আমাদের সমাজে ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলন নিয়ে যে বিতর্ক, সমস্যা বা আলোচনা সে সম্পর্কে ভাবছি, চাঁছাছোলা কথাবার্তা ছাড়া কঠিন রোগ সারিয়ে তোলা যাবে বলে মনে হয় না। আবার যেসব কৌশলের কথা বলা হচ্ছে, তারও তো দরকার আছে বলে মনে হয়। কোন সময়ে যে কী করতে হবে– এটি বুঝতে পারাই বোধকরি প্রজ্ঞা। আমার প্রজ্ঞায় ঘাটতি অনুভব করছি। অথচ, কার কাছে যে তা আছে, তাও দেখতে পাচ্ছি না। সবাইকে কেন জানি মনে হচ্ছে খেদমতে দ্বীন পার্টি! তাই ইকামতে দ্বীনের তরীকায় কারা আছেন, খুঁজে নিতে হবে দেখছি। ট্রাডিশনালিস্টরা তো বটেই, আরো অনেকেই ভাববেন, এ লোকটির হেদায়াতে সমস্যা হয়েছে! হেদায়াতের মালিক আল্লাহ, বান্দা শুধু চাইতে পারে। আমিও চাইছি, নিজের জন্য এবং সবার জন্য। কিন্তু আমার চর্মচক্ষে পরিস্কার দেখতে পাচ্ছি, ইকামতে দ্বীনের পতাকা উড়িয়ে ইসলামী আন্দোলনের তকমা বুকে ধারণ করে যারা এগিয়ে যাচ্ছে, তারাও প্রকারান্তরে খেদমতে দ্বীনে পরিণত হয়েছে বা হচ্ছে! কী ভয়ানক কথা!!

ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাবো, হলে হলো, না হলেও করার কিছু নাই। আল্লাহ না চাইলে তো আর হবে না। বাতিলের ইস্যুর তো আর শেষ নাই, ‘ওয়া মা আলাইনা ইল্লাল বালাগ’ ধরনের ব্যাপার।

ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করা হবে বিদ্যমান বাস্তবসম্মত পদ্ধতিতে। এতে গ্রহণ করা হবে সর্বাত্মক তথা প্রায়োগিক ও সুপরিকল্পিত চেষ্টা। পরিকল্পনার পর্যায়গুলো চিহ্নিত থাকবে ও তদনুযায়ী কাজ করা হবে। প্রতিটা প্ল্যানের সাথে অল্টারনেটিভ ব্যাকআপ প্ল্যান থাকবে। যদিও বাতিলের অজুহাতের কোনো শেষ নাই, তবুও সদাসর্বদা চেষ্টা থাকবে কোনো পার্শ্ব-ইস্যুতে না জড়ানোর। কখনো কোনো অপ্রাসঙ্গিক সংশ্লিষ্টতা সৃষ্টি হলেও যথাসম্ভব কম সময়ে সেটিকে কিল করা অর্থাৎ অধিকতর ইনভলভড না হয়ে এভয়েড করা। মোর ইম্পর্টেন্ট পয়েন্টে মূল শক্তি নিয়োজিত করা। সর্বোপরি, কোয়ালিটি অ্যাচিভ করাকে সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি দেয়া। এভাবে কাজ করার পর কাঙ্খিত ফলাফল না আসলেও হতাশ না হয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করা। ‘ওয়ামা আলাইনা ইল্লাল বালাগ’-এর সাথে সাথে ‘ইনিল হুকমু ইল্লা লিল্লাহ’কেও এখানে সমগুরুত্ব দিয়ে অনুসরণ করার চেষ্টা করা।

এই দুই ধরনের চেষ্টার মধ্যে বিরাট পার্থক্য। প্রথমটির মতো হলে বাহিরে ইসলামী আন্দোলনের সাইনবোর্ড থাকলেও মূলত তা খেদমতে দ্বীন টাইপের কিছু একটা। দ্বিতীয় ধরনের কর্মধারাই হলো সত্যিকারের ইসলামী আন্দোলন, এমনকি এ ধরনের কর্মতৎপরতার কোনো নাম বা আদৌ কোনো ইসলামী নাম না থাকলেও!

এমন ধারাই খুঁজছি…।

এসবি ব্লগ থেকে নির্বাচিত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

হাসমত: “হেদায়াতের মালিক আল্লাহ, বান্দা শুধু চাইতে পারে। আমিও চাইছি, নিজের জন্য এবং সবার জন্য।” আল্লাহ আমাদের হেদায়েত দিন।

“ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করা হবে বিদ্যমান বাস্তবসম্মত পদ্ধতিতে।”

 রাসূলের (সা) নীতি ও আদর্শ, তাঁর সুন্নতকর্ম অনুসরণ ছাড়া যতই বিদ্যমান পদ্ধতি ব্যবহার করা হোক না কেন, কোনো ফল আসার সম্ভাবনা নাই। ওয়ালা তাহিনু ওয়ালা তাহজানু, ওয়ান্তুমুল আ’লাউনা ইন কুন্তুম মু’মিনিন।

আপনাকে ধন্যবাদ

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: একমত। তবে, সুন্নাহকে সঠিকভাবে বুঝতে হলে তাকে বুঝতে হবে সামগ্রিকভাবে। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট সকল রেফারেন্স (কুরআন ও হাদীসের) একসাথে নিয়ে ফায়সালা বের করতে হবে। প্রায়শই যা হচ্ছে তা হলো এবিউজ অব রেফারেন্স। এর মানে হলো সংশ্লিষ্ট কোরআনের আয়াত বা হাদীসটির ভিত্তিতে যা দাবি করা হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে উক্ত আয়াত বা হাদীসটির সে অর্থ নয়। যেমন শানে নুযূল হতে বিচ্ছিন্ন করে শুধুমাত্র অথেনটিসিটির ভিত্তিতে কোনো কিছু ক্লেইম করা।

হ্যাঁ, সমস্যা হলো মুমিন হওয়া নিয়ে। আল্লাহর রাসূলের (সা) সাথে যারা মুমিন ছিলো, তাঁরা ছিলো চিন্তাশীল-কর্মবাদী। বর্তমানের অনেকের মতো আমলবাদী বা বুদ্ধিবাদী ছিলেন না।

সো, আমাদের হতে হবে থিওরিস্ট-এক্টিভিস্ট; নট অনলি থিওরিস্ট, নট অনলি একটিভিস্ট।

এম এন হাসান: খুব ভালো লিখেছেন। সত্যিকারের একটি ইসলামী আন্দোলন খুঁজে বেড়াচ্ছি, পলিটিক্স যাদের মূল কর্মনীতিকে গিলে ফেলবে না, বরং হবে একটি টুলস মাত্র।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ইসলামী আন্দোলনের মূল মডেল হলো রাসূলুল্লাহর (সা) জামায়াত। যা এখন আর পাবেন না। এই আল-জামায়াতের আদলে গড়া যে কোনো জামায়াতে আমাদের শরীক থাকতে হবে। না থাকলে বানিয়ে নিতে হবে। যতটা অনুরূপ সম্ভব। ততক্ষণ পর্যন্ত বিদ্যমান কাঠামোয় যথাযথ অংশগ্রহণ থাকতে হবে।

এটি একটি ভুল ধারণা যে, একজন শুধুমাত্র একটা সংগঠনেই অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। মূল মডেলের অনুরূপ যে কোনো প্রচেষ্টা বা সংগঠনের সাথেই থাকতে পারেন। ব্যাপারটা হলো, একেবারে বিচ্ছিন্ন থাকা যাবে না।

বাইয়াত সম্পর্কিত বর্ণনাগুলো সহীহ হওয়া সত্ত্বেও নির্দিষ্ট একটা সংগঠনই একটা এলাকার খেলাফত জাতীয় কিছু একটা এনজয় করবেন– এমনটা নয়। আমরা আসলে ইসলামী রাষ্ট্র বা সরকার গঠন পরবর্তী ইনজাংকশনগুলোকে এর পূর্ববর্তী অবস্থার সাথে মিলিয়ে ফেলছি।

একটি এলাকায় একটাই ইসলামী সরকার থাকবে। কিন্তু তাই বলে ইসলামী সরকার গঠনের প্রচেষ্টা কেবলমাত্র একটা ধারাতেই হতে হবে– এমন বাধ্যবাধকতা নাই।

প্রত্যেক মুসলমানই এক একটা সংগঠন। প্রতিটি মুমিনই একটা আন্দোলন। একটি মুমিন পরিবার ক্ষুদ্র পরিসরে একটা ইসলামী সরকার। প্রতিটা সংগঠন আসলে ক্ষুদ্রতর সংগঠনের সমন্বয় এবং বৃহত্তর সংগঠনের অংশীদার।

এটি অথবা নয়– এ ধারার কথাবার্তাগুলো প্রায় সব ইসলামী প্রতিষ্ঠানের দাবিমাত্র। যা অগ্রহণযোগ্য।

মূল পোস্টের ব্যাকআপ লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *