প্রশ্ন-১: আপনি কি জামায়াতে ইসলামীতে আবার যোগদান করবেন?

না।

প্রশ্ন-২: কেন নয়?

কারণ, আমরা যখন জামায়াতে ইসলামি করেছি তখন আমরা এটাকে একটা পরিপূর্ণ ইসলামী আন্দোলন বলে মনে করেছি। পরিবর্তীতে দেখলাম সেটি অসম্পূর্ণ, এবং মূলত একটি রাজনৈতিক দল।

জামায়াতে ইসলামীর কাজকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করলেও তাদের কর্মপদ্ধতিকে আমি সার্বিকভাবে যুগোপযোগী এবং ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য যথেষ্ট নয় বলে মনে করি।

এমতাবস্থায় প্রচলিত সামাজিক মূল্যবোধের সংরক্ষণ ও উন্নয়নের কাজকে আমি আমার জন্য অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছি। তাই ‘সমাজ ও সংস্কৃতি অধ্যয়ন কেন্দ্র’ (সিএসসিএস) নিয়েই আমি আছি এবং থাকবো।

একটা চরম রাজনৈতিক সংকটকালে আমি কিঞ্চিৎ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছি মাত্র।

প্রশ্ন-৩: সম্প্রতি আপনি বলেছেন, ‘আমি শিবির’। কেন?

‘শিবির’ হিসাবে চিহ্নিত করে ডিজিএফআই-এর আপত্তির কারণে একটা নামাজি ছাত্রকে আমাদের বিভাগে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়নি, যদিও সে সিলেকশন বোর্ডে এপিয়ার করার মাত্র দুই বছর আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে কৃতি ছাত্র হিসেবে গোল্ড মেডেল পেয়েছিল। এভাবে যাকে-তাকে শিবির হিসেবে ট্যাগ দিয়ে তাকে তার ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করার ঘৃণ্য রাজনৈতিক সংস্কৃতির আমি প্রতিবাদ করেছি। সেই প্রসঙ্গে আমি বক্তৃতায় বলেছি, ‘আহসানুল্লাহ রাফি যদি শিবির হয়, তাহলে আমিও শিবির।’

ওর মতো বেস্ট স্টুডেন্টকে শিক্ষক হিসেবে নিতে না পারা আমার শিক্ষকতা জীবনের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা।

ছাত্রজীবনে আমি যদি ইসলামী ছাত্রশিবির নাও করতাম তাহলেও আমি ওর উপর হওয়া সেই জুলুমের প্রতিবাদে এমন ধরনের কথাই বলতাম।

এখন দেখছি, এই কথাটাকে প্রেক্ষাপটবিযুক্ত করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভুলভাবে প্রচার করা হচ্ছে।

প্রশ্ন-৪: আপনি কি অস্বীকার করতে পারবেন আপনি শিবিরের ক্যাডার ছিলেন?

১৯৮৫ মাঝামাঝিতে যোগদান করে মাত্র তিন বছরের মাথায় আমি ইসলামী ছাত্রশিবিরের সর্বোচ্চ ক্যাডার সদস্য হিসেবে শপথ নিয়ে প্রায় চার বছর সদস্য হিসেবে দায়িত্বপালন করেছি। তখনকার সময়ে এত দ্রুত মানোন্নয়ন ছিল একটি বিরল দৃষ্টান্ত।

শিবির যেহেতু একটা ক্যাডারভিত্তিক সংগঠন, সে হিসেবে আমি অবশ্যই শিবিরের ক্যাডার ছিলাম।

প্রশ্ন-৫: ছাত্রজীবনে শিবির করার জন্য আপনি কি লজ্জিত?

মোটেও না। বরং আমি ইসলামী ছাত্রশিবিরের সদস্য ছিলাম, এটা আমার জীবনের অন্যতম সবচেয়ে বড় সৌভাগ্য। আমি কখনো কোনো অন্যায় করিনি। মেধা ও কমিটমেন্টের দিক থেকে ছাত্রজীবনে আমি ছিলাম পক্ষ-বিপক্ষ সবার কাছে দৃষ্টান্ত। সেই সোনালী অতীতকে আমি খুব মিস করি!

প্রশ্ন-৬: স্বৈরাচারমুক্ত নতুন বাংলাদেশে, বিশেষ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আপনি কি জামাত-শিবিরের পক্ষে দাঁড়াবেন?

আমি ন্যায়নীতির পক্ষে, সুনির্দিষ্টভাবে ছাত্রছাত্রীদের অধিকারের পক্ষে দাঁড়াবো, তারা যে দল কিংবা মতাদর্শের অনুসারী হোক না কেন।

প্রশ্ন-৭: জামাত-শিবির সম্পর্কে আপনার অবস্থান কী হবে?

জনগণ যদি তাদেরকে ভোট না দেয়, পছন্দ না করে তাহলে তারা রাজনীতিতে আপার পজিশনে থাকবে না। আর যদি তাদেরকে ভোট দেয়, তাদেরকে পছন্দ করে তাহলে জনগণ তাদেরকে যেই পজিশনে রাখবে তারা সেই পজিশনে থাকবে।

আমি জনগণের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী। যারা কোনো ধরনের মাইনাস ফর্মুলাতে বিশ্বাস করে আমি তাদেরকে বিপদজনক বলে মনে করি।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আমি মনে করি ধর্মান্ধতা এবং ধর্মবিদ্বেষ সমভাবে পরিত্যাজ্য। সমভাবে ক্ষতিকর।

প্রশ্ন-৮: আপনি ‘আল্লাহু আকবার’, ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিয়েছেন। এতে কি আপনার পক্ষপাতিত্ব প্রমাণিত হয় না?

না। আমি একজন প্র্যাকটিসিং মুসলিম। সে হিসেবে যে কোনো এক্সট্রাঅর্ডিনারি এচিভমেন্টকে আমি ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি দিয়ে উদযাপন করি।

আমি মনে করি পলিটিক্যালি আমরা সবাই বাংলাদেশী, এথনিক্যালি আমরা সবাই বাঙালি। ‘তুমি কে আমি কে – বাঙালি বাঙালি’ আমি এই স্লোগানও দিয়েছি। বিজয় মিছিল ঠিক কোন জায়গা অতিক্রম করার সময় আমি এই স্লোগানটা দিয়েছি, সেটা অন্ততপক্ষে আমার মনে আছে।

আমি মনে করি, ভিন্ন ভিন্ন দিক থেকে স্বতন্ত্র আইডেন্টিটিসমূহের সমাহারে আমরা পরিপূর্ণ মানুষ।

তাই ‘মুসলমান না বাঙালি’, ‘বাঙ্গালী না বাংলাদেশী’ এ ধরনের বিতর্ক অহেতুক বিকল্প তথা ফলস বাইনারির প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

প্রশ্ন-৯: আপনি কি ছাত্রজীবনে ছাত্রহত্যার সাথে জড়িত ছিলেন?

না। এটি একটি মিথ্যা অভিযোগ।

ছাত্র জীবনে আমি সুপরিচিত ছাত্রনেতা ছিলাম। তখনকার সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রঅধিকার আদায়ের জনপ্রিয় সংগঠন ‘সংগ্রামী ছাত্র ঐক্য’র আমি ছিলাম আহ্বায়ক। তৎকালীন পক্ষপাতদুষ্ট ও দুর্নীতিবাজ উপাচার্যের বিরুদ্ধে আমরা একটা সফল আন্দোলন পরিচালনা করেছিলাম। সেই আন্দোলন চলাকালীন আমাদের ডাকা একটা ধর্মঘট বানচাল করার জন্য ভিসিপন্থীপক্ষ আমাদের পিকেটারদের উপর আক্রমণ করে। ১৯৯০ সালের ২২শে ডিসেম্বরের সেই চরম অরাজকতার সময়ে ফারুকুজ্জামান কোথায় কীভাবে আহত হয়েছিল আমি সঠিক জানি না।

এই ঘটনায় আমাদের ১০৭জনকে আসামি করে মারামারির মামলা দায়ের করা হয়। ফারুকুজ্জামান পরবর্তীতে হসপিটালে মৃত্যুবরণ করলে খুব সম্ভবত ৫৭ ধারায় করা মামলাটিকে হত্যা মামলায় পরিণত করা হয়। পরবর্তীতে আমিসহ ৫১জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দেয়ার মাধ্যমে এই মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।

আমি ছিলাম ৩৭তম আসামি। মামলার এফআইআরে আমার নাম ছিল না। মামলা চলাকালীন আমার বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্য দেয়নি। আমার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ ছিল না। শুধু অভিযুক্তের তালিকায় আমার নামটা ছিল।

ঘটনা যাই হোক না কেন, বিরোধীপক্ষের নেতাদেরকে গণহারে মামলার আসামি করা ছিল তখনকার রাজনৈতিক সংস্কৃতি। এটি এখনো চলছে। তখনকার সময়ে মেধাবী ছাত্র হিসেবে আমি পরিচিত ছিলাম। আমার শিক্ষক হওয়ার সম্ভাবনাকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাকে উক্ত মামলায় আসামি করা হয়।

প্রশ্নবিদ্ধ আইসিটি এক্টের মতো কেউ যদি এমনও মনে করে, কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলে অভিযুক্তেরই দায়িত্ব হচ্ছে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করা, এমনকি সেটাও হয়েছে। কয়েক বছর মামলা চলার পরে আইনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বিচারিক আদালত থেকে আমি বেকসুর খালাস লাভ করেছি।

প্রশ্ন-১০: আপনাকে ‘কিরিচ মোজাম্মেল’ বলা হয় কেন?

আমি যখন ছাত্রনেতা ছিলাম তখন দেশের প্রধান দৈনিক ‘দৈনিক ইত্তেফাক’-এ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত কোনো নিউজ আসলে সেখানে আমার নাম থাকতো। তখনকার সময়ে আমাদের মতাদর্শের বিরোধী সংবাদপত্র ‘দৈনিক সংবাদ’, ‘বাংলার বাণী’ এসব পত্রিকায় আমাদের বিরুদ্ধে বড় বড় মিথ্যা ও বানোয়াট রিপোর্ট প্রকাশিত হতো।

তখনকার দিনগুলোতে কিংবা পরবর্তী অন্ততপক্ষে বহু বছর এই শব্দবন্ধের অভিযোগ আমার নামে কোথাও কেউ বলেনি কিংবা লেখেনি। অন্য কিছু বলতো।

আমরা ছাত্রনেতা ছিলাম এবং নানা ধরনের সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমাদেরকে নেতৃত্ব দিতে হয়েছে। তাই বলে কিরিচের সাথে আমাকে সম্পৃক্ত করা রীতিমত বেইজ্জতি! কখনো আমি ক্যাম্পাসে কোনো অস্ত্র সাথে নিয়ে হেঁটেছি, এমনটি কেউ দেখেনি।

ঈশপের গল্পের রূপান্তরের মতো আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ ও প্রোপাগান্ডার বিবর্তন দেখে আমি বিস্মিত! এ ধরনের ব্যক্তিনিন্দার (bad naming) সংস্কৃতি বন্ধ হওয়াটা জরুরি।

প্রশ্ন-১১: বলা হয় আপনি হামিদের কাটা হাত নিয়ে মিছিল করেছেন। কথাটা কি সঠিক?

আওয়ামী-বাম প্রোপাগান্ডা মেশিনের এটা আরেকটা প্রোডাক্ট। তৎকালীন জাতীয় ছাত্র সমাজের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি আব্দুল হামিদের উপর আক্রমণ করা হয় ১৯৮৬ সালের শেষের দিকে। তখন আমি প্রথম বর্ষের ছাত্র। ভর্তি হওয়ার পরে প্রায় ছয় মাস আমাদের শহরের বাসা থেকে আসা-যাওয়া করেছি। এরপরে শাহজালাল হলে উঠেছি নিজের সিটে। তখন আমি ছিলাম শিবিরের কর্মী।

ইসলামী ছাত্রশিবির সম্বন্ধে যাদের ন্যূনতম ধারণা আছে তারা বুঝবেন, এই ধরনের একটা ক্যাডারভিত্তিক সংগঠনে একজন সাধারণ কর্মী অনেক অনেক পিছনের দিকের একজন জনশক্তি।

এমন একটা ঘটনা হবে সেটা আমি জানতাম না এবং ঘটনার দিন আমি ক্যাম্পাসেও ছিলাম না। মতাদর্শগত দিক থেকে কারো চরিত্রহননের নেশায় যারা বুঁদ হয়ে আছে তাদেরকে বোঝানোর সাধ্য কার?

আমি এই ক্লারিফিকেশন দিচ্ছি আমার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন প্রচারণায় যারা খানিকটা বিভ্রান্ত হয়েছে তাদের বোধোদয়ের জন্য।

অভিযোগকারী প্রোপাগান্ডিস্ট পক্ষের কাছে ‘শুনেছি’, ‘বলা হয়’ ধরনের কথাবার্তা ছাড়া আর কোনো জেনুইন প্রমাণ থাকলে তারা সেটি উপস্থাপন করতে পারে। I am ready to face it.

প্রশ্ন-১২: শুনেছি আপনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন?

হ্যাঁ, আমি এক বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলাম। এটি সত্য। তবে সেটি কোনো ধরনের অনৈতিক কার্যক্রম কিংবা অসদুপায় অবলম্বনের জন্য নয়। বরং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার কারণে। মোর স্পেসিফিকেলি, আমি তৎকালীন হল প্রভোস্টের রুমে তালা দিয়েছিলাম, সেজন্য।

প্রশ্ন-১৩: আপনি কি শিবিরের প্রভাব খাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হয়েছেন?

আমাদের সময়ে ‘প্রভাব খাটিয়ে শিক্ষক হওয়ার’ কালচার প্রচলিত ছিল না। আমার সিলেকশন বোর্ডে এক্সপার্ট হিসেবে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন সিনিয়রমোস্ট টিচার আমেরিটাস প্রফেসর ড. আব্দুল মতিন স্যার এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়রমোস্ট টিচার প্রফেসর ড. মফিজ উদ্দিন আহমেদ স্যার। ওনারা দুজনেই ছিলেন তাত্ত্বিক বাম।

বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মেট্রিক এবং ইন্টারে ফার্স্ট ডিভিশন নিশ্চয়ই আমি শিবির করার কারণে পাইনি। তখনকার লেখাপড়ার মান ‘I am GPA 5’ টাইপের ছিল না। আমার তখনকার সহপাঠী, শিক্ষক এবং বর্তমান ছাত্রছাত্রীরা আমার মেধা ও যোগ্যতা সম্পর্কে ভালো বলতে পারবে।

প্রশ্ন-১৪: আপনি কি ছাত্ররাজনীতির পক্ষে?

আমি জাতীয় রাজনীতির লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে। তবে অধিকারভিত্তিক ছাত্র রাজনীতির পক্ষে।

প্রশ্ন-১৫: আপনার মূলশক্তি কী?

আল্লাহর ওপর ভরসা ব্যতীত আমার প্রধান শক্তি হলো দুইটা:

(১) আমার সততা, সৎসাহস ও সত্যবাদিতা। এবং

(২) গত ৩০ বছর ধরে আমি যাদেরকে পড়িয়েছি আমার সেইসব ছাত্র-ছাত্রীরা।

মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

১। Chowdhury Golam Mawla: আপনার খোলা অভিব্যক্তি, সহজ স্বীকারোক্তি এবং সৎ সাহস ও দৃঢ়তা প্রশংসার যোগ্য। একটি বিষয়ে আমিও আপনার সাথে খুবই সহমত ।

সেটি হচ্ছে বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর প্রধানতম কাজ হওয়া উচিত সমাজ ও সংস্কৃতির উন্নয়ন, ইসলামী আদর্শের আলোকে জীবনযাত্রার লালন।

আর এর মধ্যে থেকেই জনগণ চাইলে জামাতের লোকদেরকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে নির্বাচিত করতে পারে। দায়িত্ব অর্পণ করতে পারে। জনগণের এই চাওয়া এবং ভোটের মাধ্যমে তাদেরকে দায়িত্ব প্রদান ইসলামিক সমাজ বিনির্মাণেরই অংশ হবে– সন্দেহ নেই।

২। আকিল বিন জাকের: আপনার আলোচনা থেকে শিবির সম্পর্কে পজিটিভ থিংক পেলাম। কিন্তু আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে শিবির নিয়ে কিছু নেতিবাচক কথা। যেমন, শিবির রগ কাটে। এই নেতিবাচক কথাগুলো কতটুকু সত্য কিংবা কেন এগুলো প্রচলিত হলো?

Mohammad Mozammel Hoque: হ্যাঁ, যে কেউ নিরপেক্ষ নিউজ আউটলেট ঘাঁটাঘাঁটি করে বের করতে পারে, শিবির কোথায় কার রগ কেটেছে। এটা ওই যে ভূত দেখার গল্পের মত। সবাই বলে ভূত দেখা গেছে। কিন্তু কে সে যে ভূত দেখেছে, তাকে কিন্তু আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। এই নেরেটিভ এর বিপরীতে আমরা চাক্ষুষ যা কিছু আশেপাশে প্রতিনিয়ত দেখেছি সেগুলোকে অনেকটা হালকা চোখে দেখি। এইটা কেন হয়, আমার কাছে ঠিক ক্লিয়ার না।

আর হ্যাঁ একটা এত বড় সংগঠনের এত দীর্ঘদিনের উত্থান-পতন, সেখানে কিছু অন্যায়, ত্রুটি, বাড়াবাড়ি হতেই পারে। সেটার উপযুক্ত প্রতিবিধান হচ্ছে কিনা সেটি হল দেখার ব্যাপার।

আমি যখন শিবিরের কর্মী তখন আমার কোনো কোনো কাজিন বললো, শিবিরের সাথীরা ভাতা পায়। সাথী হইয়া সদস্য হইয়া বহু বছর কাজ করে শেষ পর্যন্ত একটা টাকাও পেলাম না। সর্বশেষ শিবিরের দায়িত্ব পালন করেছি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়তুল মাল সম্পাদক তথা ট্রেজারার হিসেবে। তাও আমার পকেটে কোনো টাকা ঢুকে নাই।

এবার বুঝেন, প্রোপাগান্ডা ফ্যাক্টরির প্রোডাক্ট কত sophisticated!

৩। Shamsun Nahar Mitul: চমৎকার । এই সত্য ভাষণকে স্বাগত জানাচ্ছি। এই লেখার প্রতিটি বর্ণ সত্য। এটা ছিল সময়ের দাবি। bad naming সংস্কৃতির প্র্যাকটিস খুবই বাজে জিনিস। না জেনে এমন বিশেষণে বিশেষিত করা একটা ক্রাইম। আশা করছি, যে বা যারা এতদিন স্যারকে এ ধরনের বিশেষণে বিশেষায়িত করেছেন তারা সেটা বন্ধ করবেন এবং সত্যকে গ্রহণ করবেন। শুভ কামনা, স্যার।

৪। Arpa Thirjoy: প্রশ্ন ১: “আমি জাতীয় রাজনীতির লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে”, তাহলে আপনি কি জামায়ত ইসলামীর ছাত্র রাজনীতির প্লাটফর্ম ছাত্রশিবির কিংবা ছাত্রীসংস্থার ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে?

প্রশ্ন ২: আপনি ছাত্র অবস্থায় শিবিরের ক্যাডার ছিলেন এবং সংগ্রামী ছাত্র ঐক্যের আহ্বায়ক ছিলেন, সেক্ষেত্রে কি কোনো বিশেষ অবস্থার কারণে শিবিরের প্লাটফর্ম থেকে অধিকার আদায় না করার ফলস্বরূপ সংগ্রামী ছাত্র ঐক্যের জন্ম হয়?

Mohammad Mozammel Hoque: প্রথম প্রশ্নের উত্তর: হ্যাঁ, আমি জামায়াতে ইসলামীর সাথে সম্পর্ক ছেদ করার অন্যতম প্রধান কারণ ছিল, ইসলামী ছাত্রশিবির জামায়াতে ইসলামীর লেজুড়বৃত্তি করা শুরু করেছিল। এর প্রথম বহিঃপ্রকাশ ঘটে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে জামায়াতে ইসলামীর একটা সাংবাদিক সম্মেলনে শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জামায়াত নেতাদের সাথে একসাথে বসে ছিল। অতীতে বিশেষ করে আমরা যখন শিবির করেছি তখন এমনটি কখনো হয়নি। শিবিরের সংবিধান অনুযায়ী শিবির একটি স্বতন্ত্র ও স্বাধীন ইসলামপন্থী ছাত্র সংগঠন। এসব বিষয় নিয়ে আমার প্রচুর লেখা আছে। এ বিষয়ে আমার একটা বই আছে, ‘জামায়াতে ইসলামী: অভিজ্ঞতা ও মূল্যায়ন’ এই শিরোনামে।

দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর: হ্যাঁ, শিবিরের প্ল্যাটফর্ম সাফিসিয়েন্ট ছিল না বলে সংগ্রামী ছাত্র ঐক্য’র প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছিল। আদর্শের আন্দোলন এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন দুইটা তখন থেকেই আমি ভিন্ন বলে মনে করেছি।

মনে রাখতে হবে, আমি ভিন্ন বলেছি, বিপরীত বলিনি। I mean, they are different but not mutually exclusive.

৫। Sharmin Suma: বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেকের মনে এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিলো, অনেকেই ইনবক্সে জানতে চেয়েছিলো এসব, সঠিকভাবে উত্তর দিতে পারিনি, যুগোপযোগী পোস্ট, ধন্যবাদ স্যার।

আপনার সদা হাস্যোজ্বল চেহারাটা সবসময়ই বজায় থাকুক। আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।

Mohammad Mozammel Hoque: হ্যাঁ, প্রশ্ন ও অভিযোগের উত্তর যদি না দেওয়া হয় তখন লোকেরা মনে করে অভিযোগটা নিশ্চয়ই কিছু না কিছু সঠিক। না হলে উনি কিছু বলছেন না কেন?

৬। Sanzida Sahrin: এই রাজনৈতিক ইতিহাসের জন্য আপনি পারিবারিকভাবে বা কর্মজীবনে কী কী নির্যাতন এবং বাধার সম্মুখীন হয়েছেন? কীভাবে সেগুলো মোকাবেলা করেছেন এবং নিজেকে স্রোতের বিপরীতে পলিটিক্যাল ইস্যুর কারণে কীভাবে মানসিকভাবে স্ট্রং থাকতেন?

নিশ্চয়ই এই চলার পথ মসৃণ ছিলনা, আপনার স্ত্রী-সন্তানরাও হয়তো এটার কারণে ভুক্তভুগী হয়েছে। মনোবলকে এভাবে ঠিক রেখে এগিয়ে যাওয়া দুঃসাহসিক ব্যাপার।

আপনার চ্যালেঞ্জিং জীবনের গল্পগুলো শুনতে চাই। একদিন শেয়ার করবেন প্লিজ।

Mohammad Mozammel Hoque: এত ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র এবং অভিযোগের মুখে আমি মাথা উঁচু করে যেভাবে দাঁড়িয়ে ছিলাম সেটি আল্লাহর রহমত এবং আমার শতভাগ সততার কারণে সম্ভব হয়েছে বলে মনে করি।

এ ব্যাপারে আমার নীতি হচ্ছে, প্রশংসার দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ো না। সমালোচনার কারণে দমে যেও না।

Do not be derailed by appreciation and deterred by undue criticism.

Quality does matter.

৭। Sharok Talokder: ২০০৫ সালের জেএমবির বোমা হামলায় জামায়াতে ইসলাম এর সমর্থন ছিল কিনা? হামলাটির পেছনে কি যুক্তি ছিল বলে আপনি মনে করেন?

Mohammad Mozammel Hoque: জেএমবির বোমা হামলার পিছনে জামাতের সমর্থন ছিল, এমন কিছু আমি জানি না। আপনি যদি জানেন, তাহলে এর সমর্থনে আওয়ামী প্রপাগান্ডা মেশিনের প্রোডাক্ট নয়, এমন কোনো নিরপেক্ষ সোর্স থেকে প্রমাণ দিতে পারেন।

৮। Jannatul Maowa: বাঙালিকে কৈফিয়ত না দেয়াই ভালো। রব জানেন আপনি সৎ, আর কোথায় যেন পড়েছিলাম, কখনো কখনো রহস্য থাকা ভালো। যাদের সবকিছুতে কৈফিয়ত চাওয়ার বদ অভ্যাস, তাদের নাফস কিছুটা হলেও সোজা হবে (হতে বাধ্য), ইনশাআল্লাহ।

Mohammad Mozammel Hoque: কিছু কিছু মানুষ আছে, চুপ থাকলে, তারা মনে করে ঘটনা নিশ্চয়ই সঠিক। না হলে উনি কিছু বলছে না কেন?

লেখা দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে সেজন্য খুব সংক্ষেপে লিখেছি। প্রত্যেকটা পয়েন্টে প্রয়োজনে আরো ডিটেইলড কথাবার্তা হতে পারে, ইফ এনি ওয়ান ইজ ইন্টারেস্টেড ইনাফ।

৯। Nayem: আপনি নিজেকে এই দুটির মধ্যে কোনটিতে পরিচিত করতে ভালো, সম্মান, ঠিক অনুভব করেন এবং কেন সেটিও যুক্ত করে দিলে আমরাও অনুকরণ করব?

১. আমি বাঙ্গালী, ২. আমি বাংলাদেশী

Mohammad Mozammel Hoque: আমিসহ সবাই আমরা যারা বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে এখানে বসবাস করি, পলিটিক্যালি আমরা সবাই বাংলাদেশী। বাংলাদেশের ন্যাশনাল আইডি যার আছে সে বাংলাদেশী। পাহাড়ি উপজাতিসহ কিছু ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ছাড়া আমরা বাকি সবাই, হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম- খ্রিষ্টান, বাঙালি। একটা হল নৃতাত্ত্বিক পরিচয়। আরেকটা হল জাতীয় পরিচয়। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান এগুলো হল ধর্মীয় পরিচয়। এগুলো একটা একটার বিকল্প নয়।

কেউ মুসলিম হয়ে আরবি হতে পারে, অনারবও হতে পারে। অমুসলিম হয়ে আরবি হতে পারে, অনারবও হতে পারে। এবার বোঝা গেছে?

১০। Sidratul Muntaha Pahela: সবসময় এমন স্পষ্টবাদী থাকুন, এটাই দোয়া করি। বারাক আল্লাহু ফিক।

Mohammad Mozammel Hoque: আমার তো গোপন কোনো ব্যাপার-স্যাপার নাই। এবং কোনো অন্যায়ও আমি কখনো করি নাই। সব সময় ন্যায়-নীতির পক্ষে থেকেছি। কোনো ভুল হলে সেটা সরাসরি স্বীকার করেছি। সেজন্য আমার কোনো গিল্টফিল নাই।

সংগঠন না করা লোকগুলোর তুলনায় ইনজেনারেল সংগঠন করা লোকগুলো ভালো। যে কেউ চাইলে যে কোনো সংগঠনে থেকে ভালো কিছু করতে পারে। ভালো সংগঠন হলে সেটা তার জন্য সহজতর। খারাপ সংগঠন হলে সেটা তার জন্য কঠিন। কিন্তু নিজের বিবেক, বুদ্ধি ও আত্মমর্যাদাবোধকে ভুলে না গেলে কোনো সংগঠন কাউকে খারাপ করে না।

১১। Ridwanul Haq Rafi: ক্যাম্পাসে শিবির আমলে তাদের দ্বারা প্রচুর অপ্রেশন এবং ছাত্রহত্যা হয়েছে বলে তৎকালীন অরাজনৈতিক ছাত্রসমাজ এমনকি এখানকার সাধারণ মানুষই সাক্ষ্য দেন। এর সত্যতা কতটুকু এবং এর বিপক্ষে কী কী প্রমাণ আছে?

Mohammad Mozammel Hoque: কী জানি আমি তো এরকম শুনি নাই। তবে ব্যাপক অপপ্রচার ছিল। এখনকার প্রোপাগান্ডা মেশিনগুলো তখনো সমান তাহলে সক্রিয় ছিল। শিবিরের ছেলেরা নামাজের জন্য ডাকছে, এটাও তাদের একটা অত্যাচার, এরকম আর কী! এত বড় একটা সংগঠনের সব লোকজন যে খুব ভালো ছিল, এমন তো নয়। সামগ্রিকভাবে ব্যাপারটা কেমন ছিল সে অনুসারে ভালো-মন্দ বিবেচনা করা উচিত।

তখন তো সব পার্টির নেতারা হলে থাকতো। কর্মী, সমর্থক তো থাকতোই। দোকানে কেউ ফাও খাইতো না। কন্ট্রাকটারদের কাছ থেকে চাঁদা নিত না। নিজেরা কন্ট্রাকটারি করা তো বহুত দূরের কথা।

এসব আর কী, শিবিরের ‘খারাপ’ রেকর্ড…!

১২। Muhammad Younus: জামায়াতকে আপনি মূলত একটি রাজনৈতিক দল ভাবেন। এটা আপনার একটি ইনসাফ বহির্ভূত কথা! আপনার গবেষণার পরিধি মাপা হয়ে গেছে এই উস্কানিমূলক কথা থেকেই।

Mohammad Mozammel Hoque: আমরা যখন ছাত্রশিবির করেছি তখন ছাত্রশিবির ছিল একটা ইন্ডিপেন্ডেন্ট অর্গানাইজেশন। জামায়াতের অঙ্গ সংগঠন ছিল না। প্রকাশ্যে জামায়াতের সাথে কোনো সম্পর্ক ছিল না। এমনকি প্রেসিডেন্ট জিয়ার আমলে হ্যাঁ/না ভোটের সময়ে শিবির জামায়াতের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। ১৯৮১ সালে রমনাতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মী সম্মেলন হয়েছিল। সেখানে আমি যতটুকু জানি, জামায়াতে ইসলামীর কেউ ইনভাইটেড ছিলেন না। সেখানে দেশের তৎকালীন কর্মরত প্রধান বিচারপতি ছিলেন প্রধান অতিথি।

আমরা ছাত্রশিবিরকে একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামিক আন্দোলন হিসেবে মনে করতাম। যার পাঁচ দফার একটা দফা ছিল রাজনীতি। পরবর্তীতে ব্যাপারটা এমন হয়ে দাঁড়ালো, বাস্তবে, রাজনীতি হলো মূল দফা। বাকিগুলো হল সেকেন্ডারি। পরিপূরক। তারা নিজেরাই নিজেদেরকে পলিটিক্যাল দল হিসেবে পরিচয় দেয়, যা এক সময় আমরা ভাবতেও পারিনি। জামায়াতের এই বিবর্তন, শিবিরের এই পরিবর্তন, এটা আমি নিতে পারিনি।

তাছাড়া তত্ত্বগতভাবে অনেকগুলো বিষয়ের সাথে আমি দ্বিমত পোষণ করেছি। মাওলানা মওদূদী তখনকার সময়ে যা করেছিলেন সেটা তখন যতটুকু প্রযোজ্য ছিল, পরবর্তী প্রেক্ষাপটে সেগুলোর তত্ত্বগত উন্নয়ন আর হয়নি। এগুলো নিয়ে আমার অনেক লেখা আছে। কথা বলতে চাইলে খুবই সুনির্দিষ্ট বিষয়ে সময় নিয়ে কথা বলা উচিত। তার আগে ওই বিষয়ে আমার যেসব লেখা আছে সেগুলো পড়ে নেওয়া উচিত।

পয়েন্টভিত্তিক কথা বলা ছাড়া শুধু তর্ক-বিতর্ক করে তো কোনো লাভ নাই।

১৩। Kazi Muhammad Mahim: আপনি গনতন্ত্রে বিশ্বাসি নাকি শারিয়াহ’তে?

Mohammad Mozammel Hoque: গণতন্ত্রকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করেন? ক্ষমতা গ্রহণ, পরিচালনা এবং হস্তান্তরের পদ্ধতি হিসেবে? নাকি, একটা সামগ্রিক জীবনদর্শন হিসেবে?

যদি গণতন্ত্রকে আপনি একটা পলিটিক্যাল সিস্টেম হিসেবে নেন, তাহলে সেটা শরিয়ার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আর যদি একে আপনি মেটাফিজিক্যাল সেন্সে নেন তাহলে এটি বাতিল দ্বীন।

এবার গণতন্ত্রকে আপনি যে রকম মনে করেন আপনি সেটা মনে করতে পারেন। আমি যে রকম মনে করি সেটা আমি মনে করতে পারি।

আমি কী মনে করি, সেটা নিয়ে এখানে একটা আলোচনা ওপেন-আপ করার সুযোগ নাই। এ ব্যাপারে আপনি জানতে আগ্রহ হলে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। I am always open to discussion। এসব বিষয়ে আমার অনেক লেখা, ভিডিও এবং পোস্টার আছে।

আমার সাইটে সেগুলো পাবেন।

১৪। Shadhin Siddiqui: এদেশে ছাত্ররাজনীতি থাকার বিন্দু পরিমাণ কোনো যৌক্তিকতা নাই আজকের দিনে৷ আপনি চাইলেও বাস্তবতা দেখে বুঝবেন যে লেজুরবৃত্তি ছাড়া আসলেও কাজ নাই এটার কিংবা লেজুড়বৃত্তি ছাড়া ছাত্র রাজনীতি চলবেওনা কোনোভাবে। আপনার কী মনে হয়?

Mohammad Mozammel Hoque: লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি ছাড়া ছাত্র রাজনীতি চলবে না, এটা আমি মনে করি না। অবশ্যই চলবে। আমার লেখার মধ্যেই আমি ইসলামী ছাত্রশিবিরের একটা উদাহরণ দিয়েছি।

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান একটা হ্যাঁ/না ভোটের আয়োজন করেছিল। তৎকালীন ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতৃবৃন্দ সেই গণভোটে কোনো প্রকারের সমর্থন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সেটি ছিল তখনকার সময়ে তাদের মূল সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর সিদ্ধান্তের বিপরীত। জামায়াত ইসলামী প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল।

১৯৮২ সালে ইসলামী ছাত্রশিবিরের মধ্যে যে ভাঙ্গন হয় সেটির প্রেক্ষাপট হল, শিবিরের তৎকালীন কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ চেয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের সময়ে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকার মূল্যায়ন করতে। জামায়াত এতে বাধা দেয়। পরিণতিতে নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে শিবিরের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি হয়েছিল।

আমাদের সময়কার ইসলামী ছাত্রশিবির ছিল বড় কোনো রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি না করে টিকে থাকার উদাহরণ। পরবর্তীতে বিশেষ করে ২০০৯-১০ সালের দিকে জামায়াতে ইসলামী এবং ছাত্রশিবিরের যে স্বাতন্ত্র্য এবং পার্থক্য, সেটা মুছে যায়। শিবির সর্বতোভাবে জামায়াতের অঙ্গ সংগঠনের পরিণত হয়।

লেখাটির ফেইসবুক লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *