দৈনিক ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ পত্রিকায় আজকে তসলিমা নাসরিন একটা উপসম্পাদকীয় কলাম লিখেছেন। ‘হিংসের পৃথিবীতে প্রেম ভালোবাসা’ শিরোনামের এই লেখার শেষের দিকে তিনি বলেছেন, “মানুষ কেন মানুষকে গোপনে ভালোবাসবে? আলিঙ্গনের চেয়ে, চুম্বনের চেয়ে মধুর দৃশ্য মানবসমাজে আর নেই। … মানুষ প্রকাশ্যে ভালোবাসুক। প্রকাশ্যে প্রেম করুক। অন্যরা দেখুক। যারা ভালোবাসতে শেখেনি, তারা শিখুক।” ধারণা করছি, গতকাল অতিক্রম হয়ে যাওয়া ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে তিনি এটি লিখেছেন।
এখানে প্রেম-ভালোবাসা বলতে আমরা আবেগজনিত যে অকলুষ ভালোলাগা বুঝি উনি ঠিক তা বুঝান নাই। সেটি স্পষ্ট। তসলিমা প্ররোচিত এই জান্তব ভালোবাসায় ‘প্রকাশ্য চুম্বন’ সর্বোচ্চ সীমা নয়। বরং এক অগত্য যাত্রার শুরু। আমরা সাধারণভাবে যখন বলি– কেউ যখন কাউকে ভালোবাসে তখন আমরা এর বহিঃপ্রকাশ এভাবে দেখতে পাই, তারা পরস্পরের জন্য আগ্রহ ভরে অপেক্ষা করছে। পাশাপাশি বসছে। কিংবা যথাসম্ভব কাছাকাছি। কদাচিৎ কোনো নৈমত্তিক প্রয়োজনে একজন হাত দিয়ে আরেকজনের হাত বা কাঁধ মৃদু স্পর্শ করে কিছু একটা বলছে। দুজন নারী-পুরুষের একজন আরেকজনকে ফুল উপহার দিতে দেখলে, আমাদের জানা মতে তারা যদি পরিচিত অন্য কোনো সম্পর্কসূত্রে আবদ্ধ না হোন তখন আমরা ধরে নেই, তারা পরস্পরের প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে।
নারী-পুরুষ যখন একটা রুমের মধ্যে একাকীত্বে থাকে তখন আমরা জানি তারা সেখানে কী করে। ‘একত্রে রাত্রিযাপন’ ধরনের শালীন ভাষায় তা আমরা প্রকাশ করি। ক্লাসিক্যাল সাহিত্যে আমরা এ ধরনের শরীরী সম্পর্কের অজস্র সাহিত্যসুলভ সুন্দর প্রকাশ দেখি। জৈব সম্পর্ককে শালীন ভাষায় প্রকাশের মাধ্যমেই তো সাহিত্য, সংগীত ও নৃত্যকলায় রোমান্টিকতার আবহ গড়ে উঠে।
জীবজগতের সাথে মানুষের যে কয়টি দিকে মৌলিক পার্থক্য গড়ে উঠেছে তার অন্যতম প্রধান দিক হলো জাতি-ধর্ম-বর্ণ-কাল নির্বিশেষে মানুষের স্বকীয় মানবিক সংস্কৃতি। সন্তান উৎপাদনমূলক শরীরী সম্পর্ক তথা যৌনক্রিয়াকে গোপন করা হলো এই মানবিক সংস্কৃতির একেবারে প্রাথমিক ও গোড়ার কথা। এই অপরিহার্য জৈববৃত্তিকে প্রকাশ্যে নিয়ে আসার পক্ষে যারা ওকালতি করে তারা আসলে মানুষকে পশুর স্তরে নামিয়ে আনার কাজে লিপ্ত। নিতান্ত নির্লজ্জের মতো তারা বলে, ‘মানুষ তো আসলে পশু।’ হ্যাঁ, মানুষ জৈবিক প্রক্রিয়ার দিক থেকে পশুদের অন্তর্গত একটা প্রজাতি। তৎসত্ত্বেও মানুষ হলো অতীব ব্যতিক্রমধর্মী একটা প্রাণী। পৃথিবীতে শুধু এই একটা মাত্র প্রাণি-প্রজাতিই সভ্যতা দিয়ে নিজেদের যাত্রা শুরু করতে পেরেছে। গড়েছে সভ্যতার এই বিশাল সৌধ। জৈববৃত্তিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার কারণেই মানুষ আজকের এই পর্যায়ে আসতে পেরেছে।
জনাব তসলিমা নাসরিন এই লেখায় প্রেমিক-প্রেমিকাকে প্রকাশ্য চুম্বনের মাধ্যমে ভালোবাসা প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছেন। সেটা কোন জায়গায় কী ধরনের চুম্বন তা তিনি অন্তত এখানে ততটা খোলাসা করে বলেন নাই। আমরা জানতে চাইতে পারি, তিনি কি কপালে চুম্বন করতে বলেছেন? অথবা, কপোলে? অথবা, ‘এখানে’, ‘সেখানে’, সবখানে? এমনও হতে পারে, তিনি চুম্বনকে যৌনক্রিয়াই মনে করেন না। নিছক চুম্বনে কারো কারো ‘তেমন কিছু’ হয় না। অথবা, সম্মতিমূলক যৌনক্রিয়াকে তিনি এবং কেউ কেউ আদৌ খারাপ কিছু মনে করেন না। এমনকি তা যদি প্রকাশ্য স্থানেও হয়। খুব সম্ভবত যে কারো যে কোনো উপায়ে যৌনবৃত্তি নিবারণ করাকে তিনি নীতিগতভাবে খারাপ কিছু মনে করেন না, যদি তাতে জোরজবরদস্তি না থাকে। যদি তা-ই হয়, তাহলে সেটি হলো মানবিক অনুভূতি প্রকাশ ও স্বাভাবিক প্রয়োজন পূরণের ভয়াবহ বিকৃতি। এবং তা অবাস্তবও বটে। কোথাও এমন সমাজ পাওয়া যাবে না, যারা সম্মতি থাকা সাপেক্ষে যে কোনো ধরনের যৌন সম্পর্ককে বৈধ মনে করে।
দুনিয়াতে এমনও সমাজ কিংবা সমাজচিন্তক পাওয়া যাবে, যেখানে বা যারা নারীর স্তনকে যৌন অংগ মনে করেন না। জানা যায়, এ ধরনের ‘লেংটু সমাজে’ও বসা অবস্থায় নারীর যৌনাঙ্গকে গোপনীয় মনে করা হয়। এরা অপরের সামনে বা প্রকাশ্যে যৌনক্রিয়ায় লিপ্ত হয় না। তাদের পুরুষেরা সবসময় নিজেদের যৌনাঙ্গের মূল অংশ ঢেকে রাখে। কথাটা এতটা স্পষ্ট করে বললাম এ জন্য যে, মানুষ যত অসভ্যই হোক না কেন, কেন জানি যে সে নগ্নতাকে সামাজিক জীবনে স্থায়ী ও সচারচর আচরণ হিসাবে গ্রহণ করে না। অন্য একটা লেখায় বলেছিলাম, শৈত্য-উষ্ণতার প্রয়োজন ছাড়া কোনো সমাজে মানুষ যদি গায়ে একটা সুতা হলেও পরিধান করে, সেটাই মানুষের শুরু থেকে সভ্য থাকার প্রমাণ হিসাবে যথেষ্ট। কোনো প্রাণী কিন্তু কোনো ধরনের পোশাক পরিধান করে না। মানুষ করে। কারণ, সভ্যতার চেতনাকে সে স্থায়ীভাবে বিসর্জন দিতে পারে না। শালীনতাবোধ মানুষের অন্তর্গত মজ্জাগত বিষয়।
যৌনক্রিয়া ও যৌন অংগের সীমা ও পরিধি নিয়ে বিভিন্ন মানবগোষ্ঠী ও সমাজে যতই মতবিরোধ থাকুক না কেন, পুরুষের তুলনায় নারীর শরীরে যৌনতা যে অধিকতর সীমানায় বিস্তৃত, তা অনস্বীকার্য। আজকালকার পাশ্চাত্য সমাজে নারীর শরীর ও যৌনতা নিয়ে প্রাচ্য ‘ট্যাবু’কে ভাংগার জন্য চলছে বিপুল আয়োজন। অথচ দেখা যায়, তারাও কেন জানি প্রকাশ্যে নারীর স্তনবৃন্তকে প্রকাশ করতে চায় না। কেন নারীর উন্মুক্ত স্তনের ছবি প্রকাশকে গুগল নগ্নতা হিসাবে বিবেচনা করছে তা নিয়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পশ্চিমা শিক্ষিত কিছু নারী প্রতিবাদ ও নগ্ন-বক্ষ মিছিল ও সমাবেশ করেছে, কোথাও পড়লাম। তসলিমা নিশ্চয় এদের পক্ষে থাকবেন। এরপর কেউ যদি একই প্রক্রিয়ায় আরো আরো অগ্রসর হয়, তারাও উনার সমর্থন পাওয়ার ‘হকদার’। যৌন স্বাধীনতার কোনো দাবিদারকে তিনি সমর্থন না করে পারেন না। কারণ, তিনি পার্ভার্ট বা বিকৃত রুচির মানুষ। রাস্তাঘাটে আমরা নিয়মিত নগ্ন-অর্ধনগ্ন পাগল-পাগলী দেখি। তাতে আমাদের অসুবিধা হয় না। দুঃখের বিষয় হলো, তিনি ও তার মতো বুদ্ধিবিকৃত ও কাণ্ডজ্ঞানহীন বহু পাগল আমাদের চারপাশে ভদ্রতা ও শিক্ষার মুখোশ পরে আছে। তারা তসলিমার স্তাবক।
আমরা সবাই মায়ের স্তন থেকে দুধ পান করে বড় হয়েছি। একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের ক্ষেত্রেও কি এ কাজ তেমনি ‘নির্দোষ’ বিবেচিত হবে? উদাহরণ আর বাড়ালাম না। এই লাইনে কথা বললে তারা উল্টো অভিযোগ করে বলে, “আপনার মন কলুষিত। তাই, আপনি এসব স্বাভাবিক অংগের দিকে এমন খারাপ দৃষ্টিতে দেখেছেন।” এসব নৈরাজ্যবাদী তথাকথিত মানবতাবাদী সেক্সিস্টরা ওপেন সেক্সকে ন্যাচারাল দাবি করে কখন যে তাদের ভাষায় এই ‘দ্যা লাস্ট ট্যাবু’কে ভাংগার জন্য লেংটু হয়ে ঝাপিয়ে পড়বে, জানি না। শংকায় আছি। ইনসেইন লোকদের পক্ষে যে কোনো কিছু করা সম্ভব। কথায় বলে, জিদ মানুষকে পতনের অতলে টেনে নিয়ে যায়।
এসব নাস্তিক বস্তুবাদী উগ্র নারীবাদী পুরুষ ও নারীরা নিজেদেরকে অদ্ভুত এক মানব ধর্মের অনুসারী হিসাবে পরিচয় দেয়। অথচ, মানুষকে তারা উন্নতমানের প্রযুক্তি ব্যবহারকারী পশুর অধিক কিছু মনে করে না। তসলিমার মতো ক্ষ্যাপাটে মানুষজন আমার আপনার আশেপাশে কম নাই। এসব ‘ছুপা প্রগতিশীল’ হিপোক্র্যাটদের চেয়ে তসলিমা বরং ভালো। সৎ। তিনি যা সঠিক মনে করেছেন তা করছেন, লিখছেন ও বলছেন। নিজেকে বিপদগ্রস্তও করেছেন। রীতিমতো ‘হিজরত’ও করেছেন। পারভার্টেড তসলিমার ‘ভদ্র’ (!) ফলোয়ারেরা যদি আমাদের আশেপাশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক না থেকে থাকেন তাহলে একটা জনপ্রিয় জাতীয় দৈনিকে কেন এ ধরনের লেখা ছাপানো হলো? কোনো পত্রিকা তো ‘পাঠক চায় না’ এমন লেখা ছাপানোর কথা না।
এ ধরনের সামাজিক বিষয়ে প্রতিবাদ না করতে করতে প্রগতিশীলতার ভেকধারী এসব ভয়ংকর অসহিষ্ণু, উগ্র ও ভণ্ড নাস্তিকেরা তথাকথিত সোশ্যাল ট্যাবু ভাংগার নামে যতসব বিকৃত চিন্তাকে সমাজে বুদ্ধিবৃত্তির মূলধারা বানিয়ে ফেলছে।
তসলিমাপন্থীদের মাধ্যমে ‘তসলিমা ম্যাডামের’ (আমার এক ছাত্রীর ভাষায়) কাছে আমার প্রশ্ন– মুখে বা ঠোঁটে প্রকাশ্যে চুম্বন যদি হতে পারে, বাকিটুকু গোপনে করার বাধ্যবাধকতা থাকার যুক্তি কী? উভয়ই তো মৈথুন? শারীরিক সম্পর্কের আগে প্রাণীরাও ‘ফোর প্লে’ করে। এরপর আসল কাজটাও তারা প্রকাশ্যে করে। মানুষের সাথে অন্য প্রাণীদের পার্থক্য হলো, মানুষেরা অন্য মানুষের সামনে ‘ফোর প্লে’কেও যথাসম্ভব এভয়েড করে। করলেও তা করে পরোক্ষ ও প্রতীকীভাবে। মানুষের এই শালীনতাবোধ হতে উদ্ভূত হয়েছে বিয়ে ও রোমান্টিকতার বিষয়ে প্রচলিত যতসব লোকাচার ও আচার-অনুষ্ঠানের। এজন্য মানুষ সভ্য। এবং নির্দোষ হওয়া সত্ত্বেও প্রাণীরা অসভ্য।
যা আমরা জানি, তা সব সময় আমরা প্রকাশ্যে বলি না। যা আমরা করি, তা আমরা সব সময় প্রকাশ্যে করাকে অনুমোদন করি না। যেমন, ‘প্রাকৃতিক কাজ’ বলতে কী বুঝায় তা আমরা বুঝি। কিন্তু তা বলতে চাই না। প্রাণীরা প্রকাশ্যে ‘প্রাকৃতিক কাজ’ করে। তাতে তাদের কোনো লজ্জা নাই। আমরা এ ধরনের কাজগুলো প্রকাশ্যে করি না। এগুলো প্রকাশ্যে করাকে আমরা ভব্যতার খেলাফ বলে মনে করি। যারা যৌন সম্পর্কের পূর্বরাগকে প্রত্যক্ষ ও প্রকাশ্য ক্রিয়া হিসাবে অনুমোদন করতে কোনো অসুবিধা বোধ করেন না, তারা তৎপরবর্তী ‘আসল কাজ’টাকে কেন গোপনে করতে বলেন?
যৌন-শৃংখলা রক্ষার জন্য আমরা বৈবাহিক সম্পর্ক, সংযম ও শালীনতা অবলম্বন করি। দীর্ঘস্থায়ী যৌন অবদমনের বিদ্যমান সামাজিক অপসংস্কৃতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে গিয়ে যারা অবাধ যৌনচর্চাকে সমাজিক রীতি হিসাবে চালু করতে চান, তারা গাছের গোড়া কেটে আগায় পানি ঢালার অপচেষ্টায় নিয়োজিত।
বায়ান্ন বৎসরের এ জীবনের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, আজকের উগ্র নারীবাদীরা স্ব স্ব ব্যক্তিজীবনে অসুখী। দাম্পত্য জীবনে তারা ব্যর্থ। অসুস্থ জণ্ডিস রোগীরা যেমন সবকিছুকে হলদে দেখে, এরাও তেমনি মানুষের সুস্থ পারিবারিক জীবন ও স্বাভাবিক দাম্পত্য যৌন সম্পর্ককে সর্বদা অবদমন ও নিপীড়ন হিসাবে দেখে। সমাজে অবদমন আছে, এটি অনস্বীকার্য। এই সমস্যার একমাত্র সমাধান হিসাবে বিয়েকে সহজতর করার ধর্মীয় বিধানও আছে। অন্তত ইসলামের কথা আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি।
যৌন সম্পর্কের মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে যারা মানুষের শালীনতা ও ভব্যতা তথা সভ্যতার এই শুদ্ধ মানবিক অর্জনকে ছুঁড়ে ফেলতে চায়, তারা আসলে, আমার ধারণায়, যৌন অতৃপ্তিতে ভুগছেন। প্রকাশ্যে মলত্যাগ করতে চাওয়া ব্যক্তির মতো মানসিকভাবে তারা অসুস্থ। হতে পারে, তারা অস্বাভাবিক যৌন তাড়নাজনিত শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। অথবা, তারা উপযুক্ত পার্টনার খুঁজে পান নাই। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, ‘তোমরা বিয়েকে সহজ করো’। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা নিঃসঙ্গদের জন্য বিয়ের ব্যবস্থা করো।’
রেফায়ী নামের জনৈক সাহাবীর স্ত্রী কী যেন মনোমালিন্যের কারণে স্বামীর কাছ হতে তালাক নিয়ে অন্য এক লোককে বিয়ে করলেন। এরপরের ঘটনা এখনকার অতি শুদ্ধতাবাদী হাইপার ধর্মীয় চেতনা দ্বারা উদ্বুদ্ধ, নবী মোহাম্মদ (সা) ও উনার সাহাবীদের চেয়েও ‘বেশি শালীন’ (?) ও ‘ধর্মভীরু’ (!) ব্যক্তিবর্গের কাছে ‘অশ্লীল ও অশালীন’ মনে হবে। আমি হাদীসের গ্রন্থে ঘটনাটা পড়েছি।
উক্ত মহিলা সাহাবী সোজা ওই লোকের ঘর হতে বের হয়ে আল্লাহর রাসূলের (সা) কাছে উপস্থিত হলেন। স্বামীর যৌন সক্ষমতার বিষয়ে প্রশ্ন তুলে অন্যান্য পুরুষ সাহাবীদের সামনে তিনি নিজের কাপড়ের কোনো দেখিয়ে বললেন, ‘এই লোকের কাছে এর চেয়ে বেশি কিছু নাই।’ ততক্ষণে পিছু পিছু ওই লোকও সেখানে এসে উপস্থিত হয়েছেন। সাথে উনার আগের স্ত্রীর গর্ভে জন্ম নেয়া সন্তানদেরকে এনেছেন। তাদেরকে দেখিয়ে স্বামী বেচারা অভিযোগ অস্বীকার করে বললেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ! ও যা বলছে তা যদি ঠিক হয়, তাহলে আমার ওমুক স্ত্রী থেকে এই সন্তানগুলো কীভাবে হলো?’ এই ধরনের ‘বিশ্রী ঘটনায়’ রাসুলুল্লাহ (সা) কী করেছেন, জানেন? তিনি সেই সাহাবীর সাথে উক্ত মহিলা সাহাবীর বিয়েটা মহিলার আর্জি মোতাবেক তাৎক্ষণিকভাবে বাতিল করে দিলেন। পরের কাহিনী হলো, সেই মহিলা ইদ্দত পালন শেষে তার পূর্বতন স্বামীর সাথে আবার বিয়ে বসলেন। এই ঘটনা আপনার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হলে, কোনো উপযুক্ত আলেমকে জিজ্ঞাসা করে দেখতে পারেন।
তসলিমা-চর্চা বাদ দিয়ে এবার কাজের কথায় আসেন। আমাদের উচিত আধুনিকতা, বিশেষ করে নারী স্বাধীনতা সংক্রান্ত তত্ত্ব-আদর্শ আর সামাজিক বাস্তবতাকে যথাসম্ভব কাছাকাছি রাখার জন্য সিনসিয়ারলি এন্ড সিস্টেমেটিকেলি কাজ করা। আফসোস, তসলিমা নাসরিনের সমালোচকদের কাউকে কাউকে দেখি, সমালোচনার নামে রগরগে বর্ণনা দিয়ে, অশ্লীল গালাগালি করে তারা নিজেরাই পরোক্ষভাবে বিকৃত যৌনচর্চায় লিপ্ত। নারীদের মানবিক অধিকার যারা মানতে নারাজ, তাদের তসলিমা বিরোধিতা শোভা পায় না।
সত্য কথা হলো, তসলিমা নাসরিনসহ বামপন্থী বুদ্ধিজীবীরা যখন এস্টাবলিশমেন্টের সমালোচনা করেন তখন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেই সব সমালোচনাকে যথার্থ হিসেবে মনে হয়। কিন্তু যখন সংশ্লিষ্ট সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য কোনো প্রস্তাবনা তুলে ধরেন বা কোনো বিশেষ করণীয়ের কথা বলেন, তখন দেখা যায় তারা একেবারে নির্বোধ ও কাণ্ডজ্ঞানহীনের মতো কথা বলছেন।
তসলিমা নাসরিনসহ এসব উগ্র নারীবাদীরা প্রাচ্য অবদমনের খাদ থেকে উঠে পাশ্চাত্য বিকৃতির অতল গহ্বরে নিপতিত হয়েছেন। জাতীয় দৈনিকে কলাম লিখে তিনি প্রকাশ্যে চুম্বনের মাধ্যমে ভালোবাসা প্রকাশের কথা বলছেন। এরপর বলবেন, আরো আরো অনেক কিছু। এ ধরনের নারীবাদের স্বর্গ ইউরোপ-আমেরিকায় আজকাল যৌন স্বাধীনতার নামে কী সব অনাচার চলছে, তা তো আমরা দেখতে পাচ্ছি, জানতে পারছি। সেখানকার পরিণতি ভবিষ্যতে কী হবে, তাও আমরা বিভিন্ন পরিসংখ্যানের মাধ্যমে জানতে পারি। হতে পারি আমরা গরীব, তাই বলে আমরা ওসব পয়সাওয়ালা বড়লোকদের মতো পাশবিক পার্ভার্ট নই। আমাদের সম্পদ কম থাকতে পারে, কিন্তু পারিবারিক জীবনে আমরা তুলনামূলকভাবে সুখী। আমাদের এই সুখের উৎস, আমাদের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য। এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন ও উদ্ভট প্রচারণা দ্বারা যারা আমাদের এই সামাজিক স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকে নষ্ট করতে চায়, তাদেরকে প্রতিরোধ করতে হবে। তার আগে, ‘কাজীর গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নাই’ ধরনের স্ববিরোধ থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করা জরুরি।
ফেসবুকে প্রদত্ত মন্তব্য
Sabuj Kabir: চমৎকার শিক্ষনীয় লিখাটির জন্য অনেক ধন্যবাদ। সত্যজিত রায় ‘বিষয় চলচ্চিত্র’ বইটিতে লিখেছেন মেইনস্ট্রিম ইংরেজি ফিল্মে প্রথম মুক্ত যৌনতা দেখানো পরিচালক ইংমার বার্গম্যান ‘অপুর সংসার’ মুভির একটি দৃশ্য দেখে মন্তব্য করেছিলেন যে ঘনিষ্টতা দেখানোর জন্য আমরা হাজার ফুট ফ্লিম খরচ করি, তুমি কোনো চুমুও না দেখিয়ে সেটা বুঝাতে পেরেছ। তিনি এটাও মন্তব্য করেছিলেন যে ভারতীয় সিনেমায় যে তখন চুম্বন ও অশালীন দৃশ্য নিষিদ্ধ ছিল এটাকে কখনই তার সিনেমা তৈরির পথে বাধা বলে মনে হয়নি। অথচ এখন সিনেমার বাইরেই এই অশালীন ঘটনার পক্ষে ওকালতি হয়!!!!