তোমাদের গার্ডিয়ানরা তোমাদেরকে এখানে পাঠিয়েছে, তোমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছো, পড়াশোনার উদ্দেশ্যে। তোমাদের নিজস্ব ক্যাপাসিটিতে তোমরা এখানে আসো নাই। তোমাদেরকে মেধাবী ও যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তোমাদের গার্ডিয়ানদের কী পরিমাণ ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে, তা তোমরা ভালো জানো। তোমাদের অনেকের দৃষ্টিতে ‘পশ্চাৎপদ বা সেকেলে ধ্যানধারণার’ সেই গার্ডিয়ানরাই তোমাদেরকে সামাজিক দিক থেকে ও আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।

ইউরোপ আমেরিকার মতো তোমরা নিজেদের পড়ালেখার খরচ নিজেরা জোগাড় করো নাই। এমনকি তোমাদের মধ্যে যারা নিজ খরচে পড়ছো তারাও, অভিজ্ঞতায় দেখেছি, নিজে খরচ না করে কষ্ট করে হলেও কিছু টাকা বাড়িতে পাঠানোর চেষ্টা করো। কেন তোমরা এটি করো? কারণ তোমরা, আমরা, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া আমরা প্রায়-সবাই, নিম্ন অথবা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী মাত্রই সম্ভাব্য সব উপায়ে নিজ নিজ ফেমেলির সাথে এটাচড। যত দূরে থাকো না কেন, তুমি তোমার পরিবারের একজন সদস্য। ১৮ বছরের পরে পরিবার হতে বিচ্ছিন্ন স্বাধীন ব্যক্তিমানুষ নও। ফেমিলি বন্ডিং কার কতোটুকু স্ট্রং বা উইক, সেটা ভিন্ন বিষয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর থেকে ক্যাম্পাসে তোমাদের এই স্বাধীন চলাফেরা, দিনের পর দিন পড়ালেখার ধারেকাছেও না যাওয়া, হালকাপাতলা নেশা করা, অবাধে ‘সম্পর্কচর্চা’ করা, হুক-আপ, ব্রেক-আপ নানা কিসিমে কেজুয়াল সেক্স লাইফ মেনটেইন করা, তোমাদের এমন লাইফস্টাইলের কথা কি তোমাদের পরিবারের লোকজন, তোমাদের অভিভাবকেরা জানে? জানলে তারা কি তোমাদের এসব কাজকর্মগুলোকে সমর্থন করতো? অথবা, করবেন?

জানি, অধিকাংশ স্টুডেন্ট এমন নয়। এই কথাগুলো তাদের জন্য প্রযোজ্য যারা মনে করে, বিশ্ববিদ্যালয় মানে বল্গাহীন জীবনযাপনের অবারিত সুযোগ। এ’ কথাগুলো তাদের জন্যও প্রযোজ্য যারা বলে, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ধারণা অনুসারে একটা বিশ্ববিদ্যালয় তার শিক্ষার্থীদের চলাচলের ওপর কোনো ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে না। কে কোথায়, কীভাবে যাবে, কার সাথে যাবে, সেটার উপর কোনো রেস্ট্রিকশন জারি রাখা তো দূরে থাক, বরং রাষ্ট্র বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেখানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাধ্য।”

‘এই বিশ্ববিদ্যালয় গরীব জনগণের ট্যাক্সে চলে’ এমন কথা আমাকে তোমরা স্মরণ করিয়ে দিয়েছো। ভালো কথা। বেতনের খোঁচা দিয়ে বলছো, ‘আপনাদের বেতন তো তারাই দেন।’ কথা সঠিক। তোমাদের সতীর্থদের একটি অংশের চলাফেরায় ‘আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের’ যে নমুনা রাস্তাঘাটে হরহামেশা দেখতে হচ্ছে, পাহাড়ের চিপায়-চুপায়, বনে-জঙ্গলে, দিনে-রাতে তোমাদের স্বাধীনতা চর্চার যেসব নমুনার কথা নিয়মিতভাবে শুনতে হচ্ছে, দেশের এই ‘গরীব জনগণের’ মূল্যবোধের সাথে তা কি সামঞ্জস্যশীল? যাদের টাকায় তোমরা পড়ো তারা কি এমন বিশ্ববিদ্যালয় চায়?

প্রসঙ্গত তোমাদেরকে হিলারী ক্লিনটনের একটা গল্প বলি। হাই স্কুল, আমাদের হিসেবে উচ্চমাধ্যমিক, পাশ করার পরে উনার বাবা উনার পড়ার খরচ বহন করার জন্য শর্ত দিয়েছিলো হিপ্পিদের উপস্থিতি আছে এমন কলেজে (মানে, বিশ্ববিদ্যালয়ে) হিলারী ভর্তি হতে পারবে না। হিলারী ক্লিনটন শেষ পর্যন্ত নিরাপদ মনে করে একটা মহিলা কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। হিলারী ক্লিনটনের আত্মজীবনী গ্রন্থ ‘লিভিং হিস্ট্রি’র বাংলা অনুবাদে (পৃষ্ঠা ২৫) এই কাহিনীটা সবিস্তারে পড়ে নিতে পারো।

তোমরা যারা গার্ডিয়ানদের অন্ধকারে রেখে এখানে স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করতে চাও তোমাদের এই পজিশনটা যে হিপোক্রেটিক তথা নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য, তা তোমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য এটি বললাম। সত্য কথা অনেক সময়ে তিক্ত হয়।

দেখো, বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ড্রেসকোড নাই। তৎসত্বেও একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় শালীন পোশাক পরে প্রত্যেকে এখানে ক্লাস নিতে বা করতে আসে। এরকম আরো বহু উদাহরণকে সামনে রেখে আমরা সহজেই বুঝতে পারি, এখানে আমরা দেশজ ঐতিহ্য, মূল্যবোধ, পারিবারিক ও সামাজিক সংস্কৃতিকে এখনো অনেকক্ষেত্রেই মেনে চলি। অথচ, প্রগতিশীলতার নামধারী একটি পক্ষ দেশের আমজনতার এই রক্ষণশীল মূল্যবোধ ব্যবস্থাকে ফ্রি সেক্সের কনসেন্ট-বেইজড পাশ্চাত্য মূল্যবোধ দিয়ে রিপ্লেস করতে চাচ্ছে। এই কাজে তারা ইতোমধ্যে অনেকখানি সফলও হয়েছে।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি জীবনের ৪০টা বছর কাটিয়েছি। মাঝে মাঝে মনে হয়, এ যেন অপরিচিত কোনো জায়গা। এক একটা বিশ্ববিদ্যালয় যেন আজ দেশের ভিতরে ভিন দেশের এক একটা ছিটমহল।

রক্ষণশীল মূল্যবোধে বিশ্বাস করে এমন স্টুডেন্টদের জন্য আবাসন ও যাতায়াতের পৃথক ব্যবস্থা দাবী করে আমি সম্প্রতি যে লেখা লিখেছি সেটার বিরোধিতা করে যারা লিখেছে, তাদের মন্তব্যগুলো আমার বক্তব্যকেই বরং (নেগেটিভলি পজিটিভ অর্থে) অথেনটিকেইট করে।

এক সিপাহী তার কমান্ডিং এক হাবিলদারের বিরুদ্ধে অফিসারের কাছে গালাগালির অভিযোগ দেয়ার পরে অফিসার উক্ত হাবিলদারকে ডেকে জিজ্ঞেস করলো, ‘শুনলাম তুমি নাকি গালাগালি করো। এটা কি ঠিক?’ হাবিলদার উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করে উঠলো, ‘কোন শালারপুতে বলেছে? অমুকের বাচ্চারে এখনি আমার সামনে আনেন।’ গল্পটা কেন বললাম তা নিশ্চয় বুঝে ফেলেছো এতক্ষণে।

প্রগতিশীলতার নামে যৌন-সংস্কৃতির বিষবাষ্প হতে প্রজন্মকে রক্ষা করার কথা বলাতে কেউ কেউ আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, আমি ‘সামাজিক আন্দোলনের নামে … ব্যক্তিগত দর্শন প্রচার করছি’। প্রকৃতপক্ষে পাশ্চাত্য জগতে প্রচলিত কলেজ ক্যাম্পাসের হুক-আপ কালচারকে যারা এখানে আমদানি করতে চায়, তারাই বরং নিজেদের ভোগবাদী ‘ব্যক্তিগত দর্শন’কে সমাজের ঘাড়ে চাপাতে চাচ্ছেন। দেশের ট্যাক্স পেয়ার বৃহত্তর জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা, ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের সাথে এগুলো কোনোমতেই যায় না। স্পষ্টত এটি জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা বৈ আর কিছু নয়।

পাশ্চাত্যের আদলে যারা এখানে যৌন স্বাধীনতার দাবী তুলছে, তারা পাশ্চাত্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে আচরিত সামাজিক মূল্যবোধ ও শিক্ষা-নৈতিকতাকে এখানে প্রতিষ্ঠা করার কথা খুব একটা বলে না। কেন বলে না?

লন্ডনের এক ইউনিভার্সিটিতে পড়েছিলেন আমাদের এক সিনিয়র সহকর্মী। উনার এক রুমমেটকে এক কোর্স টিচার কিছু মেটেরিয়াল দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘তুমি এগুলো এক সপ্তাহ পড়বে। এরপর সপ্তাহান্তে এই খামটা খুলে এখান হতে প্রশ্নটা বের করে একঘণ্টা উত্তর লিখবে। এরপর উত্তরপত্রটা আমার কাছে ফেরত দিবে।’’ সেই ছাত্রটি ঠিক তাই করেছিল।

তোমরা হলে কী করতে?

আমাদের এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওভারঅল গুণগত অবনতির জন্য, স্বীকার করছি, শিক্ষকদের দায় সবচেয়ে বেশি। তারা এক নম্বরে দায়ী। তাতে করে তোমরা কি বলতে চাইবে, শিক্ষকরা ঠিক হয়ে গেলে পরে আমরা ঠিক হওয়ার চেষ্টা করবো?

শোনো, সামাজিক উন্নতি বা অবনতি কোনোটাই একটামাত্র কারণে ঘটে না। সামাজিক উন্নতি বা অধোগতি একটা কন্টিনিউয়াস অ্যান্ড কোলাবোরেটিভ প্রসেস। একটা পক্ষ সংশোধন হলে পরে অন্যপক্ষ(সমূহ) সংশোধন হওয়া শুরু করবে, এটি সামাজিক উন্নয়নের কোনো বাস্তবসম্মত পদ্ধতি নয়। সব পক্ষ একসাথে রিয়েলাইজ করবে, একসাথে সেলফ-কারেকশানের কাজ শুরু করবে, এটাও সোশ্যাল ডিভেলপমেন্টের কোনো ফাংশানাল ওয়ে নয়। বরং প্রত্যেক ব্যক্তি ও পক্ষ নিজ নিজ অবস্থান হতে নিজ সাধ্য মোতাবেক সম্মুখযাত্রা শুরু করবে, কেউ না করুক অন্তত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নিজে নিজের ও পরিবেশের উন্নয়নে যথাসম্ভব ভূমিকা পালন করবে, এটাই হলো সামষ্টিক উন্নয়নের একমাত্র কার্যকর পদ্ধতি। দেয়ার ইজ নো মোরাল হলিডে (ফর এনি বডি এলস)।

শিক্ষা, গবেষণা ও জ্ঞানচর্চার যে মূল উদ্দেশ্যে আমরা এখানে বিশ্ববিদ্যালয় নামক প্লাটফর্মে একত্রিত হয়েছি, সেই মূল উদ্দেশ্যটাই এখানকার সোশিও-একাডেমিক এনভাইরনমেন্টে সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত। যে কোনো অজুহাতে সবার আগে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে যা বাদ যায় তা হলো ক্লাস। এখানে ক্লাসরুম পারফরমেন্স হলো সবচেয়ে উপেক্ষিত বিষয়। অথচ, এটার জন্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা।

শিক্ষকদের মান না থাকা বা তাদের অবহেলার কারণে মানসম্পন্ন ক্লাস হয় না। এ কারণে ছাত্রছাত্রীর ক্লাসমুখী হয় না। কথাটা সত্য। বিষয়টাকে উল্টো করে বলা যায়, quality audience makes a quality speaker। ব্যাপারটা যা-ই হোক না কেন, সমস্যাটাকে আমরা যে দিক থেকেই দেখি না কেন, এ এক দুষ্ট চক্র।

আমার সন্তানতুল্য ছাত্র-ছাত্রীরা, শোনো, এই দুষ্ট চক্রের ভিকটিম হওয়া থেকে আত্মরক্ষা করার একমাত্র পদ্ধতি হলো লেখাপড়া, যার জন্য তোমাদের এখানে আসা, সেটাকে মুখ্য বিষয় হিসেবে বিবেচনা করে সবকিছু করা।

মানলাম এখানকার সিস্টেমটা খারাপ। একটা খারাপ সিস্টেমকে ভাঙ্গার জন্য সেই সিস্টেমকে সিস্টেমেটিকেলি exhaust করে তোমাদেরকে উঠে আসতে হবে। ফ্রম উইদিন এ ধরনের স্ট্রং বাট ভিশাচ সার্কেলকে ভাঙ্গতে হয়। একটা বাজে এনভাইরনমেন্টের ভিতরে থেকে নিজেকে সেইভ করার উপায় হলো সেই সিস্টেমের সদর্থক সুযোগ বা ভালো দিকগুলোকে পূর্ণমাত্রায় কাজে লাগানো।

স্রোতের টানে গা ভাসিয়ে দিয়ে তুমি এখানে সহজেই গোল্লায় যেতে পারো। আবার চাইলে নিজেকে যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার এই সুযোগকে তুমি কাজে লাগাতে পারো। এখানে তুমি রেড-পিল, ব্লু-পিল দু’টাই পাবে। কোনটা গ্রহণ করবে তা তোমার ব্যাপার।

তোমার বিবেচনাবোধের ওপর আস্থা রেখে গার্ডিয়ানরা তোমাকে হলে বা বাসায় রেখে গেছে। মাসে মাসে টাকা পাঠায়। প্রতিদিন ফোন করে। তোমার বিবেকবুদ্ধি বিসর্জন দিবে না এই সরল বিশ্বাসে তোমার গার্ডিয়ান হাত খরচ দিয়ে তোমাকে প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ও লেখাপড়া করার জন্য পাঠায়।

৫টা বছর কষ্ট করো। ৫০ বছর তুমি এর সুফল পাবে। অথবা, এই ৫ বছর মৌজ-মাস্তি-ফূর্তি করো। পরবর্তী ৫০ বছর সোশ্যাল আপওয়ার্ড মোবিলিটির দৌড়ে তুমি অনেকের চেয়ে পিছিয়ে থাকবে। তুমি যে পথে যেতে চাও সে পথের বিপরীত দিকে যাওয়ার হাতছানি উপেক্ষা করে তোমাকে চেষ্টা করতে হবে টু বি দ্যা বেস্ট অব ইউ।

আমি তোমার সাথে বাজি ধরতে পারি, পরিণত বয়সে তুমি দেখতে পাবে, পাশ্চাত্য আদলে ব্যক্তিকেন্দ্রিক সমাজ ব্যবস্থা এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়নি; বৈবাহিক ব্যবস্থার পরিবর্তে লিভটুগেদার ব্যবস্থা এই দেশে সমাজের মূলধারা হয়ে উঠেনি। অপরিণামদর্শী স্বাধীনতা চর্চার পরিণামে শেষ পর্যন্ত তুমি ‘না ঘরকা, না ঘাটকা’ পরিস্থিতির সম্মুখী হতে পারো, আমার আশঙ্কা। চাইলে যেমন তুমি ফিজিক্সের নিয়মকে বদলিয়ে দিতে পারো না, তেমনি করে মানব সভ্যতার শত-সহস্র বছেরর ইতিহাসের ভিত্তিতে গড়ে উঠা relational physicsকেও চাইলে তুমি অস্বীকার করতে পারো না। প্রকৃতি বিরুদ্ধ জীবনে কেউ আলটিমেইটলি সুখী হতে পারেনি, এটি বলাই বাহুল্য। যত তাড়াতাড়ি বুঝবে যে দায়িত্ব (responsibility) ছাড়া স্বাধীনতা (autonomy) অর্থবহ হয় না, তত তোমার জন্য মঙ্গল।

আমি ধর্মের দোহাই দিয়ে তোমাকে কোনো কথা বলি নাই। আমি যুক্তির মানুষ। বিশ্বাস করি, যুক্তির বাইরে কিছু নাই। সেন্সিবল লোকের লিভড এক্সপেরিয়েন্স থেকে বেশি সত্য আর কিছু হতে পারে না। তোমাদের ব্যাপারে বাবা-মা-অভিভাবকরা যা চায় তা তোমাদের ভালোর জন্যই চায়; যা তারা তোমাদের জন্য সঠিক মনে করেন না, তা তোমাদের জন্য আসলেই ভালো নয়।

দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী, যারা তোমাদের বাবা-মা কিম্বা অভিভাবক, তারা তোমাদের মতো ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজি, একাউন্টিং, ম্যানেজমেন্ট, সোসিওলজি, পল সায়েন্স, ফিলসফি, লিটরেচার ইত্যকার কঠিন কঠিন সাবজেক্টের নাড়ি-নক্ষত্রের খবর না রাখলেও জীবন ও জগতের বাস্তবতা সম্পর্কে, বিশেষ করে তোমাদের ভাল-মন্দ সম্বন্ধে, অনেক ভালো জ্ঞান রাখেন। তাই, বাবা-মা ও অভিভাবকদেরকে বেকুব মনে করার এই প্রিভেইলিং ক্যাম্পাস কালচার, এটি খুব খারাপ জিনিস।

ইউনিভার্সিটি জীবনে এই যে যাচ্ছেতাই করার স্বাধীনতা, এটা যে একটা সময়ের ফাঁদ, পরবর্তী জীবনে তোমরা এটি আরো বেশি করে হৃদয়ঙ্গম করতে পারবে। আবারো বলছি, দায়-দায়িত্বহীন স্বাধীনতা উচ্ছৃঙ্খলতার নামান্তর। পাশ্চাত্যের সামাজিক বাস্তবতায় তাদের জন্য যা উপযোগী, আমাদের জন্য তার সবকিছু ততটুকু উপযোগী হবে এমন কোনো কথা নাই। অবশ্য পাশ্চাত্যের জন্য যা উপযোগী বলা হচ্ছে তা আসলে কতটুকু উপযোগী, তা নিয়ে ওখানকার এক্সপার্টরা ঝেড়েকেশে কথা বলা শুরু করেছেন। সেসব খবর চাইলে তোমরা সহজেই নিতে পারো।

শেষ কথা হলো, শষ্য আবাদ করতে হয়, জঙ্গল গড়ে উঠে। শুভ কামনা রইল তোমাদের জন্য।

আর হ্যাঁ, আমার ইন্টিগ্রিটি নিয়ে জানতে চাও? চবি ফিলসফি ডিপার্টেমেন্টের স্টুডেন্টদের জিজ্ঞাসা করো। ভালো থাকো।

মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

Mohammad Tausif Rafi: কিন্তু স্যার স্বাধীনতা পড়ালিখার ক্ষতি করছে এই ধারণা কতটা যৌক্তিক? অনেক পশ্চিমা দেশে স্বাধীনতা এরচেয়েও বেশি, তাদের পড়ালিখার মানও অনেক বেশি ভালো। তার মানে স্বাধীনতা পড়ালিখার সহায়ক সেটাও বলা যায় না, কজেশন প্রপারলি স্টাব্লিশড করা না গেলে। আমার অজ্ঞতাপ্রসূত ধারণায় আমাদের দেশের ভার্সিটি আর পৃথিবীর সেরা ভার্সিটিগুলোর পার্থক্য মূলত পড়ালিখার পরিবেশ, ফ্যাসিলিটি, ফান্ডিং, শিক্ষকদের পড়ানোর এবং শিক্ষার্থীদের পড়ার নিষ্ঠা এইসব ক্ষেত্রে (ব্যতিক্রম বাদে), পৃথিবীর সেরা ভার্সিটি হতে তাদের স্বাধীনতা কমাতে হচ্ছে না।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: No social development or deterioration happens by a single cause, or in a single way. Instead, the whole process of social change is collaborative and cooperative. Many factors contribute to the development or deterioration.

Srabon Mizan: আপনি ছাত্র থাকাকালীন একটা হত্যাকাণ্ডে আপনার সংশ্লিষ্টতা নিয়ে একটা ভালো জনমত আছে। এই বিষয়ে আপনার অভিমত কী?

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: তোমার মন্তব্যটার স্ক্রিনশট নিয়ে রাখলাম। কোনো সময়ে লিখলে তোমাকে ট্যাগ করবো। বিশেষ আগ্রহ থাকলে একদিন আমার অফিসে অথবা বাসায় আসো, তুমি যা-ই জানতে চাইবে, বলবো।

আমি যেহেতু কোনো অন্যায় বা অপরাধমূলক কাজ করি নাই সেজন্য আমার মধ্যে কোনো গিল্টি ফিলিং নাই। আমার সাথে কথা বললে তুমি বুঝতে পারবে, বামপন্থী প্রচারণা কতটা বিষাক্ত, ভিত্তিহীন ও মারাত্মক। Those people are extremely vindictive and propagandist.

Hassan Monjurul: কোয়ালিটি স্পিকার মেইকস আ কোয়ালিটি অডিয়েন্স। তা সলিমুল্লাহ খান স্যার হোন, আমার ডিপার্টমেন্টের শ্রদ্ধেয় জাহিদুর রহমান স্যার হোন অথবা সোশলজির ইন্দ্রজিত কুন্ড স্যার। উনাদের ক্লাস করার জন্য শিক্ষার্থীরা অপেক্ষমান থাকে। আর লাইন বাই লাইন রিডিং পড়া, মুখস্থ করে এসে ইতিহাস লেকচার দেয়া, বছরভর একই জিনিস চাবানো আর যাই হোক ৪৫ মিনিটে ঐ কোয়ালিটি অডিয়েন্স কোয়ালিটি স্পিকার তৈরী করতে পারে না। মানুষ তো গাইতে গাইতে গায়েন হয়৷ ঐ ২/৩ জন বাদে বাকিরা এরকম কেন?

অন্য বিষয়গুলোতে স্যার কথা বলছি না অনেকেই বলছেন, এ-ই একটা বিষয় হলে হৃদয়ের কষ্ট না বলে পারি না। যার ইচ্ছাই নাই ক্লাসের জন্য ভালো প্রিপারেশন নিয়ে এসে শিক্ষার্থীদের পালস বুঝে ক্লাস নেয়ার; উনাদের দিয়ে কেবল রিডিং পড়াটাই হবে।

ফিলোসোফিতেও ঐ ঘুরেফিরে আপনারা ২/৩ জন আছেন যাদের ক্লাসের প্রশংসা শুনি। এনালাইটিকাল এবিলিটি ভালো। বাদবাকি? এগুলো নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী বসা উচিত। শিক্ষার্থীদের কথা শুনা উচিত গভীরভাবে। আমিও ছফার মতো বলি মাতৃস্তনে শিশুর যেমন অধিকার, একজন শিক্ষকের কাছে তার ছাত্রের তেমন অধিকার থাকা বাঞ্ছনীয়৷

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: শ্রেণিকক্ষে পাঠদান হলো আমাদের মতো শিক্ষা-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মূল কাজ। অথচ, পুরো সিস্টেমে এটি সবচেয়ে অবহেলিত ও উপেক্ষিত বিষয় বা আসপেক্ট। আমি তোমার সাথে একমত, শুধু এই বিষয়টা নিয়ে আলাদাভাবে কথাবার্তা হওয়া উচিত।

Naim Popi: আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। স্যার, নিঃসন্দেহে খুব ভালো ও প্রয়োজনীয় কথাগুলো যুক্তি সহকারে লিখেছেন। তবে আফসোস এজন্য যে যারা বিপথগামী তারা হাতে গোনা কয়জন পড়বে এই লিখা। বরং বেশিরভাগ ভালো মানুষরাই পড়বে আর প্রিয় মানুষগুলোর (ছাত্র-ছাত্রীদের) বিপথগামীতার দৃশ্যপট সামনে এসে তাদের ভিতরের হাহাকারটা আরো বেড়ে যাবে। সমাধান নেই তো, তাই!

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধেক শিক্ষক ঐ নষ্টদের পক্ষে যুক্তি ছড়াবেন, বাকিদের কেউ নিরবে দুঃখ (ছাত্র-ছাত্রীদের স্বকীয়তা, মূল্যবোধ হারানোর) সয়ে যাবেন, কেউ কদাচিৎ প্রতিবাদ করার সাহস করবেন; এতে লাভ নেই এই দেশের। 😢

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: অসংগঠিত ও নিষ্ক্রিয় বৃহত্তর জনগণ বনাম সুসংগঠিত ও সক্রিয় দলের এটাই পার্থক্য। বামপন্থীরা সুসংগঠিত ও সক্রিয়। ডানপন্থীরা ভীরু, সুবিধাবাদি ও নিষ্ক্রিয়। ফলত যা হওয়ার তাই হয়েছে।

Anwar Zahid: ছাত্রদের নৈতিক বানানোর আগে শিক্ষকদের নৈতিক হওয়া দরকার। ভিসি ও শিক্ষকরা মিলে বাসার কাজের লোককেও চাকরী দেয়, উন্নয়ন বরাদ্ধের অর্থ চুরি করে। তারা ভাল হলে পোলাপান এমনিতেই ভাল হয়ে যাবে। আর কর্মমূখী শিক্ষা চালু হলে ছেলেপান এমনিতেই পড়ার টেবিলে চলে আসবে। সেই সাথে অনার্সে ওঠার সাথে সাথে বিয়ে করিয়ে দিলে ছেলেপান ফস্টিনস্টি করবে না।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: দ্বিমতের সুযোগ নাই।

মোহাম্মদ মারুফ: বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেক্ষিতে Quality audience makes a quality speaker কথাটার মর্ম বাণী যদি সবাই উপলব্ধি করার সক্ষমতা অর্জন করতো তাহলে University তে Research Based universal পড়াশোনাই হতো। স্বাধীন তথা মুক্ত জায়গা হচ্ছে মানুষের নীতি-নৈতিকতার সঠিক মানদণ্ড ঠিক রাখার যোগ্যতম স্থান। কথা হচ্ছে, ঘুমের ভান ধরে ঘুমিয়ে আছি।

চমৎকার পরামর্শ স্যার।

Tofael Ahmad: বিশ্ববিদ্যালয়ে দু’একজন শিক্ষক থাকেন। বাকিরা সবাই রিডিং পড়া বা ফটোকপি মেশিন। যতটুকু দেখেছি বা জেনেছি তাতে আমার মনে হয়েছে আমাদের সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলো ডিপার্টমেন্টের অবস্থাই এক।

আমরা ছাত্রাবস্থায় এসব নিয়ে কথাও বলতে পারিনা। কারণ স্যারদের হাতে মার্কস আছে এবং আমাদেরও গ্রাজুয়েশন শেষ করে বের হওয়ার প্রয়োজন আছে। আমার এই ভয়টা অমূলক না। উনারা সত্যি সত্যি পরীক্ষার খাতায় নিরবে প্রতিশোধ নেন।

A Rahman: ছাত্র-শিক্ষক উভয়েরই শুভংকরের ফাঁকি রয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই যে ঢাবিতে পড়ি, কী শিখলাম? পরিবার থেকে মূল্যবোধের শিক্ষা না পেলে হয়তো স্রোতে হারিয়ে যেতাম অনেক আগেই।

শিক্ষক সম্প্রদায় পড়ানোর চেয়ে রাজনীতি, লবিং, গ্রুপিংয়ে বেশি মনোযোগী, ছাত্রনেতার কাছে নম নম করতে থাকে, অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়। এইসব শিক্ষক কীভাবে ছাত্রদের আইডল হবে? শুভ বুদ্ধির উদয় হোক!

Abu Zafar: কাউকে না কাউকে এই কথাগুলো বলতে হবে। আপনি সাহস করে বলতে পেরেছেন। ধন্যবাদ।

লেখাটির ফেইসবুক লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *