[ইসলামী আন্দোলন সম্পর্কে ধারণা আছে এবং এ ব্যাপারে জানতে আগ্রহী, শুধুমাত্র এমন পাঠকদের জন্য এই নিবন্ধ। ফেসবুকে এটি আট পর্বে পোস্ট করা হয়েছিলো। এখানে সবগুলো পর্ব সংকলন করা হলো। প্রতি পর্বের ফেসবুক লিংক পর্ব শেষে উল্লেখ করা হয়েছে।]
১.
কোরআন-হাদীসে মুসলমানদেরকে সব সময়ে সংঘবদ্ধ থাকতে বলা হয়েছে। কোনো মানুষের ইসলামসম্মত জীবনের অন্যতম অপরিহার্য দাবী হলো সে মুসলমানদের জামায়াতের সাথে জীবনযাপন করবে। এই সহজ সরল বিষয়টাকে কোনো কোনো ইসলামী সংগঠন অত্যন্ত ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে।
তাদের মতে, একজন আমীরের অধীনে, আরো সুনির্দিষ্ট করে বললে, একটা নির্দিষ্ট সংগঠনের শপথের অধীনে তাদের থাকতে হবে। নচেৎ কী হবে তা নিয়ে তাদের মধ্যে দু’ধরনের মত আছে। চরমপন্থীদের মতে, ‘জামায়াতী জিন্দেগী’ ও ‘শপথের’ বাইরে থাকা ঈমানের বাইরে থাকারই নামান্তর। মধ্যপন্থীদের মতে, এহেন ‘মুক্ত জীবন’ ঈমানী দুর্বলতার পরিচায়ক।
দুঃখজনক হলেও সত্য, আমার দেখা সব ইসলামী সংগঠন ও আন্দোলনই এ ধরনের বিভ্রান্তিকর ও প্রান্তিক ধ্যান-ধারণা লালন করে। এ ধরনের একদেশদর্শী ব্যাখ্যাকে সঠিক প্রমাণের জন্য তারা জামায়াতবদ্ধ জীবন সম্পর্কিত কোরআন-হাদীসের নির্দেশসূচক অকাট্য হুকুম তথা নসগুলোর ভুল ব্যাখ্যা করে।
জামায়াতবদ্ধ জীবনযাপনের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলা কোরআন ও হাদীসের অকাট্য বর্ণনাগুলোকে সেগুলোর প্রেক্ষাপট সহকারেই বুঝতে হবে। কোরআনের আয়াতের জন্য প্রয়োজন শানে নুযুল বা নাযিলের প্রেক্ষাপট জানা। আর কোনো হাদীসে রাসূলুল্লাহর (সা) সঠিক অর্থ ও তাৎপর্য জানার জন্য জরুরী হলো শানুল ওয়ারুদ তথা বর্ণনার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা। যতই সহীহ ও স্পষ্ট হোক না কেন, প্রেক্ষাপট-বিযুক্ত বর্ণনাকে আঁকড়ে ধরা মানে হলো ভুল অর্থের দিকে ধাবিত হওয়া।
বিশেষ করে, কনটেক্সট জানা ছাড়া আদেশ-নিষেধ সম্পর্কিত বর্ণনাগুলোর ভিত্তিতে কিছু করতে বা বলতে যাওয়া সাংঘাতিক বিপদজনক ব্যাপার। text-এর সাথে context-এর এই সম্পর্ক যে কোনো ধরনের গ্রন্থ পাঠের জন্য জরুরী।
*****
জামায়াতবদ্ধ জীবনযাপনের অপরিহার্যতা সম্পর্কে যে সকল ‘নস’ আছে সেগুলোর সে সময়কার প্রেক্ষাপট যা ছিলো এখন আর সেটা নাই। যদি না থাকে, তাহলে মুসলিম হিসাবে আমরা কীভাবে সেগুলোর ওপর আমল করবো তা এই সময়ের প্রেক্ষাপটে নতুন করে বুঝে নিতে হবে।
এবার আসুন, এ বিষয়ে তখনকার প্রেক্ষাপট কী ছিলো, তা একটু খতিয়ে দেখি।
তখন ওহী নাযিল হচ্ছিল। স্বয়ং আল্লাহর রাসূল (সা) ইসলামী জামায়াতের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এর বাইরে থাকা মানে ছিলো সংগত কারণেই ঈমান ও ইসলামের বাইরে থাকা। তখন জামায়াত তথা ইসলামী জামায়াত ছিলো একটাই। তাই, ইসলামে থাকার মানেই ছিলো এই ‘আল জামায়াতের’ সাথে থাকা।
ইসলামভিত্তিক একটিমাত্র বা একক জামায়াত থাকার এই ব্যবস্থা চতুর্থ খলীফার সময়ে ভেংগে পড়ে। তৎকালীন মুসলিম বিশ্ব আলী (রা) ও মুয়াবিয়ার (রা) নেতৃত্বে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এ পর্যায়ে এককেন্দ্রিক নেতৃত্ব ও আনুগত্য সংক্রান্ত কোরআন ও হাদীসের অনেক বর্ণনা ব্যাখ্যাসাপেক্ষ হয়ে পড়ে। আমি সেসব বর্ণনা সংক্রান্ত ডিটেইলসে যাচ্ছি না। ধারণা করছি, আগ্রহী পাঠকবৃন্দ ইতোমধ্যে সেগুলো সম্পর্কে জেনে থাকবেন।
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বর্ণনা মোতাবেক ইসলাম বুঝা, ব্যাখ্যা ও অনুসরণের পদ্ধতি সংক্রান্ত মানদণ্ড হিসাবে বিবেচনা করতে হবে যথাক্রমে (১) স্বয়ং রাসূলের যুগ, (২) সাহাবীদের যুগ, (৩) তাবেয়ীদের যুগ ও (৪) তাবে-তাবেয়ীনদের যুগকে। অথচ, তৃতীয় খলীফার পর হতে মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব ও আনুগত্য সংক্রান্ত যে নানা মাত্রার বিভাজন, তা সব এক কথায় বাতিল করে দেয়ার সুযোগ নাই। আমরা তো এ কথা বলতে পারবো না, আল্লাহ মাফ করুন, মুয়াবিয়ার (রা) পক্ষভূক্ত লোকেরা সব গোমরাহ হয়ে গিয়েছিলেন। বাস্তবতা হলো, তৎকালীন জীবিত সাহাবীগণ প্রায় সমান সমান ভাগে আলী (রা) ও মুয়াবিয়াকে (রা) সমর্থন করেছিলেন।
এ ধরনের বিভক্ত সংগঠন ও নেতৃত্বজনিত পরিস্থিতিতে আনুগত্যের এককেন্দ্রিকতা সংক্রান্ত রেফারেন্সগুলোকে সাধারণ নির্দেশনা ও হেদায়েতমূলক বর্ণনা হিসাবে নিতে হবে। এর মানে হলো, আলী (রা) ও মুয়াবিয়া (রা) – উভয়ের অনুসরণকারীরাই মুসলমানই ছিলেন। বৃহত্তর অর্থে তারা সবাই একই মুসলিম উম্মাহর সদস্য ছিলেন।
প্রত্যেকে তার নিকটস্থ সংগঠন ও নেতৃত্ব-ব্যবস্থাকে মেনে চলেছেন। আমি-আপনি ভাবতেই পারি, সে সময়কার পরিস্থিতিতে উপস্থিত থাকলে আমরা আলীর (রা) পক্ষে থাকতাম। তারমানে, মুয়াবিয়ার (রা) পক্ষে যারা ছিলেন তারা ‘বাতিল পক্ষ’ ছিলেন, এমন নয়।
এ ধরনের পরিস্থিতিতে এখনো তাই করতে হবে অনুরূপ বিপর্যয়কর পরিষ্থিতিতে সে সময়কার ঈমানদারেরা যা করেছিলেন। আমাদেরকেও সেভাবে চলতে হবে যেভাবে তাঁরা চলছিলেন। নতুন কোনো পন্থা বের করা যাবে না। ইসলামের ইতিহাসে প্রথম দিককার অনভিপ্রেত ঘটনাগুলোকে যতই আমরা সাফ-সুতর করে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করি না কেন, ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে অন্তত এ কথাটুকু তো স্বীকার করতেই হবে, তখনকার মুসলিম বিশ্ব তথা খেলাফত ব্যবস্থা কার্যত দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছিলো।
তবে, এখানে একটা ‘তবে’ আছে।
একক খলীফা থাকার সময়ে আনুগত্যসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে যা যেভাবে করা হতো তা যেমন একাধিক খলীফা থাকার পরিস্থিতিতে কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে, তেমনি করে দুনিয়ায় আদৌ কোনো খেলাফত না থাকার অবস্থায় সাংগঠনিক আনুগত্যের বিষয়ে যা যেভাবে করতে হবে তাও খানিকটা নতুন ধরনেরই হবে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নাই।
*****
২.
বিগত শতাব্দীর শুরুতে উসমানীয় খেলাফত বিলুপ্তির পরে বর্তমান বিশ্বে এমন কোনো সংগঠন বা জামায়াত নাই যার বাইরে থাকলে ঈমান থাকার বিষয়ে সন্দেহ করা যাবে। কিংবা এ ধরনের ‘বিচ্ছিন্ন’ ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের ঈমান না থাকার বিষয়ে নিঃসন্দেহ হওয়া যাবে। কাছাকাছি থাকা মুমিন-মুসলমানদের সাথে যথাসম্ভব ঐক্যবদ্ধ থাকার চেষ্টা করতে হবে। এ কথা ঠিক। কিন্তু এর মানে কোনোক্রমেই তা নয়, যা বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন ও আন্দোলন তাদের বই-পুস্তকে বা অলিখিতভাবে দাবী করছে।
সামগ্রিকভাবে মুসলমানেরা বৃহত্তর মুসলিম উম্মাহর মধ্যেই আছে। হযরত মুয়াবিয়া (রা) ও আলীর (রা) মধ্যকার রাজনৈতিক বিরোধ সংক্রান্ত ইতিহাসকে যারা গভীরভাবে অধ্যয়ন করবেন তাদের বুঝবেন, মুসলিম উম্মাহর ধারণা হলো মূলত ঈমানী প্রেরণা ও ঐক্যবোধের চেতনা। তাই, মুসলিম উম্মাহর ধারণাকে অখণ্ড রাজনৈতিক কর্তৃত্ব হিসাবে বিবেচনা করা স্পষ্টত ভুল। টেক্সট, ইতিহাস ও বাস্তবতার জ্ঞানসম্পন্ন কারো এমন ভুল করার কথা না।
*****
আপনি কোন সংগঠনে জয়েন করবেন তা কীভাবে নির্ধারণ করবেন?
প্রচলিত ন্যারেটিভ হলো আপনি নিকটতম বড় ও প্রভাবশালী সংগঠনের সাথে একাত্ম হয়ে কাজ করবেন। সমস্যা হলো সবচেয়ে বড় বা বেশি প্রভাবশালী হওয়ার মানে কোনো উদ্যোগ বা সংগঠন বেশি ভালো হওয়া বুঝায় না।
ব্যক্তিগত ও সামাজিক সংগঠন ও উদ্যোগগুলোর জন্য এটি বিশেষ করে প্রযোজ্য। ডমিন্যান্ট সংগঠনে অংশগ্রহণের কথা যারা বলেন, তারা ভুলে যান, ইসলাম কদাচিৎই হক-বাতিলের মানদণ্ড হিসাবে মেজরিটিকে অনুমোদন করে। ইসলামে ডমিন্যান্সি দিয়ে সত্যকে প্রমাণ করা যায় না। সত্য-মিথ্যা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ইসলাম গুণগত মান ও সম্ভাবনাকে অগ্রাধিকার দেয়।
তাছাড়া রাজনীতিতে যারা অগ্রগামী, হতে পারে সামাজিক কর্মে তারা ততটা মনোযোগী নয়। এর উল্টোটাও হতে পারে। হতে পারে, দ্বীনি দাওয়াতের ময়দানে যাদের কাজ বেশি রাজনীতিসহ নানাবিধ মোকাবিলার ময়দানে তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না কিংবা তাদের উপস্থিতি অত্যন্ত দুর্বল। আবার শক্তির দিক থেকে মজবুত হলেও দাওয়াতী, সামাজিক কিংবা রাজনৈতিক সেক্টরে ততটা দৃষ্টিগ্রাহ্য অবস্থান নাই, কোথাও এমন ধরনের কাজ থাকতে পারে।
কোনো জনপদে যদি এমন কোনো একটা সংগঠন থাকে যেটা সব দিক দিয়ে সমান তালে অগ্রগামী তখন সেটাকে আমরা পূর্ণাঙ্গ ইসলামী আন্দোলন বলতে পারি। তখন সেখানকার মুসলমানদের উচিত হবে সেই দলে যোগ দিয়ে কাজ করা। এটি পরিষ্কার। আছে কি এমন কোনো সংগঠন আপনার আশেপাশে?
তা যখন নাই, তখন কেন একটা বিশেষ ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলের আনুগত্য করা কারো জন্য ওয়াজিব হবে, এটি আমার বুঝে আসে না। আশ্চর্য!
*****
এ ছাড়াও কে বা কারা বড় কিংবা বেশি প্রভাবশালী তা নির্ণয় করার ক্ষেত্রে আরও একটা ব্যাপার আছে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেটি হলো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, সংগঠন বা উদ্যোগের অন্তর্নিহিত সম্ভাবনা। হতে পারে, কোনো উদ্যোগ ক্ষুদ্র। হতে পারে আজকের নগণ্য একটা সংগঠন বা উদ্যোগই আগামী দিনে অনেক বড় ও প্রভাবশালী হয়ে উঠার যোগ্যতা রাখে। আজকের দিনে ময়দানে থাকা বড় ও প্রভাবশালী সংগঠনগুলোই তো এক সময়ে অত্যন্ত ক্ষুদ্র ব্যক্তি উদ্যোগ হিসাবে শুরু হয়েছিলো।
তাই, ইনার পটেনশিয়ালিটিজকে বিবেচনা করলে, সংগঠন বিশেষের বর্তমান অবস্থান, শক্তি, প্রভাব ও আয়তনের চেয়ে সেটির ভবিষ্যত সম্ভাবনাকেই অধিকতর গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার দিতে হবে। সূর্য উঠলে আর ঘুমিয়ে থাকা যায় না বিধায় সবাই তখন জাগে। বুদ্ধিমানেরাই শুধু সুবহে সাদিকের সময়ে উঠে কাজের প্রস্তুত্তি নেয়। বিজয়ের পরে যোগদান করা আর বাহ্যত হীন, দুর্বল ও পরাজিত অবস্থায় থাকা কোনো সম্ভাবনাময় উদ্যোগে সামিল হওয়া ও অবদান রাখার মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। সমস্যা হলো অধিকাংশ লোকেরাই গবাদি পশুর মতো কেবল হাঁকডাক শোনে। যুগের ভাষা ও সময়ের দাবীকে খুব কম লোকেরাই বুঝতে পারে। বিচক্ষণ ও দূরদৃষ্টি সম্পন্নরাই অবশ্য দিন শেষে বিজয়ী হয়।
কোম্পানীর দৃষ্টিনন্দন সাফল্যের পরে অনেকেই সেটার শেয়ার কিনতে চায়, তাতে জয়েন করতে চায়। সম্ভাবনাময় উদ্যোগগুলোকে তারাই চিনতে ভুল করে না যারা আবেগ, ভক্তি ও অন্ধ আনুগত্যের পরিবর্তে যুক্তি, বাস্তবতা ও সম্ভাবনাকে অগ্রাধিকার দেয়। যারা স্রোতের বিপরীতে চলার হিম্মত রাখে, শুধুমাত্র তারাই লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে। মুখে বকোয়াজগিরির বাইরে প্রয়োজনে উল্টাপথে চলার হিম্মতহারা অধিকাংশ ‘একামতে দ্বীনপন্থীরা’ই তলে তলে শর্টকাট নাজাত লাভের লোভে ইসলামী আন্দোলনের মোড়কে পীর-মুরিদী টাইপের খেদমতে দ্বীনের ‘নিবেদিত প্রাণ’ কর্মী হিসাবে তুমুল ব্যস্ত। দূরপাল্লার লক্ষ্য ভুলে তারা আজ লোকাল ট্রেনের যাত্রী। এক একজন ‘ইঞ্জিন মার্কা কর্মী’ হিসাবে গড়ে উঠার পরিবর্তে সবাই মিলে শেষ পর্যন্ত হয়েছে আজ অচল বগির এক বিশাল জাঙ্কইয়ার্ড।
সংগঠন অনুসরণ করার কথা বলুন কিংবা নাগরিক দায়িত্বপালনের কথাই বলুন, কোরআন-হাদীসের যুক্তি-বুদ্ধিকে কাজে লাগানো, সহজতাকে গ্রহণ করাসহ উদারতা-সহনশীলতার চর্চা করা সংক্রান্ত রেফারেন্সগুলোকে কোনো মুসলমানই অস্বীকার করতে পারে না। তাই কেউ যদি কোরআন ও হাদীসের সকল স্পষ্ট বর্ণনাকে সমগুরুত্ব দিয়ে আমল করতে চায় তার পক্ষে একদেশদর্শী, প্রান্তিক, অক্ষরবাদী (literalist) এবং বিশেষ কোনো দল, মত ও পথের অন্ধ ও গোঁড়া অনুসারী হওয়া অসম্ভব।
এই দৃষ্টিতে সব ধরনের চরমপন্থীরাই আদতে সুবিধাবাদী। তারা কোরআনের কিছু অংশ মানে আর কিছু অংশকে প্রকারান্তরে অস্বীকার করে। কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়াই বিশেষ কোনো একটা সংগঠনকে মানার দাবী যারা করে তারা নিরস্ত্র চরমপন্থা কিংবা নিবীর্য সুফী তরীকারই অনুসরণ করছেন, যদিও তারা তা স্বীকার করতে চান না। হতে পারে নিজেদের এহেন বুদ্ধিবৃত্তিক বৈকল্য সম্পর্কে তারা সচেতন নয়।
*****
৩.
১৯২৪ সালে তুরস্কে খেলাফত ব্যবস্থা বিলুপ্ত করার মাধ্যমে বর্তমান দুনিয়ায় ইসলামের (রাজনৈতিক) জাহাজ ডুবে গেছে। দুনিয়াব্যাপী মুসলমানেরা এখন যেভাবে যেদিকে পারছে সাঁতর কেটে কুলে উঠার চেষ্টা করছে। তাই, বৃহত্তর অর্থে এখানে সবার উদ্যোগই সঠিক। যদি তারা ‘পূর্ণাংগ ইসলামকে’ মানার কথা স্বীকার করে।
এই পর্যায়ে রাজনৈতিক ইসলামপন্থীরা লাফিয়ে উঠবেন, “এই তো লাইনে এসছেন। ‘পূর্ণাংগ ইসলামের’ কথা বলছেন”।
‘পূর্ণাংগ ইসলাম’ বলতে কে কী বুঝেন, জানি না। আমি বুঝি, যিনিই কোরআন ও হাদীসকে অনুসরণ করার কথা বলবেন তিনি পূর্ণাংগ ইসলামের পথেই আছেন। হতে পারে, তার বা তাদের আমল-আখলাকে অপূর্ণতা বা ত্রুটি আছে। হতে পারে সংশ্লিষ্ট ধারাটি একটা ক্রমধারা অনুসরণ করছেন। হতে পারে একটা ঐতিহাসিক অবস্থানকে স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনায় তারা শরীয়াহ বাস্তবায়নের ক্রমধারায় একটা সুনির্দিষ্ট অবস্থানে নিজেদের আইডেন্টিফাই করেছেন। এ সংক্রান্ত সব ‘ত্রুটি’ই সংশোধন যোগ্য যদি তিনি বা তারা কোরআন ও হাদীসের মান্যতাকে অন্তত তাত্ত্বিকভাবে স্বীকার করে।
আমার এ কথা যদি আপনি না মানেন, তাহলে বর্তমানে কাজ করছে এমন একটা সংগঠনের নাম বলুন যারা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ তথা বড় বড় সব দিকে ঊনিশ-বিশ তথা সমান তালে অগ্রসর হচ্ছে। অন্তত চেষ্টা করছে? আছে এমন সংগঠন? হতে পারে এমন সংগঠন? না। এমন সংগঠন নাই এবং তা বর্তমান পরিস্থিতিতে হতেও পারে না। আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ (সা) ও প্রথম তিন খলিফার সময়কার উদাহরণ এখন শুধুই প্রেরণার ব্যাপার। মডেল হিসাবে সামনে রেখে পথ চলার ব্যাপার। এই দৃষ্টিতে শতভাগ অনুসরণযোগ্য ওই সময়টুকু আমাদের জন্য ইউটোপিয়া বা কল্পতুল্য আদর্শ। কেননা, তেমন মান আমরা আর কখনো অর্জন করতে পারবো না।
অবশ্য তা প্লাটো প্রস্তাবিত আদর্শ রাষ্ট্রের দার্শনিক রাজার মতো কল্পতুল্য আদর্শ বা ইউটেপিয়া মাত্র নয়। কেননা, প্লাটোর ফিলোসফার কিং কখনো কোথাও ছিলো না। প্লাটোও জানতেন, কখনো তা হবে না। তার প্রস্তাবনা ছিলো, এমন একটা অলীক মডেলকে সামনে রেখে যথাসম্ভব আদর্শস্থানীয় হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। অথচ, ইসলামী সংগঠন ও আন্দোলনের বিষয়ে যে মডেলকে সামনে নিয়ে আমরা কাজ করছি তা স্বল্প সময়ের জন্য হলেও দুনিয়াতে বাস্তবায়িত হয়েছিলো।
*****
এমন একটা আদর্শ ব্যবস্থা তথা খেলাফতে রাশেদার আমল কেন দুনিয়ার বহাল থাকে নাই তা আমরা জানি না। আমরা শুধু বলতে পারি, এটাই ছিলো আল্লাহর হুকুম। তিনি চাইলে তো সব কিছু এমনিতেই আদর্শ মোতাবেক চলতো। বস্তুজগতের মতো মানুষের সামাজিক জীবনও প্রাকৃতিক নিয়মের বাধ্যবাধকতায় চলতো। তাতে কোনো সমস্যা ছিলো না। কিন্তু আল্লাহর হুকুম ছিলো ভিন্ন। তিনি চেয়েছেন, মানুষকে তার খলীফা বানাবেন। এরপর দেখবেন, সুষম ও প্রাকৃতিক সমাজ ব্যবস্থাকে মানুষ মেনে চলে কিনা। এসব তাঁর পরিকল্পনা ও ইচ্ছার ব্যাপার।
সবার মতেই আদি সমাজ ভালো ছিলো। একপর্যায়ে মানুষের সমাজ জীবনে অবক্ষয় ঘটে। কারো না কারো উদ্যোগে নানা মাত্রায় আবার সামাজিক পূনর্গঠন সম্পন্ন হয়। আবার তাতে ফাটল ধরে। নতুন করে গড়ে তোলা সেই আদর্শ ব্যবস্থাও এক পর্যায়ে ভেংগে পড়ে। নতুন কোনো উদ্যোগ আবার গড়ে উঠে। সমাজ ও রাষ্ট্রে আবার কম-বেশি ভারসাম্য ফিরে আসে। এক পর্যায়ে তাতেও আবার ভারসাম্যহীনতার উদ্ভব ঘটে। এভাবে সমাজ ও রাষ্ট্রে ভাংগা ও গড়ার ‘খেলা’ চলতে থাকে। আমরা সবাই সমাজ গড়ার এই গত্যন্তরহীন খেলায় এক একজন পারফরমার।
জিততে হলে কৌশলী হতে হবে। মাঠে একটা দলের সব খেলোয়াড় সব সময়ে এক সাথে থাকে না। কোনায়-কানায় কিংবা সময়ে সময়ে অন্যদের সাথে মিশে থেকেও তারা একটা ঐক্যবদ্ধ দল হিসাবে খেলতে থাকে। মাঠের চৌহদ্দির মধ্যে থাকা প্রত্যেক খেলোয়াড় যদি ফিজিক্যালি স্বাধীনভাবে না খেলে প্রত্যেকটা শট নেয়ার পূর্বে যদি ‘দায়িত্বশীলের অনুমোদনের’ অপেক্ষা করে তাহলে সেই খেলোয়াড় কখনো খেলায় জিততে পারবে না। এমন দল স্বল্প দড়ি দিয়ে পরস্পরের সাথে গলায় বাঁধা বেপারীর গরুর দলের মতো ‘ঐক্যবদ্ধই’ থাকবে, আগাতে পারবে না।
ফুটবল খেলাকে যদি আমরা উদাহরণ হিসাবে ধরি, তাহলে দেখবো, খেলোয়াড়েরা এককভাবে খেলে না, আবার তারা যৌথভাবেও খেলে না। বরং সমন্বয় করে। কখনো একাই এগিয়ে যায়, কখনো নিজ দলের কারো কাছে বল পাস করে দেয়। কখনো লং শট নেয়, কখনো শর্ট কিক করে। বলে কখন কতটুকু লেংথে কিক করতে হবে তা প্রত্যেক খেলোয়াড় নিজের বিবেচনাতেই ঠিক করে। কারো বলে দেয়ার অপেক্ষা করে না। এই অর্থে প্রত্যেক খেলোয়াড়কে মাঠে স্বাধীনভাবেই খেলতে হয়।
সামাজিক যে কোনো কাজকর্মের ক্ষেত্রেই গেইম থিওরির এই বাস্তবতা প্রযোজ্য। বাস্তবসম্মত জীবনব্যবস্থা হিসাবে ইসলামও এর বাইরে নয়। বরং ইসলাম স্বয়ং, আমার দৃষ্টিতে, গেইম থিওরির উত্তম উদাহরণ।
ফেসবুকে প্রদত্ত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Md Hasan: আসসালামুআলাইকুম । ভাই রাগ করবেন না ,আপনার লিখাটা পড়ে মনে হলো আপনি আনুগত্য শব্দের সঠিক অর্থ বুঝতে পারেননি । কারণ আপনি যে গেইম থিওরির বাস্তবতার সাথে বাস্তবসম্মত জীবনব্যবস্তা হিসাবে ইসলামের যে মিল দেখতে পাচ্ছেন তা একেবারেই ঈমানের পরিপন্থি কথা । কেননা ইসলামে আরবিতে ( এতায়াত) আনুগত্য ফুটবল খেলোয়াডদের নিজের বিবেচনায় স্বাধীন ভাবে মানা না মানা নিজের ইচ্ছাধীন চলার নাম নয় ।আনুগত্য হচ্ছে ,ফরজ বিষয় যা সর্থহীন যেমন -আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা:) আনুগত্য করা But অনুরুপ যখন কোন মানুষের আমরা আনুগত্য করতে যাব তখন তা সর্থ সাপেক্ষে যেমন আমরা যে বিষয়ে যার আনুগত্য করতে জাচিছ সেটিকি আল্লাহ এবং রাসূল (সা:) সঠিক নির্দেশ মোতাবেক হচ্ছে কিনা সেটি দেখতে হবে । মূলত বাহ্যিক দৃষ্টিতে তা কোন মানুষের আনুগত্য হিসাবে দেখা গেলেও যেহেতু আল্লাহ ও তাঁর রাসূল(সা:) সঠিক নির্দেশ মোতাবেক হলেই তা পালন করা যাবে নাহলে তা করা হারাম বা কুফুরি হয়ে যাবে ।সুতরাং এটি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা:) আনুগত্য করাই বুঝায়। উদাহারন স্বরুপ ঈমান ,নামাজ,রোজা হজ্জ,যাকাত আরো অনেক কিছু আছে যা মা,বাবা ওস্তাদ কিংবা সকল প্রকার আনুগত্য পাওয়ার যোগ্য লোক যদি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল(সা:) যেভাবে করতে বলেছেন তার বিপরিত ভাবে করতে বলে তা মানা বা পালন করা যাবে না এখানে সর্থ হচ্ছে আল্লাহ ও রাসূল(সা:) এর নির্দেশ বা পদ্ধুতি মোতাবেক অর্থাৎ ফুটবল খেলোয়াডদের ইচ্ছা মোতাবেক নয়। ধন্যবাদ
Mohammad Mozammel Hoque: ফুটবল প্লেয়ার কি ‘ইচ্ছামতো’ খেলে? ‘ইচ্ছামতো’ বলতে যদি আমরা যাচ্ছেতাইভাবে কোনো কিছু করা বুঝি। তারা বরং কোচ, ক্যাপ্টেন ও সহখেলোয়াড়দের সাথে স্বাধীনভাবে সমন্বয় করে খেলে। কোনো উদাহরণকে উদ্ধৃত করে যখন কোনো টার্ম ব্যবহার করা হয় তখন তাকে সেই প্রেক্ষাপটেই বুঝতে হবে। কনটেক্সট বিযুক্ত অর্থ, অপব্যাখ্যার সামিল।
কথা হলো, ক্যাপ্টেন কে? কোচ কে? আমার কথা হলো মুসলিম উম্মাহর কোচ ও ক্যাপ্টেন নবী মুহাম্মদ (সা)। এখনকার ‘দায়িত্বশীলেরা’ বড়জোর সহ-খেলোয়াড়।
Ismail Jabiullah: কোচ নবী মুহাম্মদ (স:) বুজলাম।দায়ীত্বশীলরা ত ক্যাপ্টেন হতে পারে মনে হয়?? কারন ক্যাপ্টেনরা সহ খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নেতৃত্ব দেয় এবং খেলে।তাই নয় কি??
Mohammad Mozammel Hoque: সমস্যা হলো বাস্তব জীবন ফুটবল খেলার চেয়েও জটিল। জীবনের এই “ফুটবল খেলায়” বহু রেফারি, বহু ক্যাপ্টেন। এক এক জায়গায় এক একজন উলিল আমর। সব মিলিয়ে বা সর্বোপরি একজন উলিল আমরের ধারণাটা ভুল।
*****
৪.
আদেশ ও আনুগত্যের অপরিহার্য মান্যতার বিষয়টা প্রশাসনিক প্রেক্ষাপটেই বুঝতে হবে। প্রশাসনিক সেট-আপ গঠনগতভাবেই ক্রমসোপানমূলক ধাঁচের। আরো বিশেষভাবে বললে, প্রশাসনিক ব্যবস্থার মূল কাঠামোটা top-down ধরনের। এজন্য এমনকি তিন জন ব্যক্তির সফরেও একজনকে আমীর নিযুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। সামাজিক কাজকর্ম তথা মুয়ামালাতের বিষয়গুলো কখনো কখনো horizontal বা সমতলধর্মী, কখনো কখনো বটম-আপ বা গণ চরিত্রের, আভ্যন্তরীণ সাংগঠনিক ক্ষেত্রেই শুধুমাত্র তা hierarchical বা টপ-ডাউন ধরনের।
কোরআন-হাদীসের রেফারেন্সগুলোর কোনটি নির্দেশ, তার প্রেক্ষিত কী, কোনটা নির্দেশনা, কোন প্রেক্ষিতে তার প্রয়োগযোগ্যতার ব্যাপারটা কীভাবে আঞ্জাম দিতে হবে, বিশেষ করে, কোন কথাটা প্রশাসনিক এবং কোন কথাটা সামাজিক ক্ষেত্রের জন্য প্রযোজ্য তা বুঝতে হবে। বর্তমান সময়ে কোরআন-হাদীসের সহজলভ্যতা যতটুকু হয়েছে তার সাথে সাথে কোরআন-হাদীস হতে সঠিক অর্থ বের করার পদ্ধতিগত জ্ঞান লাভের বিষয়টির ততটা বুঝজ্ঞান লোকদের মধ্যে সৃষ্টি হয় নাই। সবাই শুধু যার যার পছন্দমতো সহীহ রেফারেন্স নিয়েই ছুটছেন। দুনিয়া বাদ দিয়ে আখেরাত প্রত্যাশী ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরকে কেউ একটা শর্টকাট নাজাত লাভের ‘অংক’ মিলাইয়া দিলেই তাতে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন। ভালো করে কিছু না জেনেই ‘সবাই দৌঁড়াচ্ছে, তাই আমিও দৌঁড়াচ্ছি’, ব্যাপারটা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভাবখানা এমন, ভুল শুদ্ধ যা-ই হোক, একা থাকা তো ঠিক না। কোনো একটা কিছুতে লেগে থাকা তথা এক্টিভিজমের যে একটা মাদকতাও আছে তা অনেকের মনে থাকে না। কিছু একটাতে এনগেজ হয়ে ভাবেন, খুব তো অনেক কিছু করছেন। না, ভুল পথে অনেক দূর যাওয়ার চেয়ে থেমে থাকাও ভালো। কোন দিকে সাঁতরালে আপনি সহজে ডাংগায় উঠতে পারবেন তা নিয়ে যথাসম্ভব ভাবতে হবে। কোনো একদিকে ছুটার আগে যুগের হাওয়া বুঝার চেষ্টা করতে হবে।
একটামাত্র সংগঠনের অধীনে সব জরুরী কাজ করতে চাওয়ার প্রচলিত তরীকাটাই ভুল। একটা কোম্পানী বিল্ডিং তৈরীর কন্ট্রাক্ট নিলেও সে অনেককেই সাব-কন্ট্রাক্ট দেয়। ড্রয়িং-ম্যাপ দেখে যে যার মতো কাজ করে যায়। দেয়ালের মিস্ত্রী ফ্লোরের কাজের কথা ভাবে না, ইলেকট্রিকের কাজের কথা ভাবে না। থাই মিস্ত্রী রংয়ের কথা ভাবে না। প্রত্যেকে প্রত্যেকের করণীয়-যোগ্যতা অনুসারে কাজ করে যা। এভাবে শেষ পর্যন্ত একটা বিল্ডিং তৈরী হয়। সে জন্য আগের কাজ আগে করতে হয়। প্রথম ধাপের শেষ না করে পরবর্তী ধাপের কাজ করলে তেমন বিল্ডিং হয়তো বানানোই যাবে না অথবা তা এক পর্যায়ে ভেংগে পড়বে।
বর্তমান সময়ে ইসলামী সংগঠন ও আন্দোলনের জন্য এটি পারফেক্ট একজাম্পল। এখানে আদর্শ সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের জন্য উপযুক্ত নকশা-ড্রয়িং-ম্যাপ হচ্ছে কোরআন-হাদীস-সীরাত। বিভিন্ন সেক্টরে দৃশ্যত স্বাধীনভাবে কর্মরত সংগঠন বা উদ্যোগগুলো সাব-কন্ট্রাক্টরদের মতো। যেসব মুসলমান মসজিদে নামাজ পড়তে যায়, দুনিয়ার যেখানে যে অবস্থাতেই থাকুন না কেন, তিনি বা তারা বৃহত্তর অর্থে মুসলিম উম্মাহ তথা ইসলামী জামায়াতের সাথেই আছেন। এ নিয়ে অহেতুক সন্দেহ-সংশয়ে ভোগার কোনো কারণ নাই।
কিছু বিষয় পরিষ্কারভাবে সামাজিক, কিছু বিষয় পরিষ্কারভাবে প্রশাসনিক। আবার কিছু বিষয় কখনো সামাজিক কখনো প্রশাসনিক। কিংবা, এক দিক থেকে সামাজিক, অন্য দিক থেকে প্রশাসনিক। যেমন– সিএসসিএস কোনো প্রশাসনিক সংগঠন নয়। নিছক একটা সামাজিক উদ্যোগ। বুদ্ধিবৃত্তিক পরিমণ্ডলের ব্যাপার। অথচ, এর একটা প্রশাসনিক সেট-আপ আছে। এবং তা ক্রমসোপানমূলক। আমি এর প্রধান ব্যক্তি। মাসউদুল আলম এর দ্বিতীয় ব্যক্তি। এভাবে। আবার এর মানে এই নয় যে, মাসুদ সব বিষয়েই আমার অধীন। মাসুদ আমার গাইডেন্স অনুসারে চলবে যদি তা ‘সমাজ ও সংস্কৃতি অধ্যয়ন কেন্দ্র’ সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যাপার হয়। এটি মূলত ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি রক্ষার সামিল। যেমন, ক্রেতা-বিক্রেতা কিছু শর্ত সাপেক্ষে পরষ্পরকে মেনে চলে।
[উলিল আমর, শুরা ব্যবস্থা, নাগরিকত্বের ধারণা ও ‘ইসলামী রাষ্ট্র’ নিয়ে এর একটা ফলোআপ সংক্ষিপ্ত লেখা শীঘ্রই প্রকাশ করা হবে, ইনশাআল্লাহ।]
ফেসবুকে প্রদত্ত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
ফেরারী মনটা আমার: স্যার এসব বললে আপনি খারাপ হয়ে যাবেন তাদের কাছে।তারা এমন ব্যবহার করে যেন মনে হয় ইসলাম থেকে আপনি খারিজ হয়ে গেছেন।
Mohammad Mozammel Hoque: এ পর্যন্ত দুনিয়ার কোন চিন্তককে সমসাময়িক লোকেরা খারিজ করে নাই, বলেন? যারা আগামী দিনের জন্য কাজ করবেন, অতীতে বসবাসকারী বর্তমানের অধিবাসীরা তাদেরকে ভুল বুঝবে, তাতে আর আশ্চর্য হওয়ার কী আছে?
ঝরঝরে ভাষা এবং সুন্দর যুক্তিপূর্ণ আলোচনা।
ধন্যবাদ। ভালো থাকেন।
যে লোক জাহেলিয়াত (যেমন- ধর্ম নিরেপক্ষ রাস্ট্য ইত্তাদি …) দিকে মানুষ কে ডাকে : সে জাহান্নামী.; যদিও সে নামাজ পরে, রোজা রাখে, নিজেকে মুসলিম বলে … আল হাদিস
নিবন্ধটি ভাল লেগেছে..তবে উপসংহার পাইনি..!
উপসংহার হলো, নো টেনশান। বিশেষ করে মুসলিম মেজোরিটি দেশে যারা আছেন, নামাজ পড়ার জন্য যারা মসজিদে যান, তারা বৃহত্তর অর্থে উলিল আমরের অধীনেই আছেন। সবাইকে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ করতে হবে, এমন কথা নাই। আর এ বিষয়ে আমি আরও একটা সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধ লিখবো, ইনশাআল্লাহ। সাথে থাকুন। চাইলে আমাকে ফোনও করতে পারেন। সেল ফোনে অথবা মেসেঞ্জারে, যদি আপনার সিরিয়াস কোনো কথা থাকে।
মন দিয়ে পড়লাম। খুবই সুন্দর এবং যুগোপযোগী। তবে মনে হলো, এটা ভূমিকা মাত্র। পরের লেখাগুলোর জন্য অপেক্ষায় থাকব।
আপনাকে একটা অনুরোধ করতে চাই; বুদ্ধিবৃত্তিক জগতে যেহেতু আপনি বিশাল অবদান রেখে চলেছেন সেহেতু হয়ত আপনার হাতে অন্যদিকে নজর দেয়ার মত বেশি সময় নেই; তার পরেও বলব, আপনি একটা রূপরেখা তৈরি করুন, যেটা অনুসারে এদেশে একটা ধারা গড়ে উঠবে, যে ধারাটি ‘ক্রমধারা’ অনুসরণ করে একসময় মহীরূহে পরিণত হবে। বদিউজ্জামান সাঈদ নূরসীর মতো করে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা যেতে পারে।
তবে অবশ্যই আপনি বুদ্ধিবৃত্তিক জগতে বেশি সময় দিন; কারণ আমাদের দেশে সেধরণের যোগ্যতা সম্পন্ন মানুষের বড্ড অভাব।
আল্লাহ আপনার খেদমত কবুল করুন।
আমি পাইলাম,ধন্য স্যার
আসসালামুয়ালিকুম অরাহমআতুল্লাহ! আল্লাহ আপনাকে আপনার কাজের সর্বোত্তম প্রতিদান দান করুন।যারা ইসলাম কে ইসলামের মতো করে পালন করতে চাই তাদের জন্য আপনার সমস্থ লেখাগুল সত্যি খুবই প্রয়োজন।
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ…
আলোচনার অধিকাংশ বিষয়ে একমত!
কিন্তু একটা বিষয় বুঝে উঠতে পারছিনা-
‘আলজামায়াত’ সম্ভব নয় বটে! কিন্তু একজন মুসলিমের কোন ‘আমীর’ থাকবেনা- এটা কিভাবে সঠিক হতে পারে! ?
কোন কমান্ডের অধীনে থাকা ছাড়া সম্মিলিত প্রচেষ্টার কোন কাজই কি করা সম্ভব?
হতে পারে জীবনের বিভিন্ন বিষয়ের জন্য বিভিন্ন ‘জামায়াত'(সংগঠন) ও ‘আমীর’ থাকবেন, যেহেতু পরিপূর্ণ সংগঠন নেই!
সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জামায়াত/আমীরের নির্দেশপালন তো ওয়াজিব হবারই কথা!
কিন্তু তেমন না হয়ে ‘মুক্ত-স্বাধীন ‘স্বেচ্ছাচারী’ জীবন’? ?
তাহলে ‘অনিচ্ছা’সত্বেও ‘কর্তব্য’গুলোর কী হবে??
বিষয়টিতে বিস্তারিত আলোকপাত করতে অনুরোধ করছি!