আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ (সা) বলেছেন, ‘আল্লাহ যাকে কল্যাণ দান করতে ইচ্ছা করেন, তাকে দ্বীনের ফকীহ বানিয়ে দেন।’ এখানে ফকীহ বলতে যা বুঝানো হয়েছে, হাদীসটি পড়ামাত্র এখনকার একজন মুসলিমের এ সম্পর্কে যে ধারণা হবে তা হতে ভিন্নতর। এখন যাদেরকে আমরা ইসলামী আইনশাস্ত্রের ওপর পণ্ডিত তথা ফকীহ হিসেবে জানি, মহানবীর (সা) জীবনকাল হতে শুরু করে পরবর্তী অন্তত একশ’ বছরেও ফকীহ বলতে তা বুঝানো হতো না। এখনকার সময়ে ফকীহ কথাটা একটা টার্ম হিসাবে গড়ে উঠেছে। আর তখনকার সময়ে ফকীহ কথাটাকে আক্ষরিক অর্থে গ্রহণ করা হতো। তখন ফকীহ বলতে এমন ব্যক্তিকে বুঝানো হতো, যিনি জীবন, জগৎ, সমাজ, রাষ্ট্র তথা জীবনাদর্শ সম্পর্কে সঠিক ও গভীর জ্ঞানের অধিকারী। তখনকার ফকীহ শব্দের মর্মার্থ ছিলো অধিকতর ফিলোসফিক্যাল তথা তত্ত্বগত। এখনকার সময়ে ফকীহ শব্দের অধিকতর তাৎপর্য হলো আইন ও বিধি-বিধান সম্পর্কীয়।
একবার মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (সা) মসজিদে নববীতে ঢুকে দেখতে পেলেন, সাহাবাগণ দুটি দলে বিভক্ত হয়ে দু’পাশে বসেছেন। এক গ্রুপ জিকির করছিলেন। অপর গ্রুপ জ্ঞানচর্চা করছিলেন। তখন তিনি বললেন, আমাকে শিক্ষক হিসাবে প্রেরণ করা হয়েছে। তাই আমি আলাপ-আলোচনায় যারা নিয়োজিত তাদের সাথেই বসবো।
এভাবে হাদীস ও সীরাতে জ্ঞানচর্চার ওপর কোন লেভেলে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে তা যদি আমরা কম্পাইল করতে যাই তা একটা বিরাট ভলিউম হয়ে যাবে। এমনকি উপরের শিরোনামের অধীনে কোরআনের বাণীগুলোকে কম্পাইল শুরু করার পর আমরা বুঝতে পারি– যুক্তি, বুদ্ধি ও জ্ঞানচর্চার প্রতি গুরুত্বারোপ করা সংক্রান্ত আয়াতগুলোর একটা পূর্ণাঙ্গ সংকলন প্রস্তুত করতে গেলে তা একটা বিরাট ভলিউমে পরিণত হবে। প্রত্যক্ষভাবে প্রায় সাড়ে ছয়শত কোরআনের আয়াতে যুক্তি-বুদ্ধির কথা বলা হয়েছে। যুক্তি-বুদ্ধির পক্ষে পরোক্ষভাবে বলা হয়েছে এমন আয়াতের সংখ্যা হবে সহস্রাধিক।
দীর্ঘকাল হতে মুসলমানরা প্রচলিত ফিকাহর যাঁতাকলে পড়ে ভুলেই গেছে, যুক্তি-বুদ্ধির যথাযথ চর্চা না থাকলে ইসলাম টিকবে না। যুক্তি-বুদ্ধিহীন অথচ আইন তথা শরীয়াহনির্ভর ইসলাম হলো দরজা, জানালা, দেয়াল, ফার্নিচার, ছাদ ও ফাউন্ডেশন ছাড়া একটা বিল্ডিংয়ের পিলারসর্বস্ব স্ট্রাকচারের মতো। ভারসাম্যপূর্ণ একটা জীবনব্যবস্থাকে যদি আমরা একটা সুস্থ মানবদেহের সাথে তুলনা করি, তাহলে আমরা মোটাদাগে বলতে পারি, আইনী বিধি-বিধানসমূহ হলো শরীরের অস্থি-কাঠামো তথা হাড়ের মতো। কংকাল যেমন শরীর নয়, তেমন করে শরীয়াহ মানেই ইসলাম নয়। আবার কংকাল ছাড়া যেমন শরীর অচল তেমন করে শরীয়াহ ছাড়া ইসলাম অসম্ভব।
সঙ্গত কারণেই আমরা এখানে কিছু আয়াতকে নমুনা হিসাবে পেশ করেছি। মসজিদ, মাদ্রাসা ও ইসলামভিত্তিক ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলোতে প্রচলিত প্যাসিভ লার্নিং সিস্টেম তথা গুরুবাদী শিক্ষা পদ্ধতির প্রভাবে সাধারণ মুসলমানরা মনে করে, ইসলামে যুক্তিবুদ্ধির বুঝিবা প্রচলন বা অনুমোদন নাই। যেন ওহীর জ্ঞান আছে। তাই, মানবীয় জ্ঞানের দরকার নাই। ওহীর জ্ঞান বনাম মানবীয় জ্ঞান, এই যে একটা ফলস বাইনারি করা হচ্ছে, আমরা এর বিরোধী। এই সংকলনে আমরা দেখিয়েছি, ওহীর জ্ঞানেই মানবীয় জ্ঞানপদ্ধতির স্বীকৃতি প্রদান তো বটেই, বরং সেটার যথোচিত চর্চার কথা বারংবার বলা হয়েছে। আমরা জানি, ওহীর জ্ঞানে মানবীয় জ্ঞানের দোহাই দেয়া হয়েছে, মানবীয় জ্ঞানের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে মানবীয় জ্ঞানের ভিত্তি, পদ্ধতি, পরিণতি ও পূর্ণতা হলো ওহীর জ্ঞান।
সোজা কথায়, জ্ঞানের প্রচলিত উৎস হিসাবে অভিজ্ঞতাবাদ, বুদ্ধিবাদ ও সাক্ষ্য– এগুলোর স্বরূপ হলো স্বজ্ঞা বা ইন্টুইশন। আরবিতে যাকে বলা হয় ইলহাম। বলাবাহুল্য, ইলহাম হলো অপরিশীলিত বা অপূর্ণ ওহী। তারমানে, প্রত্যাদেশ বা ওহী হলো পারফেক্ট ইন্টুইশন। নবী-রাসূলদের ইন্টুইশন হলো ওহী। অতএব, ওহী ও ইলহামের মধ্যে পার্থক্য গুণ ও মাত্রাগত। অভিজ্ঞতা, বুদ্ধি, সাক্ষ্য, স্বজ্ঞা ও ওহী– এটি ইসলামী জ্ঞানতত্ত্বের সর্বজনগ্রাহ্য কাঠামো। পাশ্চাত্য জ্ঞানতত্ত্বে জ্ঞানের উৎস নিয়ে যে দ্বন্দ্ব রয়েছে, তা হরাইজন্টাল বা ডাইকোটমিক। তারা বিতর্ক করে মূলত অভিজ্ঞতা বা বুদ্ধি, এতদুভয়ের কোনটি গ্রহণযোগ্য, তা নিয়ে। ইসলামী জ্ঞানতত্ত্ব এই দৃষ্টিতে সুসামঞ্জস্যপূর্ণ। এটি ক্রমসোপানমূলক হায়ারার্কিক্যাল। মুসলমানরা এটি যত দ্রুত বুঝবে, তত দ্রুত তাদের ইমানসিপেশন ঘটবে। অন্যথায়, প্রতিক্রিয়াশীলতার ঘুরপাকেই তারা জীবন কাটাবে। তারা হতে পারবে না কৌশলী ও যোগ্য। এখন যা আছে তা-ই থেকে যাবে। সুখের বিষয় হচ্ছে, বর্তমান প্রজন্মের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ যুগোপযুগী ও প্রগতিশীল চিন্তাভাবনার অধিকারী। তাদের জন্য এই সংকলন।
***
১। মুসলমানদের মধ্যে স্থায়ীভাবে থাকতে হবে থিংক-ট্যাঙ্ক সিস্টেম –
وَمَا كَانَ الْمُؤْمِنُونَ لِيَنفِرُوا كَآفَّةً ۚ فَلَوْلَا نَفَرَ مِن كُلِّ فِرْقَةٍ مِّنْهُمْ طَآئِفَةٌ لِّيَتَفَقَّهُوا فِى الدِّينِ وَلِيُنذِرُوا قَوْمَهُمْ إِذَا رَجَعُوٓا إِلَيْهِمْ لَعَلَّهُمْ يَحْذَرُونَ
মুমিনদের সকলের একসঙ্গে অভিযানে বের হওয়া ঠিক নয়। তাদের প্রত্যেক দল থেকে একটি অংশ কেন বের হয় না যাতে তারা দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞানের অনুশীলন করতে পারে এবং ফিরে আসার পর তাদের সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পারে যাতে তারা (অসদাচরণ) থেকে বিরত হয়? (সূরা তওবা: ১২২)
২। সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে সন্ধান করতে হবে অখণ্ড সত্যকে –
وَمَا يَتَّبِعُ أَكْثَرُهُمْ إِلَّا ظَنًّا ۚ إِنَّ الظَّنَّ لَا يُغْنِى مِنَ الْحَقِّ شَيْـًٔا ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌۢ بِمَا يَفْعَلُونَ
আসলে তাদের বেশিরভাগ লোকই নিছক আন্দাজ-অনুমানের পেছনে চলছে। অথচ আন্দাজ-অনুমান দ্বারা সত্যের প্রয়োজন কিছুমাত্র মেটে না। তারা যা কিছু করছে তা আল্লাহ ভালোভাবেই জানেন। (সূরা ইউনুস: ৩৬)
৩। বুদ্ধি-বিযুক্ত কোনো কাজ সঠিক হতে পারে না –
وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ أَن تُؤْمِنَ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّـهِ ۚ وَيَجْعَلُ الرِّجْسَ عَلَى الَّذِينَ لَا يَعْقِلُونَ
আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউই ঈমান আনতে পারে না। আর আল্লাহর রীতি হচ্ছে, যারা বুদ্ধি প্রয়োগ করে কাজ করে না তাদের ওপর কলুষতা চাপিয়ে দেন। (সূরা ইউনুস: ১০০)
৪। অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা লাভের জন্য দেশ-বিদেশে সফর করতে হবে –
أَوَلَمْ يَتَفَكَّرُوا فِىٓ أَنفُسِهِم ۗ مَّا خَلَقَ اللَّهُ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَآ إِلَّا بِالْحَقِّ وَأَجَلٍ مُّسَمًّى ۗ وَإِنَّ كَثِيرًا مِّنَ النَّاسِ بِلِقَآئِ رَبِّهِمْ لَكٰفِرُونَ – أَوَلَمْ يَسِيرُوا فِى الْأَرْضِ فَيَنظُرُوا كَيْفَ كَانَ عٰقِبَةُ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ
তারা কি কখনো নিজেদের মধ্যে চিন্তাভাবনা করেনি? আল্লাহ পৃথিবী ও আকাশ মণ্ডলী এবং তাদের মাঝখানে যা কিছু আছে– সবকিছু সঠিক উদ্দেশ্যে এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু অনেকেই তাদের রবের সাক্ষাতে বিশ্বাস করে না।
আর এরা কি কখনো পৃথিবীতে ভ্রমণ করেনি? তাহলে এদের পূর্বে যারা অতিক্রান্ত হয়েছে তাদের পরিণাম এরা দেখতে পেতো। (সূরা আর-রুম: ৮-৯)
৫। কেবলমাত্র আনুগত্যশীল লোকেরাই অভিজ্ঞতা, যুক্তি ও বুদ্ধিকে কাজে লাগাতে পারে –
تَبَارَكَ الَّذِى جَعَلَ فِى السَّمَآءِ بُرُوجًا وَجَعَلَ فِيهَا سِرٰجًا وَقَمَرًا مُّنِيرًا – وَهُوَ الَّذِى جَعَلَ الَّيْلَ وَالنَّهَارَ خِلْفَةً لِّمَنْ أَرَادَ أَن يَذَّكَّرَ أَوْ أَرَادَ شُكُورًا
অসীম বরকতসম্পন্ন তিনি, যিনি আকাশে বুরুজ নির্মাণ করেছেন এবং তার মধ্যে একটি প্রদীপ ও একটি আলোকময় চাঁদ উজ্জ্বল করেছেন।
তিনিই রাত ও দিনকে পরস্পরের স্থলাভিষিক্ত করেছেন এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে শিক্ষাগ্রহণ করতে অথবা কৃতজ্ঞ হতে চায়। (সূরা ফোরকান: ৬১-৬২)
إِنَّكَ لَا تُسْمِعُ الْمَوْتٰى وَلَا تُسْمِعُ الصُّمَّ الدُّعَآءَ إِذَا وَلَّوْا مُدْبِرِينَ – وَمَآ أَنتَ بِهٰدِى الْعُمْىِ عَن ضَلٰلَتِهِمْ ۖ إِن تُسْمِعُ إِلَّا مَن يُؤْمِنُ بِـَٔايٰتِنَا فَهُم مُّسْلِمُونَ
তুমি মৃতদেরকে শোনাতে পারবে না, বধিরকেও তোমার আহবান শোনাতে পারবে না– (বিশেষত) যখন তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়।
আর অন্ধদেরকেও তুমি পথ দেখিয়ে বিপথগামী হওয়া থেকে বাঁচাতে পারবে না। তুমি কেবল তাদেরকেই শোনাতে পারবে, যারা আমার আয়াতগুলোর উপর ঈমান আনে। অতঃপর, তারাই মুসলমান বা আত্মসমর্পণকারী। (সূরা নামল: ৮০-৮১)
৬। পাশবিক নয়, চাই মুক্ত চিন্তার এক নান্দনিক মানবিক জীবন –
أَرَءَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلٰهَهُۥ هَوٰىهُ أَفَأَنتَ تَكُونُ عَلَيْهِ وَكِيلًا – أَمْ تَحْسَبُ أَنَّ أَكْثَرَهُمْ يَسْمَعُونَ أَوْ يَعْقِلُونَ ۚ إِنْ هُمْ إِلَّا كَالْأَنْعٰمِ ۖ بَلْ هُمْ أَضَلُّ سَبِيلًا
কখনো কি তুমি সেই ব্যক্তির অবস্থা ভেবে দেখেছো, যে তার নিজের প্রবৃত্তির কামনাকে প্রভু রূপে গ্রহণ করেছে? তুমি কি এহেন ব্যক্তিকে সঠিক পথে নিয়ে আসার দায়িত্ব নিতে পারো?
তুমি কি মনে করো তাদের অধিকাংশ লোক শোনে ও বোঝে? তারা তো পশুর মতো, বরং তারও অধম। (সূরা ফুরকান: ৪৩-৪৪)
৭। দলীল প্রমাণের গুরুত্ব –
وَقَالُوا لَن يَدْخُلَ الْجَنَّةَ إِلَّا مَن كَانَ هُودًا أَوْ نَصٰرٰى ۗ تِلْكَ أَمَانِيُّهُمْ ۗ قُلْ هَاتُوا بُرْهٰنَكُمْ إِن كُنتُمْ صٰدِقِينَ
তারা বলে, ইহুদী বা খৃস্টান ছাড়া আর কেউ জান্নাতে যাবে না। এটি তাদের অবাস্তব আকাঙ্খা মাত্র। তাদেরকে বলে দাও, তোমরা যদি তোমাদের দাবির ব্যাপারে সত্যবাদী হয়ে থাকো, তাহলে তোমাদের দলীল-প্রমাণ নিয়ে এসো। (সূরা বাকারা: ১১১)
لَوْ كَانَ فِيهِمَآ ءَالِهَةٌ إِلَّا اللَّهُ لَفَسَدَتَا ۚ فَسُبْحٰنَ اللَّهِ رَبِّ الْعَرْشِ عَمَّا يَصِفُونَ
যদি আকাশে ও পৃথিবীতে এক আল্লাহ ছাড়া দ্বিতীয় কোনো ইলাহ হতো, তাহলে (পৃথিবী ও আকাশ) উভয়ের ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যেতো। কাজেই এরা যেসব কথা বলে বেড়াচ্ছে, আরশের রব আল্লাহ তা থেকে পবিত্র। (সূরা আম্বিয়া: ২২)
قَلِيلًا مَّا تَذَكَّرُونَ – أَمَّن يَهْدِيكُمْ فِى ظُلُمٰتِ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَمَن يُرْسِلُ الرِّيٰحَ بُشْرًۢا بَيْنَ يَدَىْ رَحْمَتِهِۦٓ ۗ أَءِلٰهٌ مَّعَ اللَّهِ ۚ تَعٰلَى اللَّهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ – أَمَّن يَبْدَؤُا الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيدُهُۥ وَمَن يَرْزُقُكُم مِّنَ السَّمَآءِ وَالْأَرْضِ ۗ أَءِلٰهٌ مَّعَ اللَّهِ ۚ قُلْ هَاتُوا بُرْهٰنَكُمْ إِن كُنتُمْ صٰدِقِينَ
…তোমরা সামান্যই চিন্তাভাবনা করে থাকো।
আর কে জলস্থলের অন্ধকারে তোমাদের পথ দেখান? এবং কে নিজের অনুগ্রহের পূর্বাহ্নে বাতাসকে সুসংবাদ দিয়ে পাঠান? আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহও কি (এ কাজ করে)? এরা যে ধরনের শিরক করে, তা থেকে আল্লাহ অনেক ঊর্ধ্বে।
আর তিনি কে, যিনি সৃষ্টির সূচনা করেন এবং তারপর আবার এর পুনরাবৃত্তি করেন? আর কে তোমাদের জীবিকা দেন আকাশ ও পৃথিবী থেকে? আল্লাহর সাথে অন্য কোনো ইলাহও কি (এ কাজে অংশীদার) আছে? বলো, আনো তোমাদের যুক্তি, যদি তোমার সত্যবাদী হয়ে থাকো। (সূরা নামল: ৬২-৬৪)
৮। যুক্তি, জ্ঞান, বিবেক ও বুদ্ধিকে কাজে লাগানোর নির্দেশ –
أَتَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَتَنسَوْنَ أَنفُسَكُمْ وَأَنتُمْ تَتْلُونَ الْكِتٰبَ ۚ أَفَلَا تَعْقِلُونَ
তোমরা অন্যদেরকে সৎকর্মশীলতার পথ অবলম্বন করতে বলো, কিন্তু নিজেদের কথা ভুলে যাও। অথচ তোমার কিতাব পাঠ করে থাকো। তোমরা কি জ্ঞান-বুদ্ধি একটুও কাজে লাগাও না? (সূরা বাকারা: ৪৪)
وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ اتَّبِعُوا مَا أَنزَلَ اللَّـهُ قَالُوا بَلْ نَتَّبِعُ مَا أَلْفَيْنَا عَلَيْهِ آبَاءَنَا ۗ أَوَلَوْ كَانَ آبَاؤُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ شَيْئًا وَلَا يَهْتَدُونَ
তাদের যখন বলা হয়, আল্লাহ যে বিধান নাযিল করেছেন তা মেনে চলো, জবাবে তারা বলে, আমাদের বাপ-দাদাদের যে পথের অনুসারী পেয়েছি আমরা তো সে পথে চলবো। আচ্ছা, তাদের বাপ-দাদারা যদি একটু বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ না করে থেকে থাকে? এবং সত্য-সঠিক পথের সন্ধান না পেয়ে থাকে? তাহলেও কি তারা তাদের অনুসরণ করে যেতে থাকবে? (সূরা বাকারা: ১৭০)
وَمِنْهُم مَّن يَسْتَمِعُونَ إِلَيْكَ ۚ أَفَأَنتَ تُسْمِعُ الصُّمَّ وَلَوْ كَانُوا لَا يَعْقِلُونَ – وَمِنْهُم مَّن يَنظُرُ إِلَيْكَ ۚ أَفَأَنتَ تَهْدِى الْعُمْىَ وَلَوْ كَانُوا لَا يُبْصِرُونَ – إِنَّ اللَّهَ لَا يَظْلِمُ النَّاسَ شَيْـًٔا وَلٰكِنَّ النَّاسَ أَنفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ
তাদের মধ্যে বহু লোক আছে যারা তোমার কথা শোনার ভান করে; কিন্তু তুমি বধিরদেরকে কী শোনাবে যদি তাদের বিবেক-বুদ্ধি না থাকে! তাদের মধ্যে বহু লোক আছে যারা তোমাকে দেখার ভান করে। কিন্তু তুমি অন্ধদের কী পথ দেখাবে, যদি তারা কিছু দেখতে না পায়? আসলে আল্লাহ মানুষের প্রতি জুলুম করেন না, মানুষ নিজেই নিজের প্রতি জুলুম করে। (সূরা ইউনুস: ৪২-৪৪)
إِنَّ شَرَّ الدَّوَآبِّ عِندَ اللَّهِ الصُّمُّ الْبُكْمُ الَّذِينَ لَا يَعْقِلُونَ
অবশ্যি আল্লাহর কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ধরনের জানোয়ার হচ্ছে সেই সব বধির ও বোবা লোক, যারা বিবেক-বুদ্ধিকে কাজে লাগায় না। (সূরা আনফাল: ২২)
أَفَلَمْ يَسِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَتَكُونَ لَهُمْ قُلُوبٌ يَعْقِلُونَ بِهَا أَوْ آذَانٌ يَسْمَعُونَ بِهَا ۖ فَإِنَّهَا لَا تَعْمَى الْأَبْصَارُ وَلَـٰكِن تَعْمَى الْقُلُوبُ الَّتِي فِي الصُّدُورِ
তারা কি জমিনে ভ্রমণ করেনি? করলে তাদের অন্তরগুলো এমন হতো যা দিয়ে তারা বুঝতে পারতো, আর কানগুলো এমন হতো যা দিয়ে তারা শুনতে পেতো। কেননা, চোখ তো আসলে অন্ধ হয় না, বক্ষস্থিত অন্তরই অন্ধ হয়ে থাকে। (সূরা হজ্ব: ৪৬)
كَذٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ ءَايٰتِهِۦ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ
তোমাদের জন্য মহান আল্লাহ নিজের আহকাম এমনভাবে ব্যাখ্যা করে বর্ণনা করছেন, যাতে তোমরা বুঝতে পারো।
يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لِمَ تُحَاجُّونَ فِي إِبْرَاهِيمَ وَمَا أُنزِلَتِ التَّوْرَاةُ وَالْإِنجِيلُ إِلَّا مِن بَعْدِهِ ۚ أَفَلَا تَعْقِلُونَ
হে আহলে কিতাব! তোমরা ইবরাহীমের ব্যাপারে কেন আমার সাথে ঝগড়া করছো? তাওরাত ও ইনজীল তো ইবরাহীমের পরে নাযিল হয়েছে। তোমরা কি এটুকুও বুঝো না? (সূরা আলে ইমরান: ৬৫)
وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا لَعِبٌ وَلَهْوٌ ۖ وَلَلدَّارُ الْآخِرَةُ خَيْرٌ لِّلَّذِينَ يَتَّقُونَ ۗ أَفَلَا تَعْقِلُونَ
দুনিয়ার জীবন তো একটি খেল-তামাশার ব্যাপার। আসলে যারা ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে চায়, তাদের জন্য আখেরাতের আবাসই ভালো। তবে কি তোমরা বুদ্ধি-বিবেচনাকে কাজে লাগাবে না? (সূরা আনআম: ৩২)
قُل لَّوْ شَآءَ اللَّهُ مَا تَلَوْتُهُۥ عَلَيْكُمْ وَلَآ أَدْرٰىكُم بِهِۦ ۖ فَقَدْ لَبِثْتُ فِيكُمْ عُمُرًا مِّن قَبْلِهِۦٓ ۚ أَفَلَا تَعْقِلُونَ
আর বলো, যদি এটিই হতো আল্লাহর ইচ্ছা, তাহলে আমি কখনো এ কোরআন তোমাদেরকে শোনাতাম না এবং আল্লাহ তোমাদেরকে এর খবরও দিতেন না। আমি তো এর আগে তোমাদের মধ্যে জীবনের দীর্ঘকাল অতিবাহিত করেছি, তবুও কি তোমরা বুদ্ধি-বিবেচনা করে কাজ করতে পারো না? (সূরা ইউনুস: ১৬)
يٰقَوْمِ لَآ أَسْـَٔلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا ۖ إِنْ أَجْرِىَ إِلَّا عَلَى الَّذِى فَطَرَنِىٓ ۚ أَفَلَا تَعْقِلُونَ
হে আমার সম্প্রদায়! এর বিনিময়ে আমি তোমাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চাই না। আমার পারিশ্রমিক তো তাঁর জিম্মায় যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, তবুও কি তোমরা জ্ঞান-বুদ্ধি খাটাবে না? (সূরা হুদ: ৫১)
لَقَدْ أَنزَلْنَآ إِلَيْكُمْ كِتٰبًا فِيهِ ذِكْرُكُمْ ۖ أَفَلَا تَعْقِلُونَ
হে লোকেরা! আমি তোমাদের প্রতি এমন একটি কিতাব অবতীর্ণ করেছি যার মধ্যে তোমাদেরই কথা আছে, তোমরা কি বুঝ না? (সূরা আম্বিয়া: ১০)
৯। ইন্দ্রিয়জ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর তাগিদ –
إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَالْفُلْكِ الَّتِي تَجْرِي فِي الْبَحْرِ بِمَا يَنفَعُ النَّاسَ وَمَا أَنزَلَ اللَّـهُ مِنَ السَّمَاءِ مِن مَّاءٍ فَأَحْيَا بِهِ الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا وَبَثَّ فِيهَا مِن كُلِّ دَابَّةٍ وَتَصْرِيفِ الرِّيَاحِ وَالسَّحَابِ الْمُسَخَّرِ بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَعْقِلُونَ
(এই সত্যটি চিহ্নিত করার জন্য যদি কোনো নিদর্শন বা আলামতের প্রয়োজন হয় তাহলে) যারা বুদ্ধি-বিবেক ব্যবহার করে তাদের জন্য আকাশ ও পৃথিবীর ঘটনাকৃতিতে, রাতদিনের অনবরত আবর্তনে, মানুষের প্রয়োজনীয় ও উপকারী সামগ্রী নিয়ে সাগর-দরিয়ার চলমান জলযানসমূহে, বৃষ্টিধারার মধ্যে, যা আল্লাহ বর্ষণ করেন ওপর থেকে, তারপর তার মাধ্যমে মৃত ভূমিকে জীবন দান করেন এবং নিজের এই ব্যবস্থাপনার বদৌলতে পৃথিবীতে সব রকমের প্রাণী ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেন, আর বায়ু প্রবাহে এবং আকাশ ও পৃথিবীর মাঝখানে নিয়ন্ত্রিত মেঘমালায় অসংখ্য নিদর্শন রয়েছে। (সূরা বাকারা: ১৬৪)
وَمَثَلُ الَّذِينَ كَفَرُوا كَمَثَلِ الَّذِي يَنْعِقُ بِمَا لَا يَسْمَعُ إِلَّا دُعَاءً وَنِدَاءً ۚ صُمٌّ بُكْمٌ عُمْيٌ فَهُمْ لَا يَعْقِلُونَ
আল্লাহ প্রদর্শিত পথে চলতে যারা অস্বীকার করেছে তাদের অবস্থা ঠিক তেমনি যেমন রাখাল তার পশুদের ডাকতে থাকে কিন্তু হাঁকডাকের আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই তাদের কানে পৌঁছে না। তারা কালা, বোবা ও অন্ধ, তাই কিছুই বুঝতে পারে না। (সূরা বাকারা: ১৭১)
إِنَّ فِى خَلْقِ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلٰفِ الَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَءَايٰتٍ لِّأُولِى الْأَلْبٰبِ
নিঃসন্দেহে আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টি এবং দিবা-রাত্রির আবর্তনের মাঝে জ্ঞানী লোকদের জন্য রয়েছে অনেক নিদর্শন। (সূরা আলে ইমরান: ১৯০)
وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيرًا مِّنَ الْجِنِّ وَالْإِنسِ ۖ لَهُمْ قُلُوبٌ لَّا يَفْقَهُونَ بِهَا وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لَّا يُبْصِرُونَ بِهَا وَلَهُمْ ءَاذَانٌ لَّا يَسْمَعُونَ بِهَآ ۚ أُولٰٓئِكَ كَالْأَنْعٰمِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ ۚ أُولٰٓئِكَ هُمُ الْغٰفِلُونَ
বহু জ্বীন ও মানুষ রয়েছে, যাদেরকে আমি জাহান্নামের জন্যই সৃষ্টি করেছি। তাদের হৃদয় আছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা উপলব্ধি করে না। তাদের চোখ আছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা দেখে না। তাদের কান আছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা শোনে না। তারা পশুর মতো, বরং তাদের চাইতেও অধম। তারা চরম গাফেলতির মধ্যে হারিয়ে গেছে। (সূরা আরাফ: ১৭৯)
هُوَ الَّذِى جَعَلَ الشَّمْسَ ضِيَآءً وَالْقَمَرَ نُورًا وَقَدَّرَهُۥ مَنَازِلَ لِتَعْلَمُوا عَدَدَ السِّنِينَ وَالْحِسَابَ ۚ مَا خَلَقَ اللَّهُ ذٰلِكَ إِلَّا بِالْحَقِّ ۚ يُفَصِّلُ الْءَايٰتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ – إِنَّ فِى اخْتِلٰفِ الَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَمَا خَلَقَ اللَّهُ فِى السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ لَءَايٰتٍ لِّقَوْمٍ يَتَّقُونَ
তিনি সূর্যকে করেছেন তেজোদীপ্ত, আর চন্দ্রকে করেছেন আলোকময়। আর তার (হ্রাস-বৃদ্ধির) মনযিলসমূহ সঠিকভাবে নির্ধারণ করেছেন, যাতে তোমরা বৎসর গুণে (সময়ের) হিসাব রাখতে পারো। আল্লাহ এসব অনর্থক সৃষ্টি করেননি, তিনি নিদর্শনগুলোকে বিশদভাবে উপস্থাপন করেন জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য।
নিশ্চয়ই রাত ও দিনের আবর্তনে, আর আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর মাঝে আল্লাহ যা সৃষ্টি করেছেন তাতে মুত্তাকী সম্প্রদায়ের জন্য অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে। (সূরা ইউনুস: ৫-৬)
قُلْ مَن يَرْزُقُكُم مِّنَ السَّمَآءِ وَالْأَرْضِ أَمَّن يَمْلِكُ السَّمْعَ وَالْأَبْصٰرَ وَمَن يُخْرِجُ الْحَىَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَيُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَىِّ وَمَن يُدَبِّرُ الْأَمْرَ ۚ فَسَيَقُولُونَ اللَّهُ ۚ فَقُلْ أَفَلَا تَتَّقُونَ
তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, “কে তোমাদের আকাশ ও পৃথিবী থেকে রিযিক দেয়? এই শোনার ও দেখার শক্তি কার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে? কে মৃত থেকে জীবিত এবং জীবিত থেকে মৃতকে বের করে আনে? কে চালাচ্ছে এই বিশ্ব-ব্যবস্থাপনা? তারা নিশ্চয়ই বলবে, আল্লাহ। বলো, তবুও কি তোমরা (সত্যের বিরোধী পথে চলার ব্যাপারে) সতর্ক হচ্ছো না? (সূরা ইউনুস: ৩১)
صِنْوَانٌ وَغَيْرُ صِنْوَانٍ يُسْقٰى بِمَآءٍ وٰحِدٍ وَنُفَضِّلُ بَعْضَهَا عَلٰى بَعْضٍ فِى الْأُكُلِ ۚ إِنَّ فِى ذٰلِكَ لَءَايٰتٍ لِّقَوْمٍ يَعْقِلُونَ
আর দেখো, পৃথিবীতে রয়েছে পরস্পর সংলগ্ন আলাদা আলাদা ভূখণ্ড, রয়েছে আংগুর বাগান, শস্যক্ষেত, খেজুর গাছ–কিছু একাধিক কাণ্ডবিশিষ্ট আবার কিছু এক কাণ্ডবিশিষ্ট, যা একই পানি দ্বারা সিঞ্চিত হয়, কিন্তু স্বাদের ক্ষেত্রে আমি করে দেই তাদের কোনোটাকে বেশি ভালো এবং কোনোটাকে কম ভালো। যারা বুদ্ধিকে কাজে লাগায়, তাদের জন্য এসব জিনিসের মধ্যে রয়েছে প্রচুর নিদর্শন। (সূরা রা’দ: ৪)
قُلْ مَن رَّبُّ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ قُلِ اللَّهُ ۚ قُلْ أَفَاتَّخَذْتُم مِّن دُونِهِۦٓ أَوْلِيَآءَ لَا يَمْلِكُونَ لِأَنفُسِهِمْ نَفْعًا وَلَا ضَرًّا ۚ قُلْ هَلْ يَسْتَوِى الْأَعْمٰى وَالْبَصِيرُ أَمْ هَلْ تَسْتَوِى الظُّلُمٰتُ وَالنُّورُ ۗ أَمْ جَعَلُوا لِلَّهِ شُرَكَآءَ خَلَقُوا كَخَلْقِهِۦ فَتَشٰبَهَ الْخَلْقُ عَلَيْهِمْ ۚ قُلِ اللَّهُ خٰلِقُ كُلِّ شَىْءٍ وَهُوَ الْوٰحِدُ الْقَهّٰرُ – أَنزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَسَالَتْ أَوْدِيَةٌۢ بِقَدَرِهَا فَاحْتَمَلَ السَّيْلُ زَبَدًا رَّابِيًا ۚ وَمِمَّا يُوقِدُونَ عَلَيْهِ فِى النَّارِ ابْتِغَآءَ حِلْيَةٍ أَوْ مَتٰعٍ زَبَدٌ مِّثْلُهُۥ ۚ كَذٰلِكَ يَضْرِبُ اللَّهُ الْحَقَّ وَالْبٰطِلَ ۚ فَأَمَّا الزَّبَدُ فَيَذْهَبُ جُفَآءً ۖ وَأَمَّا مَا يَنفَعُ النَّاسَ فَيَمْكُثُ فِى الْأَرْضِ ۚ كَذٰلِكَ يَضْرِبُ اللَّهُ الْأَمْثَالَ
এদেরকে জিজ্ঞেস করো, আকাশ ও পৃথিবীর রব কে? বলো আল্লাহ! তারপর এদেরকে জিজ্ঞেস করো, আসল ব্যাপার যখন এই তখন তোমরা কি তাঁকে বাদ দিয়ে এমন মাবুদদেরকে নিজেদের কার্যসম্পাদনকারী বানিয়ে নিয়েছো, যারা তাদের নিজেদের জন্যও কোনো লাভ-ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে না? বলো, অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান হয়ে থাকে? আলো ও আঁধার কি এক রকম হয়? যদি এমন না হয়, তাহলে তাদের বানানো শরীকরাও কি আল্লাহর মতো কিছু সৃষ্টি করেছে, যে কারণে তারাও সৃষ্টিক্ষমতার অধিকারী বলে সন্দেহ হয়েছে? বলো, প্রত্যেকটি জিনিসের স্রষ্টা একমাত্র আল্লাহ। তিনি একক ও সবার ওপর পরাক্রমশালী।
আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন এবং প্রত্যেক নদী-নালা নিজের সাধ্য অনুযায়ী তা নিয়ে প্রবাহিত হয়। তারপর যখন প্লাবন আসে তখন পানির ওপরে ফেনা ভাসতে থাকে। আর লোকেরা অলংকার ও তৈজসপত্রাদি নির্মাণের জন্য যেসব ধাতু গরম করে তার ওপরও ঠিক এমনি ফেনা ভেসে ওঠে। এ উপমার সাহায্যে আল্লাহ হক ও বাতিলের বিষয়টি সুস্পষ্ট করে দেন। ফেনারাশি উড়ে যায় এবং যে বস্তুটি মানুষের জন্য উপকারী, তা জমিনে থেকে যায়। এভাবে আল্লাহ উপমার সাহায্যে নিজের কথা বুঝিয়ে থাকেন। (সূরা আর-রাদ: ১৬-১৭)
وَسَخَّرَ لَكُمُ الَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ وَالنُّجُومُ مُسَخَّرٰتٌۢ بِأَمْرِهِۦٓ ۗ إِنَّ فِى ذٰلِكَ لَءَايٰتٍ لِّقَوْمٍ يَعْقِلُونَ
তিনিই রাত ও দিনকে তোমাদের উপকারে নিয়োজিত করেছেন। আর সুরুজ ও চাঁদকেও; এবং তারকারাজিও তাঁরই নির্দেশে নিয়ন্ত্রিত। নিশ্চয়ই এতে বোধশক্তিসম্পন্নদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। (সূরা নাহল: ১২)
وَمَآ أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ إِلَّا رِجَالًا نُّوحِىٓ إِلَيْهِم مِّنْ أَهْلِ الْقُرٰىٓ ۗ أَفَلَمْ يَسِيرُوا فِى الْأَرْضِ فَيَنظُرُوا كَيْفَ كَانَ عٰقِبَةُ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ ۗ وَلَدَارُ الْءَاخِرَةِ خَيْرٌ لِّلَّذِينَ اتَّقَوْا ۗ أَفَلَا تَعْقِلُونَ
হে মুহাম্মদ! তোমার পূর্বে আমি যে নবীদেরকে পাঠিয়েছিলাম তারা সবাই মানুষই ছিলো, এসব জনবসতিরই অধিবাসী ছিলো এবং তাদের কাছেই আমি অহী পাঠাতে থেকেছি। তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করেনি এবং তাদের পূর্বে যেসব জাতি চলে গেছে তাদের পরিণাম দেখেনি? নিশ্চিতভাবেই আখেরাতের আবাস তাদের জন্য আরো বেশি ভালো যারা (নবীর কথা মেনে নিয়ে) তাকওয়ার পথ অবলম্বন করেছে। এখনো কি তোমরা বুঝবে না? (সূরা ইউসুফ: ১০৯)
ফেসবুক থেকে নির্বাচিত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Iftekharul Islam Ifat: অথচ যুক্তি-বুদ্ধি প্রয়োগ করে ইসলাম বুঝতে চাওয়াকে অনেক ধার্মিক মানুষই নেগেটিভলি দেখেন। তাদের কথা হলো “আমরা শুনলাম এবং মানলাম”। বেশি যুক্তি খুঁজতে গেলে নাকি মানুষ ‘গোমরাহ’ হয়ে যায়।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ‘শুনলাম ও মানলাম’ কথাটা তো ঠিকই আছে। তবে কী শুনলাম আর কী মানবো, তা তো বুঝতে হবে ঠিক মতো। তাই না?
Iftekharul Islam Ifat: এই যে ‘বুঝতে হবে’– এই ব্যাপারটাই কেউ কেউ বুঝতে চায় না।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: বুঝজ্ঞানকে শাণিত ও সক্রিয় না করলে কীভাবে বুঝবেন, এত এত কথাবার্তার মধ্যে কোনটা সঠিক? কীভাবে বুঝবেন, এত এত সম্ভাব্য করণীয়ের মধ্যে ঠিক কোনটা এ মুহূর্তের জরুরি করণীয়?
Ibrahim Hossain: “নবী-রাসূলদের ইন্টুইশন হলো ওহী”– এ কথাটি মানতে পারলাম না। এ কথা দ্বারা বুঝায়, নবী-রাসূলগণ যুক্তিবুদ্ধি চর্চার এক পর্যায়ে ওহী প্রাপ্ত হতেন। আসলে কি তাই? আমরা যতটুকু জানি, আল্লাহ তার বান্দাদের মাঝ থেকে বিশেষ কাউকে নির্বাচন করেন তাঁর ওহীর প্রচারক হিসেবে। ওহী descends Wahi deals with issues which are above and beyond human intuition.
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ইন্টুইশন হলো প্রত্যক্ষ জ্ঞান। অর্থাৎ যে জ্ঞানের কোনো মাধ্যম নাই, বিশেষ কোনো কারণও নাই। কেন, কীভাবে ইত্যাদির কোনো ব্যাখ্যাও এতে নাই। কিন্তু যিনি এটা পেয়েছেন তিনি নিশ্চিতভাবেই বুঝতে পারেন, এটি সন্দেহাতীত ও শতভাগ নিশ্চিত, নিখাঁদ সত্য। তো, এই ধরনের প্রত্যক্ষ জ্ঞান যখন কোনো সাধারণ ব্যক্তি প্রাপ্ত হন, তখন তাকে আমরা বলি ইন্টুইশন বা ইলহাম। আর এই ইন্টুইশন যখন নবী-রাসূলদের ওপর ঘটে, তখন সেটাকে আমরা বলি ওহী, রেভিলেশন বা প্রত্যাদেশ।
সাধারণ মানুষদের ইলহাম বা ইন্টুইশন অন্যদের জন্য অনুসরণযোগ্য নয়। কোনো কিছুর পক্ষে বা বিপক্ষে তা দলিল হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে না। এটি শুধু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু নবীদের উপর নাযিল হওয়া এই ধরনের ইমিডিয়েট এন্ড ডাইরেক্ট নলেজ তথা ওহী অন্যদের উপরেও প্রযোজ্য এবং অনুসরণযোগ্য।
আমার এই কথার পক্ষে আপনি প্রমাণ খুঁজে পাবেন যদি মুহাম্মদের (সা) উপর ওহী নাযিলের পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে আপনি জানেন। সেখানে আপনি দেখবেন, ওহী নাযিল হওয়ার অন্যতম একটি পদ্ধতি হলো, আল্লাহ রাসূলের কাছে তেমন দৃঢ়ভাবে মনে হয়েছে যে এটি আল্লাহর পক্ষ থেকেই এসেছে।
আমরা জানি, আল্লাহর রাসূলের (সা) নবুয়ত সংক্রান্ত সবকিছুই ওহীর অন্তর্ভুক্ত। এর একটা বিশেষ ও ক্ষুদ্র অংশকে আমরা কোরআন হিসেবে জানি। বাদবাকিগুলোকে আমরা হাদীস হিসেবে জানি। অর্থাৎ হাদীসগুলোও এক ধরনের ওহী। শরীয়তের পরিভাষায় এটাকে বলা হয় ‘ওহীয়ে গাইরে মাতলু’। অর্থাৎ কোরআনের আয়াত হিসেবে তেলাওয়াত করা হয় না এমন ধরনের ওহী।
তার মানে হলো, সব বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ওহী না পাওয়া সত্ত্বেও তিনি এক অনির্বচনীয় অন্তর্গত প্রেরণা থেকেই সব কাজ করেছেন। এই অনির্বচনীয় অন্তর্গত প্রেরণাকে জ্ঞানের উৎস বিবেচনায় উচ্চতর স্বজ্ঞা বা পারফেক্ট ইন্টুইশন ছাড়া আর কী বলা যায়?
স্বজ্ঞা বা প্রত্যাদেশ হচ্ছে জ্ঞানের শতভাগ নির্ভুল উৎস। স্বজ্ঞা হলো নিম্নমানের প্রত্যাদেশ। আর প্রত্যাদেশ হলো উচ্চ মানের স্বজ্ঞা।
Ibrahim Hossain: এইবার বুঝে আসছে। ধন্যবাদ।
খুবই চমৎকার ।কিন্তু এত বড় লেখায় কোনো হাদীসের রেফারেন্স পেলাম না।
বুদ্ধি বা যুক্তি আর জ্ঞান এক নয়। যুক্তির কারণে আযাযিল থেকে ইবলিস হয়েছে। আর যেহেতু আল্লাহর হুকুম বুঝি আর নাই বুঝি হয়তো হেকমত রয়েছে মান্য করা দায়িত্ব – এর নাম জ্ঞান। আপনার লেখার ৩ নং দলীলে আয়াতের অনুবাদ সঠিক নয়। তবে আপনার লেখনিতে আপনাকে পজেটিভ মনে হচ্ছে। চালিয়ে যান। দোয়ার দরখাস্ত।