১. আলোচনার সূত্রপাত: ইসলাম কি কায়েমের বিষয়?

এক জায়গায় প্রসঙ্গক্রমে আমি লিখেছি,

‍“এই জনপদে ইসলামের আদি প্রচারকারীরা ছিলেন অনেক বেশি সহনশীল, সামাজিক চরিত্রের, আধ্যাত্মিক ও নৈতিক উৎকর্ষতাসম্পন্ন। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল positive, inclusionist and accommodative। আর এখনকার ইসলামপন্থীরা আসলে ইসলামের প্রচারক নন, বরং তারা নিজেদের মতো করে ইসলামের সোল এজেন্ট বা রক্ষক। যার কারণে এখনকার ইসলামপন্থীদের কাছে ইসলামের দাওয়াতের বিষয়টা ততটা গুরুত্বপূর্ণ না। বরং ইসলাম কায়েমের বিষয়টা তাদের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। স্বাভাবিকভাবেই তাদের পূর্ববর্তীদের বিপরীতে তাদের ওভারঅল চরিত্র হচ্ছে এখন negative, intolerant and seclusionist।”

এটার উত্তরে যিনি স্ট্যাটাসটা দিয়ে আমাকে ট্যাগ করেছেন তিনি বলেছেন,

“ইসলাম কায়েমের বিষয়, ‘ইসলাম নাই’ এমন অনুমানের ওপর নির্ভরশীল নয় কি? আমি তো এই নোশন সাবস্ক্রাইব করি না। কলোনিয়াল শাসনের প্রেক্ষাপটে এই অনুমানের কিছুটা ভিত্তি থাকলেও এখন এই নোশনকে আমি সঠিক মনে করি না।”

অর্থাৎ এই ভাইটি আরো বিভিন্ন সময়ে যেটা লিখেছেন, ইদানীং অনেকেও এই কথাটা বলে থাকেন, ‘ইসলাম কায়েমের কোনো বিষয় না। ইসলাম কায়েম আছেই।’

কিছুদিন আগে সালাফী আলেম মাওলানা মতিউর রহমান মাদানীকে কেন্দ্র করে এই ধরনের একটা বিতর্ক হয়েছে। তিনি বলেছেন, দ্বীন কায়েম বা ইকামতে দ্বীন নবুয়তি মিশনের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য নয়।

২. ইসলামী রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়:

যা হোক, ইসলাম কায়েমের বিষয়ে আমরা ‘ইসলামী মতাদর্শের আলোকে সামাজিক আন্দোলন’ (https://cscsbd.com/556) শিরোনামে একটা বক্তব্য তৈরি করেছিলাম বছর কয়েক আগে। সেখানে আমরা রাষ্ট্রের একটা স্কেল দিয়েছি। সেটার একপাশে হলো নবী পরিচালিত একটা রাষ্ট্রব্যবস্থা, একে আমরা পরিপূর্ণ ইসলামী রাষ্ট্র বলতে পারি। আরেকপাশে হলো সম্পূর্ণ জাহেলী কন্ডিশান, তাগুত পরিচালিত রাষ্ট্রব্যবস্থা। আর এর মাঝামাঝি জিরো পজিশনে হচ্ছে সিভিল স্টেট। যেখানে মুসলমানরা তাদের ধর্মীয় কর্তব্য হিসেবে ফরজ, ওয়াজিব ইত্যাদি আদায় করতে পারলেও সেখানে ল অফ দ্যা ল্যান্ড হিসেবে ইসলামের দণ্ডবিধিগুলো কায়েম নাই। যেখানে নিজস্ব পরিসরে তাদের উত্তরাধিকার আইন, পারিবারিক আইন ইত্যাদি আছে।

 

 

এটাকে আমরা যদি জিরো পজিশনে ধরি, তাহলে যে সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যে ইসলামী আইন যত বেশি প্রতিষ্ঠিত থাকবে, ইসলামী আইনগুলো যে সমাজ ও রাষ্ট্রে ল অফ দ্যা ল্যান্ড তথা সাধারণ আইন হিসেবে যত বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাবে সেটা ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে ততবেশি উন্নতমানের হবে।

৩. নামে কিছু আসে যায় না, কাজে পরিচয়

কোনো রাষ্ট্র ইসলামী রাষ্ট্র হওয়ার জন্য সেটা নামের মধ্যে ‘ইসলামী রাষ্ট্র’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার দরকার নাই। কারণ, রাজনীতি হচ্ছে এক ধরনের সামাজিক দায়বোধ তথা মুয়ামালাতের বিষয়। কোনো মুয়ামালাতের বিষয় যদি সহীহ নিয়ত এবং সঠিক পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা হয় তাহলে সেটা ইসলাম মোতাবেক হয়েছে, এমনটাই ভাবতে হবে। যেমন, আমি জাকাত হিসেব করে যদি কাউকে জাকাত দেয়ার নিয়তে কিছু দেই তাহলে আমার জাকাত আদায় হয়ে যাবে। এটি বলা অপরিহার্য নয় যে এটা আমি জাকাত হিসেবে দিচ্ছি।

দ্বীন কায়েমের বিষয়টা ঠিক এমন।

৪. রাষ্ট্রব্যবস্থা মাত্রই ধারাবাহিক উন্নয়ন/অবনয়নের বিষয়:

রাসূল (সা.) মদীনাতে যে রাজনৈতিক ব্যবস্থা কায়েম করেছিলেন সেটাকে যদি আমরা ইসলামী রাষ্ট্র বলি, সেটা কি ‘ইসলামী রাষ্ট্র’ বলতে আমরা এখন যা বুঝি সে হিসেবে একটি পরিপূর্ণ ইসলামী রাষ্ট্র ছিল? রাষ্ট্রীয় বিধি-বিধান সম্পর্কিত অনেকগুলো বিষয় হযরত আবু বকর (রা.), হযরত ওমর (রা.), হযরত উসমান (রা.) ও হযরত আলীর (রা.) আমলে প্রবর্তিত হয়েছে কিংবা বিকাশ লাভ করেছে।

এ প্রসঙ্গে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘আমার যুগ হচ্ছে সর্বোত্তম যুগ। এর (নিম্নস্তরে) এরপরের যুগ। এর (নিম্নস্তরে) এরপরের যুগ।’ এই তিন যুগের লোকদেরকে সলফে সালেহীন বলা হয়। রাসূল (স.) এবং সাহাবাদের যুগের পরে তাবেয়ীদের যুগ। এরপর তাবে-তাবেয়ীদের যুগ। ধারাবাহিকভাবে তাঁরা সমাজ ও রাষ্ট্র সংক্রান্ত ইসলামের মুয়ামালাতের বিষয়গুলোর উন্নয়ন করেছেন। এই সবগুলো আমাদের দ্বীনের অংশ হিসেবে পরিগণিত।

কোরআনের আয়াত “আমি আজকে দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম” কথাটার মানে হলো, দ্বীনের মূলনীতি ও মৌলিক কাঠামোকে পরিপূর্ণ করে দেওয়া।

৫. সুসস্পূর্ণভাবে দ্বীন কায়েম হওয়া অসম্ভব:

এমতাবস্থায়, দ্বীন কায়েমের এই বিষয়টা রাসূল (সা.) যদি দ্বীনের খুঁটিনাটি বিস্তারিতসহ বাস্তবায়ন অর্থে যদি বাস্তবায়ন করে যেতে না পারেন, তাহলে দ্বীন কায়েম বলতে আসলে কী বুঝায়?

আমার মতে, দুনিয়ার বুকে একজন মানুষও যদি নন-মুসলিম তথা কাফের থেকে যায় তাহলে দ্বীন ইসলাম পরিপূর্ণভাবে কায়েম হয়েছে বলা যাবে না। এমনকি দুনিয়ার সব মানুষ ইসলাম কবুল করার পরেও ‘দ্বীন কায়েম হয়েছে’ বলা যাবে না। কারণ, এর মধ্যে মোনাফেক থাকতে পারে, দুর্বল ঈমানদার থাকতে পারে। হতে পারে, সব ঈমানদার নফসে মোতমায়িন্নাহ বা প্রশান্ত আত্মার স্তরে উন্নীত নয়।

সব মানুষ ইসলাম কবুল করা এবং সব মুসলমানেরা ঈমানের সর্বোচ্চ লেভেল এহসানের পর্যায়ে না যাওয়া পর্যন্ত দ্বীন কায়েম সম্পন্ন হয়েছে বলা যাবে না।

অর্থাৎ দ্বীন কায়েম হয়েছে অথবা হয় নাই, এই দু্টোর যে কোনো একটা সঠিক হবে, এমনটা মনে করা হলো এক ধরনের ফলস বাইনারি ফ্যালাসিতে পড়ে যাওয়া৷ কেননা, আগেই বলেছি, দ্বীন কায়েম একটা ধারাবাহিক ও নিরন্তর প্রক্রিয়া।

৬. দ্বীন অলরেডি কায়েম আছে:

দুনিয়ার বুকে যদি একজনও মুসলমান থাকে, so far I understand it, দ্বীন এক প্রকারে কায়েম আছে, এমনটা বলা যাবে। আবার দুনিয়ার বুকে যদি একজনও কাফের থেকে যায়, তাহলে দ্বীন কায়েম পরিপূর্ণ হয় নাই, এমনটাই ভাবতে হবে। দ্বীন কায়েম হলো বিশেষ কোনো মতাদর্শভিত্তিক সমাজ, রাষ্ট্র ও সভ্যতা গড়ে তোলা। বলাবাহুল্য, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।

৭. রাষ্ট্র ক্ষমতা ও ইকামতে দ্বীন:

দ্বীন কায়েমের মধ্যে রাষ্ট্র ক্ষমতা অর্জন বা রাষ্ট্র ক্ষমতার বিশেষ আনুকূল্য অপরিহার্য। কেননা, প্রতিকূল রাষ্ট্র ব্যবস্থার অধীনে থেকে আদর্শ সমাজ গঠন অসম্ভব ব্যাপার। তারমানে, রাষ্ট্র ক্ষমতা ছাড়া দ্বীন কায়েম অসম্ভব।

কিন্তু আলোচনাটা কেন রাষ্ট্র ক্ষমতা পর্যন্ত এসে থেমে যায়, আমি এটা বুঝতে পারি না …! ইসলাম তো এসেছে সভ্যতা গড়ার জন্য। এবং ইসলাম যে পাশ্চাত্য সভ্যতার প্রধান বিকল্প, সেটা অতি-অবশ্যই সিভিলাইজেশনাল পয়েন্ট অব ভিউ থেকে।

৮. উন্নত রাষ্ট্র প্রায় অর্ধশতাধিক হলেও সভ্যতা কিন্তু একটাই:

সভ্যতা আর উন্নত রাষ্ট্র, দুটো এক কথা নয়। জাপান, চায়না অনেক উন্নত রাষ্ট্র হলেও সমকালীন প্রেক্ষাপটে তাদের নিজস্ব কোনো সভ্যতা নাই। ইন্ডিয়ার যে সভ্যতা তা আগের। বর্তমানে তাদের কোনো সভ্যতা নাই। এখন দুনিয়াতে সভ্যতা হলো দুইটা, একটা হলো ডমিন্যান্ট ওয়েস্টার্ন সিভিলাইজেশান। যেটার মধ্যে ইউরোপ-আমেরিকা সবগুলো আছে। এমনকি, এশিয়ান যেগুলো ডেভেলপড কান্ট্রি, সেগুলোও আছে। আরেকটা হচ্ছে এটার অলটারনেটিভ সিভিলাইজেশান। নিঃসন্দেহে ইসলাম হচ্ছে এই প্রতিদ্বন্দ্বী সভ্যতা।

৯. রাজনীতি ও ইসলাম:

রাজনীতি হচ্ছে ইসলামের একটি অপরিহার্য অংশ। রাজনৈতিক ক্ষমতা ছাড়া কীভাবে ইসলাম কায়েম হবে? সমাজ ও রাষ্ট্র সংক্রান্ত যেসব বিষয় আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, রাষ্ট্র ক্ষমতা তথা প্রশাসনিক ক্ষমতা ছাড়া সেগুলোকে কীভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব? প্রত্যক্ষ রাষ্ট্র ক্ষমতা ছাড়া বা সহায়ক রাজনৈতিক ক্ষমতা ছাড়া পরিপূর্ণভাবে ইসলাম অনুসরণ করা অসম্ভব ব্যাপার।

১০. দ্বীন প্রতিষ্ঠা প্রত্যেকের ব্যক্তিগত দায়িত্ব:

রাসূল সা. বলেছেন, “কুল্লুকুম রা’ঈন… সাবধান, তোমরা কিন্তু প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। প্রত্যেককে স্বীয় দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।” পরিবার একটা সংগঠন, সমাজ একটা সংগঠন, রাষ্ট্র একটা সংগঠন, বিশ্বব্যবস্থাও একটা সংগঠন।

ইসলামটা তো আল্লাহ তায়ালা মানুষকে দিয়েছেন এভাবে যাতে তারা স্বেচ্ছায় একে বাস্তবায়ন করে। একটা পাথর যখন উপর থেকে পড়ে তখন সেটা ইসলাম মোতাবেকই পড়ে। ল অব গ্রাভিটেশন ইসলামের বাইরের কিছু নয়। তাই বলে, পাথরটা ইসলাম মোতাবেক পতিত হচ্ছে, এটি বলার দরকার নাই। কারণ, এ ছাড়া সেটির গত্যন্তর নাই।

এর বিপরীতে মানুষ হচ্ছে বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণী। সে যুক্তি ও আবেগ দ্বারা পরিচালিত হয়।

এমতাবস্থায়, বিশেষ কোনো জীবনাদর্শ ও জীবনপদ্ধতি, যেমন ইসলাম, কায়েম হওয়ার দরকার নাই বা আছে, এই প্রসঙ্গটাই আসে কেন? বরং এটি তো একটা চলমান প্রক্রিয়া। এবং এই প্রক্রিয়াতে যারা পরিপূর্ণভাবে, সকল কিছু দিয়ে, অল আউট এফোর্ট দিয়ে, ইনভলভ হবে প্রকৃতপক্ষে তারাই ঈমান ও ইসলামের দাবী সত্যিকারভাবে পূরণ করছে।

১১. ইকামতে দ্বীনের দায়িত্বপালনের ধরন হবে বহুমুখী:

ইকামতে দ্বীনর দায়িত্ব কে কীভাবে পালন করবেন, সেটা যার যার ব্যক্তিগত অবস্থান ও যোগ্যতার ওপর নির্ভর করে। অর্থাৎ, এই দায়িত্বপালন করতে গিয়ে কেউ কোনো পলিটিক্যাল পার্টিতে জয়েন করবে কি করবে না, কোনো একটা সোশ্যাল অর্গানাইজেশন করবে কি করবে না, সে কি এনজিও স্টাইলে কাজ করবে নাকি অন্য কোনো স্টাইলে কাজ করবে, সেটা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিজস্ব বিবেচনার বিষয়।

১২. নিজ দায়িত্ব বুঝে নেয়ার ব্যাপারে বিবেক-বুদ্ধির গুরুত্ব:

খোদাপ্রদত্ত কাণ্ডজ্ঞান এবং বিবেক-বুদ্ধিকে কাজে লাগালে আমরা সহজেই বুঝতে পারি, কোন ফিল্ডে কীভাবে কাজ করাটা আমার জন্য বেটার। আমি কালকে এক জায়গায় মন্তব্য করেছিলাম, আমার এক নাম্বার ‘সালাফ’ (অনুসরণযোগ্য মাপকাঠি অর্থে) হচ্ছে আমার বিবেক। কেউ কেউ আমার এ কথার খুব সমালোচনা করেছে। তাদের মতে, মানতে হবে সালফে সালেহীনকে। অর্থাৎ প্রাচীন যুগের সৎপথপ্রাপ্ত ব্যক্তিদেরকে।

এ ব্যাপারে আমার দৃষ্টিভঙ্গী হলো, আমি যদি সলফে সালেহীন হিসেবে গণ্য এমন লোকদেরকে মানার বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হই, আমার জন্য ব্যাপারটা অত সহজ কিছু নয়। তাদের মধ্যে নানা বিষয়ে কঠোর মতবিরোধ হয়েছে। সে ক্ষেত্রে আমি কাকে বাদ দিয়ে কাকে মানবো, তা তো শেষ পর্যন্ত আমাকেই ঠিক করতে হবে। তাই না?

যারা আমাদের মুরুব্বি তাদেরকে মানবো। বেশ ভালো কথা। যারা আমাদের গাইড তাদেরকে মানবো। দ্যাট’স ফাইন। কিন্তু একজন গাইডকে কেন ও কোন প্রেক্ষাপটে আমি মানবো? গাইডকে তো আগে গাইড হিসেবে প্রপারলি আইডেন্টিফাই করার মত ক্যাপাসিটি আমার থাকতে হবে। যেভাবে করে আমি ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনটা মেনে চলি। আমি তো হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে যাই না।

ইসলামপন্থীরা বলে যে, একজন মেন্টরকে মানতে হবে। ভালো কথা। মেন্টরকে তো সবাই মানে। দুনিয়াতে মেন্টর বা গাইড মানে না কে? আমি যখন একটা বাসে উঠে ড্রাইভারের পিছনে নিশ্চিন্তে বসে থাকি তখন ড্রাইভারকে কিন্তু গাড়িটা চালানোর জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত উলিল-আমর বা মেন্টর হিসেবে মেনে নিয়ে তার পিছনে নিশ্চিন্তে বসে থাকি। কারণ, এ’ছাড়া আমার কোনো উপায় নাই।

যেটা আমি জানি না সেটার জন্য আমি কারো উপর নির্ভর করি। কিন্তু আল্টিমেটলি আমাদের গাইডিং প্রিন্সিপল হচ্ছে আমাদের বিবেক। যা আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “ফা’আল হামাহা ফুজুরাহা ওয়া তাকওয়াহা” (আমি তোমাদেরকে ভালো ও মন্দের জ্ঞান দিয়ে দিয়েছি)।

১৩. শেষ কথা

আমরা যদি এসব ওয়েস্টার্ন ইসলামিজম, ইসলামপন্থা, কলোনিয়াল-পোস্টকলোনিয়াল আরোপিত চিন্তাপদ্ধতি বাদ দিয়ে কোরআন-হাদীস সম্পর্কে মিনিমাম যা জানি, জীবনের নৈমিত্তিক অভিজ্ঞতা থেকে যা কিছু জানি, সেগুলোকে বিবেচনায় রেখে আমাদের কাণ্ডজ্ঞান ও বিবেকের দিকে যদি তাকাই তাহলে সহজেই বুঝতে পারি, দ্বীন কায়েম নবীদের অপরিহার্য দায়িত্ব ছিল কিনা এবং কীভাবে তাঁরা এই দায়িত্ব পালনে ব্রতী হয়েছেন। সেই মোতাবেক আমরা চেষ্টা করতে পারি আমাদের আওতাধীন সবটুকু সামর্থ্য দিয়ে। এভাবে কর্মতৎপর হলে ‌‘ইসলাম কায়েম পোস্ট-কলোনিয়াল ফেনোমেনা’ জাতীয় বিতর্কগুলো অর্থহীন হয়ে দাঁড়ায়।

আমি যা বললাম, সেটা আমার আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের ব্যাপার। আমি অনেকদিন ধরে ভাবছিলাম এই বিষয়ে কিছু একটা লিখবো, এখন লেখার বিকল্প হিসেবে সেটা বক্তব্য হিসেবে আপনাদেরকে বললাম৷

***

আলোচনাটি দু’বছর আগের একটি ভিডিও বক্তব্যের অনুলিখন। ভিডিওটির লিংক:

মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

Khondoker Zakaria Ahmed: পুরো বিষয়টি পড়েছি। ভালো লাগলো। সরকার গঠন থেকেও সভ্যতা গড়ে তোলা আরও বড় কাজ।

Mohammad Mozammel Hoque: সরকার গঠন হলো ইকামতে দ্বীনের যাত্রাপথে বড়জোর একটা গুরুত্বপূর্ণ মঞ্জিল। কিন্তু এর বেশি নয়‌। একজন মুসলমানের লক্ষ হলো ইসলাম যেভাবে চায় সে ধরনের একটা বিশ্বসভ্যতা গড়ে তোলা। যেটা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “…যাতে করে দ্বীন ইসলামকে অন্যান্য দ্বীনের ওপরে ডমিনেন্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়।”

আর, একজন মুমিন-মুসলিমের যত কার্যক্রম, সবকিছুর আল্টিমেইট উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা।

লেখাটির ফেইসবুক লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *