তুমি কাউকে কথা দিয়েছো, পছন্দ করো, কিংবা ভালোবাসো; খুব ভালো কথা। কিন্তু খেয়াল রাখবে, তুমি যেন তোমার প্রিয় মানুষটির মানবিক সীমাবদ্ধতা, নির্বুদ্ধিতা, ব্যক্তিগত স্বার্থচিন্তা কিংবা অসংযত আবেগের কাছে নিজেকে জিম্মি করে না ফেলো। মনে রাখবে, being emotional hostage of someone, is the worst kind of hostage situation.

‌‘না’ বলার ক্যাপাসিটি কখনো কখনো আমাদেরকে শোচনীয় পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করে। কখন এনগেইজ হতে হবে এবং কখন নিজেকে উইথড্র করে নিতে হবে, এই কান্ডজ্ঞানটুকু থাকা চাই। সম্পর্ককে সুস্থ রাখার একমাত্র পদ্ধতি হলো সম্পর্কের সীমাকে মেনে চলা।

মনে রাখতে হবে, সম্পর্ক মাত্রই হচ্ছে একটা ‌‘গিভ অ্যান্ড টেইক’ এর ব্যাপার। কিছু কিছু সম্পর্ক গড়ে ওঠা সৌভাগ্যের ব্যাপার। একই সাথে, কিছু কিছু সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাওয়াটাও সৌভাগ্যের ব্যাপার।

এসব কথা আমি যত্রতত্র, অহরহ এবং বারে বারে বলি। এবং ফর দা রেস্ট অফ মাই লাইফ বলতেই থাকবো। কেননা, এগুলো হলো আমার এবং যে কোনো বোধসম্পন্ন মানুষের জীবনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার সার নির্যাস।

তুমি বা কেউ চাইলেই নিজের জীবনকে নতুন আঙ্গিকে নতুন করে সাজাতে পারবে না। মানুষের যে দীর্ঘ ইতিহাস তারই আলোকে, আমাদের গঠনগত যে প্রাকৃতিক ব্যবস্থাপনা, সেটার সাথে সংগতিপূর্ণ করেই যদি তুমি জীবনযাপন করতে পারো তাহলেই কেবল তুমি সুখী হতে পারবে।

আমার এই কথাটা বিশ্বাস করো, নিজেকে ক্ষতিগ্রস্ত করে আত্মত্যাগ করার পরিণতি কখনো ভালো হয় না। অন্য কারো জন্য তুমি ততটুকুই করবে যতটুকুর ভার তুমি স্বাচ্ছন্দ্যে বইতে পারবে। এই ‌‘অন্য কারো’ মানে তুমি ছাড়া অন্য যে কেউ।

নিজেকে এমন একদিনের জন্য প্রস্তুত করো যেদিন কারো সুপারিশ কাজে লাগবে না এবং যেদিন নিজেকে ছাড়া অন্য কারো কথা কেউ ভাবতেই পারবে না। হ্যাঁ, সেই দিনটা হলো ইয়াওমুল আখেরাহ বা কিয়ামতের ময়দান।

আল কোরআনের এই আয়াতটা যখন আমি পড়ি তখন আমার কাছে মনে হয়, ইসলামের চেয়ে বেশি অস্তিত্ববাদী কোনো তত্ত্ব বা মতবাদ হতে পারে না।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহতালা বলছেন,

يَوْمَ يَفِرُّ الْمَرْءُ مِنْ اَخِيْهِۙ وَاُمِّهٖ وَاَبِيْهِۙ وَصَاحِبَتِهٖ وَبَنِيْهِؕ لِكُلِّ امْرِیءٍ مِّنْهُمْ يَوْمَٮِٕذٍ شَاْنٌ يُّغْنِيْهِؕ

সেদিন মানুষ পালাবে তার ভাই থেকে, তার মা ও বাবা থেকে, এবং তার স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের থেকে। সেদিন প্রত্যেকটি মানুষেরই এমন এক অবস্থা হবে যা তাকে (অন্যদের থেকে) অমনোযোগী করে রাখবে। (অর্থাৎ সে শুধু নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকবে।)

(সূরা আবাসা, আয়াত নম্বরঃ ৩৪-৩৭)

ইতোমধ্যেই যদি তুমি সেরকম কোনো ট্রাপের মধ্যে পড়ে থাকো তাহলে যে কোনো মূল্যে এট দা ভেরি ফার্স্ট চান্স সেটা থেকে বের হয়ে আসো। মনে রেখো, কোনো ক্ষতি জীবনের চেয়ে বড় কোনো ক্ষতি নয়। এবং যে কোনো ক্ষতি একটা পর্যায়ে মানুষের পুষিয়ে যায়, যে কোনো কষ্ট, তা যত বড় বলে তোমার এই মুহূর্তে মনে হোক না কেন, এক সময় তা তুমি ঠিকই ভুলে যাবে।

জগতের সেরা মানুষটি বলেছেন, তোমাদের ভাইকে তোমরা সহযোগিতা করো হোক সে মজলুম অথবা সে জালেম। তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, যে মজলুম তাকে কীভাবে সহযোগিতা করতে হবে সেটা তো আমরা বুঝলাম। কিন্তু যে কিনা অত্যাচারী বা জালেম তাকে আমরা কীভাবে সহযোগিতা করব? তখন তিনি বললেন, অত্যাচারীকে তার অত্যাচার থেকে বিরত রাখাই হচ্ছে তাকে সহযোগিতা করা।

এ কথার মানে হল, যে যেটার জন্য যোগ্য নয়, তার জন্য সেটা অনুমোদন করবে না। কেউ যদি রেড লাইন ক্রস করে তাকে তুমি প্রতিহত করবে। অথবা প্রতিবাদ করবে। তাও যদি করতে না পারো তাহলে কীভাবে এই অসহনীয় পরিস্থিতি থেকে বের হওয়া যায় সেটার জন্য সক্রিয়ভাবে চিন্তাভাবনা এবং কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করবে।

নিজেকে হেয় প্রতিপন্ন করা, নিজেকে অক্ষম মনে করা, নিজেকে কারো অসংগত আবেগ আর অন্যায় আবদারের কাছে সমর্পণ করে দেওয়া, এগুলো হলো নিজেকে নিজে দাস হিসেবে বিক্রি করে দেয়ার শামিল। নিজেকে বিক্রয় করে দেওয়া আর আত্মহত্যা করা, দুইটার মাসাআলা একই। দুটাই অন্যায়। দুটাই নাজায়েয ও প্রকৃতিবিরুদ্ধ।

তাই ঘুরে দাঁড়াতে হবে নিজের পায়ে শক্ত হয়ে শিরদাঁড়া সোজা করে। এটি হচ্ছে আমার গুরু জর্ডান পিটারসনের 12 rules for life এর ১লা নম্বর কথা। একই সাথে এটি হচ্ছে কোরআন হাদিসের কথা। সর্বোপরি, এটাই হচ্ছে আমার একান্ত উপলব্ধি।

মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

Abdullah Al Masud: এটা শুধু ভালোবাসার মানুষটার জন্য না, অন্যায় করা অফিসের বসের জন্যেও সমানভাবে প্রযোজ্য। বসের স্নেহ পেয়ে তার কাছে ইমোশনাল হোস্টেজ হয়ে থাকাটাও কম নাহ!

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক হবেই। নানা কাজে অন্যদের সাথে আমাদের সম্পর্ক স্থাপন করতেই হবে। সেই রিলেশান হতে পারে অকেশনাল কিংবা long-term, দ্যাট ডাজন্ট ম্যাটার। এগুলো সব ঠিক আছে। কিন্তু কোনোভাবেই কারো কাছে নিজেকে জিম্মি হতে দেয়া যাবে না। সেটা হোক নিজ পিতা-মাতা অথবা ছেলে-মেয়েদের কাছে কিংবা নিজের স্বামী বা স্ত্রীর কাছে কিংবা ভাই-বোনদের কাছে কিংবা প্রিয় সংগঠনের লোকজনের কাছে কিংবা নিজের কোনো প্রিয় বন্ধুর কাছে। সর্বাবস্থাতেই নিজের স্বাতন্ত্র্য, স্বাধীনতা ও আত্মমর্যাদা রক্ষা করতে হবে।

Mohammad Junaid: গভীর মনোযোগ সহকারে পাঠ করলাম। অত্যন্ত উপকারী শিক্ষণীয় অন্তর্দৃষ্টিমূলক লেখা। ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার ব্যক্তিত্বের সংজ্ঞাটি শাশ্বত। একটি প্রশ্ন, রক্তের সম্পর্ককে বোধহয় আপনি সর্বাবস্থায় অকাট্য ভাবেন। আমার মনে হয় কুরআনের দৃষ্টিতে এবিষয়টি পুনঃমূল্যায়নযোগ্য।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: সূরা বাকারা ২৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, যারা ফাসেক তারা সেই সম্পর্কগুলোকে নষ্ট করে যেগুলো অক্ষুণ্ন রাখার জন্য আল্লাহ তাআলা বলেছেন। এই আয়াত থেকে আমরা বুঝতে পারি, আসলে রক্তের সম্পর্কের ব্যাপারে আমাদের করণীয় কী।

Raihan Kabir Mraks: আপনার প্রতিটি উপদেশ খুবই উন্নত। এখানে এক সাথে অনেক উপদেশ আছে কিন্তু আমি উপদেশগুলো ক্রমানুসারে এবং ক্ষেত্র, পরিস্থিতি ও ঈমানের দাবি অনুসারে সাজাতে পারছি না। সংক্ষেপে তুলে ধরছি।

আমি বুঝতে পারছি সম্পর্কের ক্ষেত্রে সীমা অতিক্রম করা উচিত নয় তবে একটা সম্পর্কের সাথে সাথে কি ক্ষেত্র, পরিস্থিতি ও ঈমানের দাবি অনুসারে কাজ করা উচিত নয়? সম্ভবত আপনি সেটাই বোঝাতে চেয়েছেন। কিন্তু কেন জানি মিস করে গেছি। আপনি একটু জনাবেন যদি মিস করে থাকি।

যেমন, ১। জিহাদের ময়দানে বিখ্যাত ঘটনা, পানি পান করাতে গিয়ে পিপাসার্ত ব্যক্তি তার পাশের ব্যক্তির পানির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে তাকে পানি দিতে বলেন এবং এভাবে পানি কেউ না খেয়েই একটি কম্প্লিট সার্কেল শাহাদাহ বরণ করেন। ২। রমজানে মা আয়েশা রাঃ দান করতে করতে নিজের ইফতারের খাদ্যের দিকে খেয়াল রখেননি। ৩। নিজের প্রয়োজনের চাইতে ভাইয়ের প্রয়োজনীয়তাকে বেশি গুরুত্ব দেয়ার বিষয়ে তো অনেক কথা আছেই। নবী করিম (সা:) বলেছেন: “তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হবেনা, যতক্ষণ না পরস্পরকে মোহাব্বাত করবে।” (সহিহ মুসলিম) ইত্যাদি।

এখন বিষয় হলো, আমি যাকে মহব্বত করবো সে তার যোগ্য কিনা সেটা তার ঈমানের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা শেখাটাই কি আমাদের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত ছিলনা?

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: পোস্টের মধ্যে একটা কথা আছে, তুমি ততটুকু সেক্রিফাইস করবে যতটুকু স্যাক্রিফাইসের বোঝা তুমি স্বাচ্ছন্দ্যে বহন করতে পারবে।

আর হাদিসে তো এটাই বলা আছে, তুমি অপর ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ করবে যা তুমি নিজের জন্য পছন্দ করো।

আমরা আল্লাহ তা’আলার কাছে নিজেদেরকে সম্পূর্ণভাবে সোপর্দ করে দেই, সারেন্ডার করি। আপাতদৃষ্টিতে এই আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা আসলে জগতে আমাদের প্রকৃত অবস্থানটাকে স্বীকার করে নিই, আমাদের সত্তাগত প্রকৃত অবস্থাটাকে আমরা মেনে নেই।

নিজেকে বাদ দিয়ে অপর কে‌উ কখনো আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারেনা। এই ‍‌‘নিজেকে’ কথাটা ভাল করে বুঝতে হবে। আমি আমার স্বার্থটাই দেখব। কিন্তু এই ‌‘আমি’ আসলে কে? আমি কি জগত সংসার থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন কেউ?

তা যদি না হই, তাহলে বুঝতে হবে আমি যখন কারো জন্য কিছু একটা করি, তখন সে আমার কেউ একজন সেজন্যই তার জন্য আমি তা করি। এবং আমার অমুকের জন্য এভাবে এই কাজ করাটা আমার জন্য সংগত, সেজন্য আমি আমার দায়িত্ববোধের কারণে সংশ্লিষ্ট কাজটা সম্পন্ন করি।

এর থেকে স্পষ্ট বুঝা যায়, আমরা যাই করি না কেন, ‌‘আমি’ হচ্ছে আমার এবাদত থেকে মুয়ামালাত, এক কথায় সব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। এই বিষয়ে এই ভিডিও বক্তব্যটা এক্সপ্লোর করে দেখতে পারো- cognitive centrality in a non-centered universe | কেন্দ্রবিহীন এই বিশ্বে রয়েছে অগুণিত জ্ঞানকেন্দ্র

Saleh Din: ‍“নিজেকে ক্ষতিগ্রস্ত করে আত্মত্যাগ করার পরিণতি কখনো ভালো হয় না।” কী করে স্যার? ধরুন যুদ্ধক্ষেত্রে? আন্দোলন সংগ্রামের ক্ষেত্রে? লাইফ সেক্রিফাইস – যা মানব জীবনের ইতিহাস-ঐতিহ্যও বটে।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: মানুষ যখন যুদ্ধের ময়দানে আত্মত্যাগ করে তখন সে বৃহত্তর স্বার্থে জীবনের ঝুঁকি নেয়। এটি বাহ্যিকভাবে আত্মহত্যার সাথে খানিকটা সামঞ্জস্যপূর্ণ হলেও আমরা কাণ্ডজ্ঞান দিয়ে বুঝতে পারি, যুদ্ধের মাঠে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লড়াই করা অথবা নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও এগিয়ে যাওয়া আর আত্মহত্যা করা, এই দুইটা কিন্তু এক জিনিস নয়।

প্রথমটার মধ্যে আছে কোনো বৃহত্তর লক্ষ্যকে অর্জন করার ব্যাপার। এই ‌‘বৃহত্তর লক্ষ্য’ হচ্ছে মানুষের সামষ্টিক জীবনের কোনো লক্ষ্য, সেটা হতে পারে সামাজিক কিংবা রাষ্ট্রীয় কোনো বিষয়।

সালাউদ্দিন ভাই, আপনাকে বুঝতে হবে আমরা একইসাথে আমাদের ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন, বৃহত্তর মানবিক জীবন, সকল জীবন যাপন করি। এবং এই সকল ভিন্ন ভিন্ন জীবনের কেন্দ্র হচ্ছে ‌‘আমি’, আমার একান্ত ব্যক্তি সত্তা।

সুতরাং আমি যখন আমার কোনো কিছুর জন্য কোনো প্রকারের ঝুঁকি গ্রহণ করি তখন সেটা আমার যে একান্ত ‌‘আমি’ সেটা বাদ হয়ে বা গৌণ হয়ে যায় না।

কথার কথা, কেউ যদি কোনো কুফরি কর্ম করে ইসলামের উপকার করতে চায়, মুসলমানদের উপকার করতে চায়, কিংবা দেশ ও জাতির উপর করতে চায়, সেটা মহান আল্লাহতালার কাছে কখনো গ্রহণযোগ্য হবে না,‌ কোনো ব্যক্তির ঈমানের বিনিময়ে কোনো সেক্রিফাইস বা জিহাদ ইসলামী শরীয়ত দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য হবে না।

ব্যক্তির ব্যক্তিগত স্বার্থের সাথে ব্যক্তি হিসেবে সে যেসব সমষ্টিগত ব্যাপারের সাথে সম্পর্কিত, সেগুলোর স্বার্থও জড়িত। ব্যক্তিকে ব্যক্তির দিক থেকে দেখা, ব্যক্তির প্রয়োজনে সমষ্টি, এভাবে মূল্যায়ন করা; আর ব্যক্তিকে সমষ্টির দিক থেকে মূল্যায়ন করা, দুইটা সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার। দ্বিতীয় দৃষ্টিভঙ্গি অর্থাৎ সমষ্টিকে এক নম্বর বিষয় হিসেবে এবং ব্যক্তিকে সমষ্টির উপাদান মাত্র হিসেবে মনে করা, এটি হচ্ছে টোটালিটারিয়ান বা সর্বাত্মকবাদী দৃষ্টিভঙ্গি। ইসলাম এটি সমর্থন করে না।

কারো ক্ষতি করা যাবে না, প্রতারণা করা যাবে না, একই সাথে নিজেকে ক্ষতিগ্রস্ত বা প্রতারিত হতে দেয়া যাবে না; এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটা হাদিস।

ইসলাম সামষ্টিক স্বার্থকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে মূল্যায়ন করে। তবে সেটা ব্যক্তির এবং সমষ্টির স্বার্থের মধ্যে একটা ভারসাম্য স্থাপনের মাধ্যমে। এইজন্য ইসলাম মানুষকে মৃত্যু পরবর্তী জীবনে একটা চূড়ান্ত বিচার ব্যবস্থা এবং মানুষের জীবনের অনন্ত ধারাবাহিকতার কথা বলে।

ইসলামের দৃষ্টিতে যুদ্ধের মাঠে জীবন দেওয়া হচ্ছে বৃহত্তর অনন্ত জীবনে শহীদ হিসেবে বেশুমার লাভের ভাগীদার হওয়ার একটা ব্যাপার। এটাকে রীতিমতো ব্যবসা বলা যায়, যা সুরা সফ এর মধ্যে আল্লাহতালা বলেছেন। এ ব্যাপারে আপনি ভাল করে জানেন। আশা করি, আমি কী বলতে চেয়েছি বুঝতে পেরেছেন। ভালো থাকেন।

Saleh Din: ‍“কেউ চাইলেই নিজের জীবনকে নতুন আঙ্গিকে নতুন করে সাজাতে পারবে না।” এটা কেন স্যার? কী কী কারণে? এটা কি নূতন সীমাবদ্ধতা এরাইজ করার কারণে? নাকি, অতীত তাকে পিছু টানে তাই তার জন্য ব্যক্তিজীবন সীমিত হয়ে পড়ে?

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আপনার উদ্ধৃত এই কথাটা যেখানে আছে সেখানে প্রাকৃতিক ব্যবস্থাপনাকে মেন্টেইন করার কথা বলা আছে। সেটার আলোকে এই কথাটাকে বুঝতে হবে। অর্থাৎ মানবজাতির দীর্ঘ ইতিহাসে ‌‘প্রকৃতি’ আমাদেরকে যেভাবে সেটআপ করেছে, একেকটা সামাজিক সম্পর্কের ব্যাপারে প্রকৃতিগতভাবে আমাদের যে দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং অধিকার, সেই সেটআপকে আমরা যদি আবেগের বশে রিফর্মুলেইট করতে চাই, নতুন করে সাজাতে চাই, সেটা আমরা করতে পারবো না। যদিওবা করি, সেটার ফলাফল শেষ পর্যন্ত ভালো হবে না। সম্পর্কের এই নতুন বিন্যাস শেষ পর্যন্ত টেকসই হবে না। সেজন্য আমাদের উচিত প্রত্যেকটা সম্পর্ককে সেটার সীমার মধ্যে মেন্টেইন করা। এটাই আমি বুঝাতে চেয়েছি।

Saleh Din: ধন্যবাদ, আমরা তা হলে বুঝলাম যে এই প্রাকৃতিক নিয়ম – এটা ইসলামের বিধি বিধানকেই বুঝায়। যা ভারসাম্যপূর্ণ ও ন্যায়ভিত্তিক। বিশ্বে এখন নূতন করে আধুনিকতার নামে সামাজিক সম্পর্কগুলোকে নিউ ফরমেটে সাজাতে চায়। বিশেষ করে লিভ টুগেদার, বিবাহপূর্ব নারী পুরুষের সম্পর্ক, সম্পত্তির ভাগ বন্টন, বিয়ের পরে স্বামী ও স্ত্রীর আচার-আচরণগত অধিকার ও সীমা ইত্যাদিকে বুঝানো যেতে পারে। যা মূলত চরম ভারসাম্যহীন ও বিশৃঙ্খলার দিকে সমাজকে নিয়ে যাচ্ছে।

যাহোক, আপনি আরো বলেছেন, ‍“কিন্তু মনে রাখবেন, সম্পর্ক মাত্রই হচ্ছে দেয়া-নেয়ার সম্পর্ক। সম্পর্ক মানেই হলো, সুনির্দিষ্ট কিছু অধিকার আদায় আর সুনির্দিষ্ট কিছু দায়িত্বপালনের ব্যাপার।” প্রশ্ন হলো- ইসলামী রাজনৈতিক দলের দায়িত্বশীলগণ জনগনের নিকট যে ওয়াদা করে বসে আছেন – তাও কি এর আওতায় পড়বে? বৃহত্তর আঙ্গিকে এখানে দেওয়া নেওয়াটা কোন আকারে হওয়া উচিত?

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: সেটা বিস্তারিত বলাটা আমার কাজ নয়। তবে আমি শুধু এতটুকু বলতে পারি, যে কোনো ধরনের সম্পর্ক, সেটা হোক ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক কিংবা ধর্মীয়, সকল ধরনের সম্পর্ক হচ্ছে দেয়া-নেয়ার সম্পর্ক। কোন ধরনের সম্পর্কে কি কি জিনিস দেয়ার এবং কি কি জিনিস নেয়ার, সেটা সুনির্দিষ্টভাবে সে সম্পর্কের সাথেই সম্পর্কিত। এখানে আমরা যে কথাবার্তা বলছি সেটা হচ্ছে ওভারঅল বা সামগ্রিকভাবে।

Abdullah Al Masud: এটা শুধু ভালোবাসার মানুষটার জন্য নয়, অন্যায় করা অফিসের বসের জন্যেও সমভাবে প্রযোজ্য। বসের স্নেহ পেয়ে তার কাছে ইমোশনাল হোস্টেজ হয়ে থাকাটাও কম নয়।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: এই কথাগুলো আমি শুধুমাত্র প্রেমের সম্পর্কের জন্য বলেছি, এটি সঠিক নয়। বরং জীবনের যে কোনো পর্যায়ে যে কোনো ধরনের সম্পর্কের জন্যেই এই কথাগুলো সমভাবে প্রযোজ্য।

লেখাটির ফেইসবুক লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *