প্রমোশনাল ভিডিওর অল্প যেটুকু দেয়া হয়েছে তাতে শুনলাম মহিলা হিন্দিতে বলছেন, একটা ঘরে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে বড় হয়। ছেলেটা থেকে যায়। আর মেয়েটা অন্য ঘরে চলে যায়। নারী-পুরুষ সমান হলে, শুধু নারীটাকেই কেন গৃহবদল হতে হয়?

এইটা বাবার ঘর। ওইটা জামাইয়ের ঘর। মেয়েদের নিজের ঘর কোনটা? তাদের কেন একটা নিজস্ব ঘর থাকবে না? আমার মতো আপনারাও নিশ্চয় মেয়েদেরকে এমন কথা বলতে শুনেছেন।

এই ধারায় অনুরূপ আরো প্রশ্ন কত প্রশ্ন তোলা যায়। যেমন—

এই যে মেয়েরা বিয়ে করতে চাচ্ছে না, অথবা বিয়ে ভেংগে দিচ্ছে, এজন্য কি ছেলেরা দায়ী নয়? মেয়েরা সংসার করতে চায়। অথচ, ছেলেরা চায় সংসারের নামে মেয়েদের উপর ডমিনেইট করতে। তাই তো ঝামেলা বাঁধে। ভালবাসার পরিবর্তে তাদের টার্গেট থাকে শুধু ‘সেই কাজের’ দিকে। ছেলেরা এমন কেন?

নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলে সমানাধিকারের এই ফাঁকতালে নারীর উপর চাপানো হচ্ছে দ্বিগুণ দায়িত্ব। তাদেরকে ঘরও সামলাতে হয়, অফিসও সামলাতে হয়। কেন এমন জুলুম? বাচ্চা কাঁদলে মাকেই কেন ছুটে যেতে হবে? বাচ্চা কি শুধু মায়ের?

ছেলেরা যদি মদ সিগারেট খেতে পারে, যত্রতত্র যখন তখন ঘুরে বেড়াতে পারে, হরহামেশা যার তার সাথে যে কোনো মাত্রায় সম্পর্ক করে বেড়াতে পারে, মেয়েরা কেন পারবে না? ছেলেরা এসব করলে মৃদু আপত্তি সহকারে মেনে নেয়া হয়, আর মেয়েরা করলে হায় হায় গেল গেল রব উঠে। কেন এমন বৈষম্য?

কোন যুক্তিতে ছেলেসন্তান মেয়েসন্তানের তুলনায় পৈত্রিক সম্পত্তির ভাগ দ্বিগুণ পাবে? কেন তাকে অন্যের উপর নির্ভরশীল বিবেচনা করা হবে? ধর্মের দোহাই দিয়ে নারীজাতির ওপর কত আর বঞ্চনা…? নারীদেরকেই কেন ক্যারিয়ার সেক্রিফাইস করতে হবে? মেয়েরা কি বাচ্চা হওয়ানোর মেশিন?

উপরে আমি গোটা দশেক প্রশ্ন তুলেছি। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী নারীবাদের দৃষ্টিতে এ’রকম প্রশ্ন তোলা যায় হাজারো। যার একটিরও কোনো প্রকারের সদুত্তর নাই ট্রাডিশনাল মাইন্ডসেটনির্ভর সমকালীন এই সমাজের কারো কাছে।

এবার একটু জাম্প করি। কথা হলো,

এই ধরনের নারীবাদী প্রশ্নগুলোর নারীবাদ-বান্ধব যেসব উত্তর হতে পারে তা সব আমাদের নারীদের মুখস্ত করানো হচ্ছে। দিনে-রাতে। সর্বত্র। সবখানে। সর্ব উপায়ে। তাদের সকল যুক্তির গোড়া হলো সমঅধিকারের মন্ত্র।

নারীবাদের দৃষ্টিতে, মানুষের ইতিহাস হলো সামগ্রিকভাবে নারীর প্রতি পুরুষের ক্যাটাগরিকেল সহিংসতা, আগ্রাসন, বৈষম্য ও বঞ্চনার ইতিহাস। সাবজুগেশন অব উইমেন আর মানব সভ্যতার শুরু, দু’টাই সমসাময়িক ঘটনা। মানুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তির মালিকানা যখন থেকে, তখন থেকে শুরু হয়েছে নারীবিশেষকে নিজের করে রাখার এই প্রথা। নারীবাদের দৃষ্টিতে, নারীকে চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী করে রাখার এই সিস্টেমের নাম পরিবার। জেন্ডাররোল নির্ভর এই বিবাহ-ব্যবস্থা।

আপনার কাছে কথাগুলো যেন কেমন কেমন লাগছে? লাগতেই পারে। তৎসত্বেও এটি সত্য, নারীবাদ অনুসারে নারী-পুরুষ সমান। সমান মানে সমান। সমানে সমান। সর্বত্র। সর্ব উপায়ে। পার্থক্য যা কিছু তা নিছকই বায়োলজিকাল। নিছক বায়োলজিকেল এই পার্থক্যের কোনো প্রভাব নাই, থাকার কথা নয়, বরং না থাকাই উচিত জেন্ডাররোল নির্ধারণে। বিশেষ করে নারীদের জেন্ডাররোল নির্ধারণে।

নারীবাদের দৃষ্টিতে, জেন্ডার আইডেন্টিটি মাস্ট বি আ ফর্ম অব সেলফ-ক্লেইমড আইডেন্টিটি। এর বেশি কিছু নয়। যে যা মনে করে, সে তা। ‘নো হার্ম প্রিন্সিপাল’কে সামনে রেখে সমাজ ব্যবস্থাকে জাস্ট সাজিয়ে নিতে হবে। ইন্ডিভিজুয়ালিজমকে দিতে হবে সর্বোচ্চ গুরুত্ব বা হাইয়েস্ট ভেল্যু।

এ’জন্যই বলেছিলা, এলজিবিটিকিউ হচ্ছে নারীবাদের অনিবার্য পরিণতি বা নেসেসারি আউটকাম। কেউ যদি নারীবাদকে সঠিক মনে করেন অথচ এলজিবিটিকিউ-কে ভুল মনে করেন, তাহলে আমাকে বলতেই হচ্ছে, এটি আপনার অন্তর্গত বিরোধচিন্তা।

আমি মনে করি, এলজিবিটিকিউ নিয়ে কথা বলার চেয়ে আমাদের বরং উচিত নারীবাদ নিয়ে কথা বলা। জ্বরের ঔষধ খাওয়ার চেয়ে আমাদের উচিত ভেতরের ক্ষত সারিয়ে তোলার চেষ্টা করা। তাই সময় এসে গেছে সমস্যার গোড়ায় গিয়ে আঘাত হানার।

ঝেড়ে কেশে একটা কথা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই,

কোনো মতবাদকে সঠিক মনে করার জন্য কাউকে ফিজিকেলি আঘাত করা কিংবা কাউকে অপমান বা হেয় প্রতিপন্ন করা স্রেফ নিচতা। আমি নিজে তো এমন করিই না, কারোর এমন আচরণকে একবিন্দুও সঠিক মনে করি না। আমি মানুষের চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। ফিলসফি আমার কাছে মোর দ্যান প্রফেশন। ইটস আ প্যাশন টু মি।

আমি মুক্ত আলোচনায় বিশ্বাসী। আমাদের সমাজে এর খুব অভাব। মুক্ত আলোচনার পরিবেশ ও চর্চা পাশ্চাত্যে যতটুকু আছে আমাদের এখানে তাও নাই। এখানে প্রত্যেকেই যার যার গণ্ডিতে আবদ্ধ থাকতে পছন্দ করে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও দেখি না, মুক্ত আলোচনার কোনো পরিবেশ এবং চর্চা। ভেরি স্যাড ইনডিড …!

এনিওয়ে,

সমতা ও সমানাধিকার নিয়ে এক্সক্লুসিভলি কথা বলা যাবে। অন্যত্র। আপাতত শুধু এতটুকু বলি, বস্তুগত সমতা বস্তুগতভাবেই অসম্ভব একটা বিষয়। সমতার ধারণামাত্রই নিছকই ধারণা। ‘চার = চার’ – সমতার এই ধরনের চরম উদাহরণেও দেখেন একটা চার একপাশের, অপরটা চার অপরপাশের। হতে পারে, একটা চার হয়েছে দুই+দুই সমীকরণে, আরেকটা চার হয়েছে তিন+এক সমীকরণে। নানা কারণে প্রসেস সমান হলেও আউটকাম সমান হয় না; আবার আউটকাম সমান হলেও প্রসেস সমান নাও হতে পারে।

ফেইসবুক পোস্টে কথা অত বাড়ানো যায় না। তাই এবার সমতার আসল ক্ষেত্রটা সম্পর্কে একটুখানি বলি।

সমতার আসল ক্ষেত্র হলো অধিকার, আইন ও নৈতিকতা। একটা নির্দিষ্ট ফ্রেম অব রেফারেন্স বা এগ্রিড আইডেন্টিটির সাপেক্ষে কিছু এনটিটির মধ্যে অধিকারগত সমতা হতে পারে। নৈতিক চেতনা যার ভিত্তি। আইন যার বাহ্যিক রূপ।

এ’জন্য মানবিক সমতাকে বাস্তবায়ন করতে হয় ন্যায্যতার ভিত্তিতে। equity is justified inequality – আমার এই কথাটাকে যদি বোঝেন তাহলে আপনার জন্য বাদবাকী যা কিছু তা হৃদয়ঙ্গম করা কঠিন হবে না, আশা করি।

এগেইন, জেন্ডার নৈরাজ্য নিয়ে কথা বললে তা অল্প কথায় শেষ করা খুব মুশকিল।

বাস্তব এই জগতে ফিজিকেল পয়েন্ট অব ভিউ থেকে দেখলে কোনোখানে সমতা বলে কোনো কিছু নাই। আছে পরষ্পরনির্ভর ‘ত্রুটি’ ও বিশেষত্ব। দুনিয়া হলো নন-জিরোসাম গেইমের একটা বিরাট উদাহরণ। এখানে শিশু আর প্রাপ্তবয়স্ক সমান নয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সমান নয়। শাসক-শাসিত সমান নয়। ড্রাইভার-প্যাসেঞ্জার সমান নয়। এখানে কে, কোথায় কার সমান? জগতের প্রতিটি বিষয় ও বস্তু, লজিকের প্রথম মূলনীতি (ল অব আইডেন্টিটি) অনুসারে বিশেষ ও অনন্য।

নারী-পুরুষের নারীবাদী সমতার ধারণা অনুসারে আপনাকে স্বীকার করে নিতে হবে, মানব সভ্যতা ভুল পথে অগ্রসর হয়েছে। মানব সভ্যতার শত, সহস্র, লক্ষ বছরের ইতিহাস ভুলভাবে রচিত হয়েছে, নারীর প্রতি সহিংসতা ও বৈষম্য নামক অন্যায়ের ওপর ভিত্তি করে।

এবার আপনি ভাবতে থাকেন, আপনি কি জগতের ইতিহাসকে ভুল বলবেন, নাকি রিথিংক করবেন আপনার নারীবাদী বায়াসনেসকে?

সেদিন একটা পোষ্টার করেছি এই কথা দিয়ে, if you are a modern educated person and against feminism, then you are an ex-feminist। feminism is the default position of western education system। একটু খতিয়ে দেখলে বুঝতে পারবেন, আমাদের পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে সাজানো হয়েছে জাতিসংঘের নারীনীতি CEDAW এর আলোকে। আর সিডৌ হলো নারীবাদের আনুষ্ঠানিক রূপ। একই জিনিস।

ফিলসফিতে reductio ad absurdum বলে একটা কথা আছে। এর মানে হলো, আপনি এমন কোনো যুক্তির পক্ষে যদি বলেন, যেটি মানলে আপনাকে এমন একটা কিছু স্বীকার করে নিতে হবে যাকে আপনিও ভুল বলে মনে করেন, অন্যরা ভুল বলে মনে করেন, তাহলে আপনাকে মানতে হবে, আপনার পুরো যুক্তি-প্রক্রিয়াটার মধ্যে কোথাও বড় ধরনের একটা গলদ আছে। তাই আপনার পুরো প্রসেসটাই ভুল। উত্তর ভুল হওয়ার কারণে যেভাবে আপনি পুরো অংকটাকেই বাতিল সাব্যস্ত করেন।

তো, ট্রাডিশনাল জেন্ডাররোল নির্ভর ফ্যামিলি সিস্টেমের ওপর ভর করে গড়ে উঠেছে মানব সভ্যতা। অথচ, ফেমিনিজম শেখাচ্ছে, ফেমিনিটি বা নারীত্ব মানেই খারাপ, যা কিছু নারীসুলভ তা মোর অর লেস আন-এমপাওয়ারিং। বরং পুরুষের মতো হতে পারা, নারীত্বের প্রতিটা অনুষঙ্গকে যতটা সম্ভব আন্ডারমাইন করা, যতটা সম্ভব পিছিয়ে দেয়া, অস্বীকার করা, এ’সবেই যেন সব সফলতা।

There cannot be anything more tragic and self-contradictory than the feminists’ stand against femininity, more specifically maternity. Whereas, nothing is more fulfilling to a woman than maternity.

Traditional family system is a female interest-based system. ‘কাজ সেরে’ কেটে পড়তে চাওয়া পুরুষদেরকে আটকানো হয় প্রচলিত পারিবারিক ব্যবস্থার মাধ্যমে। এই দৃষ্টিতে, বৈবাহিক ব্যবস্থা পুরুষদের জন্য একটা লস প্রজেক্ট।

প্রশ্ন হতে পারে, নারীর ওপর কি জুলুম হয়নি?

হয়েছে। আলবৎ হয়েছে। এখনো হচ্ছে। এবং নীতিগতভাবে আমাদের না চাওয়া সত্বেও এটি ভবিষ্যতেও হবে। যেমন করে অতীতে জুলুম হয়েছে। যুগে যুগে। সকল অতীত ও বর্তমানে। এক শ্রেণী কর্তৃক আরেক শ্রেণীর ওপরে। সেসব জুলুম ও অন্যায়কে মোকাবেলা করাই হলো নীতি, নৈতিকতার দাবি। ন্যায়ের দাবি। নীতি, ধর্ম, সমাজ ও সভ্যতার এত ব্যবস্থার লক্ষ্য হলো একজনের উপর আরেকজনের উপর, আরেক শ্রেণীর জুলুমকে ঠেকানো। ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা।

ন্যায় সমাজ ও রাষ্ট্র (just society and state) সম্পর্কে আমাদের একটা ভুল ধারণা কাজ করে। আদর্শ সমাজ ও রাষ্ট্র মানে এই নয় যে সেখানে কোনো অন্যায় ও জুলুম হবে না। বরং আদর্শ সমাজ ও রাষ্ট্র হলো সেই সমাজ ও রাষ্ট্র যেখানে অন্যায় ও জুলুমের সুষ্ঠু প্রতিবিধান করা হয়। যেখানে থাকে ন্যায়ের শাসন। নৈতিক উচ্চমানের পরিবেশ।

মাথা ব্যাথা হয়েছে বলে মাথাটাই কেটে ফেলে দেয়ার মতো এক্সট্রিম কথা যারা বলে, সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্বব্যবস্থায় তারা ডমিনেন্ট, এই যুক্তিতে তাদের পাগলামিকে তো প্রশ্রয় দেয়া যায় না।

পাশ্চাত্য থেকে আসা প্রত্যেকটি মত, পথ ও সংস্কৃতিকে সন্দেহ করতে হবে। যাচাই-বাছাই করতে হবে। যেমন করে মহামারী আক্রান্ত এলাকা হতে আসা ব্যক্তিমাত্রকেই আমরা কোয়ারিনটিনে রাখি। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তাদেরকে এক্সেপ্ট করি।

সামরিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সংস্কৃতিক আগ্রাসনের এই প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে নিজস্ব ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধকে বাঁচানোর এ’ছাড়া আর বিকল্প কোনো পথ খোলা নাই।

মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

Md Tawhidul Islam: কালেক্টিভলি নারীবাদকে কি এলজিবিটির সাথে মিলায়ে ফেলা যায়? যতটুকু জানি, TERF নামে র‍্যাডিকেল ফেমিনিস্টদের একটা গ্রুপ আছে যারা কঠোর এন্টি ট্রান্স!

Mohammad Mozammel Hoque: নারীবাদের অন্ততপক্ষে বিশটা প্রকরণ আছে। সমকামীদের একটা বিরাট অংশ রূপান্তরকামীদের বিপক্ষে। আবার যারা কুইয়ার তারা বাদবাকি সবকিছুর বিপক্ষে। এগুলো কোথায় কী রকম আছে এবং ইন্ডিভিজুয়ালি এগুলো কোনটার ব্যাপারে কী বক্তব্য বা আমাদের কী করনীয়, এগুলো নিয়ে মাথা না ঘামানো ভালো।

সামগ্রিকভাবে যে তত্ত্বের মূল কথা বা বেসিক প্রেমিজটাই ভুল, সেই তত্ত্বকে এজ আ হোল বাদ দেওয়াটাই বুদ্ধিবৃত্তিক সততার দাবি। আমরা তো আমাদের জীবন কাটিয়ে দিতে পারবো না, কোথায় কোন তত্ত্বের খুঁটিনাটি কী, তা সব জানতে জানতে।

মিথ্যাকে মিথ্যা প্রতিপাদন করার চেয়ে সত্যকে খুঁজে নিয়ে সেটাকে গ্রহণ করাটা হচ্ছে সহজতর এবং বাস্তবসম্মত উপায়। কালার ব্যাংকে যেমন কালারের শেষ নাই, তেমন করে জেন্ডার নৈরাজ্যের জগতে জেন্ডার প্রকরণের কোনো সীমা পরিসীমা নাই।

লেখাটির ফেইসবুক লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *