৯৬-২০০১ সময়কালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা একসাথে কাজ করেছি। চরম দুঃসময়ে। একজন ছাত্র অংগনের নেতা। ছিলেন উত্তর ক্যাম্পাসে। আরেকজন শিক্ষক নেতা। থাকেন দক্ষিণ ক্যাম্পাসে। পরবর্তীতে তিনি ওই ছাত্র সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন নেতৃত্বের গুণসম্পন্ন। সাহসী, মিশুক, সংস্কৃতিমনা ও মেধাবী। স্বভাব, রুচি ও দৃষ্টিভঙ্গিগত সাযুজ্যের কারণে আমাদের মধ্যে বিশেষ সখ্যতার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো।
তিনি এখন ‘রিফর্ম ফ্রম উইদিন’-এ বিশ্বাসী। আমি চলছি একলা চলো নীতিতে। সে অনেক কাহিনী। ওসব কাহিনী আপনারা কমবেশি জানেন। সে যাই হোক, তুরস্কে সাম্প্রতিক প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনের প্রেক্ষিতে অচলায়তনবাদীদের কটাক্ষ করে তিনি একটা কথোপথন ধাঁচের লেখা প্রকাশ করেছেন [লিংক]। সেখানে তিনি জনৈক কট্টর সংগঠনবাদীর কাছ হতে যথারীতি সাঁড়াশি আক্রমণের শিকার হন। উক্ত স্ট্যাটাসে আমার করা একটা মন্তব্যকে কেন্দ্র করে উক্ত দায়িত্বশীল একটা স্বতন্ত্র স্ট্যাটাস পোস্ট করেন [লিংক]।
উনার মতো সাংগঠনিক সেলিব্রেটি কর্তৃক আমাকে ট্যাগ করে আমার ছবিসহ পোস্ট দেয়াতে অনেকে যারা আগে আমাকে সেভাবে জানতো না তারাও আমাকে আইডেন্টিফাই করতে পেরেছে। এতে আমার পরিচিতি বেড়েছে। অনেক লাভ হয়েছে। এজ ইউজুয়েলি, সেই লেখার ফলোআপ মন্তব্যে সাংগঠনিক সংস্কার নিয়ে অনেক উত্তপ্ত তর্কবিতর্ক হলো। লোকদের কথাবার্তা শুনে আমার মনে হলো, এতদসংক্রান্ত আমার অবস্থান ও ধারণাকে ওয়ানস এগেইন ক্লারিফাই করা দরকার। যার প্রেক্ষিতে অন্তত কয়েক বছর পরে আমি সরাসরি এ ধরনের একটা ক্লিয়ারকাট নোট লিখে ফেললাম ও তা পোস্ট করে দিলাম। [লিংক]
এতে আমি সাংগঠনিক সংস্কার সংক্রান্ত আমার যে ভাবনা, চিন্তা ও তত্ত্ব, তা সংক্ষেপে তুলে ধরেছি। যথারীতি সেটা নিয়েও সংগঠনবাদী ও সংস্কারবাদীদের মধ্যে খুব কলমযুদ্ধ হলো। যারা আমার এই লেখার বক্তব্যকে সমর্থন করে বা গুরুত্বপূর্ণ মনে করে স্ট্যাটাসটি শেয়ার করেছেন তাদের মধ্যকার অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় একজনের শেয়ারিংয়ের লিংক এখানে দিলাম: https://www.facebook.com/drsazadi/posts/2126420677628267। যাতে করে সেখানে যেসব রিলেভেন্ট কথাবার্তা হয়েছে, কেউ চাইলে সেগুলোও এক্সপ্লোর করতে পারেন।
পরে খেয়াল করলাম, আমার মূল লেখাটাতে একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর ততটা ক্লিয়ারলি বলা হয় নাই। প্রশ্নটা হলো–
তাত্ত্বিকভাবে যদি এমন হয়, কোনো সংগঠনেরই আমূল সংস্কার অসম্ভব। অথচ, হতে পারে কোনো সংগঠন যেভাবে আছে ও চলছে তা অকার্যকর ও ব্যাকডেটেড হয়ে পড়েছে। এর আমূল সংস্কার অপরিহার্য। তাহলে, শেষ পর্যন্ত ব্যাপারটা কী দাঁড়াবে? উক্ত সংগঠনের মধ্যে যারা এই সংকটকে অনুধাবন করছেন, তাদের করণীয় কী হবে? তারা কোন পথে যাবেন?
এই প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট উত্তর ও এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা পাবেন ইউটিউবে “সমন্বিত সামাজিক আন্দোলন” চ্যানেলে আপ করা আমার এই ভিডিও দুটিতে:
সাংগঠনিক সংস্কারের ক্ষেত্র, পরিধি ও সম্ভাব্যতার তত্ত্ব ১
*****
সাংগঠনিক সংস্কারের ক্ষেত্র, পরিধি ও সম্ভাব্যতার তত্ত্ব ২
ফেইসবুকে প্রদ্ত্ত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Omar AL Faruque: এসব পাব্লিকলি বলে আপনারা কী ফায়দা লুটতে চান? বিভাজন তৈরি করে কী লাভ পেতে চান? আপনাদের বক্তব্য সেন্টারে বলুন। সেন্টার না শুনতে চাইলে বলার কোনো প্রয়োজন নেই। নিজেদের পছন্দমত দল গঠন করুন। মানুষ পছন্দ হলে গ্রহণ করবে।
Mohammad Mozammel Hoque: জনাব Omar AL Faruque,
(১) কিছু সত্য কথা ‘সাংগঠনিক হলে’ কখনো তা পাবলিকলি বলা যাবে না, এমন কোনো মাসয়ালা আমার জানা নাই। যারা এই ধরনের তাকিয়া বা গোপনীয়তার নীতির কথা বলেন, হক কথা বলা সংক্রান্ত কোরআন হাদিসের বক্তব্য অনুযায়ী তারা ভুল করছেন।
(২) দুই ধরনের বিভাজন আছে: এক ধরনের বিভাজন মানে ধ্বংস। যেমন এই স্মার্টফোনটি যদি দুই টুকরা হয়ে যায় তাহলে এটি আর স্মার্টফোন থাকবে না। আরেক ধরনের বিভাজন মানে উন্নতি। যেমন আমাদের দেহ কোষ বিভাজন। Cell division বলতে যা বোঝায়। আপনি কোন ধরনের বিভাজনের কথা বলছেন সেটা পরিষ্কার নয়। আমি উভয় ধরনের বিভাজনে বিশ্বাসী, যখন যেটা প্রযোজ্য।
(৩) হ্যাঁ, নিজেদের পছন্দমতো দল গঠন করা হবে, ইনশাআল্লাহ। বরং অলরেডি সেটা হয়েছে। তবে সেই দলকে যে আপনার দলের মতোই একটা কিছু হতে হবে, এমন তো নয়। আমাদের কাজের ধরন আলাদা। অভিনব। সেটা আপনি বুঝতে পারছেন না কিংবা আপনার ভালো লাগছে না, সেটা আপনার ব্যাপার।
আমাদের কাজের ধরন সম্পর্কে জানতে চাইলে ‘সমাজ ও সংস্কৃতি অধ্যয়ন কেন্দ্র’র ওয়েবসাইটে গিয়ে ‘সামাজিক আন্দোলন’ সংক্রান্ত লেখাগুলো পড়েন।
(৪) জামায়াতের লোকেরা যেসব উদ্ধত্যপূর্ণ কথাবার্তা বলে থাকেন quantitative approach হলো এর অন্যতম। তারা বড়ত্বের দোহাই দেয়। এটি ভুল। কেননা, ইসলাম হলো গুণগত ব্যাপার। কোরআন শরীফে সংখ্যাগরিষ্ঠের কথা যত প্রসঙ্গে উল্লেখিত হয়েছে তা সব খারাপ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এর মানে এই নয় যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা মানেই খারাপ। বরং এর মানে হলো, ভালো জিনিসটা সাধারণত কম লোকেরা গ্রহণ করে থাকেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকেরা সাধারণত সহজেই বিপথে পরিচালিত হয়।
দ্বিতীয়ত, কোনটা বড়, সেটা আপনি কীভাবে নির্ধারণ করছেন বা করবেন? বর্তমান আকার দিয়ে? নাকি, ভবিষ্যতের সম্ভাবনা দিয়ে? আপনি যদি কোয়ালিটি-কোয়ান্টিটির পার্থক্য বুঝতে না পারেন, তাহলে আপনাকে আর কিছু না বলাই ভালো।
আপনাকে এতটা বিস্তারিত বললাম, মনে হলো, আপনার মধ্যে বেশ খানিকটা সরলতা আছে। আপনার মতো এরকম অনেকেই এক সময় আমার ঘোরতর বিরোধিতা করেছে। কিন্তু বর্তমানে সমর্থন করে। এরা জামায়াতের সংস্কারবাদী।
আমি যে জামায়াতের সংস্কারবাদী নই, সেটা আমি বারে বারে বলা ও বোঝানোর চেষ্টা করেছি। এই স্ট্যাটাসেও সেটা পুনর্ব্যক্ত করেছি। লেখা দিয়ে যেহেতু অনেকে কেন জানি ক্লিয়ারলি বুঝতে পারছে না, সেইজন্য এই ভিডিও বক্তব্য তৈরি করেছি। এরপরও যদি কেউ আমাকে তাদের সংগঠনেরই একজন বলে মনে করেন এবং এই ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে নানা ধরনের অহেতুক কথাবার্তা বলতে থাকেন, তাহলে তো আর কিছু করার নাই। ওয়ামা আলাইনা ইল্লাল বালাগ।
Omar AL Faruque: আমি আজ পর্যন্ত শুনেনি জামায়াতকে বড়ত্বের দোহাই দিতে। বরং অন্যান্য ইসলামী সংগঠনের প্রতি কোমলতার প্রদর্শন দেখেছি। অধ্যাপক গোলাম আযমের অনেক বইয়ে তার প্রমাণ দেখেছি।
আমার মাঝে সরলতা কোথায় দেখেছেন জানি না, তবে আমি আপনার দর্শনের ঘোর বিরোধী। নিজেরা দল যখন করেছেন সেই দল নিয়ে কাজ করলে বেশি লাভবান হবেন। কিছু দেউলিয়া রাজনৈতিক দলের মতো জামায়াত বিরোধিতায় লিপ্ত হয়েন না।
Mohammad Mozammel Hoque: আমার টাইমলাইনে স্ক্রল করলে দেখবেন, গত কয়েক বছরের মধ্যে জামায়াত সংক্রান্ত কোনো লেখা নাই। কিংবা, গত কয়েক বছরে আমার টাইমলাইনে পোস্ট করা কোনো লেখায় জামায়াতে ইসলামী কথাটাই নাই। আপনাদেরই এক নেতা আমাকে ট্যাগ করে স্ট্যাটাস দেয়াতে এ সংক্রান্ত আমার একটা থিওরির কথা বলতে গিয়ে আমি একটা স্ট্যাটাস দিয়েছি। Jamaat is a gone case for me, but a necessary component of Islam in Bangladesh, as like as tabligh jamaat, hefazot-i-Islami and other sects.
আর হ্যাঁ, কেউ নিজেকে অ-সরল বা গরল দাবি করা বা প্রমাণ করার আগ পর্যন্ত সবার কথা ও কাজকে সরলভাবে নেয়া ও সবাইকে সরল মনে করাটা সুন্নাতেরই দাবি। দ্বীন হচ্ছে কল্যাণ কামনা, আপনি জানেন। ভালো থাকেন।