ওয়ালিউর রহমান:

আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই আমাদের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জানেন এবং হেদায়েতের মালিক আল্লাহ নিজেই।

আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম (আ) ও হাওয়াকে (আ) সৃষ্টি করলেন এবং তাঁদেরকে একটি গাছের নিচে যেতে এবং সেই গাছের ফল খেতে নিষেধ করলেন। কিন্তু তারা ভুল করে সেই গাছের ফল খেলো। সেই অপরাধে তাদেরকে বেহেশত থেকে বের করে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেওয়া হলো।

এখন প্রশ্ন হলো, আল্লাহর কি এটা কোনো পরিকল্পনা ছিলো কিনা যে আল্লাহ পৃথিবীতে মানুষের চাষাবাদ করবেন? যেহেতু আল্লাহ ভবিষ্যৎ জানেন।

আদম, হাওয়া যে নিষিদ্ধ গাছের ফল খাবে এবং বেহেশত থেকে বের করে দিবে এইটা আল্লাহ তায়ালা কি জানতো না??? আল্লাহ তায়ালা অনেক নবী-রাসূলদের তার কুদরতি শক্তির সাহায্যে সঠিক পথে পরিচালনা করছেন। এক্ষেত্রেও আল্লাহ কি তাদের হেফাজত করতে পারতেন না??

আর আল্লাহর যদি পৃথিবীতে মানুষের চাষাবাদ করার পরিকল্পনা থাকতো তাহলে কেনো তাদের প্রথমে জান্নাতে রাখলেন?

আবার বেহেশত থেকে বের করে দেওয়ার পর তাঁদেরকে আলাদা আলাদা জায়গায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। একটা সময় এই পৃথিবীতেই আদম (আ) আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদের (সা) নাম দেখে বুঝতে পারেন তিনি আল্লাহর খুব প্রিয় একজন রাসূল হবেন। এই জন্য আদম (আ) তার নাম নিয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান এবং আল্লাহ মাফ করে দেন। আদম-হাওয়াকে আবার একসাথে মিলিয়ে দেন আল্লাহ তায়ালা।

স্যার, অনেকে বলে থাকে আদম-হাওয়া নিষিদ্ধ গাছের ফল না খেলে আমরা বেহেশতে থাকতাম। যেখানে আল্লাহ ভবিষ্যতে কি হবে সেইটাও জানতো।

স্যার, এই সম্পর্কে আপনার ফিলোসফি কি বলে তা জানতে পারলে বুঝতে পারতাম।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক:

আল্লাহ তায়ালা কোনো কাজ কেন করেছেন তা আমরা অবশ্যই পুরোপুরি ও সঠিক জানবো, এমন তো নয়। কেননা, আল্লাহ এবং তাঁর সৃষ্টি হিসেবে আমরা সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি ক্যাটাগরি।

আল্লাহ আমাদের যেটা জানিয়েছেন সেটাই আমরা জানি, এবং আমাদের মতো করে আমরা সেটা বুঝে নেয়ার চেষ্টা করি। সে হিসেবে আল্লাহর বিভিন্ন কাজ আমাদের কাছে প্রবলেমেটিক বলে মনে হয়। এবং এই মনে হওয়াটা নিতান্তই স্বাভাবিক।

এখন আমাদের বিবেচ্য বিষয় হলো, আমাদের cognitive structure এবং খোদা তায়ালার cognitive structure কি এক? খোদার জ্ঞান এবং আমাদের জ্ঞানকে যদি আমরা এক কিংবা সমান্তরালে বিবেচনা করি তাহলে খোদাকে আমরা প্রকারান্তরে আমাদের মতোই একটা সত্তা বলেই মনে করছি।

আর আমরা যদি তা না করি, তাহলে আমাদের স্বীকার করতেই হবে, আমাদের জ্ঞান সীমিত। যার কারণে আমরা অনেক কিছু বুঝি না। এবং বুঝি না বলেই সেগুলো আমাদের কাছে রহস্যজনক বা আপত্তিজনক মনে হয়। একটু আগেই বলেছি এই মনে হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক।

যা হোক, এসব কথার মূল কথা হলো, আল্লাহর কার্যাবলীকে আমরা সামগ্রিকভাবে জানতে পারি না। আমরা পুরো ব্যাপারটিকে আমাদের জন্য কী শিক্ষণীয়, সেই হিসেবে বিবেচনা করি। এবং সেটাই আমাদের জন্য যুক্তিসঙ্গত।

কেউ যদি আল্লাহকে বিশ্বাস না করে এবং এসব ঘটনাকে গল্প কাহিনী হিসেবে উড়িয়ে দেয়, সে নিজেও এরকম একটা সমস্যার মধ্যে পড়ে। কারণ সে ‌‘প্রকৃতি’কে ব্যাখ্যা করতে পারে না। ‌‘প্রকৃতি’ কেন এ রকম, এটা কোনো নিরীশ্বরবাদী-প্রকৃতিবাদী ব্যাখ্যা করতে পারে না। প্রাকৃতিক আইনগুলো মেনে নেয়া ছাড়া তার কোনো উপায় থাকে না।

ওয়ালিউর রহমান:

জ্বি স্যার, অবশ্যই আল্লাহ অসীম জ্ঞানের অধিকারী। নিশ্চয় আল্লাহর cognitive structure আমাদের থেকে ভিন্ন। আমাদের সীমিত জ্ঞানের জন্য আমরা বুঝি না।

অসংখ্য ধন্যবাদ ❤

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক:

এক্ষেত্রে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে one-to-one বা পার্টিকুলার জ্ঞানের সাথে ওভারঅল বা holistic জ্ঞানের গুণগত পার্থক্যের কথা।

মূসার (আ) জ্ঞান ছিল খণ্ডিত। আর খিজিরের (আ) জ্ঞান ছিল বৃহত্তর পরিপ্রেক্ষিতের।

আমাদের ক্ষুদ্রতর পরিসরের জ্ঞান দিয়ে খোদা তায়ালার অসীম জ্ঞান ও সত্তাকে চ্যালেঞ্জ না করে আমাদের উচিত তাঁর কাছে নিজেকে সারেন্ডার করা।

Particular-universal রিলেশনের ontology আমাদেরকে এটাই বলে।

আমরা যে অতীব অসহায়, তুচ্ছ এবং খোদা তায়ালার মোকাবেলায় অস্তিত্বহীন, সেটা বুঝতে পারা এবং স্বীকার করাটাই হচ্ছে বুদ্ধিমানের কাজ। আর এটাকে অস্বীকার করে খোদা তায়ালাকে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে এক ধরনের অডাসিটি বা ঔদ্ধত্য।

এই ধরনের ঔদ্ধত্য দেখিয়ে আমরা খোদা তায়ালাকে অস্বীকার করতে পারি বটে। কিন্তু তাতে করে আমাদের অস্তিত্ব এবং জগতের অস্তিত্বকে ব্যাখ্যা করার যে মহাসংকট সেটা তখন আমাদেরকে ঘিরে ধরে।

এই পর্যায়ে এসে একজন নাস্তিকের কাছে বিজ্ঞান ধর্ম হয়ে ওঠে। সে বিশ্বাস করে, বিশ্বাস বলে কোনো কিছু নাই।

আমরা মূলত আমাদের existential questionগুলোর জবাব খুঁজতে গিয়ে ঈশ্বরের ধারণা উপনীত হই।

এ বিষয়ে আমার cognitive Centrality শীর্ষক একটা বক্তব্য আছে।

লেখাটির ফেইসবুক লিংক

Similar Posts

৩ Comments

  1. “আল্লাহ তায়ালা কোনো কাজ কেন করেছেন তা আমরা অবশ্যই পুরোপুরি ও সঠিক জানবো, এমন তো নয়।”
    – যদি স্বীকার করি যে আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব না, তাহলে কেন আল্লাহ যা জানিয়েছেন তা সত্যি, পালনীয় এবং শিক্ষনীয় বলে মনে করতেছি। আল্লাহর পক্ষে তো আমারে ট্রিক করা সম্ভব।

    “আমাদের ক্ষুদ্রতর পরিসরের জ্ঞান দিয়ে খোদা তায়ালার অসীম জ্ঞান ও সত্তাকে চ্যালেঞ্জ না করে আমাদের উচিত তাঁর কাছে নিজেকে সারেন্ডার করা।…

    আমরা যে অতীব অসহায়, তুচ্ছ এবং খোদা তায়ালার মোকাবেলায় অস্তিত্বহীন, সেটা বুঝতে পারা এবং স্বীকার করাটাই হচ্ছে বুদ্ধিমানের কাজ। আর এটাকে অস্বীকার করে খোদা তায়ালাকে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে এক ধরনের অডাসিটি বা ঔদ্ধত্য।”

    -চ্যালেঞ্জ করা ব্যাপারটা বুঝলাম না। আমি যদি মনে করি আমার এবং জগতের পিছনে এক সৃষ্টিকর্তা থাকা খুব ই সম্ভব এবং জীবনে চলার জন্য মানুষের জ্ঞ্যানের উপরই নির্ভর করি তাহলে কি খোদাকে চ্যালেঞ্জ করা হয়? কেন আমাদের ঈমান আনা লাগবে। এবং সমাজ-রাষ্ট্র-ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ার জন্য খোদার দোহাই কে পাত্তা দিতে হবে। মুহম্মদ যদি কিছু বলে (জীবনে চলার পন্থা হিসেবে) থাকে সেটা আমি গ্রহণ করতেই পারি, কিন্তু গ্রহণ করার কারণ টা কি হবে? সেটা কি খোদা বলছে বলে নাকি সেটা মানুষের কাজে লাগে বলে? খোদা বলছে বলে মুহম্মদ যেটা দাবি করেছে সেটা তো খোদা তারে বোকা বানানোর জন্য ও বলতে পারে (খোদা আছে স্বীকার করা মানে তো খোদার এই ক্ষমতারেও স্বীকার করা) তাহলে আমরা ঈশ্বর ওহি পাঠাইসে এই দোহাই দিয়ে কেন কাজ করব? আমরা মানুষের তৈরি জ্ঞ্যান এবং উপলব্ধি নিয়েই কাজ করতে পারি। যেহেতু বুঝতেই পারি আমাদের জ্ঞ্যান-ক্ষমতা লিমিটেড- তো ভুল হবে সেটা তো স্বীকার করতেছি ই। এইটা চ্যালেঞ্জ করা কিভাবে হয়৷ বরং আমরা যে যুক্তি-বুদ্ধি-অনুধাবন-অনুভুতি ব্যাবহার করতেছি তা খোদা প্রদত্ত হতেই পারে তা তো অস্বীকার করতেছি না। কিন্তু খোদা ওহি পাঠাইসে কি পাঠায় নাই এর উপর নির্ভর করার কারণ কি। ওহি হোক আর যাই হোক- আমাদের কাজে লাগলে নিলাম, নিছক খোদা বলছে বলে সেটারে প্রিভিলেজ দেয়ার কারণ কি?

    1. আল্লাহকে আমরা পুরোপুরি জানি, বা জানবো, বা জানা উচিত, – এই ধরনের চিন্তার পিছনে এই অনুমান কাজ করে, আল্লাহ যেন আমাদের মতোই একটা সত্তা। যেন তিনি আমাদের মতো একটা পূর্ব নির্ধারিত এপেস্টেমিক স্কেল মেনে চলেন, বা তাঁর চলা উচিত। তো, এই অনুমান পুরোপুরি ভুল। আমরাসহ জগতের সবকিছুই পার্টিকুলার ও লিমিটেড। আর গড, যদি তিনি থেকে থাকেন তাহলে, তিনি হবেন বা হোন এবসলিউট ও আনলিমিটেড। সে ক্ষেত্রে ওয়ার্লড আর গড সম্পূর্ণ ভিন্ন দুই ক্যাটাগরির এনটিটি হবে। সে জন্য আমাদের ভালো-মন্দ জ্ঞান দিয়ে পরম-ঈশ্বরকে যাচাই করা বা করতে চাওয়াটা হলো ক্যাটাগরি মিসটেক। আর, যেহেতু তিনি উর্দ্ধতন কোনো সত্তা কর্তৃক নির্ধারিত, বা যেভাবেই হোক না কেন, পূর্ব থেকে থাকা কোনো স্কেল অনুসারে চলেন না বা চলতে বাধ্য নন, যেভাবে আমরা বাধ্য, তাই তাঁর ক্ষেত্রে তাঁর অধীনস্ত কাউকে প্রতারিত করার প্রসঙ্গই উঠে না। কেউ কাউকে প্রতারণা করার জন্য উভয় পক্ষকে সেইম মানদণ্ডের অধীনস্ত হতে হয়। স্বয়ং অস্তিত্বশীল কোনো সত্তা যদি পূর্বপ্রতিষ্ঠিত কোনো নিয়ম মেনে চলেন, তাহলে তো স্বয়ং অস্তিত্বশীল পরম সত্তা হতে পারেন না।

      প্রথম প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত এই উত্তরের আলোকে সহজেই বুঝতে পারবেন, আপনার দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে আমি কী বলতে পারি।

      চাইলে আমার এই ইনফরমাল আলোচনাটা শুনতে পারেন: ‘মানুষের ইচ্ছার স্বাধীনতা বনাম ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব । authority, freedom and God’ https://www.youtube.com/watch?v=WmHsVIed0AY

      1. ধন্যবাদ মোজাম্মেল স্যার উত্তরটির জন্য। আমি আপনার ভিডিও টিও আগে দেখেছি। প্রথম প্রশ্নের যে উত্তরটি লিখেছেন সেই কথাগুলোর অনেকটাই শোনা হয়েছিল। কিন্তু আমার কন্সার্ন টায় আমি এখন ও ক্লিয়ার না। আপনি সবসময় ই তাওহিদের আন্ডারস্ট্যান্ডিং এর কথা বলেন- আমি সেই জায়গায় একমত হয়েই প্রশ্ন করছিলাম।

        “আল্লাহকে আমরা পুরোপুরি জানি, বা জানবো, বা জানা উচিত” এরকম কোন ধারণা আমি পোষণ করছি না। বরং জানা যে সম্ভব না সেটায় এগ্রি থেকেই জানতে চাচ্ছিলাম।

        আপনার আর্গুমেন্ট গুলা আমার অনেকটা স্কেপ্টিকাল থিয়েজমের যায়গা থেকে মনে হয়। আপনি প্রফেশনাল ফিলোসফার, ভুল হলে ক্ষমা করবেন। আমার এই ক্ষেত্রে স্টিফেন ল এর কিছু কাজ ইম্পর্টেন্ট মনে হইসে।

        Sceptical theism and a lying God: Wielenberg’s argument defended and developed by Stephen Law
        https://www.cambridge.org/core/journals/religious-studies/article/sceptical-theism-and-a-lying-god-wielenbergs-argument-defended-and-developed/4AF2BA03E59B80FF7287594C440D273D

        The Pandora’s box objection to skeptical theism by Stephen Law
        https://philpapers.org/rec/LAWTPB

        The Evil-god challenge by Stephen Law
        https://www.cambridge.org/core/services/aop-cambridge-core/content/view/S0034412509990369

        আমার কন্সার্ন এই পেপার গুলার আর্গুমেন্ট নির্ভর। আমি হয়ত ভাল করে উপস্থাপন করতে পারি নাই। আপনি হয়ত দেখলেই বুঝবেন। যদি সময় হয় এই ধরুণের আর্গুমেন্ট গুলার ব্যাপারে আলোচনা আসা করছি ভবিষ্যতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *