তারিক রমাদানের সমালোচনার দুঃসাহস কেন? কৈফিয়ত:
বর্তমান দুনিয়ায় ‘স্মার্ট ইসলামিস্টদের’ প্রায় সবার কাছে ড. তারিক রমাদান রীতিমতো একটা ক্রেজ, স্বপ্নের মতো একটা কিছু, বলা যায় দ্যা টপ-মোস্ট আইকন। আমার কাছেও তিনি অতি বড় চিন্তাশীল জ্ঞানী। টপ চার্টের এক নম্বরের মতো। এ মাসের শুরুর দিকে উনার ব্যক্তিগত সাইটে ‘Beyond Islamism’ শিরোনামের প্রবন্ধটি আপলোড করার পর হতে সারা বিশ্বব্যাপী এটি ব্যাপকভাবে পঠিত ও প্রসংশিত হয়েছে। সংস্কারবাদী তরুণ ও মেধাবী দায়িত্বশীলদের একটা ফোরামে শেয়ার হওয়ার পর এটি প্রিন্ট করে ভালোভাবে পড়ে বুঝার চেষ্টা করেছি।
আদর্শ ও তত্ত্বগত ব্যাপারে দুনিয়াতে এটি একটি বড় ট্রাজেডি যে, প্রচলিত ধ্যান-ধারণার সাথে একমত হতে না পেরে মুক্তচিন্তার কথা বলে যিনি বা যারা স্বীয় দ্বিমতের বিষয়গুলোকে প্রবল বাধার মুখেও প্রকাশ করেছেন ও প্রচার করেছেন, পরবর্তীতে তার বা তাদেরই অনুসারীরা ‘গুরুর তরীকা’ বেমালুম ভুলে যান! এসব সিনসিয়ার ফলোয়ারদের বুদ্ধিজীবিতা স্বীয় আইকন-গুরুজনের মতাদর্শের টীকা-টিপ্পনী ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে সীমিত হয়ে পড়ে। মার্কস বলুন আর মওদূদী বলুন, দুঃখজনকভাবে সবার ক্ষেত্রেই এমনটা ঘটেছে। একজন বুঝজ্ঞানের মুসলিম হিসাবে তাই নবী-রাসূল ছাড়া কাউকেই যুক্তি, প্রশ্ন ও সমালোচনার ঊর্ধ্বে মনে করি না।
নবী-রাসূল ছাড়া কারো কথাকে সমালোচনা ও যাচাইয়ের ঊর্ধ্বে মনে না করার ব্যাপারে তাত্ত্বিকভাবে সব মুসলমানেরা একমত হলেও বাস্তবে নিজ নিজ ‘মাজহাবের’ ইমামের ব্যাপারে তারা তাকলীদপন্থী হিসাবেই তুষ্ট থাকেন! সময়-সুযোগ মোতাবেক বিরুদ্ধমতের সাথে ‘বাক্য-জিহাদে’ও লিপ্ত হন! প্রচলিত ইসলামী আন্দোলনের সংস্কারের ব্যাপারে সিরিয়াস স্কলারদের এমন একটা সাধারণ প্রবণতা লক্ষ্য করছি যে, রিনাউন্ড ইসলামিস্টের পরিচিতি নিয়ে কেউ যখন প্রচলিত ধারার ইসলামী আন্দোলনের ব্যাপারে নেতিবাচকভাবে কিছু বলেন তখন এসব সংক্ষুব্ধ মেধাবীদের কাছে সেটি খুব ভালো লাগে। কারণ, সংশ্লিষ্ট লেখক বা বক্তা যত কথাই বলুন না কেন তার সব কথার মূল কথা হিসাবে এ ধরনের কথা থাকে যে, ‘প্রচলিত ইসলামী আন্দোলনে যা চলছে তা দিয়ে হবে না, … এসব বাদ দিতে হবে, নতুন করে সব শুরু করতে হবে, বিকল্প লাগবে …’ ইত্যাদি।
আমার দৃষ্টিতে পুরো বিষয়টি এক ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক ইনকনসিস্টেন্সি ও অস্থিরতার বহিঃপ্রকাশ মাত্র।
কারো অধিকাংশ কথার সাথেই ঐক্যমত পোষণ করা সত্ত্বেও যেসব পয়েন্টের সাথে তিনি একমত নন তা নির্দ্বিধায় তুলে ধরার অধিকার সংশ্লিষ্ট সকলের থাকা উচিত। এছাড়া কোনো কথা বা পয়েন্ট স্পষ্ট না হলে লেখকের কাছে অকপটে জানতে চাওয়ার অধিকার থাকাও জরুরি। কোনো কারণে লেখক পর্যন্ত পৌঁছতে না পারলে যারা সংশ্লিষ্ট লেখাটা পড়ে বিভিন্ন পয়েন্টে ইতোমধ্যেই একমত বা দ্বিমত প্রকাশ করছেন, তাদের কাছ হতে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ব্যাখ্যা ও তাৎপর্য জানতে চাওয়া দোষণীয় নয় মনে করি। তারিক রমাদানের ‘বিয়ন্ড ইসলামিজম’ নিয়ে আমার এই ‘অযাচিত’ ক্রিটিক এই ধাঁচের চিন্তাভাবনার ফলশ্রুতি।
***
প্রবন্ধের শুরুতে তিনি রাজনৈতিক ইসলামবাদের যৌক্তিকতা সত্ত্বেও আপাতত এটিকে পাশে রেখে নতুন করে সামাজিক অর্থে ইসলাম চর্চায় উত্তরণ ঘটানোর কথা প্রস্তাব করেছেন বলে আমার ধারণা। যদি তাই হয় তাহলে উনার ‘Islamism—or “political Islam”—is not dead. Those who have proclaimed its demise, or trumpeted the advent of a “post-Islamist” era, are wrong … we must go beyond political Islam, and develop a critique of Islamism in all its forms.’ – এই কথাগুলোকে আমি ভুল হিসাবে চিহ্নিত না করলেও ভাষাগত অস্পষ্টতার কারণে অনেকেই একে মিসলিডিং অর্থে বিভ্রান্তিকরও মনে করতে পারে। এখানে তিনি প্যারার শুরুর বাক্যে ইসলামিজম এবং পলিটিক্যাল ইসলামকে সমার্থক বা আইডেন্টিক্যাল হিসাবে উল্লেখ করেছেন আবার প্যারার শেষের দিকে এসে পলিটিক্যাল ইসলামকে পেরিয়ে গিয়ে ইসলামিজমের কথা বলেছেন। অবশেষে ইসলামিজমকেও পরিত্যাগের কথা বলেছেন।
লক্ষ্য করেছি, প্রলিফিক রাইটাররা মাঝে মাঝে এমন ধরনের বহু-অর্থবোধক (ambiguous) কথা বলেন যাকে তিনি প্রয়োজন মোতাবেক যে কোনো দিকে ঘুরিয়ে দিতে পারেন! আমি মনে করি এ রকম একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধের কী-ওয়ার্ডগুলো অর্থবহতা ও বোধগম্যতার দিক হতে অধিকতর ডিস্টিংক্ট ও প্রেসাইজ হওয়া জরুরি।
বক্তব্যের শুরুতে যে তিনটা পয়েন্টকে তিনি ক্লারিফাই করার চেষ্টা করেছেন তার দু নম্বরটি হচ্ছে ইসলামিজম বলতে কী বুঝায় তা নির্ধারণে প্রচলিত স্ববিরোধ ও অস্পষ্টতা। মধ্যপ্রাচ্যের বাদশাদেরকে কেন ইসলামিস্ট বলে চিহ্নিত করা হয় না, সোজা কথায়, ইসলামিস্ট বলে কেন তাদেরকে ট্যাগ করা হয় না বা গালি দেয়া হয় না তা নিয়ে তিনি (সংগত কারণেই) কটাক্ষ করেছেন। এ পর্যায়ে তিনি ‘পলিটিক্যাল ইসলামিজমের’ ধারক ও বাহকদেরকেই ইসলামিস্ট হিসাবে হাজির (mean) করেছেন– …No one knows exactly who or what “Islamism” means. … While the focus of this article is on the reformist and legalist movements….” এখানে তিনি মিশরের ব্রাদারহুড ও তিউনিশিয়ার আননাহদাকে রিফর্মিস্ট-লিগালিস্ট (ইসলামিস্ট) হিসাবে বলেছেন।
এর পরে, ‘The time has come go beyond Islamism’ বলে তিনি ইসলামিজমের যে পরিচিতি ও সূচনাপর্ব তুলে ধরেছেন তারমধ্যে একদেশদর্শিতার সমস্যা পরিলক্ষিত হয়– When, in the early twentieth century, the first manifestations of Islamism took root and organized form in the Middle East, Africa and Asia, most of them shared a triple objective : (1) to free their societies from colonialism, (2) to return to Islam in order to resist cultural Westernization, and (3) to expound theses and principles … of … social justice. They … believed … that the nation-state was the best vehicle…
পাশ্চাত্য রাজনৈতিক প্রপাগান্ডাবাদী স্কলারগণ তথাকথিত ইসলামিজমকে বিংশ শতাব্দীর ব্যাপার হিসাবে বলতে পারেন অথবা বলে থাকেন যেটি আদৌ সত্য নয়। তারিক রমাদান এটি নিছক উদ্ধৃতি হিসাবে বলেছেন বলেও মনে হয় না। এখানে এসে তিনি কি বিংশ শতাব্দীর পূর্বকার সব উল্লেখযোগ্য ইসলামী পুনর্জাগরণ আন্দোলনকে দৃশ্যত এড্রেস বা একোমোডেট করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি, মূলত পাশ্চাত্য ঘরানার ও সে হিসাবে অনেকটাই একপেশে। এছাড়াও জামায়াতে ইসলামীর মতো একটা বড় সংগঠন ও আন্দোলন যে জাতিরাষ্ট্র গঠনের সংগ্রামে অংশগ্রহণ করা হতে বিরত ছিলো, তার উল্লেখ, ইশারা বা প্রেক্ষিত বর্ণনা না করে উল্টো তিনি কথার মারপ্যাঁচে লাতিন আমেরিকার ‘লিবারেশন থিওলজি’র পতাকা ঢালাওভাবে সব ইসলামিস্ট শিবিরের উপর লাগিয়ে দিয়েছেন!
এর পরবর্তীতে রাষ্ট্র ক্ষমতার জন্য জান কোরবান হওয়ার বাহিরে অর্থনীতি, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিষয়ে ইসলামিস্টদের দৃশ্যমান তাচ্ছিল্যভাবের বিষয়ে তিনি যা বলেছেন তা অতীব সত্য ও অসাধারণ– …Islamist organizations, such as the Muslim Brotherhood and other legalist and reformist groups, have not kept pace with world-historical developments, with shifts in international relations, and, most of all, with the new paradigm of globalization. In addition, state power, which in the beginning was understood as a means to social, political, economic and cultural reform, emerged as an end in itself … their obsession with the state eventually led to them neglecting fundamental economic issues, major cultural concerns, and even failing to address the basic questions of freedom, citizenship and individual autonomy. … the Islamists have become a reactionary force that, in the name of pragmatism, with one compromise after another, have preserved their religious references while voiding them of their potential for social, economic and cultural liberation. অবশ্য এই কথাগুলো ভারতীয় উপমহাদেশের জামায়াতে ইসলামীর জন্য যতটা প্রযোজ্য, আরব বিশ্বের ইখওয়ান ও তদনুরূপ সংগঠন ও দলগুলোর জন্য ততটা প্রযোজ্য কিনা – তা প্রশ্নসাপেক্ষ।
নেতৃস্থানীয় ইসলামিস্টদের জন্য কিছু পরিশীলিত গালি থাকায় এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনৈতিক ইসলামপন্থী নেতৃত্বের মোটাদাগের ব্যর্থতায় বিরক্ত ও হতাশ আধুনিক ইসলামিস্টদের কাছে তারিক রমাদানের এই লেখাটি বেশ ভালো লাগাই স্বাভাবিক। কোনো সাহিত্যকর্মের অংশবিশেষ বিশেষভাবে ভালো লাগার কারণে সেটি সামগ্রিকভাবে পাঠকপ্রিয় হতে পারলেও একটি প্রবন্ধের ক্ষেত্রে উপস্থাপিত বিষয়াদি আগাগোড়া সামঞ্জস্যতাপূর্ণ হওয়া বাঞ্ছনীয়। পলিটিক্যাল ইসলাম থেকে ইসলামিজম পেরিয়ে কোথায় যেতে হবে তা তিনি আদৌ বলেননি। পূর্বেই বলেছি, আমার পর্যবেক্ষণে, এই প্রবন্ধে তিনি পলিটিক্যাল ইসলাম ও ইসলামিজমকে সাবস্টেনশিয়ালি ডিফারেন্ট হিসাবে আইডেন্টিফাই করে দেখাতে পারেননি অথবা কোন কারণে দেখাননি। পলিটিক্যাল ইসলামিস্টদের কিছু প্রশ্নসাপেক্ষ ও কিছু সত্যিকারের ব্যর্থতাকে স্বয়ং পলিটিক্যাল ইসলাম বা ইসলামিজমের সামগ্রিক বা চূড়ান্ত ব্যর্থতা হিসাবে দাবি করা কি ঠিক?
তিনি বলছেন, The Islamists, today, have no credible or viable economic alternatives to offer. In the name of their obsession with international recognition, they have bowed down before the imperatives of the dominant capitalist economy.
এখানে পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার যে কড়া সমালোচনা তিনি করেছেন তা তাঁর লেখা ও কথার একটা কমন ট্রেন্ড। পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থাকে বিদ্রুপ করে উনি ‘হালাল ক্যাপিটালিজম’ নামে একটা ইন্টারেস্টিং টার্মও কয়েন করে থাকেন। উনার পুঁজিবাদবিরোধী বক্তব্যের মূলসূত্র হলো ইউরোপ-আমেরিকার বিরোধিতা। এই প্রবন্ধেরই পূর্ববর্তী একস্থানে তিনি পেট্রো মনার্কি বলে আমেরিকাপন্থী সাউদী রাজতন্ত্রের সমালোচনা করেছেন। আমার দৃষ্টিভঙ্গিগত অবস্থানের দিক থেকে এসব ঠিকই আছে। সমস্যা হলো ইসলামিস্টদের কিছু ব্যর্থতাকে যেমন তিনি ঢালাওভাবে ইসলামিজমের ব্যর্থতা হিসাবে তুলে ধরেছেন, তেমনি নেতৃস্থানীয় কিছু পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থাভিত্তিক দেশের সাম্রাজ্যবাদী ভূমিকার কারণে তিনি আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে পুঁজিবাদের বিরোধিতা করার ব্যাপারে প্রতিক্রিয়াশীলতা প্রদর্শন করেছেন।
যে কোনো মতাদর্শেরই কোনো না কোনো খারাপ প্রবণতা থাকে। শুধুমাত্র এতটুকুর জন্য স্বয়ং মতাদর্শটিই বাতিলযোগ্য হতে পারে না। গণতন্ত্রের খারাপ প্রবণতা হলো ছদ্মবেশী স্বৈরতন্ত্র ও কোয়ান্টিটি-কোয়ালিটি দ্বন্দ্ব, সমাজতন্ত্র ও কম্যুনিজমের সমস্যা হলো একনায়কতন্ত্র ও বস্তুবাদ, জাতীয়তাবাদের সমস্যা হলো জাত্যাভিমান ও সাম্প্রদায়িকতা। এভাবে প্রতিটি মতবাদেরই কোনো না কোনো খারাপ প্রয়োগ আছে বা হতে পারে। ধর্মের অপব্যবহারের কথা না-ই বা বললাম। দুনিয়ার সবকিছুরই একটা না একটা খারাপ প্রবণতা (malafide implication) থাকার মানে এই নয় যে, সবকিছুকে বাদ দিয়ে এবং সব সময় এক ধরনের seclusionist reactionism-এ ভুগতে হবে! ধর্মনিরপেক্ষতা যতটা ইসলামবিরোধী, গণতন্ত্রও ততটা ইসলামবিরোধী। দ্বিতীয়টি আমাদের গা সওয়া হয়ে গেছে, এই যা। তুরস্কের লোকদের প্রথমটিও গা সওয়া (adapted) হয়ে গেছে। দুনিয়ার সব (মানবরচিত) মতাদর্শের সাথে ইসলামের কোনো না কোনো বিরোধের পাশাপাশি মৌলিক সাযুজ্যতাও আছে। এখন গ্লাসের অর্ধেকটা খালি বলবো, নাকি অর্ধেকটা ভরা বলব – তা যার যার দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভর করে।
মজার ব্যাপার হলো, তারিক রমাদান adaptation, inclusion, integration, own করা – এসবের পক্ষেই সাধারণত বলেন। তৎসত্ত্বেও তিনি অর্থনীতির প্রসঙ্গ আসলে পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সব ভদ্র গালিগুলো প্রয়োগ করতে থাকেন। এখানেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। উল্লেখ্য, সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার বিরুদ্ধে তিনি কখনো কিছু বলেছেন বলে শুনিনি। পুঁজিবাদ সমাজতন্ত্রকে মোকাবিলা করতে গিয়ে সত্যিকারের কল্যাণরাষ্ট্রের যে সফল ও বাস্তব প্রয়োগ ঘটিয়েছে তা নিঃসন্দেহে পুঁজিবাদের ভিতর থেকেই উঠে আসা (intrinsic) মৌলিক রূপান্তর।
ইসলাম একটা স্বয়ং ব্র্যান্ড – এ কথা যতখানি সত্য, অপরাপর সকল ব্যবস্থার সুষম সমন্বয় হলো ইসলাম – এ কথাও ততখানি সত্য। দুটোকেই ভয়েস করতে হবে।
আলোচ্য প্রবন্ধের পরবর্তী অংশে তিনি তুরস্কের ক্ষমতাসীন ‘ইসলামিস্টদের’ একহাত নিয়েছেন – It is all well and good to celebrate Turkey’s economic success, not to mention its leaders’ demonstrated competence and pragmatism (while not forgetting to criticize the absence of some basic freedoms, and the tendency to monopolize power)। তুরস্কে মৌলিক স্বাধীনতার মৌলিক ঘাটতি আছে আর পাওয়ার মনোপোলাইজ করা হচ্ছে – এমন অভিযোগ গেজি পার্কের লোকজনের বাহিরে কাউকে বলতে শুনি নাই।
যখন ইসলামী শরীয়াহর কাঠামোতে তৎকালীন জাহেল আরবের অনেকগুলো প্রচলিত বিষয়কেও হুবহু গ্রহণ করা (accommodate অর্থে) হয়েছে, তখন তারিক রমাদানের মতো সুবিজ্ঞা লোকেরাও যখন a clear, original, truly imaginative political project-এর মতো ধোঁয়াটে (ambiguous) কথা বলেন তখন আর হতাশ না হয়ে পারা যায় না। লক্ষ্য করুন, তিনি বলছেন, Islamism has become an ideology of means and of management. It has nothing to offer in terms of broader significance… ইসলামিজমের যদি আর দেয়ার কিছু না থাকে তাহলে পরবর্তী era’র জন্য তিনি যে original, truly imaginative political project এর কথা বলছেন, তা কী? এ ধরনের সম্ভাব্য প্রশ্নের উত্তরে তিনি কিছু কাজের কথা (practical or pragmatic proposal) বলেছেন যা তথাকথিত পলিটিক্যাল ইসলাম বা ইসলামিজমেরই অন্তর্গত বিষয়াবলীর অন্তর্ভুক্ত, যদিও সেগুলোর বাস্তবায়নে অবহেলা করা হয়েছে। তাত্ত্বিক কাঠামোর ভেতরে থাকা কিন্তু অবহেলিত বিষয়ে (aspect) যথাযথভাবে গুরুত্বারোপ করাকে, সেগুলোকে বাদ দেয়া বা অতিক্রম করে যাওয়া অর্থে নিতে হবে কেন?
প্রবন্ধের এ পর্যায়ের তিনি সাইয়েদ বদিউজ্জামান নূরসীর ছাত্র ফতেউল্লা গুলেনের মতাদর্শের অনুরূপ এক অরাজনৈতিক (apolitical) আধ্যাত্মিক ভাবধারা ও সামাজিক কর্মসূচিভিত্তিক বৌদ্ধিক আন্দোলনের প্রস্তাব করছেন। এটি ভালো। তবে তা ততক্ষণ বা ততটুকু ভালো যতক্ষণ তা কোনো না কোনো রাজনৈতিক প্লাটফরমের পাশাপাশি বা সামনে-পেছনে কাজ করে। তারিক রমাদান কর্তৃক তুরস্কের ক্ষমতাসীনদের একতরফা সমালোচনা সত্ত্বেও এমনটাই ঘটেছে সেখানকার সামাজিক-রাজনৈতিক বর্তমান বাস্তবতায়। এটি ঠিক যে, কোথাও কোথাও মুসলিম সংগঠনগুলো অতিমাত্রায় রাজনৈতিকতায় জড়িয়ে পড়েছে। আসলে রাজনীতি বেশি করার জন্যই এমনটা হয়েছে, তা নয়। বরং রাজনীতির পাশাপাশি অন্যান্য সমগুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো যথাযথভাবে বা সমানতালে না করার কারণে রাজনৈতিক ময়দান এক ধরনের ভারসাম্যহীন বিকাশের (imbalance growth) শিকার হয়েছে। এই সুযোগে পাশ্চাত্যের প্রচারমাধ্যম একজোট হয়ে রাজনৈতিক ইসলাম নামের একটা নেগেটিভ ট্যাগ ইসলামী আন্দোলনগুলোর উপর চাপিয়ে দিয়েছে। এ ধরনের একতরফা ট্যাগিং অনাকাংখিত হলেও এটিকে at once বাদ দেয়ার (denounce) পরিবর্তে একে ব্যালেন্সে রাখার চেষ্টা করতে হবে। যার পদ্ধতি হলো ইসলামী দল ও সংগঠনসমূহের প্লুরালিজম অর্থে সত্যিকারের স্বাতন্ত্র্যমুখীনতা ও বহুমাত্রিকতার চর্চা।
Muslim majority societies are crying out for an intellectual revolution, a revolution that is as radical in its essence as it is courageous in its objectives. …actually a “philosophy of law -, must be thought for the notion of freedom : we need a “philosophy of liberty” that cannot be constricting, reactive or dogmatic but must be broad, holistic and liberating, valid for women and men alike. – এ কথাগুলো মূলত প্রায়োগিক ও সঠিক।
এর পরবর্তী প্যারায় তিনি তরুণ সমাজকে লক্ষ্য করে যা বলেছেন তা হেদায়াতমূলক কথা হিসাবে নির্দোষ ও আমলযোগ্য।
প্রবন্ধের পরবর্তী অংশেও তিনি নীতিগত কিছু নির্দেশনামূলক কথা বলেছেন যার উল্লেখযোগ্য অংশ হলো – The challenges are huge, but in freeing itself from the obsession with “politics”, a thought-based movement must elucidate the terms of a counter-power that sees the liberation of peoples through education, social involvement, alternatives to the dominant economy, through cultural and artistic creativity. এখানে alternatives to the dominant economy’র মতো অস্পষ্ট অংশটুকু ছাড়া বাদবাকি কথাগুলো নির্দেশনা হিসাবে যথেষ্ট গুরুত্ববহ।
অভ্যন্তরীণ সেক্টারিয়ান কনফ্লিক্টগুলো সম্পর্কে এ পর্যায়ে যা বলেছেন তাও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ – The question of internal divisions, between Sunnis and Shi’a and between conflicting schools of thought (even between religious and secular), must take priority. The issues that fuel this division are often serious, but just as often patently ridiculous. It is the obligation of the scholars, of free intellectuals and activists to release themselves from the trap.
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিকের উপর এরপরে তিনি আলোকপাত করেছেন– Not only is it urgent to establish relations between the North and the Global South, and leave behind the biased “Islam-West” nexus ; it is vital that we explore the potential of new educational, scientific and cultural partnerships with the peoples of Latin America, Africa and Asia.
একজন সুবিজ্ঞ নামকরা ইসলামিস্ট হিসাবে তিনি পুরো প্রবন্ধে সাহিত্য-সমৃদ্ধ কথার যে ফুলঝুড়ি ছড়িয়েছেন তা বিমুগ্ধ পাঠকের চোখে ছোট গল্পের মতো শেষ হয়েও যেন হইলা না শেষ…। ড. তারিক রমাদানের মতো টপ-মোস্ট ইসলামিস্ট বুদ্ধিজীবির কাছ হতে একটি অধিকতর সুসামঞ্জস্য প্রবন্ধ প্রত্যাশিত থাকলেও আবেগ ও প্রেরণা নিঃসরণের দিক হতে নিঃসন্দেহে এটি একটা সফল লেখা।
শেষের প্যারায় তিনি বলছেন– The contemporary Muslim conscience must … renew its commitment to the reformative and near-revolutionary power of the human and spiritual content of its tradition, which calls equally for reconciliation with self and openness to others. এটি অর্জন করার জন্য পলিটিক্যাল ইসলাম ও ইসলামিজম নামক পাশ্চাত্য-আরোপিত যে ব্যবস্থা, অবস্থা ও মতাদর্শকে বর্জন করার কথা তিনি বলেছেন তা কতটুকু textual ও যুক্তিসংগত, বা যুক্তিসংগত হলেও তাঁর কথায় এর বিকল্প ব্যবস্থাটি আদৌ পরিষ্কার হয়েছে কিনা তা দেখার ভার পাঠকের উপরই রইলো। তিনি বলেছেন, The Islamists of today have developed a conservative message, one that seeks only to adapt. The contemporary Muslim conscience must free itself from this message …!?
সর্বশেষে বলেছেন, The paradox lies in the fact that today’s Muslims, lacking self-confidence, are the wardens who hold in their trembling hands the keys of their own prison. এটিকে প্যারাডক্স নয়, এক ধরনের ফ্যালাসি বলা যায়। যাহা সত্যও নয় মিথ্যাও নয়, তা-ই হলো প্যারাডক্স; আর যা সত্য মনে করা হয় অথচ আসলে মিথ্যা তা হলো ফ্যালাসি। যে বন্দীর হাতে স্বীয় গরাদের চাবি আছে অথচ তালা খুলে বের হয়ে যাওয়ার মতো মনোবল নাই, এমন বন্দীর অবস্থার সাথে তিনি মুসলমানদেরকে তুলনা করেছেন। এ জন্য তিনি stupidity’র মতো টার্ম ব্যবহার করতে না চাইলেও paradox-এর মতো কনফিউজিং ওয়ার্ডিংয়ের পরিবর্তে fallacy বা self-contradiction জাতীয় শব্দ ব্যবহার করতে পারতেন। ধন্যবাদ।
ফেসবুক থেকে নির্বাচিত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Ahmad Musaffa: অনেকগুলো পয়েন্টে আলোচনা করেছেন। সংক্ষিপ্তভাবে কিছু বিষয়ে বলব:
১) তারিক রামাদান গুলেনের হিযমেত মুভমেন্টের আদলে post Islamism-কে দেখছেন না। তাত্ত্বিক দিক দিয়ে যেমন কিছু ক্ষেত্রে মিল আছে আবার অমিলও আছে।
২) তুর্কিতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা পশ্চিমের তুলনায় কম। সেখানে অনেক সাংবাদিক কারারুদ্ধ। তাছাড়া কুর্দি সমস্যার কারণে সরকার অনেক সময় দমনমূলক ব্যবস্থা নেয়।
৩) তারিক রামাদান মনে করেন, পুঁজিবাদের বিপক্ষে ইসলামিস্টরা এখনো চোখে পড়ার মত কোনো সিস্টেম দাঁড় করাতে পারেনি। তিনি লিবারেল ক্যাপিটাল ইকোনোমির বিরুদ্ধে লিখেন। কারণ, যতদিন মানুষ পুঁজিবাদের করাল গ্রাস থেকে অর্থনৈতিকভাবে মুক্ত হতে না পারবে, ততদিন কেবল রাজনৈতিক স্বাধীনতা দিয়ে মুক্তি মিলবে না।
৪) গত শতাব্দীতে যেভাবে মুসলিম ব্রাদারহুড এবং জামায়াতের মতো ইসলামী সংগঠনগুলো দানা বেঁধেছে, এর আগে মুসলিম দেশগুলো যখন পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদের কাছে করতলগত হচ্ছিল তখন এরকম সংগঠন গড়ে উঠতে দেখা যায়নি। তারিক রামাদান মূলত মুসলিম ব্রাদারহুড এবং জামায়াতে ইসলামীর মতো দল এবং তাদের তাত্ত্বিক বিচার বিশ্লেষণগুলোকে কলোনিয়ালিজমের কনটেক্সটের আলোকে বিচার করাকে যুক্তিযুক্ত মনে করেন। এর কারণ হচ্ছে একজন আলেম যদিও উত্তরাধিকার সূত্রে যথেষ্ট ঐতিহাসিক উপাদান লাভ করেন, তারপরেও তিনি যত বড় আলেমই হন না কেন তাঁর বিচার বিশ্লেষণগুলো কখনই context-free নয় ।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ১. Post-Islamism ইত্যাদি কথাগুলো নিতান্ত পাশ্চাত্য ঘরানার। যে কোনো সেন্সিবল লোক প্রশ্ন করতে পারে, ইসলাম-উত্তর অর্থাৎ ‘ইসলামবাদ’ (Islamism) নিয়ে চলবে না বুঝলাম। তাহলে এর পরবর্তী ধাপ কী হওয়া উচিত? Other than Islam itself.
সাধারণ লোকদের জন্য কোনো লেখা সাধারণের বোধগম্য উচিত নয় কি?
২. আমার মনে হয় উন্নয়নশীল যে কোনো দেশে স্থিতিশীল শাসনব্যবস্থা কিছুটা স্বৈরতান্ত্রিক হওয়াটা অবশ্যম্ভাবী। আমাদের দেশের প্রথম আলো গংয়ের অবস্থা দেখে তা কিছুটা আন্দাজ করা যায়। রাজনৈতিক মতাদর্শসমূহের পারস্পরিক সংঘাতে সফলভাবে দেশ শাসনে নিয়োজিত দল ও এর নেতৃত্বের ব্যাপারে বিরোধী দলের তরফ হতে এ ধরনের অভিযোগ আসাটা স্বাভাবিক। মাত্রা হচ্ছে ব্যাপার। তুরস্কের ব্যাপারে বিরোধীদের অভিযোগ নিয়মতান্ত্রিক।
তুর্কিরা যেখানে ইইউর সদস্যপদ চাইতেছে, সেখানে তারা নিজেরাই এ বিষয়ে সচেতন। সেখানে মৌলিক মানবাধিকারের এতটা বিপর্যয় ঘটেনি যতটা তারিক রমাদান লিখেছেন।
৩. আসলে পয়েন্টটা হলো অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, পুঁজি থেকে মুক্তি – এসব সস্তা কম্যুনিস্টিক কথাবার্তা। আমাদের ঠিক করতে হবে দুনিয়ার তাবৎ বাদ অর্থাৎ মতবাদগুলো নিয়ে আমরা কী করবো। সবগুলোকে বাদ দিয়ে এক অনন্য (seclusioinst) ইসলাম নিয়ে কিয়ামতের আগ পর্যন্ত সওয়াবের নিয়তে শ্লোগান দিয়ে যাবো, নাকি সবগুলোকে ইসলামের মূলনীতির ছাঁকনির মধ্যস্থতায় গ্রহণ করে নেব। আমরা, যাদেরকে পশ্চিমরা ইসলামিস্ট বলে, আর আমরা নিজেদের ইসলামী আন্দোলনের কর্মী দাবি করি, আমাদেরকে এই মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করতে হবে।
এ বিষয়ে আমি pro-active ও inclusionist অবস্থান গ্রহণের পক্ষপাতি। এই দৃষ্টিতে পুঁজিবাদকে ঢালাওভাবে গালি দেয়ার যে কোনো প্রবণতাকে আমি ভুল মনে করি।
বুদ্ধিবৃত্তি, চিন্তা ও মননশীলতার বিশ্বব্যাপী যে ধারা তা দৃশ্যত পুঁজিবাদবিরোধী সমাজতান্ত্রিক ধারায় গড়ে উঠেছে। হয়তো এর একটা প্রভাব তারিক রমাদানসহ ইসলামী আন্দোলনপন্থীদের উপর পড়েছে।
৪. তারিক রমাদানকে আমরা যেভাবে জানি, উনার অনেক লেখা যারা পড়েছেন, অনেক বক্তৃতা শুনেছেন, তারা সেভাবে মনে করবেন যেভাবে আপনি মনে করেছেন। তিনি political Islamist বলতে post-colonialism-এর যুগকে বুঝিয়েছেন, এটি উনার এই প্রবন্ধে স্পষ্ট নয়। উনার পক্ষে আপনিসহ অনেকের interpretative defense-কে ভুল ছাপাকে শুদ্ধ করে পড়ার মতো মনে করছি।
Ahmad Musaffa: তারিক রামাদানকেও তার কনটেক্সটের আলোকে দেখতে হবে।
ইসলামের বিভিন্ন টার্মের ব্যাপারে Abu Sulaiman-এর উপদেশটা মনে থাকবে। আমাদের টার্মগুলো আসলে কী হওয়া উচিত, সেটা নিয়েও ভাবতে হবে। Islamism যদি ধরে নেই, তাহলে Post-Islamism অবশ্যই দৃষ্টিকটু। যেমন কম্যুনিজম কিন্তু কম্যুনিজমই। এখানে পোস্ট-কম্যুনিজম বলতে কিছু নাই। কাঠামোগত কিছু পরিবর্তন আসতে পারে, তবে মৌলিক বিষয়ে এসব আদর্শ সবসময় একই থাকবে।
পুঁজি একটি অর্থনৈতিক বাস্তবতা। এটাকে অস্বীকার করার উপায় নাই। কিন্তু পুঁজির ব্যবহারে পুঁজিবাদের হেজেমনির কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে কী ধরনের খারাপ প্রভাব ফেলছে সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখাও আবশ্যক। ঢালাওভাবে পুঁজিবাদকে গ্রহণ করা বিপজ্জনক হবে। অবশ্যই বিকল্প সমাধান আসতে হবে।
H Al Banna: হয়ত ওয়েস্টে বসে দুনিয়াকে দেখলে আমরাও তারিকের মতো করেই দেখতাম।
তারিক রমাদান যে পদ্ধতিতে সামাজিক ইসলাম কিংবা সামগ্রিক আচরণগত ইসলামের কথা বলছেন, সেটা যদি এককভাবে পূর্ণাঙ্গ সংগঠনও হয়ে যায় সেটা নিশ্চই রাজনৈতিক ইসলামের পরিপূরক না হলেও সম্পূরক হবে। আর এটা অবশ্যই সত্য যে ঔপনিবেশিক পটভূমিতে যে রাজনৈতিক ইসলামের জন্ম তার বিস্তর সংস্কার দরকার। ষোল থেকে উনিশ শতক পর্যন্ত বোধহয় দুনিয়াটা একটু ভিন্ন রকমই ছিলো, একবিংশ শতক অনেক পথঘাট বদলে দিয়েছে। মঞ্জিল এক হলেও পথের এবং পথিকের পদ্ধতি এবং কৌশলগত পরিবর্তন না আসলে এইসব রক্তপাত যদি বিফলে যায়?
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ঔপনেবেশিক ও তৎপরবর্তী ইসলামপন্থার সংস্কার দরকার। এটি অপরিহার্য ও অবশ্যম্ভাবী। সমস্যা হলো, রাজনৈতিক ইসলামপন্থার অনেক মৌলিক সফলতার পাশাপাশি নানামুখী ব্যর্থতাকেই শুধুমাত্র ফোকাস করা হচ্ছে। রাজনৈতিক ইসলাম ও ইসলামপন্থার উত্তরণের (to go in the post era or beyond) কথা বলে ‘গোসলের পরে বাথটাবের পানির সাথে বাচ্চাটাকেও ফেলে দেয়ার ঘটনা’র মতো ভুল উচ্চারণ (wrong voice) করা হচ্ছে।
একজন বুদ্ধিজীবী ও চিন্তকের উপর পরিবেশ ও সময়ের প্রভাব পড়াটা অবশ্যম্ভাবী হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে যথাসম্ভব বৈশ্বিক হতে হবে। এ ক্ষেত্রে তাঁর কোনো ঘাটতি ও সীমাবদ্ধতা থাকলে অন্যদের অধিকার ও দায়িত্ব হলো সংশ্লিষ্ট সংশোধনীকে ভয়েস করা।
Mojibur Rahman Monju: অনেক অনেক ধন্যবাদ টিটু ভাই, বর্তমান সময়ে ক্রিটিকটি খুবই প্রাসঙ্গিক এবং প্রয়োজন ছিল। পরিবর্তিত (টার্কি, ইজিপ্ট, তিউনিসিয়া) প্রেক্ষাপটে সবাই তারিক রমাদানের বিশ্লেষণ এবং এরকম একাডেমিক আলোচনা থেকে চিন্তার খোরাক পাবে। জাজাকাআল্লাহু খাইরান।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ভাই, আপনি তো দেখি আমার ডাকনামটাকে পাবলিক করে ছাড়বেন। যাহোক, মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
Akhtar Mazumder: Excellent discussion. On the last para I humbly like to say that there are various definitions of the term paradox other than ‘logical paradox’
- Oxford Dictioary
paradox • n.
1) a seemingly absurd or self-contradictory statement or proposition that may in fact be true.
› an apparently sound statement or proposition which leads to a logically unacceptable conclusion.
2) a person or thing that combines contradictory features or qualities.
– DERIVATIVES paradoxical adj. paradoxically adv.
– ORIGIN C16 (orig. denoting a statement contrary to accepted opinion): via late L. from Gk paradoxon ‘contrary (opinion)’.
- Cambridge Advanced Learner’s Dictioary
Paradox n
paradox
a situation or statement which seems impossible or is difficult to understand because it contains two opposite facts or characteristics
[+ that] It’s a curious paradox that drinking a lot of water can often make you feel thirsty.
paradoxical
It seems paradoxical to me, but if you drink a cup of hot tea it seems to cool you down.
- “Originally a paradox was merely a view which contradicted accepted opinion. By round about the middle of the 16th c. the word had acquired the commonly accepted meaning it now has: an apparently self-contradictory (even absurd) statement which, on closer inspection, is found to contain a truth reconciling the conflicting opposites. . . .
“Some critical theory goes so far as to suggest that the language of poetry is the language of paradox.”
(J.A. Cuddon, A Dictionary of Literary Terms, 3rd ed. Blackwell, 1991)
- Paradox is a literary term meaning “a statement that appears to contradict itself.”
I think ‘political Islam’ is a misnomer purposively used by the anti-Islamists to segregate the near-perfect or comparatively perfect Muslims from the Muslim Ummah as a whole. We should clarify this in our writings. It is compartmentalization of Islam which Islam does not allow.
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আশ্চর্যের বিষয় হলো পশ্চিমারা মনে করে যাহা কিছু বুদ্ধিবৃত্তির সাথে সংশ্লিষ্ট তাহা সব তাদেরই একচেটিয়া। তারা আমাদেরকে খারাপভাবে চিহ্নিত করার জন্য পলিটিক্যাল ইসলামিস্ট হিসাবে বলে আর আমরা নিজেদের পরিচিতি হিসাবে সেটি অবাধে ব্যবহার করে যাচ্ছি! পলিটিক্যাল ইসলাম বনাম স্পিরিচুয়্যাল ইসলাম – এসব হচ্ছে বাতিল কথা।
তথাকথিত রাজনৈতিক ইসলামের ব্যর্থতার জন্য আমাদের অরাজনৈতিক হতে হবে, এটি প্রতিক্রিয়াশীলতা ও একদেশদর্শিতার নামান্তর মাত্র।
Abu Sulaiman: In fact, the term ‘Islamic movement’ or ‘Political Islam’ or others are not created by the Muslim or Islamic Scholars. Each and every one is created by the westerners. Since the westerners are creating the knowledge. They are leaders in using the terminology. So, we must be careful in using those or we must clarify the concepts of the terminology.
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: যাহা কিছু পাশ্চাত্যের তাহা সব হারাম, ‘বোকো হারাম’ টাইপের দৃষ্টিভঙ্গি যেমন ভুল তেমনি পশ্চিমা বিশ্ব আমাদেরকে যেভাবে দেখে, যে নামে ঢাকে তাহা সব শিরোধার্য – এই মনোভাবও অগ্রহণযোগ্য।
ইসলাম সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কিছু বোঝানোর জন্য সমকালীন অ্যাক্টিভিস্ট ও থিংকাররা যেসব শব্দ, পদ ও পরিচিতি ব্যবহার করে তা অনেকটাই চাপানো ও কৃত্রিম – আপনার এই টোনের কথাগুলো ভীষণ ভালো লাগে।
তারিক রমাদানের এই আর্টিকেলটার যে তর্জমা আপনি করেছেন তা গতিশীল ও প্রাঞ্জল হয়নি। এ বিষয়ে একটা পুরনো কথা বলে আপনাকে বিরক্ত করবো– অনুবাদ হলো স্ত্রী বা বান্ধবীর মতো। সুন্দরী হলে বিশ্বস্ত হবে না, আবার বিশ্বস্ত হলে সুন্দর হবে না। আমি সৌন্দর্যের ভক্ত!
Abdul Mannan: আপনার সমালোচনাটি সঠিক। তার চিন্তা তেমন প্রিসাইজ নয় বলে আমার মনে হয়।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আসুন না, এ নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা একটা সেমিনার করি…।
এম এন হাসান: Salam. Just couple of weeks ago I was discussing with Dr. Imran vai of Manchester University, Secretary General of Islamic Forum of Europe (IFE). He became the youngest professor of Economics in Manchester/UK.
Asked him why Islamist fails to offer any Economical alternative as they did (somehow) to politics? (Perhaps My question was inspired by Tariq Ramadan’s current point that Islamist fails to offer alternative Economic model then Islamic version of Capitalism which he laughingly labeled as ‘Halal Capitalism’)
Dr. Imran vai by being an academic in Economics believes that All the works on so called Islamic Banking/finance is just philosophy not science. He continues that What Umar Chapra has written, even 10% not applied yet! He stated that Islamist/Muslim scholar failed or yet not able to produce a “Model” as an alternative Economic system though philosophically we propagate Islamic Economy is the alternative to capitalism/capitalist economic model.
Without any practice Economic Model, we Muslim never behind to claim our superiority above all existing ideology!
Well, philosophically it’s may be ok, but according to Dr. Imran vai unless we can produce (which needs huge investment to research) we can’t make model. Unless we make model, we can’t escape capitalism.
Now, TARIQ RAMADAN is a philosopher like you (see things philosophical point of view), who (Tariq) have ability to go deep and deeper to clarify philosophical standing of an Issues that may convince his lay Muslim audience. when he says we need to go beyond Islamism with all the logics, I agree because we need to go beyond but question is how? This answer may not produce by Philosopher like Tariq but Muslim political scientists like late Dr. Kalim Siddiki or Dr. Abdel Wahab Afendi (if they philosophically convince that we Muslim need it). Looking at your fair criticism same point came to my mind. You just criticise a critic without proposing real task that to be produce! Never mind. Actually political scientists and Economists and philosopher and activists has to work together to develop “MODEL”. Enough philosophy has been developed from Maududi to Sayed Qutub and current Ghannouchi but it’s time to develop scientific model of future Islamic activism.
JazakAllah for presenting such a wonderful criticism.
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ইসলাম ছাড়া আর যত তাত্ত্বিক মত-পথ আছে সবই ইসলামের বিকল্প বা alternate। ইসলামের পক্ষধারীরা ইসলামেই থাকবেন। না হলে তারা ইসলামী হবেন না। এটি স্বাভাবিক। সমস্যা বা ব্যাপার হলো দুইটা:
ক. ইসলামের সাথে কোনো কিছুর বনাম হতে হলে আমাদেরকে প্রথমে দেখতে হবে কথিত বিকল্প বাদটি একটি পূর্ণাঙ্গ ও প্রতিদ্বন্দ্বী তত্ত্বীয় কিছু, নাকি কিছু প্রায়োগিক বা অপারেটিভ কিছু। কোনো অপারেটিভ বা প্রাকটিক্যাল টুলকে তত্ত্ব হিসাবে হাজির করাটা ঠিক নয়।
খ. কোনো স্বতন্ত্র তত্ত্ব হলেই তা স্বয়ং ও সর্বাংশে ইসলামবিরোধী হিসাবে বর্জনীয় হবে মনে করে এর বিকল্প খাড়া করার জন্য অস্থির হতে হবে – আমি এমনটা মনে করি না।
পুঁজিবাদ ইত্যাদি কোনো কথা নয়। সমস্যা হলো কিছুটা রাজনৈতিক স্বাধীনতা আমরা পেলেও সামরিক ও তজ্জন্য অপরিহার্য অর্থনৈতিক সামর্থ্য আমরা অর্জন করতে পারি নাই। আমার দৃষ্টিতে ঢালাওভাবে পুঁজিবাদ বিরোধিতার এটি মূল প্রণোদনা বা টেনডেন্সি।
Ibrahim Hossain: Well-read and well critiqued. Had you written this critique in Tariq’s web page, we would have got his explanations on the issues dealt here. However, while it’s always good to keep our critical eyes open, we also need to be aware of creating unnecessary confusions.
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: যেখানে ক্রিটিসিজম আছে সেখানে কনফিউশানও থাকবে। আলাপ-আলোচনাই সমাধান। ধন্যবাদ।
Shahidul Hoque: ভালোই পর্যালোচনা করেছেন।
বর্তমান কঠিন সময়ে প্রফেসর তারিক রমাদানের এই গুরুত্বপূর্ণ লিখা কতটুকু গুরত্ব বহন করবে, তা সন্দিহান। লিখায় উনার ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও হতাশার চিত্র ও ফুটে উঠেছে। যাইহোক, আপনার পর্যালোচনার একটু পর্যালোচনা করছি।
১. “মধ্যপ্রাচ্যের বাদশাদেরকে কেন ইসলামিস্ট বলে চিহ্নিত করা হয় না, সোজা কথায়, ইসলামিস্ট বলে কেন তাদেরকে ট্যাগ করা হয় না বা গালি দেয়া হয় না তা নিয়ে তিনি (সংগত কারণেই) কটাক্ষ করেছেন।”
এটাকে উনার ক্ষোভ বলা যায় না, বরং সাবধানতা বলা যায়। সকল ইসলামিস্টদের উনি এই মেসেজ দিতে চান, শব্দগতভাবে বাদশাদের দেশগুলো ‘ইসলামিস্ট’ হিসেবে রিপ্রেজেন্ট করলেও তাদেরকে ‘ইসলামিস্ট’ বলা হয় না। কারণ, তাদের তেল সরাসরি পশ্চিমা দেশের কোম্পানিগুলোর স্টকে যায়। আর তাদের স্বাধীন ফরেন পলিসি বলে কিছু নাই। পেন্টাগন আর হোয়াইট হাউস যা বলবে তাই। কাজেই তাদের নিয়ে পশ্চিমাদের কোনো টেনশন নাই। বাকিসব ইসলামপন্থীদেরকেই ম্যানেজ করতে হবে, তাই তাদেরকে নিত্য নতুন পরিচয়ে পরিচিত করে তুলতে হবে। ইসলামপন্থীরা যাতে নিজেরা ইসলামের সাথে নতুন পরিচয় পেয়ে আত্বতৃপ্তিতে না ভুগে বরং একটি ভালো মানের ডিফেন্ড স্ট্রেটেজি নিতে পারে, লিখার নিচের দিকে তাই আলোচনা করেছেন, সমালোচনা সহকারে।
২. “তুরস্কে মৌলিক স্বাধীনতার মৌলিক ঘাটতি আছে আর পাওয়ার মনোপোলাইজ করা হচ্ছে – এমন অভিযোগ গেজি পার্কের লোকজনের বাহিরে কাউকে বলতে শুনি নাই।”
তুরস্কে পাওয়ার মনোপোলাইজ না হলেও সামনে এই দাবি উঠে আসবে– প্রধানমন্ত্রী নিজে পর পর ৩ বার নির্বাচিত হয়েছে। যতই জনপ্রিয় হউক না কেন গণতন্ত্রে প্রতিপক্ষকেও পাওয়ার শেয়ার দিতে হয়। এইটা ভালোভাবে দিতে না পারার নামই হলো মনোপলাইজ করা। “I’m so popular that people always vote me”– a sign of silent disease in Democracy!
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ১. আপনার এক নম্বর পয়েন্টের সাথে একমত।
২. পুতিন না হলে রাশিয়া হারিয়ে যেত। সে তো বারবার ‘নির্বাচিত’ হচ্ছে। মার্শাল টিটোর কারণে তৎকালীন যুগোশ্লাভিয়া বিশ্বে একটা ফ্যাক্টর ছিলো। আমি বেনিভোলেন্ট ডিকটেটরশিপের পক্ষে, হতে পারে সেটি গণতন্ত্রের বাতাবরণে।
‘পরিস্থিতি যা-ই হোক, আমি গণতন্ত্রী’ – এমনটা ভাবি না। রাসূল (সা) এবং রাশেদ খলিফাদের শাসনব্যবস্থা ছিলো মৌলিক গণতন্ত্র ধাঁচের। সেখানে শাসন ব্যবস্থায় মদীনা তথা কেন্দ্রের ‘নির্ভরযোগ্যদের’ বাহিরে সাধারণের significant access ছিলো না। পারসিয়ান, রোমান ও গ্রিক সভ্যতা, সাম্রাজ্য ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও এটি সমভাবে প্রযোজ্য।
ইসলামের তরফ হতে রাষ্ট্র ও শাসনব্যবস্থার ধরন ও গঠনকাঠামোর চেয়ে এর বৈশিষ্ট্য ও কর্মপদ্ধতিই অধিকতর বিবেচ্য। ‘খলিফা’ সুলাইমানকে সমর্থন করায় তিনি ভাতিজা উমরকে (রহ.) ‘খলিফা’ মনোনয়ন দেন। উমাইয়া নৃপতি হওয়া সত্ত্বেও শাসনব্যবস্থা-গুণে তাঁকে সত্যিকারের খলিফা এবং খোলাফায়ে রাশেদের মধ্যে গণ্য করা হয়। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম ‘পেট্রো মনার্ক’ হওয়া সত্ত্বেও কাতারের আমীরের ভূমিকা বিশ্বব্যাপী প্রসংশিত নয়?
Shahidul Hoque: আপনার পয়েন্ট যৌক্তিক, কিন্তু কাতারের মতো ক্ষুদ্র একটি দেশ কখনো উদাহরণ হতে পারে না, বড়জোর এক্সেপশন হতে পারে।