অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের একজন ছাত্র প্রশ্ন করেছেন: ‍“স্যার, আমি ইন্ডিভিজুয়ালিজম আর ফাউন্ডেশনালিজমের মধ্যে কনফিউজড হয়ে পড়ছি, খুব ভালো হয়, যদি দুয়েক লাইনে কিছু লিখে আমার কনফিউশান দূর করতেন। বিষয়টা বইয়ের কোথাও স্পেসিফিকলি নেই, আমি অবসরে চিন্তা করতে গিয়ে এটি মাথায় এসেছে, এখন আর পার্থক্য করতে পারছিনা।”

ইনবক্সে তাকে আমি যে উত্তর দিয়েছি: জ্ঞানতাত্ত্বিক আলোচনার বাইরে ইন্ডিভিজুয়ালিজম হচ্ছে একটা socio-political থিওরি। আর জ্ঞানতত্ত্বে foundationalism’র সাথে যখন এটি আসে তখন socio-political অর্থে এটি ব্যবহৃত হয় না। জ্ঞানতাত্ত্বিক আলোচনাতে তখন এর অর্থ হবে, সঠিক জ্ঞান অর্জন বা নির্ণয় আমাদের প্রকৃতিপ্রদত্ত ব্যক্তিগত দায়দায়িত্ব ও সক্ষমতা।

ডেকার্ট যে ধরনের foundationalism’র কথা বলেছেন তা cognitive agent হিসেবে আমাদের এই ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য বা কোয়ালিটিকে বোঝায়। অর্থাৎ একজন কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন মানুষ সঠিকভাবে যদি অগ্রসর হয় তাহলে সে নিজে নিজেই বুঝতে পারবে, কোনটা সঠিক, কোনটা ভুল; কোনটা যাচাইকৃত, কোনটা যাচাইকৃত নয়।

আর, foundationalism হচ্ছে জ্ঞানের দাবিকে যাচাই করার একটা পদ্ধতি। বলতে পারো একটা জাস্টিফিকেশন থিওরি। এপিসটেমিক জাস্টিফিকেশন সংক্রান্ত এর বিপরীত বা বিকল্প থিওরি হলো coherentism বা সঙ্গতিবাদ।

আমাদের জ্ঞানের জগত হচ্ছে মূলত বিশ্বাসের জগত। এই বিশ্বাসগুলোর মধ্যে foundationalist’দের মতে কিছু কিছু বিশ্বাস হলো সেল্ফ জাস্টিফাইড। এগুলো হলো বেসিক বিলিফ। এগুলোর মানদণ্ডে আমরা আমাদের অন্যান্য নন-বেসিক বিশ্বাসগুলোকে যাচাই করি।

তার মানে হলো, foundationalism অনুসারে আমাদের জ্ঞানের একটা ভিত্তি আছে এবং আমাদের জ্ঞানের দাবিগুলো যখন সেই ভিত্তি হতে সমর্থন লাভ করে তখন আমরা সেটাকে যাচাইকৃত সত্য বিশ্বাস তথা সঠিক জ্ঞান হিসেবে বলতে পারি।

Coherrntist’দের মতে আমরা একটা বিষয়ের সাথে আরেকটা বিষয় বা অপরাপর বিষয়ের সংগতি বিবেচনা করে সেটা যাচাই যোগ্য কিনা সেটা নির্ণয় করি। আমাদের বিশ্বাসের জগতে সকল বিশ্বাস হচ্ছে একই ধরনের বা asymmetrical। অর্থাৎ সব বিশ্বাসই নন-বেসিক। কোন সেটের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন বিশ্বাস সঙ্গতিপূর্ণ বা সামঞ্জস্যপূর্ণ সেটা বিবেচনা করে আমরা সেই বিশ্বাসটাকে কোনো একটা সেটের সাথে রিলেটে করি। এরপর ওই সেট বা set of beliefs’কে আমরা জ্ঞানের যে স্ট্যাটাস ইতোমধ্যে দিয়েছি, ইন্ডিভিজুয়াল সেই বিলিফটাকেও তখন আমরা সেই স্ট্যাটাসটাই দেব।

কেউ যদি ক গ্রুপের মেম্বার হয়, তাহলে ক গ্রুপের জন্য যেই এপিস্টেমিক স্ট্যাটাস, ইন্ডিভিজুয়াল সেই ক্লেইমটাও সেই স্ট্যাটাসের হবে। মোট কথা হল, আমরা সঙ্গতির মাধ্যমে যাচাই করব, কোনো মৌলিক মানদণ্ডের মাধ্যমে নয়। এটি হচ্ছে সংগতিবাদের মূল কথা।

একটা দালানের ভিত্তির মত যারা বলবে আমাদের বিশ্বাসসমূহেরও কিছু মৌলিক ভিত্তি আছে, তারা হল ভিত্তিবাদী। আর যারা সেটি নাই বলে মনে করে তারা হলো সঙ্গতিবাদী।

লেখাটির ফেইসবুক লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *