে।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: সুফিবাদের উৎস বা দোহাই যে জায়গা থেকে সেই জায়গা তথা হেদায়েতের সে উৎসগুলো যখন আমাদের কাছে আগের যুগের তুলনায় অনেক বেশি সহজলভ্য এবং আয়ত্তযোগ্য তাহলে কেন আমরা সরাসরি সেখান থেকে অর্থাৎ কোরআন হাদীস থেকেই সব কিছু নিব না? যে কোনো প্রবলেমেটিক ধারায় কিছু ভালো মানুষ তো থাকতেই পারে। এমন কোনো সামাজিক ধারা তো পাওয়া যাবে না, যেটার মধ্যে সব মানুষেরা খারাপ। সুতরাং আমার মতে সবার উচিত সরাসরি সুন্নাহ বলতে যেটা বুঝায় সেখান থেকে হেদায়েত গ্রহণ করা। সেটাকে অনুসরণ করা। এবং মতবাদ হিসেবে শুধুমাত্র ইসলামের সাথে নিজেকে আইডেন্টিফাই করা। বাকিগুলো অগ্রাহ্য করা। বিশেষ করে যখন সেগুলোর মধ্যে এত এত বেশি পরিমাণে গলতি ঢুকে গেছে।

উত্তর চট্টগ্রামের একজন অধিবাসী হিসেবে বলতে পারি, আমি সুফিবাদের ভিকটিম। সুতরাং আমি যা বলেছি আমার জন্য সেটাই সঙ্গত। আপনার বা অন্য কারো প্রেক্ষাপট কিংবা এনভায়রনমেন্ট ভিন্ন হতে পারে। সেটা আপনার সৌভাগ্য। ভালো থাকেন।

Kamrulhasan Rashed: আল্লাহ রহম করুন। বিষয়টি গুরুত্ববহ তবে ঝুকিপূর্ণ বটে। তবে আত্মিক উন্নতিতে সার্থক সুফিবাদের খোঁজ দেবেন কি?

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আত্মিক উন্নতির জন্য তো আল্লাহ তায়ালা আল্লাহর রাসূলের (সা) মাধ্যমে সাহাবীদেরকে শিখিয়ে দিয়ে গেছেন, কীভাবে কী করতে হবে। সেটি আলাদা করে ইসলামী মরমীবাদ তথা সুফিবাদ নামে একটা মতবাদের মাধ্যমে কেন চর্চা করতে হবে, তা আমার বুঝে আসছে না। আর হ্যাঁ, আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসূল (সা) এবং সাহাবা আজমাইনদেরকে কীভাবে আত্মিক উন্নতির উপায় শিখিয়েছেন সেটি তো কুরআন এবং হাদীসে খুব ভালোভাবে বর্ণিত আছে। এ বিষয়ে সমকালীন কোনো গ্রন্থ যদি আপনি পাঠ করতে চান তাহলে আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর সাহেবের এ সংক্রান্ত বইটি পড়তে পারেন। বইটার নাম একজেক্টলি এখন আমার মনে আসছে না। আপনি একটু খোঁজ করলেই বাজারে পাবেন।

কামাল আদ-দীন: সূফীবাদই যদি মানি, তাহলে ইসলামাবাদের কী হবে??

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: হতে পারে ইসলামকে মেনেই তারা মনে করে সুফিবাদ হলো ইসলামের অধীনস্ত একটা কিছু। এটি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি। তাদের যেটা ভুল হচ্ছে সেটি হলো, সুফিবাদ তথা মরমীবাদ, ইসলাম যে মতাদর্শের কথা বলে সেটার সমান্তরাল একটা বৈশ্বিক মতবাদ। সুফিবাদ হলো মরমীবাদের ইসলামী ভার্সন। বলা যায় ইসলামী মরমীবাদ।

কামাল আদ-দীন: ধন্যবাদ প্রিয় ভাই, আমি বলতে চাচ্ছি ইসলামের নামে অন্য কোনো মতবাদ গ্রহণ করার সুযোগ আছে কি? যে ধারণাটির অস্তিত্ব কোরআন-সুন্নাহয় নেই।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: একটা মতবাদ বা তন্ত্রকে প্রধান বা মূল ধরে সেটার অধীনস্ত অন্য কোনো তন্ত্র বা মত হতে পারে। কিন্তু সমান সমান বা প্যারালাল হতে পারে না। সমান সমান বা প্যারালাল হলে, একটিই থাকবে। দুইটা সমান সমান বা প্যারালাল জিনিস একসাথে থাকতে পারে না। এ ধরনের মতাদর্শগত বিষয়ে বিশেষ করে।

লেখাটির ফেসবুক লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *