মিলিন্ডা যদি বিল গেটসের সম্পত্তির অর্ধেক (৩৫ বিলিয়ন ডলার) না নেন, অথবা বিল গেটসের উইলে প্রতিশ্রুত ১০ মিলিয়ন ডলার রেখে বাদবাকি অর্থ দান করে দেন, তাহলে বোঝা যাবে তাদের ডিভোর্সের ব্যাপারটা অর্থসংশ্লিষ্ট নয়।

ইসলামে তালাকের বিধান নিয়ে আমি কিছুদিন আগে একটি বিস্তারিত লেখা লিখেছি। এই লিংকে সেটি পাবেন। ফেইসবুকে শেয়ার করা হয়ে উঠেনি।

লেখাটার জন্য যখন আমি প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম তখন ইউরোপ-আমেরিকার এই অদ্ভুত নিয়ম সম্পর্কে জানতে পারি। সেখানকার ডিভোর্স ল অনুসারে এমনকি স্ত্রীর পরকীয়ার কারণে স্বামী যদি তার স্ত্রীকে তালাক দেয় তাহলেও স্বামীর স্থাবর-অস্থাবর সকল সম্পত্তির অর্ধেক মালিকানা স্ত্রী পেয়ে যাবে। তাদের যদি একটি বাড়ি থাকে, সেই বাড়িটি আদালতের তত্ত্বাবধানে নিলামে তোলা হবে এবং বিক্রয়কৃত অর্থ তাদের দু’জনের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে দেয়া হবে। তদুপরি আদালতের নির্দেশ অনুসারে স্ত্রীর ভরণ পোষণের জন্য স্বামীকে মাসে মাসে অতিরিক্ত টাকা পয়সা দিয়ে যেতে হবে।

এই কারণে সেখানকার পুরুষেরা এত ঝুঁকি নিয়ে বিয়ে করতে চায় না। বিয়ে না করেই যেহেতু সব ‌‘ইয়ে’ সারা যায় তাহলে বিয়ের আর দরকার কী?

আর ছেলেরা বিয়ে করে না বলে মেয়েরা ‌‘স্বেচ্ছায়’ ছেলেদের কাছে যথাসম্ভব এভেলেবেল থাকে। ‌‘না করে’ তো আর থাকা যায় না। আমাদের বাসার খরগোশগুলো নিয়ে আমি একটা এক্সপেরিমেন্ট করেছিলাম কমপক্ষে ৩ মাস। মেয়ে খরগোশগুলোকে যখন ছাড়তাম ছেলে খরগোশগুলোকে আটকে রাখতাম। আবার ছেলে খরগোশগুলোকে যখন ছাড়তাম তখন মেয়ে খরগোশগুলোকে আটকিয়ে রাখতাম। হাঙ্গার গেইমের মতো সেই এক্সপেরিমেন্টের ফলাফল ছিল খুবই ইন্টারেস্টিং।

সে যাই হোক, তালাকের নিয়ম সংক্রান্ত ভিডিও দেখতে গিয়ে সেগুলোর কমেন্ট সেকশনে দেখেছি, সেখানকার পুরুষরা গণহারে তালাকের এই নিয়ম নিয়ে খুবই তিক্ত ও বাজে মন্তব্য করছে।

মিলিয়নার বিয়ে করলে তালাকের মাধ্যমে আপনি রাতারাতি মিলিয়নার। বিলিয়নারকে বিয়ের পিঁড়িতে বসাতে পারলে, এরপর তাকে তালাক দিয়ে রাতারাতি আপনি বিলিয়নার। হিসাবটা খুব পরিষ্কার। তালাক দিয়ে কেউ যদি অর্থপ্রাপ্তির মামলা না করে তাহলে শুধু বোঝা যাবে, বিষয়টা অর্থ সংশ্লিষ্ট নয়, বরং নিতান্তই দাম্পত্য সঙ্কট।

‌‘স্পাউজাল মানির সুবিধা স্বামী-স্ত্রীর যে কেউ পেতে পারেন’ এ ধরনের তাত্ত্বিক কথা বলে সান্ত্বনা পাওয়ার কোনো উপায় দেখি না। প্রায় সকল ক্ষেত্রেই স্বামীদের টাকায় স্ত্রীরা ভাগ পেয়ে থাকেন। আমাদের এখানকার মতো ওখানেও টাকা পয়সা সব থাকে পুরুষদের হাতে। তুলনামূলক হিসেবে। এবং নারীরা তাদের তুলনায় আর্থিকভাবে অসচ্ছল কাউকে বিয়ে করে না। এটি গড়পড়তা সাধারণ পর্যবেক্ষণ।

এখানে ওখানে সবখানেই, সমানাধিকারের দাবী করলেও নারীরা স্পাউজ হিসেবে পছন্দ করে তাদের তুলনায় সম্ভাব্য সবদিক থেকে ‌‘বেশিওয়ালা’ পুরুষদেরকে! এটি নিতান্তই প্রাকৃতিক ফেনোমেনা। এ নিয়ে ‌‘রাজনীতি করার’ কিছু নাই। আর হ্যাঁ, ইয়েট-টু-বি-এস্টাবলিশড অবিবাহিত তরুণেরা, এবার বুঝে নাও, হাউজ হাজবেন্ড হওয়ার ‌‘সৌভাগ্য’ কেন তোমাদের হয়ে উঠে না।

ডিসক্লেইমার: এটি একটি শেয়ারকৃত লেখার ফরোয়ার্ডিং। কিন্তু লেখাটি লেখক সরিয়ে নেয়ায় এখানে উল্লেখ করা যাচ্ছে না। (‍“This content isn’t available right now. When this happens, it’s usually because the owner only shared it with a small group of people, changed who can see it or it’s been deleted.”)

মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

ফাইজা তাবাসসুম: আপনার প্রথম প্যারার সাথে একমত হতে পারলাম না। এটা একপ্রকার সরলীকরণ। উনারা দু’জন মিলে ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে যত কাজ করেছেন, তার সবকিছুর ক্রেডিট একমাত্র বিলের দখলে চলে যায় তাহলে। পাশ্চাত্যে ২৭ বছরের দাম্পত্য জীবন টিকে গেছে যাদের, তাদের ডিভোর্সের কারণ নিয়ে আমরা যেটা ভাববো, সেটা ‌‘জল্পনা-কল্পনা’ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। মেলিন্ডা যদি ২৫ বিলিয়ন দান নাও করেন, তাহলেও এই ডিভোর্সটি ‌‘অর্থসংশ্লিষ্ট’ এটা বলার অবকাশ থাকে বলে আমার মনে হয় না।

জাহিদ হাসান হৃদয়: ফাউন্ডেশন একটা দাতব্য সংস্থা। টাকা উপার্জনের সাথে এটার তেমন সম্পর্কই ছিলো না। বিল গেটস প্রধানত এত টাকার মালিক হয়েছেন মাইক্রোসফট থেকে, যেখানে মেলিন্ডার একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে কাজ করা ছাড়া তেমন কোনো ভূমিকা ছিলো না।

Mozammel Hossain Toha: ব্যাপারটা আপনি যেভাবে বলেছেন, সম্ভবত পুরাপুরি সেরকম পুরুষবিরোধী না। যতটুকু জানলাম যদি এরকম হয় যে বিয়ের পরে নারীর উপার্জিত সম্পত্তির পরিমাণ বেশি হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে তার সম্পত্তিও দুই ভাগে ভাগ হবে এবং স্বামী সেখান থেকে অর্ধেক সম্পত্তি পাবে। ব্যাপারটা ওরা যৌথ উপার্জন হিসেবে দেখে।

Riaz Hasan: ৯৫% কেইসে মহিলারা বেনিফিসিয়ারি। কারণ পুরুষের ইনকামই জেনারেলি বেশি হয়। ব্যতিক্রম আছে, তবে কম।

Asm Fakhrul Islam: আাপনার ‌‘তালাকের যেসব নিয়ম আপনি জানেন না’ শিরোনামের পুরো লেখাটা এক্সজেস্টিভলি পড়তে পারিনি, তবে দুইটা পয়েন্টে আমার প্রশ্ন ছিলো।

১) ছেলে-মেয়ে দুষ্টামি করে পরস্পরকে স্বামী-স্ত্রী বললে, সেখানে বিয়ে সংঘটনের কোনো নিয়াত না থাকলেও, বিয়ের উদ্দেশ্যে সাক্ষী নির্ধারিত না হলেও, পুরো বিষয়টায় বিয়ের কোনো নিয়ত না থাকলেও বিয়ে হয়ে যাবে বলে আপনি মনে করছেন?

২) বাবা-মা অন্যায় আদেশ করলেও, বিশেষত যেখানে আরেকজনের উপর জুলুম ইনভলভড, সেখানেও বাবা-মার আদেশ মানতে হবে মনে করছেন?

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: বিয়ের নিয়ত ছাড়া বিয়ের শর্ত পূরণ করলে নৈতিকভাবে বিয়ে হবে না, আইনগতভাবে বৈবাহিক সম্পর্ক বলবৎ হবে, এমনটাই মনে করি।

আপনার দ্বিতীয় কথাটা প্রভোকিং। লোডেড কোয়েশ্চনও বলতে পারেন। আপনি প্রেমিজে বলছেন, অন্যায় আদেশ। তাই, কনক্লুশন তো এফারমেটিভ হবেই না, সেটা তো নিশ্চিত।

নীতিকথা হলো, অন্যায় আদেশ হলে মানা যাবে না। বাস্তবে ব্যাপারটা যাই হোক না কেন, পারিবারিক ব্যবস্থাপনায় বাবার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কিন্তু মায়ের কথা বলা হয় নাই। বিষয়টা তাৎপর্যপূর্ণ। বউ-শ্বাশুড়ির দ্বন্দ্ব থেকে এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য আমরা সহজেই বুঝতে পারি।

তালাকের যেসব বৈশিষ্ট্য লোকেরা জানে না, যেসব বৈশিষ্ট্য ইসলামসম্মত অথচ উপেক্ষিত, সেসব বিষয়কে সামনে নিয়ে আসার জন্য এই লেখা। শিরোনামটাও তাই ‍“তালাকের যেসব নিয়ম আপনি জানেন না” এভাবে দিয়েছি।

সময় নিয়ে লেখাটা যদি পুরোটা পড়েন তাহলে খুশী হবো। আশা করি, আপনার ভাল লাগবে। ধন্যবাদ।

Kaniz Fatema: খেলাধুলা, সংস্কৃতি, সাহিত্য নিয়ে বা ব্যক্তিগতভাবে যত পশ্চিমাদের চিনি তাদের সবাই বিবাহিত, জীবনের এক পর্যায়ে তারা সবাই লিভ টুগেদার করেন বটে কিন্তু শেষটা হয় বিয়েতেই। তাই তারা বিয়ে করতে চাননা কথাটা ঠিক নয়, আর শেয়ারকৃত লেখাটি আপনার ব্যক্তিত্বের সাথে যায়না।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: একটা বাচ্চা, সে যত নারীকে দেখেছে তারা সবাই বিবাহিত। সে যত পুরুষকে দেখেছে তারা সবাই বিবাহিত। এ থেকে সে ধারণা করে নিয়েছে, নারীমাত্রই বিবাহিত। পুরুষ মাত্রই বিবাহিত। আপনার ‍“খেলাধুলা, সংস্কৃতি, সাহিত্য নিয়ে বা ব্যক্তিগতভাবে যত পশ্চিমাদের চিনি তাদের সবাই বিবাহিত,” এই কথাটাও সে রকম বলে মনে হয়েছে।

‍‌‘দেনমোহর প্রসঙ্গে বিয়ে বনাম লিভ-টুগেদার’ এই লেখাটাতে আমি দেখিয়েছি পাশ্চাত্য ব্যবস্থায় লিভ-টুগেদার এক ধরনের বিয়ে। ‌‘বিয়ে’ বললেই কোনো সম্পর্ক বৈবাহিক হয়ে যায় না। আবার, ‌‘বিয়ে নয়, লিভ টুগেদার’ বা ‌‘‌‘অন্যকিছু’ বললে বিয়ে হবেই না, এমনও নয়। মোটকথা হলো বিয়ের মৌলিক বৈশিষ্ট্য পাওয়া গেলেই সেটা বিয়ে হিসেবে গণ্য হবে।

মুসলমানের বিয়ে এক রকমের। হিন্দুর বিয়ে এক রকমের। এভাবে একেক সম্প্রদায়ের বৈবাহিক ব্যবস্থা একেক রকমের। সেগুলোকে কী নামে ডাকা হয় তা ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।

আপনার ভাষায়, পাশ্চাত্যে ‍“জীবনের এক পর্যায়ে তারা সবাই লিভ টুগেদার করেন বটে কিন্তু শেষটা হয় বিয়েতেই”, এই বিয়ে আর আমরা যারা মনে করি বিয়েই নারী-পুরুষের যৌন সম্পর্কের একমাত্র গ্রহণযোগ্য পন্থার নাম, তাদের দৃষ্টিতে বিয়ে, এই দুই বিয়ে কিন্তু এক নয়। লিভ টুগেদার শেষে সন্তানাদিসহ তারা যে বিয়ে করে তা লিভ টুগেদারেরই এক ধরনের ধারাবাহিকতা, এক্সটেনশান ও অলংকার মাত্র। এর মাধ্যমে তালাকের ক্ষেত্রে স্পাউজাল মানি ও ফাইন্যান্সিয়াল সাপোর্ট ছাড়া তারা কার্যত নতুন কিছু অর্জন করে না।

দাম্পত্য সম্পর্ক, অধিকতর সুনির্দিষ্ট করে বললে দাম্পত্য যৌন সম্পর্কের শীতলতা নিয়ে আমি কাজ করছি। তাই তাদের নানা বিশেষজ্ঞের লেখা পড়ি ও কথা শুনি। তাদেরই মতে, অধিকাংশ বিবাহিত দম্পতি তাদের বাসর রাতটা গল্প করে কাটিয়ে দেয়। কারণটা পরিষ্কার।

এবার আপনি নিজেই বুঝেন, ‍“তারা বিয়ে করতে চান না কথাটা ঠিক নয়” আপনার এই যে মন্তব্য সেটা ঠিক কিনা।

এরপরে আপনি বলেছেন, ‍“আর শেয়ারকৃত লেখাটি আপনার ব্যক্তিত্বের সাথে যায়না।” আপনার কথাটা কিছুটা সঠিক বলে মনে করি। আসলে আমি লেখাটা শেয়ার করার সময়ে মনে করেছি, ‌‘সিএসসিএস সোশ্যাল মুভমেন্ট’ নামে আমার এই গ্রুপে আমি লেখাটা শেয়ার করছি। শেয়ার করার খানিকক্ষণ পরে বুঝলাম, ভুলক্রমে আমি এটি টাইমলাইনে শেয়ার করে ফেলেছি। বুঝার পরে আমি সেটি আর সরাই নাই।

তবে, ওই যে বললাম, ‌‘আপনার কথাটা কিছুটা সঠিক বলে মনে করি’, ‌‘কিছুটা’ বললাম, এর মানে হলো ‍“শেয়ারকৃত লেখাটি আপনার ব্যক্তিত্বের সাথে যায়না” আপনার এই মন্তব্যের সাথে আমি অনেকখানি দ্বিমত পোষণ করি। কারণ, আমি সামাজিক উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেই। সোশ্যাল ডিকন্সট্রাকশানের এই কাজে পক্ষ-বিপক্ষ উভয় পক্ষ নারীদেরকে কাজে লাগায়। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। নারীদের প্রসঙ্গ যখন আসে তখন যে সকল ইস্যুজ চলে আসে দাম্পত্য জীবন তার মধ্যে অন্যতম। তাই আমি দাম্পত্য জীবন নিয়ে কাজ করি। এই বিষয়ে আমার বেশ কিছু লেখা আছে। প্রায় সমপরিমাণ লেখা পাইপলাইনে আছে।

খেয়াল করলে দেখবেন, আমি যে সব কথা অকপটে বলে ফেলি কেউ এসব বিষয় এভাবে ব্যালেন্স করে এবং কনক্লুসিভলি বলতে পারে না। হয়তো আপনি ভুল করে মনে করেছেন, আমি বিল ও মেলিন্ডার ডিভোর্স নিয়ে কথা বলেছি। তাদের ডিভোর্সের বিষয়টি আমার এই পোস্টের উপলক্ষ্য। লক্ষ্য হলো বিয়ে ও ডিভোর্স। প্রেক্ষিত হলো ইসলামিক সিস্টেমের নিরিখে পাশ্চাত্য ব্যবস্থার সুবিধা-অসুবিধা বনাম ইসলামি ব্যবস্থার সুবিধা-অসুবিধা।

আমি আমার ব্যক্তিত্ব নিয়ে যথেষ্ট সচেতন থাকার চেষ্টা করি। বুঝতেই পারছেন। আমি ট্রেন্ড ফলোয়ার নই। মুহুর্তে মুহুর্তে স্টেটাস দেই না। যা বলি বুঝে বলি। নিজের বুঝজ্ঞানটাই বলি। আশা করি ভুল বুঝবেন না।

লেখাটির ফেইসবুক লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *