[‘নাস্তিকতা, তাদের চর্চিত অশ্লীলতার মতোই পরিত্যাজ্য’ শিরোনামে যে পোস্টটি করেছিলাম, সেখানে কৃত বিভিন্ন মন্তব্যের প্রেক্ষিতে এই প্রতিমন্তব্যমূলক পোস্ট। উল্লেখ্য বেশকিছু মন্তব্য পরবর্তীতে মন্তব্যকারীরা মুছে দিয়েছেন। আর্কাইভে সেগুলোর ব্যাকআপ রয়েছে।]
‘উত্তর’ দিতে দেরি হওয়ায় আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আপনাদের এটি ‘বিশ্বাস’ করে নিতে হবে যে, আমি পোস্ট দেয়ার পর হতে এইমাত্র নেটে বসেছি। পোস্টেই লিখেছিলাম, আমি পোস্ট দিয়ে ঘুমাতে যাচ্ছি। মানছি, হরহামেশা এমনটি করা উচিত নয়। পোস্টে আমি কোনো প্রশ্ন করিনি। তাই ‘উত্তরগুলোও’ মন্তব্যাকারে দেয়া হলো–
১. আসিফ মহিউদ্দীন: “নাস্তিকরা ইসলামকে ভয় পায়! কারণ, ইসলাম হলো বর্তমান পৃথিবীর উঠতি মতাদর্শ।”
(ব্যাঙ্গাত্বমূলক ইমোটিকোন)
প্রতিমন্তব্য: নাস্তিকতার সাথে ইসলামের চলমান লড়াইই প্রমাণ করে এটি একটি উঠতি মতাদর্শ। হ্যাঁ, আপনি ভাবতে পারেন, ইসলাম উপযুক্ত বিকল্প নয়। কিন্তু তাতে মতাদর্শগত লড়াইয়ের ময়দানে ইসলামের অবস্থান নাকচ হয় না।
২. স্তব্ধতা‘: ইসলামকে শুধু নাস্তিকরা না সবাই ডরায়, যেমনে খড়গ হাতে দৌড়ানি দিতেছেন আর মৃত্যুর ফতোয়া দিতেছেন, না ডরায়া তো উপায় নাই। নাস্তিকদের জীবন তো একটাই।
প্রতিমন্তব্য: সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও চরমপন্থা সব মতাদর্শের অনুসারীদের মধ্যে দেখা যায়। তবে ইসলামী মতাদর্শের অনুসারীরা এমন ধরনের হওয়া উচিত নয়, মানায় না– আপনি যদি এভাবে ভাবেন, তাহলে আপনার মন্তব্যের মূল সুরের সাথে আমি একমত।
৩. আরিফুর রহমান: সেটাই আসিফ, আমি ভাবছি– চৌদ্দশ বছরের পুরোনো কাসুন্দি ‘উঠতি’ সাইনবোর্ড পায় কীভাবে!
প্রতিমন্তব্য: চৌদ্দশ বছরের পুরনো বলে কোনো মতাদর্শকে ‘কাসুন্দি’ টাইটেল দেয়া সমীচীন মনে করি না। আস্তিকতা ও নাস্তিকতা প্রায় সমবয়সী।
৪. অসম্ভব০০৯: ‘ইসলাম’, ‘পূর্ণাঙ্গ ইসলাম’, ‘তথাকথিত ইসলাম’– এগুলো একটু বুঝাইবেন ভাই?
কনফিউজড হইয়া গেলাম। আপনিও কি কনফিউজড?
খামাখা কথা পেচাইবেন না, ক্লিয়ার উত্তর দিবেন। নানান হাদিস কোরানও দেখাবেন না। ওইগুলাও একেক জন একেকভাবে বলে। আপনার নিজের কী ধারণা সেইটা বলবেন।
প্রতিমন্তব্য: ‘ইসলাম’, ‘পূর্ণাঙ্গ ইসলাম’, ‘তথাকথিত ইসলাম’ বলতে বোঝানো হয়েছে–
হাদীসে জীবরিলে (যে কোনো হাদীসের মূল গ্রন্থের শুরুতে পাবেন) ইসলামের সংজ্ঞা দেয়া আছে।
পূর্ণাঙ্গ ইসলাম বলতে মুহাম্মদের (সা) পুরো নবুয়তী জীবনে ধাপে ধাপে পূর্ণতাপ্রাপ্ত ইসলামকে বোঝানো হয়েছে।
তথাকথিত ইসলাম বলতে ‘ধর্ম’ অর্থে প্রচলিত বা লোকধর্ম অর্থে প্রচলিত ইসলামকে বোঝানো হয়েছে। ইসলামকে যদি আপনি ধর্ম বলতে চান, তাহলে কমিউনিজমও একটা ধর্ম। অলস্টোনের ‘ফিলোসফি অব ল্যাঙ্গুয়েজ’ গ্রন্থের শেষ চ্যাপ্টারের শুরুতে এ সংক্রান্ত বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। বইটি ফিলোসফি অব ল্যাঙ্গুয়েজের একটি পুরনো ও প্রচলিত পাঠ্য।
আপনি টেক্সটের ইন্টারপ্রিটি শনে মতপার্থক্যের বিষয়ে বলেছেন।
টেক্সটের ইন্টারপ্রিটিশন সংক্রান্ত মতপার্থক্য যে কোনো মতাদর্শকেন্দ্রিক মূল লেখার ব্যাপারে প্রযোজ্য। আমরা যখনই কিছু গ্রহণ করি, কোনো না কোনো ব্যক্তির কাছ হতে তা গ্রহণ করি যার নিজস্ব চিন্তা, সংশ্লিষ্ট কথা, লেখা বা ঘটনা উপস্থাপনে প্রভাব রাখে। এর বাইরে আমরা যেতে পারি না। শুধু ইসলাম, কোরআন-হাদীস কেন; এমনকি যে কোনো পত্রিকারও একটি ‘সম্পাদকীয় নীতি’ থাকে যা সেটিতে প্রকাশিত সকল কিছুতে অনুসৃত হয়। তাহলে নিরপেক্ষভাবে বা সঠিকভাবে আমাদের জানার উপায় কী? আসলে ‘সঠিক’ কোনো কিছু জগতে নাই। ‘সঠিক’ হলো তা-ই যা আমরা ‘সঠিক’ বলে গ্রহণ করি। ‘সঠিক’ হিসাবে তা-ই গ্রহণ করি যা ‘সঠিক’ মনে করি। তা-ই ‘সঠিক’ মনে করি, যার পক্ষে যুক্তি ও ‘প্রমাণ’ আছে বলে আমরা মনে করি। ব্যাপারটা সার্কুলার। জ্ঞানের উপরিকাঠামোতে চক্রক-সংজ্ঞা গ্রহণযোগ্য না হলেও জ্ঞানের মৌলকাঠামোতে সবকিছু একক, অনন্য এবং অতি অবশ্যই ‘সার্কুলার’।
৫. আরিফুর রহমান: মোজাম্মেল ছাহেব, আপনার কথাবার্তা বেশ গোছানো। প্রাক্তন শিবিরের মতো দেখতে হলেও, আপনার মাঝে হালকা জুস আছে বোধ হচ্ছে।
আসেন একটু বাতচিত করি। পোস্টের প্রত্যেক্টা সেকশন নিয়ে আমি কিছু কথা বলবো। আপনি উত্তর দেবেন, ঠিক হ্যায়?
প্রতিমন্তব্য: আপনি গালি না দিয়ে ভদ্রভাষায় বলেছেন, খুশি হলাম। বাই দ্য ওয়ে, আমাকে ‘প্রাক্তন শিবিরের মতো দেখতে মনে হওয়ার কারণ বুঝলাম না। আমার মুখে দাঁড়ি আছে, তাই! পাক্কা নাস্তিকরাও মাঝে মধ্যে দাঁড়ি রাখেন। আর আমার দাঁড়ি এরচেয়ে বেশি লম্বা হয় না, জেনেটিক্যালি।
৭. আসিফ মহিউদ্দীন: এ ঘুমাইলে জিহাদ করবো কেডা? তীব্র দিক্কার সেই মুমিন মুচলমানরে যে জিহাদ থুইয়া ঘুমাইতে যায়। নাস্তিকরা তো সব দখলে নিয়া যাইতাছে। লুঙ্গি কাছা দিয়া আহেন তাড়াতাড়ি।
প্রতিমন্তব্য: নাস্তিকতা হচ্ছে একটি অন্যতম চরমপন্থা, যার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নেতিবাচক। তাই মনে হয়, গণমাধ্যমে বিশেষ করে, নাস্তিকরা সব দখল করে আছে। নাস্তিকতা এক ধরনের বিশ্বাস, যা থাকার দরকার আছে; যেমন করে জগতে মিথ্যা, অন্যায় ও অকল্যাণ থাকার দরকার আছে সত্য, ন্যায় ও কল্যাণের অর্থবহতার জন্য।
৯. আরিফুর রহমান: … অশ্লীলতা শব্দটার একটা ব্যখ্যা দাবি করছি। এর মানে কী?…
প্রতিমন্তব্য: অশ্লীলতার সংজ্ঞার সাথে এর উদাহরণও প্রাসঙ্গিক। নাস্তিকরা যে ধরনের অশ্লীল শব্দাবলী তাদের বিরোধীদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করেন সেগুলো, সেগুলো মানে – এসবই অশ্লীল। এক কথায় যৌনতাসূচক শব্দকে গালি হিসাবে বোঝানো। শালীনভাবে অশ্লীলতার ব্যাপারে এরচেয়ে বেশি বিস্তারিত বলা অসম্ভব। ও হ্যাঁ, অশ্লীলতার চূড়ান্ত কোনো মাপকাঠি নাই। কোথাও পড়েছিলাম, কোনো দেশে একটা মামলা হলো এ বিষয়ে– একটি মেয়ে সংক্ষিপ্ত পোশাক পড়ে যাচ্ছিল দুজন পুরুষের সাথে। একজন অপরিচিত সহযাত্রী, অন্যজন তার ভাই। অপরিচিত সহযাত্রী পুরুষটি অভিযোগ করলো, এই মহিলার প্রকাশিত ইত্যাদি ইত্যাদি আমাকে এভাবে এভাবে যৌনভাবে প্রভাবিত করেছে। শুনানীতে মেয়েটির ভাই বললো, কই আমি তো কিছু অনুভব করি নাই। এবার বুঝুন!
১০. মনির হাসান: … লেখকের খিচ উঠছে। হিট দরকার। …
প্রতিমন্তব্য: এ ধরনের অশালীন মন্তব্য সাধারণত নাস্তিক মনোভাবাপন্নদের শোভা পায়।
১৪. শাহরিয়ার নাহিদ: নাস্তিকতা নিয়ে লেখক হঠাৎ কী পড়াশোনা করছেন যে এইভাবে খেপে উঠলেন? একটা পরিত্যাজ্য বিষয় হলো আপনার প্রিয়পাঠ্য, শুনে খুশি হলাম।
প্রতিমন্তব্য: যে কোনো মতাদর্শ ‘পরিত্যাজ্য’ বিষয়াদিকেও স্বীয় মূলকাঠামোতে রাখে। কারণ, আমাদের দাঁড়াতে হয় কোনো না কোনো বিপরীতের ভিত্তিতে। মার্ক্সবাদে এন্টি-ডুরিং চর্চা করা হয়, অথচ ডুরিং আসলে কী বলেছেন সেটি সরাসরি ডুরিং হতে পড়ানো হয় না। ইসলামে আবু জেহেল, আবু লাহাব, ফেরাউন, নমরুদ, শয়তান ইত্যাদি প্রসঙ্গও এর উদাহরণ।
১৯. আব্বু আমার আব্বু: প্রশ্ন-১. সহি নাস্তিক আপ্নে কয় জন পাইছেন? প্রশ্ন-২. সহি মুসলিম আপ্নে কয় জন পাইছেন?
প্রতিমন্তব্য: আসলে জগতে সহি বা খাঁটি বলতে আদৌ কোনো কিছু আছে কিনা, এটি একটি প্রশ্ন। সবকিছুই মাত্রাগত। খাঁটি বা একেবারে ঠিক, নির্ভুল ধ্রুব বলে কিছু যদি থাকে বা থাকা উচিত বলে মনে হয়; তবে ‘ঈশ্বর’ই হতে পারে তেমন কিছু। এটি একটি ঈশ্বরবাদী যুক্তি– আমরা সবকিছুর মধ্যে বা সবকিছুকে ছাপিয়ে বা ছাড়িয়ে কোনো এক আসলকে খুঁজি। এমনকি যদি বলা হয়, কোনো কিছুর ঠিক নাই, তখন অন্তত একটি ‘জিনিস’ ঠিক থাকে এবং সেটি হলো ‘কোনো কিছুর ঠিক নাই’। এ প্রসঙ্গে লায়ার প্যারাডক্স দ্রষ্টব্য।
২১. পারভেজ আলম: আপনাকে তো যুক্তিবাদী বলেই জানতাম। জ্ঞানতত্ত্ব বিষয়ে তো একেবারে খাঁটি দর্শনের ভাষায় লেখেন। এই লেখায় তো যুক্তির ছিটেফোটাও খুঁজে পেলাম না। নাস্তিকদের সম্বন্ধে এপিস্টেমোলজি তৈরি করেছেন, সে তো ঠুনকো; আর নাস্তিক বিষয়ে আস্তিক মনে জনপ্রিয় কিছু ধারণা লিখলেই সত্য হয়ে যাবে না।
প্রতিমন্তব্য: আপনি আমার এত কথার মধ্যে যদি কোনো যুক্তি খুঁজে না পান, তাহলে নতুন করে কীইবা আর বলবো! যে কোনো কথা বা মন্তব্য কারো না কারো পক্ষে যাবে। এটি অনিবার্য। জগতে একেবারে নতুন কোনো কথা নাই, হতে পারে না। হয়তো ব্যাখ্যা বা সংযোজনের মাধ্যমে নতুন কোনো মাত্রা যোগ করা হয়। যেমন, মার্ক্সের প্রচারিত দ্বান্দ্বিকতার সূত্রগুলো তাঁর শিক্ষক হেগেলের। হেগেলের দ্বান্দ্বিক ভাববাদের ভাববাদকে ফুয়েরবাখের বস্তুবাদ দিয়ে পরিবর্তন করে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ প্রবর্তন করা হয়েছে। ইসলামও তেমনই একেবারে নতুন কোনো বিষয় নয় যে, মুহাম্মদ (সা) সেটি প্রবর্তন করেছেন।
২৪. ডিস্কো ঘোড়া: আমি সারাদিন ব্লগে পড়ে থাকি এই দাবি করা মানে আপনিও সারাদিন ব্লগে পড়ে থেকে আমাকে ফলো করেন, সো এই ফাও কথা বলে পলাইলেন ক্যান? ঈমানের জোর এমন হাল্কা ক্যান? আপনে আস্তিক নামের কলঙ্ক, এবং আমার সন্দেহ একজন ছুপা নাস্তিক আপনি।
প্রতিমন্তব্য: দিনে-রাতে যে কোনো সময় পোস্ট দিলে, তা যদি ইসলাম বিষয়ক কিছু হয়, তাহলে কিছু পরিচিত মুখ সাথে সাথে মুখস্ত যুক্তি নিয়ে সেখানে হাজির হয়, অশালীন ভাষায় মন্তব্য দেয়। তাই অনেকের ধারণা, ‘ডিস্কো ঘোড়া’ ধরনের আল্ট্রা-সেক্যুলাররা একেকটা অনলাইন গ্রুপ বা টিম। আমি ‘আস্তিক নামের কলঙ্ক’ হলেও অন্তত আস্তিক বটে, তাহলে ‘ছুপা নাস্তিক’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে; বিষয়টি কী– বুঝলাম না। আর ঈমানের জোর বাড়ে-কমে। এটিই স্বাভাবিক। তবে, নাস্তিকদের সাথে যুক্তি দিয়ে মোকাবেলার সময় ঈমান বেড়ে যায়– এটি নিশ্চিত বলতে পারি।
আস্তিকতা-নাস্তিকতা উভয়ই মূলত সমপর্যায়ের বিশ্বাস। উভয়েই মনে করে, তাদের পক্ষে ‘যথেষ্ট যুক্তি ও প্রমাণ’ আছে। তাদের স্ব স্ব এপ্টিচিউডই ডিফাইন করে তারা কোন্ কোন্ যুক্তিকে ‘প্রমাণ’ হিসাবে গ্রহণ করবে তথা বিশ্বাস করবে।
সামহোয়্যারইন ব্লগ থেকে নির্বাচিত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
আবদুল ওয়াহিদ: “আস্তিকতা ও নাস্তিকতা প্রায় সমবয়সী।” – কথাটা মনে ধরসে। দেখা যাক সামনে কী কী বাতচিত হয়।
ভালো একটা বই পড়তেসি। ড. মুঈনুদ্দীন আহমদ খানের লেখা ‘ইসলামে দর্শন চিন্তার পটভূমি’ প্রথম ভাগ [মানবিক জ্ঞানের উৎস ও ধর্ম দর্শন]। আউট অব প্রিন্ট। সময় করে ওয়ার্ড ফাইলে পাঠাবো।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: মুঈনুদ্দীন স্যারের লেখা ভালো। বুঝতে হবে।
মাসুদ জাকারিয়া: ড. মুঈনুদ্দীন আহমদ খানের লেখা ‘ইসলামে দর্শন চিন্তার পটভূমি’ প্রথম ভাগ [মানবিক জ্ঞানের উৎস ও ধর্ম দর্শন] আমিও পড়ছি। আপনার সাথে এটা নিয়ে কথা বলতে পারলে ভালো লাগত।
নাস্তিকের সংখ্যা তো বেশি নয়। এরা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য কনসিডারেবল তেমন ক্ষতিও নয়। আস্তিকদের অলসতা, গোঁড়ামি ও অকর্মণ্যতার কারণে দুনিয়া কর্মণ্যদের হাতে তুলে দিছেন আল্লাহ।
জ্ঞানে ও কর্মে গোঁড়ামি ও অলসতার শূন্যতা আস্তিকতা দিয়ে পূরণ হয় না। মুসলমানরা জ্ঞানের যে পদ্ধতি ধরে এগুচ্ছিল সেটা সঠিক ছিল। সে জায়গা থেকে আবার শুরু করতে না পারলে অবস্থার পরিবর্তন হবে না বলে আমার বিশ্বাস। সে জ্ঞান কুরআনের পদ্ধতির সাথে সংগতিপূর্ণ।
আমাদের জ্ঞানীয় পদ্ধতি পশ্চিমা জ্ঞানকাঠামের সাথে যতদিন রাখীবন্ধন করে চলবে ততদিন পশ্চিমের পলিটিক্যাল দাসত্বই থাকবে আমাদের জন্য নিয়তি। সেটা নাস্তিকতা, এমনকি আস্তিকতার চেহারা নিয়েও থাকতে পারে।
আল্লাহর সাথে সম্পর্ক (আস্তিকতা) ও আল্লাহর পদ্ধতিতে একটি সঠিক ব্যবস্থা রচনা করার কাজ তথাকথিত ‘ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েমের’ মতো সহজ কর্ম নয়। যারা দুনিয়াতে ইসলামী সমাজ/উম্মাহ/ব্যবস্থা চায় তাদের জন্য যে পদ্ধতি সেটা কঠিন, কিন্তু এর কোনো বিকল্প নেই। তার কিছুটা আভাস এই বইটিতে পাওয়া যায়।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: এতো ভালো লাগছে তোমার মন্তব্য পেয়ে! আচ্ছা, তোমরা ক’জন মিলে কোথাও আমাকে ইনভাইট করো; কিছুটা ফরমালি-ইনফরমালি এসব বিষয়ে আলাপ করি? ইউনিভার্সিটিতে হলে আমার জন্য সুবিধা। শহরে হলেও আপত্তি নাই।
আবদুল ওয়াহিদ: আপনি বলেছেন, “আমরা যখনই কিছু গ্রহণ করি, কোনো না কোনো ব্যক্তির কাছ হতে তা গ্রহণ করি যার নিজস্ব চিন্তা, সংশ্লিষ্ট কথা, লেখা বা ঘটনা উপস্থাপনে প্রভাব রাখে। এর বাইরে আমরা যেতে পারি না। শুধু ইসলাম, কোরআন-হাদীস কেন; এমনকি যে কোনো পত্রিকারও একটি ‘সম্পাদকীয় নীতি’ থাকে যা সেটিতে প্রকাশিত সকল কিছুতে অনুসৃত হয়। তাহলে নিরপেক্ষভাবে বা সঠিকভাবে আমাদের জানার উপায় কী? আসলে ‘সঠিক’ কোনো কিছু জগতে নাই। ‘সঠিক’ হলো তা-ই যা আমরা ‘সঠিক’ বলে গ্রহণ করি। ‘সঠিক’ হিসাবে তা-ই গ্রহণ করি যা ‘সঠিক’ মনে করি। তা-ই ‘সঠিক’ মনে করি, যার পক্ষে যুক্তি ও ‘প্রমাণ’ আছে বলে আমরা মনে করি।”
তাহলে তথাকথিত সন্ত্রাসবাদ বা জঙ্গীবাদকে ইসলাম থেকে হঠাবেন কেমনে? তারাও তো টেক্সট ধরে এগুলারে জায়েজ করছে। আর কে কোন ধর্মকে কীভাবে গ্রহণ করবে তার সাথে স্থান-কাল-ইতিহাসের সম্পর্ক বিদ্যমান। সে যে সঠিক নয়, তাকে তার ইন্টারপ্রিটেশনের মধ্য দিয়ে আমরা দেখাই না কেন?
আর একটা প্রশ্ন, দর্শনের যুক্তি-প্রমাণ যে কনসেপ্চুয়াল খোদার কথা বলে, সে কি ধর্মের খোদা, নাকি আলাদা?
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: হ্যা, রেফারেন্স সঠিক হলেই হবে না, সেটি কনটেক্সচুয়্যালিও সঠিক হতে হবে। দর্শনের কনসেপ্চুয়াল গড আর ধর্মের ঈশ্বর এক নয়। ইসলামের বিষয়টি আলাদা। এ বিষয়ে আমি একটা সংক্ষিপ্ত পোস্ট দিচ্ছি।
অনবদ্য: “বৃহত্তর কোনো স্থায়ী নীতি-আদর্শ না থাকায় তারা বাহ্যত এক ধরনের সামাজিক নৈতিকতার লেবাস ধারণ করে থাকে।”
এই কথাটায় চিন্তার উদ্রেক করলেন।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: অসহায় লোকেরা যেমন ‘আনুগত্যশীল’ ও ‘সুবোধ’ হয়ে থাকে তেমনি নাস্তিকরাও বাহ্যত অধিকতর ‘নীতিবাদী’ হয়ে থাকে, যা তাদের বিরোধী মতাদর্শের অনুসারীদের জন্য প্রযোজ্য নয় বলে মনে করে। যেমন, তারা মনে করে– তাদের বিরোধীদের, বিশেষ করে ইসলামপন্থীদের, কোনো মানবাধিকার নাই। পুরো সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের দমন-নিপীড়ন এর উদাহরণ।
বর্তমান ইউরোপ, বিশেষ করে আমেরিকার ভূমিকাও অনুরূপ। এটিও নাস্তিকতার চর্চা ও প্রভাবের ফসল।
বিশেষ করে মতাদর্শগত বিরোধীদের ক্ষেত্রে ‘সাময়িক নৈতিকতার’ এই লেবাস এক সময়ে খসে পড়ে।
তারা বলে, ধর্ম হলো অসহায়ের সান্ত্বনা। তেমনি নাস্তিকের সান্ত্বনা হলো আপাত নৈতিকতা। যা আদৌ টেকসই নয়। তত্ত্বও তাই বলে, অভিজ্ঞতায়ও তাই দেখেছি।
যোগাযোগ রাখবেন।
পারভেজ আলম: আপনের এই পোস্টটা আগেই দেখছি। ব্যস্ততার কারণে উত্তর দেয়া হয় নাই। আমার মতামতের বিপক্ষে গেছে বইলাই আপনের বক্তব্যে আমার কাছে অযৌক্তিক মনে হইছে– এইটা আপনে কেন মনে করলেন জানি না। আপনের সাথে আমার আগেও আলোচনা হইছে, মতবিরোধ হইছে, আপনের বক্তব্যরে কিন্তু কখনো অযৌক্তিক বলি নাই। কিন্তু আপনের ঐ পোস্টে যুক্তির চেয়ে বরং ব্যক্তিক পছন্দ-অপছন্দ এবং নৈতিক অবস্থান গুরুত্ব পাইছে বেশি।
“নাস্তিকরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে জানার ভান করে, জানতে চায় না।”– এই ধরনের জেনারালাইজেশনের পেছনে কোনো যুক্তি কি আপনি দিয়েছেন? এটা হয়তো আপনার কোনো বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়েছে। কিন্তু এটা কোনো যৌক্তিক স্টেটমেন্ট হতে পারে না।
“বৃহত্তর কোনো স্থায়ী নীতি-আদর্শ না থাকায় তারা বাহ্যত এক ধরনের সামাজিক নৈতিকতার লেবাস ধারণ করে থাকে।”
এটাও অযৌক্তিক এবং ভুল স্টেটমেন্ট। নাস্তিকতা শুধুমাত্র ঈশ্বরের অস্তিত্ব অস্বীকারের সাথে সম্পর্কিত। এর ফলে কারো কোনো স্থায়ী বা সমকালীন নীতি-আদর্শ থাকবে না– এটা আপনি কীভাবে মনে করলেন? একজন নাস্তিক যদি মার্ক্সবাদী হয় তবে মার্ক্সবাদ, দ্বান্দিক এবং ঐতিহাসিক বস্তুবাদ এবং শ্রেণী সংগ্রামের আলোকে সে তার নৈতিক অবস্থান গড়ে নেয়। এছাড়াও সে এনার্কিস্ট হতে পারে, পোস্ট-কলোনিয়ালিস্ট হতে পারে, কট্টর জাতীয়তাবাদী হতে পারে, হতে পারে আরো অনেক কিছুই। তার সামাজিক এবং রাজনৈতিক মতাদর্শই তার নৈতিকতার মানদণ্ড। বৌদ্ধ ধর্মে সৃষ্টিকর্তা নিয়া কোনো আলোচনা নাই, গৌতম বুদ্ধের নৈতিকতায় ঈশ্বরের উপস্থিতি নাই। আপনি কি বুদ্ধকে অনৈতিক বলবেন? বর্তমান অনিয়ন্ত্রিত পুঁজিবাদের যুগে আস্তিক-নাস্তিক নির্বিশেষে সমাজের বেশিরভাগ মানুষই কোনো স্থায়ী নীতি-আদর্শহীন অবস্থায় থাকে। এক্ষেত্রে নাস্তিকদের একপাক্ষিকভাবে এই ধরনের দোষারোপ করা মোটেও যৌক্তিক নয়। নাস্তিকরা অন্তত বেশিরভাগ আস্তিকের চেয়ে বেশি নৈতিকতার পেছনের কারণ অনুসন্ধান ও বিচার করে বা বিবেচনামূলক নৈতিকতা ধারণ করে।
আর আপনার টাইটেলে যা বলেছেন, যে নাস্তিকরা অশ্লীলতা চর্চা করে, সেটাও একটা বিদ্বেষমূলক মন্তব্য হয়েছে। অশ্লীলতার মানদণ্ড আলাদা– এইটা আপনেও জানেন। আপনের মতো যদি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলি এবং যদি অশ্লীলতার দেশীয় প্রচলিত মানদণ্ড অনুসরণ করি, তাহলে গত কয়েকদিনের অভিজ্ঞতা থেকে বলবো– আস্তিকরাই বেশি অশ্লীলতার চর্চা করে। গত কয়েকদিনে প্রভার ভিডিও দেখার জন্য কোনো নাস্তিককে হামলে পরে লিংক চাইতে দেখিনি, আস্তিকদের দেখেছি। আমার এই স্টেটমেন্ট আপনার কাছে কতটা যৌক্তিক মনে হচ্ছে?
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আপনার অনুমান অনেকটা সঠিক। আমাদের এখানে (চবি) আমি চেষ্টা করি নাস্তিকদের সাথে মেশার জন্য, তাদের সাথে ইন্টারেকশনে যাওয়ার জন্য। কিন্তু হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া অন্যরা আমাকে এভয়েড করে চলে। কথা বলতে চায় না। অথচ তারা জানে, আমি ইন্টালেকচুয়্যাল এক্সচেঞ্জকে খুব পছন্দ করি।
সেক্যুলার অনেকের সাথে আমার বেশ যোগাযোগ হয়। বলাবাহুল্য, তারা সবাই নাস্তিক নন।
আমি সিম্পলি বলতে চেয়েছি, নেটে যে পরিমাণ অশ্লীল গালাগালি করা হয় তা আমার কাছে খুবই বেদনাদায়ক। আমার স্ত্রী ও মেয়েরা (বড় মেয়ে ক্লাশ নাইনে পড়ে) সবসময় নেট ব্যবহার করে। তারা এসব দেখে খুব বিব্রত হয়।
আস্তিক/ধর্মবাদীরা অনেক বেশি সেক্সিস্ট হয়– এটি আমি জানি। কারো সেক্সি হওয়াটা আমার কাছে আপত্তির কিছু নয়। কিন্তু হোয়াট আই মিন বাই দ্যা ওয়ার্ড ‘সেক্সিস্ট’– এটি ক্লিয়ার পারভার্শন, খুব খারাপ। হুজুরেরা আমাদের রিলিজিয়াস স্ট্রাকচারের কারণে টু সাম এক্সটেন্ট সেক্সিস্ট হয়– এটি আপনি জানেন।
হ্যাঁ, নৈতিকতার সাথে আস্তিকতা বা নাস্তিকতার সম্পর্ক কনটিনজেন্ট। মোরালিটিকে যদি আমরা মোর পার্মানেন্ট বা এবসলিউট অর ফাউন্ডেশন্ড হিসাবে ভাবতে চাই, তাহলে থিইজম ইজ ব্যাটার দ্যান এথিইজম। আমার মতে।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
পারভেজ আলম: “বর্তমান ইউরোপ, বিশেষ করে আমেরিকার ভূমিকাও অনুরূপ। এটিও নাস্তিকতার চর্চা ও প্রভাবের ফসল।”
আমেরিকা নাস্তিকতার চর্চা করে না। আমেরিকা খাতা কলমে সেক্যুলারিজমের দাবিদার হলেও একটা চরম আস্তিক এবং খ্রীষ্টান মনোভাবাপন্ন দেশ। আমেরিকার পার্লামেন্টে আল্লাহ, বিচারালয়ে আল্লাহ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আল্লাহ, আল্লাহ শব্দের এত ব্যবহার দুনিয়ার আর কোথাও নাই। আল্লাহর দেশ, আল্লাহর সৈন্যদল, এই জাতীয় শব্দের ব্যবহার আমেরিকা যত্রতত্র করে। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গেলেও তাদের তথাকথিত সেক্যুলার প্রেসিডেন্ট ক্রুসেডের ডাক দেয়। ওবামাকে কেউ মুসলিম মনে করলে হোয়াইট হাউস থেকে গুরুত্ব সহকারে বার্তা আসে– ওবামা একজন নিষ্ঠাবান খ্রীষ্টান। আমেরিকার বড় বড় নীতিনির্ধারকরাই কট্টর খ্রীষ্টান এবং ইহুদিবাদের বিশাল প্রভাব আছে এই দেশের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: হ্যাঁ ভাই, আমেরিকানরা আসলেই ধর্মব্যবসায়ী। সেটি সেক্যুলারিজমের একটা রূপ।
পদ্মাচরের লাঠিয়াল: আপনার দর্শনচর্চার পোস্টগুলো দেখে ভালো লেগেছিলো। আজ খারাপ লাগলো এই ভেবে যে শুধু পুঁথিগত বিদ্যাতেই তা ব্যয় করেছেন দেখে! আর যুক্তিবিদ্যার সবচেয়ে ছোট্ট ও সহজ নিয়মটাও না মেনে যেভাবে ঢালাও শ্রেণীকরণ আর রেফারেন্স ছাড়াই মতামত দিলেন যে তা আর দশটা প্রবল বিশ্বাসী(অন্ধ বললে তো আবার বিদ্বেষী হয়ে যাবো!) থেকে আর ফারাক করা গেলো না।
আপনার উত্তর থেকেই দেখি–
“নাস্তিকতার সাথে ইসলামের চলমান লড়াইই প্রমাণ করে এটি একটি উঠতি মতাদর্শ।”
সামু ব্লগ তথা বাংলা ব্লগ দেখেই ঢালাওভাবে একটা শ্রেণীকরণ। আপনি একটু কষ্ট করে অন্য ধর্মগুলোর বিরোধী সাইটগুলো দেখুন– হাজার হাজার পাবেন। কারণ, নাস্তিকতার কাছে ইসলাম মহান কিছু নয়, স্রেফ আর দশটা ধর্মের মতোই; আরো নির্দিষ্ট করে বললে আব্রাহামিক ধর্মগুলোর একটি।
আর নাস্তিকতা কবে ইসলামের সাথে লড়াই ঘোষণা করলো? চোখ-কান খোলা রাখলেই তো জানার কথা যে এটা পুঁজিবাদীদের তৈরি এক বুমেরাং, যা আজ তাদেরই আবার আঘাত করছে (জংগীবাদ!)। তালাল আসাদ একে ইম্পেরিয়ালিজমের বিরুদ্ধে সর্বশেষ আঘাত বলে দেখিয়েছেন।
“পূর্ণাঙ্গ ইসলাম বলতে মুহাম্মদের (সা) পুরো নবুয়তী জীবনে ধাপে ধাপে পূর্ণতাপ্রাপ্ত ইসলামকে বোঝানো হয়েছে।”
ঠিক এই মুহূর্তেই আমি আপনাকে অন্তত গোটাবিশেক সহীহ মুসলিম ও বুখারীর হাদীস দেখাতে পারবো, যেখানে মহানবী নিচের ব্যাপারগুলো অনুমোদন বা উৎসাহ দিয়েছেন।
(১) বাল্যবিবাহ, (২) নাস্তিকদের হত্যা, (৩) অবৈধ যৌন সম্পর্কের জন্য পাথর ছুঁড়ে হত্যা, (৪) বিধর্মীদের উপাসনালয় ধ্বংস! মুর্তি ধ্বংস, (৫) বানু কুরায়জার ইহুদীদের গণহত্যা, (৬) গণিমতের মাল হিসেবে যুদ্ধবন্দিদের সাথে সহবাস, (৭) দাসপ্রথা রহিত না করা, (৮) দুই মহিলা = ১ পুরুষ সাক্ষি রাখা, (৯) বহুবিবাহ, (১০) ধর্মযুদ্ধের নামে বহির্বিশ্বে ঝাপিয়ে পড়াসহ আরো অনেক কিছু।
এখন সুস্থ মস্তিষ্কের যে কেউই এর সমালোচনা করবে, কমপক্ষে চুপ থাকবে, কিন্তু সাফাই গাইবে না। এই আইডিয়োলজি যদি আপনি সাপোর্ট করেন, তবে তার সমালোচনা করলে কি সেটা বিদ্বেষ হয়ে যাবে? আপনার জ্ঞাতার্থে জানাই, হাদীসে পাকের এইসব ভয়াবহতাকে রেখেঢেকে রাখার জন্যই আজকাল ‘কুরআন অনলি’ নামে নতুন এক মডারেট শ্রেণীর উদ্ভব হয়েছে। কেননা তারা জানে, এসব মানলে ও জানালে কী রকম পরিস্থিতিতে পড়তে হবে।
“বৃহত্তর কোনো স্থায়ী নীতি-আদর্শ না থাকায় তারা বাহ্যত এক ধরনের সামাজিক নৈতিকতার লেবাস ধারণ করে থাকে।”
আপনার সাধারণ জ্ঞানের ঘাটতিই কি এ থেকে প্রকাশ পায় না? বিশ্বের নাস্তিকপ্রধান দেশগুলোতে ক্রাইম-রেট এত কম কেন? লেবাস পড়ে আছে বলে? আর আস্তিকপ্রধান দেশগুলোতেই বা তা এতো বেশি কেন? স্থায়ী আদর্শ আছে বলে?
নৈতিকতার সামাজিক রূপটিই প্রধান নয় কি? আপনার অধীত দর্শন কী বলে এ বিষয়ে?
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: বিস্তারিত জবাবের জন্য ধন্যবাদ। কোনো এক পোস্টে লিখেছিলাম, নাস্তিকতা আমার অন্যতম প্রিয়পাঠ্য। ‘সোনার বাংলাদেশ ব্লগে’ স্বনামে দেয়া কোনো এক পোস্টে এটি পেয়ে কিছু কিছু আস্তিক্যবাদী তো আমাকে ভীষণ আন্ডারমাইন করে কমেন্ট করল! সামুর ব্লগাররা এসবি হতে আমার কাছে বেশি প্রিয়। কারণ, তারা মোর অ্যানালাইটিক। অন্তত আমাকে রেসপন্স করার ক্ষেত্রে তাই দেখতে পাচ্ছি।
আগেই বলেছি, আস্তিকতা ও নাস্তিকতা প্রায় সমবয়সী। দুটোই বিশ্বাস। যুক্তিনির্ভর। যদিও আমি আস্তিকতাকেই সঠিক মনে করি। তবে ট্রাডিশনাল আস্তিক বা ধর্মবাদীদের মতো আমি আলোচনায় ভয় পাই না।
আমার মূল পোস্টটি মূলত মন্তব্য ধরনের। বিশ্লেষণমূলক নয়।
আমি নেটে বসি কম। আমাকে কেন জানি নাস্তিকতার পক্ষের লোকেরা গালি দেয় না। সো, আই অ্যাম থ্যাঙ্কফুল টু অল অফ দেম।
আপনার উত্থাপিত ১০টি পয়েন্টের প্রত্যেকটা সম্পর্কে আমার স্বচ্ছ ধারণা আছে। এসব বিষয়ে ভবিষ্যতে লেখার আশা রাখি। আমাকে যারা জানে (ব্যক্তিগতভাবে) তারা সবাই জানে– আমি মুখে যতটা চালু, লেখায় ততটা দুর্বল! তাই, আপনার সাথে সরাসরি কথা বলতে পারলে ভালো হতো।
এ্যনিওয়ে, এসব বিষয়ে ভবিষ্যতে লেখার আশা রাখি।
পারভেজ আলম: “হ্যাঁ ভাই, আমেরিকানরা আসলেই ধর্মব্যবসায়ী। সেটি সেক্যুলারিজমের একটা রূপ।”
এটা আসলে ঠিক সেক্যুলারিজমের রূপ নয়। এটা বরং ইউরোপীয় পুঁজিবাদী সেক্যুলারিজমের একটা রূপ, যা কিনা সেক্যুলার চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের সাপোর্ট দিয়ে এবং তাদের সাপোর্ট নিয়ে রাজতন্ত্র এবং চার্চের বিরুদ্ধে জয়লাভ করেছে। আমেরিকান সেক্যুলারিজম ইউরোপীয় সেক্যুলারিজমেরই এক্সটেন্ডেড এবং আপডেটেড ভার্সন। ইউরোপ থেকে আমাদের দেশেও এই জিনিস আমদানি হয়েছে। শাসকশ্রেণী সেক্যুলার এবং মুক্তচিন্তক হবে আর সাধারণ মানুষকে ধর্মান্ধতায় ডুবিয়ে রাখা হবে– এটাই এদের স্ট্রাটেজি।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: এটি মেকিয়াভেলিজম। রাষ্ট্র চালানোর জন্য এটি খুব উপযোগী।
রাষ্ট্র কীভাবে চলে–সেই কথাগুলো সোজাসাপ্টা বলে দেয়াটা হলো মেকিয়াভেলির মূল কৃতিত্ব; যার কারণে তাঁকে আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক বলা হয়।
রাষ্ট্রের জন্য যা সবচেয়ে ভালো তা-ই গ্রহণযোগ্য ও সর্বোত্তম মনে করাটা এক ধরনের চরমপন্থা, যাকে বলা সর্বাত্মকবাদ। এটি খুব খারাপ।
বর্তমান আমেরিকানবাদ গোপন-সর্বাত্মকবাদ; কখনো কখনো এটিকে কর্পোরেটিজমও বলা হয়।
এসব কথা আপনাকে জ্ঞানদানের জন্য বলছি না। মনে করছি, আপনার নজরে এসব আছে। তবে, এসব নিয়ে আমাদের আরো বেশি ভাবতে হবে।
*****
এসবি ব্লগ থেকে নির্বাচিত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
মনে নাই: এগিয়ে যান, তবে নাস্তিকদের সাথে কথা তর্ক করতে আমার ভালো লাগে না। ভালো থাকবেন।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: নাস্তিকদেরকে যুক্তির ময়দানে উপযুক্ত রেসপন্স না করলে ওরা এবং বুঝতে-ভাবতে অক্ষম-অলস লোকেরা মনে করার সুযোগ থাকে যে, না জানি নাস্তিকতা কত শক্তিশালী!
আমার নাস্তিকতা-চর্চা নিজের বোঝার জন্য নয়। এ বিষয়ে যাদের সংশয় আছে কিন্তু জানতে চায়, তাদের সহযোগিতা করা আমার লক্ষ্য। প্রতিষ্ঠিত নাস্তিকদের মোকাবিলা করা এরই অংশ।
সাজিদ: সবচেয়ে ভালো হয় এদেরকে পুরোপুরি ইগনোর করতে পারলে। এরা আসলে এসব করে মজা নেয়। ব্লগ কর্তৃপক্ষ এসবকে সাথে সাথে প্রথম পাতা থেকে সরিয়ে দিতে পারে। ধর্মের এসব বিষয় নিয়ে কিছু পেইড মানুষও আছে বলে শুনেছি।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: নীতিগতভাবে আমি শালীনভাবে উপস্থাপিত কোনো কিছু ব্যান করার বিরোধী। তাই, সব প্রশ্ন ও অভিযোগের রেসপন্স করা উচিত বলে আমি মনে করি।
ইসলামকে আমি একটি মতাদর্শ বা জীবনব্যবস্থা বলি। ইসলামকে ধর্ম বলায় আমার প্রবল আপত্তি আছে। ইসলামে ধর্মের বৈশিষ্ট্য আছে, পক্ষান্তরে ধর্মীয় অনেক বিষয়ের বিরোধিতা ইসলাম করেছে।
সাজিদ: আমি এদের সাথে তর্ক-বিতর্ক এড়িয়ে চলি। কারণ, আমার নিজের জানা তো অত বেশি নয়। ধর্ম আমার বিশ্বাস, আবার জীবনাচরণে প্রভাব ফেলে। যার ইচ্ছা নাস্তিক হোক, আমার কিছু আসে যায় না। কিন্তু নাস্তিকতার নামে আমার ধর্মকে আঘাত করলে সেই ব্লগ বর্জন করি। সেই কমিউনিটি বর্জন করি। এমনকি ঘনিষ্ট আত্মীয় হলেও সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা এড়িয়ে চলি। আসিফ মহিউদ্দীন হঠাৎ করে বলে বসলেন– মুসলমানদের চরিত্রই এমন। কারণ, তারা পর্নো দেখে, মিডলইস্টের শেখদের পার্ভার্ট আচরণ। কিছু বক্তব্য দিয়ে আসলাম, কিন্তু এখনও জবাব দেখলাম না। ব্লগে নাস্তিকদের মধ্যে একটা অংশ অন্য ধর্মের। আর একটা অংশ মনে হয় ভাব নেয়ার জন্য নাস্তিক সাজে। একটা অংশ আবার নিছক বিনোদন নেয়, আস্তিকদের ক্ষেপিয়ে মজা পায়। নাস্তিকরা সব দেশ আর সমাজেই আউটকাস্ট। ব্লগেও তেমনটাই হতে হবে ইফ দে সে দিস ইজ আ কমিউনিটি।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ভাই, অবহেলা করলে বা ইগনোর করলে আউটকাস্টরাও একদিন মেইনস্ট্রিম হয়ে উঠতে পারে। তাই, আমি নাস্তিকতার পক্ষের শক্তিকে মোকাবিলার পক্ষপাতি। কারণ, তাদের কাছে এমন কোনো যুক্তি নাই, ব্যক্তিগত বা পেশাগত কারণে যা আমার জানার বা আওতার বাহিরে।
মেজর রাহাত: বিষয়টা এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছে, এটাতে সুস্থ ব্লগিং বা ফলপ্রসু বিতর্কের কোনো ছিটেফোটাও আছে বলে আর মনে হয় না। সবাই যেন বিশ্রী কথা বলে অমার্জিত ভাষা দিয়ে জিততে চাচ্ছে। বিতর্ক আর জানার জন্য আন্তরিকতা বিভিন্ন ব্লগে প্রায় অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। দুঃখজনক।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
সামহোয়্যারইন ব্লগ লিংক | এসবি ব্লগ লিংক