ইসলাম-পছন্দ বা ইসলামপ্রিয় বা ইসলামপন্থী ভাই ও বোনেরা, আপনারা আল্লাহর ওয়াস্তে ‌‘ইসলামোফোবিয়া’ কথাটা আর বইলেন না। বলেন, ইসলামবিদ্বেষ। এভাবে দিনরাত ইসলামোফোবিয়া জপতে থাকলে আরো কতো ফোবিয়া যে আপনাদের ঘাড়ে এসে চাপতে পারে সেইটা কি খেয়াল করেছেন?

পাশ্চাত্য টার্মগুলোরে যথাসম্ভব এভয়েড করেন। অত একাডেমিক হওয়ার দরকার নাই।

মনে রাইখেন, ভাষা শুধু ‌‘ভাষা’-ই না; বরং অনেক বেশি কিছু। ভাষা হইলো মানবজাতির সর্বশ্রেষ্ঠ আবিষ্কার এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র।

তাই, যা কিছু লোকাল টার্মে বুঝাইতে পারেন, তা লোকাল টার্মেই বলেন। মন খুইলা বলেন। আপত্তি নাই। কিন্তু খাল কেটে কুমির আনার ঝুঁকি তৈরি কইরেন না।

উন্নয়নের জন্য পাশ্চাত্য প্রযুক্তিকে নেন। ভালো কথা। কিন্তু, অ্যাটমিক বোমা লাগানো মিসাইলের মতো ক্ষতিকর ফিরিঙ্গি মূল্যবোধ ফিট করা পরিভাষাগুলোকে যথাসম্ভব পরিহার করে লেখালেখি ও বাতচিত করেন। খেয়াল রাইখেন, বলেছি ‌‘যথাসম্ভব’। যা বলেছি তার বেশ-কম কইরা আবার আমার ওপর চড়াও হইয়েন না।

সভ্য হওয়ার জন্য নামে বেনামে অত পাশ্চাত্যপন্থী হওয়া বিশেষ জরুরী কিছু না।

কথাটা এ জন্য বললাম, দৃশ্যত পাশ্চাত্যবিরোধী কথাবার্তাও দেখি পাশ্চাত্য টার্ম ব্যবহার করে, সেখানকার ‌‘বাগী’ (মানে, বিদ্রোহী তথা ভিন্নমতাবলম্বী) চিন্তকদের রেফারেন্সে এখানকার ‌‘অক্সিডেন্টালিস্ট’ (টীকা-১) লোকজন হরেদরে বলতে থাকেন।

যদি কেউ পাশ্চাত্যবিরোধিতা করাটাকে জরুরী মনে করেন, তিনি এখানকার মাটি ও মানুষের প্রচলিত ভাষা ও ‌‘হারানো পদ্ধতিতে’ই (টীকা-২) সেটি করতে পারেন। তাতে করে, তিনি হিপোক্রেসি হতে অন্তত মুক্ত থাকতে পারবেন।

আপনি যদি সংশ্লিষ্ট ফিল্ডে এক্সপার্ট বা শিক্ষানবীশ হোন, তাহলে পড়েন। বুঝেন। কায়দার-বেকায়দার সবকিছু বিশেষজ্ঞদের জানা থাকা জরুরী। কিন্তু পাবলিকলি বলাবলি করবেন পাবালিকের বোধগম্য স্থানিক ভাষায়। সোজা কথায়, মিষ্টিটা খাবেন কিন্তু বিচিটা ফেলে দিবেন। এটি পরামর্শ।

—-

টীকা-১: পুরুষতান্ত্রিকতার মোকাবেলায় পুরুষ সম্প্রদায়ের সুশীল ও মোলায়েম উৎপাদন ‌‘নারীবাদের’ মতো অরিয়েন্টালিজমের মোকাবেলায় অক্সিডেন্টালিজম হচ্ছে এক অর্থে একটা রিভার্স গেইম।

টীকা-২: ‌‘হারানো পদ্ধতি’ বলতে আমি ক্রিটিক্যাল এপ্রোচ অব লার্নিংকে বুঝাচ্ছি। এক সময়ে যা ছিল এখানকার শিক্ষা পদ্ধতির মূলধারা। অন্তত মুসলিম সভ্যতার বুদ্ধিবাদী ধারা সম্বন্ধে বলা যায়, এটি ছিল একটি স্বাধীন জ্ঞানচর্চা পদ্ধতি।

দক্ষতা অর্জনমূলক জ্ঞান নির্বিচারবাদী হতে বাধ্য। কিন্তু মূল্যবোধ ও মতাদর্শগত জ্ঞান মুক্ত ও সৃজনশীল না হয়ে পারে না; যদি তা নিছক পুঁথিগত বিদ্যা না হয়ে, হয় জীবনমুখী শিক্ষা।

বি: দ্র: এই লেখাতে আমি অনেক ফরেইন ওয়ার্ড ব্যবহার করলেও কোনো সেন্সেটিভ টার্ম ব্যবহার করি নাই। শুধু বুঝানোর জন্য অগত্য হয়ে কয়েকটা টার্ম ব্যবহার করেছি। ভাষা ব্যবহারের সাথে পরিভাষা গ্রহণের মৌলিক পার্থক্য ঠিক কোন জায়গাতে, আশা করি সেটি বুঝে নিয়েছেন।

ঝিঁ ঝিঁ পোকা ডাকা শ্রাবণের এই পাহাড়ি সন্ধ্যায় আপনার জন্য রইল শুভ কামনা। ভালো থাইকেন।

মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

Nazmul Hasan: খুবই প্রাসঙ্গিক পোস্ট এবং আমি পুরোপুরি একমত। পরিচিত একজনের সাথে কয়েকদিন আগে ঘৃণকদের কাউন্টার ঘৃণার বিপদ নিয়ে আর্গু করতেছিলাম।

বললাম- আপনি কোন ফাঁদে পড়তেছেন দেখেন- যারাই ইসলামপন্থার সমালোচনা করবে তারাই যদি ইসলামফোবিক হয়, তাহলে দেশের ৯০% মানুষকে আপনি এই অপবাদের জন্য গোলা বানাইতেছেন। অথচ, এপিস্টিম এবং অন্টোলজিক্যালি দেশে বিধর্মীসহ ইসলামফোবিক হয়ত ১০ শতাংশের বেশি হবে না। ইসলামফোবিক মানে ইসলামপন্থী রাজনীতির প্রতি ভীতি এবং আশংকা, নট নেসেসারিলি ইসলামবিদ্বেষী।

মুসলিম সমাজে ইসলামফোবিয়ার একজন চিন্তক হাতেম বাজিয়ানের একটা লেখা তুর্কি একটি পত্রিকায় পড়েছিলাম। আমি তার সাথে সব বিষয়ে একমত নই। কারণ, আমি ইউকেতে দেখেছি কীভাবে ‌‘এন্টি-সেমিটিজম’ শব্দের রাজনৈতিক অপব্যবহার করে ইসরায়েলি অপকর্মের যে কোনো বৈধ সমালোচনাকেও থামিয়ে দেয়া হয়। এখন একই রাজনৈতিক ট্রিক ব্যবহার করতে চাচ্ছে পশ্চিমে পড়ুয়া/অবস্থান করা কতিপয় ইসলামপন্থী। আমার কাছে মনে হয়েছে, ‌‘এন্টি-সেমেটিজম’ এবং ‌‘ইসলামফোবিয়া’ দুটোই অতিমাত্রায় রাজনৈতিক অপব্যবহারের শিকার। এরমানে দুটোর অস্তিত্ব নাই তা নয়, আছে। সেটাকে পশ্চিমে রেখে দেয়াই সংগত হবে।

ঘৃণাবাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা কোনো সমাধান নয়। উদাহরণ দেই হাতেম বাজিয়ানকে দিয়েই। তাকে ‌‘রেসিস্ট প্রফেসর’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ইসরায়েলপন্থী এক সাইটে। ক্রাইটেরিয়া কী? ক্রাইটেরিয়া হচ্ছে তিনি ইসরায়েলবিরোধী। তিনি ফিলিস্তিনি অরিজিন স্কলার। ফিলিস্তিনের পক্ষে কিছু করলে সেটা তো ইসরায়েলের বিপক্ষে যাবেই। এখন এই ধরনের স্বনির্মিত ‌‘ক্রাইটেরিয়া’ ধরে কেউ চাইলে আপনারেও একদিন ইসলামফোবিক বানায়ে দিতে পারবে।

ওয়েস্টান টার্মিনলজি ও কনসেপ্টের ইউজ এন্ড এবিউজ নিয়ে একটা আলোচনা হতে পারে।

Afnan Hasan Imran: এই কথাটা আমি আপ্নারে বহু আগ থেইকা বুঝানোর সুযোগ খুজতেসি, আজকে পাইলাম। কোনো শব্দ/বর্গ তরজমা করার সময় এর সব অর্থ, ব্যাখ্যা, বার্তা ধারণ করে উঠতে পারে না, তাই বলে ঐটারে তরজমা না করে পাণ্ডিত্যসুলভ শব্দবিদ্যার শৌখিন চর্চার জন্য বহু ভাষার শব্দে লেখাটা কপটতা। আশা করি ‌‘ফিলোসফি: প্রাথমিক ধারণা’ পরবর্তী সংস্করণে ‌‘দর্শন: প্রাথমিক ধারণা’ হয়ে যাবে।

Mohammad Mozammel Hoque: না। তা হবে না। বরং ফিলোসফিকে শুদ্ধ উচ্চারণের জন্য ‌‘ফিলসফি’ লেখা হবে। ইদানীং আমি ‌‘ফিলোসফি’ লেখা বন্ধ করে দিছি। আমার এই লেখার সূত্রানুসারেই এটি দর্শন হবে না। দর্শন শব্দটিকে পরিভাষা হিসেবে নিলে সেটি ভারতীয় দর্শনকে মিন করে। আর ফিলসফি কথাটা ওয়েস্টার্ন ফিলসফিকে বোঝায়।

আমার উক্ত বইয়ে এবং আমাদের ডিপার্টমেন্টে ভারতীয় দর্শনকে বুঝানো বা পড়ানো হয়নি বা হয় না। আরবী ফালসাফাকেও না। বরং পশ্চিমা দর্শনকেই এড্রেস ও বেইস করা হয়েছে ও হয়। প্রাচ্য দর্শন হিসেবে যা কিছু আমার বইয়ে এসেছে ও আমাদের ডিপার্টমেন্টে পড়ানো হয় তা পাশ্চাত্য দর্শনের অংশ হিসেবে। যেভাবে প্রাচ্য দর্শনের অংশ হতে পারে পাশ্চাত্য দর্শন।

আমার এই পজিশনের যৌক্তিকতা নিয়ে ‘ফিলোসফি কী’ এই নিবন্ধে কিছু পয়েন্ট আছে। সেখানে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের একটা তুলনামূলক আলোচনার সেকশান আছে।

আমার বইটা তাই দর্শন নয়, ফিলসফি। বইটির ভূমিকার একেবারে শুরুতেই এ ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত মন্তব্য আছে। তুমি বোধহয় খেয়াল করো নাই। তুমি বা কেউ আমার সাথে একমত হবে কিনা, অর্থাৎ দর্শন পরিভাষাটিকে যথাসম্ভব খারিজ করাটাকে তুমি বা কেউ সমর্থন করবে কিনা, সেটি আমার বিবেচ্য নয়। আমি আমার কথাটা বলেছি। কেন বলেছি সেইটার কারণও সেখানে বলেছি।

এখানে অর্থাৎ এই কমেন্টে আমি ভারতীয় দর্শন, আরবীয় ফালসাফা ও পশ্চিমা ফিলসফির মধ্যে কোনো তুলনামূলক আলোচনা করছি না। সেটি ভিন্ন আলোচনার বিষয়। ভিন্ন প্রসঙ্গ।

লেখাটির ফেইসবুক লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *