বিশেষ করে উচ্চতর পর্যায়ে আপনি কী পড়বেন বা কী পড়াবেন তা কে ঠিক করে দিবে? বলা হচ্ছে, নাস্তিক্যবাদ পড়ানো যাবে না। অথচ আমাকে এটি পড়াতে হয়। যেমন করে আমি পড়িয়ে থাকি আস্তিক্যবাদ। একই সাথে সংশয়বাদ এবং অজ্ঞেয়বাদ। আরো যত মতবাদ এবং তত্ত্ব।

নাস্তিক্যবাদের দার্শনিক ভিত্তি হচ্ছে বস্তুবাদ। বস্তুবাদ আর বাস্তববাদ এর পার্থক্য না বুঝলে আপনার ফিলসফি বোঝা হলো না। আমাকে এসব কিছু পড়াতে হয় মেটাফিজিক্স আর এপিস্টিমোলজির নানা প্রসঙ্গে। Is materialism, okay? শুধু এই একটা প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য ফিলসফি অফ মাইন্ডের পুরো আলোচনা।
প্রকৃতিবাদ না পড়িয়ে কারো পক্ষে ম্যাটাএথিক্স বা পরানীতিবিদ্যার আলোচনা কিংবা পঠনপাঠন অসম্ভব। অথচ, ন্যাচারালিজম হচ্ছে বিজ্ঞানবাদিতা বা sciencism এর অপর নাম। জ্ঞানতাত্ত্বিক যাচাইকরণে সংগতিবাদ হল নাস্তিক্যবাদী ধাঁচের তত্ত্ব। সংগতিবাদ ছাড়া জ্ঞানতত্ত্বের কোনো আলোচনা অসম্ভব। সংগতিবাদ কিংবা বিশেষ কোনো দার্শনিক তত্ত্ব আপনি মানবেন কি মানবেন না, সেটা ভিন্ন আলোচনা। দার্শনিক তত্ত্বগুলো একটি অপরটির সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে সম্পর্কিত।
Badness না বুঝলে, ব্যাডনেস সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকলে আপনি আদৌ গুড হতে পারবেন না, goodness-কে প্রপারলি ধারণ করতে পারবেন না। কোনটাকে আপনি কেন ব্যাড বলবেন বা গুড মনে করছেন, সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। philosophically the world is counter-balanced with arguments, for or against.
ফিলসফি নিয়ে এমনকি শিক্ষিত লোকদের মধ্যেও ব্যাপক ভুল ধারণা। সেসব নিয়ে এখানে বিস্তারিত আলোচনার অবকাশ নাই। শুধু এইটুকু মনে রাখতে হবে, philosophy is not meant to give you any answer, but whatever answer you find, that one must be philosophical. দর্শন ইটসেলফ কোনো মতবাদ নয়। তাই একচ্ছত্রভাবে এটি কারো পক্ষের বা বিপক্ষের কিছু নয়। এটি বরং জ্ঞানগবেষণার একটা বিশেষ পদ্ধতি।
অন্ধকারের অস্তিত্ব থাকুক বা না থাকুক, অন্ধকারের জ্ঞান (inference অর্থে) ব্যতিরেকে আলোর জ্ঞান অসম্ভব। এই দৃষ্টিতে, অর্থাৎ অধিবিদ্যাগত দৃষ্টিকোণ থেকে আলো এবং আঁধারের সম্পর্ক আবশ্যিক বা নেসেসারি। মিথ্যাহীন পৃথিবীতে সত্য হবে মূল্যহীন। মিনিংলেস। ‘মিথ্যাহীন পৃথিবী’ কথাটাই বরং স্ববিরোধী ও অসম্ভব।
যে কারণে এত কথা, যেখানে যার ক্ষমতা, সে যদি সেখানে তার মতো করে উচ্চশিক্ষাকে নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে, পক্ষপাতদুষ্ট সিলেবাস ঠিক করে দিতে থাকে, ছাত্ররা যদি শিক্ষকদেরকে ডিক্টেইট করতে থাকে, তাহলে উচ্চশিক্ষা নামক জিনিসটা একটা তামাশায় পরিণত হবে।
বলা হয়, ‘a man is known by his company’। আমি বলি, a man is known by his opponents। মানুষ শেষ পর্যন্ত তেমনি হয়ে ওঠে যেমন লোকদেরকে সে মোকাবেলা করে। শাহবাগ পরবর্তী বাংলাদেশে এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত বাস্তবতা। আমি ক্যান্সেল কালচারের বিরোধিতা করি। এটি একটা সর্বনাশা প্রবণতা, যারা বুঝছেন না তারা অচিরেই এটি বুঝতে পারবেন, আশা করি। ভালো থাকেন।
মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Abu Hamid Mohammad Ashiqullah: এখানে শব্দটা ‘পড়াবে’ না দিয়ে ‘শেখায়’ অথবা ‘অনুশীলন’ করায় কিংবা ‘ধাবিত করে’ দিলে কেমন হয়?
Mohammad Mozammel Hoque: পড়া, জানা এবং গ্রহণ করা; এই ৩টা জিনিস একও নয়, আবার সম্পূর্ণ পৃথকও নয়। বরং উল্টোদিক থেকে পরস্পর আবশ্যিকভাবে সম্পর্কিত। কথাটাকে ইংরেজীতে বললে—
to read, to know and to accept; these three notions are neither identical, nor mutually exclusive. these are ontologically necessary for each other from reverse order.
অর্থাৎ, কোনো কিছুকে গ্রহণ করার জন্য জানতে হবে আগে। যদিও জানা মানে গ্রহণ করা নয়। একইভাবে কোনোকিছুকে জানতে হলে পড়তে হবে আগে। যদিও পড়লেই কেউ সঠিকভাবে জানতে পারবে, তা নয়।
শিক্ষক পঠন হতে জ্ঞান আহরণে শিক্ষার্থীকে সহযোগিতা করেন। মেন্টর, গুরু, শায়েখ, পীর বা ওস্তাদের কাজ হচ্ছে অর্জিত জ্ঞানের কোনটাকে ইতিবাচকভাবে, আর কোনটাকে নেতিবাচকভাবে গ্রহণ করতে হবে, এক কথায় কীভাবে কী আমল করতে হবে, তা নির্ধারণে সহায়তা করা। সেজন্য, গুরুর সাথে জোড়শব্দ হলো শিষ্য। শিক্ষকের সাথে শব্দবন্ধ হলো ছাত্র।
প্রাইমারি স্কুলের পড়া আর হাইস্কুলের পড়া এক না। আবার হাইস্কুলের চেয়ে কলেজের পড়া ভিন্ন হওয়ার কথা। একইভাবে গ্রাজুয়েশন লেভেলের পড়া তৎপূর্ববর্তী সব স্তরের চেয়ে ভিন্নতর হওয়ার কথা।
আনফরচুনেটলি, মাদ্রাসাগুলোতে পড়াকে স্টাডি অর্থে না নিয়ে ইনডকট্রিনেশান অর্থে নেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াকেও উনারা সেই অর্থে বিবেচনা করেন। এটি ভুল।
Abu Hamid Mohammad Ashiqullah: এটা খুবই যুক্তিসঙ্গত পয়েন্ট বলে মনে হয়। ক্লাসরুমে বিশৃঙ্খলা তৈরি করা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য সমাধান মনে হচ্ছে না। তাছাড়া আপনাদের সময় বা তারও আগে নাস্তিক্যবাদের যে উত্তাল ঢেউ ছিল সেটা বরং কমেছে বলে মনে হয়। এখন সমস্যার মূল অন্য কিছু। সেটা সমাধানে উপায় খুঁজতে হবে।
Mehedi Hasan: এটা নয়, বরং আমরা এটা চাই যে কোনো শিক্ষক একটা হাদিস বলার কারণে (যেখানে পর্দার কথা বলা আছে) যেন সাসপেন্ড না হয়। আমরা কথা বলতে পারি ইসলামোফোবিয়া নিয়ে।
Mohammad Mozammel Hoque: উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কী পড়ানো হবে, কীভাবে পড়ানো হবে, সে ব্যাপারে দেশবাসীর অবশ্যই কিছু বলার আছে। আছে তাদের বৈধ প্রত্যাশা। ইংরেজীতে স্টেক বলতে যা বোঝায়। কিন্তু সেটার একটা পদ্ধতি আছে। কায়দা আছে। সীমারেখা আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশে সম্প্রতি আমরা কমিটি অব কোর্সেস মিটিংয়ে একজন সরকারী কর্মকর্তা ও একজন উদ্যোক্তাকে পূর্ণ সদস্য হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছি।
কোনো বিষয়ে কারো স্টেক তথা অধিকার থাকলে সেটা প্রয়োগের বিধিসম্মত পদ্ধতিও থাকে। সে সম্পর্কে কোনো রকমের স্বচ্ছ ধারণা ব্যতিরেকে মনে হওয়া মাত্রই, ট্রিগারিং টার্ম শোনামাত্রই ক্লাসে ক্লাসে যদি প্রতিবাদ শুরু হয়ে যায়, যেমনটি করার জন্য বলা হচ্ছে, তাহলে শেষ পর্যন্ত ব্যাপারটা টোটাল কেয়সে পরিণত হবে।
আর কোনো এক প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির সুনির্দিষ্ট যে ঘটনার কথা আপনি বললেন, তা নিয়ে আমি ভাল করে জানি না। তাই এ’ব্যাপারে কিছু বলা সমিচীন মনে করছি না। তবে হ্যাঁ, ইসলামবিদ্বেষ নিয়ে বলতে হবে। তারসাথে ইসলামীকরণ নিয়েও কথা বলার দ্বার উন্মুক্ত রাখতে হবে। যারা ইসলামাজাইশনের কথা বলে তাদের অনেকের কথা থেকে মনে হয় কিছু ইসলাম শিখিয়ে দিলেই ইসলামীকরণ হয়ে যায়। অথচ, ইসলামের লেভেল সাঁটিয়ে দিলেই ইসলামীকরণ হয়ে যায় না। It’s legalist approach, hence incomplete and wrong in that sense.
আলাপ আলোচনার দ্বার রুদ্ধ করে, যার যেখানে যে রকমের স্টেক নাই, তাকে সেখানে সেভাবে ডিকটেইট করার সুযোগ করে দেয়ার মাধ্যমে একটা অসুস্থ পরিবেশ গড়ে উঠবে। আমি সব ধরনের চরমপন্থার বিরোধী। হোক সেটি লেফটিস্ট এক্সট্রিমিজম অথবা রাইটিস্ট এক্সট্রিমিজম। ফেইসবুকে কাভারফটোতে লিখে রেখেছি সেই কত সাল থেকে, ‘কথা বলতে দিতে হবে। চাই, প্রশ্ন করার অধিকার।’
Mehedi Hasan: আমি কথা বলতে দেবার বিপক্ষে নই৷ এখানে (ছবিতে) যে কথা উঠছে সেটা আবেগি কথা। আমরা নেকাব পরার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারি না, আবার অন্যের গলা টিপে ধরার স্বপ্ন দেখি। এটা দ্বিচারিতা। আমাদের নিজেদের কথা বলতে পারার স্পেস তৈরি করার দিকে মনোনিবেশ করা জরুরি।
Alamin Firdaus: পড়ানো আর খাওয়ানো এক না। এখানে পড়ানো উদ্দেশ্য না, খাওয়ানো উদ্দেশ্য।
Mohammad Mozammel Hoque: পড়ানো আর খাওয়ানোর মধ্যে পার্থক্য আছে। I mean, to teach and to indoctrinate, এ দুটো জিনিস এক না। এতদুভয়ের মাঝে পার্থক্য বিস্তর। তবে এই পার্থক্যের মাঝে অনেকখানি গ্রে এরিয়া আছে। সেটাকে কীভাবে ঠিক করবে, সেটার কী হবে?
Tasruzzaman Babu: আপনার জায়গায় আপনি ঠিক আছেন এবং এই লেখার জায়গায় এই লেখা ঠিক আছে। এই লেখাটি আপনার জন্য প্রযোজ্য না, আর যাদের জন্য প্রযোজ্য তারা আপনার মতো না।
Mohammad Mozammel Hoque: “ফ্যাসিবাদের বিরোধিতা করতে গিয়া যখন নিজেরাই তার চেয়ে বড় ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠে তখন আসলে সেই বিরোধিতা পরিপূর্ণতা লাভ করে না। ডানপন্থী, বামপন্থী, ইসলামপন্থী কিংবা অন্য যেকোনো আদর্শের নামেও মানুষ ফ্যাসিস্ট হইয়া উঠতে পারে। এটা বাস্তব সত্য এবং এমনটাই ঘটে।
কেউ যখন নিজের চিন্তা প্রকাশ করতে না পারার যন্ত্রণার কথা প্রকাশ করে আবার সেইসাথে অন্যদের চিন্তা সে নির্ধারণ কইরা দিতে চায় এবং সেটা না মানলে অন্যদের গোষ্ঠী উদ্ধারে নামে তখন আল্টিমেটলি নিজেও ফ্যাসিবাদেরই অংশ হয়ে যায়।” —তানবীর রহমান
Muhammad Shafayat Khan: কেউ যুক্তি দিয়ে করবে। কেউ চিৎকার করে করবে। কেউ শক্তি দিয়ে করতে চাইবে। কে সঠিক, কেবা বেঠিক? আমি খুবই কনফিউজড, অথবা সময়টাই কনফিউশনের।
Mohammad Mozammel Hoque: কেউ শক্তি প্রয়োগ করবে বা করতে চাইবে বা করাকে সমর্থন করবে, সে সেটা চাইতেই পারে। যখন কেউ নিজের পক্ষে শক্তি প্রয়োগকে সমর্থন করবে এবং নিজের বিপক্ষে শক্তি প্রয়োগকে অন্যায় করে মনে করবে, সমস্যা হলো ঠিক এই জায়গাতে।
আপনার প্রতিষ্ঠান থেকে আপনি যদি আপনার মতের বিরোধীপক্ষকে বের করে দেওয়াটাকে যুক্তিসঙ্গত বলে মনে করেন, তাহলে যে প্রতিষ্ঠান আপনার নয়, সেখানে আপনি কেন এবং কোন যুক্তিতে নিজেকে হকদার বলে মনে করবেন? কথাটা আরও সুনির্দিষ্ট করে বললে, ইসলামী প্রতিষ্ঠানে যদি আপনি সেকুলার লোক রাখতে না চান, তাহলে সেকুলার প্রতিষ্ঠানে ইসলামিক লোকজন কেন থাকবে? ৯০% মুসলমানের দেশে যদি ইসলামবিরোধী কিছু না চলে, তাহলে 90% অমুসলমানদের দেশে ইসলামের কোনো কিছু কেন থাকবে? এই প্রশ্নগুলোর সদুত্তর আমরা কোথা থেকে কিভাবে পাব?
Abu Zafar: স্যার, উনার মাথা গরম। সিরিয়াসলি না নিলেই ভাল। আপাতত নাস্তিকতা না পড়িয়ে, এথিজম পড়ানো নিরাপদ হবে।
Mohammad Mozammel Hoque: এখানে ‘পড়ানো’ বলতে কী বোঝায়, তা নিয়ে লাগছে ঝামেলা। মাদ্রাসার লোকেরা পড়ানো বলতে ইনডক্ট্রিনেশান অর্থে গেলানো বুঝেন। উনারা passive learning style-এ পড়ান। আমরা ‘পড়ানো’ বলতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শিক্ষার্থীকে পরিচিত করে তোলা বুঝি, যাতে করে শিক্ষার্থী বুঝতে পারে, এই বিষয়ে কী আছে। যেভাবে প্রতিরোধের ডাক দেয়া হয়েছে তা ভয়ানক বিপর্যয়কর। এর সুপ্রয়োগের তুলনায় অপপ্রয়োগের ঝুঁকি অনেক বেশি।
Fahad Ibn Hasib: আমি আপনাকে ব্যাক্তিগতভাবে না চিনলেও আপনার লেখালেখি থেকে পরিচয় তাই যুক্তিবাদী হিসেবে জানি ও সম্মান করি। এবং একমাত্র সেই কারণেই এতগুলো কথা খরচ করছি।
সম্মানের সাথেই বলছি, যে পোস্টের প্রেক্ষিতে আপনি এই প্রসঙ্গ তুললেন সেখানে ফিলসফির কোনো উল্লেখই নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কেন, মহাবিদ্যালয়তেও যখন ডারউইনবাদ পড়ানো হয়, সেটাকে বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত সত্য হিসেবে পড়ানো হয়, এটা যে একটা নিছক তত্ত্ব এবং এই তত্ত্বটি যে সকল অনুসিদ্ধান্তের উপর দাঁড়িয়ে আছে, তার প্রত্যেকটির বিপরীতে যে প্রমাণ পাওয়া গেছে, অর্থাৎ এই তত্ত্বের যে সমালোচনা আছে, তার কিছুই পড়ানো হয় না। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক তো সরাসরি বলেই বসলেন, and I quote, “Scientific theory মানেই scientific fact. Science-এ দুইটা একই জিনিস, আলাদা কিছু না।” তার মুখ দেখে আমার মনে হল তিনি নিজেও এ কথা বিশ্বাস করেন না, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের চাপের কারণে (পড়ুন: চাকরি বাঁচানোর জন্য) এ কথা বলছেন। এ পুরো ব্যাপারটাই ঘটেছিল ডারউইননিজম পড়ানোর সময়।
এখন কথা হল, এই ঘটনা ঘটেছিল একটা সায়েন্স সম্পর্কিত কোর্সে, কোনো ফিলসফির ক্লাসে নয়। ফিলসফির ক্লাসে এপিস্টেমোলজিকাল আলোচনা হবে, এটাই স্বাভাবিক, সেখানে atheism থাকবে, theism থাকবে, Agnosticism থাকবে, Pantheism থাকবে। এটা নিয়ে কোনদিনই কারো সমস্যা ছিল না, ভবিষ্যতে হবে বলেও আমার মনে হয় না।
আমার মত মৌ/লবা/দীদের সমস্যা হল কোনো তত্ত্বকে যখন অকাট্য সত্য নাম দিয়ে, একপেশে তথ্য উপস্থাপন করে, ছাত্র-ছাত্রীদের মনের মধ্যে সূক্ষ্মভাবে নাস্তিকতার বীজবপণ করার চেষ্টা করা হয়। এধরনের দ্বিচারিতা উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্য আসলেই ব্যাহত করে।
Mohammad Mozammel Hoque: জগত কীভাবে হলো তা নিয়ে বিজ্ঞানের মতো কিংবা বিজ্ঞানের আগ থেকেই দর্শন বিভাগে বাতচিত হয়। ৪ ধরনের বিবর্তন তত্ত্ব আছে। তার অন্যতম হলো যান্ত্রিক বিবর্তনবাদ। যান্ত্রিক বিবর্তনবাদের একটা ভার্শান হলো ডারউইনবাদ।
ফিলসফিতে কোনো মত বা তত্ত্বকে বিশ্লেষণ করা হয়। এর কোনটাকে কে সঠিক মনে করবে, এটি যার যার ব্যাপার। এইটুকু যে বুঝেছে সে ফিলসফি বুঝেছে, যে বুঝে নাই তারসাথে কথা বলা সময় নষ্ট করা। আমার কথা খুব পরিষ্কার ও সরল অর্থের। আশা করি ভুল বুঝবেন না।
উচ্চশিক্ষায় ইনডকট্রিনেশন ঘটে। এবং মোস্টলি তা বামপন্থীরাই করে। আমি এ’ব্যাপারে একমত। কিন্তু এর যে ধরনের সমাধানের কথা বলা হচ্ছে তা সমস্যাকে বরং বাড়িয়ে তুলবে। নিরাময় না করে রোগকে বরং ছড়িয়ে দিবে। কীভাবে আমরা উচ্চশিক্ষাকে তুলনামূলকভাবে মূল্যবোধনিরপেক্ষ করে তুলতে পারি, আরো সুনির্দিষ্ট করে বললে, কীভাবে ধর্মবিদ্বেষকে মোকাবেলা করতে পারি, তা নিয়ে বাস্তবসম্মত আলোচনা হতে পারে। ঢালাওভাবে প্রতিরোধের আহ্বান যুক্তিযুক্ত নয়।
যারা নাস্তিক্যবাদবিরোধী তারা নাস্তিক্যবাদ ঠেকাবে, যারা গণতন্ত্রবিরোধী তারা গণতন্ত্রের পক্ষের আলোচনাকে ঠেকাবে, যারা নারীবাদবিরোধী তারা ক্লাসে হৈচৈ করে মিছিল শ্লোগান দিয়ে নারীবাদ ঠেকাবে, যারা পুরুষতন্ত্রবিরোধী তারা নারীবাদবিরোধী কোনো শিক্ষককে তালা মারবে, এভাবে তো উচ্চশিক্ষা চলে না।
প্রতিবাদের সুনির্ধিষ্ট পন্থা আছে। কোনোক্রমেই যেন তা সাম্প্রতিক পাশ্চাত্যবিশ্বে প্রচলিত ক্যানসেল কালচারের দেশীয় ভার্শান যেন না হয়ে উঠে, সেটাই আমার কথা। আমার আশংকা।
তুমি আমার জন্য স্পেইস রাখছো। দ্যাটস ফাইন। বাট উনার কথায় তেমন কোনো এক্সেপশনালিটি নাই। ইটস ইনক্লুসিভ। ওপেন কল। দ্যাটস প্রবলেম। ইনডিড। গ্রে এরিয়ার প্রপার ম্যানেজমেন্ট ঠিক না করে এক্সট্রিম পজিশন নেয়াটা বিপর্যয় ডেকে আনে। ধর্ম, রাজনীতি, শিক্ষাসহ অনুরূপ সকল বিষয়েই এটি প্রযোজ্য। আশাকরি আমি কী বলতে চেয়েছি তা তোমাকে বোঝাতে পেরেছি।
Jahangir Alom: স্যার, আসসালামু আলাইকুম। আমি মনে করি, ছবিতে যে নাস্তিক্যবাদ পড়ানোর বিরোধিতা করা হয়েছে তা আপনার পড়ানো নাস্তিক্যবাদ না। সম্ভবত তার ইচ্ছে হল নাস্তিক্যবাদ বা তার বিভিন্ন অনুসঙ্গকে যারা সঠিক হিসেবে তুলে ধরে। ছাত্রদের মিসগাইড করে তাদের বিরোধিতা করা। আপনি যেভাবে নাস্তিকতা পড়ান – ভালোকে বুঝানোর জন্য খারাপকে তুলে ধরা – তাতে কারো কোনো আপত্তি থাকার কথা না। আকিদার কিতাবগুলোতেও তো নাস্তিকতাবাদ, প্রকৃতিবাদকে তুলে ধরে এগুলোর খণ্ডন আছে।
Mohammad Mozammel Hoque: আকিদার কিতাবে কী পড়ানো হয়, কীভাবে পড়ানো হয়, সেটা আমি ঠিক জানি না। এ ব্যাপারে আমার সীমাবদ্ধতা এবং অজ্ঞতা আছে। আমি যেটা জানি সেটাই আমি আমার মতো করে বলেছি।
Jahangir Alom: আকিদার কিতাবের কথাটি প্রসঙ্গত আনা। আমি বলতে চাইছি, ছবির বক্তব্যে ও আপনার বক্তব্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। দুই বক্তব্যই নিজ নিজ স্থানে সঠিক।
Jannatul Naureen: আমি মনে করি philosophical naturalism and methodological Naturalism নিয়ে পড়ানো উচিত। নাস্তিক্যবাদকে debunk করার জন্য। Existence Of God PhD level বইগুলো পড়ানো উচিত। বর্তমানে ইসলাম এবং নাস্তিক্যবাদ, বিজ্ঞানবাদ নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বে প্রচুর বিতর্ক, সভা, আলোচনা চলছে।
Mohammad Mozammel Hoque: ন্যাচারালিজম নিয়ে বলার শুরুতে কেউ যদি ট্রিগার্ড হয়ে যায় তাহলে তো তাকে ফিলোসফিক্যাল ন্যাচারালিজম বনাম মেথডলজিক্যাল ন্যাচারালিজম এর পার্থক্য বোঝানো অসম্ভব। আমি যে কোনো ধরনের প্রান্তিক চিন্তার বিরোধী, যদিও প্রায় প্রতিটা বিষয়ে আমার সুনির্দিষ্ট মতামত আছে।
S.M. Mostafa Rasel: এখানে মনে হয় বুঝাতে চেয়েছে, নাস্তিক্যবাদের পক্ষে যখন যুক্তি দিয়ে নাস্তিক্যবাদকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা হবে, তখন যেন তার প্রতিবাদ করা হয়। হারাম কি তা জানতে অসুবিধা নাই, কিন্তু হারাম কাজ পালন করলে বা হারামকে অন্তরে ধারণ করলেই সমস্যার সৃষ্টি হয়।
Mohammad Mozammel Hoque: ক্লাসরুমে কোনোকিছু প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা হওয়ার কথা না। হলে সেটা প্রতিরোধের জন্য দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করার যে আহ্বান জানানো হচ্ছে তা মারাত্মক রকমের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। গাড়ির চালককে ট্রাফিকের দায়িত্ব দেয়ার মতো ব্যাপার। অথবা, খেলোয়াড়কে রেফারি বা আম্পায়ারের ভূমিকাপালন করতে দেয়ার মতো ব্যাপার।
ক্লাসরুমে গণ্ডগোল না করে প্রতিবাদের একশ’ একটা রাস্তা খোলা আছে। তার কোনোটাতে না গিয়ে ক্লাসে শিক্ষককে হেনস্তা করা হলো, প্যান্ডোরা বক্স ওপেন করার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
ক্লাসরুমে শিক্ষককে অটোনমি না দেয়া হলো ড্রাইভ করার সময়ে ড্রাইভারকে অটোনমি না দেয়ার মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। ক্লাসরুমে প্রশ্ন করা এক জিনিস আর শিক্ষককে চ্যালেঞ্জ করা ভিন্ন জিনিস। ক্লাসরুমে শিক্ষককে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে, কথাটা শুনতে বা ভাবতে বেশ রোমাঞ্চকর মনে হলেও বাস্তবে তা খারাপ। খুব খারাপ। বিশেষ করে বর্তমানের এই অন্ধবিশ্বাসী, অসহিষ্ণু এবং অতিরাজনৈতিক সময়ে।